তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-৭

0
880

#তোর_শহরে_ভালোবাসা 💜
পর্ব-৭
ফাবিহা নওশীন

গতকালই নিশির এনগেজমেন্ট ছিলো।সব মেহমানরা চলে গেলেও আদির ফুপ্পি আয়েশা খান থেকে গেছেন।ওনি নাকি কিছুদিন ভাইয়ের বাসায় থাকবেন।
গভীর রাত সামান্তা ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।আকাশে রুপালী চাদের সাথে অসংখ্য তারার আলোয় ভরপুর।চাদের আলোয় কেমন চারদিক চকচক করছে।আকাশের শুভ্র নির্মল মেঘ চুপটি করে আছে।সামু চাদের আলো গায়ে মেখে দূর প্রান্তে দেখছে।সামনের রাস্তায় অসংখ্য আলো জ্বলছে।
এই শহর কতটা ব্যস্ত তা জানান দিচ্ছে ওই রাস্তাটা।ছুটে চলার যেন শেষ নেই।এত রাত্রেও মানুষ কিংবা যানবাহনের থামা নেই।সবাই ছুটছে নিজের গন্তব্যে।
সামুর ভিষণ মন খারাপ।কিছুক্ষণ আগেই বাবা-মা আর ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে।তাদেরকে খুব মিস করছে।মিস করছে ওই বাড়িটাকে যেখানে ওর শৈশব কৈশোর কাটিয়েছে।যেখানে প্রতিটি কোনায় তার পদচিহ্ন।মিস করছে নিজের ঘরকে যেখানে মিশে আছে হাজারো স্মৃতি।
নিজের গ্রাম,যেখানে রোজ বিকেলে বন্ধুদের সাথে ছুটে বেরিয়েছে,দস্যিপনা করেছে।মিস করছে কলেজ,কলেজের বন্ধুদের যেখানে শুধু তার রাজ চলতো।এসব ভাবতেই সামান্তার বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
দিনদিন যেন এই শহরের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেনা।শহরটাই এমন।এখানে পা রাখার সাথে সাথেই নিজের কোমলতা হারিয়ে কঠোরতায় রুপ নেয়।কঠোর না হলে বাচতে পারবেনা।এই ইট পাথরের মাঝে যেন সব চাপা পড়ে যাচ্ছে।সমস্ত অনুভূতি,অস্তিত্ব সব।
এখানে যে ভালো নেই তা নয়।সবার ভালোবাসা পেয়েছে তবুও দিনশেষে নিজেকে নিঃসঙ্গ একা লাগে।
সামান্তাকে এখন আদির বিহেভিয়ার গুলো প্রচুর ভাবায়।বুঝতে পারেনা কি চায় ছেলেটা।মাঝেমধ্যে মনে হয় ভালোবাসে আবার মাঝেমধ্যে,,,,।ওর কনফিউশন বেরেই চলেছে।না বুঝে আগানো ঠিক হবেনা।পরে নিজেকেই প্রস্তাতে হবে।সামান্তা গতকালের ঘটনার পর আদির কাছ থেকে দূরে থাকে।
আদিকে আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলো না।মাঝেমধ্যে হেসে হেসে মজা করে,খেপায় আবার হুট করেই চেঞ্জ।রেগে আগুন হয়ে যায়।প্রচন্ড জেদি।আর তারচেয়ে বেশী ভাবায় ও নিজের কথাই ভাবে।নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে।অন্যকে নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।নিজেরটা হলেই চলবে।

সামু এসব ভাবছিলো তখনই সার্ভেন্ট এসে ডাক পাঠায়।
–মেম,আপনাকে ডিনারের জন্য ডাকছে।
–আসছি।
সামু ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলো।ডাইনিংয়ে সবাই বসে খাচ্ছে।সামু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আদি,আদির মা,বাবা,ফুপ্পি।আদির ফুপ্পিকে সামুর পছন্দ হয়নি।মহিলা অনেক অহংকারী।কিভাবে যেন কথা বলে,সামুকে পছন্দই করেনা।কেন করবে সামুর বাবার তো প্রতিপত্তি নেই।তাহলে কেন মাথায় করে রাখবে।

