কনফিউশন পর্ব ৪৬

0
398

কনফিউশন পর্ব ৪৬
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম

পাঁচ বছর পর

সারারাত হাসপাতালে নাইট ডিউটির পর সকালবেলা যখন আরশি বাসায় ফিরল, আমরিন দৌড়ে এলো। আরশি বসে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আমরিন বলল,
“ফুপ্পি, চলো আমরা একসাথে খেলি।”
“স্কুলে যাওনি কেন?”
“আমার স্কুল তো আজ বন্ধ।”
“তাই! আচ্ছা মা আমরা বিকেলে খেলব। সারারাত কাজ করেছি যে, ফুপ্পির এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।”
আমরিন হেসে বলল,
“ঠিকাছে তুমি আগে ঘুমিয়ে নাও।”
আরশি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলে রশ্নি মুখোমুখি এসে বসলো। কিছুক্ষণ এই কথা সেই কথা বলতে বলতে একসময় বলল,
“আরশি সাহিলকে আর বোঝাতে পারছি না।”
“কী বিষয়ে ভাবি?”
“তোর বিয়ের বিষয়ে। দুদিন পরপর একেকটা সম্মন্ধ আসে, অমনি সাহিল তোর বিয়ের ব্যাপারে পাগল হয়ে যায়। এতদিন পড়াশোনার কথা বলে আটকিয়েছি। এখন তো ইন্টার্নশিপ করছিস এখন কী বোঝাব? তার উপর রিসেন্টলি নাকি মনের মত এক ছেলে পেয়েছে।”
আরশিকে চিন্তিত দেখাল। সে বলল,
“বলো যে আমার আরেকটু সময় লাগবে।”
“সেটা তো আমি নিজ থেকেই বলেছি। সাহিল কারণ জানতে চাইছে। যদি তোর পছন্দের কেউ থাকে তার সাথে কথা বলতে চায় নাহলে এই ছেলের সাথে কথা আগাবে।”
“ভাবি তুমি তো জানো সব। আমাকে বাঁচাও।”
“আমি জানি কিন্তু আমি বুঝিনা এটা কেমন সম্পর্ক যেখানে কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলবে না? এভাবে ঝুলে আছিস কোন সাহসে বোন? পরে দেখা যাবে ছেলেটা তোকে ভালোই বাসেনা। তখন কত কষ্ট পাবি বুঝতে পারছিস?”
আরশি হেসে বলল,
“ভাবি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি কোনো চিন্তা করোনা। শুধু আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। আমার ধারণা ও একেবারে বিয়ের কথা বলতে চায়। তাই ভালোবাসার কথা বলছে না। আর না বললেও সব ভাবেই বুঝিয়েছে সে আমাকে।”
“আর যদি তোর বোঝায় কোনো ভুল থাকে?”
“কোনো ভুল নেই বিশ্বাস করো।”
“আরশি আমার কথা শোন তুই নিজেই ভালোবাসার কথা বল। তখন তো একটা এন্সার পাবি তাইনা?”
“আমি বলতে পারব না ভাবি। পারলে এই ৬ বছরে অবশ্যই বলে দিতাম।”
“তাহলে তোর ভাইয়াকে বোঝা। আমার পক্ষে ওকে এখন আর বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল রাতে যখন বিয়ের প্রস্তাবের কথা বলল আমি বোঝাতে গেলাম আর ও রীতিমতো রেগে গেল।”
“আচ্ছা ভাবি তুমি এত প্রেশার নিও না। আমি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলব।”

সন্ধ্যাবেলা আরশি সাহিলের সাথে কথা বলতে বসলো। সাহিল বলল,
“বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ কী?”
“বিয়ে করতে চাইনা ব্যাপারটা এমন না ভাইয়া। তবে এখন চাচ্ছিনা ভাইয়া।”
“আরশি, সব কিছুর একটা পারফেক্ট সময় থাকে। তোর বয়স এখন ২৪/২৫, ইন্টার্নশিপ করছিস। বিয়ের জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময়। বাবা মা থাকলে আমি হয়তো এত চিন্তা করতাম না। অবশ্য বাবা মা থাকলে এতদিনে তোর বিয়ে হয়ে যেত। তারা যেহেতু নেই সব দায়িত্ব কিন্তু আমার।”
আরশি চুপ। সাহিল আবার বলল,
“যদি পছন্দের কেউ থাকে তাহলে আমাকে বল। ছেলে যেমনই হোক তুই যদি মনে করিস ভাল থাকবি আমাদের আপত্তি থাকবে না।”
“কেউ নেই ভাইয়া।”
“তাহলে বিয়ের জন্য আপত্তি কেন? আমার খুব পছন্দের একটা ছেলের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। তোর পছন্দের কেউ না থাকলে আমি চাই ওর সাথেই তোর বিয়ে হোক। ছেলে তোর মত কোয়ালিফায়েড না। এমবিএ করেছে এখন ব্যবসা করছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে সে সেরা।”
“ভাইয়া জোর করোনা। আমাকে একটু সময় দাও। আমি বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার না।”
“জোরের তো প্রশ্নই ওঠেনা। তুই আমার একমাত্র বোন। আজীবন সুখে থাকবি এছাড়া কিছু চাইনা। আগে যত প্রপোজাল এসেছে তুই মানা করে দিয়েছিস সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই ছেলেটা আমার খুব পছন্দের। তোকে ওর সাথে বিয়ে দিতে পারলে আমি নিশ্চিতে থাকতে পারব।”
আরশি এখন আর কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। অযৌক্তিক কথা বলে লাভ নেই তাই বলল,
“আমাকে ভাবতে দাও।”
“ঠিকাছে ভেবে আমাকে জানা। ছেলের ছবি আর বায়োডাটা নিয়ে যা।”
সাহিল ব্যাগ খুলে খাম বের করতেই আরশি বলল,
“লাগবে না। আমাকে একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে দাও ভাইয়া।”
আরশি চলে যেতেই রশ্নি এসে ঘরে ঢুকলো। সাহিল প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে। আরশি এত সেনসিটিভ যে ওকে কোনো বিষয়ে চাপাচাপি করা যায় না। রাগারাগি করা যায় না। অথচ দিনকাল যা খারাপ পড়েছে এ বয়সী মেয়েকে বিয়ে না দিতে পারলেও শান্তি নেই। সাহিল হঠাৎ রশ্নিকে ধমকে বলল,
“কেমন ভাবি হয়েছো যে ননদের মনের কথা বের করতে পারো না?”
রশ্নি এবার রেগে গেল,
“সাহিল কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ। আরশি কেমন তুমি তা জানো। ও কাউকে কিছু বলেনা।”
“তোমাকে তো সব বলে বলেই জানতাম।”
“হ্যাঁ বলে। তবে আমার জানামতে ওর পছন্দের কেউ নেই। আর থাকলে হয়তো সময় হলে নিজেই বলবে। সময় দাও।”
“সময় দিতে দিতে সব ভালো প্রস্তাবগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। এবার আনন্দরও যদি বিয়ে হয়ে যায়?”
রশ্নি চমকে তাকালো সাহিলের দিকে। হেসে বলল,
“আনন্দ! তুমি কি গতকাল থেকে আনন্দর কথা বলছো?”
“হ্যাঁ। কোনোকিছু তো শুনতে চাও না। আরশির বিয়ের কথা বললেই নাখোশ হও।”
“আরশিকে বিয়ের কথা বললে সে নাখোশ হয়। তাই আমিও হই। আমি আরশির মনের বিরুদ্ধে কিছু চাইনা।”
“তা আমিও চাইনা। কিন্তু একবার ভেবে দেখো আনন্দের আরশির বিয়ে হলে কেমন হবে।”
রশ্নি হেসে বলল,
“খুব সুখী হবে আরশি।”

