একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️ ||পর্ব~৩৬||

0
2019

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

রাজ গাড়ির সামনে অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর নিজের মনে কথাগুলো বলে ভার্সিটিতে ঢুকে লাইব্রেরির দিকে চলে গেলো। লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখলো কোয়েল সেখানে নেই। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বাইরের দিকে আসতে গেলেই রাজ দাঁড়িয়ে যায়….নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না আজ রাজের। তাই চোখ সরিয়ে সে নিচের দিকে তাকালো এবং চোখ বন্ধ করে একটা শুকনো ঢোঁক গিলে আবার সামনে তাকালো। নাহ! সে ভুল দেখছে না। সত্যিই, রাজের চোখের সামনে কোয়েল অঙ্কিতকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কমন রুমের মধ্যে।

রাজ: এটাই হয়তো দেখা বাকি ছিলো। (তাচ্ছিল্য হেসে)

রাজ নিজের চোখের জল আড়াল করে ওখান থেকে সরে এসে নিজের গাড়ির সামনে চলে আসে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে রাজ একা একা তারপর চলে যায় নিজের অফিসে। অফিসে গিয়ে কিছুতেই কোনো কাজে মন লাগছে না। না চাওয়া স্বত্বেও চোখের সামনে বারবার দৃশ্যটা ভেসে উঠছে। যত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে তত বেশি করেই জানো বেসামাল হয়ে পড়ছে সে। আর না পেরে হাতের সামনে থাকা ফুলদানিটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো আর মাথা দু-হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,

রাজ: আমিই কেন সব সময় হারিয়ে ফেলি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে। জীবনে কোনো কিছুই কেন সহজে পেতে পারি না আমি? সব কিছুর জন্যেই লড়াই করতে হয়। এইবার তো লড়াই করেও শেষ রক্ষা হলো না।

রাজ চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। জোরে একটা নিশ্বাস নিতেই কাওর আওয়াজ পেলো রাজ দরজার বাইরে। তৎক্ষণাৎ নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো,

রাজ: কাম ইন।

রাজ দেখলো টিনা এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকার ভান শুরু করলো।

টিনা: সব ঠিক আছে রাজ?

রাজ: হ্যাঁ, কেন?

টিনা: না, কোনো কিছু ভাঙার শব্দ পেলাম তাই।

রাজ: ওহ! আসলে আমার হাত লেগে ফুলদানিটা পরে গেছে আর কিছুই না।

টিনা: ওহ আচ্ছা। তোমাকে খুব টায়ার্ড লাগছে, এই নাও একটু জল খাও।

টিনা রাজের সামনে জলের গ্লাস ধরলে রাজ সেটা নিয়ে নেয়। রাজ একটু জল খেতেই টিনা বলে,

টিনা: তুমি কি কিছু নিয়ে টেনশন করছো? আমার সাথে শেয়ার করতে পারো। (হেসে)

রাজ: নিজের লাইফের প্রতিটা প্রবলেম আমি অলওয়েজ নিজেই সলভ করেছি টিনা। যাকে আমার পাশে সব থেকে বেশি করে চেয়েছি প্রতি মুহূর্তে তাকেই আমি পাইনি আর পাবোও না কোনদিন। আসলে আমার ভাগ্যটাই এমন। যা চেয়েছি তা কখনওই পাইনি।

টিনা: কোয়েলের সাথে কিছু হয়েছে তাই না? রাজ, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে যাকে তুমি এতদিন পাগলের মতো ভালোবেসে এসেছো সে হয়তো তোমাকে ভালোবাসেনা। এমনটাই যদি তুমি ফীল করে থাকো তাহলে আমি বলবো…

টিনার কিছু বলার আগেই রাজের হাতে থাকা গ্লাসটা রাজ ভেঙে ফেললে টিনা তা দেখে আতকে ওঠে। সে বুঝতে পেরেছে সে সঠিক কথাটাই বলেছে কিন্তু ভুল সময়।

টিনা: রাজ, রাজ তোমার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে।

রাজ: আমি ঠিক আছি। তুমি কাওকে পাঠিয়ে দাও যে, এটা পরিষ্কার করে দেবে। আমি আসছি।

রাজ উঠে দাঁড়ালে টিনা হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

টিনা: রাজ তোমার হাত এতটা কেটে গেছে আর তোমার কোনো রিয়াকশন নেই?

রাজ: বললাম তো ঠিক আছি আমি। তুমি যাও কাওকে পাঠিয়ে দাও।

টিনা: ব্যান্ডেজটা এটলিস্ট করে….

