অনুভবে আজো তুমি🍁🍁 পর্ব-১০

0
1033

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১০
ফাবিহা নওশীন

মেহের এদিক সেদিক ঘুরছে আর নিচের দিকে চেয়ে কিছু খুজছে সাথে সামিরাও।এই দুমাসে সামিরা আর মেহের মোটামুটি ভালো বন্ধুতে পরিনত হয়েছে।সামিরা ওকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।সেহেতু সামিরা আগে থেকেই এখানে আছে তাই সবকিছু ওর চেনাজানা।ফায়াজ দূর থেকে ব্যাপারটা লক্ষ্য কিরছে।মেহেরকে কিছুটা চিন্তিত লাগছে।ফায়াজ আর না পেরে এগিয়ে গেলো।

–এই কাদুনি মেয়ে কি খুজছো?
মেহের চমকে ফায়াজের দিকে তাকালো।অনেক দিন পরে দেখলেও চিনতে পারছে এই সেই তামিল হিরো।
–জ্বী।
–জ্বী কি??
সামিরা পাশ থেকে বললো,
–আমি বলছি আসলে ভাইয়া ইনকোর্স পরীক্ষার জন্য ফি জমা করেছে অফিস রুমে।আর সেটার রশিদ জমা দিতে হবে কিন্তু ও ওর রশিদ খোজে পাচ্ছেনা।
–ওহ,,এই ব্যাপার।মেহের কাম ওইথ মি।
মেহের একবার সামিরার দিকে তাকালো।সামিরা চোখের ইশারায় যেতে বললো।মেহের ফায়াজের পিছে হাটা ধরলো।
কিছুদূর যেতেই ফায়াজ ধমক দিয়ে বললো,
–এই মেয়ে,,তুমি কি আমার এসিস্ট্যান্ট?পিছু পিছু হাটছো কেন?সাথে হাটো।
মেহের ফায়াজের সাথে সাথে হাটছে।সবাই ওদের দিকে চেয়ে আছে।ব্যাপারটা ফায়াজের চোখে না পড়লেও মেহের খেয়াল করছে।ফায়াজ সামনের দিকে চোখ রেখে হাটছে।সবাই যেভাবে চেয়ে আছে মনে হচ্ছে ওরা এলিয়েন দেখছে।মেহেরের ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা।ফায়াজ অফিস রুম থেকে মেহেরকে নতুন রশিদ তুলে এনে দিলো।
মেহের ধন্যবাদ দিয়ে রশিদ নিয়ে দৌড় দিলো।ফায়াজ মেহেরের এমন কান্ডে অবাক হলো।তারপর মুচকি হেসে বললো,
–তুমি পালাতে চাইছো আমার কাছ থেকে? পালাও।কতদিন পালাবে?

মেহের হাপাতে হাপাতে ডিপার্টমেন্টে কাজ কমপ্লিট করে বের হতেই কয়েকটা মেয়ে এগিয়ে এলো। তারপর বললো,
–ফায়াজ কি হয় তোমার??
–কেউনা।
একজন অবাক হয়ে বললো
–কেউ না??তাহলে তুমি ওর সাথে কি করছিলে?তোমাকে নিয়ে অফিসরুমে কেন গেলো??নিশ্চয় চেনাজানা,রিলেটিভ টাইপ কিছু হবে??
মেহের মাথা নাড়িয়ে বললো,
উহু।আমার কেউ হয়না।আমি পার্সোনালি ওনাকে চিনি না।ওনি জাস্ট আমাকে হেল্প করেছে।

আরেকজন বললো,
–মিথ্যে বলছো।নিশ্চয়ই ফায়াজ তোমাকে বলেছে সবাইকে বলতে যে তুমি ওনাকে চিনো না??তাই না??যাতে কেউ তোমার কাছে থেকে ওনার নাম্বার,ইনফরমেশন না নিতে পারে?তাই তো??

