সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ৫

0
733

#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ৫

.

অঞ্জনা, মালতী এবং অনুরাধার পিঠে বেতের বাড়ি পড়েই চলছে। তিন জনেই অনেক জোড়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে কিন্তু ওদের কারো আওয়াজ দরজার বাহিরে যেতে পারেনা।

আমাদের ক্ষমা করে দিন বলেই তিনজনে কেঁদে উঠলো। এবার বেত তিনটিই অদৃশ্য হয়ে গেল। এই সুযোগে তিনজনই রুম থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে গেল।

….

সকালে আজ বিদ্যা আগে ঘুম থেকে উঠল। বিছানা ছেড়ে ছোট নগ্ন পায়ে হেটে হেটে দরজা পেরিয়ে বাহিরে চলে এল। গতকাল রাতে বৃষ্টিতে উঠান কাঁদা হয়ে গেছে। সেই কাদার ভিতর নেমে একদম বাসার বাহিরে এসে দাড়াতেই দেখল, পাশের বাসার হরিনাথের ছাগল এসে বিদ্যার হাতের লাগানো ফুলের গাছ সাবাড় করছে।

এই ছাগল দুর হো বলেই ছাগলগুলোর পিছে দৌড় দিল বিদ্যা। হরিনাথ কেবল স্নান সেরে পুকুর ঘাট থেকে ফিরেছে। এমন সময় ছাগলগুলো ওর সামনে দিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় অবশ্যই হরিনাথের গায়ে কাঁদা ছিটিয়েই চলে গেল।

“”” আমার গা নষ্ট হয়ে গেল রে, স্নান আমার বৃথা হয়ে গেল।”””

এমন সময় বিদ্যার সাথে বুড়ো হরিনাথ ধাক্কা খেয়ে চিৎপটান দিয়ে কাদায় পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি খেল।

“””ঐ বদজ্জাত মাইয়া! তুই কি করলি এটা!”””

বিদ্যা উঠে গিয়ে বুড়োকে ধরে তুলে বলল, ” দাদু, আপনাদের ছাগল বেঁধে রাখবেন। আজ আমার ফুলের গাছ খেয়েছে। আবার যদি খেতে দেখি তাহলে ঠেঙ্গিয়ে আপনার ছাগলদের ঠাং ভেঙ্গে দিব।

“কিহ্ তুই আমার ছাগলদের ঠাং ভাঙ্গবি? অপুর কোনদিন সাহস হয়নি আমার চোখের দিকে চেয়ে কথা বলতে আর তুই অতটুকু মেয়ে হয়ে আমার সাথে ঝগড়া করিস? চল আজই তোর বিচার দিব রঘুনাথের কাছে।”

” আমার বয়েই গেছে তোমায় ভয় করতে। ভালো করে তুলতে গিয়েছিলাম তার বদলে এমন কথা! দাড়াও দেখাচ্ছি মজা বলেই বিদ্যা দু’হাতে হরিনাথকে দিল এক ধাক্কা।”

ও বাপরে -মারে বলেই একটা চিক্কুর ছাড়ল হরিনাথ। ও অপু কারে বিয়া কইরা ঘুরে তুলছোস বাপ! এমন দস্যি মেয়েকে কেউ ঘরে তোলে?

বিদ্যা এবার বুড়োর দিকে তেড়ে আসতেই বুড়ো হরিনাথ বিদ্যার হাত খপ করে ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে উঠানে দাড়িয়েই রঘু, অপু, রমেশ, রাঘব বলে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগল।

বাহিরে কলরব শুনে অপুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। অপু উঠেই বিদ্যাকে না দেখতে পেয়ে অপু প্রায় দৌড়েই বারান্দায় এসে দাড়িয়ে দেখে বিদ্যার পুরো শরীর কাঁদায় মাখামাখি।

“”” বিদ্যা, ওখানে কি করছিস! গায়ে এত কাঁদা লাগলো কেন!”””

