#তোকে চাই পর্ব ১+২

0
1989

#তোকে চাই পর্ব ১+২
#রোদ❤

বউ সেজে বসে আছি সেই সন্ধ্যা থেকে, এখন রাত প্রায় ২ টা কিন্তু যার জন্য এতো আয়োজন তারই আসার নাম নেই।।।বাসর রাতে সব মেয়েই হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ঢুকে,,, কিন্তু আমার ব্যাপারটি ভিন্ন।। আমি স্বপ্ন নয় একরাশ ভয় নিয়ে বসে আছি।।।মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে শুভ্র ভাইয়া আমায় মেনে নিবে তো??নাকি সারাজীবন মরে মরে বাঁচতে হবে আমাকে??আমি রোদেলা।।সবাই আদর করে রোদ বলেই ডাকে।।আবরার আহমেদ শুভ্র, আমার স্বামী।।কয়েকঘন্টা আগেও যাকে ভাইয়া বলে ডেকেছি। মুহূর্তেই যেনো সব উলোট পালট হয়ে গেলো।।।কাল এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো আর আজই বিয়ের পীড়িতে বসতে হলো।।।দুই বোনকে একসাথে বিদেয় করলেন বাবা-মা।।কি এমন দোষ করেছিলাম??পরিবারের ছোট মেয়ে আমি,, তাই আমার ভাগে আদরটাও বেশিই ছিলো,,সাথে ছিল সীমাহীন স্বপ্ন।।। দরজা লাগানোর শব্দ পেলাম হয়তো উনি এসেছেন,,,অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে অবশেষে তার আগমন ঘটল।।আমি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুন করার চেষ্টা করছি কারন আমি জানি এখন যা হবে তা হয়তো কোনো মেয়ের জন্যই প্রত্যাশিত নয়।।।আমি চুপচাপ বসে আছি,,,হৃদপিণ্ড বেরিয়ে আসার উপক্রম।। রুমে ভয়াবহ নিস্তব্ধতা।।এই নীরবতা ভেঙে শুভ্রই বলে উঠলো,,,

শুভ্রঃ রোদেলা??কেন করলে আমার সাথে এমন??আমার বাবার টাকার জন্য???তাছাড়া আর কিই বা হতে পারে,,,তোমাদের মতো মেয়েদের কাজই হলো টাকার জন্য অন্যের জীবন নষ্ট করে দেওয়া।।(শান্ত গলায়)

আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।।উনি সব দোষ কতো সহজে আমার ঘাড়ে দিয়ে দিলেন সাথে খারাপ মেয়ের পদবী।।।আমি মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে,, তাই বলে লোভী নই।।।কিন্তু আজ সেই পদবীটাও পেয়ে গেলাম।।।হঠাৎ গায়ে কিছু পড়ায় ঘোর কাটলো,,প্রথমে বুঝতে না পারলেও কয়েক সেকেন্ড পরই বুঝতে পারলাম,, শুভ্র আমার শরীরে টাকা ছুঁড়ে ফেলছে আর বলছে,,,

শুভ্রঃ আরো চায় টাকা??বলো আরো চায়,???কতো টাকা দিলে মুক্তি দিবে আমায়,, বলো??(চেঁচিয়ে)

আমার চোখের পানি আর বাধঁ মানছে না।।।এই ১৭ বছরের জীবনে, কখনো নিজেকে এতোটা ছোট আর অসহায় মনে হয় নি।।।ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কান্না করি।।

শুভ্রঃ এসব নাটক বন্ধ করো।।।এসব করে আমাকে হাত করতে পারবে না,,,কখনো না।।।আর হ্যা আমার আশেপাশে আসার চেষ্টাও করবে না,,তাহলে আমার খারাপ রূপ টা দেখাতে বাধ্য হবো।।

আমিঃ দ,,,দেখুন আ,,,আপনি ভুল(কাঁপা স্বরে)

শুভ্রঃ চুপ একদম চুপপপপ।।।আর একটা কথা না।।।জানো? আমার তোমার প্রতি তাকিয়ে ঘৃনা হয়।।তুমি সব জানার পরও কিভাবে এমনটা করতে পারলে,,ছি।।
বলেই শুভ্র ব্যালকনিতে চলে গেলো।।আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলেন না।।।খুব ক্লান্ত লাগছে আজ,,,শরীর নয় মনটা বড় ক্লান্ত আজ।।বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লাম।।।বাবা-মার কথা বড্ড মনে পড়ছে।।কেনো করলেন আমার সাথে এমন??কেনো??লাইফটাকে যদি এডিট করা যেতো তাহলে ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখটা মুছে ফেলতাম আমার জীবন থেকে সাথে শুভ্র নামের এই মানুষটাকেও,,,,


ফ্ল্যাসবেক…..

