#সিঁদুর শুদ্ধি
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪৫
.
অভির শরীরের ঘ্রান পেয়েই বিদ্যা চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে গেল। এমন সময় অভির রুমে ওর মা হাজির হল। জুলিয়া বিছানায় অভিকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়ে গেল। কারন একটু আগেও সে অভিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছিল। ছেলেটা কই গেল! অভি, অভি বলে কয়েকবার ডাক দিল। অভি বিদ্যাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে এমন করে চুপ করে রইলো যেন নিঃশ্বাস ফেলার কোন শব্দও বের না হয়।
এমন নিঃস্তব্ধতায় বিদ্যা অভিকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
—” অভি, এতদিনে আমার কথা কি একবারও তোমার মনে পড়েনি! আমি কোন অবস্থায় ছিলাম তুমি জানো?”
বিদ্যার ঠোট নড়ানোর আওয়াজ জুলিয়ার কানে এসে ধাক্কা দিল। এমন শব্দ শুনে জুলিয়া দ্রুত পর্দার আড়ালে যেতেই দেখলো সেখানে কেউ নেই। চোখ বন্ধ করে এদিক-ওদিক খুঁজে বাহিরে গিয়ে প্রহরীদের হাজির হতে বলল। সাথে সাথে দু’টি অবয়ব এসে হাজির হল। জুলিয়া তাদের জিঙ্গাসা করলো অভি কোথায়?
তারা প্রত্তুরে বলল, রুম থেকে অভি বের হয়নি তো!
রুম থেকে বের হয়নি! তাহলে ও কোথায় গেল? ও তো আমার অনুমতি ছাড়া বাসার বাহিরে এক পাও দিতে পারবেনা। তাহলে কি অভির সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে? জুলিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
—” ঐ মেয়েটা আসেনিতো? যার জন্য অভি ওকে প্রট্রেক্ট করতে চাচ্ছে? অহ্ নো। আমার ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা।”
কথাগুলো বলেই জুলিয়া নিজেকে গায়েব করে দিল। এদিকে অভির হাতে বেশি সময় নেই। বিদ্যা ওকে প্রশ্ন করেই চলছে। অভি কোন কারন ছাড়াই বিদ্যার ঠোটে নিজের ঠোট ডুবালো। অভির ঠোট থেকে নীল ধুয়া বের হতেই বিদ্যা অভির বুকে ঢলে পড়লো। অভি ওকে নিয়ে সাথে সাথে নিচে নেমে গেল। আর এক পাও বাড়ানোর হুকুম নেই ওর। তবুও মনের ভুলে এক ধাপ এগিয়ে যেতেই চারদিকে আগুন জ্বলে উঠলো আর এক আলোক রশ্মি এসে অভিকে প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা দিল। বিদ্যাকে নিয়ে ও দুরে ছিটকে গেল। বিদ্যা গিয়ে একটা পাথরের উপর পড়ার আগেই অভি ওকে ধরে ফেলল। অভির জানটায় যেন চলে যাচ্ছিল। বিদ্যার পেটে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে স্বরে বলে উঠলো,
—” মাই এ্যাঙ্গরি বার্ড! তুমিতো আমার সন্তানের মা হতে চলেছ। আমি তোমাকে ভুলি কি করে? এই বিচ্ছেদ আমাকে ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়েছে। আমি কিভাবে তোমাকে বুঝাব আমার মনের যন্ত্রনা?”
