কনফিউশন পর্ব ৩৬

0
443

কনফিউশন পর্ব ৩৬
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম

তিরার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা যাদিদ সত্যি এসেছে। যাদিদের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে নিজের গায়ে নিজে চিমটি দিল। একাজ সে ইতিমধ্যে অনেকবারই করেছে। প্রতিবারই সে ব্যাথা পেয়েছে এবং স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়েছে। যাদিদ মাত্র ১০ দিনের ছুটিতে এসেছে। অথচ এই মানুষটা যদি সারাজীবনের জন্য কাছে থাকতো তাহলে তার চেয়ে বেশি সুখী এই পৃথিবীতে একজনও আর থাকত না। যাদিদ হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখলো তার পাগল বউ ঘুম বাদ দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তাকে। সে তিরাকে কাছে টেনে নিলো। বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ঘুমাচ্ছ না কেন?”
তিরা যাদিদের বুকে মাথা রেখে বলল,
“এই ১০ দিন আমি একদম ঘুমাবো না। শুধু দেখবো তোমাকে। দেখতে দেখতে মুখস্ত, চোখস্ত, আত্মস্থ করে ফেলব।”
“চোখস্থ শব্দটা আবার কোত্থেকে পেলে?”
“জানি না।”
যাদিদ তিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“এত দেখতে হবে না। এখন ঘুমাও।”
“তুমিও ঘুমিও না।”
যাদিদ এবার হেসে দিল। বলল,
“এতো ভালোবেসে ফেললে কীভাবে আমাকে? অ্যারেঞ্জ ম্যারজে কেউ স্বামীর জন্য এত পাগল হয় আগে দেখিনি।”
“সো ইউ শুড ফিল প্রাউড।”
যাদিদ হেসে ফেলল। তিরার মুখটা ধরে চোখে চোখ রেখে বলল,
“হুম প্রাউড ফিল করি তো, আর..”
“আর কী?”
যাদিদ তিরার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল,
“অনেক ভালোবাসি তিরা।”
তিরা তৃপ্তির হাসি হাসলো। এমন করে কি আগে কখনো ভালোবাসি বলেছে যাদিদ? মনে করতে পারলো না সে। সত্যিই কাছে থাকলে মানুষটা একদম অন্যরকম, ঠিক মনের মতো।

আজ মাসের শেষদিন। কাব্যর বাসা ছাড়ার সময় এসে গেছে। আগামীকাল সে কক্সবাজার চলে যাবে। দুই সপ্তাহ পর সুইডেন যাওয়ার দিন ঢাকা এসে ফ্লাইট ধরবে। কাব্যরও গোছগাছ মোটামুটি শেষ। টুকটাক কিছু বাকি। সকালবেলা পিকআপ আসবে। কাব্য বইগুলো কার্টনে ভরছে, আরশি সাহায্য করছে। আরশি তেমন কোনো কথা বলছে না। কাব্য একাই বকবক করে যাচ্ছে। বেশিরভাগ কথা একেকটা বই নিয়ে। আরশিকে চুপচাপ দেখে কাব্য হঠাৎ বলল,
“তোমার মন খারাপ আমি চলে যাচ্ছি বলে?”
আরশি একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
“নাহ। মন খারাপ কেন হবে?”
“সত্যি বলছো?”
“হ্যাঁ।”
“আমি ৫ বছর পর আবার আসব। এর মধ্যে কিন্তু আর আসতে পারব না।”
“জানি।”
“তবুও মন খারাপ হচ্ছে না?”
“নাহ। কেন মন খারাপ হলে খুশি হতে?”
কাব্য হেসে বলল,
“না। আমি চাই তুমি সবসময় খুশি থাকো। তোমার হাসিটা অনেক শান্তি দেয়।”
এবার আরশি হাসল। খুশি হয়েই হাসলো।

