অনুভবে আজো তুমি🍁🍁 পর্ব-১৩

0
1044

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১৩
ফাবিহা নওশীন

অনেক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে ফায়াজ দিনটা পার করলো।মেহেরের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে।মেহেরকে সামনে পেলে কি করবে নিজেও জানেনা
রুমের মধ্যে পাইচারি করছে আর ভাবছে,
–মেহের তুমি কেন এমন করলে?আমি প্রথম দিন থেকেই তোমাকে আগলে আগলে রেখেছি।কারো নজর কিংবা বিনোদনের উৎস হতে দেই নি।তবে কেন?তোমার আমাকে বুঝতে সময় লাগলে সময় নেও।তোমার লাইফ তোমারও অধিকার আছে আমাকে জানার বুঝার।কিন্তু তুমি আমাকে এভয়েড করছো কেন?না আমাকেই তোমার পছন্দ নয়?
ফায়াজের মাথা কাজ করছেনা।শুধু এটুকুই জানে ওর মেহেরকে ছাড়া চলবে না।কিছুতেই না।

অপরদিকে মেহের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছে,
আজ নাহয় একটা অজুহাত দেখিয়ে ভার্সিটি মিস করলাম কিন্তু কাল।একদিন না একদিন তো ভার্সিটি যেতেই হবে,,কয়দিন এভাবে বসে থাকবো?না আগামীকাল থেকে ভার্সিটি যাবো।যা হবার হবে।

মেহের হালকা গোলাপি ড্রেস,গোলাপি স্কাপ পড়ে রেডি হয়ে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে গেলো।ভার্সিটির সামনে গিয়ে ওর গাড়ি থামলো।যতটা সাহস নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে ততটা সাহস আর এখন নেই।গেইটের সামনে এসে সব সাহস হাওয়া হয়ে গেলো।ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছেনা।
বিসমিল্লাহ বলে ভিতরে ঢুকে গেলো।কোনোদিক না চেয়ে সোজা ক্লাসে চলে গেলো।ধপ করে সামিরার পাশে বসে পড়লো।
–মেহের,কিরে হাপাচ্ছিস কেন?
–আগে বল কালকে কিছু হয়েছে?ফায়াজ,,,
সামিরা আমতা আমতা করে বলল,
–হ্যা,তোকে খোজতে এসেছিলো।
–কিহ??তাহলে আজও যদি আসে, আমি এখানে বসবো না।
মেহের ব্যাগ নিয়ে একদম পিছনে গিয়ে বসে পড়ল।সামিরা এই মেয়ের হাপভাব কিছুই বুঝতে পারছেনা।
ক্লাসরুমটা অনেক বড়।মেহের পিছনে বসে বসে দোয়া পড়ছে।দোয়া পড়ে চোখ মেলতেই চোখ চড়কগাছ।ফায়াজ হন্তদন্ত হয়ে একটা ছেলের সাথে ক্লাসে ঢুকছে।মেহের এক মিনিট দেরি না করে ব্যাগ নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে এক দৌড়। ফায়াজ ঢুকেই একদম সোজা সামিরার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–মেহের কই,আজকে ওকে আসতে দেখেছে একজন।
–হ্যা,এসেছে।আমার সাথে ২মিনিট বসেছিলো।তারপর হাসফাস করতে করতে ব্যাগ নিয়ে আমাকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেলো।হয়তো বাসায় চলে গেছে।জানিনা আমি।
সামিরা সত্যি মিথ্যা মিলিয়ে কথাটা বললো।ও জানে মেহের পিছনে আছে।

ফায়াজের এবার রাগ বেড়ে গেলো।ও বাইরে এসে কাউকে ফোন করলো।
–মেহের গেইট থেকে বেরিয়েছে?
–না ভাই,,
ফায়াজ ফোন রেখে দিলো।তারপর বাকা হাসি হেসে বললো,
–সুইটহার্ট তুমি আমার সাথে লুকোচুরি খেলছো?চলো,,যেখানেই থাকো এই ফায়াজ একা তোমাকে খোজে বের করবে।
জিসান বললো,
–আরে,,কি মেয়ের পিছনে দৌড়াচ্ছিস?মেয়ে তো তোকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।অন্য কেউ হলে এক সেকেন্ড ও সময় নিতোনা।সাথে সাথে লাভ ইউ টু বলে জড়িয়ে ধরতো।
ফায়াজ চোখ গরম করে জিসানের দিকে তাকালো।জিসান চুপসে গেলো।
–আমি ফায়াজ,,আমার পছন্দের জিনিস সস্তা হয়না।তাই মেহেরও সস্তা না।যে হাত বাড়ালেই কেউ পেয়ে যাবে।আমি ওকে ভালোবাসি।ভালোবাসার জন্য এটুকু করতে পারবোনা??এই ফায়াজ মেহেরের জন্য সব করতে পারে,,সব।

