আকাশে তারার মেলা পর্ব -১৮

0
613

#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -১৮

~”আমার বিরুদ্ধে তোমার মনের কোণে যদি জমে থাকে অজস্র অভিমান তবে সেটা অতি যত্নসহকারে ভেঙে দিব আমি। সবটুকু নিঃশেষ করে দিয়ে আবারও তোমাকে ফেলব আমার প্রেমের মোহতে।”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল আদ্র। তুলি বরাবরই নিশ্চুপ। তবে আদ্রর বলা কথাগুলো মস্তিষ্কে তরঙ্গিত হতেই হৃদয়ে উতালপাতাল ঢেউ গর্জে উঠছে। অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। সবকিছু যেন গলায় আঁটকে যাচ্ছে। আদ্রর অসহায় দৃষ্টি মাথা নিচু করে বসে থাকা তুলিতেই নিবদ্ধ। মেয়েটার অস্থিরতা চোখের দিকে না তাকিয়ে ও আদ্রর মনের কোণে দৃশ্যমান। তুলির মাঝে অভিমানের ছাপ দেখতে পাচ্ছে না বরং দেখতে পাচ্ছে এক মুঠো অস্থিরতা, অস্বস্তি। দুপুর থেকে অভিমান ভেবে তুলির নিকট উপস্থিত হলেও এখন ব্যাপার টা অন্যরকম ঠেকছে। আদ্রর বিচক্ষণ মস্তিষ্ক ধারণ করছে তুলি অভিমানী নয় বরং কোনো কারণে লজ্জিত। ধীরে ধীরে নিজের হাত টা দিয়ে তুলির হাতে স্পর্শ করল। কেঁপে উঠল তুলি। চেপে ধরল আদ্রর হাত টা শক্ত করে। সকাল থেকে বিতৃষ্ণায় অশান্ত হওয়া মনটা নিমিষেই এক ফোঁটা বৃষ্টির পানির মতো ঠান্ডা ছোঁয়া পেয়ে শান্ত হয়ে গেল। প্রিয়তমের হাত টা আঁকড়ে ধরে নিজেকে লজ্জা থেকে নিবারণ করল। আদ্রর স্পর্শে আজ কোনো লজ্জা হচ্ছে না তুলির। এই হাত টা যেন তুলি কে শান্ত করার জন্য আস্বস্ত করার জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন হাত টা কিভাবে ফিরিয়ে দিবে তুলি? আঁকড়ে না ধরলে যে নিজেই ধুকে ধুকে মরবে। অন্য হাত দিয়ে তুলির থুতুনি ধরে মুখটা উপরে তুলে নিজের চক্ষুদ্বয়ে স্থাপন করল আদ্র। সুড়সুড় করে শীতল ঢেউ আছড়ে পড়ল আদ্রর বক্ষপিঞ্জরে প্রবলভাবে। তুলির দু গালে ছেয়ে আছে রক্তিমার গাঢ় প্রলাপ। শুকিয়ে থাকা ঠোঁটে লজ্জাতুর সরু হাসির রেখা। কি আশ্চর্য মেয়েটা এমন রূপ ধারণ করে রেখেছে কেন? কোথায় অভিমান আর কোথায় লজ্জালু এই সৌন্দর্য! আদ্রর নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। তুলির মুখশ্রীতে ফুটে থাকা রূপ আদ্র কে অসম যন্ত্রণা দিচ্ছে। হৃদস্পন্দন ক্ষণে ক্ষণে অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। থুতুনি থেকে তড়িৎ বেগে হাত টা সরিয়ে নিল আদ্র। তুলির হাতের ভাজে আবদ্ধ থাকা হাত টাও ছুটিয়ে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে এল বেলকনিতে। নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। অন্তরজুড়ে থাকা অনুভূতি গুলো এলোমেলো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উত্তপ্ত একটা শ্বাস ছেড়ে বহু বিড়ম্বনা কাটিয়ে নিজেকে সামলে নিল আদ্র। গলার স্বর টা নিচু রেখে বিড়বিড় করল,,