নিশি ফোন হাতে হাসতে হাসতে চেয়ার টেনে বসলো।তা দেখে আদি বললো,
–কিরে মাথা গেছে নাকি?
পাগলের মতো হাসছিস কেন?
–আমার কথাটা শুনলে সবাই হাসবে।কি হয়েছে জানিস?
আদির বাবা আগ্রহের সাথে বললো,তা কি হয়েছে বল,আমিও শুনি।
নিশি হাসতে হাসতে বললো,
সামু,,
আদি ভ্রু কুচকে তাকালো।
সবাই আগ্রহের সাথে নিশির দিকে চেয়ে আছে।
–জয়ের এক কাজিন আছে রাজ।গতকাল এসেছিলো।ও কানাডায় ইঞ্জিনিয়ার।সামুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।হাহা,,,।
কথাটা শুনে সামু বিষম খেলো।আদির হাত থেকে কাটা চামচ প্লেটে পড়ে টুং করে শব্দ হলো।
আহনাফ চৌধুরী মেয়ের কথায় হেসে দিলো।

নিশি আবারো হেসে বললো,ওরা ভেবেছে সামু আমার কাজিন।অবিবাহিত।ও যে আমার ভাবী সেটা ভাবতেই পারেনি।কি করেই বা বুঝবে সামু তো বাচ্চা একটা মেয়ে।
আমাকে যখন জয় বলেছে আমি হাসি থামাতেই পারছিলাম না।

আহনাফ ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
তুমি তো কদর ই করোনা,দেখেছো ওর জন্য তোমার চেয়ে ভালো ছেলের সমন্ধ এসেছে।সময় থাকতে কদর না করলে,,,প্রস্তাতে হবে।
আদি চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে চেয়ার টেনে খাওয়া ছেড়ে চলে গেলো।
আদির ফুপ্পি বললো,
–ভাইয়া তুমি কি বলোতো ছেলেটা খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলো।এসব না বললেই কি হতো না।ওই ছেলের পছন্দ হয়েছে বলে আদির তবে তাতো নয়।মাঝখান থেকে না খেয়ে চলে গেলো।
–দুই একদিন না খেলে কিছু হয়না।
সামুরও খাওয়ার ইচ্ছে নেই।ডাইনিং ওভারটেক করে নিজের রুমে চলে গেলো।

🌾🌾
আজকাল সামুর কোনো কিছুই ভালো লাগেনা।ভার্সিটি,কোচিং,বাসা কোনো কিছুই ভালো লাগেনা।কিসব ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকে।নিশির সাথেও আগের মতো আড্ডা দেয়না।কেমন চঞ্চলতা হারিয়ে গেছে।
লিভিং রুমে বসে বসে পড়ছিলো কিন্তু মন বসাতে পারছেনা।তাই বই নিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে।আনমনে কিসব ভাবছে তখনই ধাক্কা খেলো।সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে আতকে উঠলো।তার হাতের ফোনটা ফ্লোরে পড়ে গেছে।আর তিনি চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখুনি গিলে খাবে।তিনি হলেন আদির ফুপ্পি আয়েশা খান।তিনি তার লন্ডনে বাসরত মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন।আর তখনই সামুর সাথে ধাক্কা লাগে আর ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায়।সামান্তা ফোন তুলে দেখে ফোনের এক কোনা ফেটে গেছে।এটা দেখে ওনি ভিষণ ক্ষেপে যায়।এমনিতেই সামুকে দেখতে পারেনা তার উপর ধাক্কা দিয়েছে,ফোন ভেঙেছে।
তিনি গজগজ করতে করতে আচমকা সামান্তার গালে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারে।সামান্তার গাল মনে হচ্ছে ফেটে যাচ্ছে।বাবা-মা কখনো ওর গায়ে হাত তুলে নি।মার খাওয়ার অভ্যাস নেই।গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ছলছল চোখে চেয়ে আছে।ওনি যে ওকে থাপ্পড় দিতে পারে সেটা ভাবতেই পারেনি।ভেবেছিলো হাজারটা কথা শুনাবে।

