সিঁদুর শুদ্ধি নাফিসা মুনতাহা পরী পর্বঃ ৪৬

0
605

#সিঁদুর শুদ্ধি
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪৬
.
জুলিয়া যখন দেখলো, আশিষকে তারা হত্যা করেছে তখন সে অভির উপর হতাশ হয়ে পড়ে গেল। অভি আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। তোমার দিদাকে কি জবাব দিব আমি!
অভি ওর মাকে ধরে বলল,

—” মম, চিন্তা করোনা। ওরা বাসা থেকে বের হতে পারবেনা। কারন আমি এই বাসা প্রেত মন্ত্র দিয়ে বেঁধে ফেলেছি। তাই আমি ছাড়া ঐ সীমানা কেউ পার করতে পারবেনা। তার আগেই তাদের আমার শিকার হতে হবে।”

কথাগুলো বলে অভি দ্রুত বের হয়ে আসলো বাসার বাহিরে। হ্যা, অভিই ঠিক। তারা তার সীমারেখা পার হতে পারেনি। তারা সবাই ছুটাছুটি করছে অভির সীমানা অতিক্রম করার জন্য। কিন্তু সুবিধা করতে পারছেনা। ওদের সামনে অভি এসে দাড়ালো। তারপর কঠোর গলায় বলল,

—“আমার ড্যাডকে ফিরে দাও। নাহলে তোমাদের অবস্থা এমন করবো যে, না পারবে তোমরা বাঁচার স্বাধ অনুভব করতে, না পারবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে।”

ওরা যখন দেখলো, বের হওয়ার আর কোন পথই নেই আর ধীরে ধীরে ওদের শক্তি কোন একটা বড় শক্তি শোষন করে নিচ্ছে তখন বাধ্য হয়ে ওরা আশিষকে অভির সামনে রেখে ভিতুর দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।

জুলিয়া এসে আশিষকে নিয়ে নিরাপদে সরে গেল। এবার অভি ওর চোখমুখ শক্ত করে কঠোর চেহারায় তাদের দিকে তাকাতেই মাটি থর থর করে কেঁপে উঠলো। অভির চোখ দিয়ে জল ঝড়তে লাগলো। প্রতি ফোটা জল থেকে হাজার হাজার শিশির কনার চেয়ে সুক্ষ্ণ বিন্দুতে পরিনিত হয়ে সামনের অশরীদের উপর আঘাত হানলো। শিশির বিন্দু ওদের শরীরে পড়তেই এসিডের মত ওদের শরীর ঝলসে যেতে লাগলো। কয়েকজন অশরী এসে অভিকে থামানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু থামাতে পারছেনা। শেষে জুলিয়াকে ডেকে আনলো। জুলিয়া এসে অভিকে ওর মায়া জালে বন্দী করে বলল,

—” পাগল হয়ে গেছ! এর পরিনাম কি হবে একবার ভেবে দেখেছ? আমাদের সমাজ নিয়ে থাকতে হয়। সব জায়গায় শক্তি নয় বরং বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হয়।”

—” মম, ওরা আমার ড্যাডের শরীরে হাত দিয়েছে। আমি ওদের কিছু না বলে কিভাবে ছেড়ে দেই?”

—” ওহ্ রেলি! তোমার ড্যাডের প্রতি তোমার এত ভালোবাসা! যদি এত ভালোবাসায় থাকে তাহলে তুমি জানো যে আশিষের এই অবস্থার জন্য ঐ মেয়েটা দায়ী। তাহলে তাকে কেন ছেড়ে দিয়েছ? কেন তাকে শাস্তি দিচ্ছোনা? কেন অভি কেন?”

অভি ওর মায়ের মায়া জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে এসে বলল,

—” আমি তার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি, সেটা কি তার জন্য যথেষ্ঠ শাস্তি নয়?”

