সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২৪

0
657

#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২৪

……

বিদ্যা আর সুধারাম দু’জন মিলে কর্ণপিশাচী সাধন করছে। কিন্তু সুধারাম এখানে একটু বিপরীত ক্রিয়ায় কাজ করছেন। সবার অলৌকিক ক্ষমতা লাভ করার লোভ থাকে। যেহেতু এখানে অপুর পূর্নজন্মর ব্যাপারে সাধন করা হচ্ছে তার মানে এখানে মহাশক্তির একটা বিষয় আছে। সুধারাম সেটাই লাভ করতে চাচ্ছেন মনে প্রানে। তিনি অলৌকিক ক্ষমতালাভের জন্য তন্ত্রে শবসাধন, পাদুকাসাধন, কর্ণপিশাচী সাধন, মধুমতী সাধন ইত্যাদি ছাড়া আরো অনেক সাধন একসাথে প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। তাছাড়াও আছে ভূতপ্রেতাদি পিশাচসাধনও।
এই যজ্ঞের মাধ্যমে বিদ্যা তার প্রশ্নের উত্তর পাবে আর সুধারাম পাবে এক বিশেষ শক্তি। তাছাড়া সুধারাম এখানে একটি খেলা খেলেছে যা বিদ্যা বুঝতে পারেনি। এই খেলা বিগড়ানো তখোনই যাবে, যদি বিদ্যা এই আয়োজনের উল্টা পথ হাটে। কিন্তু ওটা বিদ্যা কখনো করতে যাবেনা। কারন এখানে বিদ্যার প্রান ঘাতির সম্ভবনা রয়েছে। সুধারাম নিঃশ্চিতে কাজ করতে লাগল।

বিদ্যার সামনে একটা আয়না রাখা আছে সেখানে সে অভিকে দেখতে পারবে। বিদ্যা সমস্ত মন্ত্র জপ করেই আয়নার দিকে চাইল। আয়নাতে যা দেখল, তাতে বিদ্যার হুস উড়ে গেল। বিদ্যা দেখল, অভির সারা শরীরে আগুন ধরে গেছে। অভি ছটপট করে যাচ্ছে। বিদ্যা বুঝে গেল এ তার অপুদা নয়। বিদ্যার চোখ দিয়ে অঝরে জল ঝরে পড়ছে। মন চাচ্ছে অভি আগুনে জ্বলে-পুরে শেষ হয়ে যাক। কিন্তু হঠাই বিদ্যার বিবেক সাড়া দিল। বিদ্যা এতই কষ্ট পেল যে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল। বিদ্যার আর বাঁচার কোন আশা রইলোনা। ওর সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। বিদ্যা মন্ত্র উল্টো করে পড়তে লাগলো কাঁদতে কাঁদতে। কাঁপা কন্ঠে মন্ত্রগুলোর প্রভাব পড়ে গেল। কর্নপিচাশী দেবীর আগমন ঘটল। সাথে সাথে সামনে আয়না বাষ্ট হয়ে ফেটে গেল আর কাঁচের টুকরোগুলো ফ্লোরে ছিটিয়ে গেল। কর্নপিচাশী একজন রক্তক্ষোর উপদেবতা। এখন সে রক্তের ক্ষুদার্থ। তার এখন রক্ত চাই। কর্নপিচাশী দেবী বিদ্যার উপর শক্তি প্রয়োগ করতেই বিদ্যা ছিটকে গিয়ে দুরে পড়ে গেল। বিদ্যার শুধু একটা কথায় মনে মনে জপ করছে আর তা হল, যে ভাবে হোক অভিকে বাঁচাতে হবে।

