সিঁদুরশুদ্ধি পর্বঃ১

0
1836

#সিঁদুরশুদ্ধি পর্বঃ১

#নাফিসামুনতাহাপরী

.

রাত ন’টা পেরিয়ে গেছে। “অপু চ্যাটার্জী” বেতের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে। চোখে পানি টলমল করছে। চোখের পাতা পাজরাতেই চোখ দিয়ে কয়েকফোটা জল ঝরে গেল।

খানিকটা দুরে তার নব বিবাহিত ৬ বছরের বালিকা বধু “বিদ্যা ত্রিবেদী” পালঙ্কে বসে আছে। ছোট্ট বিদ্যা এতবড় পালঙ্ক কোনদিনও দেখেনি। চোখ ফেরে ড্যাপ ড্যাপ করে পালঙ্ক দেখছে।

২৫ বছরের অপুর জিবনে এত বড় দুর্ঘটনা টা আজই ঘটেছে। বাবা এটা কিভাবে করতে পারলো। অপুর বুকে ঝড় বয়ে চলছে। বাহিরে হট্টোগল চলছে। চিৎকার চেঁচামেচিতে পুরো বাসা মাছের বাজার হয়ে উঠেছে। সবাই অপুর বাবা রঘুনাথ চ্যাটার্জীকে একই প্রশ্ন করছে, বাবা হয়ে তার নিজের ছেলের জিবন নিয়ে কিভাবে পুতুল খেললেন?
অপুর মা অঞ্জনা দেবী মাথা নিচু করে স্বামীর পাশে দাড়িয়ে আছেন।

১০ দিন আগের কথা,
অপু একজন কলকাতার ছেলে কিন্তু পড়ালেখা করে ফ্রান্সে। ওর মেজো জেঠুর কাছে থেকে পড়াশুনা করেছে। ওখানে ওর মেজো জেঠু ও তার পরিবার সেটেল। অপু একজন হার্ড বিশেষজ্ঞ। ডাক্তারি পড়া শেষ করে ওখানেই সেটেল হয়েছে। ১৩ বছর যাবত মেজো জেঠু ওর তার পরিবারের সাথে ফ্রান্সে বসবাস করছে।
ওর ঠাকুমা মৃত্যু পথযাত্রী তাই ওর জেঠু সাথে দেশে এসেছে। অপু ১৩ বছরে মোট ৫ বার দেশে এসেছে।

ঠাকুমা মারা গেছে ১৫ দিন আগে। রঘুনাথ চ্যাটার্জী অপুকে নিয়ে “কেদারনাথ মন্দিরের” উদ্দের্শ্য রওনা দেন। রঘুনাথ বাবুর মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তার অস্থি যেন “মন্দাকিনী” নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বহুকাল আগে তার ইচ্ছা ছিল পতিদেবকে নিয়ে কেদারনাথ মন্দিরে তীর্থে যাবে। সেই আশা তার পুরুন হয়নি তাই মারা যাওয়ার আগে ছেলেকে তার মনের ইচ্ছার কথা বলে যান।

অপু আর ওর বাবা গৌরীকুন্ডে এসে একটি হোটলে ওঠে। বিকেলের দিকে অপু রুম থেকে বের হতেই দেখল, পাশের রুম থেকে একটা ৬ বছরের মেয়ে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে অপুকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বলল,” দাদা, কেদারনাথ মন্দির কত দুর?”

অপু একটা মুচকি হেঁসে মেয়েটির গাল টেনে দিয়ে বলল,” তোমার নাম কি পিচ্চু!”

“বিদ্যা” বলেই মেয়েটি মুখ ভার করল। অপুর গাল টানা তার হয়তো পছন্দ হয়নি ।

এমন সময় একটা মহিলা রুম থেকে বের হয়েই বলল,” বিদ্যা তুই আবার বের হয়েছিস?”

