সিঁদুর শুদ্ধি #নাফিসা মুনতাহা পরী #পর্বঃ২৯

0
667

#সিঁদুর শুদ্ধি
#নাফিসা মুনতাহা পরী
#পর্বঃ২৯

….
বিদ্যা রুপী অবয়বটি হাসতে হাসতে সময়টা উপভোগ করতে লাগলো। হঠাৎই এমন সময় রুমে আরো একটা বিদ্যা এসে উপস্থিত হল। তারপর হাতের ইশারা করতেই সমস্ত আগুন বরফে পড়িনিত হয় আর ঐ অবয়বটি ধপ করে উপর থেকে নিচে পড়ে গেল। এ…ই, কার এতবড় সাহস যে, আমাকে আঘাত করে বলেই রাগে ফেটে পড়লো অবয়বটি।

–“অন্যর রুপ ধরে কারো রুম দখল করলে তাকে কি শাস্তি দেওয়া উচিত! আমার তো মনে হয় তাকে কাঁচাই চিবিয়ে খাওয়া উচিত তাই না?”

বিদ্যা রুপী অবয়টি সামনের দিকে চেয়ে দেখল, আরও একটা বিদ্যা এই রুমে ওর সামনেই অবস্থান করছে। অবয়বটি চমকে উঠলো বিদ্যাকে দেখে। এটা কি করে সম্ভব। অবয়বটি জোড় গলায় বলল,

–” আমিই বিদ্যা।”

–” অহ্ তুই বিদ্যা! আমি তোর সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলছিস তুই বিদ্যা! তোর সাহস তো কম না?”

–” সাহসের দেখেছিস কি! আমি আগুন, তোকে জ্বালিয়ে পুরে ভষ্ম করে ফেলব। কোন কথা না বলে ফট এখান থেকে। আমাকে আমার কাজ করতে দে।”

কথাগুলো বলে অবয়বটি তার আসল রুপে আসে। সে দেখতে ছিল ভয়ঙ্কর রুপী একজন নারী। তার পা গুলো ছিল ঘোড়ার পায়ের খুড়ের মত।

–” এইতো নিজের আসল রুপে এসেছিস। অন্যর বাসায় ঢুকে নিজেকে সে দাবি করিস! তোর যোগ্যতা আছে, ওর সমান হওয়া?”

যোগ্যতা আছে কিনা এবার তাহলে দেখ বলে অবয়বটি রেগে গিয়ে বিদ্যা নামক আরেকটা অবয়কের দিকে আগুনের কুন্ডলী ছুড়ে মারলো। কিন্তু সাথে সাথে সেই অবয়বটি নিজেকে জলে পরিনিত করে, ফলে আগুন সম্পূর্ন নিভে যায়। এবার সেও নিজের আসল রুপে চলে আসে। সে আর কেউ ছিলোনা, সে ছিল অভির আন্টি টুইংকেল। টুইংকেল মুচকি হেসে স্লো গতিতে বলে উঠলো,

–” জল যতই বিষাক্ত কিংবা নোংরা, অথবা উত্তপ্ত হোকনা কেন, সে কিন্তু আগুন নিভানোর ক্ষমতা রাখে। তাই তুই আমার কাছে তুচ্ছ ছাড়া কিছুই নয়।”

অবয়বটি খিল খিল করে হেসে উঠে বলল,

–” এই আগুন পারেনা এমন কোন কাজ করতে। আর তুই আমাকে ভয় দেখাস? ভাল করে বলেছি কিন্তু শুনলিনা তো, এবার দেখ তোর হালটা কি করি!”

অবয়টি মন্ত্র পড়তে শুরু করতেই টুইংকেল তাচ্ছিল্যর সাথে হেসে উঠলো। তারপর বলল,

–” টুইংকেল কাউকে শুধু শুধু ভয় দেখায়না, সে কাজও করে দেখায়। আমাকে বুঝার মত তোর মেধা নেই।”

টুইংকেল আস্তে আস্তে একটা স্বচ্ছ জলের মত সাপের রুপে পরিনিত হল। তারপর ছুটে গিয়ে ঐ অবয়বকে পেঁচিয়ে ধরলো। জলের স্পর্শে অবয়টির শরীরে ছাৎ ছাৎ করে শব্দ হতে লাগল। যেন জলন্ত অগ্নিকুন্ডে ঠান্ডা জল ঢালা হচ্ছে। জলের ছোয়া পেতেই অবয়বটির শরীর ধংস হতে শুরু করলো।

