অনুভবে আজো তুমি🍁🍁 পর্ব-১৮

0
1044

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১৮
ফাবিহা নওশীন

অপরপাশ থেকে কিছুটা ঝিমিয়ে বললো, নিতু।
–নিতু!!তাহলে আপনি সেই মেয়ে যার সাথে ওইদিন,,,
মেয়েটা মুখের কথা কেরে নিয়ে বললো,
–আরে আপনি দেখছি আমাকে চিনেন?তার মানে আপনি সব কিছু জানেন?কেমন বউ আপনি? আপনার বর অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছে আর আপনি কিছুই বলছেন না।চুপচাপ মেনে নিচ্ছেন।

এর উত্তরে মেহের কি বলবে সে তার জানা নেই।তাই চুপ করেই রইলো।বারবার গলা ভারী হয়ে আসছে।
–কি হলো চুপ করে আছেন কেন?আপনি আপনার স্বামীকে ধরে রাখতে পারেন না?তার অন্য মেয়ের প্রয়োজন কেন হয়?আপনি তার চাহিদা মেটাতে পারছেন না আর সে জন্য অন্য মেয়েরা আপনার স্বামীর শিকার হচ্ছে।আপনার তো কোনো যোগ্যতাই নেই দেখছি।আপনার স্বামী পরকীয়া করছে?নস্টা পুরুষ।আর আপনি,,,,

মেহেরের এবার প্রচুর রাগ হলো,
–এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো।আমার স্বামী যদি নস্টা পুরুষ হয় তবে তুমি কোন ধোঁয়া তুলসি পাতা?একটা সুদর্শন,কোটি পতি ছেলে একটু তাকালো আর অমনি তার প্রেমে পড়ে গেলে।আই লাভ ইউ,জানু সব হয়ে গেলো।তাকে নিজের হাতে বন্ধি করতে সব বিসর্জন দিয়ে দিলে?
নির্লজ্জ,বেহায়া, অসভ্য মেয়ে।এসব করার আগে খোজ নিলে না ছেলেটা কে কেমন,বিবাহিত কিনা?সুন্দর গেটাব আর পয়সা দেখে ফিদা হয়ে সব বিকিয়ে দিয়েছো?এখন আবার আমাকে কথা শুনাতে এসোছ?লোভী,থার্ডক্লাশ বেয়াদব মেয়ে।তোমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার সাথে সব বুঝে নেও।আমাকে ফোন করে যদি আর বিরক্ত করো তবে ভালো হবেনা।

–প্লিজ,প্লিজ আপু।ফোন রাখবেন না।আমার অবস্থা বুঝার চেষ্টা করুন।

–তুমি কি চাইছো তোমাকে এখন আমার বরের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে আমার সতিন বানাই?যদি এসব ভেবে থাকো তবে ভুল ভেবেছো।

–ওই রকম ছেলেকে বিয়ে করতে কে চাইছে?আমি তো শুধু মুক্তি চাই।ওনাকে ধরে রাখবেন।আমার আসেপাশে যেন আর না আসে।আপনার ওই চরিত্রবান স্বামীকে আপনিই রাখুন।সে যেন নিরীহ মেয়েদের জীবন নিয়ে আর না খেলে।

–নিরীহ?? ফার্স্ট ডেটে যে মেয়ে হোটেলে দেখা করা অফার করে সে আর যাইহোক নিরীহ মেয়ে হতে পারেনা।
মেহের আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।

মেহের ফ্লোরে বসে পড়ল।
–তুমি এতদিন আমার সঙ্গে যা করেছো সব মেনে নিয়েছি কিন্তু আজ যেটা হলো,,,
তুমি কি সেই ফায়াজ?আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে তুমি কিনা সেই পুরুষ যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম।যে কিনা আমাকে বলেছিলো আমিই একমাত্র মেয়ে শুধুমাত্র যার কিনা তোমার ওই বুকে আর মনে জায়গা থাকবে।অথচ ওখানে আজকাল কত মেয়ে জায়গা পায়।
তুমি মিথ্যাবাদি।তোমাকে আমি এর জন্য ক্ষমা করবোনা।তুমি আমাকে অপমান করেছো।অন্য নারীতে আসক্ত হয়েছো।তোমাকে আজ এর জবাব দিতেই হবে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে।মেঝেতে বসে বেডের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।মেহের সারাদিন ওইভাবেই ছিলো।নাওয়া খাওয়া কিছুই হয়নি।সারাদিন কাদতে কাদতে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ফায়াজ শব্দ করে দরজা খোলে রুমে ঢুকলো।মেহের শুনেও যেন শুনলোনা।ও ওর মতোই রয়েছে।
ফায়াজ মেহেরকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো।চোখ বন্ধ করে রেখেছে,শরীর ছেড়ে দিয়ে বসে আছে।ফায়াজ সামনে গিয়ে মেহেরকে ডাকলো।
মেহের চোখ না খোলেই বললো,
–আজ রান্না হয়নি।বাইরে থেকে খেয়ে আসুন।তারপর আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