বিদ্যা ওর মায়ের ভয়ে সুড় সুড় করে রুমের ভিতর ঢুকতেই অপু সেখান থেকে চলে আসল নিচে। মেয়েটা ভারী সুন্দর। এই ছোট বয়সে যার এত রুপ না জানি বড় হলে কত রুপবান হবে। অপু আশেপাশের পরিবেশ দেখছে। এমন সময় একটা অঘোরী তান্ত্রিক ওর সামনে দিয়ে চলে যায়। তান্ত্রিকের শরীরের গন্ধে অপুর বমি আসতে লাগল।
অপু আর একমুহুত্বও দেরী না করে হোটলে ফিরে আসল। রুমে ঢুকেই বেশ চমকে যায়। ওর বাবা একজনকে জড়িয়ে ধরে ভিষন কাঁদছে। অপু আরো অবাক হল বিদ্যা আর ওর মাকে দেখে।

অপু আয়, শ্যামল ও আমার মেজ ছেলে। জানিস অপু! শ্যামলকে সেই কবে বাংলাদেশে রেখে এসেছি। আজ ঈশ্বরের কৃপায় ওকে আবার ফিরে পেলাম। কড়িডোড়ে ব্যাটা দাড়িয়ে ছিল। আমিতো চিনতেই পারিনি। এ কথা সে কথায় ওকে চিনতে পারলাম। কত বুড়ো হয়ে গেছিস শ্যামল। দুই বন্ধুই চোখের পানি মুছছে।

শ্যামল ত্রিবেদী তার স্ত্রী সাধনা ত্রিবেদী আর পাঁচ পুত্র সন্তানের পর বৃদ্ধ বয়সের কন্যা বিদ্যা ত্রিবেদী। বিদ্যার জন্য মানত করেছিল তাই অতদুর থেকে এখানো আসা। এ কথা সে কথার মধ্য অনেক কথায় হল। তারপর থেকেই অপুর সাথে বিদ্যার সময় কাটাতে লাগল। দাদা ওখানে নিয়ে যাও, ওটা কিনে দাও, এটা খাব, ওটা নিব বলে অপুকে পাগলপ্রায় করে ফেলছিল। তিনদিনে বিদ্যার প্রিয় পাত্র হয়ে গেল অপু। এতটাই প্রিয় যে, ওর বাবা-মার সাথেও খুব কম সময় কাটাতে লাগল। তার সব কাজে অপু দাদাকেই চাই।

ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যর গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত কেদারনাথ শহরে, মন্দাকিনী নদীর উপর স্থাপিত একটি শিব মন্দির। কথিত আছে, পান্ডবদের হাতে এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে প্রিয় তীর্থ স্থান এই কেদারনাথ মন্দির। গৌরীকুন্ড থেকে ১৪ কিলোমিটার পথ পাহাড়ি চড়াই পথে ট্রেকিং করে মন্দিরে যেতে হবে। অপু, ওর বাবা, বিদ্যা আর ওর বাবা-মা মিলে একটি দল। এদের দলনেতা হল অপু।

পরদিন সকাল বেলা ওরা রওনা দিল কেদারনাথ মন্দিরে। সবার সাথে ওরাও চলতে শুরু করলো। বিদ্যা কখনো অপুর হাত ধরে চলছে আবার কখনো অপুর কোলে করে যাচ্ছে। বেচারা অপু যেন হাঁপিয়ে উঠছে। তবুও কিছু না বলে বিদ্যাকে নিয়ে পথ চলছে।

“অপু দাদা!”

“হুম……..”

“দাদা, তুমি আমার সঙ্গে আমার বাড়ি যাবে?”

অপু হেঁসে বলল,” নিশ্চয় যাব, তোর যেদিন বিয়ে হবে সেদিন যাব।”

” বিয়ে মানে কি দাদা!”

অপু বিদ্যার কথা শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল কারন সেখানে ওর বাবা রঘুনাথ চ্যাটার্জী সহ অনেকে আছে।

” দাদা বল! বিয়ে মানে কি?”

