#তোকে চাই❤পর্ব৩৪
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
।
।
মা আমার অফিস আছে আমি আসছি,,,,রোদ তুমিও চলো,,
।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালেন উনি,,,সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েও পিছন ফিরে বলে উঠলেন,,,”খালমনি তুমি আমার বউ আর আমার ফ্যামিলি থেকে দূরে থেকো,,, তোমার জন্য উইথআউট রিজন আমার ফ্যামিলি মেম্বার কষ্ট পাবে তা আমি মেনে নিবো না,,,আর হ্যা,,মনে রেখো বউমনি কিন্তু আমার বোনের থেকে কোনো অংশে কম না।।”আমি উনার যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।।এই মানুষটির ক্যারেক্টার এখনো আমি বুঝে উঠতে পারি নি।।।এখানে বসে থাকা সবার মনে উনার জন্য হয়তো সম্মানবোধটা হাজার গুন বেড়ে গেছে আর আমার মনে উনার জন্য ভালোবাসাটা।।প্রচন্ডরকম ভালোবাসি এই লোকটিকে,,
।
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,আর উনি ঘরময় ঘুরে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছেন,,কখনো চুল তো কখনো টাই ঠিক করছেন,,,ঘড়ি পড়ছেন,,,ফাইল গুছাচ্ছেন,,,আমি সবসময়ই উনার প্রতিটি মুভমেন্টে প্রেমে পড়ে যায়।।আচ্ছা,,উনি কি জানেন??আমি যে মিনিটে দশবার করে উনার উপর ক্রাশ খাই।।মাঝে মাঝে মনে হয়,, এই ছেলেটাকে জুস বানিয়ে খেয়েই নিই,,শান্তি লাগলেও লাগতে পারে।।হঠাৎই উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে বলে উঠলেন,,,
।
হোয়াট হ্যাপেন্ট রোদ??এভাবে তাকিয়ে আছো কেন??
।
আই লাভ ইউ
।
আমি এমন কিছু বলবো তা হয়তো উনি কোনো কালেই ভাবেন নি।।অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই আমার দিকে তাকালেন,,,কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না,,
।
আপনি এত্তো কিউট কেন?(ঠোঁট উল্টিয়ে)
।
এবার আর উনি দাঁড়ালেন না,,,চরম অস্বস্তিটা কাটিয়ে উঠতে না পেরে “অফিসে লেট হচ্ছে” বাহানা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।আমাকে যে সাথে নিবেন সেটাও ভুলে গেলেন।।।তো কি আর করা,,কোনো রকম ব্যাগটা নিয়ে আমিও ছুটলাম তার পিছু পিছু,,,
।
কি ব্যাপার??আমাকে রেখে চলে যাচ্ছেন কেনো??(হাঁপাতে হাঁপাতে)
।
ওহ,,ভুলে গিয়েছিলাম,, গাড়িতে উঠো।।
।
উনি একমানে গাড়ি চালাচ্ছেন,,,হঠাৎই কি মনে করে গাড়ি থামিয়ে দিলেন,,,
।
কি ব্যাপার??থামালেন কেনো?(ভ্রু কুঁচকে)
।
যাবো না,, অফিস যাবো না আজ।।
।
আপনি না গেলে নাই,,আমাকে তো এটলিস্ট কোচিং এ দিয়ে আসুন লেট হচ্ছে,,,
।
তুমি তো আরো যাবে না,,
।
হোয়াট??কিন্তু কেনো??আমার আজ কোচিং এ এক্সাম আছে,,,,সারারাত পড়ছি কাল,,এক্সাম তো আমি দিবোই।।আপনি ড্রপ না করলে আমি একাই চলে যাবো,,,
।
কথাটা বলে গাড়ির দরজা খুলতে যাবো তখনই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন,,,
।
এই পিচ্চি,,এই আমার কথা মাঝে মাঝে শুনে নিলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে??এতো জেদ কেন তুমি??যাবে মা মানে যাবে না।।বেশি কথা বললে কানের নিচে দিবো দুটো,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)
।
এহহহহ,,,জানতাম,,আই নিউ ইট।।সব ছেলেরা এক টাইপ হয়,,,খালামনির সামনে হিরো সেজে এখন একা পেয়ে আমাকে মারতে চাইছেন,,(মুখ গোমরা করে)
।
আমার কথায়,উনি হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরে আমাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে রাগী গলায় বলে উঠলেন,,,
।
আমার বউ,,আমি ইচ্ছে হলে মারবো,,ইচ্ছে হলে আদর করবো,,তোমার সমস্যা কি??
।
জীবনে আদর করছেন?? মারতেই শুধু পারেন।।ওই হিসেবে আমিও আপনার সাথে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি,,আমার হাজবেন্ড বলে কথা।।আদর টা না হয় আমিই করে দিই,,,(চোখ টিপে)
।
কথাটা বলেই উনার চমচমের মতো গালটাতে একটা টাইট কিস করে দিলাম,,,উনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালেন,,,,রাগী চোখে কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলেন।।।কোনো রিয়েকশন না দিয়েই আবারো গাড়ি ড্রাইভ করায় মন দিলেন,,,উনার কপাল কুচঁকে আছে,, মনে হচ্ছে বেশ টেনশনে আছেন,,
।
আচ্ছা?আমারা হঠাৎ ফিরে যাচ্ছি কেন??কোনো সমস্যা??(ভ্রু কুচঁকে)
।
খুব বড় সমস্যা,,তুমি যদি সত্যি হারিয়ে যাও আমার থেকে??নীলি কি বুঝাতে চাইলো আমায়??তোমার বিপদ?? না,,বিন্দুমাত্র রিস্ক নিতে চাই না আমি আমার পিচ্চিটাকে নিয়ে,,,(ভ্রু কুচঁকে,,বিরবির করে)
।
কি বিরবির করছেন??জোড়ে বলুন না,,,কি হারিয়ে যাবে??(কৌতূহলী চোখে)
।
রোদ??কিছুদিন তুমি কোচিং যাবে না,,,কোচিং এর লেকচার শিট আর কোশ্চেন পেপার বাসায় এনে দিবো,,বাসায় বসেই পড়াশোনা করবে,,,
।
কিন্তু কেনো??