আয়েশা খান কড়া গলায় বললো,
–চোখ কি আকাশে রেখে হাটো যে মানুষ চোখেই পড়েনা,,তা পড়বে কিভাবে।গ্রাম থেকে এসে রাজপ্রাসাদে উঠেছে,,পাখা গজিয়েছে না,,এখন আর কাউকে চোখে পড়বে নাকি?
লো সোসাইটির মানুষের এই সমস্যা বড়কিছু পেলেই উপরে পড়ে।মাটিতে পাই পড়েনা,,।এখানে কিসের জন্য পড়ে আছো শুনি,,,।বেয়াদব মেয়ে গায়ের উপর এসে পড়ে।

বলেই তিনি সামনে হাটা দিলো সামান্তা গাল ধরেই দাড়িয়ে আছে।তারপর চারদিকে চেয়ে চোখ মুছে নিজের রুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে কল ছেড়ে কাদতে লাগলো।আর ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে একটু হাওমাও করে কাদতে পারতো।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।ফরসা গালে চার আংগুলের ছাপ স্পষ্ট।এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়াও মুশকিল।তখনই আহনাফ চৌধুরী দরজায় নক করলো।
–কে?
–আমি,,তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ এসো অপেক্ষা করছি।গতকাল খাওনি আজ আর তা হবেনা।
–আসছি।
এখন কি করবে,এই গালের দাগ কিভাবে সরাবে।জ্বালাও করছে খুব।মুখে পাউডার মেখে নিলো।তারপর গালের উপর চুল এনে রাখলো।রুম থেকে বের হতেই আদির ডাক।
–সামান্তা এদিকে এসো,কথা আছে।(সিরিয়াস ভংগীতে)
–(এই লোক আর ডাকার সময় পেলোনা।আর এমন সিরিয়াস লাগছে কেন,কি করবো,যাবো না যাবো না।কি করি)
–তাড়াতাড়ি,,
–আসছি।
সামু ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো কিন্তু মুখটা একটু কাত করে রাখলো।নিজেকে লুকানোর চেষ্টা আর কি।
আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো সামান্তা ওর দিকে তাকাচ্ছেনা তাই।
–গালের উপর এমন চুল এনে রেখেছো কেন বিশ্রী লাগছে।
বলেই একটানে হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতেই সামান্তা ব্যথায় আহ করে উঠলো।আদি হকচকিয়ে গেলো।
–সরি সরি লেগেছে,আমি বুঝতে পারিনি।

ওর গালে হাত রাখতেই সামান্তা ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো তারপর নিজের হাতে গাল ঢেকে ফেললো।আদির কেমন সন্দেহ হলো কি এমন হলো যে এত ব্যথা পেলো আবার সরেও যাচ্ছে।

–দেখি এদিকে ঘুরো।(নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল)
সামান্তা গালে হাত দিয়েই রেখেছে।আদি টান মেরে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে আতকে উঠে।কিছুক্ষণ গালের দিকে চেয়ে রইলো।
–সামান্তা এসব কি?
সামু আমতা আমতা করে বলল,
–ইয়ে মানে,,,এলার্জি প্রব্লেম।
–তুমি আমাকে বোকা পেয়েছো?এটা এলার্জি?কে মেরেছে বলো?
–আশ্চর্য আমাকে কে মারবে?
ঝাঝালো গলায় বলল,
–আমি তো সেটাই জানতে চেয়েছি কে মেরেছে।
সামান্তা শান্তস্বরে বললো,
–বললাম তো কেউ মারেনি।