মেহের কোনো দিক দিশা না পেয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকে এক কোনায় লুকিয়ে পড়লো।অনেকক্ষন যাবত বসে আছে।প্রায় ২০মিনিট।
–দুরর,,আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো ওই বজ্জাত ছেলের ভয়ে?আর ভাল্লাগছে না।কি করি??
মেহের তুই লাইব্রেরিতে আছিস।বই পড়তে পারিস।মেহের উঠে একটা বই হাতে নিলো।কবিতার বই।বই খোলে বুকশেল্ফের সামনে দাড়িয়েই কবিতা পড়তে লাগলো।
মেহেরের হাসি পাচ্ছে।এ তো বাচ্চাদের ছড়ার বই।ভার্সিটির লাইব্রেরীতে বাচ্চাদের বই?এখানে কে পড়ে এসব।তারপর আবার মনে মনে বললো,
–কে আবার পড়বে?তোর মতো ব্যক্কলেই পড়বে।যেমন এখন পড়ছিস।
মেহের পিছনে ঘুরে চমকে যায়।ওর হাত থেকে বইটা নিচে পড়ে যায়।ওর শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনই জ্ঞান হারাবে।
ফায়াজ অপর পাশের শেল্ফে ঢেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আর একমনে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফায়াজ আস্তে আস্তে মেহেরের সামনে এসে দাড়ালো।তারপর দুহাত ভাজ করে বললো,
–কি ভেবেছো তোমাকে আমি খোজে পাবোনা?আমার কাছ থেকে পালিয়ে থাকতে পারবে?

মেহের তোতলাতে তেতলাতে বললো,
–আমি পালাবো কেন?আমি তো লাইব্রেরিতে পড়তে এসেছি।

–আচ্ছা,তা কি পড়ছিলে??
বলেই ফায়াজ পড়ে যাওয়া বই তুলে নিলো।
–আচ্ছা,কবিতার বই।তোমার কবিতা এত প্রিয়?
মেহের ফায়াজের কথাটার মধ্যে কেমন রহস্য খুজে পাচ্ছে।তাই কিছুটা পিছিয়ে গেলো।
ফায়াজ মেহেরের দিকে এগুচ্ছে আর বলছে তুমি ক্লাস মিস করে লাইব্রেরিতে এসোছো তাও এই বাচ্চাদের কবিতা পড়তে??
মেহের ভয়ে পিছাতে পিছাতে দেওয়ালে ঠেকে গেলো।ফায়াজ ওর একদম কাছে চলে গেছে।তারপর বইটা দেখিয়ে বললো,
–তুমি এইটা পড়তে এসেছো??
মেহের কিছুই বলতে পারছেনা ভয়ে।
ফায়াজ মেহেরের হাত চেপে ধরলো।মেহের আগের মতোই ঝাকিয়ে উঠলো।ফায়াজ আজো অনুভব করতে পারলো মেহেরের ঝাকুনি।মেহের ভয়ে কুকড়ে গেছে।

ফায়াজ ওর হাত ঝাকিয়ে বললো,
–সত্যি কথা বলো।
মেহের ভয়ে কেপে উঠলো তারপর সব গরগর করে বলে দিলো।
–আমি আপনার ভয়ে এখানে এসেছি।আপনি আমার ক্লাস রুমে গিয়েছিলেন।আপনাকে দেখেই আমি ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরিতে চলে আসি।
ফায়াজ শান্ত কন্ঠে বললো,
–এতো ভয় কেন পাও আমাকে?আমি তোমার সাথে কি খারাপ আচরণ করেছি বলো।
মেহের বললো,
–জানিনা,আপনাকে দেখলেই আমার কেমন জানি লাগে,,ভয় করে আর সেদিনের পর থেকে আরো বেশি।

ফায়াজ চিন্তিত মুখে বললো,
–কোন দিনের?যেদিন আমি তোমাকে প্রপোজ করেছি সেদিন?
মেহের মাথা নাড়িয়ে না বললো।
ফায়াজ বিস্ময় নিয়ে বললো,
–তবে??কবে?

