অনুভবে আজো তুমি🍁🍁 পর্ব-১৬

0
1025

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১৬
ফাবিহা নওশীন

ফায়াজ সকাল ৭টায় এয়ার্পোরটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।মেহেরকে ছোট্ট করে একটা মেসেজ করে প্লেনে উঠে পড়ে।দীর্ঘ সময় জার্নি করে লন্ডনের বাসায় পৌছায়।ফায়াজ ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে মম,বাবা,আদরের ছোট বোনের সাথে গল্প করে রেস্ট নিতে নিজের রুমে যায়।সারাদিনের জার্নির ক্লান্তি দুচোখে ভর করে।কে জানতো এপাশের মানুষটি যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অপর পাশে দুচোখ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।ফায়াজের ঘুম ভাংলো বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায়।ঘুম ভাংতেই মেহেরের কথা মনে পড়লো। ওকে ফোন করতে গিয়েও ফোন করলো না।

–মেহের তো বলেছিলো গতকাল ভার্সিটি যাবেনা।আজকে তাহলে নিশ্চয়ই ভার্সিটি যাবে এখন রেডি হচ্ছে হয়তো ফোন করে বিরক্ত করার দরকার নেই।১০টার দিকে ফোন করবো।ভার্সিটি টাইম।
ফায়াজ ১০টার দিকে ফোন করে কিন্তু মেহেরের ফোন অফ।ফায়াজ ভাবলো হয়তো ফোন চেঞ্জ করেনি।দেখে এসেছিলো ফোনে প্রব্লেম দিচ্ছে।মেহেরও বারবার করে বলেছে ফোন অফ পেলে যেন চিন্তা না করে।কিন্তু ওর মন মানছেনা।আর ওর ফ্রেন্ডরাও তো ভার্সিটি যায়নি।ভেকেশন পেয়ে সবাই ঘুরতে চলে গেছে।ফায়াজের হটাৎ মনে পড়লো সামিরার কথা।সেদিন মেহের ওর ফোন থেকে সামিরাকে ফোন করেছিলো ওর নাম্বার আছে।ফায়াজ সামিরাকে ফোন করলো।
সামিরা জানালো মেহের আজও আসেনি।আর ফোন ও করেনি।ফায়াজ ভাবছে আজো কি শোক পালন করবে।আসেনি কেন?ফায়াজ সামিরাকে বললো, মেহের ফোন করলে যেন বলে ফায়াজ ওকে ফোন কতেছিলো ও যেন ফায়াজকে ফোন করে নেয়।পুরো দিনটা ফায়াজের অস্থিরতা মধ্যে দিয়ে পার হলো।সারাদিনে অনেক বার ফোন করেছে বারবার বন্ধ বলছে।ওর ইচ্ছে করছে ছুটে মেহেরের কাছে চলে যেতে।২টা দিন,১টা রাত পার হয়ে গেলো মেহেরের সাথে কথা হয়না।যার সাথে একদিন কথা না বলে থাকতে পারেনা তার সাথে ২টো দিন না কথা বলে থাকা অনেক কষ্টকর।
ঘুম নেই,খাওয়া নেই,বারবার ফোন করেই চলেছে কিন্তু মেহেরের কোনো খোজ নেই,সামিরাও বারবার বলছে জানেনা।

পরেরদিন ও ভার্সিটি টাইমে সামিরাকে ফোন করলো।
–হ্যালো সামিরা,মেহেরের কোনো খবর?
–না ভাইয়া,ফোন অফ।আমি ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ সহ সব সোসাইল সাইটে মেসেজ,কল দিয়েছি কিন্তু কোথাও নেই।ওর ফোন না হয় নষ্ট কিন্তু ল্যাপটপ,,আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
–ও তো এমন করেনা।কিছু হলো না তো।আমি তো চিন্তায় চিন্তায় শেষ।তুমি একটু ওর বাসায় গিয়ে খোজ নেও।ভার্সিটি শেষে ওর বাসায় যেও প্লিজ।
–কিন্তু আমি তো ওর বাসা চিনি না।কখনো যাইনি।
–তোমাকে শিশির নিয়ে যাবে।তোমার কোনো সমস্যা হবেনা।আমার উপর ভরসা করতে পারো।তুমি আমার বোনের মতো।প্লিজ।
সামিরা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
–আচ্ছা।
–আচ্ছা,ক্লাস শেষে শিশির তোমাকে নিয়ে যাবে।রেডি থেকো।
–আচ্ছা।