আদি বুঝতে পারলো ও স্বীকার করবেনা।ওকে টানতে টানতে ডাইনিংয়ের সামনে নিয়ে গেলো।সামান্তা বাধা দিচ্ছে কিন্তু শুনছেনা।রাগে আদির শরীর কাপছে।চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।সামান্তাকে এই বাড়ির কেউ মারতে পারে সেটা ও বিশ্বাস ই করতে পারছেনা।
ডাইনিংয়ে নিশি,আদির বাবা,মা,ফুপ্পি বসে আছে।
ডাইনিং এর সামনে গিয়ে সামান্তাকে নিয়ে দাড়ালো তারপর শান্ত গিলায় জিজ্ঞেস করলো,
–সামান্তাকে কে মেরেছে?
আহনাফ চমকে উঠলো,
–কি বলছিস আদি,,সামান্তাকে কে মেরেছে মানে?
আদি সামান্তাকে সামনে নিয়ে গাল দেখালো।
তিনিও অবাক।সামান্তা সবার আদরের কে মারবে।
–সামু কে মেরেছে,,?
–বাবা কেউ মারেনি এলার্জি,,
আদি ধমক দিয়ে বললো,
–একদম মিথ্যা বলবেনা।সত্যি না বললে এখানে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো।
আদি আবার ওনাদের দিকে চেয়ে বললো,আমি জানতে চাই কে মেরেছে?

আহনাফ নিশির দিকে চাইলো, নিশি ইশারায় মানা করলো,,আদির মাও মানা করলো।সবাই তখন আয়েশা খানের দিকে চাইলো।তিনি মাথা নিচু করে আছে।
–আয়েশা,,
আয়েশা খান কাচুমাচু করে বললো,
–ভাইয়া ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফোন ফেলে দেয় তাই রাগ উঠে গিয়েছিলো।
–তাই বলে তুই ওকে মারবি?কি অদ্ভুত কথা।ও এ বাড়ির বউ।

আদি বললো, ছি ফুপ্পি,,তুমি এতটা নিষ্ঠুরতম কাজ কি করে করলে?ধাক্কা নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে দেয়নি।তুমি এভাবে মারতে পারলে?
–ও ইচ্ছে করেই,,
–ফুপ্পি সামান্তা এতটা বেয়াদব নয় বড়দের ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে?তোমার সাথে ওর কি শত্রুতা যে ও তোমাকে ফেলে দিবে?
–আদি,আমি বুঝতে পারিনি,এত জোরে লাগবে।
–বুঝতে পারোনি কিন্তু থাপ্পড়ের দাগ দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি কোনো ক্ষোভ ঝেড়েছো।
তোমাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি কিন্তু তার মানে এই নয় সামান্তার সাথে খারাপ বিহেভিয়ার আমি মেনে নিবো।
–(এই ছেলে আবার এত বউ পাগল কবে হলো ফুপ্পি মনে মনে বলছে)আমি তো বলছি,,
–তোমার আর বলা লাগবেনা।নেক্সট টাইম আমি আমার ওয়াইফের গায়ে ফুলের টুকাও সহ্য করবোনা।সবার উদ্দেশ্যে বলছি।
সামু কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই আদি আবার ধমকে উঠে,,
–তোমাকে না চুপ থাকতে বলেছি।
আদি সার্ভেন্টকে আইস প্যাড নিয়ে ওর রুমে আসতে বললো।
ফুপু সাথে সাথেই ফুসফুস করতে করতে খাবার টেবিল ত্যাগ করলো।বাকিরা আদির কথা শুনে স্তব্ধ।আদির বাবা মৃদু হেসে বললো,
যাক,,আমার ছেলে তবে লাইনে এসেছে।বউকে প্রটেক্ট করছে।

আদি সামান্তাকে ওর রুমে নিয়ে বসালো।তারপর রাগান্বিত সুরে বললো,
–সামান্তা তোমাকে দেখে তো অবলা নারী মনে হয়নি।আজ যা করলে তুমি শ্যাম অফ ইউ।এই তোমার নীতি?নাকি তোমার যত রাগ আর ঘৃনা আমার উপর তাই আমার উপর সব ঝাড়ো বাকিদের সাথে ঠান্ডা।

