সিঁদুর শুদ্ধি #নাফিসা মুনতাহা পরী #পর্বঃ৩৫

0
660

#সিঁদুর শুদ্ধি
#নাফিসা মুনতাহা পরী
#পর্বঃ৩৫

.
বিদ্যার কথায় প্রভাষের দাদু কিছুতেই হার মানলোনা। বরং তিনি বললেন, বিদ্যা তার সাথে চরম বিয়াদপী করছে।

বৃদ্ধ ভদ্র লোকটির কথা শুনে বিদ্যা ক্ষেপে গিয়ে বলল,

—” আপনি একটা ঝানু মাল বটে। আপনি কোন কথাই বলবেননা। দেখি আপনার নাতী কি করে হাড়ি ভাঙ্গে। কি প্রভাষ শুরু করো এবার।”

বিদ্যার বড় দাদা চট করে বলে উঠলো, বিদ্যাতো ঠিকি বলেছে। আপনি খেলার মাঝে কেন কবিতা আউড়াতে গেলেন? কোনতো একটা কারন আছে। দেখি এবার ও কেমন করে হাড়ি ভাঙ্গে।

বিদ্যার চোখ শুধু অভিকে খুঁজছে কিন্তু অভি কই গেল? এমনিতে আমাকে না বলে আমার কাছ থেকে চলে এসেছে, আবার এখন তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। বিদ্যা কথাগুলো ভাবতেই অভি ভিড়ের মধ্য বিদ্যার হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে গেল। তারপর চোখ রাঙ্গিয়ে আঙ্গুল তুলে বলল,

—” এই তোমার শিক্ষা! এতগুলো মানুষের মাঝে প্রভাষের দাদুকে ঝানু মাল বলতে তোমায় কে বলেছে? তার কি সম্মান নেই! রিয়ার বাবা যদি তোমার কথা না ধরতো তাহলে তোমাকে সবাই কি বলতো! আগের স্বভাব কি এখনো বদলাবেনা!”

বিদ্যা মাথা নিচু করে হাফ ফুলে আঙ্গুল খুকড়াতে লাগলো। তারপর নিচু গলায় বলল,

—” উনি মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দিবে আর আমি সেটা বসে বসে দেখবো! ওনার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখা আছে কিন্তু এভাবে মিথ্যার ব্যবহার করলে তাকে ঝানু বলবোনাতে শ্রদ্ধা করবো?”

চুপপপ, অভি বিদ্যার গায়ে হাত তুলতে গিয়েও থেমে গেল। তোমার শিক্ষার অভাব আছে, না হলে এমন করে কেউ বড়দের কথা বলে? সে যদি ভুলও করে ফেলে তবুও সবার সামনে তাকে অপমান না করে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে বলা যেত। কিংবা ভালো করে বলতে পারতে। তাই বলে এমন নিকৃষ্ট ভাষা ব্যবহার করবে?
অভি আর কথা বললোনা। ওখানে থেকে চলে গেল। বিদ্যাও অভির পিছন পিছন অনুসরন করে পথ চলল। অভি বিদ্যার রুমে এসে বেডে বসে পড়লো। তারপর কাবিরকে মাসেজ করল, আমি ঘুমালাম।

বিদ্যাও রুমে এসে অভির সাথে কথা বলতে চাইলো কিন্তু অভির মনের ভাব দেখে আর কথা বলার সাহস হলোনা। বিদ্যা চুপিচুপি বিছানায় গিয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

অভি সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেল। অভি বের হতেই বিদ্যা ধড়পড় করে বিছানায় বসলো। তারপর করুন সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

—” তুমি আবার চলে গেলে! একটা না হয় ভুল করেই ফেলেছি। তাই বলে এমন শাস্তি বারবার দিতেই থাকবে!”

বিদ্যা আর কথা বলতে পারেনা। নিজের উপর নিজেরই বিরক্ত লাগছিল। বেডেই গুটিসুটি মেরে বসে নিজের মুখটা হাটুতে গুজে ফিকরাতে লাগলো।

প্রায় ১৫ মিনিট পর অভি রুমে আসলো। এসেই বিদ্যাকে ওভাবে বসে থাকা দেখে বুঝলো বিদ্যা কাঁদছে।
অভি একটা বড় ট্রেতে করে খাবার আর জল নিয়ে এসেছে। ওগুলো নিয়ে বেডে বসে চিকেন রোস্টের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

—” বিদ্যা আসো আমার সাথে খাবার খাও।”

বিদ্যা কোন কথা বলেনা। অভি আর একবার খাবার খাওয়ার কথা বলতে বিদ্যা রগচটা গলায় বলল,

—” আমি খাবোনা। আমি চিকেন খাইনা, তুমি তা জানোনা! কেন আমাকে বারবার বিরক্ত করছো?”

