#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২
.
রাঘব বটিটা উঁচু করেই বিদ্যার গলায় কোপ বসাল……..
ঘুমন্ত বিদ্যা চোখের পলকেই অদৃশ্য হয়ে গেল। সাথে সাথে বটিটা ফ্লোরে পড়ে গেল। রাঘব পাগলের মত বিদ্যাকে খুঁজছে কিন্তু পুরো রুম জুড়ে বিদ্যা নেই। গেল কই মেয়েটি! রাঘব আবার এদিক ওদিক চাইতেই দেখলো, বিদ্যা সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
মেঝে থেকে বটিটা তুলে বিদ্যার দিকে ছুটে যেতেই বিদ্যার পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে লাল আলোকরশ্মির একটা চেন বের হয়েই রাঘবের গলা চেঁপে ধরল।
রাঘবকে শূন্যতে তুলে পাঁচ পাক ঘুড়িয়ে মেঝেতে আছাড় মেড়ে ফেলে দিল। আলোক রশ্মি একটা মানুষ আকৃতির ছায়া নিয়ে রুক্ষ গলায় চিৎকার দিয়ে বলল,” তুই আমার প্রান হরন করতে এসেছিস? দেখি তুই কিভাবে আমার প্রান হরন করতে পারিস। ”
ছায়াটি মেঝেতে পড়ে থাকা বটিটা তুলে মুখে নিয়ে পুরো বটিই চিবিয়ে খেয়ে একটা বড় ঢেকুর তুলে খিকখিক করে হাসতে হাসতে বাতাসে মিলিয়ে গেল।
রাঘব প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। থরথর করে রাঘব কাঁপছে। দরজা আপনা আপনি খুলে যায়।
প্রথমে রঘুনাথ বাবু দৌড়ে এলেন বিদ্যার কাছে। বিদ্যা অক্ষত অবস্থায় সেই একই জায়গায় গভীর ঘুমে মগ্ন। বিদ্যাকে অক্ষত অবস্থায় দেখে রঘুনাথ বাবু সবার সামনে হাউমাউ করে কেঁদেই ফেললেন। কান্না কন্ঠে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, তুই যাকে মারতে এসেছিস সে কে তুই তা জানিস? ও আমাদের শ্যামলের মেয়ে।
রমেশ আর রাঘব দু’জনেরই মাথায় যেন বাজ পড়ল। শ্যামল দা এখানে কোথা হতে আসবে? সে তো বাংলাদেশে থাকে?
দাদা…! শ্যামলদা কে কই পেলে?
রমেশের মুখে এমন কথা শুনে রঘুনাথ বাবু খুঁশিতে চোখের জল মুছে বলল,” তীর্থে গিয়ে ওকে পেয়েছি। ও আসার পাত্র নয়। তাই ওর মেয়েকে এভাবে নিয়ে এসেছি।”
দাদা আগে বলবেনা! এ শ্যামল দার মেয়ে বলেই রমেশ খুঁশিতে ঘুমন্ত বিদ্যাকে কোলে তুলে নিল। সাথে সাথে বিদ্যার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিদ্যা চোখ খুলতেই সবার অজান্তে ওর চোখ থেকে একটা আলোকরশ্মির ঝলকানি এসে রাঘবের চোখে আঘাত করলো।
সাথে সাথে রাঘব ছিটকে গিয়ে দরজায় বারি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। হঠাৎ করেই এমন কান্ডে সবাই বেশ ভয় পেয়ে গেল। কিভাবে কি হল কেউ কিছুই বুঝতে পারলোনা।
রাঘবের স্ত্রী মালতী দৌড়ে স্বামীর কাছে গিয়ে হাত ধরে তুলতেই রাঘব চিৎকার করে বলল,” দাদা এ তুমি কাকে এনেছ! এ কখনো মানুষ হতে পারেনা। মালতী আমাকে শিঘ্রই ঘরে নিয়ে যাও।”
চুপ বিয়াদপ, তোর সাহস কি করে হল এই ছোট্ট মেয়েটার দিকে বটি নিয়ে তেড়ে আসা! এখন সবার সামনে নাটক সাজাচ্ছিস? বৌমা, ওকে নিয়ে যাও এখান থেকে বলে রঘুনাথ বাবু অপুর দিকে চাইল। অপু, ওকে তুই একা রেখে কই গিয়েছিলি?