মেহের ঢুক গিলে বললো,,
–যেদিন আপনি ওই ছেলেটাকে মেরেছিলেন।আর আমি শুনেছি আপনি এর আগেও অনেক ছেলেকে মেরেছেন।আপনি অনেক ভয়ংকর।একটা গুন্ডা।আর যারা গুন্ডামী করে আমি তাদের অনেক ঘৃণা করি,অনেক ভয় পাই।তাই আমি আপনাকেও ভয় পাই।
কথাটি বলেই মেহের নিজের মুখ চেপে ধরলো।ভয়ের চুটে সব কিছু গরগর করে বলে দিয়ে হুশ হয়েছে।বাঘের সামনে বাঘের বদনাম করছে।
ফায়াজ তখনো মেহেরের হাত ধরে রেখেছিলো তাই অনুভব করতে পারছে মেহেরের শরীর আগের চেয়ে বেশি কাপছে।
মেহের ভয়ের চুটে মারা যাচ্ছে।জানেনা ফায়াজ ওকে এখন কি করবে??হয়তো মেরেই ফেলবে।
কিন্তু অবাক করে দিয়ে ফায়াজ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে শান্ত ভংগিমায় চলে গেলো।মেহের বুঝতে পারলো না ফায়াজ ওকে কিছু কেন বললো না।

ফায়াজ কাউকে কিছু না বলে সোজা বাসায় চলে গেলো।তারপর পুলে সাতার কাটছে।নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে।
মেহেরের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে।মেহের ওকে ভয় পায়,ঘৃণা করে।ও মানতেই পারছেনা মেহের ওকে ঘৃণা করে।যাকে ভালোবাসে তার ঘৃণা কি করে মেনে নিবে।ফায়াজ পুলের কিনারায় গিয়ে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।ভাবছে,

–এখন আমার কি করা উচিত?আমি যে মেহেরকে ছাড়তে পারবোনা,,তাহলে কি করবো?কি করে ওর মনে আমার জন্য জায়গা করবো?ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসার ফুল ফুটাবো?ব্যাপারটা আমি যতটা হালকা ভেবেছিলাম ততটাও হালকা নয়।তবে আমিও হাল ছাড়বোনা মেহের।ভালো তো তোমাকে বাসতেই হবে।আর আমারও হতে হবে।তোমার মনে আমি ছাড়া অন্য কারো জায়গা কখনও হবেনা।

ফায়াজের বন্ধু শিশির এসেছে মেহেরের সাথে কথা বলতে,
–মেহের তুমি কি ফায়াজকে কিছু বলেছো?ও কিছু না বলে এভাবে বেরিয়ে গেলো কেন?আর ওর চেহারাটাও কেমন লাগছিলো।

–না আমি কি বলবো?

–তুমি হয়তো ওকে রিজেক্ট করে দিয়েছো তাই এভাবে চলে গেলো।তোমাকে একটা কথা বলি ও সত্যিই তোমাকে পছন্দ করে।ঠিক পছন্দ নয় ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে একজন মানুষের যত স্বপ্ন থাকে ফায়াজ তার সবগুলো তোমাকে নিয়ে দেখে ফেলেছে।হি রিয়েলি লাভ ইউ।

মেহের কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলো।মেহের কাউকে বুঝাতে পারছেনা,ও ফায়াজকে ভালোবাসতে পারবেনা।

পরেরদিন ফায়াজকে অনেক নরমাল লাগছে।হাসিখুশি ব্যাবহার করছে।সবাই ওর এমন পরিবর্তনে অবাক।
ইমরুল বলল,
–ফায়াজ তুই ঠিক আছিস?
–হুম একদম কেন?
–না মানে,,,,যাইহোক মেহেরের ব্যাপারে কি ভাবলি?ওসব ছাড় দোস্ত।
–ফায়াজ সব ছাড়তে পারলেও মেহেরকে ছাড়তে পারবেনা।মেহের আমার রক্তে মিশে গেছে।ও আমাকে আজ একসেপ্ট করেনি তো কি হয়েছে,,কাল করবে।তবে অবশ্যই করবে।দিনশেষে মেহের আমার ই হবে।
তারপর একটা চিরকুট লিখে মেহেরের কাছে পাঠিয়ে দিলো।