টিনার কথা শেষ হওয়ার আগেই রাজের ফোন বেজে উঠলো। রাজ দেখলো আদিত্য ফোন করেছে তাই ফোন রিসিভ করে বললো,

রাজ: বল।

আদিত্য: কোথায় তোরা?

রাজ: (অবাক হয়ে) কোথায় আমরা মানে?

আদিত্য: মানে কোয়েল তোর সাথে তো? সেই জন্যই…

রাজ: (উৎকণ্ঠে) কি বলছিস তুই। কোয়েল আমার সাথে নেই। ও ভার্সিটিতে ছিলো অঙ্কিতের সাথে সেটা দেখে আমি চলে এসেছি। ও হোস্টেল ফেরেনি?

আদিত্য: না। ও এখনও ফেরেনি। আর কি বললি? অঙ্কিতের সাথে আছে?

রাজ: আমি আসছি। তুই কোথায়?

আদিত্য: আমি তো হোস্টেলের বাইরে আ…

আদিত্য কথা শেষ করার আগেই রাজ কল কেটে দিলো। আদিত্য ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

আদিত্য: নাও, এইবার আসবে ছুটতে ছুটতে।

ওদিকে রাজ এক মুহূর্ত দেরি না করে পকেট থেকে রুমাল বের করে সেটা হাতে কোনোমতে পেঁচিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো। টিনা কিছু বলবে তো দূর, কিছু বোঝারও সুযোগ পেলো না।

৫৪.
মৌমিতা: অঙ্কিতকে একটা ফোন করি আমি?

আদিত্য: (ভ্রু কুঁচকে) কেন?

মৌমিতা: আপনি তো বললেন রাজদা জানালো কোয়েল অঙ্কিতের সাথে ছিলো তাই বললাম।

আদিত্য: হ্যাঁ তো তোমাকে কেন কল করতে হবে? আমার কাছে ফোন নেই নাকি অঙ্কিতের নাম্বার নেই কোনটা? (বিরক্ত হয়ে)

মৌমিতা: যাহ বাবা! কি খারাপ কথা বললাম যে বিরক্ত হচ্ছেন? ধুর! (মুখ ঘুরিয়ে)

আদিত্য: হুহ! আসল জায়গায় কিছুই বোঝেন না উনি। অন্য জায়গায় বুঝে বেশি। (বিরবিড়িয়ে)

আদিত্য বিড়বিড় করে কথাটা বলে অঙ্কিতকে ফোন করলেন আর আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। মনে মনে বেশ হাসিও পাচ্ছে আদিত্যর ব্যবহার দেখে। ঠিক হয়েছে, বুঝুক আমার কেমন লাগতো জিয়ার সাথে ওনাকে দেখে। কিন্তু…কেন হতো এমন আমার?

আদিত্য: মৌমিতা, এই মৌমিতা? কোথায় হারিয়ে গেলে? (তুড়ি বাজিয়ে)

মৌমিতা: হ..হ্যাঁ বলুন। খোঁজ পেলেন?

আদিত্য: কোন জগতে ছিলে? চলো আমার সাথে।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম। আদিত্য আর আমি গাড়ি করে একটা নাইট ক্লাবের সামনে দাঁড়ালাম। আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই দেখলাম রাজদাও এসে উপস্থিত। তার মানে কোয়েল ক্লাবে আছে কিন্তু কেন?

আদিত্য: ভিতরে চলো। আছে আজকে ওর কপালে দুঃখ। (আস্তে করে)

মৌমিতা: ই..ইয়ে, কোয়েল এখানে আছে? ঠিক আছে তো? এতক্ষন ঠিক থাকলেও এরপর ঠিক থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। (আদিত্যের কানের কাছে)

আদিত্য: ঠিক? ঠিকের কথা বলছো তুমি? ও জীবিত ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না আমার। তুমি একটু ভালো করে সাথে থাকা ব্যক্তিটির দিকে ভালো ভাবে তাকাও, তুমিও বুঝতে পারবে। (মৌমিতার কানে কানে)

আমি একবার রাজদার দিকে তাকালাম, বেশ শান্ত। ঠিক যেমন আদিত্যও রেগে গেলে শান্ত হয়ে যায় তেমন। মানুষ হুট করে এতটা শান্ত হতে পারে সেটা এদের না দেখলে জানতাম না। আমি রেগে গেলে তো পারলে সব শেষ করে দি তাই আর কি। একদিকে ভালোই একজন রেগে গেলে আরেকজন শান্ত থাকবে।😗

আদিত্য: হয়ে গেলো!