–হ্যা,বলো।শুনছি।
(দেখি তুমি কি বলো।আমি শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।মনে মনে বলছে ফায়াজ)

মেহের ওভাবেই রয়েছে।ফায়াজ মেহেরের কাধে হাত দিতেই মেহের এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে দিলো।আহত বাঘিনীর মতো উঠে দাড়ালো তারপর চিতকার করে বললো,

–ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি।আপনার ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছুবেন না।বাইরের মেয়ের সাথে নোংরামি করে আসেন আর তারা আমাকে ফোন করে আজেবাজে কথা বলবে।কেন?কেন আমাকে এসব শুনতে হবে?
এতটা চরিত্রহীন লম্পট কিভাবে হলেন?কিভাবে পারলেন?ছিঃ। আমার কথা একবার ও ভাবলেন না?এতটাই ঘৃণা করেন যে আমাকে এভাবে অপমান করতেও বাধলোনা?আপনি জানেন একটা মেয়ের জন্য এটা কতটা অপমানের, লজ্জার?তার স্বামী বাইরের মেয়েদের সাথে রাত কাটায়।

ফায়াজ মৃদুস্বরে বললো,
–এখন আর এসব কোনো ব্যাপার না।অহরহ এসব চলছে।বাদ দেও।
–আপনি এতো নির্লিপ্ত ভাবে কিভাবে বলছেন?কেন এমন করছেন?
মেহের এবার কেদে দিলো।
–কি করেছি আমি? আমার সাথে এমন কেন করছেন?
ফায়াজ মেহেরকে ধরে বললো,
–কি করেছো জানোনা? আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছো।
–আমি কারো জীবন ধ্বংস করিনি।আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে।আমি আপনার সাথে কিচ্ছু করিনি।না আমি আপনাকে ঠকিয়েছি।আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে করেছি।বাবা আমাকে বাধ্য করেছে বিয়েটা করতে।আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি।
কাদতে কাদতে মেহের ফায়াজের পায়ের কাছে বসে পড়ল।
ফায়াজ হোহো করে হেসে দিলো,এই সব কথা অন্য কাউকে গিয়ে বলো যে তোমাকে বিশ্বাস করবে।
–আমি মিথ্যা বলছিনা।বিশ্বাস করুন।আমার কথাগুলো একটু শুনোন।
–আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা।তোমার কথার জালে আমাকে আর ফাসাতে পারবেনা।
মেহেরের রাগ উঠে গেলো।
–শুনতে চান না?ওকে ফাইন।বলবো না।আমি আপনাকে কিছুই বলবোনা।আপনি জানতে চাইলেও না।তবে আপনাকে এর জন্য পস্তাতে হবে।মিলিয়ে নিয়েন।
আপনার ওই পতিতারা যেন আমাকে আর না বিরক্ত করে।আর আমি আপনার মতো নোংরা মানুষের সাথে একি রুমে থাকতে পারবো না।আমি আলাদা রুমে থাকবো।

ফায়াজ মেহেরের ডান বাহু চেপে ধরে বললো,
–চেষ্টাও করোনা।তাহলে আমি তোমার হাত পা ভেঙে এই রুমে বসিয়ে রাখবো।

–কেন?আমাকে আপনার সাথে কেন রাখতে চান?আপনার ওই নষ্টামির লীলা শুনানোর জন্য?

রাগে ফায়াজের কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।মেহেরকে সজোরে থাপ্পড় মেরে দিলো বা গালে।মেহের তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো।কান ঝিমঝিম করছে।গাল ফেটে যেন রক্ত পড়ছে।সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।ভার্সিটিতে থাকতে একটা ছেলের সাথে বসে ছিলো বলে ওকে থাপ্পড় মেরেছিলো।

মেহের উঠে দাড়ালো তারপর বললো,
–আপনি আমাকে কেন মারলেন?ভুল কি বলেছি আমি?
ফায়াজ নিজেকে সামলে বললো,সামান্য বিষয় নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করতে তোমাকে কে বলেছে?এখন এটা একটা ফ্যাশন।ঘরে একজন বাইরে একজন।

–কি বললেন?ঘরে একজন বাইরে আরেকজন?এটা যদি আমি করতাম তাহলে মেনে নিতে পারতেন?আমি যদি বাইরের পুরুষের সঙ্গে ফিজিক্যালি ইনভলভ হই?

ফায়াজ মেহেরের কথায় হা হয়ে যায়।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।চিতকার করে বললো,
–মেহের,,,

–কি বলুননা,বলুন?

