#তোকে চাই❤ পর্ব২২
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
।
।
তুলনা কেন হবে না??অবশ্যই হবে।।মামার বাড়ির আবদার নাকি??পাবলিক প্লেসে অন্য মেয়ের সাথে জড়াজড়ি করবেন আর আমি মেনে নিবো বুঝি??কখনো না,,,হুহ
।
আমি মোটেও জড়াজড়ি করছিলাম না।।সো মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ,,স্টুপিড গার্ল(দাঁত চেপে)।।ওয়েট,,ওয়েট,,আর ইউ জেলাস রোদ??(ভ্রু কুঁচকে)
।
অবিয়েসলি,, আম জেলাস ফিল করছি,,,এটা এতো মোড নিয়ে বলার কি আছে বুঝলাম না।।মেয়েরা তার স্বামীকে ভালোবাসোক বা না বাসোক।।পছন্দ করুক বা না করুক,,,তবুও তারা জেলাসি ফিল করবেই।।।এটা বাঙ্গালী মেয়েদের নেচার।।কবুল বলার সাথে সাথে তাদের মধ্যে জেলাসির প্রকাশ ঘটে।।।সেই হিসেবে আমার জেলাস ফিল করাটা স্বাভাবিক,,,, এটা আকাশ থেকে পড়ার মতো আহামরি কিছু নয়।।।আর শুধু মেয়েরা কেন??আপনি,,মিষ্টার আবরার শুভ্র,,যে আমাকে দু’চোখে দেখতে পায় না,,সেই আপনিও সাহেল ভাইয়ার,সাথে আমাকে দেখলে তো,, জ্বলে ছাড়খার হয়ে যান,,,হুহ।।।
।
ক,,,কে বললো তোমায়,, আমি জেলাসি ফিল করি??জেলাসি আর তোমার জন্য,, ইম্পসিবল।।। (মোড নিয়ে)
।
ওহ,,তাই নাকি??ওকে।। সাহেল ভাইয়া কাল উনার সাথে লং ড্রাইবে যাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করেছিলো ,,,ভাবছি কালকে রাজি হয়ে যাবো।।।সাহেল ভাইয়ার মতো ড্যাশিং এন্ড কেয়ারিং একটা ছেলের সাথে লং ড্রাইভ!!! ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে।।।(ডাহা মিথ্যা কথা)
।
পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো,,এতো শখ লং ড্রাইভে যাওয়ার??(দাঁতে দাঁত চেপে)
।
পা চাইলে ভাঙতে পারেন,,,আমার জন্য আরো সুবিধা হবে,,,(খুশি খুশি গলায়).।
।
মানে???(অবাক হয়ে)
।
সুবিধায় তো,,সাহেল ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে হেঁটে যাবে,,,একদম বুকের সাথে লাগিয়ে,,উনার শরীরের মাতাল করা গ্রান আমার নাকে আসবে,,আমি উনার শার্ট,,,,,
।
শাট আপ।।।।(চিৎকার করে)
।
আরে শুনুন তো,,
।
আই সেইড,,,জাস্ট শাট আপ।।নো মোর ওয়ার্ডস্।।
।
কেন কেন??কি সমস্যা??আপনি ওই মিথিলা,,তিথিলার সাথে ওসব প্রাকটিক্যালি করতে পারবেন আর আমি বলতেও পারবো না??আমিও,,,
।
চুপপ,,,তুমি দেখো নি,,,মিথি কিভাবে কাঁদছিলো।।মেয়েটা কতোটা মানসিক চাপে আছে তোমার ধারনা আছে???মেয়েটার ডিবোর্স হয়ে গেছে,,আর….