যাদিদ তিরা পাঁচ দিনের জন্য হানিমুনে গেল নেপালে। সেখান থেকে ফিরে একদিন রেস্ট নিল। ঘটনাটা ঘটলো তার পরদিন। সারাদিন দুজনে শপিং করলো, বাইরে খাওয়া-দাওয়া করল। সন্ধ্যার পরে তিরা শাশুড়ির সাথে রান্নাবান্নায় সাহায্য করছিল। হঠাৎ যাদিদ তাকে রান্নাঘর থেকে ডেকে নিয়ে গেল। বেডরুমে গিয়ে বলল,
“তিরা তুমি কি আমাকে কখনো কোনো মিথ্যে বলেছো?”
তিরা খুব স্বাভাবিকভাবেই হেসে বলল,
“না তো। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“ভাল করে ভেবে দেখো। বিয়ের আগে বা পরে কোনো ছোটো বা বড় মিথ্যে?”
“আমি তোমাকে মিথ্যে কেন বলব?”
“বলোনি?”
“না।”
“ঠিকাছে।”
যাদিদ এ কথা বলে কোথাও বেরিয়ে গেল। তিরা ভাবতে লাগলো যাদির এরকম কেন জিজ্ঞেস করল? অনেকক্ষণ ভাবার পর তিরার হঠাৎ মনে হলো যাদিদ বিয়ের আগে জিজ্ঞেস করেছিল তার বয়ফ্রেন্ড ছিল কিনা। সে বলেছিল নেই। কিন্তু এই কথাটা এতদিন পরে উঠলো কেন? তিরা সাথে সাথে আরশিকে ফোন করে সব বলল। আরশি বলল,
“আমি তোকে আগেই বলেছিলাম এসব নিয়ে মিথ্যে বলাটা ঠিক হবে না।”
“আমি তো ভয়ে সত্যিটা বলিনি যদি বিয়েটা না হতো?”
“সত্যিটা বললেও বিয়ে হতো তিরা। এখনকার যুগে বিয়ের আগে বয়ফ্রেন্ড থাকাটা খুব অস্বাভাবিক না। ভাইয়ার যে গার্লফ্রেন্ড ছিল সেটা তো সে অকপটে বলে দিয়েছে। তোরও বলা উচিৎ ছিল।”
“এখন কি করব? সত্যিটা বলে দেব?”
“অবশ্যই এক্ষুনি বলে দিবি।”
“কার কথা রেখে কার কথা বলব? কত্তগুলা বয়ফ্রেন্ড ছিল আমার তুই ত জানিস।”
“স্পেসিফিক্যালি কারো কথা বলতে হবেনা। জাস্ট বলবি বয়ফ্রেন্ড ছিল।”
“যদি ডিটেইলসে জানতে চায়?”
“বলবি এসব তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এসব নিয়ে আলোচনা করতে চাস না।”
“যদি রেগে যায়?”
“রাগলে রাগবে। গাধা তুই এইটুকু বুঝতে পারছিস না হঠাৎ ভাইয়া কথাটা কেন জিজ্ঞেস করল?”
“কেন?”
“নিশ্চয়ই কোনোভাবে কিছু জানতে পেরেছে!”
তিরা ভয় পেয়ে বলল,
“কি বলছিস তুই!”
“হতেই পারে। আচ্ছা ভাইয়া কি কথাটা রেগেমেগে জিজ্ঞেস করেছে নাকি স্বাভাবিক ছিল?”
“স্বাভাবিক ছিল।”
“আচ্ছা যাই হোক এখন সব বলে দে। একটা মিথ্যাকে লুকিয়ে রাখতে আরো ১০০ মিথ্যা বলতে হয়। সেই ১০০ মিথ্যা হয় ১০০০ বিপদের ফাঁদ। তুই এক্ষুনি সব বলে দে।”
“ঠিকাছে ও বাসায় ফিরলে সব বলে দেব।”
“আচ্ছা টেনশন করিস না। তুই নিজ থেকে সব বললে ইজিলি নেবে ইনশাআল্লাহ।”

কিন্তু যাদিদকে বলার সুযোগ পেল না তিরা। যাদিদ বাসায় ফিরেই তিরার মুখের উপর কিছু কাগজপত্র ছুঁড়ে মারলো। তিরার মুখে ধাক্কা খেয়ে সেগুলো মাটিতে পড়ে গেল। তিরা তাকিয়ে দেখে তার এক এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে কাপল ছবি এবং তার নিজ হাতে লেখা অসংখ্য চিঠি।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here