সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২০

0
678

#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২০

…….

-” তুমি অপুকে ভুলে এতদিন কাটিয়ে দিয়েছ কিন্তু এই অভিকে ছাড়া তুমি একদিনও থাকতে পারবেনা। এমনকি এক মুহুত্বও নয়।”
কথাগুলো বলে অভি উঠে দাড়ালো। তুমি কি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?

অভির কথা শুনে বিদ্যা রাস্তা থেকে উঠেই চট করে অভির শার্টের কলার ধরে জোড়ে জোড়ে ঝাকাতে লাগল। এই তুমি আমাকে কি পেয়েছ! আমি কি মানুষ না! আমার কি কষ্ট হয়না? কত কষ্ট দিবা আমায়? কেন আমার জিবনে এসেছ বলেই বিদ্যা অভিকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার মাঝ খানে দাড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। কেন তুমি আমার জিবনে এসেছ! আমিতো বেশ ছিলাম। কেন এত কষ্ট দাও!

এবার অভি বিদ্যার কাছে এসেই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

-” রিলাক্স বিদ্যা, এমন করে কাঁদছো কেন! তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয়না। ওকে, আমি আর কখনো এমন কাজ করবোনা। রাস্তায় এভাবে কাঁদলে মানুষ কি ভাববে?”

বিদ্যা এবার নিজেই অভিকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ফিকরে কাঁদতে লাগলো।

অভিও রাস্তায় বিদ্যাকে একহাতে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিয়াকে কল দিল। রিং যেতেই রিয়া রিসিভ করলো।

-” হ্যালো অভিদা, এই সময় কল দিলেন যে! কিছু হয়েছে?”

-” বিদ্যা কোথায়!”

-” পিসি তো সেই আপনারা যাওয়ার আগে বাসা থেকে বের হয়েছে। এখনো বাসায় ফিরেনি। বাবা আর মেঝ কাকাই পিসির অফিসে গিয়ে তাকে পায়নি। বাবাতো বাহিরেই এখনো আছে। এদিকে বাসায় অশান্তি শুরু করে দিয়েছে দিদা।”

-” তোমার দিদাকে ফোনটা দাওতো?”

-” আপনার সাথে পিসি আছে?”

-” মিসেস. শ্যামলকে ফোনটা দাও।”

ওকে দিচ্ছি। একটু ওয়েট করেন বলে রিয়া রুম থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে বিদ্যা অভিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলছে।

অভি আরো নিজের বুকের সাথে বিদ্যাকে চেঁপে ধরে মাথায় একটা কিস করতেই সাধনা দেবী বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,

-” অভি, তোমার কাছে বিদ্যা আছে?”

-” জ্বী, টেনশন করেননা। ও ঠিকমত বাসায় পৌছে যাবে। ফোন নিয়ে আসেনি বলে ও আপনাদের জানাতে পারেনি।”

সাধনা দেবী তো প্রায় কেঁদেই ফেলছিল। অভি বিদ্যাকে একটু ফোন দিবে? একটু কথা বলতাম। বোঝইতো, মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে।

ওয়েট বলে, অভি ফোনটা দুরে রেখে বিদ্যার দিকে ঝুকে বলল,

-” মা কথা বলবে। স্বাভাবিক ভাবে কথা বল।”

বিদ্যা অভির বুকে মাথা লাগিয়েই ফোনটা কানে ধরে বলল,

-” মা, আমি ঠিক আছি। এখানে একটু কাজে আটকে গেছি। তুমি চিন্তা করোনা। অভি সাথে আছে।”

-“তুই কি রে! এতটা অগোছালো কেন? ফোনটা কেন নিয়ে যাসনি। এমন ভূল যেন কোনদিনও না হয়।”

ওকে মা, বাসায় গিয়ে যত বকা দেওয়ার তখন বকা দিও কিন্তু এখন না বলে বিদ্যা কল কেটে দিয়ে ওভাবেই চুপ করে রইল। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর আবার বলল,

-” অভি এটা তোমার আবেগ নয়তো! তুমি আমাকে ছেড়ে যাবেনাতো?”

বিদ্যার কথা শুনে অভি চুপ করে রইল। তারপর বলল,

-” তোমার কি মনে হয় বিদ্যা! আমি তোমাকে ছেড়ে যাব?”

