কনফিউশন পর্ব ৪২
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
আরশি রশ্নির থেকে একটা শাড়ি নিয়ে পরলো। তারপর ছবি তুলে পাঠালো কাব্যকে। কাব্য অনলাইনে নেই। সে জানে কাব্য সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরে তারপর অনলাইনে আসবে। ওদের যখন সন্ধ্যা এখানে তখন রাত। রাত পর্যন্তই শাড়ি পরে রইলো আরশি। আজ যদি কাব্য ভিডিও কলে যেতে বলে সে নিশ্চয়ই যাবে। ছবি দেখে কাব্য মাথা ঘুরানোর স্টিকার দিল। আরশি হেসে ফেলল। কাব্য সাথে সাথেই ফোন করল। আরশি ফোন ধরতেই কাব্য ওপাশ থেকে বলল,
“আজ সত্যি মাথা ঘুরে পড়ে গেছি।”
আরশি দুষ্টুমি করে বলল,
“মাথা ফাটেনি তো আবার?”
“মাথা না বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।”
আরশি খিলখিলিয়ে হাসলো। কাব্য বলল,
“তোমার সাহস কিন্তু অনেক বেড়ে গিয়েছে আরশি।”
“তাতে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে? সাহস আবার কমিয়ে ফেলব?”
“আল্লাহ এমন না করুক। শুধু ভাবছি এই সাহসটুকু যদি আমি দেশে থাকতে হতো তোমার।”
“তাহলে কী হতো?”
“অনেক কিছুই হতে পারতো।”
“যেমন?”
“যেমন তখন তুমি এক ইঞ্চি সাহস দেখিয়েছো তো আমি দুই ইঞ্চি। আর এখন তুমি কিলোমিটারে সাহস দেখাচ্ছ অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। ”
এ কথা শুনে আরশি আবারো খিলখিল করে হেসে উঠলো৷
রেহানা আলম বেশকিছু দিন ধরেই খেয়াল করছেন যে তিরা মনমরা হয়ে আছে। মুখ দেখে মনে হয় কান্নাকাটিও করে। তবে কাঁদতে দেখেনি কখনো। এতদিন ভেবেছে যাদিদ দূরে আছে বলে হয়তো মন খারাপ। কিন্তু আজ তিরার ঘরে ঢুকতেই দেখলো সে কাঁদছে। এভাবে কাঁদতে দেখে একটু খটকা লাগলো। কাছে গিয়ে বললেন,
“তিরা কী ব্যাপার কাঁদছো কেন?”
তিরা চোখ মুছে বলল,
“ভালো লাগছে না মা।”
রেহানা তিরার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“যাদিদের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
“না।”
“অনেকদিন ধরেই তোমার এই অবস্থা দেখছি। ভেবেছি আগের মত যাদিদের বিরহে কষ্টে আছো। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ঘটনা অন্যকিছু। কী হয়েছে আমাকে খুলে বলো। এই সময় এভাবে মনমরা হয়ে থাকা কান্নাকাটি করা বাচ্চার অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। এমন কী মিসক্যারেজও হতে পারে।”
তিরা শাশুড়ির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। কিছু বলল না। রেহানা আবার বললেন,
“তিরা আমি খুব ভাল করে জানি যাদিদ ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই তোমার এমন কান্নার। কী করেছে সে বলো আমাকে।”
“যাদিদ কিছু করেনি মা। আমিই অপরাধ করেছি তাই সে মুখ ফিরিয়ে আছে।”
রেহানা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“কি বলছো! কী অপরাধ করেছো?”
তিরা বুঝতে পারলো না শাশুড়িকে এসব বলা ঠিক হবে কিনা। বললে যদি সেও মুখ ফিরিয়ে নেয়? নিলেই বা আসল মানুষটাই যেখানে মুখ ফিরিয়ে আছে সেখানে আর কীসের পরোয়া! অবশেষে তিরা শাশুড়িকে সবকিছু বলে দিল। সব শুনে শাশুড়ি বললেন,
“হায় আল্লাহ! এই সামান্য কারণে যাদিদ এমন করবে? ৪ মাস ধরে তোমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই আর সেটা তুমি আজ আমাকে বলছো! আরো আগে জানানো উচিত ছিল। আমি আজই যাদিদের সাথে কথা বলব।”
তিরা শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেলল। এবার সে একটু ভরসা পাচ্ছে।
যাদিদকে ফোন করে পাওয়া গেল না৷ পরে যখন যাদিদ নিজেই কলব্যাক করল তখন রেহানা বললেন,
“তুই আমার ছেলে ভাবতেও অবাক লাগছে যাদিদ!”
যাদিদ অবাক হয়ে বলল,
“কী করলাম আমি?”
“তিরার সাথে এমন কেন করছিস? স্ত্রীর প্রেগন্যাসির সময় কোনো স্বামী এমন করতে পারে আমি জানতাম না। বাচ্চা মেয়েটা নাহয় একটা মিথ্যে বলে ফেলেছে। তাতে কী এমন ক্ষতি হয়েছে? অতীতে যাই থাকুক তা বর্তমানে নেই। বর্তমান নিয়ে থাকতে হবে যাদিদ। অতীত মূল্যহীন!”
“মা এটা তিরা আর আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না।”
“তোর সাহস হয় কী করে আমাকে এমন কথা বলার? এটা এখন আর শুধু তোদের ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই৷ এর সাথে আমার নাতি-নাতনী জড়িত। বাচ্চার কিছু হয়ে গেলে?”
“মা আমি তোমার ভালর জন্য বলছি। এ বিষয়ে যদি আমার সাথে কথা বলতে থাকো তাহলে আমার মুখ দিয়ে এমন কঠিন কথা বের হবে যা তুমি সহ্য করতে পারবে না।”
“জানি বাবা তুমি কেমন কঠিন কথা বলতে পারো তা আমার অজানা নয়। আমি তোমার কঠিন কথা শুনতে রাজী আছি। কিন্তু তিরাকে মাফ করে দাও। পেটের বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
“ক্ষতি হলে হবে। বাচ্চার নসিবে যদি মায়ের পেটেই মরে যাওয়া থাকে তাহলে তুমি আমি কেউ ফেরাতে পারব না।”
রেহানা ধমকে বললেন,
“যাদিদ কী বলছিস তুই! নিজের বাচ্চা সম্পর্কে এভাবে কেউ বলতে পারে? আল্লাহ মাফ করো।”
“আগেই মানা করেছিলাম আমার সাথে এ বিষয়ে কথা বলো না।”
যাদিদ ফোন কেটে দিল। রেহানার চোখে জল এলো। মনে পড়ে গেল যাদিদ যখন পেটে ছিল তখন তাকে নিয়ে তার বাবার কত উল্লাস ছিল! প্রতিদিন অনাগত বাচ্চাকে নিয়ে কতরকম জল্পনা কল্পনা। অথচ সেই মানুষের ছেলে কোত্থেকে এমন পাথর হলো?
চলবে…