মেহের চিরকুট খোলে বসে আছে।কি করবে বুঝতে পারছেনা।চিরকুটে লিখা,
“সুইটহার্ট সেই জায়গায় চলে এসো গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”ও ফায়াজের কাছে যাবে না পালাবে ভেবে পাচ্ছে না।ফায়াজ আজ ওকে আস্ত রাখবে না।কাল ছেড়ে দিয়েছে বলে আজ ছাড়বেনা।কালকের কথার প্রতিশোধ নিবে।মেহের তাই ভাবলো আজো পালাবে।তবে এমন জায়গায় সেখানে ফায়াজ যেতে পারবেনা।
মেহেরের মাথায় আইডিয়া চলে এসেছে।

মেহের ফ্রেশ হওয়ার রুমে এসে দাড়িয়ে আছে।সাড়ি সাড়ি আয়না।এখানে মেয়েরা সাজগোছ করে।ফ্রেশ হয়।মেহের মুখে পানি ছিটা দিয়ে টিস্যু বের করে আয়নায় মুখ দেখে মুছছে।আয়নায় দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো।আয়নায় ফায়াজের হাস্যজ্বল মুখ দেখতে পাচ্ছে।মেহের ঘুরে চিতকার করতে যাবে তখনি ফায়াজ মেহেরের মুখ চেপে ধরলো।

–এই মেয়ে চুপ।তোমার চিতকারে সব মানুষ এখানে জড়ো হয়ে যাবে।তোমাকে আমাকে এক সাথে দেখলে আমার কিছু হবেনা তোমার বদনাম হয়ে যাবে তাই বলছি চুপ।
ফায়াজ মেহেরের মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,
–দেখো তুমি আমাকে কোথায় এনে দাড় করিয়েছো?তোমার জন্য মেয়েদের এই ওয়াশরুমে এসে দাড়িয়ে আছি।কি লজ্জার ব্যাপার।এবার তুমি বলো তুমি কেন এমন করছো?

–আমি বাইরে যাবো।
বলেই মেহের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।ফায়াজ ওকে এক টানে দেওয়াল ঘেঁষে দাড় করালো।মেহেরের দুপাশে দুহাত রাখলো তারপর বললো,
–আমার কথার জবাব না দিয়ে তুমি এক পা ও নাড়াবেনা।আমি এখান থেকে না যেতে দিতে চাইলে তুমি কি যেতে পারবে?কখনো ই না।তাই চেষ্টাও করোনা।
মেহেরের মুখের উপর ফায়াজের নিশ্বাস পড়ছে।ফায়াজ ওর এত কাছে যে ওর খুব ভয় ও অস্বস্তি হচ্ছে।ভয় চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো,
–প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।

বলেই মেহের কেদে দিলো।
ফায়াজ প্রচন্ড রেগে গেলো।রাগে ওর শরীর থরথর করে কাপছে।মেহের চোখ মেলে ওর দিকে তাকালে দেখতে পেতো ফায়াজের রক্ত বর্ন চোখ মুখ।ফায়াজ মেহেরের দুপাশ থেকে নিজের হাত সরিয়ে মেহেরের দুবাহু চেপে ধরে ঝাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,
–আমাকে তোর কি মনে হয়?আমি চরিত্রহীন লম্পট।আমি এখানে তোর ক্ষতি করে দিবো।আরে আমি তোকে ভালোবাসি।আর পাগলেও নিজের ভালোবাসার জিনিসের ক্ষতি চায়না,আগলে রাখে আর আমি তো সুস্থ একজন মানুষ।
মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে দেখলো।ওর চোখ লাল হয়ে গেছে।কেমন হিংস্র আর ভয়ানক লাগছে।
ফায়াজ আবারো বলতে লাগলো,
–মেহের আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে দেখার পর জানিনা আমার কি হয়েছে।কোনোদিন আমার এমন ফিলিংস হয়নি।আমি চাইলেও তোমাকে ছাড়তে পারছিনা।সবসময়ই সব জায়গায় তোমার কথাই ভাবি।তোমাকে ভেবে রাত পার করে দেই।কখন সকাল হবে আর তোমাকে দেখতে পাবো সেটাই ভাবি।তোমাকে না দেখলে আমি অস্থির হয়ে পড়ি।
তুমি আমার রক্তে,শিরায় মিশে গেছো।আমি কি করে তোমাকে আমার জীবন থেকে বাদ দিতে পারি বলো?