-” আমার মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখছি। চোখ খুললেই সব শেষ হয়ে যাবে।”

-” আমি এখানে এসেছি শুধু মাত্র তোমার জন্য। তুমি জানো, মহব্বত আর ইশক্ আলাদা আলাদা জিনিস। মহব্বত হল ঐ জিনিস, যখন কেউ কাউকে পছন্দ করে, তখন সে তার ঐ মানুষটারও খেয়াল রাখে আবার নিজেরও কিছুটা খেয়াল রাখে।
কিন্তু ইশক্ এমন একটা জিনিস। যখন কারো মন, একবার ঐ প্রেম নামক পবিত্র সম্পর্কের মাঝে ডুব দেয় তখন সে শুধু ঐ মানুষেটারই খেয়াল রাখে কিন্তু সে নিজেরই খেয়াল রাখতে ভুলে যায় । আমি তোমাকে ইশক্ করি বিদ্যা, নো মহব্বত।”

বিদ্যা আর কথা না বাড়িয়ে অভিকে ছেড়ে দিতেই অভিও ওকে ছেড়ে দিল। অভি বিদ্যার পার্সটা কুড়িয়ে এনে বলল,

-” তোমার ‘সু’ কই?”

বিদ্যা পিছন ফিরে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল।

ওয়েট বলেই অভি এক দৌড়ে গিয়ে ‘সু’ গুলো নিয়ে এসে বিদ্যার সামনে বসে পড়ল। তারপর বলল,

-” দেখি তোমার পা! ‘সু’ গুলো তোমার পায়ে পড়িয়ে দেই।”

-“না না তুমি আমার পায়ে হাত দিবে কেন! আমি পড়তে পারবো। দাও আমাকে ওগুলো।”

অভি বিদ্যার কোন কথা না শুনে অবাধ্য শিশুর মত বিদ্যার পা কাছে টেনে ‘সু’ পড়িয়ে দিল। তারপর বলল,

-” বিদ্যা, এবার থেকে তুমি ব্লাক কালারের সব কিছু পড়বা।”

-” তুমি কি ব্লাক জিনিস বেশি পছন্দ করো?”

-” Yes, I am black lover. ”

অভি এবার উঠে বাইকটা রাস্তা থেকে তুলে বাইকে চড়ে স্টার্ট দিল। তারপর পিছন ফিরে বলল,

-” বিদ্যা, আকাশে অনেক মেঘে, জলদি ওঠো। কখন যেন বৃষ্টি নামতে শুরু করবে।”

বিদ্যা অভির কথা শুনে বাইকের পিছনে গিয়ে চড়লো।

-” এভাবে না, আমার মত করে বসো।”

-” আমি এই ড্রেসে পারবোনা। এভাবেই যাব।”

-” একটু ট্রাই করো!”

অনিচ্ছা শর্তেও বিদ্যা অভির মত করে পিছনে বসলো। এবার অভি গিয়ার তুলেই স্থানটি পরিত্যাগ করলো। কিন্তু মাঝ পথে শেষ রক্ষাটা আর হলোনা। বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। অভি উচ্চ কন্ঠে বলে উঠলো,

-” বিদ্যা তোমার সমস্যা হচ্ছে?”

বিদ্যা পিছন দিক থেকে অভিকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল,

-” আমি ঠিক আছি।”

অভি ওর বাম হাত দিয়ে বিদ্যার হাতটা ওর পেটে আর একটু চেঁপে ধরলো। খানিক পথ যেতেই অভি ব্রেক কষল। বিদ্যা সাথে সাথে বলে উঠলো,

-” থামলে কেন অভি?”

-” দেখ, ফুসকার দোকান। তুমিনা খুব ফুসকা পছন্দ করো! চল ফুসকা খাবে।”

-” বাসায় যাব অভি। অন্য কোনদিন খাব, আজ না। বাসায় চল।”

আমি বলেছি খাবে মানে এখুনি খেতে হবে। বাসায় জানিয়ে দিয়েছি। তাই নো টেনশান। অভি দোকান থেকে একটু দুরে বাইক স্ট্যান্ড করে বিদ্যাকে চট করে কোলে তুলেই বাইকের উপর বসিয়ে ওর ওয়াটার প্রুফ জ্যাকেটটা খুলে বিদ্যার মাথার উপর দিয়েই বলল,

-” Please wait here till I come.”