বিদ্যার হাতের মুঠোয় সেই খাঁজকাটা পাথরটি রয়েছে। এখন একটাই উপায়, এই পাথরে ওর রক্ত উৎস্বর্গ করা। আয়নার একটুকরো কাঁচ ওর পাশেই পড়ে ছিল। বিদ্যা ওটা চট করে নিয়েই ওর হাতে আঘাত করলো। এক আঘাতেই কাজ হয়েছে। হাত দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগল। কর্নপিচাশী সেটা দেখে ওর জ্বিভ বের করে আনন্দে মেতে উঠলো কিন্তু বিদ্যা ওর হাত সেই পাথরের উপর ধরতেই পাথরে টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগল। আর বিদ্যা মনে মনে আউড়াতে লাগল এই রক্ত আমি উৎস্বর্গ করলাম অভির নামে। হে যজ্ঞের মহাশক্তি আমি আদেশ করছি তুমি এই উৎস্বর্গ গ্রহন করো। বিদ্যার হাত থেকে রক্তের ফোয়ারা ছুটে চলছে। বিদ্যা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যা ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে রক্ত মাখা পাথর খাটের নিচে ছুড়ে দিয়ে পড়ে রইল আর চোখ বড়বড় করে কর্নপিচাশীকে দেখতে লাগল। কারন এমন ভয়ঙ্কর জন্তু সে কোন দিনও দেখেনি।

কর্নপিচাশী ওখান থেকেই ওর জ্বীভটা বেড়ে দিল বিদ্যার দিকে। কিন্তু বিদ্যার কাছে আসতেই একটা আলোর ঝলকানিতে কর্ণপিশাচীর জ্বীভটা পুড়ে গেল। কর্ণপিশাচী বিকট একটা শব্দ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। একবার রক্ত যদি অন্য কারো নামে উৎস্বর্গ করা হয় তাহলে ঐ ভোগ সে কখনো গ্রহন করতে পারবেনা। সে যদি জোড় করে গ্রহন করতে যায় তাহলে তার এমনই পরিস্থিতি হবে।

বিদ্যা সেন্স হারিয়ে ফেলে। কিন্তু বিদ্যার রুমে একটু আগে যে বিকট শব্দ হয়েছিল তা বাসার কাজের ছেলেটার কানে গেল। কাজের ছেলেটা ডাইনিং রুমে সুয়ে ছিল। ছেলেটির নাম রামু। রামু তাড়াতাড়ি উঠেই এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো, বিদ্যার রুম থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। রামু দৌড়ে গিয়ে সাধনা দেবীর রুমের দরজা ধাক্কাতে লাগল। মা মা দরজা খুলেন। রামুর দরজার ধাক্কাতে আরো অন্যরা জেগে উঠে দরজা খুলে বের হল। প্রথমে সাজিতই বেরিয়ে আসল। কিরে রামু, কি হয়েছে! এত রাতে দাদার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেন?

আজ্ঞে কর্তা, বিদ্যা দিদি…… বলতেই সাজিত বিচলিত হয়ে বলল,

-” বিদ্যা, বিদ্যা কি?”

-” ছোট কর্তা, বাসায় বিকট একটা শব্দ হল আর আমি জেগে উঠে দেখলাম দিদির ঘরে ধোয়া।”

রামু কথাটি শেষ করতে পারেনা। তার আগেই সাজিত গিয়ে বিদ্যার রুমের সামনে দাড়ালো। হ্যাঁ সত্যিই ওর রুম থেকে ধুয়া বের হচ্ছে। বিদ্যা, মা আমার দরজা খোল বলেই সাজিত পাগলের মত দরজা ধাক্কাতে লাগলো। সাজিত এত জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো যে সেই শব্দে বাসার সবাই বের হয়ে আসল রুম থেকে। বিদ্যার কোন রেসপন্স এলোনা। সবার আগে আয়ান আর তমাল এসে সাজিতের সাথে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। নাহ্ কিছুতেই দরজা খুলছেনা। বিদ্যার পাঁচ দাদা এসে চিৎকার করে বলল,

-” কাকাই সড়েন আমরা দেখছি।”

সাজিত কিছুতেই সরেনা। ও প্রান পনে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। সাজিত ছোট বাচ্চাদের মত দরজাতে ধাক্কা আর লাথির উপর লাথি মারতে লাগলো। দুরে রিয়া সহ ওর মা কাকিরা ভয়ে থরথর করে কেঁপে কেঁদেই যাচ্ছে। কি হল এর মধ্য! রুমের ভিতর কি চলছে কেউ জানেনা। বৃদ্ধ শ্যামলও দৌড়ে এসে দুর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,

-” বিদ্যা মা আমার দরজা কেন খুলছিসনা? কি হয়েছে তোর?”

