একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️ ||পর্ব~৫৭||

0
1840

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৫৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

হঠাৎ করেই কোয়েলের চোখ যায় অপরদিক থেকে বেশ কয়েকটা গাড়ি একসাথে আসছে দ্রুত গতিতে কিন্তু সেদিকে রাজের কোনো হুঁশ নেই। সে করুন ও অসহায় দৃষ্টি নিয়ে কোয়েলের দিকে চেয়ে আছে। কোয়েল শুধু রাজের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দেয় জোরে.. রাজের নাম করে। রাজের কোনো পরিবর্তন নেই রাজ এখনও একভাবেই তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। কোয়েল দৌঁড়ে রাজের কাছে আসতে নিলে রাজের ঠোঁটের কোণে এক চিলটে হাসি ফুটে ওঠে। কোয়েল রাজের কাছে গিয়ে রাজের বুকে ধাক্কা দিতে নিলে রাজ শক্ত করে কোয়েলের হাত দুটো ধরে নেয় ফলে দুজনেই পিছন দিকে পরে যায়। পরে যাওয়ার ফলে রাজের হুঁশ এলো ও মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো।

কোয়েল: কোথায় লেগেছে দেখি? উঠে দাঁড়াও।

রাজ উঠে দাঁড়িয়ে কোয়েলের দিকে করুন চোখে তাকায়। বুকের বাম দিকে হাত রেখে বলে,

রাজ: এখানে।

কোয়েল সাথে সাথে মুখ গম্ভীর করে নিয়ে বলে,

কোয়েল: আমি আসছি আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

রাজ আর আটকায় না কোয়েলকে। কোয়েল রাস্তা পার হয়ে চলে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। কোয়েল যেতেই রাজ উল্টো পথে হাঁটা ধরে নিজের গাড়ির কাছে পৌঁছোয়। এদিক ওদিক দেখে নিয়ে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখে আদিত্য আর মৌমিতা বসে কথা বলছে। রাজ মাথা নত করে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

৮৫.
কোয়েল ক্লাসে না গিয়ে ভার্সিটিতে এসে কমন রুমে কিছুক্ষণ বসে থাকে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না ও। মাথায় এটাই ঘুরছে কীভাবে রাজ এটা করতে পারে? একজাগায় স্থির হতে পারছে না কোয়েল, একবার দাঁড়াচ্ছে, একবার বসছে তো একবার হাঁটছে। অস্বস্তিতে পরে কোয়েল নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে, বেরিয়ে চলে যায় ভার্সিটি থেকে কিছুটা দূরে থাকা পার্কটায়। ওখানে গিয়ে দেখে তেমন কেউ নেই। যেহেতু সকাল বেলা বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের ক্লাস চলছে আর না হয় দুপুরে ক্লাস তাই বেশ নির্জন। কোয়েল একটা বেঞ্চে চোখ মুখ ঢেকে বসে পরলো। সাথে সাথে তখনকার দৃশ্য ভেসে উঠলো ওর বন্ধ চোখের অন্ধকারে। পুরো ঘটনাটা চোখে ভাসানোর পর কোয়েল ঝট করে সোজা হয়ে বসে।

কোয়েল: এক মিনিট! রাজ নিজে থেকে টিনাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। কিন্তু রাজ তো কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যায়নি। ছোটো থেকেই দেখেছি সেটা আমি আর চার বছর পরেও। যখন জিয়া ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন ও খুব বিরক্ত হয়েছিল যেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা গেছিলো। আমার পারমিশন ছাড়া আমাকেই কখনও টাচ করেনি ও তাহলে টিনাকে কেন নিজে থেকে জড়িয়ে ধরলো? ওদের মধ্যে কি তাহলে আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক আছে? নাকি সম্পর্কের নাম টা অন্য? নাকি কোনো ফাঁদ…?

কোয়েল আরেকটু ভাবা শুরু করলো। ঠিক ভাবা না বলা যেতে পারে, মনে করা শুরু করলো। কিছু একটা মনে পড়তেই কোয়েল লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর উত্তেজিত হয়ে বললো,

কোয়েল: এক্সাক্টলি! ও তো দার্জিলিং এ থাকাকালীন আমাকে বলেছিল সামনে বড়ো কিছু হতে চলেছে তার জন্য আমাদের চারজনকে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। তাহলে কি এটা পরেশবাবুর ষড়যন্ত্র?