অভি আর বিদ্যার কোন কথায় শুনলোনা। অভি দোকানের কাছে চলে গেল। তারপর ফুসকা অর্ডার দিয়ে বিদ্যার দিকে চেয়ে রইল।

বিদ্যা কয়েকবার হাত ইশারা করে ওকে কাছে ডাকলো কিন্তু বিদ্যার ডাকে সাড়া না দিয়ে শুধু মাথাটা নাড়িয়ে চলল।

কি আর করা। বিদ্যা বাইকে বসেই বৃষ্টির অনুভূতি গুলো উপভোগ করছে। মিনিট পাঁচেক পর অভি এক প্লেট ফুসকা নিয়ে বিদ্যার কাছে হাজির হল।

অভি ফুসকার প্লেটটা বিদ্যার সামনে ধরে বলল,

-” তুমি খাও আমি ধরে আছি।”

-” ফুসকাতো বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাবো কিভাবে?”

-” তোমার না বৃষ্টির মধ্য খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে। আমি কি খাইয়ে দিব?”

বিদ্যা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অভিকে আর পায় কে! অভি ফুসকার ভিতর টক জল ভরিয়ে দিয়েই বিদ্যার মুখে পুরে দিল।

ওমম, এএ ভাবে এ..ক বা..রে কেউ দেয়! অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো বিদ্যা।

অভির সেদিকে মনযোগ নেই। ওর মনযোগ বিদ্যার খাওয়ার মূহুত্ব গুলোর সাথে খুঁনশুটি করা।

বিদ্যা একটা খেতে না খেতেই মুখ বন্ধ করে চুপ করে রইল। কোন কথা বলছেনা।

ওমন চুপ হওয়া দেখে অভি হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,

-” কি হয়েছে, চুপ করে আছো কেন?”
অভি আর একটা ফুসকা বেশ জোড় করেই ওর মুখে পুড়ে দিল। রোড লাইটের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বিদ্যার চোখ দুটি লাল।

বিদ্যা কোনমতে ফুসকা গিলেই মুখের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে বার বার নাড়াতে নাড়াতে বলল,

ওহ্ গড এত ঝাল! জল, জল, জল বলে বিদ্যা কিছুটা চেঁচিয়ে উঠলো।

অভি ফুসকার প্লেট রেখেই দৌড়ে দোকানদারের কাছে গেল। দাদা জল দেন তো! আপনাকে না বেশি ঝাল দিতে নিষেধ করেছি! তাহলে কেন এত ঝাল দিয়েছেন? খাওয়াটাই মাটি করে দিলেন তো? অভি জলের গ্লাস নিয়ে ছুটল বিদ্যার কাছে।

বিদ্যা ততক্ষনে হা করে বৃষ্টির জল খাওয়ার ট্রাই করছে আর হাতে বৃষ্টির জল ভরাচ্ছে। অভি এসে ওর হাতে জলের গ্লাস দিয়েই বলল,

-” জলদি খাও।”

বিদ্যা এক নিঃশ্বাসে সব জল খেয়ে ফেললো কিন্তু তীব্র ঝালে ওর জ্বিভ আর ঠোট জ্বলে যাচ্ছে। মুখের সামনে হাত নিয়ে বার বার নাড়াচ্ছে।

খুব কষ্ট হচ্ছে বিদ্যা বলে অভি ফু দেওয়ার ট্রাই করলো কিন্তু বিদ্যার ছটপটানি যেন বেড়েই গেল। অভি কিছু না ভেবেই চট করে বিদ্যার ঠোটে ওর ঠোট ডুবালো।

উমমম বলেই বিদ্যা দু’হাত নাড়াতে লাগলো। বিদ্যা অভিকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর ট্রাই করছে কিন্তু পারছেনা। বিদ্যা যতই চেষ্টা করে ওকে সরাতে অভি ততই আরো আষ্টে-পৃষ্ঠে বিদ্যার ঠোটের স্বাধ নিতে থাকে। অভি এবার বিদ্যাকে জড়িয়ে ধরে বাইক থেকে শূন্যতে তুলল ঐ অবস্থায়।

বিদ্যা এবার গায়ের শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই অভি ওকে ছেড়ে দেয়। তারপর খুঁশি হয়ে বলল,

-” ঝাল কমেছে?”

বিদ্যা কোন কিছু না ভেবেই স্বশব্দে একটা চড় মারলো অভির গালে। অভি সাথে সাথে ওর গালে হাত দিল। তারপর প্রচন্ড রেগে গিয়ে চুপ হয়ে গেল।

বিদ্যা এবার নিজেই হতবম্ভ হয়ে গেল। হঠাৎই রেগে গিয়ে ওকে থাপ্পড় মারাটা যে ঠিক হয়নি সেটা বিদ্যা হারে হারে টের পেল। অনেকটা করুনসুরে বলে উঠলো,

-“স্যরি অভি!”