কলেজ শেষে বাসায় গিয়েই দেখি চারদিকে হৈচৈ।।বাড়ি ভরা মানুষ,,কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।।।আম্মুকে জিগ্যেস করায় বললো,,রুমু আপুকে নাকি দেখতে আসছে,,তার জন্যই এতো আয়োজন।।আশ্চর্য, রুমু আপুকে দেখতে আসবে ভালো কথা,,কিন্তু আমাদের বাসায় কেন?? সামনে টেস্ট এক্সাম কিছুই পড়ি নাই,,তারমধ্যে এতো ঝামেলা,,অসহ্যকর।।বিকেলে ছেলেপক্ষ এলো,,,ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।।কে জানে দেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বেশি হয়ে গেছে কিনা,,সব বাপের মেয়ের জামাই ই এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।।। সবার বেশ পছন্দ হয়েছে।।ছেলে দেখতে মাশাআল্লাহ।।ছেলে বড় ফুপার বন্ধুর ছেলে তাই আর,জানা -শোনা নিয়ে ঝামেলা করে নি কেউ,,,ঠিক হলো,, ২৫ সেপ্টেম্বর কিছু মুরব্বি ও কিছু আত্মীয় এনে ঘরোয়া ভাবেই বউ নিয়ে যাবে তারা।।।সেই ২৫ সেপ্টম্বরই যে আমার জীবনের কাল হবে তা তখন বুঝতে পারি নি।।।বিয়ের আর দশদিন বাকি মাত্র।।।বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা সবার উৎসাহ আনন্দের সীমা নেই।।আমিও বেশ আনন্দেই ছিলাম,,,,কাজিনদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে ছোট আর রুমু আপু বড়,,,,,দেখতে দেখতে এসে গেলো সেই কাল বেলা ২৫ সেপ্টেম্বর….
#চলবে
#তোকে চাই
#রোদ❤
#part :1

❤তোকে চাই❤
#রোদ❤
#part:2

দেখতে দেখতে এসে গেলো সেই কাল বেলা ২৫ সেপ্টেম্বর….সকাল থেকেই সবার ব্যস্ততা শুরু।।সাজুগুজু করে কে কাকে হার মানাবে সেই চেষ্টা সবার।।আমিও আর বসে থাকবো কেন??লাল কাথাঁন শাড়ি,, হাত ভরা চুরি,, চোখে গাঢ় কাজল,, লম্বা রেশমি চুলগুলো খুলে দিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম।।।আমার আপুরা তো রীতিমতো আটা ময়দার দোকান সেজে আছে।।তাদের একেক জনকে চিনতেও আমার ব্যাপক কষ্ট হয়েছে।।যায়হোক বর এলো,,,সাথে প্রায় ত্রিশজন।।এই ত্রিশজনের মধ্যে একটা মুখ দেখে আমার সব আপুরা রীতিমতো ক্রাশিত।।।আর সেই একজনই ছিলো শুভ্র ভাইয়া।।আমিও যে আড়চোখে তাকায়নি তা নয়।।সেই লেভেলের ক্রাশও খেয়েছিলাম কিন্তু বড় আপুদের জিনিসে চোখ দেওয়ার সাহসই হয় নি।।তাই প্রথম থেকেই ভাইয়া বলেই মেনে নিয়েছিলাম।।।মজার বিষয় হলো আজ আমি তারই বউ।।বরপক্ষের খাওয়া শেষ হলে,,মার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম,,,হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠল,,,,,
ঃঅরি,,,,,
মা মনে হলো চমকে উঠলো।।পেছনে তাকিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেলো,, তার চোখ যে ছলছল করছিলো তা বেশ বুঝতে পারছিলাম।।।কিন্তু কেনো তা কিছুতেই বুঝে ওঠতে পারছিলাম না।।তাই একবার মা তো আরেকবার মধ্যবয়স্ক লোকটির দিকে তাকাচ্ছিলাম,,,লোকটির চোখও ছলছল করছিলো।।।আমি আরো অবাক হলাম যখন দেখলাম মা লোকটিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদঁতে শুরু করলেন।।।আমিও স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি,,মাকে কখনো এভাবে কাদঁতে দেখি নি,,,আর সবচেয়ে বড় কথা লোকটি কে??এর আগে তো কখনো দেখি নি,,,আমি আর ভাবতে পারছিলাম না,,,ছোট্ট মাথায় হাজার প্রশ্নের স্তুপ নিয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম,,,,মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন,,,

মাঃ তুমি কেনো এমন করলে??বলো কেনো??এতটা ভালো হওয়ার কি দরকার ছিলো?? তোমাকে কতো খুজেঁছি আমি,জানো??

