সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ১১

0
800

#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ১১

.

অভি বুকে বাম হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি সহকারে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,” তুমিতো শুধু অভির রসগোল্লা।”

বিদ্যার মুখ থেকে আর একটি কথাও বের হলোনা। কিন্তু ভিতরে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অভির উপর। এই ছেলেটা এমন কেন? গায়ে পড়ে প্রেম নিবেদন করছে। তার বুদ্ধিশুদ্ধি বলে কি কিছুই নেই! আমি যে তার বড় সেটা কি সে ভূলে গেছে?

এমন সময় সাধনা দেবী তরকারির বাটিটা এনে বিদ্যার পাশে দাড়াল। তারপর অভির দিকে একপলক চেয়ে বলল,” বিদ্যা, অভি দেখতে অনেকটা অপুর মত তাই না!”

বিদ্যা ওর মায়ের কথায় ভিষন রেগে গিয়ে নিচু গলায় বলল,” মা, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? অপু দাদা এই ছেলের মত হতে যাবে কেন? আর শোন, অপু দাদা কখনোই এরকম বিয়াদপ টাইপের মানুষ না।”

মিসেস. শ্যামল আবার আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন তো? আমি এটা আপনার কাছ থেকে আশা করিনি। আমি তো আমিই। আমার কারো মত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে অভি খাবার ছেড়ে কিছুটা রাগ নিয়েই ওখান থেকে চলে গেল।

এবার সাধনা দেবীর মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। বিদ্যাও বলছে এ অপুর মত দেখতে নয় আবার অভিও বার বার বলে, ওর সাথে কোন দিন আমাদের দেখা হয়নি। আমি মনে হয় ছেলেটাকে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

রিতু ওখান থেকে ফোঁস করে উঠে বলল,” বিদ্যা দিদি, অভিদা না খেয়ে উঠে গেল কেন? তুমি কি তাকে কিছু বলেছ?”

-” না তো! আমি তাকে কি বলব। আমি তার সাথে এখনো ঠিকমত পরিচিতই হইনি।”

অহ্ বলে মুখ ভার করলো রিতু। রিতুর ইদানিং সন্দেহ হয় বিদ্যাকে নিয়ে। অভিদা কেন ওখানে বসলো! ঠিকতো আমার পাশেই বসেছিল।

শর্মিষ্ঠার ধমক খেয়ে রিতুর ধ্যান ভাঙ্গলো। কিরে, খাওয়া বাদ দিয়ে কি ভাবছিস?

-” কিছু না মা।”

-” তাহলে খাবার কম্পলিট কর!”

হুম বলে খাবারের দিকে মনযোগ দিল রিতু। অভি যে শুধু রিতুর ক্রাস সেটা নয়! মিতু, টুম্পা, জেসি সবার ক্রাস অভি।

♥♥

খাবার শেষ করে বিদ্যা রুমে আসতেই দেখে, একটা ছোট বক্স ওর বিছানায়। রেড কালারের গিফট্ পেপারে মোড়ানো ছিল বক্সটি। এটা আবার কে দিল বলে এদিক ওদিক তাকালো, কিন্তু কাউকে দেখতে পেলনা। বক্সটির উপরে ছোট্ট একটা চিরকুট লিখা। সেখানে লেখা আছে, এই মিস আমাকে খোল।

বিদ্যা কপাল জড়িয়ে কৌতুহলী মন নিয়ে বক্সটি খুলতেই সারপ্রাইজড হয়ে গেল। iphone-11……!
আজই ফোনটা ভেঙ্গে গেছে। রাত হয়ে যাওয়ায় আর ফোন কেনা হয়নি। খুব টেনশনে ছিলাম, আজ বুঝি অঞ্জনা মায়ের সাথে আর কথা হবেনা। অন্যদের ফোন থেকেও তাকে কল করতে পারবোনা। এই বাসার কেউ ঐ বাসার লোকদের পছন্দ করেনা। কিন্তু আমার সমস্যার সমাধান করে এই ফোন কে দিল! তাও আবার এত দামি ফোন? নানা রকম সাত-পাঁচ ভাবতেই দরজায় নক পড়ল। বিদ্যা চমকে উঠে পিছন ফিরে চাইতেই অভিকে দেখতে পেল। এই ছেলে আমার মাথা নির্ঘাত নষ্ট করে ফেলবে। এ এখানে কেন?