সামিরা ক্লাস শেষে শিশিরের সাথে মেহেরের বাসায় গিয়ে তালা দেখতে পায়।ওয়াচম্যানকে জিজ্ঞেস করলে বলে আত্মীয় বাসায় বেরাতে গেছে।
সামিরা ফায়াজকে ফোন করে বলে,
–পুরো ফ্যামিলি বেরাতে গিয়েছে কোনো আত্মীয়র বাসায়।হয়তো হুট করে গিয়েছে তাই জানাতে পারেনি।আর ফোন ও নিতে পারেনি।

ফায়াজ কিছুটা নিশ্চিত হলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারলো না।এই মেয়ে পুরো তিনটা দিন কোনো রকম যোগাযোগ ছাড়া কিভাবে আছে।বারবার ফোন করেই যাচ্ছে।মেসেজ,সকল সোসাইল সাইটে মেসেজ,কল দিয়েই যাচ্ছে।ফায়াজের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে মেহেরের উপর।আবার ভয়ও হচ্ছে।মেহেরকে হারানোর ভয়।
আরো একটা দিন কেটে যাচ্ছে।ফায়াজ টিকিট বুক করে ফেলেছে।প্যাকিং করে বের হয়ে গেছে।ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠছে।
–আমি আসার আগে সব খোজ নে।আমি এসে সব খোজ চাই।যদি আমি না জানতে পারি মেহের কোথায় তাহলে পুরো দুনিয়া জ্বালিয়ে দেবো।মাইন্ড ইট।

ফায়াজের লোক-বন্ধুরা খোজ নেওয়া শুরু করলো।ফায়াজের ৩-৪জন বন্ধু মেহেরের এক প্রতিবেশি যে কিনা জিসানের আত্মীয়র আত্মীয় তার সাথে কথা বলতে আসে।তারপর তার কাছ থেকে যা শুনে তা শুনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না।
তার ভাষ্যমতে,
মাহমুদ জামানের বড় মেয়ের পারিবারিক ভাবে মার্চের ২৮তারিখে বিয়ে হয়ে গেছে।আর ওনার পুরো ফ্যামিলি অন্য কোথাও শিফট হয়ে গেছে।
এ কথা শুনে ওদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।ওদের কি রিয়েক্ট করা উচিত বুঝতে পারছেনা।ফায়াজ তো ২৮তারিখেই লন্ডন যায় আর ওইদিন কিভাবে?
জিসান জিজ্ঞেস করে,হটাৎ করেই বিয়ে?
ওই লোক বললো,
আমি তো শুনেছি এইচএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে ঠিক ছিলো।
সবাই অবাক হয়ে যায়।ফায়াজকে কি উত্তর দিবে?কি বলবে?ফায়াজ শুনলে তো পাগল হয়ে যাবে?মরে যাবে।

ফায়াজের প্লেইন ল্যান্ড করেছে।এয়ার্পোটে যাওয়ার সাহস কারো হয়নি।ফায়াজ এয়ার্পোট থেকে ফোন করে সবাইকে আসতে বলে।তখন অনেক রাত।
ফায়াজকে ওর বন্ধুরা পড়ে সব জানাবে বলে জানালো।কিন্তু ফায়াজ মানতে রাজী না।ও মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিলো।ফায়াজ গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
–বলবি কি হয়েছে?না আমি খারাপ কিছু করে ফেলবো?
সবাই মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।সবার নিরবতা ফায়াজকে অজানা ভয় আঁকড়ে ধরছে।ওর শরীরে শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে।
ফায়াজ নিজেকে সামলে করুন সুরে বললো,
–প্লিজ,বল।আমি আর পারছিনা।
বলেই ফায়াজ কেদে ফেললো।
ইমরুল আর সহ্য করতে বা পেরে বললো,
–মেহের তোকে ধোকা দিয়েছে।ও তোকে কখনো ভালোবাসেনি।শুধু অভিনয় করেছে।ও একটা ফ্লট।
–ইমরুল,,মেহেরের নামে বাজে,,
–বাজে কথা,,,আমি বাজে কথা বলছি ওদের জিজ্ঞেস কর।মেহের কি করেছে।যাকে এত ভালোবেসেছিস,এত ভালোবেসেছিস সে তোকে ধোকা দিয়েছে।বিয়ে করে অন্যের হয়ে গেছে।
ফায়াজ বোবা হয়ে গেছে ইমরুলের কথা শুনে।ওর মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না।
ফায়াজ কাপা কন্ঠে বললো, বিয়ে!!কি বললি?
সবাই চুপ।
ফায়াজ চিতকার করে বলে,বল!!
জিসান বললো, তুই যেদিন লন্ডনের প্লেনে উঠেছিস সেদিন মেহের বিয়ের পীড়িতে বসেছে।ওইদিন ই ওর বিয়ে হয়ে গেছে।আর ওর ফ্যামিলি অন্য কোথাও শিফট হয়ে গেছে।
ফায়াজ হালকা হেসে বললো,
কি বলছিস?মেহের আমার সাথে আগেরদিন রাতেও একঘন্টা কথা বলেছে।মজা করছিস?
ইমরুল বললো,
–তোর কি মনে হচ্ছে আমরা এমন সিচুয়েশনে মজা করবো।ওর বিয়ে হয়ে গেছে।ওর বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক ছিলো।ও এসব কাউকে জানায়নি।ও ভালো করেই বুঝে গিয়েছিলো তুই ওকে ছাড়বিনা তাই ও তোর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছে।তোকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে।তারপর সুযোগ বুঝে বিয়ে করে চলে গেছে।ও আগে থেকেই সব প্ল্যান করে রেখেছিলো বিয়ের।নয়তো তুই লন্ডনে গেলি সেদিন ই বিয়ে করতে যাবে কেন।ও জানতো তুই জানতে পারলে কিছুতেই বিয়ে হতে দিবিনা।তাই লন্ডনে গেলি আর এই ফাকে বিয়ে করে চলে গেলো।

