সুখের_নেশায় #পর্ব___৮

0
705

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৮

‘ কি করছেন আপনি সাফারাত? ছাড়ুন আমাকে। লোক দেখবে।’

সাফারাতের কপালে রুষ্ট বলিরেখার ভাঁজ ফুটে উঠল। চক্ষুদ্বয় বুলালো আশপাশ। ওই তো দেখা যাচ্ছে, একটা বয়স্ক লোক চেয়ে আছে ওদের পানে ড্যাবড্যাব নেত্রে। সাফারাত এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে চাইতেই লোকটা থতমত খেয়ে গেল। হাঁটতে শুরু করল নিজ গন্তব্যে। কোমর আঁকড়ে ধরে রাখা হাত টা চৈত্রিকার সারা শরীরের শিহরণ ভয়ে দিচ্ছে। চৈত্রিকা অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে সাফারাতের দিকে তাকাল। তাকাতেই দেখল সাফারাত চেহারায় একরাশ গম্ভীরতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় জুড়ে সেই কিশোরী বয়স থেকে একটু একটু করে সঞ্চরিত করা অনুভূতিরা ছোটাছুটি করছে প্রচন্ড বেগে।

সাফারাতের এক ভ্রুঁ উঁচানো দৃশ্য টা তার চোখ এড়ালো না। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইল চৈত্রিকা নির্নিমেষ। অন্তস্থলে তখন তুমুল বেগে বর্ষণ হচ্ছে। বর্ষণের সে-কি তীব্রতা,চৈত্রিকা চেয়েও দেখাতে অক্ষম। দৃষ্টি হলো স্থির, প্রগাঢ়। সাফারাতের কালো গেঞ্জি টা আঁকড়ে ধরে হাসফাস করতে লাগল। নিম্ন স্বরে বললো,

‘ নামিয়ে দিন না।’

চৈত্রিকার রক্তিম চেহারায় তীক্ষ্ণ চাউনি ফেলল সাফারাত। পরিহাস করে বললো,

‘ গেঞ্জি আঁকড়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। আবার বলছেন নামিয়ে দিন না।’

মুহুর্তেই চৈত্রিকা যেন লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। অনুভব করতে পারছে তার গাল দুটো ভীষণ গরম হয়ে আসছে। হয়ত লাল টমেটোর আকারও ধারণ করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। সাফারাতের বুক থেকে হাত টা ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে আনতে নিলে কর্ণধারে প্রবেশ করল সাফারাতের ব্যগ্র, অস্থির কন্ঠস্বর,

‘ ছাড়বেন না চৈত্র। কারণ আমি আপনাকে আমার কোল থেকে নামাচ্ছি না। আপনার পুরো শরীর জ্বরে কাঁপছিল একটু আগেই। হাঁটার মতো শক্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। থাকলেও এই অসুস্থ শরীর নিয়ে হাঁটতে দিব না আমি।’

ভরাট কন্ঠের এলোমেলো কথার তালে যেন হারিয়ে গেল চৈত্রিকা। আহা!কি সুখ মিশে আছে প্রত্যেক টা শব্দে, বাক্যে!চৈত্রিকার মন খুব করে চাইছে সময়,মুহূর্ত থমকে যাক সব। সাফারাতের মুখ থেকে অনুভূতি জড়ানো বাক্যগুলো শুনতে আঁকড়ে ধরে রাখুক সাফারাত কে হৃদয়পটে,মনের গহীনে। কিন্তু, আদৌ কি তা সম্ভব! সাফারাত কেবল,কেবলই বন্ধুত্বের খাতিরে আগের মতো করেই তার কথা ভাবছে। এটাই চৈত্রিকার ধারণা। ভয় করে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে। যদি আবারও সাফারাত ক্রুদ্ধ হয়ে ফিরিয়ে নেয় মুখ? তাহলে তো একটু আকটু পাওয়া সুখগুলোও হারিয়ে বসবে সে। তাই থাকুক বন্ধুত্ব। সাফারাতের অস্ত্বিত্ব হলেই কেটে যাবে জীবন।