অবয়বটি চিৎকার দিতে দিতে বলল,

–” আমাকে মেরে ফেলছিসতো কি হয়েছে! আমার মালিক যখন আমাকে খুঁজে পাবেনা তখন সে তোকে অবশ্যই খুজে বের করবে। কারন আমার মালিকও তোরই মত জল পিশাচ। আর সে তোর থেকেও অনেক শক্তিশালী বড় জল দেবী।”

কে বড় আর কে ছোট, সেটার আমি কোন ধারধারি না। সত্য পথে মারা যাওয়ারও পরোয়া করিনা। তুই আমার চিন্তা না করে নিজেকে কিভাবে আমার হাত থেকে বাঁচাবি সেটার চিন্তা কর বলেই টুইংকেল শেষ আঘাত হানলো ঐ অবয়বের উপর। তাতেই সে বাষ্ট হয় এবং ওর শরীর ছিন্নবিন্ন হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। সব সমাপ্ত হওয়ার পর টইংকেল ভাবতে লাগলো, সে কোন জলদেবীর কথা বলছে! কার কথা বলে টুইংকেলকে ভয় দেখানোর ট্রাই করলো?
সমস্ত চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে টেনে হিচড়ে বের করে ফেলল টুইংকেল। পরের কথা পরে ভাবা যাবে বলে টুইংকেল সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

প্রায় দু’ঘন্টা পেরিয়ে গেল তবুও বিদ্যার সেন্স ফিরানো যায়নি। অভি অনেক চেষ্টা করলো, তবুও কোন কিছুতেই কিছু করা গেলোনা। এখন শুধু একমাত্র আন্টিই ভরসা। কিন্তু এতক্ষনে আন্টির তো চলে আসার কথা! কিন্তু তিনি এখনো আসছেনা কেন বলতেই টুইংকেল এসে হাজির হল।

টুইংকেল আন্টিকে দেখে অভি স্বস্তির শ্বাস ফেলল। আন্টি ওখানে কি কোন সমস্যা হয়েছিল? আপনার আসতে এত দেরি হল যে!

ওর এখনো জ্ঞান ফিরেনি! এখনো বসে আছ কেন অভি! ওর শরীরে খুব খারাপ ম্যাজিক স্পর্শ করেছে তাই ওর চেতনা ফিরছেনা। তুমি সেটার প্রভাব নষ্ট করে দাও এখুনি বলেই টুইংকেল এসে বিদ্যার পাশে বসলো।

–” আন্টি, আমি অনেক চেষ্টা করেছি তবুও সফল হতে পারিনি। আপনি কিছু একটা করেন।”

অভি, আমিতো শুধু তোমাকে পথ দেখিয়ে দিতে পারি। কিন্তু এই জাদুর মোহ কাটা একমাত্র তোমার দ্বারাই সম্ভব। নিজের শক্তি সম্পর্কে তোমার হয়তো ততটা ধারনা নেই, কিন্তু তুমি যদি এইটার সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে পারো তাহলে সব তোমার কাছে ইজি হয়ে যাবে বলে অভিকে সব শিখিয়ে দিল টুইংকেল।

অভি ওর আন্টির কথামত বিদ্যার উপর ওর শক্তি প্রয়োগ করতেই বিদ্যার শরীর কেঁপে উঠলো। তারপর আবার নিস্তেজ হয়ে গেল। অভি ভীত চাহোনিতে তার আন্টির দিকে তাকাতেই টুইংকেল হেসে ফেলল। তারপর হাসতে হাসতে বলল,

–” এত অল্পতে ভয় পেলে চলবে! এসব কাজে যদি ভয় পাও তাহলে এত এত বিপদের সম্মুখীন হবে কিভাবে, আর জিতবেই বা কেমনে!”

–” আন্টি ও ঠিক হয়ে যাবে তো?”

টুইংকেল ওনার হাসি থামিয়ে পরম মমতাময় কন্ঠে বলে উঠলেন,

–” একটু পরই ও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। হয়ত মাথাটা খুব ব্যাথা করবে, তাই ওকে সাওয়ার নিতে বলো। আর হ্যাঁ, যার সাথে তোমার বিরোধ হয়েছে সে কে, তুমি কি তার সম্পর্কে জানতে পেরেছ?”

