মেঘবতীকন্যা পর্ব ২

0
1113

#মেঘবতীকন্যা পর্ব ২
# সুমাইয়া আক্তার মিম

‘বারিশ খান, নামের মতোই অত্যন্ত সুদর্শন একজন পুরুষ।।যেমন ভয়ংকর সুন্দর তেমনি ভয়ংকর তাঁর রাগ।।সব কাজে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পারফেক্ট চাই।রুল মেনে চলতে বেশি পছন্দ করেন। তাঁর জীবনের সাথে জড়িত সব কিছুর রুলস সে নিজেই তৈরি করে। অত্যান্ত সুদর্শন এই পুরুষটির সম্পূর্ণ শরীরের রক্তে মিশে আছে রাগ আর এটিটিউট। তাঁর জন্ম হয় আমেরিকায়। দেখতে একদম আমেরিকান লোকদের মতো গায়ের রং। ধবধবে সাদা শরীরে মাথা ভর্তি কালো স্লিক চুল। নাকটা কিছুটা বোচা কিন্তু নাকটা জেনো তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠোঁট দুটো হালকা কালচে রংয়ের আর চোখ দুটো হালকা সবুজ ঘোলাটে।।সব মিলিয়ে অমায়িক সুন্দর এই পুরুষ।।মাত্র ২৭ বছরে আমেরিকার টপ বিজনেস ম্যানের খাতায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। অসাধারণ কৃতিত্বের কারনে আর সুন্দরের জন্য সে একজন ক্রাশ আইকন।।বাবার অঢেল সম্পদের উত্তরাধিকারী হলেও নিজের আলাদা পরিচয় গঠন করেছেন খুব অল্প সময়ে।। বিশেষ কারণে তাঁর এই কৃতিত্ব।। তাঁর পারসোনালিটি হাজারো মেয়ের রাতের ঘুম নষ্ট করেছে।। হাজার মেয়েদের মতো সে আমারোও ক্রাশ বললে চলে। হুম তাকে আমিও ভীষণ পছন্দ করি কিন্তু শুধুমাত্র সে আমার ক্রাশ কিন্তু বাস্তব জীবনে সবচেয়ে অপছন্দের তালিকায় আছে সে।। জীবনে সবচেয়ে বেশি কাউকে ভয় এবং অপছন্দ করলে তাহলে সে হবে মি.এরোগেন্ট ম্যান বারিশ খান।।
(লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম)

মনে মনে কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রূপসা।। কালকে থেকে তাঁর জীবনের সব কিছু এই বারিশ খানের অধিনে চলবে ভাবতে বুক থেকে ঠেলে কান্না আসছে।।কী করে থাকবে সে সারাজীবন এই হার্টল্যাস মানুষের সাথে।। এলোমেলো চুল গুলোকে হাত খোঁপা করে রুমের বিশাল বড় জানালাটা পাশের টুলটা টেনে বসলো।।জানালাটা খুলে দিতে বাহিরের শীতল হাওয়া গায়ে স্পর্শ করতে এক অন্য রকম ভালো লাগা ছেয়ে গেলো সারা শরীর জুড়ে।।।।। তাঁর রুমের এই জানালা থেকে বাড়ির সম্পূর্ণ উঠান দৃশ্যমান। যেখানে রয়েছে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ।। রয়েছে ছোট একটা পুকুর ঘাট যা বাড়ির পেছন দিকে অবস্থিত।। সম্পূর্ণ বাড়ি দেওয়ালে ঘেরা।।দু তালা বিশিষ্ট বাড়িটায় তিনতলায় ছাদ অবস্থিত। সম্পূর্ণ বাড়িটা ঘুরিয়ে করা হয়েছে। বিশাল বড় বাড়িটা পুরোনো আমলের হলেও এটা দেখলে বুঝা দায় এটা পুরোনো আমলের বাড়ি।। সম্পূর্ণ বাড়িতে আধুনিকতার ছোঁয়া।।বাড়ির প্রত্যেকটা সরঞ্জামে রয়েছে আধুনিকতা।। ছোট বেলায় থেকে ধিরে ধিরে বড় হয়েছে সে সকলের ভালোবাসা পেয়ে হেসে আনন্দ করে।। বাড়ির আনাচে কানাচে জেনো হাজারো স্মৃতি ঘেরা।। কালকের পর থেকে এই বাড়ি থেকে এবং কি পরিবারের সকলের থেকে তাকে অনেক দূরে চলে যেতে হবে ভাবতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো। উল্টো হাতে চোখের পানি মুছে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অতীতের স্মৃতি মনে করতে লাগলো।।। অতীত তাঁর বেশি একটা মনে নেই তাঁর কাছে অতীত অনেকটা ধোঁয়াশা, কারন তখন বয়স ছিল স্বল্প।।