কথাগুলো বলে অভি চলে যায়। জুলিয়া বাঁকি সব অশরীদের বন্দী করে একটা অশরীকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

—” বাঁকিদের যদি সহিসালামতে ফেরত চাও, তাহলে তোমাদের মালিককে আমার সাথে দেখা করতে বলবে। নাহলে, এর পরিনাম ভয়াভয় হবে।”

বিদ্যা সুয়ে আছে বিছানায়। কিছুক্ষণ পর হয়ত তার জ্ঞান ফিরে আসবে। টুইংকেল সব প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে। বিদ্যার কাছ থেকে বেশ খানিকটা দুরে অবস্থান নিয়ে সে দাড়িয়ে আছে। এমন সময় বিদ্যা চোখ মেলে দেখে ও এতক্ষন বিছানায় সুয়ে ছিল। আমি এখানে! অভি কোথায় বলেই সামনে দেখলো টুইংকেল দাড়িয়ে আছে। আন্টি, অভি কোথায়?

—” এখানে অভি কোথা থেকে আসবে? তুমি হয়ত কোন স্বপ্ন দেখছ।”

—” আপনি মিথ্যা কথা কেন বলছেন? অভি কোথায় বলেন?”

—” দেখ বিদ্যা! তুমি দেশে ফিরে যাও। তুমি অভির যতবড় ক্ষতি করেছ তা বলার বাহিরে। ওর জিবনটায় তুমি শেষ করে দিয়েছ। আর সমস্যা বাড়িওনা তুমি।”

টুইংকেলের কথা শুনে বিদ্যা অবাক হয়ে গেল। আমি অভির ক্ষতি করেছি? আমি ওর কিভাবে ক্ষতি করলাম?
বিদ্যার কথা শুনে টুইংকেল তাচ্ছিল্যর সাথে বলল,

—” তোমার শক্তির দাপট মনে হয়, একটু বেশিই দেখাও তুমি! তুমি নিজেও জানোনা, অভির পরিবারের সব থেকে মূল্যবান জিনিসই তুমি শেষ করে ফেলেছ।”

—“আমি কি করেছি, সেটাইতো আমি জানিনা। আমাকে বলেন! কেন বার বার আমাকে দোষারোপ করছেন? আপনি না বললে আমি বোঝব কিভাবে?”

টুইংকেল আর কোন কথা না বলে অন্য রুমে যেতেই আবার থেমে গেল। তারপর ফিরে বিদ্যার দিকে চেয়ে থেকে কঠিন গলায় বলল,

—” তোমার বাবাকে এখুনি কল দাও আর সকাল হলেই দেশে ফিরে যাও।”

টুইংকেলের কথাগুলো বিদ্যার ইগুতে খুব লাগলো। এরা আমাকে কিছু বলবেনা। যা করার আমাকেই করতে হবে। শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষায় আছে। আগে মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। মায়ের কথা মনে পড়তেই বিদ্যা ইনাকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলো। ইনা খানিকটা দৌড়েই রুমে এসে বলল,

—” বিদ্যা, কি হয়েছে তোমার? এমন চিৎকার দিয়ে ডাকছো কেন?”

অহ্ বিদ্যা কাম ডাউন, প্লিজ কামডাউন। নিজেকে কন্ট্রোল করো। এটা তোমার নিজের বাসা নয় বলে আগে বিদ্যা নিজেকে শান্ত করে বলল,

—” আমার বাবার সাথে কথা বলবো। প্লিজ ব্যবস্থা করে দাও।”

অহ্ ব্যাস এতটুকুতে কেউ এত চিৎকার-চেচাঁমেচি করে? নিজেকে শান্ত রাখতে হয় বিদ্যা! অভি কিন্তু খুব শান্ত-শিষ্ট ছেলে। দাড়াও আমি তোমাকে ফোন এনে দিচ্ছি। ইনা চলে যেতেই রুমে আরও একটা মেয়ে ঢুকলো। বিদ্যা অবাক হয়ে চেয়ে রইল তার দিকে। কারন সে স্বাভাবিক দেখতে ছিলোনা। তার কানগুলো বেশ বড় বড় দেখাচ্ছিল। বিদ্যা কে দেখেই হঠাৎ সে অন্যদিকে মুখ করেই চিৎকার দিয়ে মম, মম বলে ডাক দিতে লাগল।

টুইংকেল দ্রুত রুমে এসে বলল,

—” তুমি! তুমি এই রুমে এসেছ কেন? আমি তোমাকে নিষেধ করিনি এখানে আসতে?”