আদিত্যের কথা শুনে আমি সামনে তাকালাম কারণ ইতিমধ্যে আমরা ক্লাবের ভিতরে চলে এসেছি। ক্লাবের মধ্যমণি হয়ে রয়েছে অঙ্কিত আর কোয়েল। আজ অনেকদিন পর অঙ্কিতকে দেখলাম, অনেকটা চেঞ্জ লাগছে ওর মধ্যে। আদিত্য কোয়েলকে ডাকতে যাবে তার আগেই জোরে গান বেজে উঠলো। পুরো ক্লাব অন্ধকার হয়ে গেলে “হুকাহ বার” গানটা চলতে শুরু করে আর কোয়েল, অঙ্কিত সেই তালে নাচতে শুরু করে।

[আপনারাও নাচুন, আমার সাথে একটু😁]

মৌমিতা: গানটা শেষ হোক তারপর যাবেন। (আদিত্যের কানে কানে)

আদিত্য কিছু না বলে শুধু রাজের দিকে তাকালেন। আমিও একটা ঢোঁক গিললাম আর রাজদার দিকে তাকালাম। রাজদার দৃষ্টি কোয়েল আর অঙ্কিতের উপর স্থির। বাপ রে বাপ! কি যে হবে।

মৌমিতা: ইশ! কোয়েল কি ভালো নাচছে। আমিও যদি একটু যে…ইয়ে না মানে কোনোদিন আসিনি ত..তো তাই।

আমি চোখ বন্ধই করে নিয়েছি আদিত্যের চাহুনি দেখে। আসলে এতো লোভ লাগছিলো তাই মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছি আর উনি শুনেও ফেললেন। ইশ! এক্ষুনি কেটে খেয়ে ফেলবেন মনে হচ্ছে।

আদিত্য: অঙ্কিতের সাথে নাচার খুব শখ তাই না? (দাঁত কিড়মিড় করে)

মৌমিতা: না না না। তা কেন? আমার তো একটু নাচতে ইচ্ছা করছিলো। আসলে কোনোদিন এমন ক্লাবে আসিনি তো তাই…

আদিত্য: আসার প্রয়োজনও নেই আর। এটাই ফাস্ট আর এটাই লাস্ট!

মৌমিতা: (অবাক হয়ে) মানে?

আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে কোয়েলদের কাছে চলে গেলেন। কোয়েল তো আমাদের দেখে বেজায় খুশি। আর আমি এখনও একটা শকের মধ্যে রয়েছি এই ভেবে যে, আমি ওনার সাথে ডান্স করছি? উনি আমাকে যেভাবে মুভ করাচ্ছেন আমিও সেভাবেই মুভি করছি, আমার দৃষ্টি ওনার দিকেই স্থির। ভার্সিটি ডান্স কম্পিটিশনে যেই আক্ষেপটা ছিলো সেটা এভাবে পূরণ হবে আমি ভাবতেই পারিনি। এসবের মাঝেই উনি হুট করে আমাকে ঘুরিয়ে দিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বললেন,

আদিত্য: কম্পিটিশনের কথা ভাবছো বুঝি?

মৌমিতা: হ..হ্যাঁ মানে না।

আদিত্য: (আবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে) জানতাম, আমারও আক্ষেপ ছিল ওটা নিয়ে পূরণ করে নিলাম একবারে। (চোখ টিপ দিয়ে)

আমি ওনার কথায় কি রিয়াকট করবো এখনও বুঝতে না পেরে ওনার সাথে এই মুহূর্তটা এনজয় করতে লাগলাম।

অন্যদিকে,

কোয়েলের চোখ হুট করেই রাজের দিকে গেলো আর ও থেমে গেলো।

কোয়েল: (মনে মনে– তার মানে আদিত্যদা আর মৌ একা আসেনি? রাজও এসেছে? ওহ শিট! আজকে তো ওর আমাকে ভার্সিটি থেকে নিতে আসার কথা ছিলো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ও নিশ্চই টেনশন করছিল আর তারপরেই আদিত্যদাকে মনে হয় বলেছে।) আরে অঙ্কিত কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

অঙ্কিত কোয়েলকে থেমে যেতে দেখে কোয়েল যেদিকে তাকিয়েছিল সেদিকে তাকালো। রাজকে দেখতে পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে কোয়েলের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় রাজের কাছে।

অঙ্কিত: হেই রাজ! কেমন আছিস?