“নিলয় খান আর মিথিলা খানের একমাত্র ছেলে বারিশ খান।ছোট বেলা থেকে তাঁরা ছিলেন রূপসাদের পরিবারের খুব নিকটতম প্রতিবেশী।।এক কথায় পরিবার বন্ধু বলা যায়।।নিলয় আংকেল আর মিথিলা আন্টিকে রূপসা কখনো আংকেল আন্টি বলে ডাকেনি, সবসময় বাবাই আর মামুনী বলে ডেকেছে।।বারিশ খান হচ্ছে তাদের প্রথম ছেলে তারপর একটা মেয়ে আছে যার নাম রিনি। রিনি রূপসার বয়সী এবং দুজনের মাঝে খুব ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে ।।নিলয় খান আর মিথিলা খান তাদের পরিবার সবাই আমেরিকা থাকেন বেশিরভাগ,কিন্তু যখনি দেশে ফিরেন তখন অনেক দিন এখানে দেখে যান।।বারিশের দাদা ছিলেন একজন আমেরিকান আর দাদী ছিলেন বাঙালি তাই বাংলাদেশ আর আমেরিকায় তাদের যাতায়ত সবসময় চলতেই থাকে।।বারিশের জম্ম আমেরিকায় হওয়া তাঁর হাবভাব বরাবরই মতো আমেরিকান প্রমানিত করে আর অন্য দিকে রিনি সোজাসাপ্টা বাঙালিদের মতো চলাচল করতে পছন্দ করে।।।ছোট বেলা থেকেই বারিশ খান রূপসার অপছন্দের তালিকায় ছিলেন আর তাঁর কিছু বিশেষ বিশেষ কারণ আছে।। কিছু বললে ভুল হবে , অনেক বিশেষ কারণ আছে ।রূপসা যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকে বারিশ খানের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।।ছোট বেলা থেকে খুব ছোট ছোট বিষয়ে রূপসাকে অনেক জ্বালিয়েছেন এই বারিশ খান যার দারুন প্রভাব তাকে সে জমের মতো ভয় পায় ! যেমন ভয়ংকর সুন্দর মানব তেমনি তাঁর ভয়ংকর কাজ।।তাকে ছাড়া রূপসা অন্য কোনো ছেলের সাথে খেলতে দেখলে সেদিন আর কেউ বাঁচাতে পারবে না তাঁর হাত থেকে রূপসাকে ।। বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্য তাকে ভয় করে এতোটা রাগি সে।।। একবার তাঁর নিষেধ অমান্য করে পাশের পার্কে একটা ছেলে বন্ধুর সাথে খেলেছে বলে শীতের সকালে কনকনে দোয়া উঠা পানিতে চুবিয়েছে, যার দারুন প্রভাব টানা সাত দিন জ্বরে ভুগেছে রূপসা‌।তারপর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে এবং মেয়ে বন্ধু কোনোটাই নেই রূপসার।।ছোট বেলায় যখন তাঁর নামটাকে সঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে না পেরে বারিশ কে বালিশ ভাইয়া বলেছিল সেদিন ইচ্ছে মতে কামড় খেতে হয়েছে তাকে । তারপর থেকে কখনো আর ভয়ে তাঁর সামনে পরেনি সে।। এর কিছুদিন পর একেবারের জন্য আমেরিকা চলে যান বারিশ খান সহ তার সম্পূর্ণ পরিবার।। সেদিন ভীষণ খুশি হয়েছিলো যে এখন থেকে হয়তো সে মুক্ত! কিন্তু বিপত্তি তো সেখান থেকে শুরু।।সেই ছোটবেলা থেকে ঔ বারিশ নামক ভয়ংকর মানব এখন পর্যন্ত তাঁর অদৃশ্য ভেরা জালে আটক করে রেখেছে তাকে।। সেদিনের অদ্ভুত দৃষ্টির মানে কিছু বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হতে লাগল।।।যখন রূপসার পনেরো বছর বয়স তখন খুব ধুমধাম করে জম্মদিন উৎযাপন করা হচ্ছিলো হায়দার বাড়িতে।