কোয়েলের মনে একটা আশার আলো সঞ্চার হলেও পরক্ষণে তা নিভে যায়। কোয়েল নিজে থেকে আবারও বলে ওঠে,

কোয়েল: কিন্তু ওই গলির মধ্যে ওরা কি করছিলো? ওরকম ফাঁকা একটা জায়গায় ওরা… আমি মনে হয় একটু বেশিই পজিটিভ ভাবছি। যা চোখে দেখেছি সেটা…সেটা, সেটা তো সত্যি নাও হতে পারে। উফ! মাথাই কাজ করছে না আমার। একবার নেগেটিভ চিন্তা ধারা আসছে তো একবার পজিটিভ! ধুর বাবা।

কোয়েল আবার বেঞ্চে বসে পরে চুপ করে। তখন মনে পরে রাজের বারবার কোয়েলকে আটকানোর চেষ্টা, কিছু বলার চেষ্টা। রাজ এতটাই আকুল হয়ে উঠেছিল কোয়েলকে কিছু বলতে যে কখন মাঝরাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে পড়েছিল সেটাই হুঁশ ছিলো না। কথাটা মনে আসতেই কোয়েল উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে বললো,

কোয়েল: নাহ। এভাবে চোখের দেখার উপর বিশ্বাস করে ওর কথা না শোনাটা ঠিক হয়নি। যদি মিথ্যে বলার চেষ্টা করে তাহলে আমি ঠিকই বুঝতে পারবো তাই আমার ওর কথা শুনতে হবে আর সেটা এক্ষুনি!

কোয়েল মনস্থির করে আগে এগোতে নিলেই ওর হাতে পিছন দিক থেকে টান পরে। কোয়েল ঝট করে পিছন ফিরে তাকায় কারণ এটা রাজের স্পর্শ নয়, অন্য কোনো পুরুষালী স্পর্শ।

কোয়েল: সৌভিকদা তুমি?

৮৬.
আদি নিজের মেজাজের উপর ভারসাম্য হারিয়ে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রাজদার গালে। রাজদা চুপচাপ নিজের হাত মুঠো করে নীচের দিকে তাকিয়ে আছেন। সকালে যা যা ঘটেছে সবটা জানতে পেরেই আদি এই কাজটা হঠকারিতায় করে বসলো, তাও আবার ভার্সিটিতে অনেকের মাঝে। আমি আদিকে আটকাতে যাবো তার আগেই আদি আবার রাজদার কলার ধরলো কিন্তু তাও রাজদা তাকাননি ওর দিকে। ও বলতে শুরু করলো,

আদিত্য: সাহস কি করে হলো তোর ভুল কাজ করার পরেও আমার বোনের গায়ে হাত তোলার? এইজন্যে আমি তোর হাতে আমার বোনকে তুলে দিয়েছি? বল?

রাজদা চুপ করে আছেন কোনো কথা বলছেন না দেখে আমি আদিকে বললাম,

মৌমিতা: আদি ছেড়ে দাও। সবাই দেখছে।

আদিত্য: দেখুক! সবাই এতদিন আমার বন্ধুত্ব দেখেছে,ওর প্রতি ভালোবাসা দেখেছে এখন ওর প্রতি আমার রাগ আর ঘৃণাটা দেখবে। কি মনে করিস তুই নিজেকে? যখন ইচ্ছা ছেড়ে চলে যাবি, যখন ইচ্ছা ফিরে আসবি আর তারপর তোকে মেনে নিলে আমার বোনের জীবনটা নিয়ে খেলবি? আসলে তোর দোষ না, দোষটা আমার যে আমি তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। ছোটো থেকে তোকে এতটা ভালোবেসেছিলাম যেটার যোগ্যই না তুই!