বিদ্যার এমন ব্যবহারে অভির কোন কিছুতে যায় আসেনা। বরং ঠোটের কোনায় হাসি ফুটিয়ে বলল,

—” কেউ ছোট বেলায় আমার কাছে চিকেন খাওয়ার বায়না ধরেছিল। কিন্তু আমার বাসায় আমিষ নিষেধ ছিল। আমি তাকে লুকিয়ে চিকেন খাওয়াইছিলাম। যদি সে সেই ঋন শোধ করতে চায় তাহলে যেন আমার সাথে বসে খাবার খায়।”

বিদ্যা হাটুর ভাজ থেকে চট করে মুখ তুলেই অভির দিকে তাকালো। চোখ জবা ফুলের মত লাল হয়ে গেছে। অভির আর ভালো লাগলোনা বিদ্যাকে এভাবে দেখে। তবুও বিদ্যার অনুভুতি দেখার জন্য চুপ করে বসে ভাত মাখতে লাগলো।

অজান্তেই বিদ্যার ভ্রুজোড়া কুচকে গেল। কিছুক্ষন অভির দিকে চেয়ে জল দিয়ে হাত ধুয়েই অভির কাছ থেকে ভাতের প্লেটটা কেড়ে নিয়ে বলল,

—” তোমার ৩ মাসের ভালোবাসা আমি আজও ভুলিনাই। তাই তোমার পিছুপিছু বেহায়ার মত ঘুরছি তোমার সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও।”

বিদ্যার কথা শুনে অভি কিছুক্ষন উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। তারপর অভি ভাবলেশহীন ভাবে বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,

—” পিশাচদের আবার সিনিয়র-জুনিয়র বলে কিছু আছে নাকি? এরা সারা জিবন যুবতীই থাকে। তাদের কোন পরিবর্তন নেই।”

বিদ্যার খাবার মুখে তুলেই অভির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলল,

—” মানে?”

—” মানে, মানে কিছুই নেই। আমিও সকাল থেকে কিছুই খাইনি। তুমি কি একা সব খাবে নাকি?”

বিদ্যা প্লেটের অর্ধেক খাবার খেয়ে বাঁকিটা অভির কাছে দিয়ে জল খেয়ে শুয়ে পড়লো। অভি আর কি করবে, বাঁকিটা খেয়ে সব কিছু সমাপ্ত করে শেরোয়ানী খুলে বিছানায় উপর হয়ে সুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। সারাদিনের ধকলে প্রায় চোখে ঘুম চলেই এসেছে, এমন সময় বিদ্যা সোয়া থেকে উঠে অভির পিঠের উপর সুয়ে ওর হাতের উপর হাত রেখে ওর ঘাড়ে একটা কিস করে মৃদুস্বরে বলে উঠলো,

—” আই লাভ ইউ অভি।”

অভি কোন কথা বলছেনা। ওভাবেই চুপ করে রইলো। অভির কোন রেসপন্স না পেয়ে বিদ্যা অভির হাত চেপে ধরে বলতে লাগলো,

—” অভি, সত্যি তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি পাগল হয়ে যাব। মাঝে মাঝে তুমি আমার কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখো কেন?”

অভি বিদ্যার কথাশুনে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। তারপর বলল,

—” আমি যাই করিনা কেন, সেটার অবশ্যই কোন কারন রয়েছে। একদিন তুমি নিশ্চয় জানবে সেই কারনগুলো। আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস রাখতে হবে। যেমনটা আগে রাখতে।”

অভির কথার প্রত্তুরে বিদ্যা অন্য কথা টেনে এনে বলল,

—” আচ্ছা, মা আমাকে একদিন বলেছিল, আমার রক্তের পিপাসা লাগে কিনা! আর আজও তুমি বলছো, পিশাচদের বয়সের কোন ফারাক পড়েনা। আমি কোন পিশাচ নাকি! যার জন্য তোমরা এমন কথা বলো?”

