সুখের_নেশায় #পর্ব___১০

0
608

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___১০

রাতের হিম শীতল পবনে চৈত্রিকার মাথায় চাপানো লাল পাতলা ওড়না টা সরে গেছে। এক গুচ্ছ কেশ বাতাসের আলিঙ্গনে মুক্ত হয়ে গেল। উড়তে শুরু করে অবাধে। চৈত্রিকাকে জ্বালাতনে মত্ত চুলগুলো। এক হাতে ফ্লাস্ক আঁকড়ে ধরে অন্য হাতে চুলগুলো ঠিক করে ওড়না টেনে মাথায় দিল চৈত্রিকা। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ। আকাশের চাঁদ আজ দীপ্ততা ছড়াচ্ছে না। চাঁদ বোধ হয় নত হয়েছে মেঘের কাছে। তাই তো এক ফালি কালো মেঘ উড়ে এসে ঢেকে দিয়েছে চন্দ্রিমা। চৈত্রিকা ধীর ধীর পা ফেলে সাফারাতের কাছে এল। ঠিক কাছে নয় মধ্যিখানে দূরত্ব এক হাত। অথবা তার চেয়ে অধিক। সাফারাতের কৃষ্ণচূড়ার ন্যায় রাঙা মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল চৈত্রিকা মাথা উঁচু করে। চৈত্রিকা যে খাটো এমন নয়,যথেষ্ট লম্বা সে। কিন্তু সাফারাত তার থেকে একটু বেশিই লম্বা। বয়সের ব্যবধান এক কি দু’মাস হবে অথচ সে কত চিকন। মনে হয় ফুঁ দিলেই উড়তে পারবে অনায়সে। উল্টো সাফারাতের সুঠাম,বলিষ্ঠ দেহ। হাত দুটো পেশিবহুল। বাহ্যিক গঠন প্রকাশ করে সাফারাত বোধ হয় চৈত্রিকা থেকে অনেক বড়। এমন তো কিছুই নয়। দু’জনেই তো সমবয়সী। চৈত্রিকা আগে বিনাবাধায় মন খুলে সবকিছু সাফারাতের কাছে ব্যক্ত করলেও আজ আর পারে না। সময় বদলে গেছে। পেরিয়ে গেছে বহু বছর। বছর খানেক পর সাফারাত কে খুঁজে পেল চৈত্রিকা এক নতুন সাফারাত হিসেবে। যার নিকটে একটা শব্দ বলতেও চৈত্রিকার বুকে একদফা তোলপাড় হয়ে যায়।

সাফারাত লাল চক্ষুজোড়া নিয়ে চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে স্থির,নির্নিমেষ। আচমকা জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আপনার গাল দুটো লাল রঙে ছেয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে আয়না নেই। নয়ত আরশিতে দেখতে পেতেন আপনি,আপনার স্নিগ্ধ রক্তিম রূপ টুকু। ‘
চৈত্রিকা নিষ্প্রাণ,নির্বাক। কি বলল এটা সাফারাত?সত্যিই কি তার কপোলে ছেয়ে আছে লাল আভা?থাকলেই বা সাফারাত অকপটে পারল বলে দিতে!লজ্জা কাটানোর জন্য তড়িঘড়ি করে বললো,
‘ কেমন আছেন? এতোদিন পর হঠাৎ এত রাতে?আপনার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন?আপনি কি অসুস্থ?’

চৈত্রিকার অনর্গল প্রশ্নে সাফারাত ভ্রুঁ উঁচিয়ে চাইল। তাতেই দমে গেল চৈত্রিকা। তার ভিতরকার সত্তা সাফারাতের এই কাজে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা শব্দ হচ্ছে অনবরত। কথা বলার মতো উপযুক্ত শব্দ হারিয়ে বসল চৈত্রিকা। সাফারাত এগিয়ে এলো। খুব কাছাকাছি। চৈত্রিকার শ্বাস ভারি হয়ে আসতে শুরু করে ক্রমশ। সাফারাতের হুটহাট এতো কাছাকাছি তার শিরা উপশিরায় কাঁপন ধরিয়ে দেয়। শিহরণ জাগায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

