তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৪

0
921

#তোর_শহরে_ভালোবাসা 💜
পর্ব-৪
ফাবিহা নওশীন

আদি সরিষা ক্ষেত লিখে গুগলে সার্চ দিলো।সাথে সাথে কতগুলো হলুদ রংয়ের ফুলের বাগানের ছবি চলে এলো।চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি ইত্যাদি।আদির চিনতে ভুল হলো না।কারণ সামান্তাদের গ্রামে এমন ফুলের বাগান দেখেছে।বাগান বলতে খেত।সেখানে অনেক ছবিও তুলেছে।
নিজের টিশার্টের দিকে তাকাতেই ফিক করে হেসে দিলো।এই জন্য সরিষা ক্ষেত বলেছো,,।তুমি মাইরা আসলেই ফাজিল।

আদি কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন নিয়ে বিজি।তখনই বাবার রুম থেকে জোরে জোরে চিতকার আর হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর পর নিশি ৬বলে চিতকার করছে আর হাসছে।বাবাও চিতকার করছে।আদি উৎসুক হয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।সবাই লুডু খেলায় ব্যস্ত,নিশি একটু পর পর লাফিয়ে উঠছে।বাবা গুটি খেলেও চিতকার করে উঠছে।সামান্তা ওদের দেখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।হাসি থামাতে না পেরে বারবার উঠে দূরে চলে যাচ্ছে নিজেকে শান্ত করে ফিরে আসছে।সবার কাহিনি দেখে আদিও দরজার সামনে দাড়িয়ে হাসছে।তখনই কাধে কারো হাত পড়লো।পিছনে ঘুরে নিজের মাকে দেখতে পেলো।
–দেখো মা এরা কি করছে,বাবার কি অবস্থা?এদের কাহিনি দেখে আমারো হাসি পাচ্ছে।
–সবই সামান্তার জন্য।সামান্তা বাড়ির পরিবেশ পাল্টে দিয়েছে।আর তুই তো মেয়েটাকে দেখতেই পারিসনা।
–মা তুমি একে মেয়ে বলছো?মেয়ে নয় আস্ত একটা বোম।
–তোর জন্য এমনটাই দরকার।পারফেক্ট ম্যাচ।একদিন ঠিক স্বীকার করবি যে তোরা মেইড ফর ইচ আদার।
–হয়েছে।
বলেই আদি নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে মা কি ঠিক বলছে,মেয়েটা সব দিক দিয়েই ঠিক ছিলো কিন্তু যেই পাজিরে বাবা।আমার চেয়েও বেশি।
আমাকে বলে কিনা সরিষা ক্ষেত।এগুলো ভাবা যায়,,আর কি কি বলবে খোদাই জানে।