সম্পূর্ণ গ্ৰামের মানুষ এবং অতিথি ভোজনে হৈ হৈ পরিবেশ মুখরিত ছিল সব কিছু। কিন্তু হঠাৎ করে সব কিছু জেনো এলোমেলো হয়ে যায়।। হঠাৎ রোজা হায়দার আর মিথিলা খান এসে রূপসাকে জম্মদিনের পোষাক পরিবর্তন করে একটা লাল শাড়ি পরিয়ে তৈরি করাতে শুরু করেন।। মিথিলা হায়দার কে হঠাৎ দেখে বেশ চমকে যায় রূপসা কারণ, তিনি কখন দেশে ফিরলো তাঁর সাথে তো কালই কথা হয়েছে রূপসার কই তিনি যে আসবেন বলেননি তো! আর আজকে এতো বছর পর হঠাৎ তাকে দেখে বেশ চমকে যায় সে।।।ওই বাড়ির সকলে খুব ভালোবাসে রূপসাকে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পরও রোজ রোজ কথা হতো সবার সাথে শুধু মাত্র বারিশ বাদে।। রোজা হায়দার আর মিথিলা খান কে অনেক জিজ্ঞাসা করার পর যখন জানতে পারে আজকে রূপসার বিয়ে এবং তাও আবার যাকে সবচেয়ে ভয় পায় মি.এরোগেন্ট ম্যান দ্যা বারিশ খানের সাথে তখন জেনো মাথায় বাজ পড়লো এমন ফিল হয়েছে তাঁর।। কিছুক্ষণ স্তব্দা খেয়ে বসে ছিলো সে পুতুলের মতো আর রোজা হায়দার আর মিথিলা খান তোরজোর করে তৈরি করছিলো তাকে সাথে অনেক কিছু বুঝাছেন কিন্তু রূপসা তখন ভাবনায় বিভোর ছিলো আশেপাশে কিছুই জেনো বোধগম্য হচ্ছে না তাঁর।।যখন নিয়ে যাচ্ছিল হল রুমে দিকে তখন জেনো হুশ ফিরল তাঁর । জোরে জোরে কান্না করে বিয়ে করবো না বলে কান্না কাটি করেও বিয়ে আটকাতে পারিনি সে।।সবাই বুঝিয়ে সুজিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল ঔ রাগি রাক্ষসটার সাথে।। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বিয়ের খাতায় নিজের নাম লিখে দিয়েছিলো সেদিন যখন ঠিক মতো বিয়ে কি তা জানাই ছিল না তাঁর।।। এখনো সে ঠিক বুঝতে পারছে না সেদিন এতো তাড়াতাড়ি করে কেনো বিয়ে দেওয়া হয়েছিল যেখানে তাঁর মতটুকু পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি কেউ।।। প্রতিদিন সবাইকে জিজ্ঞেস করলেও সবাই এই বিষয়টি শুনেও না শোনার ভান করে থাকেন। সবাই বিষয়টি এড়িয়ে চলেন। রোজা হায়দার কে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, সময় হলে জানতে পারবে বলে চলে যান।। সেদিন তাঁর জম্মদিনে পাওয়া সবচেয়ে ভয়ংকর সারপ্রাইজ ছিল সেটা।। কখনো জম্মদিনে গিফট হিসেবে বিয়ে হয় সেটা প্রত্যাশার বাহিরে ছিলো তাঁর।।। সবসময় এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাইলে রোজা হায়দার ধমকে চুপ করিয়ে দেন মেয়েকে।। তাঁর ভাষায় একটি কথা,বিয়ে মেয়েদের এক বারেই হয় তাই এখন থেকে মানিয়ে নিতে শুরু করে দাও।সময় হলে যার আমানত তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে ।।। তারপর থেকে এই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। আজকে ছয় বছর পর সব কিছু কেমন অগোছালো লাগছে তাঁর কাছে। বারবার মনে হচ্ছে এতো দিনের খোলা আকাশের উরন্ত দিন গুলো বুঝি শেষ হতে চললো।। আগামীকাল থেকে নতুন জীবন শুরু হবে যার নামটা পর্যন্ত তাঁর শরীরে কাঁটার মতো বিঁধে ।। পনেরো বছরের নাবালিকা থাকায় সেদিন বিয়েটা আইনি ভাবে হয়নি তাই এখন আইনি কাজকর্ম শেষ করে নিয়ে যেতে আসছে তাকে।।।
কথাগুলো ভেবে শুকনো ঢোক গিললো রূপসা।।।