অভির আর লজ্জা হল না। দাঁত কেলিয়ে বলল,” ম্যাম, আমরা কি ভিতরে আসতে পারি?”

এই বান্দর আমার পিছ দেখছি ছাড়ছেই না। সঙ্গে বাসার সব মেয়েদের হাজির করেছে। উফ্ গড বাঁচাও এদের হাত থেকে। অনিচ্ছা সত্তেও ওদের ভিতরে আসতে বললো বিদ্যা।

হৈহৈ করে সবাই ঢুকে পড়ল রুমে। সাথে যোগ হয়েছে, বিদ্যার আরো তিন দাদার ছেলেমেয়ে। রিভা, আয়ান আর তমাল। এরা প্রায় সমবয়সী। ১৭ বছর বয়স হবে।
সবাই মিলে বিদ্যার খাট দখল করে নিল।

-“ওয়াও, আপনার হাতে দেখছি নিউ ফোন। কেউ কি ম্যামকে গিফট্ করেছে নাকি? না আপনি নিজেই কিনেছেন?”

অভির কথা শুনে সবাই বিদ্যার হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকালো। এই আন্টি, তুমি কি নতুন ফোন কিনেছ? ওয়াও কি দামী ফোন বলেই বিদ্যার হাত থেকে রিভা চট করে ফোনটা নিয়ে চেক করলো।

-“তোমার পছন্দ হয়েছে রিভা! যদি পছন্দ হয় তাহলে ফোনটা তোমার কাছে রাখ।”

রিভাতো বিদ্যার কথা শুনে সেই হারে খুশি হয়েছে। কিন্তু বাঁকিরা মন ভার করে সেই ফোনের দিকে চেয়ে রইল। ইশ্ আমি যদি আগে চাইতাম তাহলে আমি ফোনটা পাইতাম। কথাটি সবার মাঝে বলেই ফেলল মিতু।

রিভা কি করছো বলতো! ফোনটা তোমার আন্টিকে কেউ গিফট্ করেছে। এখন সে যদি জানে তার গিফট্ প্রিয় মানুষটা পায়নি তাহলে সে কতটা কষ্ট পাবে বল! কারো জিনিস এভাবে নিতে নেই।

সবাই সঙ্গে সঙ্গে অভির কথায় সায় দিল। রিভা অবশেষে মনে কষ্ট নিয়ে বিদ্যাকে ফোনটি ফেরত দিল। গুড গার্ল বলে অভি রিভাকে থ্যাংকস জানালো।

এদিকে বিদ্যা একরাশ বিরক্তি নিয়ে অভির দিকে চেয়ে আছে। অভি সেটা মোটেও পাত্তা না দিয়ে গল্পে মজে গেল। জেসি চট করে বলে উঠলো,” অভিদা, তোমার গার্লফেন্ড নেই?”

জেসির এমন কথায় সবাই অভির দিকে তাকালো। মোটামুটি সবার বুক দুর দুর করছে আর প্রার্থনা করছে, গড, অভিদার যেন কোন গার্লফেন্ড না থাকে।

অভি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল,” আমিতো ম্যারেড। আমার ছয় বছরের একটা কিউট বউ আছে। তাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।তার খোঁজেই আমি বাংলাদেশে এসেছি।”

অভির কথা শুনে সবাই কথাটি হেঁসে উড়িয়ে দিলেও বিদ্যা কথাটি সিরিয়াস ভাবে নিল। অভি আমার কাছে চায় কি! কেন আমার অতীত জিবন নিয়ে আমার পিছু নিয়েছে?