তুই যখন বড় হবি তখন তোকে আমার মতই কোন একটা ছেলে, ধর্ম মতে সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে মন্ত্র পড়িয়ে সাত পাঁকে বেধে নিয়ে যাবে। ওটাকেই বিয়ে বলে। তখন সেই ছেলের কাছে তুই সারাজিবনের মত থাকবি।
বিয়ের কথা মনে হতেই অপুর “অনুরাধার” কথা মনে পড়লো। অপু ছোটবেলা থেকে অনুরাধাকে খুব পছন্দ করে। ইন্ডিয়াতে আসার আরো একটা কারন হল অনুরাধাকে বিয়ে করা। তারপর ওকে নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমাবে।

বিদ্যা কিছু একটা ভেবে বলল,” দাদা, তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। সারাজিবন তোমার কাছে থাকতে পারবো। তুমি আমাকে কত্ত ভালোবাস এবং আদর করো। অনেক জিনিস কিনে দাও। আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।”

বিদ্যার এমন ভয়ঙ্কর কথা শুনে অপু স্তম্ভিত হয়ে গেল। বাচ্চা মেয়েটা বলে কি? অপু বিদ্যাকে একটা ধমক দিয়ে বলল,” তুই বেশি কথা বলিস, আমার কাছে আর আসবিনা। মার কাছে যা।”

অপুর ধমক শুনে বিদ্যা এক দৌড়ে ওর মায়ের কাছে চলে গেল। ভুলেও আর অপুর দিকে চাইলোনা। পথের মধ্য আর অপুর সাথে কথাও বললো না।

লম্বা সফরের পর তারা মন্দিরে পৌছে গেল। রঘুনাথ চ্যাটার্জী বিশেষ পূজা করার পর তার মায়ের অস্থি মন্দাকিনী নদীতে ভাসিয়ে দিল।

প্রচন্ড ভিরের মধ্য বিদ্যাকে ওর বাবা সামলাতে পারছেনা। অপু সেটা দেখে বিদ্যার কাছে এসে দু’হাত বাড়িয়ে বলল,” আমার কাছে আয়।”

বিদ্যা আর গেলনা। বাবার কোলে চড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। চোখে পানি টলমল করছে। ছোট্ট বিদ্যার জানা নেই, অপুকে সে কতবড় কথা বলেছে।

অপু জোড় করেই বিদ্যাকে ওর বাবার কাছ থেকে নিয়ে একদম মন্দিরের ভিতরে চলে গেল। বিদ্যা অপুর গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে নিঃশব্দে কাঁদছে।

” কিরে কাঁদছিস কেন?”

“তুমি খুব বাজে বলেই অপুর পিঠে খামচি কাটলো বিদ্যা।”

“এতটুকুতে তোর ভালবাসা আমার উপর থেকে চলে গেল! এই না বললি তুই আমায় বিয়ে করবি?”

” তুমি খুব পঁচা, আমাকে বকা দিয়েছ বলেই কেঁদে উঠলো বিদ্যা।”

বিদ্যাকে নামিয়ে দিয়ে ওর দুই হাত জোড় করে দিয়ে অপু নিজেও পুজায় মনযোগ দিল।

রঘুনাথ চ্যাটার্জী অনেকক্ষন থেকে কিছু বলবে বলবে বলেও বলতে পারছেনা। এর মধ্য সব কাজ শেষে ফিরার পথে শ্যামলকে নিয়ে আরো সামনে গেল। পিছু পিছু অপু বিদ্যার মায়ের সাথে গল্প করছে আর আসছে।

“শ্যামল তুই কি কালই চলে যাবি?”

“হ্যাঁ, প্রভু চাইল তাই দেখা হল তোর সাথে। সেই চলে এলি দেশ ছেড়ে আর গেলিনা। মানুষ কখনো জন্মস্থানের কথা ভোলে!”