রাতে আদি ছাদে উঠে দেখে সামান্তা রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে।পা টিপে টিপে ওর পিছনে গিয়ে ভেও করলো।সামান্তা ভয় পাওয়া তো দূরে থাক নড়েওনি।আদি ভেবেছিলো সামান্তা চিতকার করে উঠবে।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে পিছনে ঘুরে দুহাত ভাজ করে বুকের উপর রেখে বললো,
–ভেরি ফানি।
–তুমি ভয় পাওনি?
–একটুওনা।
–আমি তো ভেবেছিলাম,,
–কি ভেবেছিলেন ভয় পেয়ে চিতকার করে বিল্ডিং ফাটিয়ে ফেলবো।এতবড় ধামড়া ছেলে বাচ্চাদের মতো ভেও করছে।শেম।
–তোমার সমস্যা কি?সবসময় এভাবে কথা বলো কেন?একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারোনা?
–পারি তবে সেটা বিপরীতে থাকা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে।
–উফফ,আমার এত ধৈর্য কোথ থেকে এলো?প্রথম থেকে তুমি আমার সাথে যে ব্যবহার করছো তাতে অন্য কেউ হলে ছাদ থেকে ফেলে দিতাম।
সামান্তা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
–ভয় দেখাচ্ছেন?
বলেই ঘুরতে যাবে তখনই আদি ওর দুবাহু চেপে ধরলো।সামান্তা কেপে উঠলো।এই প্রথম আদির ছোয়া পেলো।সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো।চোখ তুলে আদির দিকে তাকাতেই ওর সমস্ত সাহস উবে গেলো।আচমকা আদি ওকে রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে নিচের দিকে ঝুকিয়ে ধরে রাখলো।আদির হাসি মুখটা রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।এভাবে নিচের দিকে হেলিয়ে রাখা আর ওর এই হিংস্র মুখটা দেখে সামান্তার ভয় হতে শুরু করলো।না জানি সত্যিই ফেলে দেয়।সামান্তা একবার কাত হয়ে নিচের দিকে চেয়ে চোখ খিচে বললো,
–কি করছেন,সত্যিই ফেলে দিবেন নাকি?
–তোমার কি মনে হয়,আমি মজা করছি?
বলেই হাত দিয়ে আরো জোরে চাও দিয়ে নিচের দিকে নিয়েই
সামান্তা চোখ মেলে দু’হাতে আদির দুহাত আকড়ে ধরলো।
–প্লিজ ছাড়বেন না।
আদি ওকে ভয় পেতে দেখে বাকা হাসি দিয়ে ওর এক হাত ধরে বাহু ছেড়ে একটানে তুলে নিলো।সামান্তা হুমড়ি খেয়ে ওর বুকে পড়লো।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।বেচারি ভয় পেয়ে গেছে।
যখন নিজেকে আদির খুব কাছে আবিষ্কার করলো ছিটকে গিয়ে দূরে দাড়ালো তারপর বললো,
–পাগল নাকি আপনি,একটা মানুষকে মার্ডার করতে যাচ্ছিলেন?
আদি বাকা হেসে বলে,
–বোকা নাকি তুমি?আমি তোমাকে মেরে জেলে যাবো নাকি?
সামান্তা চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো।
আদি হোহো করে হাসছে।সামান্তার রাগ মাথায় চড়ে গেলো।একটা মানুষের সাথে কেউ এমন মজা করতে পারে।ইচ্ছে করছে আদিকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে।
সামান্তা রাগে ফুসফুস করতে করতে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
আদি তখনো হাসছে।
যাক তোমাকেও একটু ভয় দেখাতে পারলাম।পাজি মেয়ে।আদি তুই কি সামথিং সামথিং ফিল করতে পারছিস?কিছু তো একটা ফিল অবশ্যই করতে পারছি নয়তো ওর স্পর্শে এমন ফিলিং কেন হচ্ছে?
এটাও কি গুগলে সার্চ করে জানবো?হাহা।

ভার্সিটি অফ।লেট করে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলো ওর জন্য সাইকেল এসে গেছে।কোনোদিক না চেয়ে দৌড়ে গার্ডেনে চলে গেলো সাইকেল দেখতে।কিছুদূর যেতেই আদির ডাক শুনতে পেলো।
–উফফ এই লোক আবার ডাকে কেন?আমাকে কি একটু শান্তি দিবেনা।কালরাতে যে ভয় দেখিয়েছে।
ভাবতে ভাবতেই আদি ওর সামনে এসে দাড়ালো।চোখমুখ শক্ত করে ওর দিকে চেয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে কোনো কারণে রেগে আছে।কিন্তু হাজার অনুসন্ধান করেও কোনো কারণ মাথায় এলোনা।
আদি কটমট করে ওর দিকে তাকাচ্ছে।তারপর কড়া গলায় বলল,
–এই মেয়ে কি পোশাকে বের হয়েছো?আর ওড়না কই?
আদির কথায় নিজের দিকে চেয়ে নিজেরই হুশ উড়ে গেলো।সাইকেলের আনন্দে লাফাতে বেরিয়ে এসেছে।যেভাবে রাতে ঘুমিয়েছিলো সে পোশাকেই চলে এসেছে চেঞ্জ না করে।শর্ট টিশার্ট আর প্লাজো পড়া।চারদিকে কালো পোশাক পড়া লোকগুলো ঘুরে বেরায়।এদের সামনে এভাবে,,।
লজ্জায় সামান্তার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।তবুও নিজের লজ্জা প্রকাশ না করে আদিকে যাচাই করার জন্য নিজের চুলগুলো দুভাগ করে সামনে আনতে আনতে বললো,