মেহেরের এবার রাগ হলো,
–আরে দূর,,বললাম তো চিনি না।বিশ্বাস না হলে ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।
–ঠিক আছে।আমাকে একটু কথা বলিয়ে দেও।
তখনই জিজ্ঞেস করে নিবো।
মেহেরের প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। মেহের কিছু না বলে হাটা ধরলো।
–উফফফ কি ঝামেলায় পড়েছি বাবা।একটু হেল্পের বিনিময়ে এতো ঝামেলা??
মেহের ক্লাসরুমে বসে পানি পান করছে।তখনই সামনের বেঞ্চের মেয়ে বলে উঠলো,
–মেহের আজকে নাকি ফায়াজ তোকে হেল্প করেছে?
মেহের ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
–হুম।
–ওয়াও!!ইশ আমাকে যদি এভাবে সাহায্য করতো।আই এম ম্যাট ফর হিম।মাই ড্রিম বয়।মাই ফার্স্ট ক্রাশ।আই জাস্ট লাভ হিম।

–এইগুলা কি বলছো?মাথা ঠিক আছে?

–ফায়াজকে দেখলে কারো মাথা ঠিক থাকেনা।এই কলেজের কোনো মেয়ের ই না।কত মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে খোদাই জানে।

মেহেরের আর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা তাই উঠে দাড়ালো।বারান্দায় গিয়ে সামিরার সাথে কথা বলছে।তখন আবার আরেক মেয়ে এলো মেহেরের সাথে কথা বলার জন্য।
–আচ্ছা,তুমি কি ফায়াজের জিএফ??
মেহের চোখ বড়বড় করে বললো,
–নাতো,,
–সেই,,তুমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী হলেও সিম্পল।ফায়াজের সাথে কোনো হট,সেক্সি মেয়ে মানায় অনলি সুন্দরী নয়।
সামিরা মেহেরের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,
–এই যাও তো।
মেয়েটা চলে গেলো।
মেহের সারিমার দিকে চেয়ে বললো,
–আ’ম সো টায়ার্ড।কেন যে ওনার হেল্প নিতে গিয়েছিলাম।সবার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমি বিরক্ত সাথে ক্লান্ত।মেয়েগুলো কি পাগল?
–হাহা,,২দিন পর ই তো ভ্যালেন্টাইন্স ডে।তখন দেখবি এই মেয়েগুলো কি করে।
–উফফ।চল ক্লাসে যাই।
পরেরদিন ফায়াজ আর আড়ালে থেকে নয় খোলাখুলি ভাবেই মেহেরকে দেখছে।মেহের ও ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে।ও যেখানে যাচ্ছে ফায়াজকে দেখতে পাচ্ছে।কাকতালীয় ভেবে আর বিষয়টি পাত্তা দিচ্ছেনা।
কিন্তু তার পরের দিন ও একি ঘটনা।মেহের এটাকেও কাকতালীয় ভেবে উড়িয়ে দিলো।ঘাটাঘাটি করলোনা।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে মেহের কালো রঙের ড্রেস পড়ে এসেছে।সামিরা মেহেরকে দেখে অবাক।
–ওই আজকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
–তো??
–তো মানে কি?তুই কালো রঙের ড্রেস পড়েছিস কেন?আজকে কি শোক দিবস।
— শোন,আমার কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কোনো স্পেশাল ডে নয় যে কি পড়বো না পড়বো তা নিয়ে এত মাথাব্যথা করবো।তবুও তোকে খুশি করার জন্য বলছি আজকে আমার শোক দিবস বিএফ নেই তো তাই।হাহা।
তখনই একটা মেয়ে এসে মেহেরের হাতে ফুলের বুকে দিয়ে গেলো।
মেহের টাস্কা খেয়ে বললো,
— আপু এসব কি?
–একজন তোমাকে দিতে বলেছে।
–কে?
–জানিনা।দিতে বলেছে দিয়ে গেলাম।
মেয়েটি আর কিছু না বলে দ্রুত চলে গেলো।সামিরা মেহেরের হাত থেকে নিয়ে তাতে একটা নীল রঙের চিরকুট পেলো।
তাতে লিখা,”হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে মেহের”
সামিরা বললো,
–নে,কিছুক্ষণ আগে শোক পালন করছিলি বিএফ নেই।তাই হয়ে গেলো তোর বিএফ।
–কি যা-তা বলছিস।আমি তো মজা করেছি।কে আমাকে ফুল দিলো?কে দিতে পারে?
–সেটা তো বুঝতে পারছিনা।নাম ও লিখা নেই।তবে ফুলগুলো অনেক সুন্দর।
–তাহলে তুই রেখে দে।এই ফুল এমনিতেও আমি নেবো না।
–আমি কেন নেবো তোকে দিয়েছে তুই রাখ।
–পাগল চিনিনা জানিনা কে না কে দিয়েছে।আর তাছাড়া এ ফুল নিয়ে আজকের দিনে বাসায় ঢুকলে আমার কপালে শনি আছে।
–তাহলে কি করবি?
–এখানেই রেখে যাবো।
মেহের ফুলগুলো বেঞ্চিতে রেখে ক্লাসে চলে গেলো।ফায়াজ দূর থেকে সবকিছু দেখলো।তারপর রাগে গজগজ করছে।ওর প্রচুর রাগ হচ্ছে।কিছুটা অপমানিত বোধ করলো।