—” স্যরি মম, আমি বুঝতে পারিনি।”

এদের মা মেয়ের কথা শুনে বিদ্যা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওদের দিকে চেয়ে রইল। এত অপমান ওর আর সহ্য হচ্ছেনা। শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষায় আছে সে। নিজের খেয়াল সে নিজে রাখতে পারবে। মানুষ দেখতে যতটা সহজ-সরল হয় ততটা তারা মনের দিক থেকে হয়না। অনিইচ্ছা স্বত্ত্বেও চোখের জল গড়িয়ে পড়লো বিদ্যার দু’চোখ বেয়ে। এমন সময় ইনা এনে ফোনটা বিদ্যার হাতে গুজিয়ে দিয়ে চলে গেল। রুম থেকে সবাই বের হতেই বিদ্যা প্রথমে শ্যামল বাবুকে কল দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলল। বাবার সামনে অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করলো কিন্তু কথা শেষ করে অঞ্জনা দেবীকে কল দিল। বুকের ভিতর জমানো কষ্ট এবার জলের ফোয়ারা ছুটলো চোখ দিয়ে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল বিদ্যা।

অঞ্জনা দেবী বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,

—” অভি কি তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে বিদ্যা?”

শাশুড়ী মায়ের এমন কথায় বিদ্যা থমকে গিয়ে বলল,

—” আপনাকে আমার খুব মনে পড়ছে। তাই কিছু ভালো লাগছেনা মা।”

—“মিথ্যা কথা কেন বলছিস মা! তোকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি আমি আর তুই আমাকে মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছিস? শোন মা, জিবন কখনো সহজ না। একটা লক্ষ্যতে পৌছাতে হলে তোকে অবশ্যই খড়কুটের মত দাউ দাউ করে আগুনে পুড়তে হবে। তার পরইনা তুই তোর লক্ষ্যতে পৌছাতে পারবি।
দেবকি বলছিল, তুই নাকি ওখানে চলে গেছিস? তা মা, থাকার সমস্যা হলে তোর রমেশ কাকার সাথে যোগাযোগ করিস। আমি তাকে বলে দিব তোর কথা। ও খুব খুঁশি হবে। যাবি তার কাছে?”

এমন অফার বিদ্যা ফেলে দেয়না। সঙ্গে সঙ্গে বলল,

—” মা, আমার স্মরনেই ছিলোনা কাকার কথা। আমি কালই ওনার সঙ্গে দেখা করবো।”

—“দেবকীর সাথে কথা বলবি! ও আমার কাছেই আছে।”

আচ্ছা দেন বলতেই দেবকী ফোনটা নিয়ে অন্যরুমে চলে গেল। তারপর বিদ্যাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে বলল। আর কোন দরকার হলে যেন কোন বাধা ছাড়াই এই মাকে স্মরন করে।

ওকে মা বলে বিদ্যা কল কেটে দিলো। তারপর ফোন থেকে নাম্বার ডিলেট করে দিয়ে সস্তির শ্বাস ফেলে কিছুক্ষন চুপ হয়ে রইলো। নিজের আপন মানুষ গুলো সত্যই স্পেশাল হয়। বিদ্যা দ্রুত উঠেই ল্যাগেজ গোছাতে লাগলো। এখানে আর একমুহুত্বও নয়। ওর নিজের জিবন, সেটা ও কিভাবে সাজাবে তা একমাত্র ওর একান্ত ব্যাপার। কারো কোন কথা সে শুনতে চায়না। কারন ওর মাথার উপর শ্যামলের মত বাবা, অঞ্জনা আর দেবকীর মত মা থাকতে ভয় কিসের? সাধনা মাকেও বড্ড মিস করে। কিন্তু বাবা তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছে তাই আর যোগাযোগ করা হয়নি। বিদ্যা ঝটপট সব গুছিয়েই নিজেকে ভ্যানিস করলো। আর বিছানায় একটা কাগজের টুকরো পড়ে রইলো। সেখানে লেখা উঠলো, সে চলে যাচ্ছে।