অভি বিদ্যার কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়েই বলল,

–” আমি ঠিক জানিনা সে কে? আর কেনইবা আমাদের উপর হঠাৎ ওভাবে আক্রমন করলো। কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

–“ওকে, তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা। তুমি সময়টা ইনজয় করো। বাঁকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। এখন আমি বিদ্যার ওখানে যাচ্ছি। ইনা, পারিজা ওরা কোথায়?”

–” ওরা বাসায় নেই। পারিজার কি যেন সমস্যা হয়েছে। তাই ওকে নিয়ে ওরা দেশে ফিরে গেছে। এই কথাটি আপনাকে ওরা বলতে বলেছে ।”

ওকে মাই সান বলে টুইংকেল অভির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

–” একটা কথা সবসময় মনে রেখ, বিদ্যাকে যেন তুমি তোমার কাছে ভিড়তে দিওনা। ও তোমার জন্য এখনো উপযুক্ত হয়নি। ওকে আরও সময় নিতে হবে।”

অভি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। কথাগুলো আন্টি ভুল বলেনি। এটা সবসময় স্মরনে রাখতে হবে।

অভি, তুমি থাকো আমি চললাম বলেই টুইংকেল সেখান থেকে ভ্যানিস হয়ে গেল।
আর এদিকে অভি অপেক্ষা করতে লাগলো, কখন বিদ্যার সেন্স ফিরে।

আরও কিছু সময় পর বিদ্যার সেন্স ফিরে এল। বিদ্যা চোখটা মেলেই এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো, কেউ নেই। বিদ্যা একপ্রকার লাফ দিয়েই বিছানা থেকে উঠে পড়ে। অভি, অভি বলে কয়েকবার ডাক দিল ভীত স্বরে। কিন্তু অভির কোন রেসপন্স না পেয়ে বিদ্যা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে করিডোরে আসতেই দেখলো, অভি দুই মগ কফি নিয়ে উপরে উঠে আসছে। অভিকে দেখে বিদ্যার যেন প্রান ফিরে আসলো। ওখানে দাড়িয়ে থেকেই অভির দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো বিদ্যা।

অভি উপরে চেয়ে দেখলো, বিদ্যা ওর দিকে চেয়ে রয়েছে। এই ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও বিদ্যার নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সেটা যেন ওর চেহারার সৌন্দর্যতা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। যেটা কখনো ওজন করে মাপা যায়না। অভি ইশারা করে বলল,

–” কি হয়েছে ম্যাডাম।”

অভির কথায় বিদ্যা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো। তারপর অস্থিরতা স্বরে বলে উঠলো,

–” তুমি ঠিক আছ অভি! তোমার কিছু হয়নিতো? আর আমি এখানে কেন! কি হয়েছিল?”

–“কিছু হয়নি তো! রুমে যাও, আমি আসছি।”

ওকে, বিদ্যা শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে সেখান থেকে রুমে চলে আসলো। তার পিছু পিছু অভিও চলে এল। কফির ট্রে বেডে রেখে বিদ্যাকে একটা টাওয়াল বের করে দিয়ে বলল,

–” সাওয়ারে যাও, আমি অপেক্ষা করছি।”

বিদ্যা অভির শরীর ভাল করে চেক করে বলল,

–” অভি, তোমার কোথাও লাগেনিতো! আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছি ঋষি স্যারের ভিতর ভেজাল আছে। উনি কেন তোমার সাথে ওরকম ব্যবহার করলো, আমি সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।”

ওর নাম ঋষি! তুমি কি তাকে আগে থেকেই চিনতে নাকি! চোখে মুখে ইঙ্গিতপূর্ন দৃষ্টি ফুটিয়ে জানতে চাইলো অভি।

–” হুম চিনিতো ওনাকে। আমাদের বস উনি। গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।”

ওকে ভুল চিনো তুমি, কথাগুলো মনে মনে বলল অভি। তারপর বিদ্যাকে তাগিত দিল ওয়াসরুমে যেতে। বিদ্যাও কথা না বাড়িয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল।

অভি বসে সেই সিঁদুরদানী নড়াচড়া করতে লাগল। অপু আর অভি কি একইজন! না না আমি এগুলো বিশ্বাস করিনা। একই রকম মানুষ পৃথিবীতে ৬ জন থাকে। কিন্তু কেউ কারো সাথে সাক্ষাৎ পাওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে। হয়ত আমার আর অপুর বিষয়টাও তেমন। অভি কথাগুলো যখন ভাবছিল তখন বিদ্যা ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