অনেকক্ষণ পর্যন্ত বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলো আরশি। সাথে আবোলতাবোল ভাবনাতো ছিলই। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল আজ কাব্যর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতেই হবে। আর কোনো উপায় নেই। রাতে কাব্য ফোন করল। আরশির কন্ঠ শুনেই বুঝে গেল কিছু একটা গোলমাল আছে। বলল,
“কী হয়েছে আরশি? এনি প্রব্লেম?”
“হ্যাঁ অনেক বড় প্রব্লেম।”
“কী?”
“তুমি আসছো কবে?”
“এইতো আর ৪/৫ মাস।”
“কিন্তু তোমার তো পড়াশোনা শেষ। এখনই চলে আসছো না কেন?”
“কিছু ঝামেলা আছে আরশি। মিটিয়েই চলে আসব। তোমার সমস্যার কথা বলো। কী হয়েছে?”
“ভাইয়া আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে।”
“স্বাভাবিক। বোন বড় হল সব ভাইয়েরই দায়িত্ব এটা।”
“অনেকদিন থেকেই ভাইয়া বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। একেকটা প্রোপোজাল আসে আর আমি সময় চাই ভাইয়াও সময় দেয়। কিন্তু এবার মানছে না।”
কাব্য চুপ। আরশি ইতস্তত করতে করতে বলেই ফেলল,
“আমি বরং ভাইয়াকে বলি তোমার সাথে কথা বলতে?”
“আমার সাথে কেন?”
এবার আরশির রাগ হচ্ছে। কাব্য কেন সব জেনেশুনেও ওকে দিয়ে এসব বলাতে চাচ্ছে? ঠিকাছে এখন সময় খারাপ নাহয় সে বলুক। বিয়ের পর এসবের মজা বোঝাবে কাব্যকে। আরশি চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলল,
“আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।”
কাব্য চুপ। আরশি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল,
“হ্যালো কাব্য?”
“শুনছি।”
“কী করব?”
“আরশি আমি আসলে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কখনো কিছু ভাবিনি।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“মানে বললামই তো।”
“তাহলে এতদিন? এটা কী ছিল কাব্য? পরিনতিহীন একটা সম্পর্ক?”
“আরশি সম্ভাবত তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমরা কি বিয়ে করার মতো কোনো সম্পর্কে আছি?”
এ কথা শুনে আরশির চোখে জল এসে গেল। সে নিজেকে সামলে বলল,
“আমাদের মধ্যে তাহলে কী সম্পর্ক?”
“সব সম্পর্কের নাম হয়না।”
“বি সিরিয়াস কাব্য। তুমি আমাকে ভালোবাসো না?”
“আমি তোমাকে পছন্দ করি।”
“তারমানে ভালোবাসোনা। কাব্য আমাকে শাড়ি পরা দেখে, লিপস্টিক পরা দেখে যেসব বলেছিলে সেসব কী ছিল তাহলে?”
“তোমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রসংশা করেছি। করতে পারি না?”
“চলে যাওয়ার দিন অত রিস্ক নিয়ে কেন এসেছিলে আমার সাথে দেখা করতে?”
“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”
“কেন আমার কপালে চুমু দিয়েছিলে?”
“কপালে দিয়েছি। এটা তো যে কেউ যে কাউকে দিতে পারে।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“সত্যি?”
“আরশি আমি তো অনেক সুযোগ পেয়েছি কখনো কি তোমার সাথে অসভ্যতা করেছি? ”
“উঁহু।”
“আরশি আর ইউ ক্রাইং?”
“নাহ। এত তুচ্ছ কারণে আরশি কাঁদে না।”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here