দেখনা দাদা, এই বুড়ো আমার হাত ধরে রয়েছে কিভাবে! আমায় ছাড়ছেই না বলে হরিনাথকে একটা ধাক্কা দিয়ে বিদ্যা উপরে দৌড় দিল। উপরে গিয়েই অপুকে জাপটে ধরল ঐ কাঁদা শরীরেই।

এবার হরিনাথকে পায় কে! মুখে যা যা এল সব বলল হরিনাথ বিদ্যাকে। সাথে অপুর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ল।

“”” কাকা ও ছোট মানুষ তাই বুঝতে পারেনি। আপনি ওকে ক্ষমা করে দেন।”””

“”” তুই কাকা বলে ডাকিস আর তোর বউ আমারে দাদু বলে ডাকে কেন! আমি কি দাদুর বয়সী!”””

“”” তুমি বুইড়া মানুষ, তোমারে দাদু বলে ডাকবোনাতে কাকা বলে ডাকবো?”””

“”” ঐ দেখ তোর বৌ কিভাবে মুখ চালায়! এই বয়সে যার এত মুখ বড় হলে কি করবে সেটা ঈশ্বরই জানেন।”””

“””অপু আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইল। কিন্তু পিছন ফিরে মুখে আঙ্গুল পুরে বিদ্যাকে কথা বলতে নিষেধ করলো।”””

এদিকে হরিনাথ চিল্লাইতে -চিল্লাইতে চলে গেল। আজ এতকিছু হয়ে গেল কিন্তু বাসার মহিলাগুলো কিছুই বললোনা। উল্টা বিদ্যার দিকে চেয়েও চাইলোনা। গত রাতের ঘটনা বেশ তাদের পস্তাচ্ছে।

অপু বিদ্যার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিচে চলে গেল। আজ অপু কিছুটা বিদ্যার উপর চটে গেছে। এই তুই কাকাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিস কেন? তোর কি কান্ডঙ্গান নেই। আর এমন যেন না দেখি বলে বিদ্যাকে গোসল দিয়ে রুমে নিয়ে আসল।

একটু বেলা হতেই অপুর বড় দাদা রিতেশ আর ছোট ভাই রনক বাসায় আসল। ওরা বর্ধমানে থাকে। রিতেশ একজন কলেজের লেকচারার আর তার ওয়াইফ লক্ষী একজন হাউসওয়াইফ। বিয়ের ৯ বছর হতে চলল, তাদের ঘরে কোন সন্তান নেই। তাই ছোট ভাই রনক ওদের সাথে থাকে।

সকল কাজের লোকেরা রান্না-বান্নায় ব্যস্ত হয়ে উঠল। বাড়িতে কতদিন পর সব ছেলেরা এক হয়েছে তার জন্য অঞ্জনা খুব খুশি। দুপুরে খাবারের সময় লক্ষী খুব ভালো করে বিদ্যাকে দেখল।

বিদ্যার খাওয়া হতেই ও চলে গেলে অপু খাইতে শুরু করলো। এর মাঝে লক্ষী বলে ফেলল,” বাবা, এই মেয়েকে বলি দেওয়া হবে? একে কই পাইলেন?”

বলি….! তাও বিদ্যাকে? অপুর চোখ দু’টি বড় হয়ে গেল। বৌদি , কি ভয়ানক কথা বলছো তুমি? বিদ্যাকে কেন বলি দেওয়া হবে?

এবার রঘুনাথ বাবু মুখ খুললেন। দেখ অপু, লক্ষী ঠিকি বলেছে। আমি বিদ্যাকে এখানে নিয়ে এসেছি একটা উদ্দেশ্যে। আগামী অমাবস্যাতিথির দিন ওকে বলি দেওয়া হবে। তোর মনে আছে, ছোট বেলায় একটা সাপকে মেরেছিলি! ওটা কোন সাধারন সাপ ছিলনা। ওটা একটা জ্বীন সাপের বাচ্চা ছিল। বাচ্চাটির বয়স সাড়ে তিনশত বছর ছিল। জ্বীনদের মতে ওটা কেবল ঐ বাচ্চার বাল্যকাল বয়স ছিল। তোর ঐ ভুলের জন্য আজ অবদি এই বংশে কোন সন্তান জন্মেনি। রাঘবের তো আর সন্তানই হলোনা।