–” অভি, এখানে আমার ড্রেস নেই। কিছু একটা দিয়ে যাও।”

অভির কানে কথাগুলো গেলোনা। অভি বিভোর তার আগের জন্ম নিয়ে। যদি ওরা দু’জন এক হয় আর যদি অপু বিদ্যার সাথে মিলিত হয় আর আমিও যদি মিলিত হয় ঐ একই মানুষের সাথে তাহলে সমস্যা হবে। এটা যদি কেউ ভুলেও যানে তাহলে বিদ্যার জিবন খুব সংকটে পড়বে।

অভি যখন কথাগুলো ভাবছিল ঠিক সেই সময় বিদ্যা অভির কাছে এসে দাড়িয়েই বলল,

–” তোমার সমস্যা কি হুম! কখন থেকে ডাকছি আমার কথা কি তোমার কানে যায়না! এত কি নিয়ে ভাবছো?”

অভির চোখের সামনে বিদ্যা আসতেই অভির চোখ কপাল ফেঁড়ে যেন আকাশ ছুইলো। বিদ্যা জাষ্ট শুধু টাওয়াল পড়ে আছে তাও উপরের অংশটা একদম ফাঁকা। অভির সমস্ত ভাবনা গুলো ভোতা হতে লাগলো। অভি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল ওর দিক হতে। কিন্তু অভির পুরো শরীর জুড়ে কম্পনের সৃষ্টি হল। বিদ্যার অভিসন্ধি অভির বুঝতে বাঁকি রইলোনা। বিদ্যা এখন তার কাছে কি চায়। অভি উঠে ড্রেসিংটেবিলে সিঁদুরদানী রেখেই জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো।

যেই অভি আমার জন্য এত পাগল সেই কিনা এই মুহুত্বে আমাকে ইগনোর করছে! তাহলে সবাই ঠিকি বলে, একবার কোন জিনিস পারমেন্টলি হাতে পেলে তার আর কদর থাকেনা। অভির ক্ষেত্রেও কি তাই হল! এই কারনে অভি আমার কাছ থেকে এভাবে দুরে চলে গেল।

বিদ্যা বেশ জোড়েই গলার আওয়াজ তুলে বলল,

–” আমি এভাবে আর কতক্ষন থাকবো! আমার ঠান্ডা লাগছে তো!”

অভি কোন কথা বলছেনা কারন অভি পুরো দমে অস্থির হয়ে গেছে। শুধু একবার বিদ্যার ছোয়া পেলেই সে তার হিতাহিত বোধটুকু হারিয়ে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়বে বিদ্যার উপর, যেকোন মুহুত্ত্বেই বড় ধরনের ভুল করে বসবে। তাই বিদ্যার কথার কোন সাড়া না দিয়ে, অভি চুপ করে জানালা দিয়ে বাহিরের অন্ধকার জগৎ দেখতে লাগলো।

বিদ্যা অভির এমন ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে গেল। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো, ড্রেসিংটেবিলের উপর সিঁদুরদানীটা খুব যত্নে রাখা হয়েছে। বিদ্যা সেখান থেকে সিঁদুরদানীটা হাতে নিয়েই অভির পাশে গিয়ে দাড়ালো। কিন্তু এতেও অভির সাড়া না পেয়ে বিদ্যা অচমকায় অভিকে এক হাত দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেই অন্য হাতে সিঁদুরদানীটা অভির সামনে ধরলো।

অভির পুরো শরীর সাথে সাথে চঞ্চল হয়ে উঠলো বিদ্যার ছোয়ায়। পাগল হয়ে যাচ্ছে অভি। বিদ্যার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। ওর নিজের কাছ থেকে বিদ্যাকে সকল সুখের স্বাদ গ্রহন করানোর জন্য অভি অস্থির হয়ে উঠলো। অভি বাম হাতের মুঠোয় বিদ্যার হাত শক্ত করে ধরে নিচে তাকাতেই ওর চোখে সিঁদুরদানীটা ধরা পড়ে গেল। বিদ্যা অভির প্রেমিকা, স্ত্রী,প্রিয় সঙ্গী ছাড়াও ওর কাছে সবথেকে মূল্যবান একটা দায়িত্ব। বিদ্যার কোন ক্ষতি হোক সেটা অভি কখনো চায়না। অভি সিঁদুরদানীটা হাতে নিয়ে বড় একটা শ্বাস ত্যাগ করে বলল,