“রোজা হায়দার মেয়ের রুমে প্রবেশ করে মেয়েকে অন্যমনস্ক হয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।।হাতের শপিং ব্যাগ গুলো কাবার্ডে রেখে ধীরে পায়ে মেয়ের পাশের টুলে বসে পরেন তিনি।।। পাশের টেবিলে দুধ ভর্তি গ্লাসটা দেখে কিছুটা রাগি কন্ঠে বলে উঠেন,,

—এখনো দুধ টুকু কেনো শেষ হয়নি রূপ। তুমি কী আমার হাতের মার না খেয়ে কোনোদিন নিজ ইচ্ছায় দুধ খাবে না।।। তোমার এই এক কান্ড রোজ রোজ ভালো লাগে না। জলদি শেষ করো দুধ টুকু।। মুখের সামনে ধরে।।।

রূপসা মায়ের কথা শুনে নিজেকে স্বাভাবিক করে কাচুমাচু মুখ করে বললো,,,,

—-আম্মি রোজ দুধ খেতে আমার একদম ভালো লাগে না।তার উপর সকাল, বিকেল,রাত।এতো কেউ দুধ খায় নাকি।।আমি বাচ্চা নই আম্মি।নাক কুঁচকে।।।

—হুম অনেক বড় হয়ে গিয়েছো তাইতো বাচ্চাদের মতো কাজকর্ম করবে সারাদিন।। প্রতিদিন তোমার এই বাহানা তো ঔ বাহানা। পৃথিবীর সব খাবার তোমার প্রিয় কিন্তু যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো সেগুলো তোমার মুখে যাবে না।। তাইতো অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পরো।
কথা গুলো বলে জোর করে মুখ চেপে দুধ খাইয়ে হাত দিয়ে শক্ত করে মুখ চেপে রাখে যাতে বের করতে না পারে।।‌‌
রূপসা অনেক কষ্ট করে চোখ মুখ খিচে দুধটুকু খেয়ে নিলো।।‌নিজেকে স্বাভাবিক করে বিরক্ত কন্ঠে বললো,,,,

—-এসব খেতে একদম ভালো লাগে না। কেমন লাগে খেতে ইয়াক।মুখ কুঁচকে।।

রোজা হায়দার মেয়ের কথা শুনে মৃদু হেসে মেয়েকে বিছানায় বসিয়ে নিজেও বসে পরেন। তারপর চুল আচড়িয়ে বেনুনি করতে লাগলো।।রূপসা কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুখ ছোট করে ধীরে গলায় বললো,,,,

—-আম্মি!

