একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️ ||পর্ব~৪৩||

0
1964

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৬৪.
“আমার ভিনদেশী তারা
একা রাতেরি আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে”

ট্রেইন ছুটে চলেছে তার নিজ গতিতে রাতের অন্ধকারে ভেদ করে। রাতে সবাই খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে ঘুমাতে যাবে এমন সময় আদিত্য জানায়, সে আর রাজ রাত জাগবে কারণ চুরি হওয়ার একটা ভয় থেকেই যায়। এই শুনে বাদ বাকি অনেকে বলে ওঠে তাঁরাও রাত জাগতে চায়। শুধু শুধু কি আর রাত জাগা যায়? তাই সবার বায়না আদিত্যকে গান গেয়ে শুনাতে হবে। আমিও বেশ খুশি হলাম কথাটা শুনে কারণ ওনার নাচ তো দেখেছি এবার গানটাও শোনা হবে। সবার জোরাজুরিতে উনি রাজি হন আর ওনার হাতে গিটার তুলে দেওয়া হয়।

“ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্পো বলো কাকে”

আমার রাত জাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ী
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আদতে আনাড়ী

আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি (x2)
আমার চোখ বেধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি

রাতের আকাশে যে চাঁদ উঠেছে তা জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভালো মানিয়েছে পরিবেশ আর পরিস্থিতির সাথে গানটা। আমি বেশ উপভোগ করছিলাম মুহূর্তটা জানলা থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে। আদিত্য ওইদিকের সিটে বসে গান গাইছিলেন যেখানে শুধু একা থাকা যায়। হঠাৎ করেই আমি আমার খুব কাছে ওনার গলার স্বর শুনতে পাই। তাই মাথা ঘরাই এদিকে আর দেখি উনি আমার পাশে এসে বসেছেন। আমার দিকে তাকিয়ে গাইলেন,

“তুমি মায়ের মতই ভালো
আমি একলাটি পথ হাটি
আমার বিচ্ছিরি এক তারা
তুমি নাও না কথা কানে”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে গাইলেন কেন গানের এই অংশটা? আমি সাত পাঁচ না ভেবে উঠে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে ফেলেন,

“তোমার কিসের এতো তাড়া
সে রাস্তা পার হবে সাবধানে”

আমাকে বসিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় আমাকে পাশে বসে থাকতে বলেন। আমি সবার দিকে তাকাতেই দেখি সবাই কেমন ভাবে জানো আমার দিকে তাকিয়ে আছি তাই ওদের থেকে চোখ ফিরিয়ে আমি আবার বাইরের দিকে তাকাই আর উপভোগ করতে থাকি মুহূর্তটা।

“তোমার গায় লাগেনা ধুলো
আমার দু’মুঠো চাল-চুলো (x2)
রাখো শরীরে হাত যদি
আর জল মাখো দুই হাতে
প্লীজ ঘুম হয়ে যাও চোখে
আমার মন খারাপের রাতে

আমার রাতজাগা তারা
তোমার আকাশ ছোয়া বাড়ি (x2)

আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী… (x2)”

গান শেষ হলে সবাই আস্তে আস্তে হাততালি দিতে থাকে। এই বগিটাতে শুধু আমাদের স্টুডেন্টরাই আছে তাই আর অসুবিধা হয়নি। এরই মাঝে আমার চোখ হঠাৎ করেই জিয়ার দিকে পরে। জিয়া দেখি আমার এদিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আমার দিকে নয়, আদিত্যের দিকে। আমি আদিত্যের দিকে তাকালে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার বুঝলাম এই জন্য জিয়া এমন চোয়াল শক্ত করে এদিকে কেন তাকিয়ে আছে। আমি আদিত্যের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলে আদিত্য বলে ওঠে,

আদিত্য: এই রাজ! এবার তোর টার্ন।

সবাই এবার রাজদার দিকে তাকালে দেখে রাজদা চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তাহলে কি রাজদা ঘুমিয়ে পরেছেন?

আদিত্য: বেশি সেয়ানাগিরি করিস না ভাই আমার। তোর এইসব চালাকি আমার সাথে চলবে না। চুপচাপ নকশা বন্ধ করে গিটারটা ধর। তুই ধরবি নাকি আমি উঠবো?