করিডোরে মানুষের চলাচলের আওয়াজ কাঁপিয়ে তুলল চৈত্রিকা কে। সাথে সাথে উপলব্ধি করল কোমরে বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন গভীর হয়েছে। চৈত্রিকা হকচকালো, ভড়কাল খানিকটা। মৃদুস্বরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাফারাত কপাল কুঁচকে বলে উঠল,

‘ আপনার লোক লজ্জার ভয় হলে,নিঃসংকোচে আমার বুকে মুখ লুকাতে পারেন চৈত্র। ‘

নির্লিপ্ত, নির্বিকার কথা শুনে চৈত্রিকার মাথাটা ঘুরতে শুরু করে। সাফারাতের অকপটে বলা কথাটুকু চৈত্রিকার বক্ষস্পন্দন বাড়িয়ে তুলল। মিন মিনে স্বরে বললো,

‘ ঠিক আছি আমি।’

ডাক্তারের কেবিনের সামনে এসে সাফারাতের পা দুটো থেমে গেল। একজন নার্স কে দেখে বললো,

‘ ড. সিফাত নেই?’
‘ না স্যার। উনি একটু আগেই বেরিয়ে গেছেন।’
‘ ওহ্। আপনি জ্বর মাপতে পারবেন?আর ড্রেসিংও করে দিতে হবে।’
‘ পারব স্যার।’

কেবিনে প্রবেশ করে চৈত্রিকা কে সাবধানে বেডে বসিয়ে দিল সাফারাত। নার্স কে ইশারা করল চৈত্রিকা কে দেখতে। মেয়েটার শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজার কারণে গাঁ কাপিয়ে জ্বর এসেছে। সাফারাত যখন একদম সন্নিকটে দাঁড়িয়ে ছিল তখন চোখে বিঁধল মেয়েটার দেহের কাঁপুনি। হুট করেই কাঁপতে শুরু করে। হাতটা আলতো করে স্পর্শ করতেই দেখে প্রচন্ড গরম দেহ। লিফট খুলতেই দেরি না করে কোলে তুলে নেয় চৈত্রিকা কে।

নার্স সাফারাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে চৈত্রিকার মুখে থার্মোমিটার পুরে দিল। নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘ ম্যাম একটা প্রশ্ন করি?’

মাথা হেলালো চৈত্রিকা। মেয়েটা খুশিতে গদগদ হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ ইনি কি আপনার হাসবেন্ড?’

দু’পাশে মাথা নাড়াল চৈত্রিকা। মেয়েটার মুখে চিন্তার রেখা প্রতীয়মান হলো। ফের দ্বিধান্বিত কন্ঠে বললো,

‘ বয়ফ্রেন্ড?’

পূর্বের মতোন না করল চৈত্রিকা। এক পাশে স্থির দাঁড়ানো সাফারাতের পানে দুর্বল দৃষ্টি মেলে ধরল। তার দিকেই নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সাফারাত। চেহারায় অসীম অস্থিরতার ছাপ। চৈত্রিকা মুখ থেকে থার্মোমিটার টা বের করে নার্সের হাতে ধরিয়ে দিল। থার্মোমিটারের পারদ তরতর করে ছুটছে ঊর্ধ্বগতিতে। জ্বর ১০২°। দুর্বল কন্ঠে ও আনমনে আওড়ালো,

‘ বেস্ট ফ্রেন্ড। ‘
‘ আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড খুব হ্যান্ডসাম ম্যাম। ইনি কি সিংগেল?’