ছেলের বৌগুলো শ্যামলকে দুরে সরে রেখেছে। এমনি তার শরীর খারাপ। এসবে নাজানি তার কোন সমস্যা হয়ে যায়। ওদিকে সাধনা দেবী বিলাপ করে কেঁদে কেঁদে বলছে ওরে তোরা কে কোথায় আছিস আমার মেয়েটাকে বাঁচা। আর কত দুর্ঘটনা ঘটবে আমার মেয়ের জিবনে। ঠাকুর রক্ষা করো মেয়েটাকে।

রিতু মিতুকে জড়িয়ে ধরে ভয়ার্ত চোখে ওর বাবার কাজ কর্ম দেখছে। শেষে রিয়ার বাবা দৌড়ে গিয়ে কড়িডোর থেকে চিয়ার এনেই দরজা বরাবর গায়ের শক্তি দিয়ে আঘাত করে কিন্তু দরজা ভাঙ্গলোনা। সাজিত দু’হাতে দুটা চিয়ার এনেই পরপর দু’টা আঘাত করতেই দরজার লক ভেঙ্গে গেল। সাজিত রুমে ঢুকে দেখল, ফ্লোরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। পুরো রুম অন্ধকার। সাজিত লাইট জ্বালাতেই ও স্থির হয়ে গেল। বিদ্যার হাত থেকে ব্লাড বেরিয়ে ফ্লোরের অনেকখানি জায়গা মাখামাখি হয়ে আছে। মা তোমার কি হয়েছে বলেই সাজিত নিজের ট্রী শার্টটা খুলেই বিদ্যার হাত বেঁধে দিল। আর বাঁকিরা এসে রুমের আগুন নিভাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। বিদ্যাকে এমন অবস্থায় দেখে সাধনা দেবী গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।

সাজিত বিদ্যার হাতটা ধরের চুমু খেতে খেতে বলল,

-‘ মা তোমার কিছু হবেনা। আমি আছিনা? আমি থাকতে তোমার কিছু হতেই পারেনা।”

সাজিত বিদ্যাকে তুলে রুম থেকে বের হয়েই দৌড় দিতে লাগলো। কিন্তু কিছু দুর যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়েই ছিটকে পড়ে গেল। তমালের বাবা দৌড়ে এসে বিদ্যাকে তুলে নিয়েই বলল,

-” কাকাই আপনি আসেন আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।

তমালেরর বাবা বিদ্যাকে গাড়ীতে রেখেই গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেল। সাজিতও ওর পিছু পিছু গাড়ী নিয়ে চলল।

সাধনা দেবীর সেন্স ফিরানো নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল। আর শ্যামল নিথর হয়ে বসে পড়ল। রিয়ার বাবা রিয়ার মাকে বলল,

-” তুমি এদিকে দেখ, আমি ওদিকে যাচ্ছি। মার সেন্স ফিরলে আমায় জানিও।”

♥♥

অভির গায়ের আগুন নিভে গেছে কিন্তু ওর শরীর প্রচন্ড জ্বালা করছে। অভি দ্রুত ওর রুমের দরজা খুলে ইনা বলে জোরে একটা ডাক দিয়ে ওখানেই হুড়মুড় করে পড়ে গেল। অভির পুরো শরীরে শক্তি যেন কেউ হরন করে ফেলেছে।

ইনা তখনো ঘুমাইনি। রিক ওর পাশেই ঘুমাচ্ছে। অভির গলা না এটা? হ্যা এটাতো অভিরই গলা। ইনা রিককে ডেকেই ভ্যানিস হয়ে অভির কাছে উপস্থিত হল। তারপর দেখল, অভি পড়ে থেকে গঙ্গাচ্ছে।

-” অভি, তোর কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?”

অভির কাছে এর কোন জবাব নেই। কি বলবে সে! এটা বিদ্যা করেছে? তাহলে বিদ্যা এদের কাছে সারা জিবনের জন্য ছোট হয়ে যাবে। তাই অভি কিছু না বলে যন্ত্রনায় ছটপট করতে লাগল।

রিক একমুহুত্বেই সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল,

-” ইনা, ওর কি হয়েছে? ও এমন করছে কেন?”

