0
1825

#মেঘবতীকন্যা পর্ব ১
# সুমাইয়া আক্তার মিম
কাঁচের জানালা ভেদ করে সোনালী রোদের আলো প্রবেশ করতে অন্ধকার রুমটা কিছুটা আলো ছেয়ে পরলো।।। রোদের আলো ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে আর তা গোলক রাশি হয়ে পরছে দেয়ালে টাঙ্গানো বড় একটি পেন্টিং এর উপর।।। ধীরে ধীরে পেন্টিং এর সম্পূর্ণ অংশ আলোয় আলোকিত হয়েছে।।। রুমের মাঝ বরাবর দেয়ালে লম্বালম্বি ভাবে এই বিশাল পেন্টিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক হাস্যজ্জল বালিকা। তাঁর চওড়া দাঁতে হাসির ফলে গোল গোল গাল দুটোতে টুল পরেছে।নাক বরাবর কালো কুচকুচে তিলটা আরো গভীর লাগছে।এক ভ্রু উঁচু করায় সেখানেও একটি কালো তিল রয়েছে যা খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।।হাতে তাঁর এক গুচ্ছ কাঠগোলোপ, সুন্দরী বালিকার দৃষ্টি সেখানেই স্থীর।।দুই পাশে ঘার পেরিয়ে গিয়েছে লম্বা দুটো বেনুনী।। অসাধারণ সুন্দর ছবিটি দেখে বুঝা যাচ্ছে যে এটা এঁকেছেন সে তাঁর সবটুকু দিয়ে ছবির মালিকের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন শুধু প্রানটা দিতে অক্ষম।।।ছবির পাশে গোটা হাতে ইংরেজি তারিখ দেওয়া।।। হঠাৎ ছবিটির উপর একটা ছায়ামূর্তি এসে পরতে সম্পূর্ণ ছবি গ্ৰাস করলো অন্ধকারে।।। ধীরে ধীরে যতো এগিয়ে আসছে সে ততই ছবিটির সম্পূর্ণ তাঁর ছায়ায় গ্ৰাস করছে।।।

“একজোড়া শক্ত হাত স্পর্শ করলো ছবিতে থাকা মেয়েটির ঠোঁটের মাঝে।। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ মুখে তাঁর ধবধবে সাদা হাত দুটো দিয়ে স্পর্শ করে দিচ্ছে।।। ঠোঁটে তাঁর অদ্ভুত হাসি চোখ ঝলঝল করছে কিছু পাওয়ার আশায়।।। তীক্ষ্ণ চোখ দুটো কিছু পাওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।।কতো অপেক্ষা যে অবসান হবে।।। তখনি থমথমে পুরুষালি গলায় সম্পূর্ণ ঘরে একটা ধ্বনি দৃষ্টি করে।।সে নেশা ভরা কন্ঠে ফিসফিস করে বললো,,,,,

—-আমি আসছি মেঘবতী।। তোমার খুব কাছে। তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসার সময় হয়ে গিয়েছে। বলে নিজের হাতের দুই আঙ্গুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে পেন্টিংয়ে থাকা মেয়েটির গালে ছুঁইয়ে দিলো।।।।

১/
“সবুজে ঘেরা চারিদিকে সোনালী ধান গুলো দুল খাচ্ছে বাতাসে।।।গ্ৰাম্য অঞ্চলের পাকা রাস্তা দিয়ে চলছে মানুষ।।। রূপগঞ্জ, রূপে ভরা এই গ্ৰাম।।। চারিদিকে সবুজ দিয়ে ঘেরা এই গ্ৰামে। কিন্তু এটাকে সম্পূর্ণ গ্ৰাম বলা যায় না শহরো বলা যায়।।কারন এখানে শহুরে ভাব ধারণ করেছে দীর্ঘকাল আগে।।। চারিদিকে সবুজে ঘেরা, পুকুর, নদী সব থাকলেও রয়েছে টিনের ঘর আর মাটির ঘরের পরবর্তীতে পাকা দালান। শহরের মতো ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি সবার বাড়ি। সাথে রাস্তাঘাট, স্কুল প্রত্যেকটা জিনিস শহরের মতো তৈরি।।। এখানের গ্ৰাম কর্তা যে তিনি হচ্ছেন বিশাল মনের মানুষ। পূর্ব পুরুষের সম্পদের অভাব নেই তাদের।।এলাকা দেখাশোনা করতে কোনো কমতি রাখেননি বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিয়েছেন।।গ্ৰামের মানুষদের আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছেন যাতে করে এখনকার সময়ের মতো কেউ গ্ৰাম ছেড়ে শহরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ না করে।।‌গ্ৰামের মানুষ গুলো ভীষণ সহজ সরল সাথে প্রান খুলে ভালোবাসা রয়েছে সকলের মাঝে।।।সকলে নিজেদের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসেন এলাকার প্রদানের।। সকলে হায়দার বংশ বলতে পাগল।এতো সুন্দর গ্ৰাম আর গ্ৰামের মানুষদের ভালোবাসা দেখলে অন্য গ্ৰামবাসী বলতে বাধ্য যে রূপ আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ রূপগঞ্জ।।।