।
ওহহো,,,কেমন চিপ গার্ল,,,নিজের ডিবোর্স হয়ে গেছে তো এসে গেছে অন্যের বরের উপর ডাকা ঢালতে,,,
।
রোদদদদ(ধমক দিয়ে,,)তুমি যে এমন চিপ মনমানসিকতা ক্যারি করো আমার জানা ছিলো না।।।তুমি জানো,,ও ঠিক কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে?? মেয়েটা সব ছেড়েছুড়ে যে মানুষটার হাত ধরে চলে এসেছিলো,,আজ সেই মানুষটিই মাঝ রাস্তায় তার হাত ছেড়ে দিয়ে,,অন্য একটা মেয়ের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছে।।।ছিহ্,,,,ভাবতেও ঘৃনা হয় আমার,,একটা মানুষ এতোটা নিচে কি করে নামতে পারে??ভালোবাসা কি ফুরিয়ে যাওয়ার জিনিস??যে সময়ের সাথে সাথে ফিকে হয়ে যাবে??ওই শালাকে হাতে পেলে আমি ওকে খুন করে ফেলতাম,,নেহাৎ মিথি রিকুয়েষ্ট করেছে,,নয়তো ওকে পুঁতে রেখে দিতাম,,
।
উনি রাগে ফুঁসছেন।।চোখদুটো লাল হয়ে আছে।।।আমি ভয় আর খারাপ লাগা দুটোর সংমিশ্রণে গড়া একটা অনুভূতি নিয়ে বসে আছি।।সত্যি তো,,আপুটা খুবই ভয়ানক পরিস্থিতিতে আছেন,,,আর যায় হোক,,ভালোবাসার মানুষটি থেকে ধোঁকা পাওয়ার মতো কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।।।লোকটাকে যদিও আমি দেখিনি,,,তবু ইচ্ছা হচ্ছে উনার সাথে সাথে আমিও তাকে দুই/একটা কিল-ঘুষি দিয়ে দিই।।
।
আচ্ছা উনার বাবা -মা কোথায়??
।
নেই,,
।
আমি বিস্ফারিত চোখে উনার দিকে তাকালাম,,,নেই মানে??
।
মিথি ওর বাবা-মার অমতে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে।।।শেষ বয়সের একমাত্র মেয়ে ছিলো মিথি,,খুব বেশিই ভালেবাসতেন,,তাই হয়তো ধাক্কাটা সামলাতে পারেন নি,,,সেইদিনই হার্ট আট্যাকে মারা যান ওর বাবা।।তার মাস ছয়েক পরে মিথির মা।।।মিথি বড্ড অন্যায় করে ফেলেছে,,,,তাই হয়তো শাস্তিও পাচ্ছে,,,,
।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম,,,,এই মুহূর্তে কে দোষী আর কে নির্দোষ,,, ভাবতে ইচ্ছা করছে না।।তাই চুপচাপ গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নিলাম,,,,উনি আবারও বলে উঠলেন,,,
।
কাল রাতে যখন ব্যাপারটা জানতে পারলাম,,,তখন ভীষন ধাক্কা খেয়েছিলাম,,,মিথি প্রেগনেন্ট জেনেও,,ছি,,শেম অন দেট গাই,,,,তাই তোমাকে বেশি করে পড়তে বলছি।।তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।।।সেল্ফ ডিপেন্ডেট হতে হবে,,,পড়াশোনাটা ছেলেদের থেকে মেয়েদের আরো বেশি প্রয়োজন,,,আমি চাই না তুমি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়ো,,
।
আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকালাম,,,এই লোকটার মাথায় তাহলে ভালো চিন্তাও আছে।।বাহ,,,শুনে শান্তি পেলাম।।।তাহলে,,,এইজন্যই বুঝি উনি কাল রাতে আমার উপর বই-খাতা টর্চার চালিয়েছেন,,,জামাই আমার এতোটাও খারাপ না,,,উনার গালে একটা কিস করে দিতে ইচ্ছে করছে।।।উনি সামনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,হয়তো কিছু ভাবছেন।।