ফায়াজের এসব বিশ্বাস ই হচ্ছেনা।মেহের কিছুতেই এসব করতে পারে না।ও হয়তো স্বপ্ন দেখছে।ওর এতদিনের ভালোবাসা,বিশ্বাস কিছুতেই এভাবে হেরে যেতে পারেনা।মেহের কিছুতেই ওর সাজানো স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারেনা।

ফায়াজ চিতকার করছে,,
–না,,মিথ্যে মিথ্যে সব মিথ্যে।মেহের কিছুতেই আমাকে ধোকা দিতে পারেনা।ও আমাকে খুব ভালোবাসে।খুব।তোরা কেন মিথ্যে বলছিস?জানিসনা আমি মেহেরকে কত ভালোবাসি।ও আমার জন্য কি?আমি ওকে ছাড়া বাচবোনা।
ফায়াজ কাদতে কাদতে রাস্তায় বসে পড়ল।ওর বন্ধুরাও বসে পড়ল ওর সাথে।ফায়াজকে এভাবে কাদতে দেখে ওর বন্ধুরাও কেদে দিলো।

–কেন বাচবি না?ও তো বেচে আছে।সুখে আছে।ভালো আছে।তুই ও থাকবি।ভালো থাকবি।ও একটা ঠক,প্রতারক,বেইমান।ওকে ভুলে যা।

ফায়াজ চিতকার করে কাদছে।কিছুতেই মানতে পারছেনা মেহের ওর সাথে এটা করেছে।ফায়াজের সাথে ওর বন্ধুরাও কাদছে।ওর কান্নার শব্দ রাতের নীরবতায় চারদিকে প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
ফায়াজ কান্না থামিয়ে উঠে দাড়ালো।তারপর আচমকা গাড়ির গ্লাসে হাত দিয়ে পরপর দুবার ঘুষি দিলো।গাড়ির কাচ ঝনঝনিয়ে পরলো।কাচে ফায়াজের হাত কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে।ওর বন্ধুরা ওকে দৌড়ে গিয়ে ধরলো ফায়াজের নিস্তেজ শরীর ঢলে পড়লো।

ফায়াজ যখন চোখ মেলে তখন নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করলো।হাতে ব্যাথা অনুভব করছে।হাতে ব্যান্ডেজ করা।উঠে বসলো।হটাৎ ওর সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো।মেহের আর ওর নেই।মেহের ওর ভালোবাসা কে নিয়ে,ওর পবিত্র অনুভূতি নিয়ে খেলা করেছে।ওর গাড়িতে ওর পাশে বসে মেহেরের সামিরার সাথে বলা কথাগুলো মনে পরে গেলো।তারপর ওর মনে হলো মেহের ওকে সত্যি সত্যিই ধোকা দিয়েছে।
ফায়াজের নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
ও উঠে দাড়ালো তারপর রাগের চুটে পুরো ঘর তছনছ করে দিলো।মেঝেতে ভেঙে থাকা কাচের টুকরো নিয়ে দু’হাতের রগ বরাবর সমস্ত শক্তি দিয়ে কয়েকবার টান দিলো।তারপর বললো,
–মেহের,তোমার ভালোবাসায় আমি খুন হয়ে গেলাম নিজের হাতে।
ভাংগচুরের শব্দ পেয়ে ওর বন্ধুরা এসে দেখে ফায়াজ রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।রক্তে রুম ভেসে যাচ্ছে।ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়া হলো।ওর বাবা-মাকে সব জানানো হলো।মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ২দিন পর জ্ঞান ফিরলো।
জ্ঞান ফিরার পর ফায়াজ আবারো নিজের ক্ষতি করতে চাইলো।কিন্তু ওর মা,ওর ফ্যামিলির আকুতির কাছে হেরে গেলো।ও শিশিরকে জিজ্ঞেস করেছিলো মেহের এখন কোথায়?
শিশির মিথ্যে বলেছিলো যাতে ফায়াজ মেহেরের সামনে আর না যায়।যাতে নতুন করে ফায়াজ আর কোনো সমস্যায় না পরে মেহের ঘটিত ব্যাপারে তাই বললো,
–শুনেছি বাহিরে সেটেল্ড হয়েছে।তুই ওকে নিয়ে আর ভাবিসনা।নিজেকে নিয়ে ভাব।