অপু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” ওর খাবার নিতে গিয়েছিলাম।”
এতগুলো মানুষ দেখে বিদ্যার বুকের ভিতর ধকধক করতে লাগল। বিদ্যা শুধু রঘুনাথ আর অপুকে চিনে। এতগুলো মানুষ দেখে অপুর দিকে চেয়েই দাদা বলে কেঁদে উঠল।
অপু আর এক মুহুত্বও দেরী না করে রমেশের কাছ থেকে বিদ্যাকে নিয়ে খাটে বসিয়ে বলল,” ভাত খাবি বিদ্যা?”
বিদ্যা কিছু না বলে অপুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল।
ও ভয় পাচ্ছে বলে রঘুনাথ সবাইকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে চলে গেল।
♥
রাঘব বিছানায় বসে আছে আর তার স্ত্রী মালতী ওর কাছে দাড়িয়ে এক নাগারে জিঙ্গাসা করেই চলছে, হ্যা গো কি হয়েছিল? তুমি এত ভয় পেয়েছ কেন?
অনুরাধাকে বলো সে যেন অপুকে ভুলে যায়। ওকে আমরা এর চেয়ে ভালে জায়গায় বিয়ে দিব। ও যেন অপুর সাথে আর নিজেকে না জড়ায়। শ্যামল দার মেয়েকে আমি কিছুতেই কষ্ট দিতে পারবোনা। রাঘব ওর সাথে ঘটে যাওয়া আসল ঘটনাটি আর কাউকে বললোনা।
এমন সময় অনুরাধা রুমে ঢুকেই বলল,” আপনি যদি আমার নিজের বাবা হতেন তাহলে আমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারতেন? নিজেকে বাবা বাবা বলে জাহির করা সেই রাঘব চ্যাটার্জী আজ কই?”
অনুরাধা কি বলছিস মা! তোকে কোন কিছুর অভাব দিয়েছি, না কোনদিন কষ্ট দিয়েছি?
মা তুমি প্লিজ চুপ করো। আমি তোমার কে হই বলো! কোন রক্তের সম্পর্ক আছে তোমার সাথে আমার? আজ আমার নিজের মা থাকলে কোনদিনও আমার চোখের পানি ঝরতে দিত?
আমি তোকে কোনদিনও আমার বান্ধবীর মেয়ে ভাবিনি। সবসময় নিজের মেয়ের মত দেখেছি, আর আজ তুই এই কথা বলছিস?
অনুরাধা মালতী দেবীর পায়ের কাছে বসে বলল,” মা, আমার অপুকে চাই। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা।”
কে তোর সাথে থাকলো আর না থাকলো জানিনা। কিন্তু আমি তোর সাথে আছি। অপুর সাথেই তোর বিয়ে হবে।
অনুরাধা, ঐ ছোট্ট মেয়েটাকে তুমি সাধারন মেয়ে ভাবোনা বলে রাঘব সব খুলে বলল মালতী আর অনুরাধাকে।
ঐ সব দৈব্য শক্তি বলে আমি কিছু বিশ্বাস করিনা। যদি দৈব্য শক্তি থেকেও থাকে তার বিরুদ্ধে কাজ করার মত মানুষও দুনিয়ায় আছে। অনুরাধা, কাল একবার আমার বাবার বাসায় যাবো। তুই এদিকটা খেয়াল রাখিস। অবশ্যই ভালো কোন খবর নিয়ে আসবো।
অনুরাধার মুখে এবার হাঁসির রেখা ফুটলো। ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,” মা, তুমি আমার পাশে থাকলেই চলবে।”
এখন প্রশ্ন অনুরাধা কে? সে কি ভাবে এই পরিবারে জড়িয়ে গেছে?