আমি আদিত্যের কথা শুনে অবাক হয়ে রাজদার দিকে তাকালে দেখলাম উনিও তাকিয়েছেন, এতক্ষনে। আদিকে আমি থামতে বললে ও আরও বলতে শুরু করে,

আদিত্য: না তুই আমার ভালোবাসার যোগ্য ছিলিস আর না তুই ছুটির ভালোবাসার যোগ্য! ভালোবাসা তো দূর তুই ওরই যোগ্য না। ইনফ্যাক্ট তুই কাওরই ভালোবাসার যোগ্য নস। ফ্রড একটা! আমার ভুল ছিলো এতদিন পর তোর ফিরে আসার পরেও তোকে বিশ্বাস করা। ভাগ্যিস আমার ভুলটা ভেঙে গেলো নাহলে কে গ্যারেন্টি দিতো যে তুই এরপরেও ছেড়ে চলে যাবি না। তুই তো অনাথ, কোনো ঠিকানাই তো নেই তোর…

মৌমিতা: আদি! অনেক বলে ফেলেছো তুমি। মাথার ঠিক আছে কি নেই তোমার? কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছো, কাকে বলছো, কি বলছো কোনো ধারণা আছে নাকি সব লোপ পেয়েছে? কোয়েল নিজেকে নিজে ফুর্তির পাত্রী বলেছিল তাই গায়ে হাত তুলেছেন রাজদা এটা বুঝতে পারোনি? বাচ্চা তুমি?

আমি রেগে চিৎকার করে কথা গুলো বললে আদি থেমে যায়। চারপাশটা দেখে নিয়ে রাজদার দিকে তাকালে দমে যায় আদি। রাজদা একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন। আদির দমে যাওয়া দেখে তাচ্ছিল্য হেসে এবার বলে উঠলেন,

রাজ: বলা শেষ?

মৌমিতা: রাজদা ওর মাথার ঠিক নেই তাই..

রাজ: না না। ঠিক আছে। আমি এসবেরই যোগ্য। অপমান, লাঞ্ছনা-বঞ্চনার, লোকের দয়া এসব ছাড়া অনাথরা আর কিসের যোগ্য বলতে পারো? আসলে “আদিত্য” ছোটো থেকে আমাকে প্যাম্পার করায় নিজের যোগ্যতাটা ভুলে বসে ছিলাম। আজ সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

রাজদা পিছন ফিরে চলে যেতে যেতে হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে পড়েন। আমি যেহেতু ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তাই দেখতে পেলাম উনি নিজের পকেট থেকে ফোন বার করে কিছু একটা দেখলেন তারপর ছুটে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি এবার আদির দিকে তাকাতেই দেখলাম ও এখনও রাজদার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

মৌমিতা: সিরিয়াসলি আদি? নিজের ছোটবেলার বন্ধুকে এভাবে তাঁর দুর্বল জায়গা নিয়ে কথা শোনাতে পারলে তুমি? তুমি নিজে থেকে রাজদার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলে, রাজদা কিন্তু আসেননি। নিজে এত মাথায় উঠিয়ে আজ এভাবে আছড়ে ফেলে দিলে মাটিতে কোনো কিছু না বুঝেই? খোঁটা দিলে একটু সাহায্য করেছিলে বলে? ছিঃ! আরে বাবা তোমরাই তো বলেছিলে একে অপরের উপর বিশ্বাস রাখতে তো আজ সেটার কথা মাথায় এলো না?

আদি আমার কথা শুনে চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো তারপর নিজেই নিজের মুখে হাত রাখলো।

মৌমিতা: মনে পরে তুমিও একদিন জিয়াকে আই লাভ ইউ বলেছিলে? অঙ্কিত কোয়েলকে জড়িয়ে ধরায় কোয়েল যে ওকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল তাও কিন্তু নয়। তুমি বাধ্য হয়ে করেছিলে আর কোয়েল সান্তনা দেওয়ার জন্যে। রাজদা নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে বলে কথা শোনালে, ভাবলে না এর পিছনেও কোনো কারণ থাকতে পারে? এটা ভাবলে না একটা মানুষ নিজে যেচে আমাদের কথাগুলো কেন বলতে আসবে যদি সে ভুল করে? ফ্রড হয়? আমি সিওর রাজদা হয়তো এসব করার পিছনের কারণটাই জানাতে এসেছিলেন যেহেতু কোয়েল কোনো কথা শোনেনি। ভেবেছিলেন নিজের ছোটোবেলার বন্ধু বুঝবে। কিন্তু ভাবেনি এত সুন্দর করে বুঝবে। আমি একটা বাইরের মেয়ে হয়ে যে কি না কদিন হলো এসেছি সে বুঝে গেলাম আর তোমরা? লজ্জা লাগছে আমার ছিঃ!

আমি চোখের জল মুছে রাজদা যেদিকে গেছে সেদিকে ছুটলাম। না জানি কোথায় গেলেন এভাবে পরি কি মরি ছুটে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here