~ “তুমি আজকাল বড্ড সর্বনাশী রূপ ধারণ করছো তুলা। প্রতিমুহূর্তে পোড়াচ্ছ আমাকে তোমার প্রেমের অনলে।”

হতবাক হয়ে মূর্তির ন্যায় স্থির হয়ে রইল তুলি। আচমকা আদ্রর এহেন আচরণ তার মনের প্রতিটি ভাজে ভাজে বিষাদ ছড়িয়ে দিল। আদ্র কি রেগে গেল? সকাল থেকে তার সম্মুখীন না হওয়ায় কি এরূপ আচরণ? রেগে গেলে তো হাতটা আকড়ে ধরত না। তবে! তবে হুট করেই কি হয়ে গেল? উঠে দাঁড়াল তুলি। বেলকনিতে এসে আদ্রর পাশে দাঁড়াল। কন্ঠে দৃঢ়তা এনে প্রশ্ন করল,,,

–“কি হয়েছে? ”

চোখের পলকেই তুলি কে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করাল আদ্র। দু পাশে দু হাত রেখে তুলি কে আবদ্ধ করে নিল নিজের মাঝে। হচকচিয়ে উঠল তুলি। প্রচন্ড বেগে কেঁপে উঠল হৃদপিণ্ড। বুকে হাতুড়ি পিটা শব্দ হতে লাগল। আদ্রর আকস্মিকভাবে করে বসা কান্ড গুলো তুলির অন্তরে ঝড় তুলে। শুকিয়ে যায় কন্ঠ নালি। আদ্র স্পর্শ করে নি তবুও রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জেগে উঠছে। মানুষ টা সামান্য একটু কাছে থাকলেই তুলির কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়। ছোট্ট মনটা অনুভূতি গুলো ঠিক সামলে উঠতে পারে না।কিছুটা কঠিন স্বরে আদ্র বলে উঠল,,

–” তোমার কি হয়েছে? অভিমান তো নেই আমার প্রতি তা তোমার চোখ দুটোই জানান দিচ্ছে। তাহলে আসার পর থেকেই আমাকে তোমার সান্নিধ্য থেকে কেন বঞ্চিত করছো?”

অতিশয় জড়তায় আদ্রর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক নজর দিতে লাগল তুলি। আদ্র তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে তুলির পানে।

–“কি হলো এদিকে তাকাও? আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছ কেন তুলা?”

নিশ্চুপ হয়ে কিছুটা স্থিতিশীল হল তুলি। দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগল,,,

—” আসলে আদ্র,,!”

এটুকু বলে আবারও মৌনতা পালন করতে লাগল। কপালে ভাজ ফেলে ভ্রু কুঁচকে তাকাল আদ্র। নিজের এক হাত দিয়ে তুলির কোমরের এক পাশে হাত রেখে অত্যধিক জোরে অতি কাছে টেনে নিল। বিস্মিত হয়ে উঠল তুলি।হঠাৎ করেই আদ্রর স্পর্শ কোমরে পেয়ে শিউরে উঠল পুরো দেহ।আদ্রর বুকে হাত রেখে এক পলকে তাকিয়ে রইল নীল বর্ণের নেশা মিশ্রিত দু চোখে।

–” থেমে গেলে কেন?”

দৃঢ় কণ্ঠস্বর শুনে আদ্রর চোখের নেশার রেশ কেটে গেল তুলির। নিচু স্বরে জবাব দিল,,

–” গতকাল সাগর ভাইয়াদের বাড়িতে আমি নেশার ঘোরে যা করেছি তা আজ আমরিনের কাছ থেকে জানতে পেরে আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি আপনাকে! আপনার সাথে যা করেছি তার জন্য লজ্জিত আমি। লজ্জায় ভীতি আমায় ঘিরে ধরেছিল। তার জন্যই আসার পর থেকেই,,

–“তাই আসার পর থেকেই ঠুনকো একটা কারণে আমার থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলে। রাইট?”

মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বোধক বুঝাল তুলি। সাথে সাথেই তুলির দিকে ঝুঁকে পড়ল আদ্র। নাকে নাক ঘষতেই আদ্রের বুকে সজোরে আঁকড়ে ধরল তুলি। তুলির নখ বিঁধছে তবুও কোনো পরোয়া নেই আদ্রর। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠল,,

–” এতো লজ্জা কেন তোমার? এই লজ্জা তো আমার দম নিয়েই ছাড়বে। তুমি রাগ করার বদলে লজ্জায় লুকিয়ে রইলে। ”

–” রাগ কেন করব? আমি যা করেছি তা নেশার ঘোরে হোক আর চেতনায় খারাপ কাজ করেছি। তাই আমাকে শাসন করার পুরো অধিকার আপনার আছে। আপনার রাগই তো আমার মনে ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি জাগিয়েছিল। যেদিন আপনার রাগী ফর্সা মুখ টা দেখেছিলাম সেদিনই এক অজানা অনুভূতি জড়ো হয়েছিল আমার মনের কুঠিরে।”

–” কালকের কান্ডে অস্বস্তি পাওয়ার কিছু নেই বরং আমি দুঃখিত। রাগ সামলাতে না পেরে তোমাকে চড় বসিয়ে দিয়েছি। আমাকে ক্ষ,,,”

সম্পূর্ণ কথা বলতে আদ্র কে বাঁধা প্রদান করল তুলি। নিজের নরম হাত টা দিয়ে আদ্রর মুখে কুলুপ এঁটে দিল। তুলির নরম হাতের ছোঁয়া ঠোঁটে পেতেই দু চোখ বুঁজে নিল আদ্র। তুলি আদ্রর দিকে নিষ্পলক চোখে চেয়ে বলল,,

–“আপনি কখনও ক্ষমা শব্দটা উচ্চারণ করবেন না। এতে আমি খুব কষ্ট পাব। যদি আমায় কখনও ভুলেও কষ্ট দেন তাহলে নিজের ভালোবাসা দিয়ে সবটুকু দূর করে দিবেন। টেনে নিবেন আমাকে পরম শান্তির স্থানে।”

ঠোঁট থেকে হাত টা টেনে নিয়ে একটা চুমু খেল আদ্র। জমে থাকা অনুভূতি গুলো আনন্দ অশ্রু হয়ে ভিড় জমাল তুলির চোখের কার্ণিশে। হাতটা মুঠোয় পুরে নিল আদ্র।

–” চোখের কার্ণিশে জমে থাকা জল কিন্তু আমার বুকে আছড়ে পড়বে কষ্ট হয়ে। কোনোভাবেই যেন গড়িয়ে না পরে।”

অন্য হাত দিয়ে তুলি তাড়াতাড়ি করে জল টুকু গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নিল। মুচকি হাসল খানিকটা। আদ্রর ঠোঁট দুটো ও প্রসারিত হল।

–” খুব খিদে পেয়েছে তুলা।”

আদ্রর মলিন কন্ঠ শুনে প্রচন্ড অবাক হল তুলি। চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠল,,

–“খিদে পেয়েছে মানে? দুপুরে খান নি?”

–” খাই নি। যেখানে আমার তুলা অনাহারে ভুগছে সেখানে আমি খেয়ে পেট ভরিয়ে নিব সেটা ভাবলে কি করে?”

বিস্ময়কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তুলি। কোনোকিছু না বলে আদ্রর শক্ত হাত টেনে পা বাড়াল নিচে যাওয়ার জন্য। কিন্তু!কিন্তু থেমে যেতে হল আদ্রর বলিষ্ঠ হাতের টানে। সম্মুখে এসে দাঁড়াতেই আদ্র ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠল,,

–” আমার তোমার কোমল ঠোঁটের স্পর্শ চাই। ”

আদ্রের আবদারে মুহুর্তেই ক্ষণিকের জন্য হৃদস্পন্দন থেমে গেল তুলির। পা দুটো ও জমে গেল বরফের মতো। এক পা নাড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না। লজ্জার ছাপ ফুটে উঠল মুখে। আপনমনেই উচ্চারণ করল,,–” এভাবে কেউ বলে আদ্র?”

ঘনঘন শ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে রাখল। ভীত স্বরে জিজ্ঞেস করল,,

–“কোথায় দিতে হবে?”