” ভুলিনি রে ভাই, ওটা কখনো ভোলা যায়? একটা কথা ছিল তোর সাথে। তুই তো আর আসবিনা, তাইনা রে?”

” হুম, কাজে এসেছি। তানাহলে আর আসার জো কই বল! মেয়েটার নামে মানত ছিল। গত বারের পূজায় ওকে দিয়ে কুমারি পুজা করার পর থেকে ওর ভিতর পরির্বতন দেখছি। এক পুরোহিতের কাছ থেকে পরার্মশ নিয়ে এখানে আসা। মেয়েটা আমার জিবন রে, কথাটি বলে শ্যামল থামল।”

” তোর এই জিবনটা আমাকে দিবি? এই জিবনের জন্য না হয় আবার তোর সাথে দেখা হবে। আমি তোর মত বন্ধু আর পাইনি। তোকে ভুলতে পারিনা। তোর আর মাসিমার ঋন কোনদিনও শোধ করতে পারবোনা। আর একবার ঋন করার সুযোগ দে না ভাই বলে রঘুনাথ চোখ মুছলো।”

রঘুনাথের কথা শুনে শ্যামল স্থির হয়ে গেল। কি বলছিস রঘু, এটা কি করে সম্ভব! মানছি অপু অনেক লেখাপড়া জানা ছেলে। ওর মত জামাই পাওয়া সৌভাগ্যর ব্যাপার। কিন্তু আমার ৬ বছরের শিশুকন্যাকে কিভাবে ওর হাতে তুলে দেই?

দেখ, আগের যুগে এটা কোন ব্যাপার ছিলনা। আমি, তুইও তো ছোট বয়সেই বিয়ে করেছি। তুই শুধু একবার রাজি হ ভাই, বাঁকিটা আমি সামলিয়ে নিব। তোর এই জিবনটাকে আমি নিজের বুক দিয়ে আগলে রাখব। তোর মেয়েকে আমায় দে ভাই বলে পুরো রাস্তা শ্যামলকে রাজি করাতে মাঠে নামল রঘুনাথ।

পরের দিন সকালে বিদ্যার মাকে না জানিয়ে শ্যামল বিদ্যাকে নিয়ে রঘুনাথের সাথে মন্দিরে চলে গেল। সাথে অপুও গেল। অপু জানতোনা তার সাথে এতবড় ঘটনা ঘটতে চলছে।
কিন্তু যখন রঘুনাথ বাবু অপুকে সব কথা খুলে বললো তখন অপুর মাথা খারাপ হয়ে গেল।
বাবা, কি বলছো তুমি! তুমি জানো আমি অনুরাধাকে পছন্দ করি তারপরও তুমি কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ। কোথায় বিদ্যা আর কোথায় আমি? এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।

“তুই যদি রাজি না হস তাহলে এই মন্দাকিনী নদীতে প্রান বিসর্জন দিব। তোর ঠাকুমার সাথে আমাকেও বিদায় জানিয়ে এখান থেকে চলে যা।”

বাবা, পাগলামোর একটা সীমা আছে। তুমি এমন করতে পারোনা। আঙ্কেল আপনি একটু বুঝান বাবাকে। তিনি ভূল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন একটা কাজে আপনি কিভাবে মত দিলেন? ওনাকে সঙ্গ না দিয়ে কথাটি বুঝার চেষ্টা করুন। আমার কথা না হয় না ভাবলেন, কিন্তু বিদ্যার কথা তো ভাববেন?