অভির খেয়ালই ছিলোনা, মায়া সীমানায় আঘাত পড়েছে। যা ওর মমের কাছে এতক্ষনে খবর চলে গেছে। অভি বলে কেউ একজন ডাকতেই অভি দ্রুত বিদ্যাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। হ্যা, জুলিয়া চলে এসেছে। জায়গাটা ভালো করে পর্যবেক্ষন করলো জুলিয়া। কিছুক্ষন আগেও অভি এখানে ছিল। হট্টগল না করে শান্ত মাথায় খুঁজতে লাগলো অভিকে। ছেলে কেন তার সাথে লুকোচুরি খেলছে! কি লুকাতে চাচ্ছে অভি ওর মায়ের কাছ থেকে? নাহ্ অভি এখানেও নেই। বাসার বাহিরে যেতে পারবেনা সেটা জুলিয়া ভালো করেই জানে।
অভি বিদ্যাকে নিরাপদে নিয়ে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে টুইংকেল আর ইনাকে খুজতে লাগলো। কারন ওরা ছাড়া বিদ্যাকে এখানে কেউ নিয়ে আসতে পারবেনা। খানিকটা দুরে টুইংকেল চোখের নিমিষেই হাজির হল। বেশ রাগান্বিত হয়েই বিদ্যার নামে অভিকে অভিযোগ করলো টুইংকেল। অভি, তোমার ওয়াইফ আস্ত একটা পাগল মেয়ে। তাকে নিয়ে তুমি সংসার করবে কিভাবে? শুধু একবার বলেছি, ওটা অভির রুম। ব্যাস, সে হাওয়া হয়ে গেল। তার ধৈর্য্য বলতে কিছু নেই। এমন মানুষকে নিয়ে পথ চলা মানে বিপদকে গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে চলাফেরা করা। ওর দায়িত্ব নেওয়া খুব কঠিন। আর ও এত উপরে উঠলোই বা কি করে? ও তো আর আমাদের মত নয়। তাহলে এটা কি করে সম্ভব! কথাগুলো বলতে বলতে টুইংকেল অভির দিকে এগিয়ে আসছিলো। অভি নিষেধ করতে করতে টুইংকেল যেই নিষিদ্ধ সীমানায় পা রাখে, সাথে সাথে টুইংকেলের শরীরে আগুন ধরে গেল। টুইংকেল দ্রুত সেখান থেকে সরে গিয়ে শরীরের আগুন নিভিয়ে দিয়ে অভির দিকে দু’হাত তুলে ইশারা করে বলল,
—” এসব কি অভি?”
অহ্ আন্টি, আমি আপনাকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনি কেন আসতে গেলেন? এক্ষুনি এখান থেকে দ্রুত সরে পরুন। কারন, এখন কিছু ঘটে গেলে আমি আপনাকে মোটেও সাহার্য্য করতে পারবোনা। ঘন্টা খানেকের পর আবার এখানে আসবেন। আমাকে স্মরন করতে হবেনা। আমিই আপনাকে খুঁজে নিব। দ্রুত চলে যান বলেই অভি বিদ্যা সহ আবার অদৃশ্য হয়ে গেল। টুইংকেলও নিরাপদে দ্রুত সটকে গেল। কিছুক্ষনের ভিতর একদল অশরী শা শা করে সেইদিকেই এগিয়ে গেল। কিন্তু কাউকে খুজে পেলোনা।
অভি বিদ্যাকে নিয়ে ওর রুমে ফিরে আসলো। এখন কোথায় বিদ্যাকে লুকিয়ে রাখবে তার কোন হদিসই খুজে পেলোনা। শেষে মাথায় চট করে বুদ্ধি এসে গেল। ড্যাডের রুমে রাখলে মম কখনো ও রুমে সার্চ করবেনা। ভাবতে দেরি কিন্তু কাজ করতে একদম দেরি করলোনা। সোজা ওর বাবার রুমে গিয়ে বিদ্যাকে বড় এক কাঠের আলমারির কোনে লুকিয়ে ফেলল। তারপর ওর বাবার কাছে চলে আসলো। বাবা ওর গভীর ঘুমের মধ্য তলিয়ে গেছে। এ ঘুম ভাঙ্গানোর কোন ক্ষমতায় তাদের মধ্য নেই। অভি ওর বাবা আশিষ ভৌমিকের গাল স্পর্শ করতেই জুলিয়া দ্রুত এসে অভির হাত ধরে বলল,
—” কি করছো অভি! তোমার ড্যাডতো কষ্ট পাবে?”
—” আমিতো তাকে সামান্যই ছুয়েছিলাম মম!”
জুলিয়া অভিকে ওর বাবার কাছ থেকে সরিয়ে এনে দু’হাত ধরে নিজের গালে স্পর্শ করে বলল,
—” আজ তোমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছিল?”