-“হেই গার্লস, আমি কিন্তু সত্যি বলছি। আমার ছয় বছরের একটা বউ আছে। তাই আমি মোটেও সিঙ্গেল না। আমার পাশের সিট একদম ফাঁকা নেই।”

সব মেয়েদের মুখ ভার হয়ে গেল। এমন সময় অভির ফোনে কল আসল। অভি ফোনের স্কীনে তাকিয়ে বলল,” হেই গাইস, আমার একটা কল এসেছে। বাই…”

অভি চলে গেলে বাঁকিরা সবাই আলোচনা করতে লাগল অভিকে নিয়ে। সত্যি কি অভিদা বিবাহিত? তাও একটা ছয় বছরের মেয়ের সাথে নাকি বিয়ে হয়েছে। একজন ২৫ বছর ছেলের সাথে কিভাবে ৬ বছরের মেয়ের বিয়ে হয়? অবিশ্বাশ্য কথাটা তাই না?

টুম্পা লম্বা একটা হাই তুলে বলল,” ধ্যাত, আমার মনে হয় অভিদা মস্কারা করছে। শুধু শুধুই আমরা টেনশন করছি। তোরা জানিস না! বেশি ভয়ঙ্কর স্মার্ট আর সুন্দর ছেলেরা মেয়েদের থেকে বাঁচার জন্য নিজেরা অবিবাহিত থাকা সত্তেও নিজেদের বিবাহিত বলে পরিচয় দেয়। আমার মনে হয় অভিদা এসব ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চায়না তাই সবাইকে বিবাহিত বলে পরিচয় দিচ্ছে।

মিতু উচ্ছসিত হয়ে বলল,” ঠিক বলেছ, আমাদের শুধু টেনশনে ফেলে দিল অভিদা। কাল ওনার বিচার হবে।”

রিতু চোখদুটো কয়েন এর মত করে বলল,” বিচার! কিসের বিচার?”

আমাদের মিথ্যা বলার জন্য তার বিচার হবে। তোমাদের ওনার উপর দরদ থাকলে তোমরা না করতে পারো। কিন্তু আমি ঠিকিই ঐ কথার কৈফিয়ত চাইবো ওনার কাছে। কথাটি বলে মিতু ওর হ্যান্ড ওয়াচের দিকে চেয়ে দেখে অনেক রাত হয়ে গেছে। ওহ্ মাই গড, এত রাত জাগলে নির্ঘাত আমার চোখের নিচে ডার্কনেস পড়বে।

আরে থামো বলে ধমক দিল জেসি। এমন আড্ডার রাত আবার কবে আসবে কে জানে। আর একটু আড্ডা দেইনা!

আরো কিছুক্ষন অনেক কথা বলে আসর ভেঙ্গে দিয়ে সবাই যার যার রুমে চলে গেল। বিদ্যাও সোফায় বসে থাকতে থাকতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

♥♥

অভি ছাদে দাড়িয়ে প্রায় আধাঘন্টা হল ওর বাবার সাথে কথা বলছে। তারপর ওর বাবা ওর মাকে ফোন দিতেই অভি মন ভার করে বলল,” মম, আই মিস ইউ।’

মিস ইউ টু মাই সান। মিসেস. জুলিয়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলে উঠল,” কি হয়েছে অভি! এত আপসেট লাগছে কেন?”

-” মম, আমি যদি তোমার অবাধ্য হই তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবে তো?”

-” আমার ছেলে দুনিয়ার বেষ্ট ছেলে। সে কখনো ভূল কাজ করতেই পারেনা।”

-” তবুও যদি তোমার কথা না শুনি তখন কি তুমি আমায় শাস্তি দিবে, না আগের মতই কাছে টেনে নিবে?”

-” তুমি আমার কলিজার টুকরো বাবা, তোমার ভালোবাসায় কমতি পড়বে বলে আমরা আর কোন সন্তান নেইনি। তাই তোমার স্থান সর্বদা আমার বুকেই।”

-” আমি তোমাকে খুব মিস করছি মম। ড্যাডকে বলে দিও তাকেও খুব মিস করছি।”

-” তুমি ব্যাক করবে করে! তোমার বাবা নিউ মডেলের একটা কার কিনেছে তোমার জন্য। জলদি ব্যাক করো অভি।”

-” ওকে মম।”

অভি ওর মায়ের সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে কল কেটে দিয়ে আকাশের পানে চেয়ে বলল,” আই মিস ইউ বিদ্যা। আমি এবার তোমাকে নিয়েই বাড়ি ফিরবো।”