সাফারাত হাত বাড়ালো। মুহুর্তে চৈত্রিকার ভ্রুঁ যুগল ললাট ছুঁয়ে দিল। হকচকিয়ে গেল বেশ। নিজের হাত টা শূন্য অনুভব করতেই অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। সাফারাত ফ্লাস্ক টা নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছে অথচ টেরই পেল না। শ্রবণ গ্রন্থিতে পৌঁছে অনুরোধ সূচক ভরাট কন্ঠস্বর,
‘ আপনার হাত টা একটু ধরি চৈত্রিকা?’
এতো মায়া মিশানো আবেগি অনুরোধ অবজ্ঞা করতে ব্যর্থ হলো চৈত্রিকা। ছোট্ট করে প্রতুত্তর করে,
‘ হু!’
সাফারাত যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল। নরম, কোমল হাত টা ধরতেই আঁতকে উঠে চৈত্রিকা। পা দুটো থামিয়ে বিচলিত,অস্থির কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আপনার গায়ের তাপ অনেক বেশি সাফারাত। এতো জ্বর নিয়ে গভীর রাতে এখানে কি করছেন?’

সাফারাতের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক। যেন চৈত্রিকা এমন প্রশ্ন করবে, অস্থির হয়ে উঠবে সে আগে থেকেই জানত। উত্তর দিল না। দুর্বোধ্য হাসল কেবল। চৈত্রিকা চমকে উঠে। উত্তরের আশায় চেয়ে আছে নিঃশব্দে। সাফারাত নিষ্প্রভ স্বরে তাড়া দিয়ে বললো,
‘ চলুন চৈত্র। রিকশাওয়ালা চাচা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছেন।’

চৈত্রিকা দাঁড়িয়ে রইল। সাফারাতের আলতো টানে এক পাও নাড়ালো না সে। জেদ চেপেছে মনে। সাফারাতের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া তার মনে দাগ কেটেছে। মন হচ্ছে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে সাফারাত। অবহেলা করছে। বাধ্য হয়ে সাফারাত বলে উঠল,

‘ আপনি তো আমার খবর নেন নি। তাই আমি চলে এলাম আপনাকে দেখতে। নির্মলিত চক্ষুদ্বয়ে যদি আপনার প্রতিচ্ছবি ভাসে, তাহলে স্বচক্ষে, বাস্তবে কেন একটা বার আপনাকে দেখার জন্য ছুটে আসতে পারব না চৈত্র?’
সাফারাতের স্বাভাবিক বাক্য অস্বাভাবিক ভাবে চৈত্রিকার মস্তিষ্ককে গিয়ে বিধঁল। আমতা আমতা করে বললো,
‘ মানে?’
‘ অদ্ভুত হলেও সত্যি আপনি আমার স্বপ্নে এসেছিলেন। তাই ভাবলাম অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানায় পড়ে না থেকে একটা বার দেখে আসি আপনাকে। এবার চলুন।’

গলায় গম্ভীরতা এঁটে বললো সাফারাত। চৈত্রিকা চুপ করে শুনে গেল। সে ক্ষণিকের জন্য অন্য কিছু ভেবে বসেছিল। অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলল। যথাসাধ্য চেষ্টা করল নিজের মুখ ভঙ্গি সাফারাতের কাছ থেকে লুকাতে। আমরা যাকে ভালোবাসি সেই মানুষটাও আমাদের ভালোবাসুক এটাই তো প্রত্যাশা করি। চৈত্রিকা এক মুহুর্তের জন্য ধরে নিয়েছিল মিমের কথা সত্যি। সাফারাতের মনে হয়ত তার জন্য অনুভূতি আছে। কিন্তু পরক্ষণেই সে ভুল প্রমাণিত হলো।