অনুরাধার বাবা রঘুনাথ বাবুর বিজনেস পার্টনার ছিল। আর অনুরাধার মা, মালতী দেবীর বান্ধবী ছিল। অনুরাধার বয়স যখন ৭ বছর তখন ওদের বাসায় কোন এক কারনে ভয়াভয় আগুন লেগে ওর পরিবার সহ পাশের বাসার আরো কিছু মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। অনুরাধা সেদিন স্কুলে থাকার কারনে বেঁচে যায়। রঘুনাথ অনুরাধাকে যখন এই বাসায় নিয়ে আসে তখন নিঃসন্তান দম্পতী রাঘব আর মালতী ওর দত্তক নেয়। সেই থেকে অনুরাধা এই বাসায় মানুষ হয়েছে।
♥
পরদিন সকালে অপুর ঘুম ভেঙ্গে দেখে বিদ্যা ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। অপু ওকে সরিয়ে দিতেই ওর হাত বিছানায় পরলো। অপু কিছুটা ভিজে ভাব অনুভব করলো। অপু ভালো করে চেক করে দেখলো, হুম বিছানা ভিজা। অপু হঠাৎ ওর টাউজার চেক করলো। অপুর টাউজারও ভিজে। অপুর তো চোখমুখ শুখে গেল। কি ব্যাপার! এই বয়সে বিছানায় হিসু করলাম না তো?
বিদ্যার দিকে চোখ পড়তেই অপুর সন্দেহ হল, বিদ্যা এই কাজ করেনি তো?
বিদ্যাকে চেক করেই বুঝতে পারলো ও এই কাজটা করেছে। নিজে সব জামা কাপড় ভিজিয়েছে সাথে বিছানা সহ অপুকেও ভিজিয়েছে।
বিদ্যা বলে কয়েকবার ডাক দিতেই বিদ্যা চোখ খুলে অপুর দিকে চেয়ে রইল। তারপর বলল,” অপুদা আমার মা কই?”
তোর মায়ের কথা পরে হবে। আগে বলতো! তোর বিছানায় হিসু করার অভ্যাস আছে?
বিদ্যা এমন কথা শুনে ভিষন লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরালো। সে নিজেও বুঝতে পেরেছে, সে কি কান্ড করে ফেলেছে।
এই ওঠ বলেই অপু বিদ্যাকে একটা ধমক দিল। বিদ্যাও সুড় সুড় করে উঠে বিছানা থেকে নেমে একটু দুরে গিয়ে দাড়ালো। অপু উঠে বিদ্যাকে নিচে নিয়ে গেল। তারপর ওকে স্নান করে দিয়ে নিজে স্নান করলো।
বিউলিকে ডেকে ওর বিছানার তোষক সহ চাদর বদলে দিতে বলল।
অপুর এক পরিচিত বৌদি এসে বলল,” কি রে অপু! রাত না পেরুতেই গোসল? ঐ ছোট মেয়েকেও তুই ছাড়লিনা! ওতটুকু মেয়ের সাথে ক্যামনে কি!”
অপু বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,” তুই ঘরে যা।”
বিদ্যা চলে যেতেই অপু বলল,” বৌদি, ছোট বাচ্চার সামনে কি বল? ও হিসু করেছে তাই গোসল দিলাম।”
ওদিক থেকে অপুর মা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, কপাল আমার। কোথায় ছেলের বৌয়ের হাতে বৃদ্ধ বয়সে সেবা নিব, তা না এখন দেখি ছেলের বৌয়ের জামা কাপড় আমায় কেঁচে দিতে হবে।
মা খামোকা কথা বাড়াও কেন? ও কি বলেছে, তোমাকে ওর ড্রেস কাঁচতে? এমনি টেনশনে আছি তার ভিতর এত কথা কেন বলছো? তোমাদের সবার অত্যাচারে দেখছি আমি পাগল হয়ে যাব। অপু কথাগুলো বলেই ওর রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
রুমে এসে দেখে বিদ্যা ওভাবেই দাড়িয়ে আছে। জামা পড়তে পারিসনা বিদ্যা?