মায়ের এমন প্রশ্নে অভি মাথা নিচু করে ঘাড় নাড়িয়ে বলল,
—” হুম।”
জুলিয়া যা আশাংকা করেছিল তাই হয়েছে। ছেলে তার মায়ার বাধনটি বারবার ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে। তাই কিছুটা ক্ষুদ্ধ হয়ে অভির দিকে চেয়ে বলল,
—” নিশ্চয় সে তোমার কাছের মানুষ। কারন এতদিনে তুমি একবারও সেই বন্ধন ভাঙ্গার চেষ্টা করোনি। আজ কি এমন হল যে তুমি তোমার মমের বিরুদ্ধে পা বাড়িয়েছ! সে কি ঐ মেয়েটা ছিল?”
এবার অভি কোন কথা না বলে একদম চুপ হয়ে রইল। অভি! তোমার এই নিরব হয়ে থাকা দেখে আমি কি ধরে নিব, সে এসেছিল? অভি কখনো ওর মমের সাথে মিথ্যা কথা বলেনি। তাই সে চুপ হয়েই রইল।
অভির চুপ থাকা দেখে জুলিয়া ক্ষেপে উঠে বলল,
—” তুমি ভুলে গেছ! সে তোমার ড্যাডের সাথে কিরুপ ব্যবহার করেছে? সে একজন শয়তান মহিলার আদেশে তোমার ড্যাডকে শেষ করে ফেলেছে। আমরা জানিনা, তোমার ড্যাডকে ঠিক করতে পারবো কিনা! তোমার দিদার প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারিনা। কারন তার ছেলেকে আমি সুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশে নিয়ে গেছি। আর শেষে কিনা তাকে আমি অচেতন অবস্থায় ফিরে এনেছি। তুমি বোঝ! একটা মায়ের আর্তনাদ? তুমি যদি সেটা বুঝতে তাহলে, তোমাকে আমার বন্দী করে রাখতে হতোনা। যদি তুমি সেই ব্যাথা বুঝতে, তাহলে তুমি কোনদিনই ঐ মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করতে না। সে নিজ হাতে আমাদের পরিবারের সব শান্তি নষ্ট করে দিছে। তোমার কাছে পরিবার থেকে তার দামই বেশি হয়ে গেল?”
জুলিয়ার কথাগুলো শেষ করার আগেই অভির চোখ থেকে টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগলো। যা দেখে জুলিয়াই বেশ ভয় পেয়ে গেল। জুলিয়া চিৎকার দিয়ে বলল,
—” অভি, প্লিজ নিজেকে কন্ট্রোল করো। আমি কথাগুলো মন থেকে বলিনি মাই সান। আমাকে বুঝার চেষ্টা করো! নিজেকে দুর্বল করে ফেলোনা। তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান। তুমি ছাড়া আমাদের কে বুঝবে বল। প্লিজ থামো অভি, প্লিজ…..”