।
এত্তো প্রশ্ন করবে না রোদ,,যা বলছি তাই করবে ব্যাস(বিরক্তি নিয়ে)
।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে উনি টাই খুলছেন,,আর আমি সন্দেহ ভরা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,আমি কোচিংএ কেন যাবো না,,,কি চলছে উনার মাথায়??ভাবতে ভাবতেই উনার হাতের তিলটার উপর চোখ পড়লো,,,তিলটা উনার হাতের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে,,,কি আলতো হাতেই না টাইটা খুলছেন,, টাইও বুঝি যেকোনো টাইম তার প্রেমে পড়ে যাবে,,,আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,,আয়নার ভেতর দিয়ে চোখের ইশারায় বুঝালেন,, কি হয়েছে??
।
আ,,আমি টাই বাঁধতে পারি না,,,
।
তো??তোমাকে টাই বাঁধতে শিখতে কে বলেছে??
।
না,,আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন সো আমার টাই বাঁধতে পারাটা উচিত তাই না??
।
তোমাকে কে বললো আমি শাড়ি পড়াতে পারি??(ভ্রু কুঁচকে)
।
পারেন না??(অবাক হয়ে)
।
অবিয়েসলি নট,,,এসব ফালতু জিনিসের জন্য আমার টাইম নেই। অযথা শাড়ি পড়া শিখতে যাবো কেন??
।
কিহ,,ছেলে হয়ে আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন না??
।
কেন??ছেলে হওয়ার পেছনে শর্ত জুড়ে দেওয়া আছে নাকি??যে ছেলে হতে হলে শাড়ি পড়া শিখতে হবে??
।
না তা নয়,,,সব ছেলেরাই,,আই মিন মোস্ট অফ দ্যা বয়েজ,,বউয়ের সাথে রোমান্স করবে বলে লুঙ্গি পড়া শেখার আগে শাড়ি পড়া শিখে,,,
।
আমি ওই মোস্ট অফ দ্যা,বয়েজ এর মধ্যে পড়ি না।।।তাছাড়া রোমান্স করতে হলে শাড়ি খুলে করবো,,পড়িয়ে করতে যাবো কেন??(ভ্রু কুঁচকে)
।
ছিহ,,আপনি এমন চিপ টাইপ কথা বলছেন কেন??
।
যা সত্য তাই বললাম,,এখানে “ছিহ” এর কি দেখলে??
।
আমি আর কিছু বললাম না,,কে জানে আবার কি বলে বসে???হঠাৎই উনি কাগজে মোড়ানো বড়োসড়ো কিছু একটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন,,যা ধরে রাখতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্চে আমাকে,,,,ভ্রু কুচকে অবাক চোখে বলে উঠলাম,,,
।
এটা কি??
।
হ্যাপি বার্থডে,,
।
কিহ,,আজ কতো তারিখ??
।
জুলাইয়ের ১ তারিখ,,,
।
বাট আমার জন্মদিন তো জুনের ১ তারিখ,,,
।
তো??১ তারিখেই তো নাকি???
।
তাতে কি??মান্থ আলাদা,,
।
আচ্ছা,,তুমি হ্যাপি বার্থমান্থ বলো,,নাকি হ্যাপি বার্থডে বলো??(ভ্রু নাচিয়ে)
।
বার্থডে অবিয়েসলি,,
।
তাহলে মান্থে কনসেনট্রেট না করে ডে-তে কনসেন্ট্রেট করো,,,
।
সত্যি তো উনার কথায় লজিক আছে,,,শুধু শুধু মান্থে কনসেনট্রেট করে কি লাভ??কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হাতের জিনিসটার উপর চোখ পড়লো,, কাগজটা সরিয়ে,,ভেতরের জিনিসটা দেখেই অবাক হতে বাধ্য হলাম।।এটাকে আমাদের দু’জনের কেন্ডেট পিকও বলা যায়।।ছবিটা বিয়ের আগের,,রুমু আপুর বিয়েতে,,,উনি দাঁত কেলিয়ে হেসে আমার লম্বা বেনী ধরে টানছেন,,আর আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে,,,ভ্রু কুচঁকে,, ঠোঁট উল্টিয়ে উনার দিকে ঘাড় বেকিয়ে তাকিয়ে আছি।।পিকটা এত্তো কিউট হয়ছে বলার বাইরে,,কিন্তু এই পিকটা কখন তোলা হয়েছে??
।
এই পিক কখন তুলছেন??(অবাক চোখে)
।
আমি না নীলি তুলেছিলো,,,রুমু ভাবির বিয়েতে,, নীলির ফটোগ্রাফির শখ ছিলো,,ছবিটা ওর কাছে বেশ কিউট লাগতো,,ছবিটা আসলেই অনেক কিউট,,,আর তোমার কিউট ফেস,,,
।
#চলবে,,,
।
(লিখছিলাম বড় করে বাট ডিলিট হয়ে গেছে সো সেকেন্ড টাইম টাইপ করা লাগছে,,,আপনাদের আর আমার দু’পক্ষেরই ভাগ্য খারাপ)