‘ ওইদিকে তাকিয়ে আছেন কেন?যাবেন না?’
‘ কোথায়?’
‘ আমাকে বেশি প্রশ্ন করলে বিরক্তি ধরে যায় চৈত্র। বিশ্বাস রেখে চলতে পারেন। নাকি আগের মতো বিশ্বাস নেই? ‘
সাফারাতের কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তির ছোঁয়া। চৈত্রিকা উত্তেজিত সুরে বললো,
‘ কেন থাকবে না?সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্বাস ঠুনকো হয় না। যদি অপর মানুষ টা বিশ্বাস রাখতে জানে।’
কথাটা বলে চৈত্রিকা হাঁটতে শুরু করে সোজা। আবছা আঁধারে একটা রিকশা দেখা যাচ্ছে। ওইদিকেই এগিয়ে গেল দু’জনে। রিকশাওয়ালা চাচা সাফারাত কে দেখে বিস্তর হাসল পান খাওয়া লাল লাল দাঁত গুলো দেখিয়ে। চৈত্রিকা বুঝল সাফারাত নিশ্চয়ই তাকে এখন রিকশায় উঠতে বলবে! তাই বলার পূর্বে উঠে বসল। চেপে গেল খানিকটা। সাফারাত পাশে বসে গা ঘেঁষে। এক রিকশায় দু’জন মানুষ, মাঝখানে থাকবে দূরত্ব তা ভাবা ভুল।

চাচা হুডি তুলে দিতে চাইলে বাঁধা দেয় সাফারাত। রিকশা চলার সাথে সাথে হুড় হুড় করে প্রবল হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে দেহের সর্বাঙ্গে। চৈত্রিকার জামা টা পাতলা হওয়ার দরুন নিদারুণ ভাবে কাঁপতে লাগল সমস্ত দেহ। জড়োসড়ো হয়ে বসল কিছুটা। হাত টা বার বার সাফারাতের লোমশ হাতে লেগে যাচ্ছে। নাসারন্ধ্রে গিয়ে ঠেকছে চিরচেনা পারফিউমের মৃদু মৃদু সুবাস। সাফারাত গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
‘ একটু নিচু হন তো চৈত্র। নাহলে আপনার মাথায় হাত লেগে যাবে।’

চৈত্রিকা বুঝল না। কিন্তু কথামতো মাথা ঝুকালো। সাফারাত নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে চৈত্রিকার পিঠে দিয়ে দিল। দুর্বল কন্ঠে বললো,
‘ এটা পড়ে নিন।’
‘ কিন্তু আপনি?’
‘ আমাকে আপনার মতো কাঁপতে দেখেছেন?শীত না আসতেই এতো কাঁপছেন। ‘

চৈত্রিকা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। জ্যাকেট টা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আঁড়চোখে তাকাল সাফারাতের দিকে। চেয়ে রইল অনিমেষ। ভিতর থেকে রোমাঞ্চকর অনুভূতি জেগে উঠছে। নতুন করে প্রেমে পড়ছে চৈত্রিকা। নতুন ভাবে মনে আবারও ভালোবাসা বেড়ে চলেছে পাশে থাকা মানুষটার জন্য। চৈত্রিকার অবচেতন মন সাফারাতের দিকে ঝুঁকে পড়লেও সচেতন মস্তিষ্ক জানিয়ে দিল–‘ সাফারাত ভালোবাসে না তোকে চৈত্র। ভালোবেসে বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না। তাছাড়া নিজেদের পরিস্থিতি দেখ। রাত পোহালে হয়ত রাস্তায় ঠাঁই হবে তাই সাফারাতের মতো ছেলেকে চাওয়া নিতান্তই বোকামি।’
সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনে তাকাল। একটা টং দোকান দেখা যাচ্ছে। এই গভীর রাতেও মানুষ চায়ের সাথে আড্ডা জমিয়েছে জমপেশ। সাফারাত রিকশাওয়ালা কে বললো,
‘ চাচা এখান থেকে তিনটা চায়ের কাপ নিয়ে আসুন। একেবারে কিনে নিয়ে আসবেন। তাহলে আর ফেরত দিতে হবে না।’
এই বলে সাফারাত ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে চাচার দিকে বাড়িয়ে দিল। রিকশাওয়ালা চলে গেল কাপ আনতে। চৈত্রিকার মুখ টা থমথম হয়ে গেছে অকস্মাৎ। তার উচিত ছিল সাথে তিনটা কাপ নিয়ে আসার। একবারও মাথায় আসে নি চা খাবে কিভাবে! কাপ নিয়ে আসতেই সাফারাত চা ঢেলে প্রথমে চাচাকে দেয়। চাচা মুখে হাসি ফুটিয়ে নিয়ে নিলেন। খুশি হলেন খুব,তা চেহারায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে চৈত্রিকা। আরেক কাপ চৈত্রিকার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাফারাত নিম্নস্বরে বললো,