তুমি ওকে আগে বেডে সুয়ে দাও, আমি এখুনি মমকে ডেকে আনছি বলেই ইনা এক নিমিষেই সেখান থেকে চলে গেল।

রিক অভিকে এনে বেডে সুয়ে দিয়ে অভির হাত ধরে জানার চেষ্টা করলো, আসলে কি হয়েছিল অভির। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলোনা। রিক বিশ্মিত হয়ে গেল ওর শক্তি কিছুতেই কাজ করছেনা। রিক এদিক ওদিক চাইতেই দেখল, ড্রেসিং টেবিলের উপরে একটা সিঁদুরদানী। রিক উঠে গিয়ে কেবল সিঁদুর দানীতে হাত দিবে এমন সময় টুইংকেল দেবী এসে রিকের হাত ধরে একটা টান দিয়েই ওকে ফ্লোরে ফেলে দিল। তারপর দৃঢ় স্বরে বলল,

-” তুমি পাগল হয়েছে! দেখছো ওটা সিঁদুর দানী। এই বাসায় কেউ সিঁদুর পরে! এটা এখানে আছে মানে নিশ্চয় এটা কোন স্বাভাবিক জিনিস নয়। এগুলো থেকে নিজেকে সেভ করে রাখতে হয়।”

রিকের বেশ জোড়েই লেগেছে। ইনা গিয়ে রিককে ধরে তুলে বলল,

-” মম, তাই বলে ওকে এত জোড়ে আঘাত করবে?”

-” ওকে আঘাত না করলে ওর দশাও অভির মত হত। এমনি আমরা এই ম্যাজিকাল পাওয়ার সম্পর্কে একদম অপিরিচিত। এখন দু’জনই যদি আক্রান্ত হয় তাহলে আমাদের অবস্থায় কোথায় গিয়ে পড়বে জানো? আর অভির যে এমন অবস্থা, সেটা যদি ওর মা জানে তাহলে আমাদের অবস্থা কি করবে জানো! এমনি উনি আমাদের তেমন একটা পছন্দ করেন না। আর যদি জানে অভির এই দশা তাহলে আমাদের জ্যান্ত দাফন করে ফেলবে।”

-” স্যরি মম, আমি এত কিছু ভেবে দেখিনি।”

টুইংকেল দেবী অভিকে পরীক্ষা করে বলল,

-” এটা কি করে হল অভি? তুমি তো এত বুদ্ধিহীন নও যে তোমায় সহজে কেউ ধরাশায়ী করে ফেলবে। তোমার মা পর্যন্ত তোমায় কাবু করতে পারেনা সেখানে কার এত বড় সাহস হল তোমার সাথে এমন ম্যাজিকাল পাওয়ার খাটানো? কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে?”

-” আন্টি আমার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি কিছুতেই এটা থামাতে পারছিনা। আমায় সাহার্য্য করুন।”

টুইংকেল দেবী সিঁদুর দানীর সামনে গিয়ে ওটাকে খুব ভাল করে পরুখ করে বলল,

-” ২৫ বছর আগে এই সিঁদুর দানীতে কেউ সিঁদুর ভরেছে। আর এখানে সেই ব্যাক্তিরই শুধু হাতের স্পর্শ আছে। ”

অভির অতি আগ্রহ্য নিয়ে বলল,

-” কার হাতের ছোয়া!”

ওয়েট আমি দেখছি বলে টুইংকেল দেবী চোখ বন্ধ করে দেখার ট্রাই করলো। উনি দেখলেন একটা পুরুষ মানুষের হাত। কিন্তু তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। টুইংকেল দেবী চোখ মেলেই বলল,

-” অভি সেই পুরুষ এখানেই অবস্থান করছে তাই তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। আমি এটা আমার রুমে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে আশা করি ভাল ফলাফল পাব।”

টুইংকেল দেবী একটা রুমাল দিয়ে সিঁদুর দানীটা ধরে ওনার রুমে নিয়ে গেলেন তারপর আসনে বসে আবার চোখ বন্ধ করে দেখতে লাগলেন। কিন্তু এবার তিনি হচকিয়ে উঠলেন। কারন সেটা অন্য কেউ ছিলনা, সেটা ছিল সয়ং অভি। অভি ওখানে কেন গেল? টুইংকেল দেবী ঐ সিঁদুর দানী নিয়ে এক দৌড়ে অভির রুমে এসে বলল,

-” অভি, তোমাকে এটা কে দিয়েছে?”