রাজ আগেই দেখেছে কোয়েল আর অঙ্কিত ওর দিকে আসছে সেটা দেখে ইচ্ছা করেই অন্যদিকে ঘুরে যায় নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায়। অঙ্কিত এসে ডাকলে ওর দিকে ফিরে হাসি মুখে বলে,

রাজ: হাই! আমি ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?

অঙ্কিত: এই তো এনার দয়াতে ভালোই আছি। উনি দয়াটা করলে আজীবন ভালো থাকবো। (কোয়েলের দিকে তাকিয়ে)

কোয়েল: চাল, চাল! আব মেইন ইটনা ভি কুছ খাস নাহি। (ভাউ দেখিয়ে)

রাজ জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো। অঙ্কিত রাজের দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালে রাজ পকেট থেকে হাত বার করে না। অঙ্কিতের কাছে গিয়ে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরার সময় হালকা করে হাতটা বার করে আবার চটজলদি পকেটে ভরে নেয়।

কোয়েল: (রাজের বাহু ধরে) চলো।

রাজ: কোথায়?

কোয়েল: আদিত্যদা আর মৌয়ের কাছে।

রাজ: ওরা তো ওদিকে ডান্স করছে আমি কি করবো?

কোয়েল: ওরা যেটা করছে সেটাই করবে।

কোয়েল অঙ্কিতের কানে কানে কিছু একটা বলে রাজকে জোর করে টেনে নিয়ে যায় ডান্স ফ্লোরে। সঙ্গে সঙ্গে একটা সফট মিউজিক বাজতে শুরু করে। কোয়েল নিজে রাজের গলার উপর দু-হাত রেখে চোখে চোখ মিলিয়ে জিজ্ঞেস করে,

কোয়েল: হাতে কি হয়েছে তোমার?

রাজ কোয়েলের চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নিচে নামিয়ে নেয় আর কোয়েলের কোমরে হালকা ভাবে বাঁ হাত রেখে বলে,

রাজ: কিছু না।

কোয়েল: আমি ডান হাতের কথা বলছি। দেখাও?

রাজ দেখাতে না চাইলে কোয়েল একপ্রকার জোর করে হাতটা টেনে বার করে দেখলো হাতে একটা সাদা রুমাল বাঁধা যা ইতিমধ্যে লাল রং ধারণ করেছে।

কোয়েল: (হাত ছেড়ে) কীভাবে হয়েছে এটা?

রাজ: (নিশ্চুপ)

কোয়েল: ভার্সিটিতে আনতে গেছিলে?

রাজ: হম।

কোয়েল: তারপর?

রাজ: না পেয়ে ভার্সিটির ভিতরে গিয়েছিলাম কিন্তু পাইনি ভেবেছি ফিরে গেছো। তাই আমিও অফিস চলে গেছিলাম।

কোয়েল: হ্যাঁ সে তো তুমি যাবেই, তোমার টিনা আছে কি না অফিসে। (চাপা রাগ নিয়ে)

রাজ: (একবার তাকিয়ে) হম।

কোয়েলের গা’টা জ্বলে গেলো রাজের “হম” বলাতে। মানে রাজ স্বীকার করলো সে অফিসে যায় টিনার জন্য? কোয়েল পারছে না এখানেই রাজের মাথার মধ্যে একটা সজোরে বারি মারতে।

কোয়েল: স্বীকার করলে তবে? যাক ভালো।

রাজ: হম।

কোয়েল এবার কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

কোয়েল: (মনে মনে– এতটা শান্ত কেন ও আজকে? আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে গিলে খাবে এতক্ষন কাওকে না জানিয়ে এখানে থাকার জন্য। তার কিছুই তো করলো না বরং কথাই বলছে না। কিছু কি হয়েছে অফিসে? নাকি…) আব, তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।

রাজ এবার তাকালো কোয়েলের দিকে।

রাজ: বলো।

কোয়েল: (একটু অবাক হয়ে) এখন নয়। পরে সময় করে বলবো। তোমাকে তো আমি সব কিছু শেয়ার করি জানোই।

রাজ: হম।

কোয়েল: হাতে ব্যান্ডেজ করে নেবে তো বাড়ি গিয়ে?