অভির চোখ দিয়ে এবার গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো। অভি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। ধপ করে নিচে পড়ে যেতেই জুলিয়া মায়া বলে অভিকে আটকিয়ে ধরলো। নিজের শক্তির পাওয়ার বেড়ে দিয়ে ছেলেকে সোফায় রেখে দ্রুত তার কাছে ছুটে গেল। নিজের শক্তি অভীর শরীরের প্রবেশ করাতেই অভির রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল।
মম, আমিতো তার কাছে যাইনি। আমিতো বলেছি, তার কাছে কখনো যাবোনা। আমি আজ পর্যন্ত তোমার কথার অমান্য করিনি। আমিতো কথা দিয়েছি, তার সাথে আর কোন সম্পর্কই রাখবোনা। তাহলে তাকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন? তুমিও জানো আমিও জানি। তার শক্তি ২৫টা বছর ধরে এক শয়তান নারী আর তার বংশধরগন বন্দী করে রেখেছে। তারা সেই শক্তির অপব্যবহার করেছে দিনের পর দিন। সে তো নিজেই জানেনা, সে আমার পরিবারের কতবড় ক্ষতি করেছে। অভি আর কোন কথা বলতে পারেনা। জুলিয়া বেশ ভাল করেই বুঝতে পেরেছে অভি কখনো ওর মমের কথা অমান্য করবেনা। যা হয়ে যাকনা কেন জুলিয়া সেই মেয়েকে কখনো ক্ষমা করবেনা। এই জিবনে আশিষের সাথে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত হয়নি। সেই প্রিয় মানুষটি নিথর হয়ে পড়ে আছে শুধু মাত্র ঐ মেয়েটার কারনে। জুলিয়া প্রচন্ড আফসোস করে, কেন সেদিন আশিষকে সুরক্ষায় না রেখে অভিকে সে খুঁজতে বের হয়েছিল! আর এর সুযোগে ঐ শয়তান নারী টুইংকেলের সাহার্য্য নিয়ে আশিষের এতবড় ক্ষতি করে ফেলে শুধুমাত্র ঐ মেয়েটার শক্তি দিয়ে।
অভি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। এমন সময় অভির কাকিমা রুমে এসে জুলিয়াকে ডেকে নিয়ে গেল।
এখানে বলে রাখা ভালো,
অভির মা আর অভি ছাড়া এই পরিবারের সব সদস্য মানুষ। অভির মা একজন পরী। যে আশিষকে ভালোবেসে বিয়ে করে। অভি আর জুলিয়ার সত্যতা শুধুমাত্র আশিষ জানতো। তাছাড়া সবাই তাদের স্বাভাবিক মানুষই মনে করে। অভির মা কোন সাধারন পরী নয়। তারও একটা রাজ্য আছে। সে খুব উচু বংশীয় পরিবারের কন্যা। প্রথম প্রথম পরিবারকে মানানো খুব কঠিন ছিল। কিন্তু যখন অভির জন্ম হয় তখন থেকে তার পরিবার সব কিছু মেনে নেয়। এমনকি জুলিয়ার দেখাশুনার জন্য একাধিক জ্বীন দাসকে পাঠানো হয়েছে। যারা সর্বদা জুলিয়া আর অভির সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত থাকে।
মা বাহিরে যেতেই অভি দ্রুত বিদ্যাকে বের করে নিয়ে আসে। অচেতন বিদ্যার নিষ্পাপ চেহারার দিকে এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষন চেয়ে থাকে। অভির চোখ দিয়ে কয়েকফোটা জল এসে বিদ্যার গালে পড়তেই সব জল যেন বাষ্প হয়ে উড়ে গেল। কতটা নিখুত চেহারার অধিকারী বিদ্যা। কোন দেবীর চেয়ে কোন অংশে কম হবেনা রুপের দিক থেকে। অভি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
—” যদি তুমি আমার ভিতরের কষ্টগুলো অনুভব করতে পারতে! তাহলে নিজের মনটা একটু হলেও হালকা হয়ে যেত। আমি আর এভাবে থাকতে পারছিনা বিদ্যা! আমি জানিনা তোমার সাথে আর কোনদিন থাকতে পারবো কিনা! তবে তুমি সব সময় আমার নজরে থাকবে।”
কথাগুলো বলেই অভি বিদ্যাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই অভির বাবার হাতের সাথে বিদ্যার হাত অজান্তেই স্পর্শ করে। অভি বিদ্যাকে নিয়ে ভ্যানিস হয়ে যায়। কিন্তু সবার অজান্তে আশিষের শরীর একবার জোরে ঝাকুনি দিয়ে থেমে যায়।
সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিদ্যাকে নিয়ে বাসার শেষ সীমানায় চলে আসে অভি। তারপর আন্টি বলে ডেকে উঠতেই টুইংকেল এসে হাজির হয়। ওনাকে দেখেই অভি নিচু গলায় বলে উঠলো,
—” আন্টি এবার যেন ভুল না হয়!”
টুইংকেল সাবধানে পা ফেলে বলে উঠলো,
—” অভি, বিদ্যাকে এখন তুমি কোথায় রাখবা?”
