অনুভবে আজো তুমি🍁🍁 পর্ব-১৪

0
1031

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১৪
ফাবিহা নওশীন

এভাবেই কেটে যায় আরো এক মাস।ফায়াজের প্রতি মেহেরের অনুভুতি গুলো গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।ফায়াজ মেহেরের অনুভুতিগুলো অনুভব করতে পারলেও মেহেরকে সেসব নিয়ে কিছু বলেনা।ফায়াজ চায় মেহের নিজেই সব বলুক।ভার্সিটির সবাই মুটামুটি ওদের ব্যাপারে জেনে গেছে।মেয়েরা মেহেরকে হিংসার চোখে দেখে।

ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে।মেহের আজ শাড়ি পরে এসেছে।লাল টকটকে সিল্কের শাড়ি,কালো পাইরের।কানে ঝুমকো,গলায় হালকা ওজনের অর্নামেন্ট।হাত ভর্তী কাচের চুড়ি।মুখে হালকা মেকাপ,চোখে হালকা মেকাপের সাথে গাঢ কাজল,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,কপালে ছোট কালো রঙের টিপ পড়েছে।সাথে খোলা চুল।

মেহেরের খুব লজ্জা লাগছে এভাবে সেজেগুজে আসায়।বোনের জোরাজোরিতে সেজেছে।যদিও সবাই এর চেয়ে বেশি সাজগোছ করে এসেছে কিন্তু মেহেরের খুব অস্বস্তি লাগছে।ফায়াজের সামনাসামনি কিভাবে হবে এটা ভেবে আরো লজ্জা লাগছে।
মেহের,সামিরা সেল্ফি নিচ্ছে।সাথে আরো মেয়েরা।ফায়াজ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।হটাৎ ফায়াজের চোখ আটকে যায়।চোখগুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেছেন।নিজের বুকে হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কয়টা হার্টবিট মিস হয়েছে,,কিন্তু সঠিক হিসাব করতে পারলোনা।সবাই ফায়াজের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
–ওই ফায়াজ কি হইছে?ফ্রিজ হয়ে গেলি কেন?
ফায়াজ কিছুটা কনফিউজড হয়ে বললো,
–দোস্ত,ওইটা কি আমার মেহের?
–কি বলিস,,তুই মেহেরকে চিনিস না?
–চিনবোনা কেন?প্রকৃত প্রেমিক তার প্রেয়সীকে হাজার মানুষের ভিড়েও খোজে পায়।কিন্তু কথা সেটা না আমার মনে হচ্ছে আমি কল্পনা করছি।
সবাই ঘুরে তাকালো।দেখলো মেহের শাড়ি পড়ে বান্ধবীদের সাথে ঘুরছে।
শিশির বললো,
–কাবির সিং,,এই তোমার প্রেয়সী স্বশরীরেই অবস্থান করছে,স্বপ্ন কিংবা কল্পনা নয়।

মেহের ১৫মিনিট যাবত বসে আছে।শাড়ির আঁচলে একবার আংগুল পেচাচ্ছে আরেকবার হাতের এক আংগুল দিয়ে আরেক আংগুল ঘষছে আর কিছুক্ষণ পর পর ফায়াজের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।
ফায়াজ গালে হাত দিয়ে তখন থেকে মেহেরকে দেখে যাচ্ছে কিন্তু দেখাই শেষ হচ্ছেনা।
ফায়াজ তখন বন্ধুদের কাছ থেকে উঠে এসে মেহেরকে নিয়ে এসে নিরিবিলি এক জায়গায় বসিয়ে দেয় আর বলে চুপচাপ বসে থাকবে।
মেহেরের এমন নড়াচড়াতে ফায়াজ কিছুটা বিরক্তবোধ করে।
–এই লাল পরী এভাবে নড়াচড়া করছো কেন?ঠিকমতো দেখতেও দিচ্ছোনা।সমস্যা কি তোমার?
মেহের মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলে,
–শালা আধা ঘন্টা যাবত বসিয়ে রেখেছে।লুচ্ছার মতো দেখেই চলেছে কিন্তু দেখার আর শেষ ই হয়না।ইচ্ছে করছে গিলে ফেলি।দেখতেই শুধু তামিল হিরোদের মতো নয়,চরিত্র ও তেমন।

–মনে মনে না বলে জোরে বলো।আমিও শুনতে চাই তুমি কি কি গালাগাল পারো।জোরে বলো আমি তোমাকে কিচ্ছু বলবো না প্রমিস।