এ নিয়ে পন্ডিতের সাথে কথা বলে তার মাধ্যমে জানতে পারি ঐ সাপকে যদি একটা ছয় বছর বয়সী বাচ্চার বলি দেওয়া হয় তাহলে এর থেকে পরিত্রান পাবো। নাহলে ঐ সাপটি তোকেও মেরে ফেলবে। ঈশ্বরের কৃপায় সেদিন তীর্থে বিদ্যাকে পেয়ে যাই। তাই শ্যামলের হাত-পা ধরে বিদ্যার সাথে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করি। কাজটা সমাধান হলে তোকে অনুরাধার সাথে বিয়ে দিব আমরা।

অপু ওর কষ্টের দুনিয়ার ভিতর যেন হুমরি খেয়ে পড়ল। এতটুকু মেয়েকে নিয়ে এদের এমন পরিকল্পনা! এরা এটা কিভাবে চিন্তা করতে পারলো?
বাবা ভুল করেছ তুমি। বিদ্যা ওর বাবা-মায়ের কত আদরের মেয়ে। কত ভরসায় শ্যামল আঙ্কেল বিদ্যাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছে আর আজ তার ফল তুমি এটা দেখালে?
অপু আর কথা বলতে পারলোনা। খাবার ছেড়েই উঠে এল রুমে। এসে দেখল বিদ্যা নেই রুমে। অপুর বুকের ভিতর কষ্টগুলো বের হয়ে আসতে লাগল। বিদ্যা, বিদ্যা বলে কয়েকবার ডাক দিতেই বিদ্যা কোথা হতে জানি দৌড়ে এসে অপুর সামনে দাড়ালো।

“”” কই গিয়েছিলি?”””

“”” একটু বাহিরে গিয়েছিলাম দাদা।”””

আমাকে না বলে যেন কোথায়ও যেতে না দেখি তোকে। যদি যাস তাহলে পা ভেঙ্গে রুমের ভিতর বসিয়ে রাখবো। কথাটা মনে থাকে যেন।

অপুর ধমকে বিদ্যা খাটে গিয়ে উপর হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজিয়ে চুপ করে রইল। ওর একটাই কথা, দাদা কেন আমায় বকবে!

এখন অপুর নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করলো। কার রাগ কার উপর এসে ঝাড়ল অপু। বিদ্যার কাছে এসে অপু ওর গায়ে হাত দিতেই বিদ্যা হাত ঝিটকিয়ে ফেলে মিনমিন স্বরে কেঁদে বলল,” আমায় ছুবেনা, খালি আমায় বকা দাও তুমি।”

“আসবিনা আমার কাছে!”

“না।”

“ওকে ব্যাপার না, আমিই আজ বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর কিন্তু ফিরবোনা।”

ফিরবোনা কথা শুনেই বিদ্যা বালিশ থেকে মুখ তুলেই তাকিয়ে দেখল অপু নেই। এবার ও বেশ ভয় পেয়ে গেল।
“দাদা, দাদা।”

“কোন আওয়াজের রিপ্লাই হলনা।”

দাদা বলেই বিদ্যা এক দৌড়ে দরজার কাছে এসে বাহিরে যতদুর চোখ যায় দেখল, কিন্তু অপুকে দেখতে পেলনা। দাদা বলেই গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিল বিদ্যা।

অপু আলমারির কোন থেকে বের হয়ে এসে বলল,” ভয় পেয়েছিস বিদ্যা?”

বিদ্যা সাথে সাথে চুপ। গাল ফুলিয়ে চোখের জল দু’হাতের পিঠ দিয়ে মুছে খাটে এসে বসল। অপুর সাথে তার কোন কথা নেই। তার সমস্ত রাগ এখন অপুর উপর।

অপু একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে খাটে এসে সুয়েই বলল,” এবার কথা না বললে কিন্তু সত্যিই চলে যাবো। তখন আর খুঁজে পাবিনা আমায়। কি চলে যাব!”

বিদ্যা অপুর দিকে চেয়েই রাগে বালিশ তুলে ছুড়ে মারল অপুর গায়ে। তারপর অপুর টিশার্ট টা টেনেই লুজ করে দিল। মাথার চুল ধরে ঝাকিয়েও যখন দেখল অপু কিছু বলছেনা তখন অপুর পাশে সুয়ে অপুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল।

কে বলবে এরা স্বামী-স্ত্রী! এমন সময় অপু এই প্রথম বিদ্যার কপালে একটা কিস করে বলল,” বিদ্যা, তুই বড় হলে কি আমায় ছেড়ে যাবি?”