লোকটিঃ জানি তো,,(মার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে)

মাঃ নাহ,,,জানো না তুমি,,,কিচ্ছু জানো না(হাউমাউ করে কাদঁতে কাদঁতে)কোথায় ছিলে তুমি বলো??উত্তর দাও,,,,২৮ টা বছর,,,,কম সময় নয় তো,,,এতো বছর পর ফিরেই বা কেনো এলে???কেনো??আমি আজ সব হিসেব নিবো তোমার থেকে,,,

লোকটিঃ আচ্ছা নিও।।আগে শান্ত হও সবাই দেখছে তো।।লক্ষী মেয়েরা এমন করে না।।।এখনও বাচ্চাই রয়ে গেলে অরি,,,,

লোকটির কথা শুনে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,, বলে কি??আমার ভাইয়ার বয়স ২৭,,, আপুর বয়স ২০,, আর আমার ১৭…..এতো বড় বড় ছেলেমেয়ের মাকে বাচ্চা বলে কেমনে,,, আজিব….কমনসেন্স টুটালি জিরো,,,হুহ।।।আচ্ছা এই লোকটা আম্মুর প্রাক্তন প্রেমিক নয় তো??এমা ছি ছি।।নিজের মাকে নিয়ে কিসব ভাবছি।।তাছাড়া আমার জানা মতে বাবা -মার লাভ মেরেজই ছিলো তাহলে উনার সাথে প্রেমই বা কখন করলেন।।।উফফফ,,,,আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,,,,,আর লোকটি যেভাবে অরি অরি করছেন আর কিই বা ভাবা যেতে পারে??আমি শুধু নানুভাইকেই অরি নামে ডাকতে শুনেছি তারপর উনি।।।প্রশ্নগুলো নিয়ে যখন খিচুড়ি পাকাচ্ছিলাম তখনই বাবা সামনে এসে দাড়াঁলেন।।।আমার হাত-রীতিমতো ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।।এটা যদি মার প্রোক্তন হয় তাহলে বাবা তো লঙ্কাকান্ড শুরু করে দিবেন।।ভয়ে তো আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।মার সেদিকে খেয়ালই নেই।।কিন্তু লোকটি খেয়াল করলো,,, মাকে টেনে নিজের থেকে ছাড়িয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন।।।আমি চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছি,,এখনই নিশ্চয় বাংলা ছবির মতো ফাইটিং শুরু হবে,,,, কিন্তু একি??কোনো শব্দই তো শোনা যাচ্ছে না,,,,চোখ পিটপিট করে খোলে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।।।বাবা লোকটিকে জড়িয়ে ধরে আছে।।আমি অবাকের সপ্তম আকাশ পাড়ি দিয়ে শান্ত হয়ে দাড়ালাম,,,সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।।।নিজের বউয়ের প্রোক্তনকে বুকে জড়িয়ে নিবে এমন পুরুষ মানুষও দুনিয়ায় আছে জানতাম না।।আমার বাবার নাম অবশ্যই ইতিহাসের পাতায়,ছাপা উচিত।।হঠাৎ বাবার কথায় ভাবনায় ছেদ ঘটলো,,,

বাবাঃ রোদ মা??এটা তোমার ইকবাল মামু।।।
আমি চিনতে পারলাম না,,,কখনো শুনেছি বলেও মনে হয় না।।।ভদ্রতার খাতিরে বললাম,,, আসসালামু আলাইকুম মামু,,, ভালো আছেন??

ইকবাল মামুঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।।ভালো আছি মা,,তুমি কেমন আছো??

আমিঃ জি ভালো

মাঃ তুমি বিয়ে করো নি?মানে পরিবার??

ইকবালঃ আরে তোমার ভাবিও এসেছে,,,সাথে দুই ছেলেও(মুচকি হেসে)দাড়াও পরিচয় করিয়ে দেই।।

কিছুক্ষন পরই একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা,,,আর দুজন ছেলে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন।।।তারমধ্যে একজন ছিলেন শুভ্র ভাইয়া,,,,আমার বুঝতে বাকি রইলো না উনি মামুর ছেলে।।।মামু পরিচয় করিয়ে দিলেন,,,অভ্র, শুভ্র তার দুই ছেলে।।অভ্র ভাইয়া ব্যবসায় হাত দিয়েছে আর শুভ্র ভাইয়া অনার্স কমপ্লিট করছেন।।এবার ফাইনাল ইয়ার।।।মামানি তো মাকে দেখেই জড়িয়ে দড়লেন,,,মামু নাকি মামানিকে মার কথা রোজ বলতো,,,বোনটাকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি।।।আমার নিজের গালেই চড় মারতে ইচ্ছা করছিলো,,ছি ছি,,,আমি না জানি কি কি ভাবছিলাম,,,,,,,


আজানের শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম।।।ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম,,,এতোক্ষণে খেয়াল হলো উনি রুমে নেই,,,হাজার হলেও স্বামী তো,,চিন্তা তো হয়ই।।কেমন যেনো অস্থির লাগছে,,,হঠাৎ মনে পড়লো,,উনি তো কাল রাতে ব্যালকনিতে গিয়েছিলেন,,, দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলাম উনি ফ্লোরে পড়ে ঘুমুচ্ছেন,,,পাশে অসংখ্য সিগারেটের টুকরো,,,,বুকের ভেতরটাই কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো,,,,


#চলবে
(গল্প ভালো লাগলে জানাবেন,,ভালো লাগলে,,পরের পার্ট দিবো নয়তো আর এগোবো না।।আর গল্প পড়ার জন্য কেউ রিকু দিলে একটা একটা ছোট্ট মেসেজ অবশ্যই দিবেন প্লিজজজজজ,,,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here