এটুকু বলেই তুলি ভারী একটা নিশ্বাস ছাড়ল। জিজ্ঞেস করতেই যেন তার শ্বাস আঁটকে যাচ্ছিল। গলা টাও কাঁপছিল। আদ্র সূক্ষ্ম হেসে বলল,,

–“তোমার ইচ্ছে।”

বিলম্ব করল না তুলি। দ্রুত বেগে হেঁটে এসে নিজের সবটুকু লজ্জা দূরে ঠেলে দিয়ে আদ্রর পায়ের উপর পা রাখল। পিছন থেকে দু হাতে আদ্রর গলা জড়িয়ে ধরে নাগাল না পেয়ে অভিমানী কন্ঠে বলল,,

–” দেখতেই পাচ্ছেন আরেকটু উঁচুতে তুলতে হবে আমায়। তাহলে মুখে কেন বলতে হচ্ছে? ”

প্রতুত্তর করল না আদ্র। কোমর জরিয়ে তুলি কে একটু উঁচু করতেই তুলি নিজের নরম ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরল আদ্রর কপালে। সাথে সাথেই সরিয়ে আনল না। বরং আরেকটু গভীরভাবে চুমু খেল। আদ্রর কোনো রেসপন্স নেই। ভিতরে তুফান শুরু হলেও বাহিরে শীতলতা। কোনো কথা না বলেই তুলি কে নামিয়ে দিল। তুলিও অভিশঙ্কায় নিজেকে লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক দৌড়ে নিচে চলে আসল। সেখানে দাড়িয়ে থাকলে তো জড়তায় তলিয়ে যেত। আদ্র ও নিঃশব্দে নিচে নেমে এল।
______________

নিচে আসতেই তুলির চোখ গেল ড্রইং রুমে। রাদিফ সাহেব ও সায়েরা বেগম বসে বসে কথা বলছেন। তুলি তাদের দিকে এগিয়ে গেল। নম্র স্বরে বলল,,

–” চা খাবেন খালু?”

হালকা হাসলেন রাদিফ সাহেব। হাসি বজায় রেখেই বললেন,,

–” শুনেছি তোর হাতের চা দারুন হয়। খেতাম তবে সেটা খালু না বলে বাবা বলে সম্বোধন করলে।”

তীব্র অবাকতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল তুলি কে। বুকটাও ধুক করে উঠল। চোখে অশ্রুকণারা ভিড় জমাল। কতগুলো বছর ধরে বাবা- মা ডাকটা ডাকতে পারে না সে। আজ রাদিফ সাহেবের মুখে বাবা ডাকতে হবে শুনে আনন্দের চেয়ে তুলির যন্ত্রণা টাই বেশি হচ্ছে। এটা সেই যন্ত্রণা নয় যেই যন্ত্রণায় তুলি ব্যাথিত হবে। এটা না চেয়ে ও পেয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। অদ্ভুত হলেও তুলির জন্য তা-ই সত্য। কিছুটা ভেজা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,

–” চা খাবেন আব্বু – আম্মু?”

দু’জনেই এক গাল হেসে বললেন,,

–” খাব মা।”

ডাইনিং রুমে দাড়িয়ে সবটা দেখল আদ্র। বাবার প্রতি জমে থাকা অভিমানগুলো হালকা সরে যেতে লাগল। সেদিনের পর বাবার মুখোমুখি টাও হয় না। অভিমানে নয় নিজের করা আচরণে অনুতপ্ত অনুভব হয়। একটাই চিন্তা ছিল রাদিফ সাহেব তুলি কে ছেলের বউ রূপে মেনে নিতে পারবে কিনা! তাও আজ দূর হয়ে গেল। তুলির পিছু পিছু কিচেনে চলে আসল। তুলি খেয়াল করে নি। ফ্রিজ থেকে তরকারির বাটি বের করে ফিরতেই লাফিয়ে উঠল আচমকা আদ্র কে দেখে। বাটি টা পড়ে যেতে নিলে আদ্র তুলির হাত থেকে নিয়ে নিল। চুলার কাছে গিয়ে তরকারি অন্য একটা পাত্রে ঢেলে গরম করতে করতে বলল,,