আমি বড় হলে তোমায় সত্যি ছেড়ে যাব বলে কেঁদে উঠল বিদ্যা।

” সত্যি যাবি?”

বিদ্যা আর কোন কথা বলেনা। কিন্তু অপু চুপ হয়ে যায়। বুকের ভিতর এক চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। কি হতে কি হয়ে গেল। না ও সুখে আছে না আমি!

সন্ধ্যায় বাসায় মিটিং বসেছে। সবাই আলোচনা করছে এর পরে কি করা যাবে। সামনে বৃহস্পতিবারে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য অপুকে বুঝিয়ে রাজি করাতে হবে। এর দায়িত্ব পড়লো অপুর বৌদি লক্ষীর উপর।

অপু ওর রুমে চিয়ারে বসে কিছু কাজ করছিল আর বিদ্যা খাটের উপর বসে অপুর দেওয়া উপহার গুলো বের করে দেখছে। দাদা, আমার জন্য শাড়ি কিনেছ?

অপু মুখ না তুলেই বলল,” হুম, পছন্দ হয়েছে?”

বিদ্যা দৌড়ে অপুর পাশে দাড়িয়ে শাড়ী দেখিয়ে বলল,” দাদা, শাড়ীটা পড়ে দাওনা?”

” আমি কাজ করছি বিদ্যা! পড়ে এক সময় পড়ে দিব।”

” না, আমার এখনই চাই।”

তুই বড্ড জেদি বলে অপু বিদ্যাকে শাড়ী পড়িয়ে দিল। তারপর ম্যাচ করে গহনা আর সিঁথিতে সিঁদুরও দিয়ে দিল। বিদ্যাকে দেখতে একদম ছোট দেবীর মত লাগছে। অপু সব কাজ ফেলে বিদ্যার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেল।

” দাদা, আমরা কই যাচ্ছি?”

” তোকে নিয়ে ছবি উঠাবো।”

সবার সামনে বিদ্যাকে নিয়ে পাশের কয়েক বাসা দুরে অপুর ফ্রেন্ডের বাসায় গেল। অপুর ফ্রেন্ড বিজয়কে ডেকে আবার নিয়ে আসলো বাসায়। আলমারি থেকে ক্যামেরাটা বের করে বিজয়কে দিয়ে বলল,” বিজয় কয়েকটা ফটো উঠাতো?”

বিজয় মুখে একরাশ হাসি টেনে বলল,” বিদ্যা বৌদি, তোমাকে তো দারুন লাগছে?”

বিদ্যা অপুর হাত আরও জাপটে ধরে দাড়িয়ে রইল।

অপু একটা চেয়ারে বসে বিদ্যাকে পাশে নিল। তারপর ছবি তুলতে বিজয়কে বলল।

সাথে সাথে অপু আর বিদ্যা ক্যামেরায় বন্দি হল। আরো কিছু ছবি তুলে বিদ্যাকে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে বলল,” তোকে দেখতে খুব ভালো লাগছে। যা সবাইকে দেখিয়ে নিয়ে আয়।”

বিদ্যা চলে গেলে এবার অপু বিজয়কে বিদ্যার ব্যাপারে সব খুলে বলল। বিজয় সব শুনে বলল,” আমার একটা মামা আছে। সে এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে। কাল-পরশুর ভিতর তোকে আমি সব খবর এনে দিব।”

অপু কিছুটা চিন্তা মুক্ত হল। যদি কোন কিছু করে এই পুজা বন্ধ করা যায়। বিদ্যা যে শুধু ওরই দায়িত্ব।

গভীর রাত, বিদ্যা আর অপু ঘুমিয়ে আছে। এমন সময় বিদ্যার বালিশের নিচ থেকে ডিমগুলো বের হয়ে শূন্যতে ভাঁসতে লাগল। তারপর কোন শব্দ ছাড়াই ডিমগুলো ভেঙ্গে গিয়ে সেখান হতে পাঁচটি ছোট সাপের বাচ্চা বের হয়ে আসল। ডিমের খোলসগুলো সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল।