অভি আহত কন্ঠে বলে উঠল,

-” সে এটা একটা সপিংমল থেকে কিনেছে।”

-” অভি সত্যিই তুমি এটা সপিংমল থেকে কিনেছ?”

-” হ্যা আন্টি এটা আমি সপিংমল থেকেই কিনেছি।”

কি ভাগ্য তোমার! তুমি তোমার জিবনের অমূল্য সম্পদ পেয়ে গেছ, আর সেটা তোমার অজান্তেই। তোমার পূর্বজন্মের সাথে এটার বেশ মজবুত সম্পর্ক রয়েছে। তুমি এটা হয় নষ্ট করে ফেল না হয় অতি সাবধানে রাখ। কারন এটা দিয়ে তোমাকে আঘাত করা যাবে। এমনকি সেই আঘাতে তুমি মারাও যেতে পার। তোমার পূর্বজন্মের এটা ঘটনা ছিল। এটা তোমার ওয়াইফের সিঁদুরদানী ছিল। যাকে তুমি নিজ হাতে এই সিঁদুর পড়ে দিয়েছ। এখানে তোমার হাতের ছোয়া ছাড়া আর কারো হাতের ছোয়া পড়েনি। কিন্তু আমার মাথায় আসছেনা এটা দিয়ে তোমাকে আঘাত করলো কে? আমার মনে হয়, তুমি তোমার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছ। অভি, ঐ বুকটা তোমার কাছে আনতো বলেই টুইংকেল দেবী অভিকে পরখ করলো।

অভি অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু ও বুকটা কাছে আনতে পারলোনা। অভি ওর সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। যেটা অভির জন্য বিপদের কারন। কেউ যদি ঘুনাক্ষরে টের পায় তাহলে সব শেষ করে দিবে।

টুইংকেল দেবী অভির চারপাশে ওর মায়াবলে আবদ্ধ করে ফেলল। অভি, তুমি যেন কিছুতেই এই বাসা থেকে বের হইওনা। তোমার মম এসেও যদি ডাকে তাহলে মনে রেখ সে তোমার মম নয়। আর আমি খুজে বের করছি কে তোমার সাথে এতবড় অন্যায় করেছে। তোমার শক্তি না ফেরা অবদি তোমার এই দহন যন্ত্রনা তোমাকে সহ্য করতে হবে মাই সান। আমি শিঘ্রই একটা উপায় বের করবো।
তুমি রেষ্ট করো বলে টুইংকেল দেবী রিক আর ইনাকে নিয়ে চলে গেলেন।

অভি চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,

-” বিদ্যা, তোমার সাহস কিরে হয়ে আমাকে আঘাত করার! এবার তোমাকে আমি আর ক্ষমা করবোনা। এই আঘাতের প্রতিটা প্রতিঘাত তুমি পাবে। জাষ্ট কয়েকদিন, তারপর আমি আমার সমস্ত শক্তি ফিরে পাব। এক ভুল বার বার করলেতো তোমায় তো আর ছেড়ে দেওয়া যায়না! এমন শাস্তি দিব যে সেটা তোমার সারাজিবন স্মরনে থাকবে। আমি কি এবার তুমি বুঝবে। প্রস্তুত থাকো…..।

♥♥

বিদ্যার চিকিৎসা চলছে। আর কিছুক্ষন দেরী হলে হয়ত ওকে সারা জিবনের জন্য হারিয়ে ফেলত সাজিত। ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়ে অস্থির মনে পায়াচারী করতে লাগলো বারান্দাতে। অনেক ব্লিডিং হয়েছে বলে, সাজিত আর বিদ্যার বড় দাদা কয়েক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে আর বাঁকি রক্ত ডাক্তারগন জোগাড় করছে। বিদ্যার অবস্থা কিছুটা ভাল। সেন্স ফিরার অপেক্ষা শুধু।

পরদিন সকালের দিকে বিদ্যার জ্ঞান ফিরলো। বিদ্যা চোখ মেলেই সবাইকে দেখতে পেল। সাজিত কাছেই ছিল। ওর সেন্স ফিরতেই সাজিত বলে উঠলো,

-” মা, তোমার কি হয়েছিল যে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলে!”