মেহের চুপ করে আছে।ওর এই মুহুর্তে কি বলা উচিত বুঝতে পারছেনা।
মেহের চুপ করে থেকোনা।কথা বলো।কিছু তো বলো।
–আমি বাইরে যাবো।
ফায়াজ রাগে মেহেরের দুবাহুতে চাপ দিয়ে বললো,
–আবার?আবার বাইরে যাওয়ার কথা বলছো?
মেহের ভয়ে ভয়ে বললো,
–ঠিক আছে আর বলবোনা।
–আমাকে তোমার পছন্দ নয় আমি জানি।তবে একটা সুযোগ তো আমিও আশা করতে পারি।৩মাস,,৩মাস তুমি আমার সাথে থাকো,আমার সাথে মিশো তারপর যদি তোমার মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবাসো না তবে আমি তোমাকে আর বিরক্ত করবো না।কথা দিলাম।তবে তুমি না করতে পারবেনা?এই সুযোগ তোমাকে দিতেই হবে।
মেহের নিরুপায়।তবুও দমে না গিয়ে বললো,
–তেমন কিছুই হবেনা।শুধু শুধু আপনার আর আমার ৩মাস নষ্ট হবে।
ফায়াজ মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে ওর একহাত ধরে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
–ভয় পাচ্ছো প্রেমে পড়ার?
মেহের ভ্রুকুচকে ফায়াজের দিকে তাকালো।অদ্ভুৎ সেই চাহুনি।চুলগুলো এলোমএলো হয়ে আছে।মেহেরের ইচ্ছে করছে বলতে,আপনার কোরিয়ার হিরোদের মতো চুলগুলোকে আপনি এতো অবহেলা কেন করেন?মেহেরকে ফায়াজের এই চাহুনি আর হাসি মাতাল করে দিচ্ছে।প্রথম দিনই এই ছেলের উপর ক্রাশ খেয়ে শেষ হয়ে গেছে।
ফায়াজ মেহেরের চোখের সামনে চুটকি বাজালো।মেহের চমকে গেলো।তারপর লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।
ফায়াজ বাকা হেসে বললো,
–কিহ??এখুনি প্রেমে পড়ে গেলে?
তাহলে বলেই দেও আই লাভ ইউ টু,,
মেহের ফায়াজের হাতে কামড় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।ফায়াজ ব্যথায় আউচ করে উঠলো।মেহের এই ফাকে দৌড় দিলো।
ফায়াজ নিজের হাত ধরে ব্যাক্কলের মতো চেয়ে আছে।তারপর বলে,
–এই মেয়ের দাতে এত শক্তি।আমাকে কামড়ে পালালো।
তারপর নিজের কামড়ের জায়গায় চুমু খেয়ে বললো,
–সুইটহার্ট তোমার কাছে থেকে পাওয়া প্রথম গিফট।

মেহের ফায়াজের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবছে।
–উনাকে কি সুযোগ দেওয়া উচিত?উনি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে?আমি কি কাজটা ঠিক করলাম।শেষে কুকুরের মতো কামড় দিয়ে পালালাম।
ঘন্টা পড়ে গেলো।সবাই বের হয়ে যাচ্ছে।ছুটি হয়ে যাচ্ছে।মেহের বের হয়ে দেখে ফায়াজ ওয়ালে ঠেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।মেহেরের চোখ পড়তেই দেখে ফায়াজ মুচকি মুচকি হেসেই চলেছে।মেহের চোখ সরিয়ে নিলো।তারপর আবার আড়চোখে দেখলো, এখনো হাসছে।মেহেরের প্রচুর রাগ হচ্ছে।
মেহের রেগে সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর বললো,
–হাসছেন কেন?একটু আগে কামড় দিয়েছি ভুলে গেলেন?
ফায়াজ আবারো হেসে বললো,
–জানু ওটাকে কামড় বলে না।ওটাকে বলে লাভবাইট।
মেহের ভ্রু কুচকে বললো,
–লাভবাইট মানে?
ফায়াজের এবার অবাক হওয়ার পালা।এই মেয়ে লাভবাইট কি জানে না?
–ফোন বের করে গুগলে সার্চ দেও পেয়ে যাবে।
মেহের তড়িঘড়ি করে ফোন বের করে সার্চ দিয়ে ফেললো।
সার্চ দিয়ে হা করে রইলো।লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।মাথা নিচু করে ফোন রেখে দিলো।
ফায়াজ হেসে চলে গেলো।
মেহের মনে মনে ফায়াজকে হাজারো গালি দিচ্ছে।সাথে নিজেকে ও।
বেক্কল মাইয়া।তোরে বললো আর তুই এই বজ্জাতের কথায় নাচতে নাচতে সার্চ দিলি।কেন পরে বাসায় গিয়েও তো সার্চ দিতে পারছি।কোন কিছুতে আর তর সয় না।