তারপর থেকে ফায়াজের নতুন জগৎ।মদ,নাইট ক্লাব,সব ধরনের বাজে নেশা।মদ খেয়ে টাল হয়ে থাকে।তিনবেলাই মদ গিলে।অন্ধকার জগতে হারিয়ে যেতে লাগলো।ওর ফ্যামিলি অনেক চেষ্টা করেছে ফেরানোর কিন্তু প্রতিবারই ফায়াজের একটা কথার মাঝে হার মানতে হয়েছে।
–যদি আমায় জীবিত দেখতে চাও,তবে আমাকে বাধা দিওনা।
🌞
🌙

🌝

🌼
তারপর কেটে যায় ৩বছর।ফায়াজ এখনো সেই অন্ধকার জগতেই ডুবে আছে।বাবার রাগারাগির জন্য অফিসে বাধ্য হয়েই যাচ্ছে।হটাৎ করেই জ্যামে আটকে যায়।বসে বসে বোর হচ্ছিলো।গাড়ির গ্লাস খোলে বাইরে চোখ রাখতেই ওর পুরো দুনিয়া থমকে যায়।যাকে আর কোনোদিন দেখবেনা বলে নিজেকে নিজে প্রমিস করেছিলো সেই মুখ।বুকের কোনে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো।এত দিন পর সেই মুখ।
একটা গার্লস ভার্সিটির গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে মেহের।সাদা কুর্তি,সাদা স্কাফ,কাধে লেডিস ব্যাগ।হাতে একটা বই বুঝাই যাচ্ছে এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট।মাথা নিচু করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।ফায়াজের মনে হচ্ছে না ও মেহেরকে ৩বছর পর দেখছে।ওর মনে হচ্ছে ভার্সিটির সেই প্রথম দিন যেদিন লাল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছিলো।একটা লাল পরীকে দেখছিলো মুগ্ধ নয়নে।আজ লাল পরী নয় মনে হচ্ছে শুভ্র এক টুকরো মেঘ।
তবে এত বছরে একটুও বদলায় নি।সেই চোখ,সেই নাক,ঠোঁট,স্বাস্থ্যটাও তেমননি রয়েছে।ফায়াজ শুনেছে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা মুটিয়ে যায়।কিন্তু মেহের যেমন তেমন ই রয়েছে।শুধু চেহারায় একটা ম্যাচুরিটি এসেছে।
মেহের গেইট দিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
ফায়াজ আর এক মুহুর্তও দেরি করলো না।গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।বুকের ভিতর নিভু নিভু আগুন আজ আবারো দাওদাও করে জ্বলে উঠেছে।ঠান্ডা করতে হলে ড্রিংক করতে হবে।ফায়াজ রুমে গিয়ে মদের বোতল নিয়ে বসেছে।কিছুতেই মেহের নামক শুভ্র মেঘকে ভুলতে পারছেনা।মদেও নেশা হচ্ছেনা।ফায়াজ মদের বোতল ছুরে ফেলে দিলো।ফায়াজ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।কিছুতেই ভুলতে পারছেনা ওই মুখ।
পরেরদিন একি সময়ে ভার্সিটির সামনে উপস্থিত।মেহের আজো দাঁড়িয়ে আছে।সাদা সেলোয়ার-কামিজ,সেইম গেটাবে।আজও সাদা পড়েছে।
ফায়াজ প্রতিদিন এভাবে মেহেরকে আড়াল থেকে দেখে চলে যায়।কেন এসে কিসের টানে আসে জানা নেই।এভাবে ৭-৮দিন চলে গেলো। কিন্তু ফায়াজের যেটা অবাক লেগেছে এই ৭-৮দিন প্রত্যেক দিন সাদা বিভিন্ন ডিজাইনের ড্রেস পরেছে।প্রতিদিন সাদা ড্রেসে দেখে বিরক্ত ধরে গেছে।