আমি ধীরে ধীরে ড্রাইভিং সিটের দিকে এগিয়ে গেলাম,,,উনার খুব কাছাকাছি বসে আছি,,,উনার গালে একটা মিষ্টি চুমু এঁকে দেওয়ার আশায় মুখটা এগিয়ে নিতেই উনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন,,,আর আমার ঠোঁট গিয়ে পৌঁছোলো উনার ঠোঁটের উপর।।।আমি এতোটাও আশা করি নি ,,,আনএক্সপেক্টেট এই ব্যাপারটাতে আমাদের দুজনেরই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।। অবাকের মাত্রা এতো বেশি ছিলো যে,,দুজনের ঠোঁট যে এখনো একে অপরকে ছোঁয়ে আছে সেদিকে খেয়ালই নেই।।।।কিছুক্ষণপর পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েই উনি রাগী চোখে তাকালো,,,আমিও অসহায় দৃষ্টিতে একবার উনার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম,,,আজকে নিশ্চয় উনি আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবেন,,,,ব্যাপারটা কি বিশ্রী,,ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।।এদিকে উনি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছেন,,,উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলাম,,,
।
দেখুন,,এবার আমাকে বকলে আমি কান্না করে দিবো।।আমি মোটেও ইচ্ছে করে এমনটা করি নি।।।আপনিই তো হঠাৎ করে আমার দিকে ফিরে তাকালেন,,নয়তো এমনটা কখনো হতো না।।।আমি তো জাস্ট ওই পাশের দোকানের নামটা দেখার জন্য,এগিয়ে গিয়েছিলাম।।।নার্ভাসনেসে কি বলতে যে কি বলছি,,আল্লাহ মালুম,,,তবে কাজ যে হয়েছে সেই অনেক।।।উনি আর কিছু না বলে,,দাঁত কটমট করতে করতে গাড়ি স্টার্ট দিলেন,,আমিও হাফ ছেড়ে বাচঁলাম।।।উনার,সাথে বিয়ে হয়ে জীবনটা মরুভূমি হয়ে গেছে,,,মাঝেমাঝে মরীচিকার দেখা মিললেও,,উনার রাগী চোখের তাপে ওগুলোও হাওয়া হয়ে যায়,,,ধেৎ
।
।
রাত ১১ টা বাজে,,,আমি ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছি।।শুধু শুধু দাড়িয়ে আছি,,ব্যাপারটা মোটেও তেমন না।।।আমি আসলে শুভ্রকে খুঁজছি।।আমাকে পড়তে দিয়ে সেই ১০ টায় রুম থেকে বেরিয়েছেন,,আর এখন বাজে ১১ টা।।।গত একঘন্টা ধরে মানুষটা হাওয়া।।।বাড়ির প্রতিটি ঘর চেক করে উনার টিকিটির সন্ধান না পেয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।।হঠাৎ মামানিকে দেখতে পেলাম,,,একটা ট্রে তে,,তিন কাপ কফি আর কিছু হালকা খাবার নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগুচ্ছে,,,ব্যাপার কি??সবার ডিনার কমপ্লিট,,এখন এসব কে খাবে??আর কিছু না ভেবে মামানির কাছে চলে গেলাম,,যদি শুভ্রর কোনো খবর পাওয়া,যায়।।
।
মামানি,,,এসব কার জন্য গো??
।
সাব্বির আর রোহান এসেছে,,শুভ্রর সাথে ছাঁদে আড্ডা দিচ্ছে,,এগুলো ওদের জন্যই।।।
।
ওহ,,এই ব্যাপার।।সাহেব তাহলে আড্ডায় মজেছে।।
।
আচ্চা,,মামানি,,দাও আমি দিয়ে আসছি।।তুমি ঘরে যাও।।
।
মামানি প্রথমে মানা করলেও একপ্রকার আমার কথা রাখতেই আমার হাতে ট্রেটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।।আমি মনের সুখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি।।কিন্তু ছাঁদের দরজার কাছে এসে,,আমার পা যেনো অটোমেটিক থেমে গেলো,,,উনাদের কথাগুলো আমার কানে স্পষ্ট,,,
।
#চলবে,,,