চৈত্রিকা জবাব দিতে পারল না সঙ্গে সঙ্গে। নিমগ্ন হলো চিন্তায়। সাফারাত সিংগেল নাকি কেউ আছে তার জীবনে?খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু ব্যাপারটা খারাপ দেখায়,তাই দমে গেল। দমিয়ে নিল অনুভূতি,ইচ্ছে, স্পৃহা।

নার্স চৈত্রিকার কাঁধের নিচে ড্রেসিং করে দিল। সাফারাতের দিকে চেয়ে বললো,
‘ ম্যাম একটু ফ্রেশ হলে শরীর টা ভালো লাগবে স্যার। আমি নরমাল ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছি,এতে জ্বর সেড়ে যাবে।’

‘ থ্যাংকস নার্স।’

সাফারাত চৈত্রিকার দিকে চেয়ে সাবলীলভাবে বললো,

‘ চলুন চৈত্র। ‘

চৈত্রিকা বেড ছেড়ে দাঁড়ালো নড়বড়ে পায়ে। শরীর কাঁপছে মৃদু,মৃদু। সাফারাত সূক্ষ্ম নিঃশব্দ নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো কাছাকাছি। চৈত্রিকা নার্সের দিকে আঁড়চোখে তাকালো। লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো,

‘ হাত টা ধরলেই হবে। আমি হাঁটতে পারব।’

সাফারাত হাত মুষ্টিমেয় করে নিল শক্ত করে। নিরবে হেঁটে এসে দু’জনে উপস্থিত হলো আহমেদ সাহেবের কেবিনের সামনের দিকটায়। মিম হন্তদন্ত হয়ে কাছে আসল। বোন কে ফিরে আসতে না দেখে কলিজা টা ভয়ে ছোট্ট হয়ে ছিল এতক্ষণ। তবে চৈত্রিকার গা ঘেঁষে থাকা ছেলেটা কে দেখে চোখ বড়সড় হয়ে এলো মিমের। হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

কেবিনের সামনের বেঞ্চে চৈত্রিকা কে বসিয়ে দিল সাফারাত। মিম ভীত সন্ত্রস্ত পায়ে বোনের পাশে বসল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট্ট করে বললো,
‘ আপু, সাফারাত ভাই না উনি?’

সঙ্গে সঙ্গে চৈত্রিকা প্রতিউত্তর করল,
‘ হুম।’

মিমের মনে অনেক প্রশ্ন জাগলেও, এই মুহুর্তে তা করল না সে। চোরা দৃষ্টিতে কয়েক পল দেখল সাফারাত কে। একবার সাফারাত কে দেখছে তো,আরেকবার নিজের বোন কে। কেন যেন অঢেল শান্তি অনুভব করছে সে। কারণ টা অজানা। হয়ত বা বোনের সুখের কথা ভেবে।

দিহান হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে দ্রুত পদে আসল সাফারাতের সামনে। চৈত্রিকা ও মিমের দিকে এক নজর চেয়ে পরক্ষণেই সাফারাতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। সাফারাত দাড়িয়ে আছে ওদের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে। রাতের নিস্তব্ধতায় হসপিটাল টা ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। কারো পায়ের শব্দও ঝংকার তুলে কর্ণকুহরে। দিহান হাসি হাসি মুখ করে বললো,

‘ ছেলেগুলো কে পেয়ে গেছি ভাই। মোট চারজনই তো ছিল।’

সাফারাত কপাল কুঁচকালো। ভরাট কন্ঠে বললো,

‘ খাতির যত্নে যেন ত্রুটি না হয় দিহান।’
‘ একদমই হবে না। খাবার কার জন্য আনতে বললি?’
‘ চৈত্রর কাছে দিয়ে আয়।’

দিহান খাবারের প্যাকেট টা এগিয়ে দিল চৈত্রিকার কাছে। চৈত্রিকা চমকে গেল। নিল না হাতে। দিহান মিমের হাতে ধরিয়ে দিতে মনে মনে ফুঁসে উঠল মিম। এই ছেলেকে একদম সহ্য করতে পারছে না সে। মুখ দেখেই বার বার বোনকে করা অপমানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেদিন যদি পারত তাহলে আচ্ছামতো ধুয়ে দিত সে দিহানের মা’কে। দিহান মিমের নিকষকৃষ্ণ আঁখিযুগলে রাগের
আভাস দেখতে পেয়ে বিস্মিত হলো। পিচ্চি মেয়েটা কি তাকে রাগে,ক্ষোভের অনলে পুড়িয়ে ভস্ম করতে চাচ্ছে! মনে তো হচ্ছে এমনি।