” না দাদা।”
বিদ্যা দাদা বলতেই অপুর মা এসে ধমক দিয়ে বলল,” ঐ এত দাদা দাদা করিস কেন? ও কি তোর দাদা হয় নাকি? ঈশ্বর এমন দৃশ্য দেখার আগে আমার প্রান নিলে না কেন?”
মা, আবার শুরু করেছ? যা বলার দরকার বাবাকে গিয়ে বলনা। এখানে বাবা ছাড়া কারো কোন দোষ নাই। বিয়ে না করলে উনি মন্দাকিনী নদীতে প্রান বির্সজন দিবে। কম ঠেলায় কাজটা করিনি। বাবার দোষ আর বিদ্যার উপর ক্রোধ না ঝেড়ে আমাকে একটু শান্তি দাও। আমি যে কেন দেশে আসলাম, এখন বেশ ভালয় পস্তাচ্ছি।
বুড়ো বয়সে তিনি ধর্ম সেবা করতে গিয়েছেন। ওনারা ওসব মানলেও আমি মানবোনা। আজই শ্যামল বাবুর কাছে পত্র লিখে জানাবো। তিনি যেন তার এই মেয়েকে নিয়ে যায়। যা হবার হয়ে গেছে। তোর বিয়ে এবার অনুরাধার সাথেই হবে।
অপু কিছু না বলে বিদ্যাকে কাছে ডাকল। কিন্তু বিদ্যা এলোনা। অপুর মাকে বিদ্যা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। ও খাটের এক পাশে দাড়িয়ে আছে।
অপু গিয়ে বিদ্যাকে জামা পড়ে দিয়ে বলল,” বেশি দৌড়াদৌড়ি করবিনা। আমার আশে-পাশেই সবসময় থাকবি।”
অপু বিদ্যাকে নিয়ে নিচে গেল।
♥
অনুরাধার মা মিতালী দেবী খুব ভোরে একটা কাজের মেয়েকে নিয়ে ওর বাবার বাসায় গেছে। মিতালীর মা ওকে একটা তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যায়।
তান্ত্রিক সব কথা শুনে আসনে বসে তার কাছে থাকা জ্বীনদের আহ্ববান করলো। যখনই তান্ত্রিকের শরীরে জ্বীন প্রবেশ করলো, সাথে সাথে তান্ত্রিক চোখ বন্ধ করে মুখ খুলল।
মালতী, ঐ মেয়ে কোন সাধারন মেয়ে নয়। ওর কাছে সিদ্ধি প্রাপ্ত শক্তি রয়েছে। এতটুকু মেয়ের কাছে এমন শক্তি কিভাবে এসেছে সেটাই আমি বুঝতে পারছিনা। না কোন দেব না কোন দেবী, না কোন প্রেত না কোন অন্যশক্তি। এই শক্তিটি কিছুতেই সামনে আসছেনা। আমার আরো সময় লাগবে এটা জানতে। পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান আছে। তোর এই সমস্যারও সমাধান আছে। আগামী এক সপ্তাহে এর সমাধান আমি নিশ্চয় বের করবো।
আজ তুই যা, আগামী রবিবার আবার আসবি। নিশ্চয় পরের বার এর সমাধান সহ বাড়িতে ফিরে যাবি। আজ তোকে খালি হাতেই ফিরে যেতে হবে।
মালতী কিছু টাকা বের করে তান্ত্রিককে দিতে গেলে তান্ত্রিক বলল,” আগে কাজ হোক তারপর দেখা যাবে।”
মালতী সেদিন সন্ধ্যার আগেই বাড়ী ফিরে রাঘব আর অনুরাধাকে সব কিছু খুলে বলল।
রাঘব সাথে সাথে বলল,” আমি গতকাল তোমাদের বলিনি! ঐ মেয়ে সাধারন মেয়ে নয়। আমার কথা এবার বিশ্বাস হলতো?