–ওড়না না পড়া একটা ফ্যাশন।এ যুগের ছেলের মুখে এসব কথা মানায়না।এ যুগে কয়টা মেয়ে ওড়না পড়ে?ইটস নট এ বিগ ডিল।

সামান্তার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো আদির।সামান্তার দুবাহু চেপে ধরে চিতকার করে বললো,
–সারা দুনিয়ার মেয়েরা জাহান্নামে যাক তুমি এমন পোশাক পরে বাইরে বের হবেনা।আমি যদি ফারদার এমন পোশাক পড়ে বের হতে দেখেছি তবে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।

এমন ভাবে চিতকার করছিলো সামান্তার কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা।সামান্তা চোখ করে মাথাটা দূরে সরানোর চেষ্টা করছে।আদি তখনই ওকে ছেড়ে দিলো।
এক গার্ডকে বললো সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করতে।আদি টিশার্টের উপর শার্ট পড়া ছিলো।নিজের শার্ট খোলে সামান্তাকে জোর করে পড়িয়ে দিলো।সব গার্ডরা এক জায়গায় জড়ো হতেই আদি রাগে ফুসফুস করতে করতে চিতকার করে বললো,
–এই বাড়ির বউ,মেয়েরা যখন বের হবে তখন সবার দৃষ্টি যেন নত থাকে অন্যথায় আমি চোখ তুলে নিতে দুবার ভাববোনা।

তারপর সামান্তার হাত টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো।সামান্তা টু শব্দ করার সাহস পেলোনা।ও শুনেছে এই ছেলে অনেক জেদি,রাগী, হটাৎ হটাৎ রাগ উঠে যায়,রাগ উঠলে আশেপাশের মানুষকে তোয়াক্কা করেনা।কিন্তু তা দেখার সৌভাগ্য এর আগে হয়নি।
বাড়ির ভিতরে নিয়েই সামান্তার হাত ছেড়ে দিলো।সামান্তা এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।আদির সেদিকে পাত্তা দিলো।ওর তো সামান্তাকে ঠাটিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে।এমন পোশাকে কেন বের হবে।দূর থেকে এক গার্ড ওর দিকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছিলো যা দেখেই আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।ও চাইলেই সেই গার্ডকে ডেকে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে পারতো কিন্তু এতে সামান্তা অস্বস্তিবোধ করতো।
এমন লুচ্চা গার্ডকে রাখবেনা আদি।ওকে বিদায়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছে।

সামান্তা দরজা বন্ধ করে কাদছে।তবে এ কান্না কষ্টের না সুখের।আজ ওর বর ওর উপর অধিকার দেখিয়েছে।ওকে শাসন করেছে।সামান্তা আদির দেওয়া শার্টটাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
সারাদিনে সামান্তা আর আদির সামনে পড়েনি।আদি অনেকবার সারা বাড়ি ঘুরঘুর করেছে সামুকে দেখার জন্য কিন্তু দেখা মিলেনি।সারাদিন ছটফট করেছে একটু দেখার জন্য কিন্তু মেয়েটা ঘর থেকেই বের হয়নি।

রাত১টা।সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করলো কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।সামান্তা নাম্বার চেক করে দেখে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।ফোন কেটে দিলো।মাঝরাতে বখাটে ছেলেরা নেশাটেশা করে অপরিচিত নাম্বারে ফোন করে।এসব ভেবেই কেটে দিলো।কিছুক্ষণ পর আবারো ফোন বেজে উঠলো।সেম নাম্বার।সামান্তা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করলো কিন্তু অপরপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।সামান্তার প্রচুর রাগ হচ্ছে।

রাগে গজগজ করতে করতে বললো,,
–ওই কোন আবাল রে,,মাঝরাতে ফোন দিয়ে ইতরামি করিস?সামনে পাইলে থাপড়াইয়া দাতের পাটি হাতে ধরাইয়া দিতাম।বেয়াদব।