বিদ্যা কিছু না বলে শুধু চুপ করে রইল। বিদ্যার বাবা, মাও অনেক কথা বলল কিন্তু বিদ্যা কারো সাথে কোন কথা বললনা। শুধু শ্যামল বাবুর ডান হাতটা নিজের মুঠের মধ্য শক্ত করে ধরে রাখলো।

শ্যামল বাবু সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলল। তারপর বিদ্যার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

-” মা, এমন সিদ্ধান্ত কি করে নিলি! আমার মুখ কি তোর সামনে একবারও ভেসে ওঠেনি?”

বিদ্যা তবুও কোন কথার জবাব দেয়না। শুধু উপর দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে চেয়ে থাকে আর চোখের জল ফেলে। তার আশা সব ভঙ্গ হয়ে গেছে। সে অপুদা নয়। সে শুধু অভি।

সবাই চলে যেতেই শর্মিষ্ঠা দুরে দরজায় দাড়িয়ে থেকে বলল,

-” মান সম্মান আর কিছু রাখলোনা। মেয়েদের ভাল জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জো রইলোনা। একবারে মরে গেলেও আপদ মিটে যেত। প্রতিদিন আর নতুন নতুন নাটক দেখতে হতোনা।”

শর্মিষ্ঠার কথা শেষ করতে পারেনি তার আগেই সাজিত পিছন থেকে ফিরে এসেই সবার সামনে ঠাশ ঠাশ করে কয়েকটা চড় মেরে বলল,

-” এমন কথা তোমার মুখ থেকে আর একবার যদি শুনি তাহলে এই থাপ্পড়ে আমার শাসন সীমাবদ্ধ থাকবেনা, সোজা তোমার জ্বীভ টেনে ছিড়ে ফেলব।”

কথাগুলো বলে চলে গেল সাজিত। আর শর্মিষ্ঠা ফ্যাল ফ্যাল করে অপমান হজম করতে লাগল। সাজিতের যে এমন বাড় বেড়ে যাবে সেটে শর্মিষ্ঠা কল্পনাও করেনি। সাজিত তো এমন ছিলোনা! সমস্ত ঐ বিরোধী দলের চক্রান্ত বলে মনে মনে ফুসে উঠলো শর্মিষ্ঠা।

বিদ্যা শুধু রিয়াকে খুজছে। কিন্তু ও নেই পাশে। কোন উপায় না পেয়ে ওর বাবাকে বলল,

-” বাবা বাসায় যাব। এখানে একটুও ভালো লাগছেনা।”

শ্যামল বাবু কিছু বলতে যাবে এমন সময় বিদ্যা অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠেই বলল,

-” বাবা আমি বাসায় গেলাম। তুমি সব ফর্মালিটি পুরুন করে বাসায় আসো। বিকেলে তোমার সাথে ঐ জায়গায় ঘুড়তে যাব কিন্তু।”

শ্যামল বাবু মেয়ের কথার উপর আর কথা বলতে পারলোনা। শুধু হেঁসে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,

-” যেখানেই যাস না কেন, আমাকে একটু বলে যাস মা।”

-” আমি একটু অভির কাছে যাব বাবা। তারপর খুব দ্রুত চলে আসবো।”

শ্যামল বাবু জানতো বিদ্যা এমনই কথা বলবে। তাই কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিল। বিদ্যাও আর দেরী না করে ওখান থেকে গাড়ীতে করে আগে নিজের বাসায় আসল। মাথায় লম্বা একটা ঘম্টা দিয়ে বাসায় ঢুকলো। বাসায় অনেক মেয়ে আছে তাই কে ঢুকলো তা কেউ খেয়াল করলোনা। বিদ্যা রুমে এসে অনেক কষ্টে জামা চেঞ্জ করে ঐ পাথরটা খুঁজতে লাগল। পাথরটি বেডের নিচে পড়ে আছে। বিদ্যা বেডের নিচ থেকে পাথরটা এবং ফোনটা হাতে নিয়েই মাথায় কাপড় দিয়ে বেড় হয়ে গেল।

রাস্তায় বিদ্যা অভিকে কয়েকবার ফোন দিল কিন্তু রিসিভ হলোনা। বাধ্য হয়ে কাবিরকে কল দিল। কাবির ফোন রিসিভ করেই বলল,

-” হেই কিউটি গার্ল কেমন আছ! হঠাৎ এই অধমকে কল দিলে?”