—” আপনি ওকে নিয়ে যান আন্টি। এমনকি, ওর বাবা-মার কাছে ওকে পাঠিয়ে দেন। ওর সাথে আমার যোগাযোগ এখানেই শেষ।”
—“অভি, তুমি বোঝার চেষ্টা করো! আমি যাদু চর্চা করি। যদি কোন অঘটন ঘটে যায় তখন আমি কি করবো! আর ওর সামনে তো কিছু করতেও পারবোনা।”
—” চিন্তা করবেননা আন্টি! আপনি যে কারনে ভয় পাচ্ছেন, সে ঐ ভয়ের থেকেও আরো উর্দ্ধে। আমরা তো আমাদের স্বাভাবিক খাবার খেতে অভ্যস্ত। আর ও আমাদের মত অশরীর শরীর ভক্ষন করতে অভ্যস্ত। তাহলে ভাবুন, আপনি বেশি ভয়ঙ্কর, না ও বেশি ভয়ঙ্করী?”
অভির কথা শুনে টুইংকেল তাচ্ছিল্য সহকারে হেঁসে উঠে বলল,
—” কি বল এসব! বিশ্বাস হয়না……”
অভি কোন কথা না বলে বিদ্যাকে নিজের বুক থেকে একটু সরিয়ে ওর শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে বিদ্যার কপালে স্পর্শ করে কিছু একটা পড়তেই বিদ্যার সম্পূর্ন শরীর পরিবর্তন হতে শুরু করলো। অদ্ভুদ একটা সৌন্দর্যতায় ভরে উঠলো ওর পুরো অঙ্গ। বিদ্যার এমন রুপ অভিও আগে দেখেনি। অভি স্থির হয়ে বিদ্যাকে দেখতে লাগলো। বিদ্যার শরীর দিয়ে যখন আলোর ছিটা বের হতে লাগলো তখনই অভি বিদ্যাকে সম্পূর্ন গ্রাস করে ফেলল। চারদিকে একটা সুক্ষ্ণ বলয় দিয়ে ঘিরে রাখলো বিদ্যাকে। যাতে ওর এই রশ্মি অন্য আর কেউ দেখতে না পারে।
বিদ্যার এমন অবস্থা দেখে টুইংকেল ১০ হাত দুরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। এই শক্তির ওজন সহ্য করার মত তার ক্ষমতা নেই। টুইংকেল থরথর করে কাঁপতে লাগলো। এখন ওর মনে হচ্ছে, ও কিভাবে অত উঁচুতে নিমিষেই অভির কাছে পৌছে গেল। আর কিভাবেই বা জুলিয়ার মত এত শক্তিশালী অশরীর মায়ার বন্ধন উপেক্ষা করে অভির সংস্পর্শে অনায়াসেই সে চলে গেছে। একে আমি আমার নীড়ে রাখবো কি করে?
আস্তে আস্তে এবার বিদ্যার প্রদ্বীপ নিভে গেল। বিদ্যা আবার আগের মত হয়ে গেল। অভি বিদ্যার কপালে আলতো করে ঠোট ছুয়ে দিয়ে বলল,
—” আন্টি ওকে একটু সাবধানে রেখে দিবেন! কারন ও আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে।”
—” কিহ্? দেখেতো বোঝা যায়না। তাইতো বলি, এত জেদি কেন মেয়েটা।”
হঠাৎ অভি লক্ষ্য করলো ওর মায়ের বন্ধন রেখা কাটতে শুরু করেছে। এটা বিদ্যার শক্তির প্রভাবে এমন হয়েছে। এখানে মম দ্রুত চলে আসবে। বিদ্যাকে দেখলে ওকে আর আস্ত রাখবেনা। ওনার পুরো শক্তি নিয়ে বিদ্যাকে আঘাত করবে। তখন আমার আর করার মত কিছুই থাকবেনা। কারন এখানে ওর মা ছাড়াও আরো অনেক অশরীর বাস রয়েছে।
আন্টি, ওকে শক্ত করে ধরেন বলেই বিদ্যাকে টুইংকেলের দিকে ছুড়ে মারলো। টুইংকেল সাথে সাথে বিদ্যাকে ওর আয়ত্বে নিয়ে নিল।
টুইংকেল বিদ্যাকে ধরতেই অভিও বলে উঠলো,
—“আন্টি আস্তে। দেখেন, ওর পেটে যেন আঘাত না পড়ে। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাব। ওর খেয়াল রাখবেন। আর যত দ্রুত সম্ভব ওকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবেন। আমি আপনাকে ওর বাবার নাম্বার সেন্ড করে দিব। ওর বাবার কাছে থাকলে আমি নিঃশ্চিত থাকতে পারবো।”
—” তুমি নিজেই ওকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছো অভি! তুমি তো ইচ্ছা করলেই সীমারেখা পেরিয়ে বিদ্যাকে আমার কাছে দিয়ে যেতে পারতে।”
—” আমি আমার মমকে অপমান করতে পারবোনা আন্টি। মমের নিষেধ আছে তার সীমানা পেরানোর। তাই আমি পারবোনা।”
—” তোমার মম জানেনা, সে কতবড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যার এই অবস্থায় সব থেকে তোমাকে ওর প্রয়োজন। আর তুমি এসব কথা বলছো!”