জুলিয়া অপেক্ষা করছে কারো জন্য। শীতের রাত। যদিও দেশটাতে সবসময় শীতের আমেজ থাকে। কিন্তু আজকের আবহাওয়াটা একটু বেশিই খারাপ। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে। চারদিকে বরফে আচ্ছন্ন শহরটা। এই শহরের নাম মাইল্যান্ড। দুরে শাঁ শাঁ শব্দ তুলে ঘূর্নিপাকের মত কিছু একটা ধেয়ে আসছে জুলিয়ার দিকে। সেটা জুলিয়ার কাছে এসেই নিজেকে একটা সাধারন মানুষের রুপান্তরিত করেই বলল,

—” স্বাগতম মিসেস. জুলিয়া। আমাকে কেন স্মরন করেছেন?”

জুলিয়া ভ্রু কুচকে লোকটির দিকে চেয়ে বলল,

—” আমার হাসব্যান্ড কে কেন টার্গেট করেছেন? আপনাদের উদ্দেশ্য কি?”

লোকটি মুখে হাসি ফুটিয়ে জুলিয়ার চারপাশে একপাক ঘুরেই থেমে গেল। তারপর গম্ভীর হয়ে বলল,

—” তোমার ছেলে আমার লোকদের মেরেছে। তার হিসাব তাকে চুকাতে হবে। আর তোমার হাসব্যান্ডকে তো কোন এক কর্নপিচাশী ভক্ষন করে আধামৃত অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছে। তাকে আমরা পরীক্ষা করতে চাই, সে কেমন কর্নপিচাশ। আমাদের জন্য কতটা ভয়ভয় সে। আমাদের কাছে খবর এসেছে সে আমাদের এড়িয়ায় অবস্থান করছে।”

—” দেখুন মি. বার্কার, আমার ছেলের দ্বারা একটা ভুল হয়ে গেছে। আপনি যদি চান তাহলে আমি সেই পিশাচের সম্পর্কে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে পারি। যদি আপনি এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।”

—” অহ্ ইয়েস, কেন নয়। আমিতো চাই তার ব্যাপারে কিছু জানতে। বলুন তার কথা।”

তাহলে আপনাকে আমার সাথে ডিল করতে হবে। বিনিময়ে আমার ছেলের কোন ক্ষতি করতে পারবেননা। কথাগুলো বলে জুলিয়া একটা ছোট্ট শিশি দিল তার হাতে। শিশির ভিতর কালো ধুয়া ঘূর্নি পাক খাচ্ছে। জুলিয়া বেশ রাগী কণ্ঠেই বলে উঠলো,

—” জাষ্ট ফিনিস করে দিবেন এই প্রানীটাকে। ও আমার পরিবারটাকে শেষ করে দিয়েছে। আপনারা যা চেয়েছেন তার থেকে বেশি পেয়েছেন। তাই এখন থেকে আপনারা আপনাদের পথে আর আমরা আমাদের পথে। ঐ শিশির বিষটা পান করবেন। তাহলে ঐ পিশাচটা আপনাদের সামনে থাকলেই তাকে চিনতে পারবেন। আর তাকে হত্যা করাও আপনাদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে।”

লোকটি ফিসফিসিয়ে বলল,

—” যেই পিশাচ আমাদের রক্ত পান করে তাকে আমরা কিরুপে ছেড়ে দেই বলেন! সে আমাদের দেশে এসেছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল ভয়ের কথা। এখন সব কাজ বন্ধ। এই পিশাচটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”