–“বউ তুমি তোমার শশুর শাশুড়ির জন্য চা বানাও আমি খাবার গুলো গরম করে ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছি।”

আহা! সংসার সংসার অনুভূত হচ্ছে তুলির মনে। চমকায়নি তুলি। আর কত চমকাবে? মাত্র তিন মাস পর তো সত্যি সত্যিই বউ হয়ে যাবে। আদ্রর বউ! শব্দটা মনে উদয় হতেই ঠোঁট হাসির রেখা দেখা দিল। চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে পলকবিহীন আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। যতই দেখে ততই যেন হারিয়ে যায় আদ্রর মাঝে। তবুও মনটা ভরে না।মনের খাতা টা শূন্যই থেকে যায়। আবারও ইচ্ছে জাগে আদ্র কে দেখে শূন্যতায় ভোগা মনটা পূর্ণ করে নিতে।


রাদিফ সাহেব ও সায়েরা বেগম কে চা দিয়ে জলদি ডাইনিং টেবিলের কাছে আসল তুলি। আদ্র অলরেডি নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে বসে আছে কিন্তু মুখে তুলছে না। তুলি বুঝতে পারছে ও নিজে খেতে না বসলে আদ্র খাবে না। তাই পাশের চেয়ারে বসে প্লেটে খাবার নিতে গেলে হাত ধরে থামিয়ে দিল আদ্র। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই হাসোজ্জল চেহারা নিয়ে আদ্র বলে উঠল,,

–” আমায় খাইয়ে দাও।”

তুলি সাথে সাথেই আওয়াজ করে বলে উঠল,,

–“আমি খাব না আদ্র? ”

–” খিদে তো আমার লেগেছে তো তোমার খাওয়ার কি দরকার?”

আদ্রর উদ্ভট কথা শুনে থমকে গেল তুলি। তুলি কে বেশিক্ষণ থমকে থাকতে না দিয়ে আদ্র বলল,,

–” আমায় খাওয়াবে নিজেও খাবে। বহুদিনের ইচ্ছে বউয়ের হাতে খাব। সুযোগ পেয়ে আজ ইচ্ছে টা বহুগুণ বেড়ে গেছে। ”

প্লেট টা টেনে নিজের কাছে এনে ভাত মাখিয়ে আগে নিজে খেল। তারপর আদ্রর দিকে বাড়িয়ে দিল খাবার। তুলির হাতটা ধরে মুখে পুরে নিল খাবার টা আদ্র। ছোট্ট করে একটা কামড় দিল তুলির আঙ্গুলে। লজ্জায় চুপ করে রইল তুলি। কিন্তু মনে মনে বিড়বিড় করল,,–“অসভ্য লোক।”

খাবার শেষ করে আদ্র ও তুলি ড্রইং রুমে এসে নিবিড় কে দেখে কিছু টা চমকে গেল। নিবিড় শুধু একা আসে নি সাথে নিজের মা কেও নিয়ে এসেছে। যিনি হাসি মুখে কথা বলতে মগ্ন সায়েরা বেগমের সাথে। আদ্র কে দেখেই উঠে এল নিবিড়। হাসি মুখে বলল,,

–“আমার তোর ও আংকেল আন্টির সাথে জরুরি কথা আছে আদ্র।”

আদ্র কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে নিবিড়ের ভাবভঙ্গি। নিবিড়ের মায়ের সাথে কথা বলে সোফায় বসল। তুলি পাশে দাঁড়াতেই ক্ষীণ স্বরে বলল,,

–“দাড়িয়ে আছো কেন?”

—“এমনি।”

–” পা দুটো ভেঙে দিব তখন এমনি এমনি দাড়িয়ে থাকতে পারবে?”

–“কিন্তু!”