ও যেই হোকনা কেন? ওকে আমার আর অপুর জিবন থেকে সরিয়েই ছাড়ব। কোথা থেকে একটা মেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসবে আর সেটা আমি মানবো! আমি কিছুতেই মানবোনা বলে অনুরাধা চলে গেল সেখান থেকে।
♥
রাতে সবাই খেতে বসেছে। অপু বিদ্যাকে মুখে ভাত তুলে খাওয়ায় দিচ্ছে। অনুরাধা এক নজরে বিদ্যার খাওয়া দেখছে। ঐ জায়গাটা শুধু আমার। এই ছোট্ট মেয়ের কাছে আমি পরাজিত হব? কক্ষনো না……..
বিদ্যার খাওয়া হলে ওকে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে অপু নিজে খেতে শুরু করলো। অঞ্জনা দেবী ছেলের কাছে এসে করুন সুরে কাঁদতে লাগল। কোথায় ছেলেটা এসে নিজের জিবন উপভোগ করবে তা না করে তাকে একটা ছোট বাচ্চার দেখাশুনা করতে বলছে। কতদিন পর দেশে এসে এই যম জুটল তার ঘাড়ে। না নিতে পারছে না ফেলে দিতে পারছে!
বৌদি যা হবার হয়ে গেছে। আমি বিদ্যাকে মেনে নিয়েছি। দাদা নিশ্চয় বুঝে শুনেই কাজটা করেছে। দেখ আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আগের যুগের মানুষ কি এই বয়সের মেয়েদের বিয়ে করেনি? তোমার বিয়েও তো ছোট বয়সে হয়েছে। তুমি কি সংসার সামলাওনি! রমেশ কথাগুলো বলে হাত ধুয়ে উঠে গেল।
অপু খাবার শেষ করে রুমে এসে দেখলো, বিদ্যা জানালা ধরে আকাশের পানে চেয়ে কাঁদছে।
“বিদ্যা.”
বিদ্যা দৌড়ে এসে অপুর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। দাদা আমি বাড়ি যাব। আমার এখানে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।
অপু বিদ্যাকে কোলে নিয়ে বলল,” আমার কাছে থাকার সখ তোর মিটে গেছে?”
তোমার মা খুব পঁচা। অনু দিদিও খুব খারাপ। আজ অনু দিদি আমায় অনেক মেরেছে বলে বিদ্যা ওর জামা খুলে অপুকে দেখালো।
বিদ্যার কথা অপুর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যার ফর্সা পিঠে অনেকগুলো দাগ। সেখানে রক্ত জমে কালচে রং ধারন করেছে। ঐ দাগগুলো দেখে অপুর হিতাহিত বোধ চলে গেল। যেই মেয়ে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম, যার পরিবার তাকে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত জিবনে দেয়নি তাকে কিভাবে অনুরাধা আঘাত করলো? অপু এক মুহুত্বও দেরী না করে নিচে খাবারের রুমে গিয়ে দেখে অনুরাধা সবার সাথে খাবার খাচ্ছে।
অপু অনুরাধাকে খাবার থেকে তুলেই সবার সামনে চড় মেরে বলল,” বিদ্যার গায়ে কেন হাত তুলেছিস?”
অনুরাধা চুপ করে রইল কিন্তু অঞ্জনা ও মালতী চিৎকার দিয়ে বলল,” অপু ওর গায়ে তুই হাত তুলছিস কেন?”
অপুও চিৎকার দিয়ে বলল,” অনুরাধা আমি আবার বলছি, বিদ্যার গায়ে তুই কেন হাত তুলেছিস? এই তোর শিক্ষা! একটা ছোট বাচ্চাও তোর হাত থেকে রেহাই পায়না?”