—” হুম, পিশাচ হলেও তো হতে পারো। কিংবা দেখ, আমি হয়তো কোন মানুষই না।”

অভির কথা শুনে বিদ্যা অভির পিঠে জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দিল। অভিও সাথে সাথে বলল,

—” পুরোপুরি পিশাচ হওয়ার জন্য কি ট্রেনিং নিচ্ছো নাকি!”

অপুদা হেয়ালি থামাবা? কথাটি বিদ্যা বলতেই অভি বিদ্যাকে পল্টে নিজের নিচে ফেলে বলল,

—” কি বললে আমায়?”

এতদ্রুত অভি এমন কাজ করবে বিদ্যা ভাবতেই পারেনি। বিদ্যা ঢোক গিলে বলল,

—” অ..প।”

বাঁকি কথা আর বলতে দেয়না অভি। নিজের ঠোটে বিদ্যার ঠোট আবদ্ধ করে ফেলে। অভি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে যেতে বসলো। এমন সময় অভির কানে এক আৎনাদের কান্না জনিত কন্ঠ ভেঁসে আসলো। অভি সাথে সাথে বিদ্যাকে ছেড়ে দিয়েই বসে পড়লো। অভি চোখ বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করলো, কে এমন ভাবে চিৎকার দিল। নাহ্ কোন ক্লু পেলোনা। অাবার চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুতে কিছুই হলোনা। এটা কি মনে ভুল ছিল না অন্যকিছু।

অভির ব্যবহার বিদ্যা তব্দা খেয়ে গেল। অভির সমস্যা কি আমার কাছে আসলেই শুরু হয়। বিদ্যা কিছু বলতে যাবে এমন সময় অভি সটান হয়ে সুয়ে পড়লো।

অভির এমন সুয়ে পড়াতে বিদ্যা ভয় পেয়ে। কাছে এসে অভির গা ঝাকিয়ে বলল,

—” অভি, তোমার কি হয়েছে, এমন করছো কেন?”

অভি অনেক কষ্টে বলে উঠলো,

—” কিছুনা, তুমি ঘুমাও।”

—” না, বল তোমার কি হচ্ছে?”

না খেয়ে থাকার জন্য হয়ত শরীর দুর্বল লাগছে। ঠিক হয়ে যাবে। আমি এখানেই আছি। তুমি ঘুমিয়ে পড় বলেই অভি পাশ ফিরে শুইলো। কি হচ্ছে এসব। ভিতরে চেপে রাখা আশাংকাটা দ্বিগুন হয়ে গেল ভাবনা জাগার সাথে সাথে। চোখে দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো টপটপ করে।

এমন সময় বিদ্যা পিছনদিক থেকে অভিকে জড়িয়ে ধরল। অভিও বিদ্যার হাত নিজের বুকের উপর চেপে ধরলো। তারপর কিছুক্ষন বাদে হাত বুকের উপর বারবার ঘষতে লাগলো। কিন্তু কোন কথা বললনা অভি।

পরদিন সকাল ১০টার দিকে বিদ্যার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখলো, অভি বিছানায় নেই। বিদ্যা উঠে বসে ভাবতে লাগলো, আমি কি অভিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম, না সত্যি সব ঘটনা ঘটেছিল। বিদ্যা অনেক ভেবে এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো, দুরে ট্রী টেবিলের উপর গতরাতে খাওয়ার প্লেট রাখা আছে। তারমানে সব সত্যি ছিল। বিদ্যা কোনমতে বেড থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো, রিয়াকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যা সেখানে না দাড়িয়ে অভিকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু অভি নেই। তারমানে অভি আবার ওকে না বলে চলে গেছে। চোখের কোনে জল এসে জানান দিল বিদ্যার বুকটা কষ্টে জর্জিরত হয়ে যাচ্ছে অভির বিচ্ছেদে। রাতের কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো। অভি বিশ্বাস রাখতে বলেছে তার উপর। এতটুকু শান্তনা রেখে বিদ্যা চোখের জল মুছে রুমে চলে গেল।