সামান্তা মাথা নিচু করে আছে।ও চায়নি কোনো ঝামেলা হোক।তাই কিছু বলতে চায়নি।চুপ ছিলো।কিন্তু ঝামেলা তো একটা হয়েই গেলো।

–এই মেয়ে চুপ করে আছো কেন?বোবা হয়ে গেছো?(চিতকার করে)

সামান্তা কেদে দিলো।এই প্রথম সামান্তাকে কাদতে দেখলো।এত শক্ত একটা মেয়ে কাদছে।আদি এটা মেনে নিতে পারছেনা।ওর কান্না দেখে আদির বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।হটাৎ ও সামান্তাকে বসা অবস্থায় জড়িয়ে ধরলো।সামান্তাও বাধা দেয়নি।ও নিজেও জড়িয়ে ধরলো।ওর কাউকে প্রয়োজন ছিলো জড়িয়ে ধরে কাদার জন্য।আদিকে জড়িয়ে ধরেই কাদছে।

সার্ভেন্ট দরজায় এসে নক করতেই আদি সামান্তাকে ছেড়ে দিলো।আইস প্যাক এনে গালে কিছুক্ষণ রাখে তারপর ওষুধ লাগিয়ে দিলো।সামান্তা বারবার আদির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।সামান্তার বর্তমানে আদিকে খুব আপন মনে হচ্ছে।আদি ওর হাত ধরে বললো,
–চলো ডিনার করবে।
সামান্তাকে নিয়ে নিচে এলো।দুজনে একসাথে বসেই ডিনার করলো।সামান্তা চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো।

সামু বিছানায় শুয়ে ভাবছে ওনি কি আমাকে ভালোবাসেন?নাকি মোহ?

🍇🍇

নিশি বাবার সামনে দাড়িয়ে আছে,,
–বাবা একটা কথা ছিলো?
–হুম বলো।
–বাবা জয় একটা পার্টি দিয়েছে।দেশে ফিরা উপলক্ষে।ওর ফ্রেন্ডস,কাজিনদের নিয়ে।আমাকে,ভাইয়া আর সামুকে যেতে বলেছে।
–তো যাও।
নিশির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
–সত্যি!!
–কেন নয়?তোমার হবু বর যেতেই পারো।আদিকে জানিও।সামুকে সাথে নিয়ে যেও।মেয়েটার এমনিতেই মন খারাপ।
–আচ্ছা।

নিশি আদিকে বলেছে কিন্তু তার নাকি অন্য কাজ আছে সে যাবেনা।সামান্তা আর নিশি রেডি হয়ে পার্টিতে গেলো।সামু যেতে চায়নি কিন্তু সবার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েছে।
পার্টিতে ওদের ভালো ভাবেই ওয়েলকাম করেছে।জয় নিশি আর সামান্তার সাথে কথা বলে ওদের ড্রিংক দিতে বলে জয় ওর ফ্রেন্ডদের ওয়েলকাম করছে।
নিশি আর সামু বসে আছে।তখনই রাজ এলো।নিশি সামুকে ইশারা করলো।
–হাই বিউটিফুল গার্লস!!
–হায়!!(নিশি)
–আমি আসলে সামান্তাকে সরি বলতে এসেছি।সামান্তা একটু এদিকে আসবে প্লিজ।২মিনিট কথা বলতে চাই।
নিশি যেতে বললো।