–” ওয়্যারড্রপে আমার ট্রীশার্ট আছে। সেখান থেকে পছন্দমত পড়ে নাও। যা মন চায় তাই পড়ো।”

অভির কথাগুলো বিদ্যার ভালো লাগলোনা। অভির বাচনভঙ্গিই অন্যরকম ছিল যা বিদ্যাকে প্রচন্ড ভাবে আঘাত করলো। বিদ্যা অভিকে ছেড়ে দিয়ে বেডে এসে বসে বলল,

–” আমার ড্রেসগুলো শুখিয়ে গেলে তখুনিই ওগুলো পড়ে বাসায় ফিরবো। এইটুকু অন্তত সময় দাও।”

বিদ্যার গলায় রাগ যেন ফেটে পড়ছে। অভি সেটা ভাল করেই বুঝতে পারলো। অভি ওয়্যারড্রপ থেকে একটা হোয়াট কালারের ট্রীশার্ট বের করে এনে বিদ্যার হাতে দিয়ে বলল,

–” দ্রুত এটা পড়ে নাও। বেশি সময় যেন না লাগে।”

আমি পড়বোনা বলছিই তো! তোমার সমস্যা হলে রুম থেকে তুমি বের হয়ে যাও বলতেই অভি বিদ্যার মুখের কথা কেড়ে নিয়েই খুব জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলল,

–” এত কথা বল কেন! তুমিও তো অন্য মেয়েদের মত। কিউট বয়দের দেখলেই কাপড় খুলতে মন চায় তাই না?”

অভির এমন কথা বিদ্যার আর সহ্য হলোনা। বেড থেকে উঠতে পড়তেই অভি বিদ্যার হাত শক্ত করে ধরে বলল,

–” ট্রী শার্টটা পড়ে কোথায় যাবা যাও।”

এবার বিদ্যার ধৈর্য্যর বাঁধ যেন ভেঙ্গে গেল। বিদ্যা নাক সিটকে উচু কন্ঠে বলে উঠলো,

–” নিজের সমস্যা হচ্ছে, সেটা বলতে পারছোনা কেন! বল তোমার নিজেরই সমস্যা হচ্ছে।”

অভি এমন ভাব করলো যেন, ওর ভিতর ফিলিংস বলতেই কিছু নেই। অভি অবিলায় বলে উঠলো,

–” নাহ্, আমার আবার কি হবে? আমিতো ঠিকি আছি। আমার নিজেকে কন্ট্রোলে রাখার মত বেশ ক্ষমতা রয়েছে। এখন যদি বিশ্ব সুন্দরীদের আমার সামনে এই তোমার মত করে রাম্প শোতে হাটানো হয় তাহলেও এই অভির কোন পরিবর্তন হবেনা বুঝেছ? এমন বর তুমি কোথাও পাবেনা। আমার মত মানুষ ওয়ান পিসই জগতে আছে। আমার কোন কপি করে ঈশ্বর কাউকে এই পৃথিবীতে পাঠাইনি।”

অভি কথাগুলো বলতে বলতেই বিদ্যাকে ট্রীশার্ট পড়িয়ে দেয়। বিদ্যা অভির কথার ভিতর এতটাই মগ্ন ছিল যে, কখন অভি ওকে ট্রীশার্ট পড়িয়ে দিয়েছে সেটা বিদ্যা বুঝতেই পারলোনা।
অভি এবার সিঁদুরদানী থেকে সিঁদুর নিয়ে বিদ্যার সিঁথি ভর্তি সিঁদুর দিয়ে ডুবে দিল। বিদ্যার নাকে কিছুটা সিঁদুর এসে লেপ্টে গেল।

বিদ্যার এই সিঁদুর পরানোর ব্যাপারটা খুব ভালো লাগলো। তাই এক নিমিষেই অভির উপর জমিয়ে রাখা সমস্ত রাগ যেন মুহুত্ত্বের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেল। অভি বিদ্যার নাকের উপরের সিঁদুর কেবল মুছতে যাবে এমন সময় বিদ্যা ওর হাত চেঁপে ধরে বলল,

–” শুনেছি সিঁদুর দেওয়ার সময় কিছুটা সিঁদুর যদি নাকে এসে পড়ে তাহলে বর নাকি তাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু আমার বেলায় বরতো ভালোবাসেইনা তার উপর এই সিঁদুরটুকুও মুছে দিতে চাচ্ছে। এমন বর বুঝি কারো হয়?”