—-হুম বলো।বেনুনি করতে করতে জবাব দিলেন রোজা হায়দার।।
রূপসা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,,,

— আম্মি আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। তুমিতো জানো আমি কখনো তোমাদের ছাড়া কোথাও থাকিনি এবং কী কখনো এই গ্ৰামের বাহিরে পা পর্যন্ত রাখিনি।আমি কীভাবে এই দেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ একটা নতুন জায়গায় মানিয়ে নিবো। তুমি প্লীজ কিছু করো আমার ভালো লাগছে না।।

রোজা হায়দার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেনুনিতে ব্যান্ট লাগিয়ে দিয়ে বেনুনিটা রূপসার কাঁধে দিয়ে সামনে রেখে দিয়ে ধীরে গলায় বললো,,,,

—তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে রূপ। এতো দিন তোমাকে আমাদের কাছে রাখতে দিয়েছেন কিন্তু তুমি অন্য বাড়ির বৌ।এটা তোমাকে মেনে নিতে হবে।।বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েদের তাঁর স্বামীর বাড়িকে নিজের বাড়ি মানতে হয়।আমাকে দেখো, কেমন মানিয়ে নিয়েছি। তোমার প্রথমে একটু কষ্ট হবে পরে ঠিক মানিয়ে নিতে পারবে।আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি তোমার পরিচিতদের কাছে যাচ্ছো যাদের তুমি সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছো যাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছো তাদের কাছেই তো যাচ্ছো।।নিলয় ভাইজান আর ভাবি তোমাকে আমাদের থেকে কোনো অংশে কম ভালোবাসেন না সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো।। তাঁরা তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসে তাই এসব বলে কিছু হবে না।। কালকের জন্য প্রস্তুতি নাও। নিজের মনকে বুঝানোর জন্য অনেক সময় তুমি পেয়েছো।।। আমরা কখনো তোমার খারাপ চাইনি। তোমার জন্য সবচেয়ে বেস্ট যেটা সেটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আর এটা তোমার জীবনের সবচেয়ে বেস্ট পাওয়া যেটা আমাদের দিতে হয়নি সেটা নিজেই উপস্থিত হয়েছে তোমার কাছে।। তুমি,আমরা চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারবে না তাই মিছে মনকে এতো জ্বালিও না তো। বলে কপালে চুমু খেয়ে নিজের কোলে শুইয়ে বিলি কেটে দিতে লাগলো।।।

রূপসা সোজা হয়ে শুয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বললো,,,

—-আমি কী করে ঔ রাগি মানুষটার সাথে থাকবো যাকে আমার মোটেও পছন্দ নয়।।

—-পছন্দ না হলেও সে তোমার স্বামী তাই এসব ফালতু কথা বলবে না।।। তুমি বারিশকে ভীষণ রকম ভয় পাও তা আমাদের জানা কিন্তু আমরা যা করেছি তা ভালোর জন্য করেছি। এখন চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরো সকাল সকাল উঠতে হবে।।রাগি কন্ঠে।।

রূপসা মায়ের তেজি কন্ঠে দমে গেল।। ঝটপট চোখ বন্ধ করে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে ফেললো। এখন কিছু বললে তাঁর গাল লাল হতে সময় লাগবে না।।।
চোখ বন্ধ করে আগামীকাল আর তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে সে তলিয়ে যায়।।