একটু সরে বসল আদ্র। এই সোফা টায় দু’জন অনাসয়ে বসা যায়। ইতস্ত করে আদ্রের চোখ রাঙানোর সাথে না পেরে বসে পড়ল তুলি কিছুটা দূরত্ব রেখে। নিবিড়ের মায়ের নজর তুলির উপর পড়তেই বললেন,,

–” মাশাল্লাহ! তোমার হবু স্ত্রী প্রচন্ড মায়াবী আদ্র।”

মাথা নত করে ফেলল তুলি। প্রশংসা শুনে ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। লাজুক লাজুক ভাব চলে এসেছে। আদ্র হেসে জবাব দিল,,,

–” ধন্যবাদ আন্টি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। ”

–“অবশ্যই। আমরিন কে দেখছি না যে?”

কথাটা বলতে দেরি হলেও আমরিনের হাজির হতে দেরি হয় নি। নিজের প্রাণ টা নিয়ে দৌড়ে এসেছে। দু তলা থেকে নিবিড় কে দেখেই ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম তার। নিবিড় তার কথানুযায়ী চলেই এল। আমরিন কিভাবে সামলাবে এসব। তুলিকে বলতেও তো ভুলে গেছে বিয়ের চক্করে। নিবিড় সব বলে দিবে নাতো? হাফাতে হাফাতে মায়ের কাছে এসে দাঁড়াতেই নিবিড়ের আম্মু ডেকে উঠলেন আমরিন কে।

–” এদিকে আসো আমরিন।”

ওনার পাশে গিয়ে বসল আমরিন। রাদিফ সাহেব ও সায়েরা বেগম বুঝতে না পারলেও আদ্র ও তুলি বুঝতে পেরেছে বিষয় টা। নিবিড় আমরিনের দিকে এক পলক চেয়ে রাদিফ সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

–“আমি আমরিন কে বিয়ে করতে চাই আংকেল। আমি ওকে ভালোবাসি। অবশ্য আমরিন একদম অজ্ঞাত এই ব্যাপারে। দুটো বছর ধরে ওকে ভালোবাসি আংকেল। শুধু ওর আর আমার বয়সের পার্থক্যের জন্য ভয় হতো প্রস্তাব নিয়ে আসতে। আমাকে ফিরিয়ে দিলে আমি ওকে ছাড়া নিঃশ্বাস তো ফেলব কিন্তু সুখে থাকব না আংকেল। বেঁচে থেকেও নিঃশেষ হয়ে যাব ভিতর থেকে।”

নিবিড়ের অকপটে ভালোবাসা জাহির করতে দেখে ভীষণ অবাক হলেন সবাই। আমরিন তো একদম বিস্মিত হয়ে আছে। নিবিড়ের অসহায় দৃষ্টি মনে দহন রুপে বিচরণ হতে লাগল। সে তো ভেবেছিল নিবিড় সব বলে দিবে কিন্তু তার তো পুরোই উল্টো হল। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আমরিনের। ক’জন ছেলে এভাবে মেয়ের বাবার কাছে এমন করে ভালোবাসার মানুষ টা কে চাইতে পারে? তুলিও অবাক চোখে তাকিয়ে রইল নিবিড়ের দিকে। নিবিড়ের অসহায় চাহনি বলে দিচ্ছে কতটা চাই সে আমরিন কে। পাশে থাকা আদ্রর হাত টা চেপে ধরে তুলি করুন স্বরে বলে উঠল,,

–“নিবিড় ভাইয়া কে ফিরিয়ে দিবেন না আদ্র। ”

তুলির বলা বাক্য টা কে উপেক্ষা করে আদ্র গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,,

–“বাবা ফিরিয়ে না দিলেও আমি ফিরিয়ে দিব নিবিড়। ”

নিমিষেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল নিবিড়ের সবটুকু সাহস। আমরিনের চোখে সঞ্চারিত হল জল। তুলিও ছলছল নয়নজোড়া নিবদ্ধ করল আদ্রর রাগান্বিত চেহারায়।

#চলবে,,,

(আজকের পর্বটা হয়তো ভালো হয়নি। গতকাল ভ্যাকসিন দিয়ে আসার পর থেকে আমি কিছুটা অসুস্থ। আপনাদের অপেক্ষা করাতে ভালো লাগে না তাই যতটুকু পেরেছি লিখেছি। কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here