পাঁচটি সাপের বাচ্চাই বিদ্যার বুকের মধ্য ঢুকে বিদ্যার শরীরের উষ্ণ নিতে লাগলো।

সাথে সাথে রুমে সেই লাল চেহারার শয়তান মহিলিটা প্রবেশ করলো। এই সময় সাপের বাচ্চাগুলো খুব দুর্বল বলেই ঐ পাঁচটা সাপের বাচ্চাকে এক নিমিষেই টেনে হিঁচড়ে বের করতেই বাচ্চা গুলো হিসহিস শব্দ করতে লাগল।
মহিলাটি অতি আনন্দ সহিত বাচ্চাগুলো নিয়ে সেখান থেকে উধাও হয়ে গেল।

একদম বাসার বাহিরে এসে দাড়াতেই মহিলার সামনে সেই সাপ আর নারী অবয়ক এসে দাড়ালো। সাপটি সেই মহিলাকে ওর শরীর দিয়ে আষ্টে-পৃষ্ঠে পেঁচিয়েই ধরে ফেলল।

এবার মহিলাটি চিৎকার দিয়ে বলল,” যদি তোরা বাঁচতে চাস তাহলে আমায় ছেড়ে দে, না হলে তোর বংশ নির্বংশ করে দিব।”

যেমনটা অপুর বংশ নিয়ে খেলা করছিস তাইনা? তোর সন্তান মারা গেছে একটা দুর্ঘটনা জনিত কারনে। তুই কেন ঐ মানুষদের নিয়ে খেলছিস? ভালো হয়ে যা। আমি চাইনা তোর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে। এবারের মত তোকে ছেড়ে দিলাম বলে সাপটি ওর পাঁচ বাচ্চা সহ স্ত্রীকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

মহিলাটি ক্রোধে ফেটে পড়ে। শুধু সামনের অমাবস্যা তিথির অপেক্ষায় সে আছে। যদি ওর ভোগ না দেওয়া হয় তাহলে অপু তো যাবেই সাথে ওদের বংশের সমস্ত প্রদ্বীপ নিভিয়ে ফেলব।
বিদ্যার শরীর দিয়ে আমার অনেক কাজ রয়েছে।

পরদিন অপুর বন্ধু বিজয় এসে ওদের বাসায় নিয়ে যায় অপুকে। অপু বাসায় ঢুকেই দেখতে পায় একজন জটা ধারী আধা বৃদ্ধ মানুষ চেয়ারে বসে আছে।

বিজয় অপুর সাথে ওর মামাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এবার অপু ওর সমস্ত সমস্যা ঐ লোকটিকে খুলে বলে।

বিজয়ের মামা চোখ বন্ধ করে নানান মন্ত্র পড়তে লাগলো। মন্ত্র পড়া শেষ হতেই ওনার চোখ দিয়ে দুটো আগুনের বিজলি ছুটলো। আর সেখান থেকে দুটো মাথা কাটা সন্যাসী উপস্থিত হল। উনি আদেশ দিলেন এই সমস্যার সুরাহ্ বের করতে।

এক নিমিষেই ওরা অদৃশ্য হয়ে যেতেই বিজয়ের মামা ধপ করে পড়ে ঙ্গান হারায়।

কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে অপু আর বিজয় দু’জনেই চোখ খুলে দেখে উনি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছেন। বিজয় আসন থেকে উঠেই মামা বলে ওনার শরীরে হাত দিতেই ছিটকে গিয়ে দুরে আছাড় খেয়ে পড়ে গেল। সাথে সাথে বিজয়ের মামার ঙ্গান ফিরে আসে। বিজয়ের এমন অবস্থা দেখে ওর মামা চিৎকার দিয়ে বলল,” তুই একি করেছিস? আমি আর তোকে বাঁচাইতে পারবোনা। কেন তুই আমার শরীরে হাত দিতে গিয়েছিস? আমি সব কিছু সামলে নিতাম। এখন আমি কি করবো।”

অপু বিশ্মিত হয়ে সব শোনে। নাজানি ওর আর বিদ্যার জন্য বিজয়ের প্রান না দিতে হয়। অপু উঠে গিয়ে বিজয়কে ধরতেই অপু থর থর করে কাঁপতে লাগলো। মনে হয় বিজয়ের জিনিসটা অপুর শরীরে পার হয়ে গেছে।