ফায়াজ আবারো মেহেরকে চেপে ধরলো,
–নিজের পরিচয় ভুলে গেছো?তুমি আমার দাসি।আর একজন দাসি শুধু একজনের ই হয়।একজন দাসি দুজন ব্যবহার করেনা।তাই তুমি আমার।শুধু আমার।অন্য কারো আসেপাশে ঘেষলে মেরে পুতে দেবো।আই মিন ইট।

মেহেরের কানে বাজছে,তুমি আমার,শুধু আমার।মেহের আবারো ঢুকতে কেদে উঠলো।

–আপনি সব শেষ করে দিয়েছেন।আপনি অন্য নারীতে,,,,আমি আপনাকে ক্ষমা করবো না।আপনি কিভাবে এমন জঘন্য কাজ করলেন?

–তুমি যেভাবে করেছিলে?

মেহের চোখ বড়বড় করে তাকালো।কান্না থামিয়ে দিয়ে বললো,
–কি বললেন আপনি?আমি,,,

–কেন?বিয়ে করেছো বাসর করেছো?তোমার যেমন জ্বলছে আমার তার দ্বিগুণ জ্বলেছে।আমি তোমাকেও জ্বালাবো।

মেহের যেন ফায়াজের কথা শুনে বোবা হয়ে গেলো।
তারপর শান্ত কন্ঠে বললো,সব ছেলেরা আপনার মতো চরিত্রহীন হয়না।বিয়ে করে প্রথম রাতেই বউয়ের উপর পুরুষত্ব দেখায়না।সে আমাকে আপনার মতো অপমান করে নি।
আর কি বলছিলেন আপনি আমাকে জ্বালাবেন?আমিও প্রস্তুত আমিও দেখতে চাই আপনি কত নিচে নামতে পারেন।আমিও হার মানবো না।আপনার দেওয়া আগুনে জ্বললেও পুড়ে নিঃশেষ হবোনা।

মেহের কথাটি বলেই ঢলে পড়লো।ফায়াজ সাথে সাথে মেহেরকে ধরে পাজা কোলে করে বিছানায় শুয়ে দেয়।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে মেহেরের কপালে চুমু আকে।
তারপর ফ্রেশ হয়ে মেহেরের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলায়।
–মেহের,আই এম সরি।তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।কিন্তু দিতে হচ্ছে।কারণ একবার তোমাকে ভালোবেসে ঠকেছি আর ঠকতে চাইনা।আর কষ্ট পেতে পারবোনা।এবার আমি ভালোভাবে তোমাকে যাচাই করেই এগুবো।যদি তুমি সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হও তবেই আমি তোমার সাথে নতুন জীবন শুরু করবো।আই ওয়ান্ট গিভ ইউ সেকেন্ড চান্স।এন্ড ইটস গুড,আজকের পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হয়েছো।

মেহেরের পাশে মেহেরের হাতের উপর শুয়ে রইলো।তারপর আবার কি ভেবে উঠে বসে বারান্দায় গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে মিহুকে ফোন করলো।
–হায় ভাইয়া,কেমন আছেন?
–ভালো।তোমার কি খবর?
–ঠিকঠাক।আপি কেমন আছে?
–তোমার আপুর জন্যই ফোন করা।
–কিছু হয়েছে?
–আসলে তোমার আপু একটু অসুস্থ।সারাদিন একা বাসায় থাকে।ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না।আমিও অফিসে থাকি।তাই একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে।
–আপুকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসে কিছুদিন থেকে যান।
–সেটা সম্ভব নয়।আমার অফিসে অনেক কাজ।আর তোমার আপুকে যে রেখে আসবো তা সম্ভব নয়।ইউ নো হাও মাচ আই লাভ হার।একদিন না দেখে থাকতে পারবোনা।তাই বলছিলাম তুমি এসে কয়েকদিন থেকে যাও।
–আমার পড়াশোনা আছে,পরীক্ষা কিছুদিন পর।আর বাবা,
–আমি ম্যানেজ করে নিবো।তুমি বেশিদিন নয় জাস্ট ২-৩দিন।তোমার কাছ থেকে আমার একটু ফেবার চাই।
–কি ফেবার?
–তোমার আপুকে নিয়ে।আগে আসো তো।
–আচ্ছা।

ফায়াজ মেহেরের কাছে গিয়ে থাপ্পড় দেওয়া গালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–আমি তোমাকে মারতে চাইনি কিন্তু তোমার কথা শুনে রাগ উঠে গিয়েছিলো।সরি,,
তারপর গালে ওষুধ লাগিয়ে দিলো।
তারপর বললো,
১বছর আমার সাথে থেকে ভালোবাসতে পারোনি,কিন্তু এই কয়দিনে কিভাবে?

চলবে,,,

(মিহু আসার পর আবার কি হবে,,,আল্লাহ ই জানে🙆🙆।রাতে আরেক পার্ট দেবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here