শ্যামল কোন কথা বলছেনা। নিরবে শুধু চোখের জল ফেলছে। শ্যামল নিজেও চায়না এমন ঘটনা ঘটুক। কিন্তু রঘুনাথের কাছে সে হার মেনেছে।

ছোট্ট বিদ্যা বুঝতে পারছেনা এখানে কি চলছে। কেন তার অপুদা বাবার সাথে ঝগড়া করছে।

অপু তুই এখুনি এখান থেকে চলে যা। বিয়ে করবিনা ভালো কথা, তোকে এখানে আর থাকতে হবেনা। যা বলছি বলে চিৎকার দিল রঘুনাথ বাবু।

অপুর আর করার কিছু থাকলোনা। সেদিনই বিদ্যাকে বিয়ে করতে বাধ্য হল। পুরোহিতকে সবকিছু বুঝিয়ে বিবাহ সম্পূর্ন করা হল। বিবাহ শেষ হতেই বিদ্যা বলল,” অপু দাদা তুমি আমাকে বিয়ে করলে? আমি যা বললাম তুমি সব মেনে নিলে? তাহলে সেদিন কেন ওমন ধমক দিয়ে কথা বললে?

রঘুনাথ পরম আদরে বিদ্যাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,” তোমার দাদা আর বকা দিবেনা মা, এবার তোমাকে দাদার সাথে থাকতে হবে।”

শ্যামল বাবু অপুর হাত ধরে বলল,” বাবা আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তোমার হাতে তুলে দিলাম। তুমি তার খেয়াল রেখ বাবা। ও কোনদিনও নিজের হাতে খাবার তুলে খায়নি। ওকে পরম আদরে মানুষ করেছি।”
শ্যামল বাবু আর কথা বলতে পারলোনা। চোখের জল মুছে পিছন দিকে না তাকিয়ে চলে গেল। সে জানেনা তার সহোধর্মিনীকে এখন কি জবাব দিবে।

বিদ্যার বাবা চলে যেতেই বিদ্যা চিৎকার দিয়ে বলল,” বাবা, আমাকে রেখে কই যাও?”

সেদিনই রঘুনাথ বাবু অপু আর বিদ্যাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।

এতরাত কখনো জেগে থাকেনি বিদ্যা। তাই বিছানায় ঘুমে ঢুলঢুল করছিল। দাদা, মা যে এলনা? মাকে ছাড়াতো আমি ঘুমাতে পারিনা।

অপু কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,” কেন, তোর না সখ আমাকে বিয়ে করা! মুখ দিয়ে যা বের করেছিস তাই হয়েছে। এখন মা মা করছিস কেন?”

আবার অপুদা বকা দিল? বিদ্যা প্রচন্ড রাগী একটা শিশু। অপুর দিকে রেগে তাকিয়ে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ে অন্য দিক হয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগল।

বিদ্যার বাবার কথা মনে পড়ল অপুর। দোষ কারো ছিলনা। দোষ যদি থেকে থাকে সেটা অপুর বাবার। শুধু শুধু ছোট মেয়েটাকে কেন কষ্ট দিচ্ছে অপু।
অপু রুম থেকে বের হতেই দুরের কড়িডোড়ে সবার চিৎকার চেঁচামিচি শুনতে পেল। অপু সেদিকে কান না দিয়ে কাজের মেয়ে বিউলিকে ডাক দিল।

“আজ্ঞে , দাদাবাবু। ”

” এখানে খাবার এনে দে তো?”

” ঘরে খাওয়ার অনুমতি নাই দাদাবাবু। নিচে চলুন, আপনাকে ভাত বেড়ে দিচ্ছি।”

অপু আর কোন কথা না বলে সোজা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।

এদিকে রঘুনাথের দুই ভাই রমেশ আর রাঘব গলা উচু করে বলল,” দাদা, ঐ ছোট্ট মেয়েটা কে বলতো! কি এমন হল যে এই বুড়ো বয়সে এসে তোমার ভিমরতি জাগলো! আর মেয়ের বাবা-মা বা কেমন? এই একলত্তি মেয়েকে অপুর ঘাড়ে গছিয়ে দেয়? শুধু সম্পত্তির লোভে এমন কাজ করেছে।”

” এই তোরা চুপ করবি? আমি যা জানি তোরা তা জানিস না।”