দুরে বড় বৌদি পাগলের মত কান্না কাটি করেই যাচ্ছে। রিয়া চোখের আড়াল হতেই তার কান্নার আওয়াজ বেড়েই গেল। কেউ থামাতে পাড়ছেনা। বিদ্যা আর রুমে থাকতে পারলোনা। ওর বৌদির কাছে গিয়ে দাড়ালো। প্রিয় মানুষ বিচ্ছেদ হওয়ার কষ্ট বিদ্যা খুব ভাল বোঝে। আজও বুঝেছে। বৌদির কান্না দেখে বিদ্যার চোখের জল আর বাঁধ মানলোনা। ওখান থেকে এসেই হাউমাউ করে ডুকরে কাঁদতে লাগলো।

২২ দিন পর,

শর্মিষ্ঠা সকালে পার্কে জগিং করতে গেছে। সাথে তার দুটা মেয়েও আছে। দুর থেকে একটা মহিলা ওকে লক্ষ্য করছিল। রিতু আর মিতু ওদের মায়ের কাছ থেকে একটু দুরে যেতেই মহিলাটি শর্মিষ্ঠার কাছে এসে বলল,

—” মা, আমি জানি তোমার মনে অনেক দুঃখ। তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমায় সাহার্য্য করতে পারি।”

শর্মিষ্ঠা চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে এক বৃদ্ধ মহিলা কথাগুলো বলছিল। শর্মিষ্ঠা ভ্রু কুচকে বলল,

—” আপনার মতলব কি বলেন তো! আর আপনি কে?”

মহিলাটি খেক খেক করে হেসে বলল,

—” তোমার উপকার করতে চাই মা। তোমার পথের কাটা বিদ্যাতো! তাকে অভির জিবন থেকে সরিয়ে তোমার মেয়েকে সেট করে দিতে পারবো। সেটা তুমি যদি চাও, তবেই সম্ভব।”

এমন অফার পেয়ে শর্মিষ্ঠার চোখ চকচক করতে লাগলো। হিতাহিত বোধটুকু হারিয়ে মহিলার ফাঁদে পা দিয়ে বলল,

—” স্যতিই আপনি তা করে দেখাতে পারবেন?”

—“আলবাদ পারবো, তুমি দেখতে চাও আমার ক্ষমতা?”

—“দেখতে চাই।”

হুম দেখ তাহলে বলেই মহিলাটি মন্ত্র উচ্চারন করতেই শর্মিষ্ঠা মাটিতে গেঁথে যেতে লাগলো। শর্মিষ্ঠা হাজার বার চিৎকার দিতে চাইলো কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারলোনা।
অবশেষে মহিলাটি শর্মিষ্ঠাকে স্বাভাবিক করেই বলল,

—” দেখলে আমার ক্ষমতা? আমি তোমার কাজটা নিমিষেই করে দিতে পারবো।”

শর্মিষ্ঠার শরীল এখনো কেঁপেই চলছে। শেষে কোনমতে মুখ দিয়ে বের করলো, এতে আপনার কি লাভ। আর আপনি আমার কাছে এর বিনিময়ে কি চান?

মহিলাটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

—” তোমার মত আমার দু’টি মেয়ে ছিল। কিন্তু ওরা আর নেই। মারা গেছে। দুর থেকে দেখলাম তুমি কষ্টে আছ। তাই মেয়েদের মুখ মনে পড়তেই সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে সাহার্য্য করবো।”

শর্মিষ্ঠা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল,

–” তাহলে আমার উপকার করেন মা।”

দুর পাগলি মেয়ে, এখানে থেকে কি আমি উপকার করতে পারবো! তোর বাসায় আমায় নিয়ে চল। ৩ দিনের মধ্য আমি তোর কাজ সমাধান করবো। কাজ শেষ করেই চলে যাব তোর বাসা থেকে।

এই ব্যাপার, চিন্তা করবেননা বলে রিতু-মিতুকে কাছে ডেকেই বলল,

—” উনি তোমাদের দিদা হোন। উনি আমার দুর সম্পর্কের জেঠিমা হোন।”

ততক্ষনে মহিলাটি তার সাজ পোষাক সুন্দর করে ফেলেছে। রিতু-মিতু মহিলাকে প্রনাম করে বলল,

—” এত সকালে ওনাকে তুমি কই পাইলা?”