বিদ্যা কথা না বাড়িয়েই বলল,

-” অভি কোথায়?”

-” ও তো আমাদের বাসায় থাকেনা। গতকাল থেকে একটা ফ্লাটে উঠেছে।”

বিদ্যা কোন কিছু না ভেবেই বলল,

-” আমার সময় নাই, দ্রুত লোকেশান বল।”

কাবির লোকেশান বলতেই বিদ্যা কল কেটে দিয়ে ডাইভারকে বলল,

-” দাদা এই জায়গায় চলেন।”

-” ওকে দিদি।”

♥♥

পারিজা কেবল বাহিরে যাবে এমন সময় দেখল একটা গাড়ী ওদের গেটের সামনে দাড়িয়ে হর্ন বাজাচ্ছে। পারিজা গাড়ী থেকে নেমে এসে বলল,

-” কাকে চান!”

বিদ্যা গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে বলল,

-” এখানে অভি থাকেনা?”

-” থাকে, কিন্তু আপনি কে?”

-” আমি বিদ্যা, অভিকে একটু ডেকে দিবেন? বলেন বিদ্যা এসেছে।”

-” অহ্ মাই গড! তুমি বিদ্যা?”

-” হুম।”

বিদ্যাকে গাড়ী থেকে বের করে বলল, অভির পছন্দ আছে। তোমার কত গল্প শুনেছি। আজ এত তাড়াতাড়ি দেখতে পাব যে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। চল আমার সাথে বলেই বিদ্যাকে তার সাথে ভিতরে নিয়ে গেল। বিদ্যার অজান্তেই একটা আলোক রশ্মি এসে বিদ্যার চুলে প্রবেশ করলো।

মিসেস টুইংকেল সোফায় বসে ছিলেন। পারিজা বিদ্যাকে ভিতরে এনে হাত তুলে দেখিয়ে দিয়ে বলল,

-” ঐ যে দেখছো, ওটাই অভির রুম।”

বিদ্যা কোন কথা না বলেই অভির রুমের দিকে পা বাড়াল।

এই মেয়ে তুমি কে! আর উপরে কেন যাচ্ছো! পারিজা তোমাকে না বলেছি অভির কাছে বাহিরের কাউকে না নিয়ে যেতে! তুমি কি আমার কথা শুনবেইনা!

-” স্যরি আন্টি, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি। স্যরি স্যরি স্যরি।”

বুদ্ধিহীন মেয়ে কোথাকার বলেই একটা ঝাড়ি দিল টুইংকেল দেবী। তারপর দ্রুত অভির রুমে গেল।

♥♥

বিদ্যা অভির রুমে এসে দাড়াল আর সাথে সাথে ওর চুল থেকে আলোকরশ্মি বের হয়ে ফ্লোরে দাড়িয়ে একটা কালো ছায়া অবয়বে পরিনিত হল। তারপর খিটখিট করে হেঁসে উঠে ফ্যাসফ্যাস গলায় বলল,

-” অভি, এবার তোকে কে বাঁচাবে? আমিতো তোকে গোড়া থেকে নির্মূল করতে এসে গেছি।”

অবয়বের কথায় বিদ্যা আর অভি দু’জনেই একসাথে অবয়বের দিকে স্থির চোখে চাইলো।

[] চলবে…….[]

বিদ্রঃ আগামীকাল গল্প আসবেনা। একটা দিন আমার বিরতির দরকার। ইনশাল্লাহ্ আগামী শনিবারে গল্প নিয়ে হাজির হব। প্রিয় পাঠকগন, আশা করি সবাই সমস্যাটি বুঝবেন।

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-24/

………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here