হয় তো, যেমন আমি! আমিতো তোমাকে মোটেও ভালোবাসিনা বলে অভি কফির মগটা বিদ্যার দিকে এগিয়ে দিল। তারপর নিজের মগে চুমুক দিয়েই বলল,

–” কফি ছাড়া বিশেষ কিছু ভাল বানাতে পারিনা। দেখতো, কেমন টেষ্ট হয়েছে।”

বিদ্যা ভ্রু কুচকে অভির দিকে চেয়ে বিস্কিটের প্যাকেট থেকে বিস্কিট নিয়ে তারপর তাতে কামড় বসিয়ে বলল,

–” কফিটা বিস্কিটের মত সাধ হবে তো?”

বিদ্যার এমন অযুক্তি গত কথা শুনে অভি ওর রোমশ ভ্রুজোড়া কুঁচকে তুলে বলল,

–” কফি কখনো বিস্কিটের স্বাদে হয় নাকি!”

বিদ্যা কফির মগে কয়েকটা বিস্কিট ডুবিয়ে তাতে ঠোট ছুয়ে দিয়েই একটা চুমুক দিল। তারপর চোখ বন্ধ করে বলল,

–” কে বলছে বিস্কিটের স্বাদে কফি হয়না! আমারটা তো বিস্কিটের থেকে অপূর্ব স্বাদের কফি হয়েছে।”

তুমি এমন করে কফির সাথে ভালোবাসার খুঁনশুটি করলেতো, কফি নিজেই অনেক ফ্লেবারের স্বাদ হয়ে তোমার ঠোটে এসে এমনিতেই ধরা দিবে। অভি ছাড়াও হয়তো কফির মগ তোমার ঠোটের প্রেমে পড়েছে। কথাগুলো বলেই অভি কেবল বিস্কিটের প্যাকেটে হাত দিয়েছে অমনি বিদ্যা খপ করে বিস্কিটের প্যাকেট কেড়ে নিয়ে বলল,

–” তোমার জন্য এটা না, একটু আগে আমার সাথে কেমন ব্যবহার করলে হুম! আমি তো ভুলিনাই। শুধু কফিই পান করো।”

অভি শুধু বিদ্যার দিকে একপলক চাইল তারপর অন্যদিক হয়ে চুপ হয়ে রইল। এতে বিদ্যার কোন ফারাক পড়লোনা। কিন্তু কিছুক্ষন পর বিদ্যা অভির গায়ে হাত ছুয়ে ওর দিকে ফিরে তাকাতে বলল।

অভি বিদ্যার ডাকে, ফিরে তাকাতেই বিদ্যা ওর মুখে বিস্কিট নিয়ে ঠিক অভির মুখের সামনে গিয়ে ধরলো। বিদ্যার কাছে এ এক অন্যরকম অনুভুতি।

অভিও চট করে বেড থেকে উঠেই বিদ্যাকে ছোট বাচ্চাদের মত করে কোলে তুলে নিল। বিদ্যাও ওর দুই পা দিয়ে অভির কোমড় আকড়ে ধরলো আর হাত দু’টো দিয়ে অভির গলা জড়িয়ে ধরল।

বিদ্যা ওর মুখ দিয়ে বিস্কিট ধরে আছে আর অভি সেই বিস্কিটে কামড় দিয়ে খাচ্ছে। বিস্কিট খতম করার পর অভি বিদ্যার ঠোটের নেশায় পড়ে গেল। অভি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলোনা। বিদ্যার ঠোট নিজের ঠোট দিয়ে ছুয়েই বিদ্যাকে বেডে ফেলে দিল।

বিদ্যা মুচকি হেঁসে একটা ফ্লাই কিস করলো অভিকে। অভি সাথে সাথে ঐ ফ্লাই কিস হাত দিয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে ঘষলো তারপর বিদ্যার উপরে এসে ওর পেটে আলিঙ্গন করতেই বিদ্যা ওর ট্রীশার্ট একটু উচু করেই অভির মাথা ট্রীশার্টের ভিতর নিয়ে নিল। অভি একদম বিদ্যার বুকের সাথে মিশিয়ে গেছে। বিদ্যা জানেনা অভির এই মুহুত্ত্বে কেমন অনুভুতি হচ্ছে। এদিকে অভিতো একদম চুপ হয়ে গেছে।

বিদ্যা মুচকি হেসে নিচের ওষ্ঠে উপরের দাঁতগুলো বসিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

–” অভি কি করছো?”