প্রায় দেড় ঘন্টা পর অভি বিদ্যার রুমে এসে দেখে কেউ নেই রুমে। সবাই চলে গেছে। শুধু বিদ্যা সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
অভি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যার পাশে এসে দাড়ালো। তারপর বিদ্যাকে সোফা থেকে কোলে নিয়ে বিছানায় খুব সাবধানে সুয়ে দিল। গায়ে ভালোকরে কম্বোল জড়িয়ে দিয়ে এসি অন করে টেম্পারেচার একটু কমিয়ে দিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিল।
অভি আস্তে আস্তে বিদ্যার কাছে এল, তারপর ওর হাত দিয়ে ছুয়ে দিল বিদ্যার গাল। অভির তৃপ্তি যেন মিটলোনা। অভি বিছানায় আধাসোয়া হয়ে বসে একদম বিদ্যার কাছে আসল। বিদ্যার প্রশ্বাস অভির নাক ও মুখ ছুয়ে যাচ্ছে। মার্টিলের মত নেশা ধরে গেল অভির। মার্টিলে এক চুমুক দিলে যেমন নিজেকে মনে হয় সে স্বর্গে ভাসছে ঠিক তেমনি বিদ্যার প্রস্বাসও অভিকে মাতাল করে দিচ্ছে। অভি এবার নিজের গাল দিয়ে বিদ্যার গাল ঘষতে লাগলো। বিদ্যা ঘুমের ভিতরই নড়ে উঠলো।

অভি থেমে গেল। এ দেখছি ঘুমের মধ্যও আমাকে জ্বালায়। অভি বিদ্যার গালে আলতো ঠোটের ছোয়া দিয়ে বলল,” অপু তোমার কাছ থেকে চলে গেছে কত লম্বা সময় আগে তবুও অপুকে তুমি কত ভালোবাস আর এই অভি তোমার এত কাছে আছে তবুও তার দিকে ফিরেও চাওনা। এমন কেন তোমার ভালোবাসা? পাগলের মত তোমায় খুঁজেছি। আজ পেয়েও যেন তোমার আর আমার মাঝে বিশাল দেওয়াল দাড়িয়ে আছে। এই দেওয়াল যে তোমাকেই ভাঙ্গতে হবে বিদ্যা! আমি অপেক্ষায় থাকবো। জানিনা কবে তুমি রিলাইজড করবে আমাকে।”

অভি কথাগুলো বলে আর এক মুহুত্বও দেরী করলোনা। বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।

♥♥

সকালের আড়মোড়া ভাঙ্গতেই বিদ্যা দেখলো, ওর হাতের কাছে ফোন পড়ে আছে। কার ফোন বলে সুয়ে থেকেই ফোনটা চেক করলো বিদ্যা। কিন্তু ফোন লক করা। তবে ফোনের স্কীনে অভির পিক দেখে বিদ্যা বুঝতে পারলো এটা অভির ফোন।
অভির ফোন এখানে কিভাবে আসলো? গতকাল রাতের কথা স্মরন করতেই বিদ্যার মনে পড়লো, এখানে অভি এসেছিল। কিন্তু ও তো ফোন নিয়ে বাহিরে গেল কারো সাথে কথা বলতে বলতে। তাহলে কিভাবে? দরজার দিকে চাইতেই বিদ্যা বড়রকম শর্ক খেল। দরজা বন্ধ ছিল। আমি কি দরজা বন্ধ করে ঘুমাইছিলাম? আর আমিতো সোফায় ছিলাম তাহলে বেডে আসলাম কিভাবে? উফ্ বিদ্যা, এতসব চিন্তা করতে করতে একসময় পাগল হয়ে যাবি। কিছুতো চলছে, আচ্ছা এসব অভির কাজ নয়তো? ধ্যাত বলে বিদ্যা ওয়াশরুমে চলে গেল।

ওয়াশরুম থেকে ফিরে আগে আইফোনে ওর সিমটা তুলে অঞ্জনা মাকে কল দিল বিদ্যা। কাল থেকে কল দেওয়া হয়নি। মা ভাববে, আমি সত্যিই তাদের ভূলে গেছি। ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ কল রিসিভ করছেনা। বাসায় কি কেউ নেই নাকি? বিদ্যা আবার কল দিল। এবার কল রিসিভ হল।

-” হ্যালো জেঠিমা! আমি মিশু।”

বিদ্যা কিঞ্চিত হেসে বলল,” এবাবা, এটা যে আমার বাবা রিসিভ করেছে। তা বাবা কেমন আছেন আপনি?”