আমার বাসা একটু দুরে। আমিও এখানে তোমাদের মত জগিং করতে এসে তোমার মাকে দেখতে পেলাম বলেই মহিলাটি হেঁসে উঠলো।

জেঠি চলেন আমার সাথে বলেই শর্মিষ্ঠা শয়তানি একটা হেঁসে মহিলাটিকে ওদের সঙ্গে বাসাতে নিয়ে এল। মহিলাটি যখন বাসায় ঢুকলো, তখন সে দেখলো টুইংকেল বাসা পাহারায় রয়েছে। সাথে সাথে মহিলাটি তিনটা কড়ি ছুড়ে মেরে বলল,

—” শিকারটাকে বন্দী কর অক্ষত অবস্থায়।”

কথাগুলো বলেই বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লো মহিলাটি। আর ঐ তিনটা কড়ি ৩টি জানোয়ারের রুপ ধরেই টুইংকেলের উপর অচমকায় আঘাত করলো। এবং টুইংকেলকে নিজেদের কব্জা করেই ওকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

শর্মিষ্ঠা ঐ মহিলাটিকে তার জেঠির পরিচয় দিল সবার কাছে। বিদ্যা কেবল রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমেছে এমন সময় আশটে গন্ধ আসতে লাগলো। গন্ধটা বেশ প্রকট হতে লাগলো ওর কাছে। গা গুলিয়ে আসলো ওর। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে দাড়াতেই শর্মিষ্ঠা বিদ্যাকে কাছে ডাকলো। বিদ্যার ওর কাছে যেতেই শর্মিষ্ঠা বলে উঠলো,

—” জেঠি, ওর নাম বিদ্যা।”

বিদ্যাকে দেখেই মহিলাটির চোখ জলজল করতে লাগলো। বাহ্ কি রুপ তার! শরীর দিয়ে যেন রুপ উপচে পড়ছে। তুই যদি আমার শিকার না হতিস তাহলে তোকে সারা জিবন আমার কাছে বন্দী করে রাখতাম।

মহিলাটির গা থেকে আঁশটে গন্ধ বের হচ্ছিল। তাই বিদ্যা ওখানে একমুহুত্বও দেরি করলোনা। ওখান থেকে দ্রুত সে চলে গেল। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলল,

—” মা, তুমি কি কোন গন্ধ পাচ্ছো! এই ধরো, আঁশটে গন্ধ।”

সাধনা দেবী সকালের নাস্তা বানানো শেষ করে বলল,

—” কই নাতো! এমন কোন গন্ধ পাচ্ছিনাতো?”

বিদ্যা আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেল। বিদ্যার খুব সন্দেহ হচ্ছে মহিলাটিকে নিয়ে। কিন্তু কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে কাবিরকে কল দিল। কাবির কল রিসিভ করতেই বিদ্যা বলল,

—” কাবির, অভি কি ফোন করে তোমাকে কিছু জানিয়েছে?”

—” না, তোমাকে এখনো ও কল দেয়নি!”

আমি রাখছি কাবির বলেই বিদ্যা কল কেটে দিয়ে অনেকক্ষন ধরে কাঁদল। ২২টা দিন হয়ে গেল, একবার অন্তত কল দিয়ে আমার খোঁজ নেওয়া যেতোনা? কেন আমার পরীক্ষা ও এভাবে নিচ্ছে? আমি কি করবো এখন?

রাত ১১ বেজে ২৮ মিনিট। মহিলাটির সামনে বসে আছে শর্মিষ্ঠা। শর্মিষ্ঠা নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে বলেই উঠলো,

—” আপনি কাজটা কি আজকেই করবেন?”

মহিলাটি মুখ তুলে শর্মিষ্ঠার দিকে চেয়ে বেশ রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

—” ৩ দিনের মধ্য তোর কাজ সমাপ্ত হবে। এখন এখান থেকে তুই যা। একটু পড়েই আমার এ্যাকশন দেখতে পারবি। যা ঘরে যা।”

মহিলাটির কথা শুনে শর্মিষ্ঠা চলে গেল সেখান থেকে। এদিকে মহিলাটি বিদ্যার রুপ ধরে রুম থেকে বের হল। আর বিদ্যার রপী অবয়বটির লম্বা চুলের বেনী লকলক করতে লাগলো।

[] চলবে…….[]

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-20/

আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here