আদিত্যের হুমকি শুনতেই রাজদা ঝটপট চোখ খুলে বললো,

রাজ: আমাকে ছেড়ে দে ভাই, এসব গান টান অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছি আমি। এখন গান গাইলে লোকে বুঝতে পারবে না গান গাইছে নাকি গরুতে ডাকছে। (অসহায় মুখ করে)

রাজদার কথা শুনে আমরা সবাই হেসে ফেললাম। তবে আদিত্য তো নাছোড়বান্দা সে রাজদাকে দিয়ে গান গাওয়াবেই। আদিত্য উঠে রাজদার কানে কানে কিছু একটা বললো,

আদিত্য: বলে মানালি মানলো না। তাহলে একবার গান গেয়ে মানা, দেখ মানে কি না? (চোখ টিপ দিয়ে)

আদিত্য এসে আমার পাশে বসলে আমি চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করি রাজদাকে কি বললেন। আদিত্য শুধু হেসে আমায় বলেন,

আদিত্য: ওকে রাজি করানোর মন্ত্র।

আমি আর কিছু বললাম না কারন ইতিমধ্যে রাজদা গিটারে সুর তুলেছে। কোয়েল আমার মুখোমুখি বসে আছে কিন্তু বাইরের দিকে তাকিয়ে। আমার মনে হয় রাজদা গান শুরু করলেই কোয়েল ঠিক তাকাবে।

“তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?”

যা ভেবেছিলাম তাই, রাজদা গান শুরু করতেই কোয়েল একবার রাজদার দিকে তাকায়। এরপর আমার সাথে চোখে চোখ পরে গেলে আবার বাইরের দিকে তাকায়। হুহ! আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিলো এতদিন, এখন নিজে অবুঝ হয়ে বসে আছে।

“দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।”

“এটাকি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে
চাইলে ভেঙে দেবে গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।”

কোয়েল: (মনে মনে– ভেবেছে টা কি? আমাকে গান গেয়ে ভালোবাসার কথা বললে মেনে নেবো? ইমপ্রেস হয়ে যাবো? বয়েই গেছে আমার। এত সহজে ওকে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এতগুলো দিন কষ্ট পেয়েছি তাঁর খেসারত তো দিতেই হবে বাচ্চু! দেখি তুমি আর কি কি করো আমার জন্য।)

“একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত।”

“দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।”

রাজদা গান শেষ করলে আমরা হাততালি দি। আমি বলি,

মৌমিতা: যাই বলো রাজদা, গরুর ডাকটা বেশ ভালোই ছিলো কিন্তু। (হেসে)

আমার টোন করায় রাজদা হেসে মাথা চুলকালো। এভাবেই গল্প করতে করতে আমাদের সময় কাটলো আর ভোর হয়ে এলো। আমরা সবাই নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে রেডি হতে লাগলাম। দার্জিলিং ঢুকতেই বেশ ঠান্ডা লাগছে। কিছু সময় পর ট্রেইন থামলে আমরা সবাই এক এক করে নেমে পরি আর সাথে আসা স্যার ম্যাডামদের কথা মতো হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেই বাসে করে। হোটেলে এসে ঠিক হয় একটা রুমে দুজন থাকবে তাই আমি আর কোয়েল একটা রুম নি আর ওদিকে আদিত্য আর রাজদা একটা রুম নেয়।

কোয়েল: রুমটা হেব্বি সুন্দর তাই না মৌ? আমার যা মনে হয় ব্যালকনি দিয়ে পাহাড় দেখা যাবে। (খুশি হয়ে)

মৌমিতা: চল ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বেড়াবো। এই সময়টা একটু কুয়াশাও থাকবে বেশ ভালো লাগবে।

কোয়েল: সাথে ঠান্ডাও লাগবে। উহুহুহু!

কোয়েল ঠান্ডায় কাঁপার একটিং করলে আমি হেসে ফেলি সাথে ও’ও। আমরা ফ্রেশ হয়ে নিতেই আদিত্য আসেন আমাদের ঘরে আর বলেন,

আদিত্য: এখনই সাজিয়ে নে নিজেদের জিনিস কাবার্ডে। কিছুক্ষন পর টিফিন করে ঘুরতে বেড়াবো সবাই।

মৌমিতা: আপনি বামটা নিয়ে যান। মাথা যন্ত্রনা করলে কাজে লাগবে।

আদিত্য: ব্ল্যাক কফি খেয়ে নিয়েছি আমি। তোমার কাছে রাখো আমার লাগলে নিয়ে যাবো। আমার কাছে থাকলে হারিয়ে যাবে।

মৌমিতা: ঠিক আছে।

আদিত্য চলে গেলে আমি কোয়েলের দিকে তাকালে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে মুচকি হাসছে। আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,

মৌমিতা: কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

কোয়েল: প্রেম তো জমে ক্ষীর দেখছি। (বেডে শুয়ে)

মৌমিতা: হুহ!

আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলে কোয়েল জোরে হেসে দেয় ফলে আমিও হেসে ফেলি। আমরা গল্প করতে থাকি ব্যালকনিতে গিয়ে। কোয়েল এখন বেশ স্বাভাবিক হয়েছে তাই জিজ্ঞেস করি….

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

বি:দ্র: জানি অনেক ছোট পর্ব কিন্তু এখন এর থেকে বেশি বড় করতে পারলাম না। আমার সামনে অনার্স ফাস্ট সেমিস্টার এক্সাম তাই প্রেসার আছে অনেক।

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here