–এইগুলো কি ধরনের ভাষা? ছি।

–আবার ছি কস?সামনে আয়,মাঝরাতে মেয়েদের ফোন দিয়ে লুচ্চামি করতে চাস?
শালা বখাটে।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।আদি কানে থেকে ফোন সরাতে ভুলে গেলো।কি ভাষায় গালাগাল করলো কিছু বলার সুযোগ দিলোনা।

কিছুক্ষণ পর সামান্তার দরজায় নক পড়লো।সামান্তা দরজা খোলে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
–আআপপনি,,?
আদির ভিতরে গিয়ে বেডে আয়েশ করে বসে বললো,
–তুমিই তো আসতে বললে।
সামান্তা তাড়াতাড়ি ওড়না খুজতে লাগলো।ওড়না জড়িয়ে বললো,
–আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন?
–তোমার ভাষা এত খারাপ কেন হা?কি আজেবাজে কথা বলো।
–মাঝরাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন আর কিছু বললেই দোষ?
–আমি বিরক্ত কই করলাম।
–এখন আপনি যান আমি ঘুমাবো।
–কি আশ্চর্য তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?
–তাহলে কি করবো?
–একটু গল্প করতে পারো কিংবা বলতে পারো আজকে যেন এখানেই থেকে যাই।
বলেই আদি চোখ মারলো।
সামু চোখ বড় বড় করে চাইলো।
–বের হোন।তাড়াতাড়ি বের হোন।মাঝরাতে ফাজলামো করতে আসছেন?
–না একটু প্রেম করতে আসছি আফটার অল আই এম ইউর হাসব্যান্ড।
সামু আদির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।নিজেকে সামলে বললো,
–কোনো হাসব্যান্ড টাজব্যান্ড নাই।নো হাসব্যান্ড নো প্রেম।আউট।তাড়াতাড়ি বের হোন নয়তো আমি এক্ষুনি বাবাকে ডাকবো।
–আরে যাচ্ছি যাচ্ছি।এমন করো কেন?বাট আবার আসবো।বউ বলে কথা।
সামু চোখ পাকিয়ে বললো,
যাবেন?
–গুড নাইট মাই ওয়াইফ।
বলেই আদি বেরিয়ে গেলো।সামান্তা দরজা লাগিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে আদির বলা কথাগুলো ভাবছে।
আমাকে বউ বলেছে।নিজেকে হাসব্যান্ড দাবি করেছে।আমি কি স্বপ্ন দেখছি??

আদি নিজের রুমে পাইচারি করছে।এই মেয়েটা এমন করে কেন?আমি পরেছি জ্বালায়।কিভাবে যে এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।না জানি কপালে কি দুর্গতি আছে।ও তো আমাকে পাত্তাই দেয়না।সবসময় রাগচন্ডি।যেভাবে তাকায় যেন গিলে খাবে।

ভাবতে ভাবতে আদি ঘুমিয়ে পরলো।স্বপ্ন দেখছে গোধুলি বেলায় একটা মেয়ে ছাদ থেকে নিচের দিকে ঝুকে আছে।তার লালচে আঁকাবাকা খোলা চুলগুলো উড়ছে।চুলগুলো দুভাগ হয়ে এক ভাগ নিচের দিকে ঝুলে পরেছে অন্যভাগ পিঠের উপর।চেহারা দেখা যাচ্ছে না।মেহেদী দেওয়া ফরসা হাতে রেলিং ধরা।আদির মেয়েটির মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে।আদি সামনে গিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে ঘুরিয়ে দেয় মুখটা দেখার জন্য।
আদি মুখটা দেখে অবাক হয়ে যায়।এ তো সামান্তা।

কিন্তু সামান্তা চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে।রাগে ফুসফুস করছে।
–আপনার সাহস তো কম নয় আমার হাত ধরেছেন।
বলেই ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
আদি গালে হাত দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে।চারদিকে চোখ বুলায় সামান্তার চিহ্নও নেই।

–আমাকে স্বপ্নেও জ্বালাচ্ছে।কি ভয়ানক স্বপ্ন!!

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here