“বড় তেঁতুল গাছের নিচে বসে হাতের ডায়েরিটি খুলে এর মধ্যে জীবনের সুন্দর সুখের মুহূর্ত গুলো লিখে রাখছে সাদা রঙের জামা পরিহিত এক যুবতী।।। তুষারের ন্যায় ফর্সা শরীরে যেন সাদা রঙের জামাটা মিশে আছে।।এক রাশ কোমর অবধি লম্বা ঘন কালো চুল বাতাসে দুল খাচ্ছে।।বড় বড় চোখ করে আশেপাশে তাকাচ্ছে , মুখে তাঁর মিষ্টি হাসি।নাকের কুঁচকুচে তিলটা অমায়িক সুন্দর লাগছে তাকে।।নাক দিয়ে টেনে নেওয়া সবুজের গন্ধ যেকোনো কারোর হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।।।এই জেনো সবুজের মাঝে মেঘের একটুকরো ছুয়া। অপরুপ সুন্দরী এক #মেঘবতী_কন্যা।।।
মেয়েটি মৃদু হেসে কলম দিয়ে খচখচ করে লিখতে লাগলো,,,

“রূপসা হায়দার রূপ।সবাই রূপ বলে ডাকে।।কেউ আবার আদর করে রূপগঞ্জের রুপুসী বলে ডাকে।।বাবা মায়ের একমাত্র আদরের কন্যা সাথে পরিবার এবং গ্ৰামের সকলের চোখের মনি।।।গ্ৰামের নাম রূপগঞ্জ হওয়া বাবা মা নাম রেখেছেন রূপসা হায়দার রূপ।।গ্ৰামের উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে সে।। পরিবারের প্রতিটা ব্যক্তির মতো তাঁর মন ও অত্যন্ত ভালো।।রূপে গুণে যেনো তাঁর সাথে নামটি মিলে গিয়েছে।।যেমন সুন্দরী তেমনি দুষ্টু, মিষ্টি প্রকৃতির মেয়ে।। সারাক্ষণ দুষ্টুমি হাঁসি মজায় ভরপুর তাঁর জীবন।। তাঁর দুষ্টুমি আর মিষ্টি মিষ্টি কথায় সকলের আদরের সে।। পরিবারের সকলের দিনটা শুরু হয় তাকে দিয়ে এবং শেষ হয় তাকে দিয়ে।। সকালে কাজে যাওয়ার আগে প্রত্যেকের তাঁর মুখ দেখা চাই মানে চাই।। সকলের আদরের আল্লাদী। পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে সে তাই সকলের এতো প্রিয়।।।বাবা অমিত হায়দার গ্ৰামের চেয়ারম্যান আর মা রোজা হায়দার ছিলেন একজন শিক্ষীকা কিন্তু তাঁর জম্মের পর সেটা তিনি নিজ ইচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে মেয়ের দেখাশোনায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর মতে একজন মা তাঁর সন্তানকে সঠিক ভাবে দেখাশোনা করতে পারেন অন্য কেউ নন।। মেয়ের প্রতি পরিবারের সবাই খুব দায়িত্বশীল।।। বিশাল বড় সদস্যের ভালোবাসা পরিপূর্ণ পরিবার তাদের।।। পরিবার বলতে বড় আব্বি আজাদ হায়দার আর বড় আম্মি নীলা হায়দার।। তাদের দুজন ছেলে সায়ন আর অয়ন।যারা পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের ব্যবসায় সামলাচ্ছেন এবং দুজনোই বিবাহিত।। ছোট আব্বি আদি হায়দার আর ছোট আম্মি নুহা হায়দার।। তাদের এক ছেলে আবির , যার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। আর তিনজন ছোট সদস্য রয়েছে একজন হচ্ছে সায়নের ছেলে সাহিল ক্লাস ফাইভে পড়েন ভীষণ দুষ্টু আর দুজন অয়নের জমজ মেয়ে অহনা আর অনন্যা ক্লাস ওয়ানে পড়ে দুজন।।।। সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখেন এই তিনজন সাথে তো রূপসা আছেই।।
[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম]