মেহের আর না পেরে বলেই ফেললো,
–আপনি একটা লুচু।নিজের বউকেউ তো কেউ এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে না আপনি যেভাবে দেখছেন।আপনি কি ভেবেছেন আপনি দেখতে একটু সুন্দর বলে আপনার জন্য সবাই পাগল হয়ে যাবে।মানলাম চুলগুলো আমি একটু বেশিই পছন্দ করি তাতে কি।আমার তো ইচ্ছে করে আপনাকে বস্থায় ভরে বুড়িগঙ্গায় নিয়ে পচা পানি খাওয়াতে যাতে পেট খারাপ হয়ে ২দিন বিছানা থেকে উঠতে না পারেন।গন্ডার একটা।আর আপনার এই চাহুনি দেখে মনে হচ্ছে আপনাকে আস্ত গায়ের করে ফেলি।কিন্তু গায়েব করবো কোথায়।আপনি একটা লুচু।আপনাকে আপনার বন্ধুরা কাবির সিং বলেনা,,ঠিক বলে আপনি লুচু কাবির সিং।
আমার মতো ভুলাভালা একটা মেয়ে পেয়েছেন তো,,আপনার কপাল ভালো,, অন্য কেউ হলে আপনার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতো।উফফ,,

ফায়াজ মেহেরের দিকে হা করে চেয়ে আছে।যে মেয়ে হু,হা ছাড়া আর কিছু বলেনা সে আজকে এতো কথা শুনালো।
মেহেরের হুশ হলো কি বলতে কি বলে ফেলেছে।মুখে হাত দিয়ে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।মেহের আজ তোর কপালে শনি আছে।মেহের উঠে দৌড়ে পালালো।

মেহের পানি খেয়ে ওর বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছে।দূর থেকে ফায়াজকে দেখছে।সামনে যখন ছিলো লজ্জায় তাকাতে পারেনি।
ফায়াজ মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে।পাঞ্জাবীর ২টো বোতাম খোলা।ফর্সা বুক কিছুটা দেখা যাচ্ছে।হাতে ঘড়ি,চোখে সানগ্লাস।সিল্কি চুলগুলো বরাবরের মতোই কপালে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মেহেরের খুব ইচ্ছে করে চুলগুলো একটু ছুয়ে দেখতে।সব মিলিয়ে ফায়াজকে মাখনের মতো লাগছে মেহেরের কাছে।ওর ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে।
মেহের মনে মনে ভাবছে,
–আপনাকে কে বলেছে এতো সুন্দর হতে?আর সুন্দর হয়েছেন ঠিক আছে,আমাকে কেন ভালোবাসলেন?আমি যে আমার মনকে মানাতে পারিনা।
আর আপনাকে আজকে এতো গেটাব নিয়ে কে আসতে বলেছে?মেয়েদের পাগল করতে চান?সব মেয়েরা আপনার দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে।চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।যেখানে আজ আমি ফিদা সেখানে ওদের আর কি বলবো।
মেহের আনমনে কথাগুলো বলছিলো তখনি ফায়াজের চোখে চোখ পড়ে।মেহের তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিজেও ঘুরে যায়।ফায়াজ মুচকি হাসি দেয়।
মেহের বিরবির করে বলে,
–মেহের সর্বনাশ!!তুই সবসময় এভাবে ধরা খাস কেন?এখন যদি ফায়াজ এসে কিছু বলে তখন।উফফ,কি লজ্জা, কি লজ্জা।

ফায়াজ মেহেরের সামনে আসতেই মেহেরের বান্ধবীরা নির্শব্দে উঠে চলে যায়।
–বাই এনি চান্স,তুমি কি আমায় দেখছিলে?
ফায়াজে কন্ঠ শুনে মেহের চমকে যায়।ঘুরে দেখে ফায়াজ ওর পাশে বসে আছে।
–আমি আপনাকে কেন দেখতে যাবো?
–আচ্ছা,আমিই তাহলে ভুল দেখেছি।কি বলো?
আমাকে তো লুচু মুচু যা নয় তা বললে,এখন নিজেকে কি বলবে?
তবে আমাকে লুচু বলো আর যাই বলো আমি আজকে তোমার থেকে চোখ ফিরাতে পারছিনা।তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে।ফায়াজের বউ।আমি তোমাকে দেখবোই।আমার কি দোষ তুমি এত সুন্দর করে সেজেছো কেন?