-” ভালো নেই জেঠিমা। মা আমাকে অনেক মেরেছে। মা খুব পঁচা। তুমি কবে আসবে জেঠিমা?”

মিশুর কান্না শুনে বিদ্যার চোখ ভরে জল এল। রনকের বৌ মিতা মিশুকে একটু বেশিই শাসন করে। মানুষ সন্তান পায়না আর ও পেয়েছে কিন্তু কদর করতে জানেনা। জানিনা কার উপর হিংসা করে নিজের ছেলেকে ওমন করে শাসন করে। বিদ্যা চোখের জল মুছে বলল,” তোমার বাবা কই মিশু?”

বাবা তো আজ বাসায় আছে জেঠিমা। তুমি বাবাকে বলে দিবে! মা যেন আমাকে এভাবে মারেনা বলে কেঁদে উঠল মিশু।

-“বাবাকে দাও মিশু।”

আমি এখুনি দিচ্ছি জেঠিমা বলে মিশু দৌড়ে গিয়ে রনককে ফোন দিয়ে বলল,” বাবা জেঠিমা।”

সামনে মিতা দাড়িয়ে ছিল। জেঠির কথা শুনে চোখ গরম করে রনকের দিকে তাকালো মিতা। কিন্তু রনক সেটাকে পাত্তা না দিয়ে ফোন নিয়ে চলে গেল।

মিতা এসে মিশুর গালে একটা থাপ্পড় মেরে বলল,” সকালে এত মার মারলাম তবুও তোর লজ্জা হলোনা? আবার বাবাকে জেঠির সাথে কথা বলতে সাহার্য্য করিস? ঐ মহিলাটা তোদের বাপ ছেলের মাথা খেয়েছে।”

বিদ্যা মিতার সব কথা শুনতে পেল। এমন সময় রনক বলল,” বৌদি কেমন আছেন?”

-” ভালো আছি দাদা। মিশুকে মিতা আবার কেন মেরেছে? ওর সমস্যা কি বলেন তো? আমি তো ওখান থেকে চলে এসেছি তারপরও ছেলেকে এভাবে শাসন না করলেই কি নয়!”

-” রনক কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,” আমার মাঝে মাঝে মনে হয় মিশু আপনার আর অপু দাদার সন্তান হলে ভালো হত। অপাত্রে ঘি দান করা হয়েছে। বিষয়টা আমি দেখছি বৌদি।”

-” রনকদা, মিতাকে বকা বকি না করে একটু ভালোবেসে বুঝিয়ে বলবেন। তবুও যদি ও শোনে।”

-” জ্বী বৌদি, আপনি কবে আসবেন?”

-” কাজ শেষ হলেই চলে যাবো। ভালো থাকেন, মাকে একটু দেন তো?”

আপনিও ভালো থাকেন বলে রনক ওর মাকে ফোনটা দিয়ে চলে গেল। অঞ্জনা ফোন নিয়েই বিদ্যাকে বকা দিয়ে বলল,” তোর ফোন বন্ধ কেন থাকে?”

-” স্যরি মা, আপনার সাথে কথা বলতে বলতে ফোনটা রাস্তায় পড়ে ভেঙ্গে গেছে। এটা অন্যজনের ফোন। আমি ফোন কিনেই আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। মা, কাকি আর কাকা ভালো আছে?”

-” সবাই ভালো আছে। তুই কবে আসবি মা।”

-” আমার কাজ এখনো শুরু হয়নি। একটু দেরি হবে কাজ শুরু হতে। কাজ শেষ হলেই যাব মা। আমারও এখানে ভালো লাগছেনা।”

-” কাকির সাথে কথা বলবি?”

-” না মা, আমি নতুন একটা ফোন কিনি তারপর সেই ফোন দিয়ে কল দিব। এখন রাখছি মা। আর শোনেন, মিশুকে একটু কাছে কাছে রাখবেন তো?”