–সামান্তা আই এম রেইলি সরি।আমি জানতাম না তুমি মেরিড।আসলে আম্মুর তোমাকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছে।আর আমিও তোমার সাথে ওইদিন কথা বলেছিলাম আম্মু দেখেছে।তাই বিয়ের কথা বলে,,তোমার সাথে কথা বলে তোমাকে ভালোই মনে হয়েছে,, তাই,,,,,,।প্লিজ সরি।
–ইটস ওকে।আমি কিছু মনে করিনি ভুল হতেই পারে।
–আসলে ওইদিন তোমার সাথে তোমার হাসব্যান্ডকে একবারো দেখিনি আর তাছাড়া তুমি নিশিতা ভাবির কাজিন পরিচয় দিয়েছিলে।কেন দিয়েছিলে?
–আসলে আমাদের বিয়ে হলেও আমাদের সম্পর্ক তেমন নয়।তাই আর কি।
–মানে??
সামান্তা চুপ করে আছে আর কিছু বলতে চাইছেনা।
রাজ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,
বুঝতে পেরেছি আজকেও সাথে আসেনি।এতে বুজাই যায়,,,যাইহোক সরি।তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো?
–জ্বী।
–আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
–মানে??
–মানে কম্পিউটার,ল্যাপটপ জনিত কোনো প্রব্লেম হলেই আমি আছি।সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইউ নো।
–ওকে।ধন্যবাদ।
–আচ্ছা আমার নাম্বারটা রাখো।
সামান্তার ওর নাম্বার নেওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই কিন্তু মুখের উপর নাও করতে পারছেনা।
–কি হলো ফোন বের করো নয়তো কিভাবে নেবে?
–সামান্তা ভদ্ররা দেখিয়ে ফোন বের করে ডায়াল লিষ্ট বের করতেই রাজ ফোন কেরে নিয়ে নিজের নাম্বার তুলে নিজের নাম্বার ডায়েল করে সামুর নাম্বার ও নিয়ে নিলো।সামান্তা হতবাক।কিছু বলার আগেই ফোন দিয়ে চলে গেলো।সামান্তা মনে মনে চোদ্দগুষ্টি উদ্দার করছে।
নিশির কাছে গিয়ে সব জানালো।নিশি বললো,বাদ দে।না তুই ওকে ফোন দিবি না ও দিবে।

আদি ড্রাইভ করছে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছে।হটাৎ ই গাড়ি চালানো থামিয়ে দেয়।
–ওহ,নো এ আমি কি করেছি?সামুকে একা যেতে দিয়েছি।ওখানে তো সেই রাজ না বাজ আসবে।আর তাছাড়া কত ছেলেরে আসবে,সামুর সেইফটি নিয়ে টেনশন হচ্ছে।কেন যে গেলাম না।আদি তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছিস।
আদি তাড়াতাড়ি ফোন বের করে সামুকে ফোন দিলো।

সামু একা একা বসে আছে।তখনই ফোন বেজে উঠলো।
–হ্যালো।
–আমি আদি।
–বলুন।
–পার্টি শেষ?
–কিছুক্ষন পরেই শেষ হবে।
–ওকে শুনো,,যতক্ষণ আছো নিশির সাথে থাকবে।ওকে দেখার লোক থাকলেও তোমার দেখার কেউ নেই।তাই তুমি নিশির সাথেই থাকবে।ওখানে সব ইয়াং ছেলেরা এসেছে।সো বি কেয়াফুল।সাবধানে থাকবে।কোনো সমস্যা হলেই আমাকে ফোন দিবে।আমি আশেপাশেই আছি।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো আদি বললো।তারপর জোরে নিশ্বাস নিলো।

সামুর হাসি পাচ্ছে।তবুও নিজেকে সামলে বললো,
–আচ্ছা।
–আর ওই রাজ না বাজ তার থেকে দূরে থাকবে নয়তো ওইদিনের কথা মনে আছে,,?
–মনে আছে।
তালে তালে বলে ফেললো।
আদি বাকা হেসে বললো,
–কি মনে আছে?
–(হায় হায় তালে তালে কি বলে ফেললাম)না,কিছু মনে নেই।
–তাই?ঠিক আছে বাসায় আসো মনে করিয়ে দিবো।
সামান্তা ঢুক গিলে বললো,রাখছি।
আদি হাহা করে হেসে দিয়ে বললো,বায়।তাড়াতাড়ি এসো।
সামান্তা ফোন রেখে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছে।
–আজ যে রাজের সাথে আমার কথাই নয় ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ হয়েছে সেটা জানলে আমাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here