‘ চাইলেই এখান থেকে চা খেতে পারতাম। কিন্তু আজ আপনার হাতের চা খেতে ইচ্ছে হয়েছিল চৈত্র। কষ্ট দিলাম একটুখানি। ‘

চৈত্রিকা যতই সাফারাতের কথা শুনছে তীব্র অবাক হচ্ছে। রিকশা আবারও চলছে। চৈত্রিকা চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ টা দেখছে। গাঢ় তমসার ভিড়ে রিকশায় চড়ে শহর দেখবে তা কল্পনাতীত ছিল চৈত্রিকার। দৈনন্দিন জীবনের কঠিন পরিস্থিতি, কষ্ট, দুঃখ, ক্লান্ত এক নিমিষেই ভুল গেল চৈত্রিকা। ক্ষণিক সময়ের জন্য। ক্লান্ত আঁখিদ্বয় বুঁজতেই কর্নধার হলো সাফারাতের মাদকতাপূর্ণ কন্ঠস্বর,

‘ আপনি আমাকে দেখতে কেন গেলেন না চৈত্র?’

বিস্মিত হলো চৈত্রিকা। তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করল,

‘ কোথায় দেখতে যায় নি?’
‘ বহু বছর আগে যখন আমি জ্বরে কাতরাচ্ছিলাম তখন। আপনি খোঁজ নেন নি আমার। অভিমানে জার্মান পাড়ি জমিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনাকে ছাড়া আমার কত কষ্ট হচ্ছিল। আম্মু কে অনেক বার বলেছি আমার কষ্ট হচ্ছে চৈত্র কে ছাড়া। আম্মু আমায় আশ্বাস দিয়েছিল আপনার খোঁজ করবে। আপনাকে দেখতে যাবে। নিজের কাছে যত্ন করে রাখবে আপনাকে যেন জার্মান থেকে ফিরেই আমি আপনাকে পেয়ে যাই। কিন্তু আম্মু রাখে নি নিজের দেওয়া কথা। চলে গেছে আমায় অমানুষগুলোর কাছে রেখে। ‘

এলোমেলো কন্ঠে অনেক কিছু বলতে লাগল সাফারাত। চৈত্রিকা হতবিহ্বল। সাফারাতের কথা বুঝে উঠতে পারছে না। সাফারাত কি কলেজ জীবনের কথা বলছে!

লাগাতার বিড়বিড় করে যাচ্ছে সাফারাত। চৈত্রিকা প্রথম কথাগুলো স্পষ্ট শুনলেও এখন আর শুনছে না। ভয়ার্ত নেত্রে সাফারাতের দিকে তাকাল। গায়ে স্পর্শ করতে বুকটা ধ্বক করে উঠে। কন্ঠে এক রাশ উৎকন্ঠা,
‘ চাচা উনার বাড়িতে নিয়ে চলুন। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। ‘
‘ কোথাও নিবেন না চাচা। আপনি বলার কে চৈত্র?চাচা শুধু আমার কথা শুনবে।’

সাফারাতের ধমকে চৈত্রিকা করুন দৃষ্টিতে তাকাল। হয়ত জ্বরের ঘোরে ধমকেছে সাফারাত। নদীর ধারে রিকশা থামতেই সাফারাত দুর্বল দেহ টা নিয়ে নেমে পড়ল। চৈত্রিকা কে হাত ধরে নামিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নিজে একটা বেঞ্চে বসে চৈত্রিকাকে বসতে ইশারা করল। চৈত্রিকা বসল,অনেকখানি দূরত্ব রেখে। মাঝখানে আরো দু’জন বসতে পারবে।