–আপনিও তো সেজেছেন?আর দেখুন ওই মেয়েগুলো কিভাবে চেয়ে আছে।আপনার শুধু মেয়ে পটানোর ধান্দা।

–হুম,,আমার জানুটার হিংসা হচ্ছে।আমি শুধু তোমাকে পটাতে চাই,দুনিয়ার বাকি মেয়েরা চুলোয় যাক।

মেহের অন্য দিকে চেয়ে বললো,
–তাহলে,,পাঞ্জাবীর বোতাম লাগান।অন্য মেয়েদের দেখাতে হবে না।

–যো হুকুম মহারানী।আমার বুকটা তো আমার কিউট বউটার জন্য।
ফায়াজ বোতাম লাগিয়ে বললো,
–তারপর বলো,,কি বলছিলে আমার চুলগুলো নাকি তোমার ভিষণ পছন্দ।জানতাম না তো,কবে থেকে?
–প্রথম দিন থেকেই।যেদিন আপনাকে প্রথম দেখি।আপনিও দেখতে খারাপ না।একদম তামিল হিরোদের মতো।
বলেই মেহের নিজের হাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো।তালে তালে সব বলে দিচ্ছে।
মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফায়াজের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
–আপনি তো বেশ চালাক।চালাকি করে আমার পেট থেকে সব কথা বের করে নিচ্ছেন।আপনার সাথে আর কথাই বলবো না।
ফায়াজ হাসছে।বিজয়ের হাসি।

মেহের উঠে দাড়ালো।ফায়াজ ওর হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো।তারপর মেহেরের চুল হাতে নিয়ে নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিতে নিতে বললো,
–আমি আরো একবার প্রেমে পড়লাম।প্রথমত তোমার ওই ঠোঁট ফুলানো কান্না দেখে আর আরেকবার তোমার এই চুল।
শোনো যাকে আমরা ভালোবাসি তার যেটা সুন্দর সেটা সুন্দর বলার অধিকার আমাদের আছে।যেমন আমি বলি তেমন তুমিও বলবে।

মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে বললো,
–আমি কি আপনাকে ভালোবাসি?
ফায়াজ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
–সেটা তো তুমি বলবে,,বলো?
মেহের চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো।মেহের খুব অস্বস্তিবোধ করছে।কি একটা পরিস্থিতি, কি জবাব দিবে বুঝতে পারছেনা।

ফায়াজের কিছুটা মন খারাপ হলো।কষ্টও পাচ্ছে মেহেরের কাছ থেকে জবাব না পেয়ে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে চলে গেলো।
মেহেরের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।ও জানে ফায়াজ কষ্ট পেয়েছে।
মেহেরের ইচ্ছে করে ফায়াজকে ভালোবাসতে।মেহের এতটুকু তো এতদিনে বুঝেছে ফায়াজ ওকে অসম্ভব ভালোবাসে।মেহেরের ও ইচ্ছে করে বলতে ফায়াজ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।কিন্তু পারেনা।কেন পারেনা জানেনা,,হয়তো ভয় পায়।কিন্তু কিসের?
বাবার ভয় না ফায়াজের ভয়?