অভি বিদ্যার ট্রীশার্টের ভিতর থেকে মাথাটা বের করেই বিদ্যার থিতিতে চোখ বন্ধ করে একটা কিস করেই বলল,

–“যেই পরিস্থিতিই আসুকনা কেন, তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি নিজেও যদি তোমাকে আঘাত করি তবুও তুমি আমায় ছেড়ে যেওনা বিদ্যা। তুমি জানোনা আমি তোমাকে কতটা চাই। আমার জিবনের শেষ মুহুত্বেও তোমাকে, একমাত্র তোমাকেই পাশে চাই।”

অভির কথা শুনে বিদ্যা অঝোড়ে কেঁদেই চলছে। অভির কথাগুলো শুনে, জিবনের প্রথম এতটা মনের দিক থেকে সে তৃপ্তি পেয়েছে। কোন মানুষ কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে, সেটা বিদ্যার জানা ছিলোনা। বিদ্যা অভিকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কেঁদেই চলছে। অভি অনেক চেষ্টা করলো, কিন্তু বিদ্যার কান্না থামাতে পারলোনা। বিদ্যা কাঁদতে কাঁদতেই একসময় অভির বুকে ঘুমিয়ে পড়ে।

অভিও বিদ্যার কপালে একটা গভীর কিস করে চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু সমস্যা হলো মধ্যরাতে পরে গিয়ে। হঠাৎই অভি রুমে কারো উপস্থিতি অনুভব করলো। অভি চোখ মেলতেই দেখে আগুনের শিকল ওর দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। অভি একবার চোখ বন্ধ করেই আবার চোখ মেলে তাকেতেই ওর চোখ দুটি শিখাহীন অগ্নিকুণ্ডতে পরিনিত হল। এক পলকেই চোখ থেকে অগ্নি শিখা বের হয়ে সেই আগুনের চেন ধংস করে দেয়।

আস্তে আস্তে রুমের ভিতর প্রবেশ করে ৫টা অবয়ব। ধীর গতিতে তাদের চেহারার বহিপ্রকাশ ঘটে। ঋষি, রত্না, ধীরাজ সহ আরও বৃদ্ধ দু’টি মহিলা।

বিদ্যার সিঁথি ভর্তি সিঁদুর দেখে ঋষি ক্ষেপে যায়। মা, আমি তোমায় বলেছিলাম না, বিদ্যা বিয়ে করেছে এই ছেলেটাকে। তুমি তো বিশ্বাসই করোনি। আজতো তোর খেল শেষ বলেই ঋষি অভির দিকে দৌড়ে আসতেই অভি ঋষিকে পা দিয়ো একটা ব্যাক শর্ট মারে। খেলার মাঠে যেমন, খেলোয়ার বলকে শর্ট মারে গোল করার লক্ষে ঠিক তেমনি অভির শর্টে ঋষি ওর বাবা-মাকে ভেদ করে দেয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়লো। সাথে সাথে দেয়াল থেকে দুটো হাত বের হয়েই ঋষির মুখ চেপে ধরে।

অভি বেড থেকে নেমেই বজ্রকন্ঠে বলে উঠলো,

–” চুপপপ, কোন আওয়াজ না। আমার ওয়াইফ যদি ভুলেও জেগে ওঠে তাহলে আজকে তোরা একজনও জিন্দা অবস্থায় ঘরে ফিরতে পারবিনা। এখন তোরাই ডিসাইড করে নে, কে বাঁচবি আর কে অভির পদতলে পৃষ্ঠ হবি।”

অভির কপালে সেই চিহ্ন ভেসে উঠেছে। রত্না অভিকে দেখেই স্থির হয়ে যায়। কন্ঠনালী পর্যন্ত ওর শুকিয়ে যায়। মুখের আওয়াজ পর্যন্ত গলা দিয়ে বের হতে ভয় পায়। হাত-পা সহ দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ ওদের কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এ সে কাকে দেখছে! এতো সাক্ষাৎ অপু…..

[] চলবে……..[]

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-29/

আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here