অভি কোন কথা না বলে গ্লাস আর ফুসকার প্লেট নিয়ে চলে গেল। তারপর বিল মিটিয়ে এসে বাইকে চড়ে শুধু হর্ন বাজিয়ে বিদ্যার দৃষ্টি আকর্ষন করলো।
বিদ্যাও কোন কথা না বলে অপরাধীর মত অভির পিছনে গিয়ে বসলো।

অভি গিয়ার বাড়িয়ে চলল বিদ্যাকে নিয়ে। অন্ধকার রাস্তায় গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে পথ চলার গতি যেন একটু বেশিই বাড়িয়ে দিয়েছে অভি। বিদ্যা ওর হাত দু’টি বাড়িয়ে বৃষ্টির ছোয়া নিচ্ছে। তারপর পিছন দিক থেকে অভিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-” স্যরি অভি! আসলে কিভাবে কি হয়ে গেল নিজেও বুঝতে পারিনি।”

অভি আর কোন কথায় বললোনা। রাস্তায় আর কোন কথা বলেনি। পুরো রাস্তাতে বিদ্যা অভিকে জড়িয়ে ধরে ছিল।

অভি বাসার গেটের কাছে এসে বাইক থামাল এবং হর্ন বাজালো। দাড়োয়ান এসে গেট খুলে দিতেই বিদ্যা গাড়ি থেকে নেমে চুপচাপ ভিতরে চলে গেল। অভি তবুও বিদ্যার পানে চেয়ে থাকলো। বিদ্যার মা সাধনা দেবী বারান্দায় বিদ্যার জন্যই অপেক্ষায় ছিল। সাধনা দেবীকে দেখে অভি নিঃশ্চিন্ত হয়। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

অভির বাইকের শব্দে বিদ্যা পিছন ফিরে দেখল, অভি চলে গেছে। ও ভিতরে ঢুকলোনা কেন!

সাধনা দেবী বিদ্যাকে কয়েকটা বকা দিয়ে বলল,

-” তোর হুস কবে হবে বলতো! বাসায় শত্রু আছে সে কি কথা না বলে ছাড়বে?”

বিদ্যা ওর মায়ের কথার জবাব না দিয়ে বলল,

-” মা, অভি ভিতরে আসলোনা যে!”

ওরা তো বিকেলে চলে গেছে। অভির হয়ত কাজ আছে তাই ও চলে গেছে বলে বিদ্যাকে নিয়ে ওর মা বাসায় ঢুকলো।

♥♥

বাসায় ঢুকার পর অনেকটা ঝামেলা হল। সবার কথা রাতে কোন কাজ করা যাবেনা। সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হবে। আজ কতটা টেনশন করেছে সবাই। শর্মিষ্ঠা তো মুখের উপরই বলে দিল,

-” দিদি, কে বলবে তোমার মেয়ে একটা বিধবা মেয়ে! স্বামীর সাথে ৬টা মাসও সংসার করতে পারেনি। স্বামীকে খেয়ে আবার এত বছর পর আমাদের খেতে এসেছে। কই আমারও তো ঘরে দুটো মেয়ে আছে। তাদের ভিতর কি শালীনতা নেই! আপনার মেয়ের তো দেখছি কোন সম্মানই নেই।”

সাধনা দেবী কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। বাসায় শুধু শুধু অশান্তি হবে বলে। কিন্তু শ্যামল বাবু শর্মিষ্ঠাকে কড়া শাসন করে বলল,

-” আমার মেয়ে যা ইচ্ছা তাই করবে। এর পর যেন না দেখি আমার মেয়কে নিয়ে চর্চা করা। আমি ওর বাবা হয়ে যখন ওকে স্বাধীনতা দিচ্ছি সেখানে অন্য কারো মাথা বাথ্যার কারন হওয়ার তো কোন যুক্তিই দেখছিনা।”

শর্মিষ্ঠার কথাগুলো বিদ্যার বুকে এসে লাগল। চোখ ফেটে জল বের হতে চাচ্ছে। কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা বলে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে এল। দরজা বন্ধ করে দিয়ে অঝোড়ে চোখের জল ফেলল। শাশুড়ী মাকে খুব মনে পড়ছে। বিদ্যা জলদি ওয়াসরুমে পা বাড়ালো। ড্রেস চেঞ্জ করে এসে আয়নার সামনে দাড়াতেই বিদ্যা ওর সিঁথির দিকে চাইলো। অপুদা আমাকে এত কথা শুনানোর জন্য রেখে গেলে কেন বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো বিদ্যা।