কথাগুলো বলে ঐ লোকটা ভ্যানিস হয়ে গেল। আর জুলিয়ার চোখ চকচক করতে লাগলো। এবার মেয়েটাকে অভির কাছ থেকে সারা জিবনের জন্য সরানো যাবে। ও মরলেই আশিষ ভাল হয়ে উঠবে। তাছাড়া আশিষকে আমি সারা জিবনের জন্য হারাবো। নাহ্, ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা। আমার জিবন থাকতে আমি আশিষের কিছু হতে দিবোনা। ওর মৃত্যু হয় তাদের হাতে হবে না হয় অভির হাতে হবে। তোমাকে তো মরতেই হবে।

অভির কাছে একটা টেক্সট এসেছে। তা হল, বিদ্যা বাসা থেকে কোথাও যেন চলে গেছে। ওকে তারা খুঁজে পাচ্ছেনা। মাসেজটা অভির ভিত অবদি নড়ে দেয়। অহ্ গড, আমি এখন এই অবস্থায় তাকে কোথায় খুঁজবো? এক রাতেই প্রাপ্তি-অপ্রাতি এসে জিবনের মোড়টাই যেন ঘুরে দিচ্ছে। অভি ধরপড় করে বাসা থেকে বের হল। বিদ্যাকে ও বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ছিল। তাই ওর ঘ্রান এখনো অভির শরীরে আছে। অভি সেই ঘ্রান নিয়েই চোখ বন্ধ করলো। বহুদুরে একটা উজ্জল আলোকবিন্দু দেখতে পেল অভি। হ্যা, সেটাই বিদ্যা। একা একা পথ চলছে। এত তুষারপাতের মধ্য ও কোথায় চলছে। অভি আর এক মুহুত্বও দেরী না করে বিদ্যার কাছে ছুটলো। ওর মাথা যে গরম। তার জন্য যদি ও ওর নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা শক্তির আত্বঃপ্রকাশ করে তাহলে সকলে বুঝে যাবে ও কোন সাধারন পিশাচ। তাছাড়া ওর শক্তি, ও ব্যবহার করতে জানেনা। এমনি ইউরোপ মহাদেশগুলোতে যাদু চর্চা আর প্যারানরমাল ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। এমন অনেক অশরীর বাস এদেশে। সহজেই তারা মানুষের ভিতর ঢুকে পড়ে।

বিদ্যার এত ঠান্ডা সহ্য হচ্ছেনা। কারন এত ঠান্ডাতে সে কখনো থাকেনি। তার ভিতর তুষার পড়ছে ঝির ঝির করে। ল্যাগেজটা ভালো করে ধরে সাবধানে পা ফেলছে। প্রায় চলেই এসেছে তার গন্তব্যস্থলে। কারন ও ওর মায়া প্রয়োগ করতে পারছেনা। একটু দুরে যেতেই সব শক্তি ফুরিয়ে আসছে আর ও দৃশ্যমান হচ্ছে। চর্চার অভাবে সব যেন অচল হয়ে পড়ছে। দুরে কিছু প্রানীর আর্তনাদময় চিৎকার শোনা যাচ্ছে। কিছুটা ভয় ভয়ও লাগছে। অসর্তকতায় বরফের উপর পা পড়তেই পিছলে পড়ে গেল রাস্তার উপর। আহ্ বলেই পা চেপে ধরলো বিদ্যা। পূর্ব দিক থেকে আসা হালকা বাতাসে বিদ্যার চুলগুলো উড়তে লাগলো। আর সেটাই বিদ্যার জন্য কাল হয়ে দাড়ালো। চুল গুলো সরতেই ওর শরীরের ঘ্রান চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। একটা মানবীর গায়ের ঘ্রান কিছু ভ্যাম্পায়ারদের খুব প্রিয়। রক্তের নেশায় তারা ছুটে আসছে বিদ্যার দিকে। ১০/১২ জনের একটা দল এসে বিদ্যার চারপাশে অবস্থান করলো। একমুহুত্বের জন্য চোখ বন্ধ করে প্রান ভরে বিদ্যার ঘ্রান নিল তারা। তাদের সামনে বিদ্যা খাবার ছাড়া কিছুই নয়।

বিদ্যা অপলক ভাবে তাদের দিকে চেয়ে রইলো। এতজন নারী-পুরুষ তার দিকে এমন অদ্ভুদভাবে চেয়ে আছে কেন? বিদ্যা একটু মুচকি হেঁসে সবাই কে হ্যালো বলল।

শিকারকে শান্ত রাখার জন্য এক মহিলা অত্যান্ত নম্র হয়ে ইংরেজী ভাষায় বলল,

—” হ্যালো, তুমি কি একা এখানে?”

