#তোকে চাই পর্ব ৩৮

0
1278

#তোকে চাই❤পর্ব ৩৮
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



কি ব্যাপার?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন???(ভ্রু কুচঁকে)নদীতে ফেলে টেলে দেওয়ার প্ল্যান করছেন না তো??

হোয়াট ননসেন্স?? নদীতে কেন ফেলবো??

যেভাবে তাকিয়ে আছেন,, সন্দেহ তো লাগবেই,,,এমন তো নয় যে আমাকে দেখে আপনি মিনিটে দশবার/বারোবার ক্রাশ খাচ্ছেন,,আমি তো আবার ক্রাশ খাওয়া টাইপ না,,,তো তাকিয়ে কেনো আছেন??(ভ্রু নাচিয়ে)

তোমাকে শাড়ি কে পড়তে বলছে??(গম্ভীর কন্ঠে)

কেনো??কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে নাকি??আই মিন এব্রিথিং অলরাইট?? (তাড়াহুড়ো করে)

রিলাক্স তোমার সব ঠিক আছে,,,বাট আমার সব বেঠিক হয়ে গেছে,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)

মানে??(ভ্রু কুচঁকে)

হার্ট বেরিয়ে আসতে চায়ছে,,,আসলে কি বলোতো রোদ,, তোমাকে যতটা ছোট লাগে তুমি ততটা নও,,,তা তোমায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেই বুঝা যায়,,,,

উনার তাকানো আর কথায় অবাক হবো নাকি অস্বস্তি ফিল করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না,,তাই ভ্রু কুচকে আগের মতোই উনার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম,,,

তোমাকে গুলুমুলু পুচকি টাইপই বেশি ভালো লাগে,,,এসব শাড়ি টারি পড়ো না,,,

কেনো খারাপ লাগছে দেখতে??(মুখ ফুলিয়ে)

তুমি আসলেই একটা হাদা,,,আমার কথা যে একটাও তোমার মাথায় ঢুকে নি সে বেশ বুঝতে পারছি,,,(গাল টেনে দিয়ে)

তাহলে বুঝিয়ে বললেই তো হয়,,,,(ঠোঁট উল্টে মুখ ফুলিয়ে)

বুঝিয়ে বলবো???ওকে বোঝাচ্ছি,,,শাড়ি পড়লে তোমাকে প্রেমে পড়া টাইপ মেয়েদের মতো লাগে,,আই মিন,,,হট এন্ড,, সেক্সি,,(চোখ টিপে)

কথাটা বলেই উনি হুহা করে হেসে উঠলেন,,,,আর আমি অবাক চোখে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছি।।।উনার কথাটা বুঝতে আমার পুরো দু মিনিট সময় লাগলো,,,ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমার চোখ দুটি বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,

ছিহ,,,আপনি আমার উপর এসব বাজে ওয়ার্ড ইউজ করছেন??(রাগী গলায়)

তো??এসব বাজে ওয়ার্ড কিভাবে হলো??এগুলোকে মনের ভাব প্রকাশক শব্দ বলতে পারো,,,,তাছাড়া এগুলো তোমার উপর এপ্লাই করবো না তো কার উপর করবো??? বন্ধুর বউ এর উপর এপ্লাই করবো??আমাকে ধুয়ে দেবে,,,হুহ

ভালোই তো হবে,,,বিনা খরচে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবেন,,,,(মুখ ভেঙিয়ে)

তুমি,,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)এনিওয়ে এখন মন কেমন??

কেন আমার মনের আবার কি হলো??(বিরক্তি নিয়ে)

তুমিই না বললে মোড সুয়িং হচ্ছে?(অবাক চোখে)

ওহ,,,বিরক্তিভাবটা এখন একটু কম,,,(মুখ গোমরা করে)

চলো একটা কাজ করি,,,মন ভালো হয়ে যাবে,,,

কি কাজ??(ভ্রু কুঁচকে)

আরে চলো তো,,আর কথায় কথায় ভ্রু কুচকাবে না তো,,,(হাত ধরে টেনে)

উনি আমাকে নদীর পাড়ে এনে ধার করালেন,,,,,আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা উনি কি করতে চাইছেন,,,,কে জানে??ধাক্কা টাক্কা মারবে না তো আবার,,,,

চলো পা ভিজাই,,,

আমি আবারো উনার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকালাম,,,”এই যে আবারো ভ্রু কুচকাচ্চো,,,মানা করেছি না??এখন চলো আমার সাথে”

শাড়ি ধরে রাখতে হবে তো,,,

হবে না,,,ভিজতে দাও….