এদিকে দরজায় বার বার নক করছে শ্যামল। এই বৃদ্ধ বয়েসে এসে যদি মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করা যেত তাহলে মরেও শান্তি পেত। আর ক’দিনই বা বাঁচবে সে। বিদ্যা দরজা খোল মা! আমাকে কেন এই বয়সে এসে হয়রান করছিস মা। দরজা খোল।

বিদ্যা দ্রুত চোখ মুখ মুছে দরজা খুলে দিল। শ্যামল বাবু বিদ্যাকে দেখেই যেন মনে শান্তি পেল। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেডে বসলো। তারপর বিদ্যার দিকে তাকিয়ে বলল,

-” মাগো এতক্ষন ধরে কাঁদছিলি! কেন এই বুড়ো ছেলেকে কষ্ট দিস বলতো?”

বিদ্যা ওর বাবার পাশে বসে কেঁদে উঠল। বাবা আমি অপুদাকে ভুলতে পারিনা। সে আমাকে কেন ছেড়ে গেল? আমি তার সাথে ঝগড়া করেছি। সে আমাকে সেদিন কিছু বলেনি। অনেক আদর করেছে। আমি কখন ঘুমিয়ে পড়ি সেটা আমি নিজেই জানিনা। তারপর ঘুম থেকে উঠে দাদাকে আর পাইনি। দীর্ঘ ২৫টা বছর আমি ঐ বাড়িতে পরে ছিলাম শুধু দাদার স্মৃতি বুকে আগলে রেখে। কাকি ঠিকি বলেছে, আমিই দাদাকে খেয়েছি। রনকের বৌ ও এই কথায় বলতো। আমি কোথায়ও শান্তি পাইনি বাবা। তোমাদের ছেড়ে দাদাকে পেলাম সেও আমায় ছেড়ে চলে গেছে। ভিতরটা আমার কয়লা হয়ে গেছে বাবা। আমি পুরে পুরে কয়লা হয়ে গেছি। যম কি আমায় চোখে দেখেনা?

মেয়ের আর্তনাদ একটা বাবার কাছে কতটা কষ্টকর সেটা শুধু একটা বাবাই শুধু জানে। শ্যামল আর কথা বলতে পারেনি। তার নিজের একটা ভূল সিদ্ধান্তের জন্য বিদ্যার জিবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে। শ্যামল চোখের জল মুছতেই মেঝ বৌদি এসে বিদ্যার বাবাকে ডেকে নিয়ে গেল কি যেন কাজে। আর বিদ্যা বিছানা থেকে উঠে ব্যাগ থেকে সিঁদুর দানিটা হাতে নিয়ে জানালাটা খুলে আকাশের পানে চাইল। তারা খোজার অনেক চেষ্টা করেও চোখ ব্যার্থ হয়ে নিচে চাইল আর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ল।

আমার যত কথা ছিল বাঁকি
হয়নিতো বলা তোমাকে…
যদিনা হাত ছেড়ে দিতে
আজ থাকতাম একই সাথে…..
আফসোস একটাই,
আজ তুমি রাতের তারাদের ভিড়ে
আর আমি একাকী এই স্বার্থপর দুনিয়াতে।

~রাই

বিদ্যা ওর সিঁদুর দানীর দিকে চেয়ে বলল,

-” কাল তোমার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা অভি। হয় তুমি আমার জিবনে থাকবে না হয় সারা জিবনের জন্য ফিনিস হয়ে যাবে।”

♥♥

মাঝরাতে সাধনা দেবীর পা চিপে ধরে চোখের জল ফেলছে সাজিত। কিন্তু সাধনা দেবীর এতটুকুও দয়া হলোনা সাজিতের উপর। বরং, দরাজ কন্ঠে বলে উঠলো,

-” বউকে শাসন করতে পারবি! সবার সামনে গালে গোটা দশেক থাপ্পড় মারতে যদি পারিস তাহলে আমার কাছে আসবি। আর যদি না পারিস তাহলে আশা ছেড়ে দে।”

কথাগুলো বলে সাধনা দেবী সাজিতকে পায়ে ঠেলে রুম থেকে বের হয়ে গেল আর সাজিত করুন মুখে বৌদির চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে লাগল।

[] চলবে……..[]

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-20/

………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here