-” কেন, মিতা কি ওকে আবার মেরেছে?”

-” মা, কেন মিতার ভূল ধরেন বলেন তো! মিশু আমায় মিস করে তাই ওকে একটু কাছে কাছে রাখবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন, এখন রাখছি। ”

-” তুইও খুব ভালো থাকিস মা, আর নিজের খেয়াল রাখিস।”

ওকে মা বলে বিদ্যা কল কেটে দিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল। ১০ বছর বয়স হয়েছে তবুও ছেলের গায়ে হাত তোলে কেন মিতা! আমার উপর ওর এত আক্রোশ কেন? আমার উপর পুষে রাখা রাগ মিশুর উপর ঝাড়ে। স্যরি মিশু বাবা, আমি তোর কাছে থাকলে একটা টোকাও তোর শরীরে পড়তে দিতাম না। ভাগ্য আজ আমাকে তোর থেকে অনেক দুরে এনেছে বলে চোখ মুছল বিদ্যা।

♥♥

সাধনা ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছিল। এমন সময় শর্মিষ্ঠা এসে বলল,” বৌদি, অভি ছেলেটাকে কেমন লাগে আপনার?”

সাধনা শর্মিষ্ঠার দিকে চেয়ে দেখল ও হাঁসছে। সাধনা লুচির বোলটা রেখে বলল,” হঠাৎ অভিকে নিয়ে পড়লি যে?”

এর মাঝে বিদ্যা ডাইনিং টেবিলে এসে হাজির হল। শুভ সকাল মা, শুভ সকাল কাকি।

শর্মিষ্ঠা বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,” তুমি দেখছি খুব সকালেই ওঠো।”

বিদ্যা মৃদ্যু হেঁসে জবাব দিল,” জ্বী কাকি।”

যা বলছিলাম দিদি, আমি ভাবছি অভির সাথে রিতুর বিয়েটা দিয়ে দিব। রিতুর সাথে অভিকে খুব মানাবে তাইনা দিদি!

-” অভি কি জানে, তুই ওকে নিয়ে এত দুর ভেবেছিস?”

শর্মিষ্ঠা মনে মনে ভিষন রেগে গেল। হিংসা, মনে হিংসা জেগেছে। আমার মেয়ের আবার কেউ ভালো চায় নাকি? আমি কি কিছুই বুঝিনা? নিজের বিধবা মেয়েকে বাসায় এনে রেখেছে। দেখলে গা জ্বলে যায়। মনে হয় ও যেখানে পা দিবে সেখানেই কালো ছায়া পড়ে যাবে। কথাগুলো মনে মনে ভেবে বাঁকা চোখে বিদ্যাকে দেখে বলল,
-” জানেনা তো কি হইছে! আমি ভাবছি আজ কালের ভিতর ওকে বলে ফেলব।”

-” দারুন আইডিয়া কাকি। রিতুর সাথে অভিকে বেশ মানাবে। কে খুশি হবে আর কে খুশি হবেনা তা জানিনা, তবে আমি বেশ খুশি হয়েছি। কলকাতা ফিরার আগে দু’টো বিয়ে খেতে পারবো।”

বিদ্যার উচ্ছাস দেখে সাধনা বিরক্ত হয়ে বলল,” তোর কলকাতায় আর ফিরা হচ্ছেনা। তোকে এখানেই এখন থেকে থাকতে হবে। বিয়ে করবি কি করবিনা সেটা তোর ব্যাপার কিন্তু আমার কাছ থেকে তোকে কোথায়ও যেতে দিচ্ছিনা।”

বিদ্যা চুপ হয়ে গেল ওর মায়ের কথা শুনে। কোন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেল।

বিদ্যা চলে যেতেই শর্মিষ্ঠা বলল,” দিদি, আপনার মেয়েকে আবার বিয়ে দিবেন? বিধবা মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে? তবে আপনার মেয়ের বয়স হলে কি হবে দেখতে কিন্তু খুবই ইয়াং। এমন রুপ ও কিভাবে ধরে রাখল সেটাই ভাবার বিষয়।”