—” ইয়েস ম্যাম, সামনেই আমার এক পরিচিতর বাসা। সেখানেই আমি যাচ্ছি। আমি এমন পরিবেশে অভ্যস্ত নয় তাই পড়ে গেছি।”

মহিলাটি মুচকি হেঁসে বলল,

—” আপনি এশিয়ান?”

বিদ্যা মাথা নিচু করে ঘাড় নাড়িয়ে তার কথার সাথে সায় দিয়ে বলল,

—” ম্যাম, আমি উঠতে পারছিনা। আপনি কি আমাকে সাহার্য্য করবেন উঠাতে!”

ওহ্ সিওর বলেই মহিলাটি এগিয়ে এসে বিদ্যাকে টেনে তুলল। বিদ্যা ওর শরীর থেকে বরফ ঝেড়ে ফেলতেই মহিলাটি বিদ্যাকে আলিঙ্গন করার জন্য এগিয়ে এল। কেবল সে বিদ্যাকে জড়িয়ে ধরবে সেই সময় অভি এসে উপস্থিত হল। বিদ্যা বলে জোড়ে একটা ডাক দিল।
অভির কন্ঠ বিদ্যার কানে পৌছাতেই বিদ্যা অভি বলেই পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো অভি দাড়িয়ে আছে। এ এক অদ্ভুদ অনুভুতি। অভি, আমার অভি বলে ঐ মহিলার দিকে চেয়ে কৃতঙ্গতা সরূপ ধন্যবাদ জানিয়ে বলল,

—” থ্যাংকস ম্যাম, আমার হাসব্যান্ড এসেছে। আর কোন সমস্যা নেই। আপনারা যেতে পারেন।”

কথাগুলো বলেই বিদ্যা দৌড়ে অভির কাছে যেতেই আবার পিছলে পড়ে গেল। কিন্তু এবার অভি সাথে সাথে ওকে ধরে ফেলল। তারপর বিদ্যাকে ওর সামনে দাড় করিয়ে খুব দ্রুত কয়েকটা কিস করে বলল,

—” এভাবে কেউ দৌড়ে আসে? আমি যদি না থাকতাম? কেন নিজের খেয়াল নাওনা? আমি কি সব সময় তোমার কাছে থাকবো নাকি! আমার জন্য হলেও তো তুমি নিজের খেয়াল রাখতে পারতে। কেন এমন করো।”

এমন খুশির মুহুত্ব বিদ্যার জিবনে খুব কম এসেছে। ও মুচকি হেঁসে বলল,

—” এতটুকুতে ভয় পেয়ে গেছ! একটু আগেও তো পড়েই গিয়েছিলাম।”

পড়ে যাওয়ার কথা শুনে অভি বিচলিত হয়ে বিদ্যার পেটে হাত দিয়ে বলল,কিহ্ পড়ে গেছ! কোথায় লেগেছে, আমাকে বল। কথাগুলো বলেই বিদ্যার শরীরে আঘাতের চিহ্ন খুঁজতে লাগলো।

এত বিচলিত হচ্ছ কেন অভি! আমি ঠিক আছিতো! কিন্তু,আমি যে এখানে আছি সেটা তুমি জানলে কিভাবে! আর তুমি জানো, ঐ মহিলাটি আমাকে সাহার্য্য করেছে। তোমাদের দেশের মানুষগুলো খুব ভালো। এতরাতে আমাকে দেখতে পেয়ে সাহার্য্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশে হলেতো এতক্ষনে অন্যকিছু ঘটে যেত। কথাগুলো বলে বিদ্যা অভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। বিদ্যার চোখদিয়ে জল ঝড়ছে। এটা কি অভিকে কাছে পাওয়া না টুইংকেলের খারাপ ব্যবহারের কষ্ট সেটা বোঝা গেলোনা।