দুজনে অল্প পানিতে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,,আমার কাছে ব্যাপারটা পাগলের কারবার ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না,,,

আচ্ছা??তোমার কোন গানটা গায়তে ভালো লাগে?(আমার দিকে তাকিয়ে)

ইউ মিন ফেবরিট সং??

নাহ,,,ফেবরিট সং না,,,এমন কিছু গান আছে যা তোমার প্রিয় গান বলা যায় না,, তবে গলা ছেড়ে গাইতে ভালো লাগে,,,এমন টাইপ,,,

উমমমমম,,,মনে পড়ছে না,,,(করুন চোখে)

মনে করো,,,(গম্ভীর মুখে)

ইচ্ছেটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,,এইগানটা গাইতে বেশ ভালো লাগে,,,

তাহলে গাও,,,

এখন??(অবাক হয়ে)

হুমম,,,আমাকে শোনানোর জন্য নয়,,,নিজের জন্য গাও,,,গলা ছেড়ে গাও,,আশেপাশে কেউ নেই কেউ শুনবে না,,,

কিন্তু,,,

গাও বলছি,,(ধমক দিয়ে)

উনার ধমকে ধীরে গাইতে লাগলাম,,,,আস্তে আস্তে আমার গলার আওয়াজ যে বাড়ছে বুঝতে পারছি।।।একসময় খেয়াল করলাম,,গানটা আমি বেশ ইনজয় করছি এবং হাত পা ছুড়ে তাল মেলানোরও চেষ্টা চালাচ্ছি,,আর উনিও কম কিসে আমার সাথে গলা ছেড়ে গাইছেন,,,”ইচ্ছেটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,,এক পৃথিবীর ভালোবাসা রয়েছে ঘিরে,,মনটা যেনো আজ পাখির ডানা,,,হারিয়ে যেতে আজ নেইতো মানা,,,চুপিচুপি চুপি স্বপ্ন ডাকে হাত বাড়িয়ে,,,মন চাই মন চাই,,,,,,,” দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করে টায়ার্ড হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লাম,,,,
মনটা সত্যিই ফ্রেশ লাগছে,,,শাড়ি ভিজে একাকার কিন্তু তত খারাপ লাগছে না,,,গরমের দিনে ভেজা কাপড় তেমন সমস্যা করে না।।হঠাৎ ই উনি উঠে গাড়ির দিকে হাটা দিলেন,,,কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করায় বললেন,,,”এখনি আসছি”।।।প্রায় মিনিট দশেক পর উনি ফিরলেন,,হাতে মাঝারি সাইজ আইসক্রিম বক্স,,,আমার পাশে বসতে বসতে বলে উঠলেন,,,”কি চাই??” আমি মুচকি হাসলাম মাত্র,,,,,সন্ধ্যা হবে হবে ভাব,,,প্রকৃতি ঘন অন্ধকারকে বরন করে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত,,,,আকাশটাও লাল রঙে সেজেছে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার লোভে,,,,আমিও সেজেছি এক অজানা অনুভূতিতে,,,শুভ্র, আমি পাশাপাশি দাড়িয়ে আছি,,,দুজনের চোখেই মুগ্ধতা,,,হঠাৎই উনি বলপ উঠলেন,, “রোদ? ভালোবাসি।” উনার বলা “ভালোবাসি” শব্দটা কানে বাজছিলো বার বার।।এটা কি আমার শোনার ভুল নাকি বুঝার ভুল??নাকি বাস্তবতা???অবাক চোখে উনার চোখে তাকালাম,,চোখে একগাদা প্রশ্ন….উনি আমাকে উচু করে তুলে গাড়ির ডিকির উপর বসিয়ে দিলেন,,,স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,,