মেহের ভার্সিটির বাইরে হাটছে ওমর সময় কেউ ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।মেহের হকচকিয়ে গেল।পাশে তাকাতেই ফায়াজকে দেখে রাগ উঠে গেলো।
–আপনি?আপনি জানেন আমি কি পরিমাণ ভয় পেয়েছি?
ফায়াজ চিংগাম চাবাতে চাবাতে বললো,
–তুমি তো একটা ভীতুর ডিম ভয় তো পাবেই।
বলেই গাড়ির দরজা বন্ধ করে সিট ব্যাল্ট লাগিয়ে দিলো।
মেহের আড়চোখে ফায়াজের হাতের দিকে তাকালো।ওর হাতের দিকে তাকিয়ে মেহের শিওয়ে উঠলো।
কামড়ের জায়গায় দাত বসে নীলচে হয়ে গেছে।কি বিভৎস লাগছে।
মেহের মনে মনে বলছে,
–মেহের কি করেছিস দেখেছিস?এত জোরে কামড় দেওয়ার কি দরকার ছিলো?তোর দাতে হটাৎ করে এত পাওয়ার কই থেকে আসলো।এত সুন্দর হাতে কি বিভৎস একটা স্পট দিয়েছিস।

ফায়াজ পাশ থেকে বললো,
–বিরবির করে কি বলছো,,একটু জোরে বলো আমিও শুনি।

মেহের চুপ করে রইলো।ফায়াজ গ্লাসে মেহেরকে দেখছে।মেহের একটু পর পর ফায়াজের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।ফায়াজ বিরবির করে বললো,
–উফফ মেহের,,এমনিতেই আধপাগল হয়ে আছি প্রেমে পড়ে আর এখন তুমি তো এই চাহুনি দিয়ে আমায় মেরেই ফেলবে।

তারপর মেহেরের দিকে চেয়ে বলল,
–তুমি আমায় সরাসরি দেখতে পারো।আমার কোনো সমস্যা নেই।

মেহের ফায়াজের কথা শুনে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল লজ্জায়।
–মেহের তুই এইভাবে একটা ছেলেকে দেখছিস।ছিঃ তাএ এইভাবে ধরা।নিজের মান সম্মান আর কিছু রাখলি না।হ্যাংলা হয়ে যাচ্ছিস।
ফায়াজ মেহেরকে আগের জায়গায় ছেড়ে দিলো।
মেহের গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এলো।ফায়াজের দিকে গিয়ে বললো,
–বাসায় গিয়ে হাতে ওষুধ লাগিয়ে নিবেন।
তারপর মেহের আবারো হাটা ধরলো।
ফায়াজ মুচকি হেসে বললো,
–জানু তুমিও আমার মতো ফেসে গেছো।প্রেমে পড়বেনা পড়বেনা করেও প্রেমে পড়ে গেছো।কি করার প্রেম জিনিসটাই এমন।
ফায়াজ হাতের ক্ষতের জায়গায় একটা চুমু খেয়ে বললো,
–আমি চাইনা এই দাগ কখনো মিটে যাক।আমার ভালোবাসার পাওনা বলে কথা।স্মৃতি হয়ে থাক।

চলবে,,,

(গল্প লিখায় মন বসাতে পারছিলাম না।এলোমেলো করে কি লিখেছি নিজেও জানিনা।তাই আগেই বলছি দুঃখীত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here