–এই প্রথম কাউকে ফুল দিলাম আর এভাবে ফেলে চলে গেলো।আমাকে অপমান??
তারপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিলো।
যাক তোমার নীতি ভালো আছে।অচেনা ছেলের কাছ থেকে কিছু নিবেই বা কেন?গুড গার্ল।মাই ডিয়ার মেহের।

পরেরদিন মেহের ভার্সিটি গেইট দিয়ে ঢুকেই ফায়াজকে বন্ধুদের সাথে বসা দেখতে পেলো।মেহের না দেখার ভান করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো।
–এই পিংক স্কাপ?
মেহের ফায়াজের কথা শুনে থমকে গেলো।কিন্তু না শোনার ভান করে হেটেই চলেছে।এভাবে এভয়েড করা ফায়াজের ইগোতে বাধলো।রাগে রক্ত মাথায় উঠে গেলো।হাতের মুঠো শক্ত করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।আর জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

মেহের ক্লাস করছে কিন্তু ক্লাসে ওর মন বসছেনা।অজানা এক ভয় কাজ করছে ওর ভিতরে।ও একটু বেশিই সাহস দেখিয়ে ফেলেছে।এটা কি ঠিক করেছে?ফায়াজ কিছু বলবে না তো?ওর খুব ভয় লাগছে।কিছুক্ষণ পর পর পানি খাচ্ছে আর নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।ক্লাস শেষ হতেই একটা মেয়ে একটা চিরকুট দিয়ে গেলো।মেহের কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটা চলে গেলো।
মেহের কিছুক্ষন হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে খোলেই ফেললো।
চিরকুটে লিখা,,

“কিউট কাদুনি মেয়ে,১০মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পাসের উত্তর বিল্ডিংয়ের পিছনে থাকা চাই। নয়তো তুলে নিয়ে আসবো।আই মিন ইট।”

মেহের চিরকুট পড়ে প্রায় কান্না করে দেয়।কি করবে বুঝতে পারছেনা।কেন যে এভয়ড করেছিলো।নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে সময় ও নেই।১০মিনিটের মধ্যে না গেলে তুলে নিয়ে যাবে।

মেহের আর কিছু না ভেবেই ব্যাগ নিয়ে হাটা ধরলো।হাটছে আর ভাবছে ওখানে গেলে ওর সাথে কি করবে।ওইদিন ছেড়ে দিয়েছিলো কিন্তু আজকে কি করাবে ওকে দিয়ে।হাত-পা অনবরত কাপছে।আবারও গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।বুকটা ধুক ধুক করছে।

মেহের ৭মিনিটের মাথায় পৌছে গেছে।দূর থেকে শুধুমাত্র ফায়াজকে দেখতে পেলো।মেহের কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিল।কেননা একজন,,একজনের শাস্তি নিশ্চয়ই অতটা ভয়াবহ হবে না।মেহের গুটসুটি হয়ে ফায়াজের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালো।ফায়াজ একটা বেঞ্চে বসে বসে চুইংগাম চিবাচ্ছে আর ফোন টিপছে।ফায়াজ মেহেরের দিকে না তাকিয়েই বললো,
–বস।
মেহের তখনো দাড়িয়ে আছে।একটা ছেলের পাশে বসতে ওর প্রচন্ড সংকোচ হচ্ছে।

ফায়াজ মাথা উচু করে,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here