—” আন্টি, আমি ধর্ম সংকটে বন্দী। তাই আমার করার কিছু নেই। আমি চাইলেও কিছু করতে পারবোনা। আমার ড্যাডের অবস্থা খুবই খারাপ। আপনিতো জানেন, বিদ্যা ড্যাডের সাথে কি আচরনটাই না করেছে। মম ওকে কোনদিনও ক্ষমা করবেনা। আর না আপনাকে। আমি দুটানার ভিতর পরে গেছি।”
ওকে অভি, আমি জানিনা তাকে আমি কতক্ষন আটকে রাখতে পারবো! তবে চেষ্টা করবো আ-প্রানভাবে ওকে নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত আমার কাছে রাখতে।। কথাগুলো বলে টুইংকেল বিদ্যাকে চাদরে আবিষ্ট করে চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল। অভি দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে চলে আসতেই সামনে দেখলো, ওর মা দাড়িয়ে আছে। ওর মা কিছু বলতে যাবে এমন সময় দলে দলে অশরীগন সেই ভেঙ্গে যাওয়া মায়ার বন্ধন দিয়ে ঢুকতে লাগলো। সাথে সাথে অভি থমকে দাড়ায়। পিছন ফিরে দেখলো, শত শত অশরীর ছায়া তাদের বাসার ভিতর ঢুকছে। অহ্ নো বলে মায়ের দিকে চাইতেই দেখলো, ওর মা ইতিমধ্য চলে গেছে তার বাবার কাছে। অভি মায়ের সম্পূর্ন মায়া বাধন ছিন্ন করে নিজের শক্তিশালী মায়া বাধন দিয়ে পুরো বাসা সেভ করে ফেলল। আর কেউ ঢুকতে পারবেনা। অভি নিমিষেই ওর বাবার রুমে গিয়ে দেখলো ৮টি কুচকুচে পুরুষ ওর বাবার বুকের উপর চড়ে মুখ হা করে বাবাকে ভক্ষন করছে। হেই বলে একটা চিৎকার দিয়েই অভি নিজেকে ধুয়াশায় পরিনিত করলো। তারপর ঐ ৮জনের শরীর ভেদ করে বাহিরে চলে আসলো। অভি বের হতেই ওদের শরীর দু’ভাগ হয়ে গেল। তারপর মা-ছেল তাদের প্রিয় মানুষটিকে আগলে দাড়ালো শত্রুর মোকাবেলা করতে। সাথে ওদের নিজস্ব আরও কিছু অশরীগন যোগ দিল। কিন্তু ততক্ষনে তাদের দেরী হয়ে গেছে। কারন আশিষ ভৌমিক ওদের চোখের সামনে হাওয়া হয়ে যায়। আর বিছানায় বড় বড় অক্ষরে লেখা পড়ে যায়
” হি ইজ ডেড।”
[ চলবে….]
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/12/sidur-suddhi-45/