কনফিউশন পর্ব ৪০
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
কাব্য চলে যাওয়ার পর আরশির প্রচন্ড আফসোস হচ্ছিল কেন সে একবার কব্যকে জড়িয়ে ধরল না। কাব্য যখন তার কপালে চুমু দিল তখনই তো তার কাব্যর বুকে ঝাপিয়ে পড়া উচিৎ ছিল! হায় কেন সে এটা করলো না? এইযে বুকটা খালি খালি লাগছে, এই শূন্যতা নিয়ে সে পাঁচটা বছর কী করে থাকবে!
তিরা ফোনের পর ফোন করে যায়, যাদিদ ধরে না। কখনো দেখে কখনো দেখে না। সে তার সিদ্ধান্তে অটল, তিরার সাথে কোনোভাবেই সে কথা বলবেনা যতদিন তার রাগ না কমে। আর তিরার নাম্বারটাও সে ব্লক করে না। সে চায় তিরা ফোন করুক, তিরা কত ফোন করতে পারে সেও দেখবে। প্রথম প্রথম তিরা খুব মেসেজ পাঠাতো। এখন আর তেমন মেসেজ পাঠায় না। ফোন করাও নিশ্চয়ই একসময় থামিয়ে দেবে। দিক, সবকিছু থেমে যাক। ওদিকে তিরা দেখে যাদিদ তার বাবা মা কে নিয়মিত ফোন করে, খোঁজখবর নেয়। তার কথা কি একবারো জিজ্ঞেস করে? নাকি তার কথা ভাবাই ছেড়ে দিয়েছে।
মাসখানেক পরে আরশির জন্য একটা পার্সেল এল। পার্সেল খুলে দেখে একটা লিপস্টিক। সাথে কাব্যর চিঠি। তাকে কেন লিপস্টিক পাঠালো, তাও এতদূর থেকে তা বুঝতে পারছে না। কিছুটা অবাক হয়েই চিঠিটি খোলে সে।
আরশি,
এই লিপস্টিকটা তোমার জন্য কিনেছি, হুট করেই। এটা জার্মান লিপস্টিক, খুব ভাল। তোমাকে কখনো বলা হয়নি লিপস্টিক আমার খুব পছন্দ। জানি তুমি লিপস্টিক পরো না। তোমাকে কখনো লিপস্টিক পরা দেখিওনি। তবুও দেখেই মনে হলো এটা তোমার ওই অমূল্য ঠোঁটের জন্যই তৈরি। তোমার ঠোঁট পর্যন্ত যেতে না পরলেও তোমার কাছে থাকলেই ধন্য হবে এই লিপস্টিক এবং নগন্য কাব্য।
চিঠি পড়ে আরশি লজ্জায় মুখ ঢেকে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে লিপস্টিক টা পরলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যেহেতু আরশি কখনোই লিপস্টিক পরেনি সেহেতু ঠিকভাবে পরতে পারল না। ঠোঁটের বাইরে লেগে গেল। তাই মুছে ফেলল। কিন্তু পুরোপুরি উঠলো না। সে অনেকবার তিরাকে দেখেছে তেল বা লোশন লাগিয়ে লিপস্টিক উঠাতে। সেভাবেই পুরোপুরি উঠিয়ে রশ্নির কাছে গেল। রশ্নি টিভি দেখছিল। আরশিকে দেখেই বলল,
“আয় আরশি।”
“ভাবি একটা কাজ দেব তোমাকে। একদম আমাকে লজ্জা দেবেনা আগেই বলে নিচ্ছি। তুমি ছাড়া কিন্তু আর কেউ নেই আমার যার কাছে যাব।”
“আরে শুধুশুধু লজ্জা দেব কেন? বল কী করতে হবে।”
আরশি লিপস্টিকটা বের করল। বলল,
“এটা আমার ঠোঁটে পরিয়ে দাও।”
রশ্নি মুচকি হাসছিল। আরশি মাথানিচু করে ছিল৷ রশ্নি বলল,
“ওই ছেলেটা দিয়েছে বুঝি?”