অনুরাধা রাগে ক্ষোভে খাবার প্লেটটা সবার সামনে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল,” ওকে মেরেছি বেশ করেছি। আমার জিবন ও নরক করে ফেলেছে। আমার সকল সুখ মাটি করার জন্য ওকে শাস্তি পেতেই হবে।”
অপুও রেগে বলল,” ফার্দার যদি ওর গায়ে হাত তুলিস তাহলে তোকে আর কে শাসন করবে জানিনা, কিন্তু আমি অপু, তোর হাত মুচড়ে ভেঙ্গে দিব। যাতে ঐ হাত দিয়ে বিদ্যার গায়ে হাত তুলতে না পারিস। সাথে মুখে ভাত তোলার ক্ষমতাও যেন না থাকে।”
বড় জেঠি দেখছো, তোমার ছেলের ব্যবহার? ঐ মেয়ে অপুদার মাথা খেয়ে ফেলছে বলেই অনুরাধা কাদতে লাগল।
অপু কোন কথা না বলে রুমে চলে আসল। আজ একটু ওকে রেখে বাহিরে গেছি তার মধ্য এতকিছু ঘটে গেল? ওকে রেখে দেশের বাহিরে চলে গেলেতো একে মেরেই ফেলবে ওরা। অপু বিদ্যাকে নিয়ে সুয়ে পড়ল।
বিদ্যা অপুকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদেই চলছে। মার হাতে বকা খেয়েছে কিন্তু এই আঘাতের সাথে বিদ্যা একদম পরিচিত নয়।
অপু বিদ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,” তুই কেন আমার কাছে আসতে চাইলি বিদ্যা! না আমি ভালো আছি না তুই সুখে আছিস।”
♥
আনুমানিক রাত ২টা বাজে। বিদ্যার কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। বিদ্যা কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো কে ওকে ডাকছে। তারপর বিদ্যা স্পষ্ট শুনতে পেল, ওর নিজের বড় বৌদি ওকে ডাকছে।
বিদ্যা বৌদি বলে লাফ দিয়ে উঠে দরজার কাছে দৌড়ে যেতেই দরজা খুলে গেল। বিদ্যা বৌদি বলে ডাকছে আর বাহিরে যাওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছে। যতগুলো দরজার কাছে আসছে আর একটা একটা করে দরজা খুলে যাচ্ছে। সদর দরজা পেরিয়ে একদম উঠানে এসে দাড়িয়ে বৌদি বলে চিৎকার দিল। কিন্তু কোন আর শব্দ ওর কাছে ফিরে এলোনা।
খানিক পড়ে আবার সেই ডাক, বি…..দ্যা।
আবার বিদ্যা প্রানপনে ছুটল সেই ডাকের খোঁজে। একদম বাসার এড়িয়া পেরিয়ে অনেক দুরে চলে এসেছে বিদ্যা। একটা গাছের নিচে দাড়িয়ে বিদ্যা বলে উঠল, বৌদি কই তুমি?
এমন সময় বিদ্যার পিছন থেকে একটা মিহি সুরেলা কন্ঠ ভেঁসে এল……
কাজলে ওলা ভোলা, ওজনে এক তোলা
কেন হে কন্যা, এত রাতে গাছতলা……?
[] চলবে……[]
বিদ্রঃ এই গল্পটির প্রথম অংশগুলো ১৯৯৪ সালের সময়কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। যাদের বিদ্যার বয়স নিয়ে পড়তে সমস্যা হচ্ছে তাদেরকে বলছি, বিদ্যার ৬ বছর বয়স দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক। সেই পরিকল্পনা মাফিক পরবর্তী পাঠগুলো সাজানো হবে। তারপরও যদি কারো সমস্যা হয় তাহলে আমার করার কিছু নেই। আমি আমার লেখা স্বাধীন ভাবে চালিয়ে যেতে চাই।
………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
পার্রসোনাল ফেইসবুক পেইজ: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha.73
ওয়েবসাইট: https://nafisarkolom.blogspot.com