ফায়াজ ভাবছে,
–এই মেয়ে প্রতিদিন সাদা পরে কেন?সাদা এত প্রিয় কিভাবে হলো,?আগে তো লাল প্রিয় ছিলো।বেশিরভাগ লাল ড্রেস পড়তো।আমিও না ও কি আর সেই মেহের আছে।বিয়ে হয়েছে,পছন্দ পাল্টেছে।হয়তো বরের প্রিয় রং সাদা।বরের জন্য পরে।
ফায়াজের ওর বরের উপর বিরক্ত লাগছে কেমন লোক উনি।রোজ নিজের বউকে সাদা পরায় বিধবার মতো। ফায়াজের ইচ্ছে করে একটা লাল ড্রেস কিনে ওর সামনে ধরে বলতে,,
বরের পছন্দে সব সময় সাদা না পরে অন্য রং পরো।লাল পড়তে ভালো বাসতে।লালে তোমাকে লাল পরী মনে হতো।একটু লাল পড়ো না।কতদিন তোমাকে লাল রংয়ে দেখিনা।
তারপর ই মনে হলো কি ভাবছি এসব।ফায়াজের হটাৎ ওর বরকে দেখতে ইচ্ছে করছে।কার জন্য ওর ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে ফাকি দিয়ে চলে গেলো।
ফায়াজ ঠিক করলো মেহেরকে ফলো করবে।যেই ভাবা সেই কাজ।ছুটির পর মেহেরের অজান্তে মেহেরকে ফলো করে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।মেহের শ্বশুর বাড়ি নয় বাবার বাড়ি গিয়েছে।ফায়াজের মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়।
পরের দিনও ফলো করে কিন্তু সেই একি।বাবার বাড়ি যাচ্ছে।এভাবে কয়েকদিন ফলো করে মেহেরকে বাবার বাড়ি আবিস্কার করে।
ফায়াজের একটু খটকা লাগে।মেহেরের সাথে হাসব্যান্ডের কোনো সমস্যা চলছেনা তো?নয়তো এতদিন যাবত বাবার বাড়ি কেন?আর মেহের সবসময় সাদা ড্রেস কেন পড়ে?
ফায়াজ খোঁজ নিয়ে যা জানতে পারে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
মেহেরের বিয়ের পরেরদিন বৌভাতের পরেই ওর হাসব্যান্ড হার্ট এট্যাকে মারা যায়।তার নাকি আগে থেকেই হার্টের প্রব্লেম ছিলো।এলাকার মানুষ এ নিয়ে কানাঘুষা করতে পারে এই ভেবে মাহমুদ জামান পুরো ফ্যামিলি নিয়ে অন্য কোথাও শিফট হয়ে যায়।এক বছর পর ফিরে আসেন নিজ বাসায়।
এটা শুনে ফায়াজ এতটাই শকড হয় যে কয়েক সেকেন্ড রিয়েক্ট করতে ভুলে যায়।এই ঘটনা শুনে ফায়াজের খুশি হওয়া উচিত না কষ্ট পাওয়া উচিৎ বুঝতে পারছিলো না।তবে কিছু একটা ভেবে পৈচাশিক হাসি দেয়।
তারপর ওদের বিয়ে, বাকিটা তো আপনারা জানেনই।

বর্তমান,,,,

চলবে,,

(আজকে অতীত বর্তমান মিলিয়ে একটা পর্ব দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু গল্প লিখার পর ডিলিট হয়ে যায়।আজ দেবোনা ভেবেছিলাম।সবার অনুরোধে আবারো লিখলাম।তাই শুধু অতীতটাই দিলাম।আগামীকাল বর্তমান দেবো।প্লিজ কেউ রাগ করবেন না।আর আরেকটা কথা মেহের কেন বিয়ে করেছে এটা নিয়ে যাদের অভিযোগ তাদের বলছি।আপনারা গল্প পড়ে এটুকু তো জানতে পেরেছেন মেহের শান্তস্বভাবের,ভীতু একটা মেয়ে।বাবাকে খুব ভয় পায়।ওর বাবা কেমন এটাও জানতে পেরেছেন।বাবা জেনে যাওয়ায় হুট করেই বিয়ে ঠিক করে।তাই বাবার চাপেই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিয়ে করে।ফায়াজ দেশে ছিলো না তাই হেল্প ও পায়নি।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here