“হ্যাঁ।”
“এটা পরে বের হবি এখন?”
“নাহ পাগল তুমি। ছবি পাঠাব।”
“আচ্ছা।”
রশ্নি আরশিকে লিপস্টিকটা পরিয়ে দিয়ে বলল,
“মাশাআল্লাহ আমার বোনটাকে কত্ত সুন্দর লাগছে!”
আরশি হাসলো। তারপর নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে সেল্ফি তুলল আরশি। তারপর কাব্যকে পাঠিয়ে দিল। কাব্য অনলাইনেই ছিল। ছবি দেখে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার স্টিকার দিল। স্টিকার দেখে আরশি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিল না। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আরশির এই প্রাণখোলা হাসি শুনে রশ্নির ভেতরটা জুড়িয়ে গেল। ছেলেটা যেই হোক নিশ্চিত জাদু জানে! ওদিকে কাব্যর মাথা ঘোরানো শেষ হলে বলল,
“একবার ভিডিও কলে আসবে?”
“না।”
“এক মিনিটের জন্য? না থাক ৩০ সেকেন্ডের জন্য।”
“প্লিজ কাব্য আমি পারব না। যতটুকু সম্ভব না তার বেশি করেছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা তোমার অস্বস্তি হবে এমন কিছু আমি চাইনা। এক্সপেকটেশন থেকেও অনেক বেশি পেয়েছি।”
রেহানা আলম বেশ কয়েকদিন ধরেই তিরাকে খেয়াল করছেন। মেয়েটার মধ্যে বেশ পরিবর্তন এসেছে। অবশেষে একদিন জিজ্ঞেস করেই বসলেন,
“মা তুমি কি প্রেগন্যান্ট?”
তিরা চমকে উঠলো। বলল,
“মানে? কী বলছেন মা? এটা কেন বললেন?”
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি প্রেগন্যান্ট।”
তিরা নিজের পেটে হাত দিয়ে বলল,
“কই আমার পেট তো সমান আর আমি বমিও করিনি।”
এবার রেহানা হেসে ফেললেন। বললেন,
“ওরে পাগল শুধু কি বমি করলেই প্রেগন্যান্ট বোঝায়?”
তিরা এবার সত্যিই চমকে উঠলো। যদি সত্যিই সে প্রেগন্যান্ট হয় তাহলে তো যাদিদ আর রাগ করে থাকতে পারবে না! তিরা উত্তেজিত হয়ে শাশুড়ির হাত ধরে বলল,
“মা প্লিজ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন। আমার এক্ষুণি জানতে হবে। মা প্লিজ।”
রেহানা তিরার পাগলামি দেখে হাসতে লাগলেন। বললেন,
“আচ্ছা তৈরি হয়ে নাও। টেস্ট করতে দিয়ে আসি।”
টেস্ট দেয়ার পর তিরা বলল,
“মা রিপোর্ট কখন দেবে?”
“কাল সকালে?”
“না আমার এখন চাই। আমার যাদিদকে জানাতে হবে।”
রেহানা হেসে বললেন,
“আরে পাগল নাকি মেয়ে, এখন রিপোর্ট কীভাবে দেবে? কাল সকালেই নিতে হবে। কিছু করার নেই।”
“মা প্লিজ হেল্প করুন। আমার এখন রিপোর্ট চাই, যেকোনো মূল্যে।”
রেহানা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“হায় খোদা! এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম! আচ্ছা চলো একটা টেস্ট কিট কিনে দেই। তবে এটায় কিন্তু সবসময় সঠিক রেজাল্ট আসেনা। তাই নেগেটিভ পজেটিভ যাই হোক এখনই যাদিদকে জানাবে না।”
“ঠিকাছে জানাব না। নিজের মন তো শান্ত হবে!”
টেস্ট কিট দিয়ে টেস্ট করে তিরা জানতে পারল সে প্রেগন্যান্ট। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে শাশুড়ির দুই গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে দিল। তিরার পাগলামি দেখে রেহানার হাসতে হাসতে দম আটকে যাবার জোগাড়!
চলবে..