অনুষ্ঠান শেষে মেহের আর ফায়াজ বাসায় ফিরছে।ফায়াজ চুপচাপ ড্রাইভ করছে।কোনো কথা বলছেনা।মেহেরের দিকে তাকাচ্ছেও না।মুখটাও কালো করে রেখেছে।মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
মেহের আর না পেরে ফায়াজকে বললো,
–কি হলো মুখটা কালো করে রেখেছেন কেন?
–…
–মেহের ফায়াজের হাতের উপর হাত রাখলো।মেহেরের হাতের ছোয়ায় অন্যরকম অনুভব হচ্ছে।এই প্রথম মেহের নিজে থেকে ওকে ছুয়েছে।
ফায়াজ গাড়ু থামিয়ে দিলো।তারপর নিজের অপর হাতটা মেহেরের হাতের উপর রেখে বললো,
–তোমার কি সত্যি সত্যিই মনে হয় আমার চরিত্র ভালোনা?
–এসব কি বলছেন?আমি তো এমনিতেই বলেছি।কিছু মিন করি নি।এই যে আপনাকে ছুয়ে বলছি।
–তাহলে?
–তাহলে কি?
–আমাকে কেন ভালোবাসতে পারছোনা?
মেহের মুচকি হেসে বললো,
–মাত্র ১মাস হয়েছে আরো ২মাস বাকি আছে।
–কিন্তু আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছিনা।পারছিনা আমি,,
–আপনি ২মাস অপেক্ষা করতে পারছেন না?
–২মাস কেন?আমি তোমার জন্য ২০০বছর অপেক্ষা করতে পারি,,কিন্তু তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও ২মাস পর??
আমি বাচতে পারবোনা।তুমি যদি আমাকে ভালো না বেসেও এভাবে সারাজীবন আমার পাশে থাকো তবে সেটাও আমি মেনে নিবো।তোমাকে বলবো না ভালোবাসো,,কিন্তু তোমার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারবোনা।
মেহের ফায়াজের হাতের উপর নিজের অপর হাত রেখে বললো,
–আচ্ছা,আপনার কি এটাই মনে হয় আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো?
মেহের ফায়াজের চোখের দিকে তাকালো।মেহেরের চোখ যেন কিছু বলছে।ফায়াজ কিছুক্ষণ মেহেরের চোখের দিকে চেয়ে থেকে মেহেরের মন বুঝে নিলো।
তারপর বাকা হাসি দিয়ে মেহেরের দুগাল চেপে ধরে ঠোঁটের নিচে তিলে শব্দ করে কিস করলো।
মেহের চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।একদম ফ্রিজ হয়ে গেলো।নড়তে পারছেনা।ঘটনার আকস্মিকতায় মেহের বোবা হয়ে গেলো।
কয়েক সেকেন্ড পর বললো,
–আপনি আসলেই লুচু।
ফায়াজ হাসছে।মেহের লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো।মেহের ও মুখ চেপে হাসছে।কিন্তু ফায়াজকে বুঝতে দিলোনা।এটা মেহেরের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম কিস।

এভাবে আরো ১৫দিন কেটে গেছে।মেহের ফায়াজকে খোজছে।কিন্তু ফায়াজকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারলো ফায়াজ আজ আসবেনা।
মেহেরের খুব চিন্তা হচ্ছে।যে মানুষটা তাকে একদিন না দেখে থাকতে পারেনা সে আজ আসবেনা।মেহেরের কেমন খটকা লাগছে।ফোন নাম্বার ও নেই যে ফোন করে খোজ নিবে।এতদিন ধরে একসাথে আছে কিন্তু ফায়াজের নাম্বার ই নেওয়া হয়নি।ফায়াজ অবশ্য মেহেরের নাম্বার নিয়েছিলো কিন্তু ফোন দেয়নি কখনো।মন খারাপ করে পুরো দিন পার করে দিলো।দেখা হলে ইচ্ছেমতো বকুনি দিয়ে দিবে।না বলে কোথায় চলে গেছে।
পরেরদিন ও একি অবস্থা।ফায়াজ আসেনি।ওর কেমন জানি লাগছে।মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হয়েছে।মেহের গিয়ে শিশিরকে চেপে ধরলো।
–সত্যি করে বলো ফায়াজ আসছেনা কেন?কিছু হয়েছে?আমার উপর কোনো কারণে রাগ করেছে?
মেহের কাদো কাদো হয়ে বললো।
শিশির বলল,
–তেমন কিছু নয়।ওর শরীরটা একটু খারাপ।
–শরীর খারাপ?কি হয়েছে ফায়াজের?আর একটু খারাপ,,?আমি বিশ্বাস করিনা।ওর শরীর গুরুতর খারাপ না হলে আমার সাথে দেখা না করে থাকতে পারতো না।আমাকে ওনার বাসার ঠিকানা দেও।আর ফোন নাম্বার ও।
–তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।
–আপনি আমাকে ঠিকানা ই দিয়ে দিন।আমি যেতে পারবো কিনা শিওর না।
শিশির ফায়াজের বাসার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দিয়ে দিলো।

মেহের অনেক চিন্তা ভাবনা করে সামিরাকে নিয়ে ফায়াজের বাসায় গেলো।যাবেনা যাবেনা করেও না পেরে চলেই গেলো।একা যাওয়ার সাহস হয়নি তাই অনেক কষ্টে সামিরাকে মেনেজ করে নিয়ে এসেছে।