বিজয়ের মামার মন্ত্র সামান্য ভুল হতেই এত কিছু ঘটে গেল। এবার ইনি আরও ভয় পেয়ে গেলেন। অপুর যদি কিছু হয় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে বিদ্যা অপুকে খুঁজতে খুঁজতে বিজয় দের বাসার ভিতর চলে এল।

বিজয়ের মা বিদ্যাকে দেখে খুঁশি হয়ে বলল,” আরে বিদ্যা তুমি এখানে?”

” কাকি, দাদাকে দেখেছ! দাদাকে তোমাদের বাসায় আসতে দেখেছি।”

বিজয়ের মা বলল,” ও ঘরে আছে। তুমি বস তোমায় কিছু নাড়ু আর বাতাসা দিচ্ছি। তুমি বরং খেয়ে নাও। এর ভিতরই অপু চলে আসবে।”

এমন সময় বিজয়ের চিৎকারময় কন্ঠ ভেঁসে আসলো রুম থেকে। এই অপু কি হল তোর? মামা ও উঠছেনা কেন?

ছোট বিদ্যা দাদা বলেই ঐ ঘরের মধ্য ছুটে গেল। গিয়ে দেখে অপু পড়ে থরথর করে কাঁপছে আর মুখ দিয়ে গড়গড় করে রক্ত বের হচ্ছে।

এই আমার দাদার সাথে তোমরা কি করেছ বলেই বিদ্যা হাতের কাছে একটা ঘটি দেখতে পেয়ে ওটাই ছুড়ে মারলো বিজয়ের মামার দিকে। তারপর অপুর কাছে বসল। দাদা কি হয়েছে তোমার বলেই বিদ্যা ঝাকাতে লাগল অপুকে।

বিজয়ের মা সহ সবাই ভয় পেয়ে গেল। আজ যদি অপুর কিছু হয় তাহলে রঘুনাথ বাবু কাউকে ছেড়ে কথা বলবেনা।

এমন সময় বিদ্যার শরীর থেকে এক অর্ধমানবী বের হল। যার পুর্নাঙ্গ শরীর নেই। যে হা করার সাথে সাথে রুমের ভিতর যত প্রেত শক্তি ছিল সবাইকে একাধারে গিলে ফেলতে লাগল।

যেখানে সমস্ত শক্তি পরাজিত হয়ে অন্ধকার নেমে আসে সেখান থেকেই বিশ্বাস, ভক্তি আর ভালোবাসার শক্তি উজ্জ্বল আলো হয়ে ঐ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে দেয়………….

[] চলবে…..[]

বিদ্রঃ আজ দিয়ে একবছর পূর্ন হল এই পেজের বয়স। লেখিকার জন্মদিনে তার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং প্রিয় বন্ধুটি উপহার হিসেবে “নাফিসা মুনতাহা পরী” পেজটি পাবলিস করে সবার মাঝে। অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এতদুরে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমার লেখার বয়স ১বছর ২ মাসেরও কম সময়। এই সময়ে মাত্র ৭টা গল্পই সমাপ্ত করেছি এবং একটি বইয়ের কাজ সমাপ্ত করেছি।
আমার প্রিয় পাঠকগন ছাড়া এত দুরে আসা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। যত বারই পরিস্থিতির শিকার হয়ে লেখা বন্ধ করতে চেয়েছি তত বারই এই প্রিয় পাঠকগন আমাকে বাধ্য করেছে গল্প লিখতে বসার জন্য। অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি আমার এই প্রিয় পাঠকদের থেকে। সেই ঋন শোধ করার মত আমার ক্ষমতা নেই। ভালবাসি প্রতিটা পাঠককে। এমনকি যারা আমার লেখার একটা শব্দও পড়েছে তাদেরও ভালোবাসি আত্ত্বার ভিতর থেকে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ্ সুবহানাতালা সবার নেক মকছুদ পরুন করুন।
আমীন

………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-

পার্রসোনাল ফেইসবুক পেইজ: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha.73
ওয়েবসাইট: https://nafisarkolom.blogspot.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here