‘ আমার জ্বর কিন্তু আমায় কাবু করতে পারছে না চৈত্র। ‘

নিষ্প্রাণ স্বরে আওড়ালো সাফারাত। চৈত্রিকার মনে হচ্ছে সাফারাত শুরু থেকেই সম্পূর্ণ জ্বরের ঘোরে। আচ্ছা এতো সুন্দর মুহুর্ত গুলো কি ভুলে যাবে সাফারাত জ্বর সাড়লেই?হতাশাজনক নিঃশ্বাস ফেলে বিরস মুখে পাশের মানুষটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সঙ্গে সঙ্গে সাফারাত নিঃসংকোচ এক আবেদন করে বসে,

‘ আপনার মনে আছে চৈত্র আপনার বাবার একবার হার্ট এট্যাক হয়েছিল?সেদিন কলেজে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলেন আপনি। এখন কি বাবার জন্য কষ্ট হয় না আপনার?কষ্টগুলো উজাড় করে দিবেন আজ আরো একবার আমার বুকে?’

নিস্তব্ধতা চৈত্রিকাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে যেন। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সম্মুখে দাঁড়ানো সাফারাতের দিকে। হোক না জ্বরের ঘোরে তবুও সাফারাতের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে কাঁদার সুযোগ তো মিলেছে।সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে হামলে পড়ে বুকে। নিঃশব্দে কাঁদে চৈত্রিকা। অজস্র কষ্ট অশ্রু রুপে ঢেলে দেয় সাফারাতের বুকে। ভিজিয়ে দেয় বুক আবৃত করে রাখা সাদা গেঞ্জি টা। কতকাল কষ্ট ভাগ করে দেওয়ার মানুষ পায় নি চৈত্রিকা!সাফারাত চৈত্রিকার পিঠে হাত রাখে। বক্ষে মাথা গুঁজে রাখা মেয়েটাকে শক্ত করে আবদ্ধ করে নিজের মাঝে।
____________________

জ্যাকেট দু’টো গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে নিল চৈত্রিকা। ঘড়ির কাটা দশের ঘরে। নিজেকে কিছুটা পরিপাটি করে নিয়ে প্রস্তুত হলো জ্যাকেট গুলো সাফারাতের হাতে ফিরিয়ে দেবার জন্য। দুই দিন কেটে গেছে সেই রাতের পর। ঠিক কতক্ষণ সেদিন নদীর পাড়ে কেটেছিল তার হিসেব নেই চৈত্রিকার। শুধু এটুকুই খেয়াল আছে সাফারাত যখন তাকে নামিয়ে দিয়ে যায় গেইটের সামনে তখন ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। কত সহজে একটা রাত পাড় করে দিল সাফারাতের পাশাপাশি বসে থেকে নীরবে,নিভৃতে! শীতল স্রোত নেমে গেল চৈত্রিকার শিরদাঁড়া বরাবর। ফেরার সময় জ্যাকেট টা ফিরিয়ে দিতে চাইলে সাফারাত কটাক্ষ করে বলে,
‘ একসাথে দু’টো ফিরত দিলেই হবে।’

কথাটা বলে দ্রুত প্রস্থান করে রিকশায় চড়ে। চৈত্রিকা ভেবেছিল জ্বরে হয়ত সাফারাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। পরক্ষণেই সাফারাতের গম্ভীর স্বর,চলাচলে মনে হলো জ্বরও এই পুরুষকে কাবু করতে পারে নি।

রুমে কারো পদার্পণের শব্দে চৈত্রিকা ব্যাগ টা একপাশে রেখে দিল। মিমের চিন্তিত মুখাবয়ব দেখে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে মিমু?’

তাৎক্ষণিক মিমের কাছ থেকে জবাব এলো,

‘ বাবার বন্ধুর ছেলে তাহাফ ভাই আছেন না?উনি এবং উনার পুরো পরিবার তোমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আপু। বাবার সাথে কথা বলছেন। মা রাজি।’

#চলবে,,!

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here