দ্বিতীয় বার ভালোবাসা যায় এটা তোমার থেকে শিখেছি রোদ,,,দ্বিতীয়বারও বাঁচার স্বপ্ন দেখা যায়,,,তোমাদের দুজনের মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসি এটা জিজ্ঞেস করো না,,উত্তরটা আমার নিজেরই অজানা।।।আসলে উত্তরটা কখনো খুঁজতেই যায়নি।।উত্তরটা কি খুব জরুরি রোদ???(করুন দৃষ্টিতে)

আমি মাথা নেড়ে জানালাম না,,,উত্তরটা জরুরি নয়,,,,জরুরি হলো উনি আমাকে ভালোবাসেন,,,নীলিমা আপুকে ভুলতে বলার আমি কে??ওটা নীলিমা আপুর অধিকার,,,আসলে,,উনি নীলিমা আপুকে ভুলে যাননি,,,এই ব্যাপারটিই আমাকে তার প্রতি আরো বেশি আসক্ত করে তুলেছে,,,শ্রদ্ধাবোধটা বাড়িয়ে দিয়েছে,,সত্যিতো এভাবে কি ভুলা যায়??ভালোবাসা কি ভুলে যাওয়ার জন্য??উনি নীলি আপুকে পুরোপুরি ভুলে আমায় মেনে নিলে আমিই হয়তো তা মেনে নিতে পারতাম না,,,মনের মধ্যে একটা বিষয় সাড়াক্ষন নাড়া দিতো,,তার মানে কি এই নয় যে,,আমি হারিয়ে গেলেও উনি একইভাবে ভুলে যাবেন??উনার প্রতি ভরসাটা তৈরি হতো না,,,তাই আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে উনি নীলি আপুকে ভুলে যান নি,,,উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলতে শুরু করলেন,,,

ইশিতার বিয়ে হয়ে যাবার পর রুহান যখন ভেঙে পড়েছিলো,,তখন নীলি ওকে একটা কথা বলেছিলো,,,”ভালোবাসার মানুষটার চেয়ে ভালোবাসাটা বেশি দামী,,,ইশিতা তোমায় ছেড়ে দিয়েছে তারমানে এই নয় তুমি জীবনটাকেই ছেড়ে দিবে,,,আকড়ে ধর জীবনটাকে,,,ভালোবাসাটাকে অন্যকারো ভালোবাসার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখো,,,,মানুষটা মরে গেলেও ভালোবাসাটা যেন না মরে,,বেঁচে থাকে অন্য একজনের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে”
রোদ??আমি কি নীলির ভালোবাসাটা তোমার মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে পারি না???তোমাকে আমার চাই রোদ,,,খুব বেশিই চাই,,,আমার প্রত্যেকটা প্রয়োজনীয়তায়,,, প্রত্যেকটা মুহূর্তে চাই,,,,তারজন্য কি আমায় নীলিকে ভুলে যেতে হবে???কিভাবে পারবো বলো??(টলমলে চোখে)

আমি উনার হাতটা নিজের হাতে নিলাম,,উনার স্থির দৃষ্টি আমার চোখে মুখে,,,

নীলি আপুকে ভুলতে হবে না,,,তাকে একবিন্দুও ভুলবেন না আপনি,,,ভালোবাসাটা ভুলে যাওয়ার জন্য নয়,,,আমি নীলি আপুর পাশাপাশি বেশ আছি,,,আমাকে শুধু ভালোবাসলেই হবে,,,ভালোবাসায় প্রতিযোগীতা হয় না,,,ভালোবাসা,তো শুধুই ভালোবাসা,,,,

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,,,

সত্যি ভালোবাসি তোমায়,,,খুব বেশিই ভালোবাসি,,,এটা প্রয়োজনীয়তা থেকে বলছি না,,অনুভূতিগুলো থেকে বলছি,,,তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি ক্লান্ত,,,প্লিজ ছেড়ে যেও না আমায়,, প্লিজজজ,,,,

আমার চোখে জমে থাকা মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লো,,,,ইচ্ছে হচ্ছে চেঁচিয়ে বলি,,,ভালোবাসি,,বড্ড বেশিই ভালোবাসি,,,কিন্তু মুখ আজ নির্বাক।।।কান্নাগুলো গলায়,গুটি হয়ে আটকে গেছে যেনো,,কিছুতেই কথা বলতে পারছি না,,,কিছুতেই না।।।

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here