‘রোজা হায়দার মেয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপালে চুমু খেলেন।। বরাবরই সুন্দরী তাদের মেয়েটা জেনো এক রূপকথার রাজকন্যা।।কোনো অংশে রাজকন্যার থেকে কম রাখেনি তাঁকে।। খুবই আদরের মেয়ে সে। আগামীকাল থেকে মেয়েকে শশুর বাড়ী পাঠিয়ে দিবে, সারাজীবনের জন্য মেয়ে দূরে চলে যাবে ভাবতেই বুক চিরে কান্না আসছে তাঁর।। খুবই সাহসী আর শক্ত মনের অধিকারী মহিলা হওয়া এখন পর্যন্ত নিজেকে মেয়ের সামনে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছেন,না হলে এতোক্ষণে কেঁদে কেঁদে বন্যা বয়ে যেতো।।। মেয়েকে নিজের থেকে দূরে রাখার কোনো কালে ইচ্ছে ছিল না তাঁর , কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছেন।।।বারিশকে ছোট বেলায় থেকে খুব পছন্দ করতেন তিনি।বারিশের সব কিছু ছিল সেই ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ করার মতো।।। ছোটবেলা থেকে রূপসার উপর বারিশের একটা অধিকার বোধ কাজ করতো,যার দারুন প্রভাব একসময় রূপসাকে তাঁর চাই বলে দাবি করে সে।। তাঁর রাগ,জিদ বরাবরই খুব হিংস্র। রেগে গেলে কিছু দিশে থাকে না।তাই তাঁর কথার উপর দিয়ে কারোর কথা চলবে না।।।ফেমিলি ফ্রেন্ড হওয়া এই বিষয়ে কোনো অমত পোষন করেনি তিনি।আর তাঁর জানা ছিল বালিশের কাছে তাঁর মতামত টিকবে না, কারন বারিশ ভীষণ ভাবে রাগি তাঁর যা চাই তা চাই।না পেলে অঘটন ঘটাতে পিছু পা হবে না।। দেখতে শুনতে ভালো।টাকা পয়সার দিক থেকে তাদের থেকে হাজার গুনে ভালো। নিলয় খান আর মিথিলা খানও রূপসাকে ভীষণ ভাবে ভালোবাসেন। মেয়ে একদম রাজ রানীর মতো থাকবে তাই তাঁর কোনো আপত্তি ছিল না।।সব বাবা-মা চাইবে মেয়ে সুখী থাকার।যেখানে মেয়ের সুখ পায়ে এসে ঠেকেছে সেখানে কিছু বলা চলে না।।। বারিশ নিজের বাবার এতো সম্পত্তি থাকার শর্তে ও নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন। বিশাল বড় বিজনেসের খাতায় নিজের নাম টপ টেনে রেখেছেন।আর এতো এতো সব আয়োজন তো রূপসাকে ঘিরে।।এখন যদি রূপসা বারিশকে আইনি ভাবে বিয়ে করে তাঁর সাথে যেতে রাজি না হয় তাহলে সব ধ্বংস করে দিবে বারিশ।।।বারিশের রাগ কতোটা তা প্রথম ধারনা হয়েছিল যখন বারিশ প্রথম রূপসার হাত চেয়েছিল তখন।।রূপসার বয়স ছিল খুব কম তাই কেউ বারিশের কথায় রাজি না হওয়ায় সেদিন সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সে।। সেই কী রাগ, মনে হয়েছিল সব তছনছ করে দিতে দ্বিমত পোষণ করবে না।। সেদিনের সেই দৃশ্য তিনি এখনো ভুলতে পারেননি।। চোখের সামনে জেনো সব জীবন্ত।।
কথাগুলো ভেবে একবার রূপসার মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হাসেন তিনি।। সোজা করে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।। এখনো অনেক কাজ বাকি। কালকের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া অনেক বাকি। আজকে আর তাঁর ঘুমানো হবে না।বসার ঘরে সকলে কালকের বিষয়ে আলোচনা করছে, রোজা হায়দার কিচেনে গিয়ে সকলের জন্য চা বানাতে শুরু করেন।।।
রূপসা বরাবরই সাহসী একজন মেয়ে।সে ঠিক সব কিছুতেই মানিয়ে নিবে।।বারিশ কে ভীষণ ভয় পেলেও এক সময় সেটাও দূর হয়ে যাবে।।রূপসা যেমন দুষ্টু মিষ্টি মেয়ে তেমনি প্রচন্ড রাগি স্বভাবের তাই কখনো মেয়েকে কোনো কিছুতেই জোর করতে পারেনি রোজা হায়দার। কিন্তু বারিশের বিষয় হলে বরাবরই দমে যায় রূপসা।। একপ্রকার বারিশের নাম শুনলে বাঘিনী থেকে বিড়াল ছানা হয়ে যায় সে।। কখনো কোনো কিছু অমত করলে তখন বারিশের কাছে সব জানাবেন বললেই চলবে, তখন আর সে অমত করতে পারে না ভয়ে।।।
কথাগুলো ভেবে আনমনে হেসে দিলেন রোজা হায়দার।।।মেয়ের সোনালী ভবিষ্যৎ জেনো চোঁখের সামনে ভেসে উঠছে।।।।

চলবে,,,,,,,❣️

(এটা সম্পূর্ণ নতুন গল্প তাই আগের গল্পের সাথে মিলাবেন না।।। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি।। কিছু দিন গল্প পোস্ট করতে দেরি হবে।।ধন্যবাদ সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here