সাফারাত দূরে দাঁড়িয়ে আদেশের সুরে বললো,
‘ খেয়ে নিন চৈত্র। ওষুধ খেতে হবে আপনার। অন্যের জন্য চিন্তা করতে হলেও নিজের সুস্থ থাকা জরুরি। ‘

অনিচ্ছা সত্ত্বেও চৈত্রিকা একটু খেল। যাকে বলে নাম মাত্র খাওয়া। মুখ টা তেঁতো হয়ে আছে। বমি পাচ্ছে তার। কিন্তু সাফারাত ঠিকি বলেছে বাবার জন্য হলেও তার সুস্থ থাকা দরকার। সামনে অনেক দায়িত্ব তার। অনেক। বাবা তো কোনোদিনও নিজের পায়ে দাঁড়াবেন না আর। তাকে বাবার চিকিৎসার খরচ চালাতে হবে। মা,বোনকে আগলে রাখতে হবে। মেহুল থাকলে হয়ত তা-ই করত। মেয়ে বলে সে ঘরের এক কোণে শীর্ণ হয়ে পড়ে থেকে থেকে নিজের পরিবার কে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে যেতে দিবে তা অসম্ভব।

দিহান সাফারাতের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আমাদের আর এখানে থাকা ঠিক হবে না। ভিতরে চৈত্রিকার মা আছেন। আমাদের হঠাৎ এখানে দেখলে খারাপ ভাবতে পারেন। চলে যাওয়ায় বেটার। ওরা এখানে সেফ। রাত একটা বাজছে। চল ফিরে যাই।’

সাফারাত তোয়াক্কা করল না দিহানের কথা এমন ভঙ্গি করল। বড় বড় পা ফেলে এসে দাঁড়াল চৈত্রিকার সামনে। পায়ের শব্দে নত মাথা উপরে তুলল চৈত্রিকা। সাফারাতের বুকটা ধুক করে উঠল যেন। বক্ষে বইতে লাগল শীতল,হিম অনিল। চৈত্রিকার পাশে বসা মিমের দিকে চোখ রাখল। মিম কি বুঝল কে জানে,নিমিষেই উঠে দাঁড়াল। মৌন হয়ে হেঁটে গিয়ে করিডোরের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নজর রাখল বাহিরে। সাফারাত হাত বাড়িয়ে চৈত্রিকার কপালের চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিল। সাথে সাথেই চোখ বুঁজে ফেলল চৈত্রিকা। নেত্রপল্লব কাঁপছে ক্ষীণ। সেদিকে দৃষ্টি মেলে সাফারাত নিষ্প্রভ স্বরে বলে উঠল,

‘ আমি নিচে থাকব। আপনার যখনই আমার প্রয়োজন হবে করিডোরের জানালা দিয়ে শুধু একটা বার হাত বাড়িয়ে ডাকবেন চৈত্র। নিচে যাচ্ছি। খেয়াল রাখবেন নিজের। ‘