অভি বিদ্যাকে বুকে নিয়ে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে উঠলো,

—” এত সহজে কেন মানুষকে বিশ্বাস করো বিদ্যা! তোমার কি একবারও মনে হয়নি! এতরাতে এতগুলো মানুষ কেন চলাফেরা করবে? অবশ্যই তাদের কোন উদ্দেশ্য আছে।”
কথাগুলো বলে অভি ওর একটা আঙ্গুল উচু করে সব ভ্যাম্পায়ারদের সেখান থেকে চলে যেতে বলল। অভির ইশারা পেয়ে ওরা সবাই চলে গেল।

কিন্তু এর মধ্য একটা অঘটন ঘটে গেল। বিদ্যা অনুভব করলো, কোন একটা বিপদ যেন তাদের দিকে ছুটে আসছে। বিদ্যার চোখ ধপ করে জ্বলে উঠলো। গালের এক কোনে কালো চিহ্নটা ভেসে উঠলো। চোখের পলকে অভিকে ছেড়ে দিয়েই ওর বাম হাত দিয়ে একটা মহিলার গলা চেঁপে ধরেই বরফের উপর আছড়ে ফেলল।

অভি হাটু গেড়ে বসে পড়লো বরফের উপর। তারপর ক্লান্ত স্বরে বলে উঠলো,

—” বিদ্যা, সী ইজ মাই মম।”

অভির কথাটি বিদ্যার কানে যাওয়া মাত্রই বিদ্যা জুলিয়ার গলা ছেড়ে দিল। লজ্জায় মুখটা নিচু করে ফেলল বিদ্যা। কিন্তু জুলিয়া থেমে থাকলোনা। সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে দু’হাতে বিদ্যার পেটে গায়ের শক্তি দিয়ে একটা ধাক্কা দিল।

ধাক্কার জোড় এতই বেশি ছিল যে বিদ্যা অভি বলেই অভির সামনে বরফের উপর ছিটকে এসে হামলে পড়লো। মুখ আর দু’হাত দিয়ে বরফ কামড়ে ধরলো অসহ্য যন্ত্রনায়। চোখের পলকে এমন ঘটনা ঘটে যাবে সেটা অভি কল্পনাও করতে পারেনি। বিদ্যা ওর সামনে পড়ে গঙ্গিয়ে চলছে। এমন দৃশ্য যেন কোন মানুষ না দেখে।

মম, সী ইজ প্রেগন্যান্ট বলে একটা চিৎকার দিয়েই ওর মায়ের দিকে নিজের শক্তি দিয়ে আঘাত করে। এতে ওর মায়ের আর নিজের ভিতর একটা দেয়াল তৈরি হয় এবং জুলিয়া তার নিজের শক্তি ব্যবহার করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

অভি বিদ্যার কাছে এসেই ওর দু’হাত প্রসারিত করেই বিদ্যার পেটের সামনে ধরলো। অভির হাত দিয়ে উষ্ণ জলের ফোয়ারা ছুটলো। কলকল ধ্বনিতে সব জল বিদ্যার পেটে ঢুকতে লাগলো। বিদ্যার পেটের ভিতর সব কিছু স্বচ্ছ কাঁচের দেখা গেল। এত এত মায়া জল পেয়ে এক বিন্দু রশ্মি যেন ছোটাছুটি করতে লাগলো।

[ চলবে……]

বিদ্রঃ রিভিশন দেওয়া হয়নি। ভুল হতে পারে। কষ্ট করে পরে নিবে সবাই।
আগামী পার্ট ৯ তারিখে দেওয়া হবে।

ওয়েবসাইট থেকে পড়তে:
https://nafisarkolom.com/2020/12/sidur-suddhi-46/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here