মেহের আর সামিরা ঠিকানা অনুযায়ী একটা বাসার সামনে নামলো।কিন্তু ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে।সামিরা মেহেরকে ঠেলছে,,সামিরা মেহেরকে।অতঃপর ঠেলাঠেলি করে দুজনই ভিতরে চলে গেলো।ওয়াচম্যানের সাথে কথা বলে ভিতরে গেলো।বেল বাজাতেই সাদা পোশাক পড়া এক লোক মেইন ডোর খুলে দিলো।
–কে আপনি??
–আমরা ফায়াজের ফ্রেন্ড,,ফায়াজ কোথায়?
–ভিতরে আসুন।স্যার নিজের রুমে আছেন।অসুস্থ বেডরেস্ট করছেন।
মেহের আর সামিরাকে ফায়াজের রুমে নিয়ে গেলো।
সামিরা মেহেরকে স্প্রেস দিয়ে রুমের বাইরে গেলো।
ফায়াজ গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।চোখ বন্ধ।ঘুমিয়ে আছে হয়তো।ওর চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।
মেহের ফায়াজের পাশে বসে ওর কপালে হাত রাখলো।গায়ে অনেক জ্বর।মেহেরের চোখে পানি চলে এলো।মেহের ফায়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ওর চুলগুলো আজ প্রথমবার ছুয়ে দেখছে।তারপর ওর কপালে একটা কিস করলো।ফায়াজের ঘুম ভেঙে গেলো।ফায়াজ আদো আদো করে চোখ মেলে মেহেরের দিকে তাকালো।মেহের ঘাবড়ে গেলো সাথে কিছুটা লজ্জাও।মেহের ফায়াজের পাশ থেকে উঠে যাবে তখনই ফায়াজ মেহেরের হাত ধরে ফেললো।
ফায়াজ চোখ মেলে আবারো বন্ধ করলো।তারপর হালকা হেসে বললো,
–তুমি তো রোজ অই স্বপ্নে আসো।এই জ্বরের মধ্যেও আশা বাদ দিলে না।তুমি এত হিংসুটে কেন?এই জ্বরের মধ্যেও ঘুমাতে দিচ্ছোনা।
মেহের বুঝতে পারলো ফায়াজ ভাবছে এটা স্বপ্ন। মেহের স্বস্তির নিশ্বাস নিল।
ফায়াজ মেহেরকে একটানে বুকের উপরে ফেললো।তারপর দু’হাতে চেপে ধরলো।ফায়াজ এত জোরে চেপে ধরেছে যে ও মাথা তুলতে পারছেনা ওর বুক থেকে।কথাও বলতে পারছেনা।
ফায়াজ বিরবির করছে,
–আজ আর তোমাকে ছাড়বোনা।তোমাকে আমার বুকে নিয়ে ঘুমাবো।
মেহেরের শিওরে উঠছে।এই প্রথম কোনো ছেলের এত কাছে।বুকের সাথে মিশে আছে।ফায়াজের হার্টবিট অনুভব করতে পারছে।কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেলো মেহের।নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে।দুহাতে মেহেরও ফায়াজকে জরিয়ে ওর বুকে মাথা রেখেছে।
কিছুক্ষণ পর ওর ঘোর ভাংলো।কোনো রকমে মাথা উচু করে বললো,
–ফায়াজ আমাকে ছাড়েন,আমাকে যেতে হবে।
–উহু।
–ফায়াজ প্লিজ ছাড়োন নয়তো আর আসবোনা।
–ছাড়বোনা।
–তাহলে ভালোবাসিও বলবো না।
–আগে বলো।
–ভালোবাসি।
–গালে একটা আদর দেও।
মেহের আর কোনো উপায় না দেখে ফায়াজের গালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে ভালোবাসার পরশ একে দিলো।
মেহের ফায়াজের হাতের বন্ধন হালকা অনুভব করে উঠে পড়লো।
ফায়াজের দিকে চেয়ে দেখলো ফায়াজের চোখ বন্ধ।ফায়াজ ঘুমাচ্ছে।মেহের নিজের জামাকাপড় ঠিক করে সামিরার সাথে বেরিয়ে গেলো।আসার আগে সার্ভেন্টের কাছে খোজ খবর নিয়ে এলো।
মেহের বাসায় গিয়ে ফায়াজকে অনেকবার ফোন করেছে।সকালেও ফোন করলো কিন্তু ফায়াজ রিসিভ করছেনা।