রাজ: হ্যাঁ করে নেব।

গান শেষ হয়ে গেলে সবাই থেমে যায় আর লাইট জ্বলে ওঠে। কোয়েল রাজকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ানোর পর আদিত্য আর মৌমিতার দিকে তাকালে দেখে ওরা একটা ঘোরের মধ্যে আছে। কোয়েল গিয়ে ওদের সামনে হাততালি দিকে ওরা একে অপরের দূরে সরে যায়।

আদিত্য: চল, তোদের পৌঁছে দি।

আদিত্য কথাটা বলে রাজকে নিয়ে নীচে চলে যায়। আমি আর কোয়েল অঙ্কিতের সাথে দেখা করে নীচে চলে যাই। কোয়েল রাজদাকে তার গাড়ির সামনে দেখে সেদিকে গিয়ে বলে,

কোয়েল: আদিত্যদা রাজের হাত কেটে গেছে। ও এই নিয়ে ড্রাইভ করবে নাকি? (চিন্তিত হয়ে)

আদিত্য: কি করে হাত কাটলো তোর? দেখা।

রাজ: আরে তেমন কিছু না ঠিক আছে। আমার একটু অফিসে যেতে হবে নাহলে তোদের সাথেই যেতাম। তোরা ফিরে যা, আমি পৌঁছে যাবো রাত হওয়ার আগে।

আদিত্য: সিওর?

রাজ: একদম। (হেসে)

আদিত্য: (মনে মনে– রাজকে এতো অফ লাগছে কেন? ও এতটা শান্ত কোনো সময় থাকে না। শান্ত বললে ভুল হবে, মনে হচ্ছে ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। আজকে রাতে জানতে হবে কি হয়েছে।) মৌমিতা, চলো।

আদিত্য আর আমি চলে এলে কোয়েল ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আমিও আর ডাকিনি কোয়েলকে।

রাজ: আসছি।

কোয়েল: (রাজের বাহু ধরে) কি হয়েছে?

রাজ: কই কিছু না তো। আমার আবার কি হবে?

কোয়েল: আমার কাছে লুকাচ্ছো? কি চাইছো বলো তো তুমি?

রাজ: (মনে মনে– আমি যা চাই তা আর কখনো পাবো না।) মানে? কি চাইব?

কোয়েল: আমার মাথা গরম করিয়ে দিতে চাইছো তাই এরকম করছো। আমার কিন্তু ভালো লাগছে না রাজ। কি হয়েছে চুপচাপ বলো। (ধমক দিয়ে)

রাজ: এতো জোর এখনও আমার উপর?

কোয়েল পিছিয়ে গেলো রাজের কথা শুনে। বেশ অভিমান নিয়ে বললো,

কোয়েল: আমি জানতাম না এখন আমার তোমার উপর কোনো অধিকার নেই। আসলে তুমি কোনোদিন বলোনি তো তাই। ঠিক আছে আজকের পর থেকে মনে থাকবে কথাটা। স্য…

রাজ: (একঝটকায় কোয়েলকে কাছে টেনে) চুপ, চুপ, চুপ! এতো কথা কে বলতে বলেছে? আমি বলেছি? এখনও বাচ্চা আছিস। (গাল টেনে) যা, আদি অপেক্ষা করছে। আমি বাড়ি পৌঁছে ফোন করবো।

কোয়েল: চলে যাবো?

রাজ একটু অবাক চোখে তাকালো কোয়েলের দিকে। মনে পড়লো কোয়েল কিছু কথা বলবে বলেছিলো।

রাজ: আমি পরে শুনবো তোর সব কথা। আজকে আমাকে যেতেই হবে, তখন সব ফেলেই ছুটে এসেছিলাম তোর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না শুনে। তুই যা, আমি হাতে ব্যান্ডেজ করে নেবো।

কোয়েল: কে করে দেবে? টিনা? (গাল ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো)

রাজ: (হেসে) ডাক্তারের দিয়ে করিয়ে নেবো মা আমার।

কোয়েল: হুহ! যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে করাও আমার কি! ব্যাটা জমরাজ!

কথাটুকু বলেই কোয়েল পালালো। রাজ এদিকে একা একা দাঁড়িয়ে ভাবছে,

রাজ: যেই কাজ হয়ে গেলো অমনি পাল্টি মেরে পালালো। (হেসে, কিছুক্ষন থেমে) আমি কি ভুল ভাবছি? কোয়েল কি বলবে বলছিলো? হতে পারে কোয়েলের কথা শুনলে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আর নাহলেও আমি ওকে জিজ্ঞেস করবো। ওর বিহেভিয়ারে আমি ফীল করেছি ও আমাকে নিয়ে ভাবে, আমাকে ভালোবাসে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here