রাঘব গর্জে উঠে বলল,” তুমি কি জানো আমি জানিনা। আমি আমার মেয়ের জিবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিবনা। প্রয়োজন হলে ঐ মেয়েকে এক্ষুনি কেটে গাঙ্গে ভেঁসে দিব।”
অনুরাধার মা বটিটা দাওতো! আজ ঐ মেয়েকে এখুনি বলি দিয়ে বংশের কলঙ্ক ঘুচাবো। রাঘব এক দৌড়ে কোথা থেকে যেন একটা বড় বটি নিয়ে অপুর ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

এই রমেশ ওকে ধর। রাঘব যে পাগল। কিছুনা কিছু একটা ঘটে ফেলবে। ধর তোরা ওকে বলে রঘুনাথ রাঘবের পিছু পিছু দৌড় দিল। সাথে বাড়ির বউরা সহ কাজের লোকগুলো দৌড় দিল। রাঘবের হাতে কেউ পড়লে আর তার নিস্তার নেই।

অপু রান্নাঘরে ঢুকতেই অনুরাধা এসে অপুকে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। অপুদা, তুমি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারোনা। আমাদের দু’জনের কত স্বপ্ন ছিল। সেগুলো তুমি ভেঙ্গে দিতে পারোনা।

অনুরাধা ছাড় আমাকে বলেই অপু ওকে ঝিটকে সরিয়ে দিল। তোর কি বুদ্ধি লোপ পেয়েছে! আমাকে জড়িয়ে ধরছিস কেন? কেউ যদি দেখে ফেলে?

” দেখুক, আমি তো চাই সবাই দেখুক। আমি কারো পরোয়া করিনা। সবাই জানুক তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা। ঐ মেয়েকে এখুনি বাসা থেকে বের করে দাও।”

দেখ, যত কিছু ঘটেছে এতে আমার হাত নেই। আমি ইচ্ছা করে কিছুই করিনি বলে প্লেটে খাবার নিতেই অনুরাধা বলল,” বাসায় এত কিছু হয়ে যাচ্ছে আর তুমি খাবার নিয়ে পড়ে আছো?

“এটা বিদ্যার খাবার। ও সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে। অতটুকু মেয়ে আর কত সইবে?”

” বাহ্ বাহ্, বিয়ে হতেই দেখছি তোমার দরদ ওর জন্য উথলে পড়ছে। তোমার লজ্জা করেনা অত ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে!
ওর খাবার দরকার নেই, ও মরুক বলেই অপুর হাত থেকে খাবার নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল অনুরাধা। অপুদা, আজ যদি বাবা ওকে হত্যা না করতে পারে তাহলে আমি নিজে ওকে হত্যা করবো বলে রান্নাঘর থেকে একটা ছুড়ি নিয়ে ছুটল অনুরাধা।”

” এদিকে বাসায় চিৎকারের শব্দ যেন বেড়েই গেল। বিদ্যার নিষ্পাপ মুখটা অপুর মনে ভেঁসে উঠতেই অপু প্রানপনে ছুটল বিদ্যার কাছে। বিদ্যার বাবাকে কথা দিয়েছে অপু, বিদ্যার দায়িত্ব যে শুধু মাত্র ওর।”

অনুরাধার বাবা রাঘব চ্যাটার্জী অপুর রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিল। এদিকে বাসার সবাই দরজা ধাক্কাধাক্কি করে খুলতে বলছে। রাঘবের সে দিকে কান নেই। ওর এখন একটাই লক্ষ্য, বিদ্যাকে বলি দেওয়া।

বিদ্যা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। রাঘব পালঙ্কের কাছে এসে দেখে ৬ বছর বয়সী বিদ্যা গভীর ঘুমে মগ্ন। বিদ্যা কে দেখেই ওর বুকে আরো আগুন জ্বলে উঠল। রাঘব বটিটা উঁচু করেই বিদ্যার গলায় কোপ বসাল……..

[] চলবে……..[]

………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-

পার্রসোনাল ফেইসবুক পেইজ: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha.73
ওয়েবসাইট: https://nafisarkolom.blogspot.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here