মেহের মন খারাপ করে ভার্সিটি চলে গেলো।ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকে দেখলো ফায়াজ ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ফায়াজকে দেখে ওর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।তারপর আবার ভাবতে লাগলো,,
–ফায়াজের কিছু মনে নেই তো,যে আল্লাহ সব যেন স্বপ মনে করে ভুলে যায়।
মেহের গিয়ে ফায়াজের থেকে কিছু দূরে দাড়িয়ে আছে।ফায়াজ মেহেরকে দেখে মেহেরের কাছে গেলো।
–আপনাকে ফোন কিরেছি পিক করলেন না কেন?
–ভাবলাম তুমি আসো সামনাসামনি দেখা করে কথা বলবো,,
মেহের মুখ গম্ভীর করে বললো,
–ওহ,,এখন কেমন আছেন?জ্বর কমেছে?
–হু ফিটফাট।তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো?
মেহের যেন সুযোগ গেলো কথা বলার।তারপর এক দমে বললো,
–রাগ কেন করবোনা বলুন।হুট করে আপনি ওধাও।চাদ,সূর্য উঠতে ভুলে গেলেও যে ছেলে ভার্সিটি আসতে ভুলে না।সে যদি এভাবে না বলে কয়ে ওধাও হয়ে যায়।তাহলে চিন্তা হবেনা?আর আপনার বন্ধুরাও ঠিকমতো কিছুই বলছেনা।কালকে শিশির ভাইয়াকে অনেক জোরাজোরি করে জানতে পারি আপনার জ্বর।তারপর আপনার ফোন নাম্বার নিলাম আপনি তো ফোন ই রিসিভ করলেন না।জানেন কত টেনশন হচ্ছিলো??
ফায়াজ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
–আমার জন্য তোমার এত টেনশন হয় জানতাম না তো,,
আমি ওদের বলতে নিষেধ করেছি।আমি তো তোমাকে জানি শুনলে হয়তো কেদেকেটে বুক ভাসিয়ে দিতে তাই বলি নি।আর রাগ করে থেকো না প্লিজ।
মেহের নাক টেনে বললো,
–আমি তো শুধু কেদে কেটেই ভাসাই।
ফায়াজ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
–জানো কাল কি স্বপ্ন দেখেছি?
স্বপ্নের কথা শুনে মেহের চুপসে গেলো।
মেহের কোনো আগ্রহ প্রকাশ করছেনা দেখে ফায়াজ বিরক্ত হয়ে বললো,
–তোমার জানতে ইচ্ছে করছেনা আমি কি স্বপ্ন দেখিছি?
–হ্যা,বলুন কি স্বপ্ন দেখেছেন?
–তোমাকে দেখেছি।আর তোমার ছোয়ায় আমি আবার সুস্থ হয়ে গিয়েছি।
দেখি যে তুমি আমার পাশে বসে ছিলে হটাৎ করেই চলে যাচ্ছিলে আমি তোমার হাত ধরে আটকাই তারপর একটানে বুকে জড়িয়ে নেই।তুমিও আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলে তারপর,,

–হয়েছে হয়েছে,,আর বলতে হবে না ,
মেহের ফায়াজকে থামিয়ে দিলো।
ফায়াজ বাকা হেসে বলে,আমিও তোমাকে পুরোটা বলতাম না।যাইহোক তোমার জন্যই সুস্থ হয়ে উঠেছি।

শিশির ওর জিএফের সাথে কথা বলছিলো ফায়াজ আর মেহেরকে দেখে ওদের কাছে এলো।
–মেহের তুমি কাল একাই ফায়াজের বাসায় গিয়েছিলে?
শিশিরের কথা শুনে মেহেরের গলা শুকিয়ে গেলো।ফায়াজের দিকে একবার চেয়ে মাথা নামিয়ে নিল।
ফায়াজ অবাক হয়ে শিশিরকে বললো,মেহের আমার বাসায় গিয়েছে মানে?
–কেন যায়নি।মেহের তুমি যাওনি?আমার থেকে যে তুমি এড্রেস নিলে যাওয়ায় জন্য।কি অস্থিরটাই না ছিলে তুমি।
ফায়াজ একবার মেহেরের দিকে আরেকবার শিশিরের দিকে তাকাচ্ছে।
–মেহের তুমি,,,
মেহের হন্তদন্ত হয়ে বলে,,ঘন্টা পরে গেছে।আমাকে ক্লাসে যেতে হবে।বলেই মেহের কেটে পরল।
শিশির তারপর ফায়াজকে সব খোলে বলল।
ফায়াজ মৃদু হেসে গালে হাত দিয়ে মনে মনে বললো,
–আচ্ছা তাহলে স্বপ্ন ছিলো না।তুমি ছিলে?এবার আর তোমাকে ছাড়ছিনা।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here