এমন আজাইরা প্যাচাল শুনতে ভালো লাগছেনা সাধনার। তাই বলল,” শর্মিষ্ঠা যা তো তরকারি বসিয়েছি, ওটা একটু নামিয়ে এখানে আন।”

শর্মিষ্ঠার মুখ এবার কালো হয়ে গেল। অনিচ্ছা সত্তেও কিচেনে চলে গেল শর্মিষ্ঠা। ও চলে যেতেই সাধনা হাফ ছেড়ে বাঁচল।

♥♥

বিদ্যা রুমে এসে আইফোন আর অভির ফোনটা নিয়ে অভির রুমে রওনা দিল। একটা ছেলের রুমে যাওয়া সহজে কেউ স্বাভাবিক ভাবে নিবেনা। তাই বিদ্যা আশেপাশে চোখ বুলিয়েই অভির রুমের দরজার সামনে দাড়ালো। মন থেকে সব দ্বিধা দুর করে, বিদ্যা নক করলো দরজায়। কিন্তু কোন সাড়া পেলনা। তাই আবার নক করলো। কিন্তু এবারও সাড়া না পেয়ে দরজা হালকা ভাবে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। তারমানে দরজা খোলায় ছিল। রুমে ঢুকবে না ঢুকবেনা সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল বিদ্যা। ফোন গুলো রেখেই চলে আসবো বলে বিদ্যা অভির রুমে ঢুকে পড়লো।

কিন্তু সমস্যা হল, বিদ্যাকে শর্মিষ্ঠা নিচ থেকে দেখতে পেয়েছে। অভি যেই রুমে আছে সেই রুমে বিদ্যা ঢুকল।

উমহ্ একটু আগে অভি আর রিতুর বিয়ের কথা শুনে ধেই ধেই করে নাচতে লাগলো আর এখন পরপুরুষের রুমে চুপিচুপি ঠিকি চোরের মত যাচ্ছে। কি ভয়ানক মেয়েরে বাবা। আমার মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গার জন্য দেখছি মেয়েটা উঠে পড়ে লেগেছে। দ্বারা না, আজ তোকে হাতে-নাতে ধরে সবার সামনে তোর মুখোস খুলে দিব। তোকে যদি সবার সামনে এই শর্মিষ্ঠা বেইজ্জতি না করে ছাড়ছে তো আমার নামও শর্মিষ্ঠা নয়।

এদিকে বিদ্যা অভির রুমে ঢুকে বেক্কেল সেজে গেল। প্রচন্ড লজ্জা পেল বিদ্যা। অভি টু কোয়াটার প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে সুয়ে আছে সোজা হয়ে। রুমটা এত ঠান্ডা যে বিদ্যা রিতিমত কাঁপতে লাগলো। এত এসির পাওয়ার কেউ বাড়িয়ে দিয়ে ঘুমায়? বিছানার পাশে ফোনগুলো রাখতেই বিদ্যার চোখ পড়ল অভির বুকের বাম পাশে। একটা লাভ ট্যাটু আকানো। তার ভিতর স্পর্ষ্ট লেখা, “অভির বিদ্যা।”

ট্যাটুটা দেখেই বিদ্যার বুকের ভিতর কাঁপতে লাগলো। অভি কি চায় আমার কাছে। কেন ও আমার সাথে এমন করছে। আমার দুর্বল জায়গায় অভি কেন বার বার আঘাত করছে। বিদ্যা ওর অজান্তেই হাতটি বাড়িয়ে দিল অভির বুকে। ট্যাটুর উপর হাতের ছোয়া দিতেই অভি চোখ খুলল আর সাথে সাথে দরজা সহ জানালা ধাম করে বন্ধ হয়ে গেল।

দরজার আড়ালে এতক্ষন ধরে দাড়িয়ে থাকা শর্মিষ্ঠা দরজার ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেল।

অভি এবার বিদ্যার হাত ওর বুকের উপর শক্ত করে চেঁপে ধরে বলল,
-” বিদ্যা, তুমি কি আমাকে পাগল করে দিতে এসেছ!”

[] চলবে…….[]

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/09/sidur-suddhi-11/

………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here