শূন্য অনুভূতিতে ছেয়ে গেছে চৈত্রিকার অভ্যন্তর। চক্ষু তৃষ্ণায় খাঁ খাঁ করছে মন। সাফারাত নেই পাশে। চলে গেছে কিছু সময় আগে। চৈত্রিকা তড়িৎ গতিতে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিমেষ। সাফারাত দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। চক্ষুদ্বয়ের দৃষ্টি উপরের দিক। ঠিক চৈত্রিকার বরাবর। চৈত্রিকা প্রাণ ভরে শ্বাস টেনে নিল নিজের মাঝে। একটুখানি হাসলে কি ক্ষতি হবে?মনটা ফুড় ফুড়ে হয়ে গেছে। হাসবে না সে। আপনাআপনি হাসলে তো সাফারাত বলবে পাগল। দূর হতে দূর মানুষ দু’টো । অথচ একে অপরের দৃষ্টিতে ভাসছে দু’জন অহর্নিশ।
.
.
ধীর গতিতে চন্দ্রমার শেষ লালিমা টুকু মিশে যাচ্ছে ধরাতলে। নিকষকালো অন্ধকার উপেক্ষা করে একফালি রশ্মি ধরণীর বুকে ছুঁয়ে দিতে শুরু করে। হসপিটালে মানুষের চলাচলের পদধ্বনি প্রখর হচ্ছে। বেড়ে চলেছে আস্তে আস্তে। চৈত্রিকা নড়েচড়ে উঠল। ব্যাথায় সমস্ত দেহ বিষিয়ে আছে। পিটপিট করে চোখ মেলতেই চোখে পড়ল নার্সদের ছুটোছুটি। অকস্মাৎ কিছু একটা মস্তিষ্কে উদয় হতেই চৈত্রিকা ছুটে এলো জানালার কাছে। সাফারাত নেই। চলে গেছে বোধ হয়। সারারাত ঘুমোয় নি চৈত্রিকা। ক্ষীণ সময় পর পর শুধু সাফারাত কে অবলোকন করেছে। বন্দী করেছে অক্ষিপটে। ভোর অব্দি সাফারাত ছিল নিচে। মুখখানায় ক্লান্তি,অবসাদ ছিল। চৈত্রিকার একবার বলতে ইচ্ছে করেছিল, আপনি চলে যান সাফারাত। পরমুহূর্তে আবার সিদ্ধান্ত বদলে নেয়। থাকুক না সাফারাত। অসুস্থ শরীর নিয়ে আর জাগ্রত থাকতে পারে না সে। একটু আগে বেঞ্চে বসতেই চোখ লেগে আসে অজান্তেই।

চৈত্রিকার বুক চিরে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো। মিশে গেল প্রকৃতিতে। এই মুহুর্তে উপলব্ধি করল ভালোবাসা খুব করে পোড়াচ্ছে তার ভিতর। মনে হচ্ছে সে একটু পেয়ে আরেকটু পাওয়ার আশায় লোভী হয়ে উঠছে। ছোট বেলায় তো পড়েছে অতি লোভে তাতি নষ্ট। না সে পারবে না ভালোবাসা পাওয়ার আশায় সাফারাত কে দ্বিতীয় বার হারিয়ে ফেলতে।
___________

বাবার কেবিনে উঁকিঝুঁকি মেরে প্রবেশ করল চৈত্রিকা। ঘুমোচ্ছেন আহমেদ। ফাহমিদা ইশারা করলেন কাছে এসে বসতে। চৈত্রিকা মাথা নাড়িয়ে না করল। মন ভরে চোখের তৃষ্ণা মেটালো বাবার মুখ খানাতে চেয়ে। কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে মন চাইছে না। মনটা শক্ত করে বেরোতে যাবে তখুনি ফাহমিদা বলে উঠলেন,

‘ দাঁড়া চৈত্র,তোর বাবা ডাকছেন তোকে।’

থমকে গেল পা দু’টো। ভয়ের তাড়নায় হৃদস্পন্দন হতে লাগল অস্বাভাবিক। বাবা আবার হাইপার হয়ে যাবে না তো!কি করল সে?কেন এলো কেবিনে!দুরুদুরু বুক নিয়ে আহমেদ সাহেবের দিকে তাকাতে দেখল,তিনি হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে। ইশারা করছেন কাছে যাবার। চৈত্রিকা নড়ছে না। সত্যিই কি ডাকছে তার বাবা তাকে!

#চলবে,,!

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

পিক ক্রেডিট ঃ সুমাইয়া আক্তার🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here