“এখানে এই শেষ দুপুরে কী করছো রূপ।আর এমন চুল এলোমেলো করে বসে কেনো আছো।তুমি কী কখনো বড় হবে না।।রোজা হায়দার মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলেন।।।

রূপসা মায়ের কন্ঠ শুনে ভয়ে হালকা শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলো।হাতের ডায়েরিটা বন্ধ করে মিষ্টি হেসে ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,,,

—আমার এখানে বসে প্রকৃতি বিলাস করতে ভীষণ ভালো লাগে আম্মি।।।

—তুমি বাচ্চা নও রূপ। এখানে এই অবেলায় বসে আছো তুমি।আর আমি তোমাকে কতো নিষেধ করেছি, সুন্দর মেয়েদের এমন অবেলায় চুল ছেড়ে তেঁতুল তলায় বসতে নেই তাহলে বদ জ্বীনের নজরে পড়ে।।তুমি কী আমার একটা কথাও শুনবে না।।‌কতো টেনশনে থাকতে হয় আমার তোমাকে নিয়ে।।বাড়ির সবাইকে টেনশন দিয়ে এখানে বসে আছো।।রাগি গলায়।।

রূপসা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে কিউট ফেইস করে বললো,,,,

—–উফফ্ আম্মি, তুমি এখনো সেকালের কথা বিশ্বাস করো।একদম দাদিজানের মতো কথা বলছো।।এসব কিছু আছে নাকি। ভিতু কন্ঠে।।

—রূপ একদম বাজে কথা বলবে না।।আমি তোমার দাদি জানকে কতোটা সম্মান করি সাথে তাঁর প্রত্যেক কথা কে ও তুমি জানো।।আর এসব বলতে ভয় কেনো পাচ্ছ । তুমি কতোটা এসবে বিশ্বাসী আমার ধারনা আছে।তাই মিছে সাহস দেখাতে হবে না।হরর মুভি দেখেতো রাতে আমাকে ছাড়া ঘুমোতে পারো না।।সব সময় বাচ্চামো।।(রাগি কন্ঠে)

রূপসা মুখটা ছোট করে মাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,

—-উহু আম্মি আমি একদম ছোট নয়ই, একুশ চলছে।(ঠোঁট উল্টিয়ে)

—হুম আপনি তো বুড়ি। চুলের কী অবস্থা করেছো। শুধু বয়সে হচ্ছে বুদ্ধি নয়।।চুল ঠিক করতে করতে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলেন।।।
মায়ের বকুনি শুনে রূপসা একদম শান্ত হয়ে গেলো।।আর মায়ের কথা শুনতে লাগলো।। সবসময় উল্টো পাল্টা কাজ করবে আর বকুনি শুনবে।। তাঁর জেনো মায়ের বকুনি না শুনলে দিনটাই ভালো কাটবে না।। কথাগুলো ভেবে আনমনে হেসে দিলো রূপসা।।
রোজা হায়দারের কথায় সে বাস্তবে ফিরে আসে।।।

“নিলয় ভাইজান আর ভাবি আসবে আগামীকাল সাথে বারিশও আসছে।আইনি কার্যক্রম শেষ করে তোমাকে তাদের সাথে আমেরিকায় নিয়ে যেতে চায় আর সেটা কালকেই।।।কিছুটা ধিরে গলায় বলেন।।।
মায়ের কথা শুনে রূপসার মুখের রং পাল্টে যায়।হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই মিলিয়ে যায়।।।

—কী বললো আম্মি বারিশ খান আসছে!
কথাটা মনে মনে আওড়াতে ভয়ে বুকের ভিতর হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।।। ভয়ে কয়েকবার ঢোক গিলে নিজের গলা ভিজিয়ে নিলো।।

রোজা হায়দার মেয়ের ভিতু মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলেন,,,
—নিজেকে প্রস্তুত করো রূপ।অনেক তো হলো। এবার যাদের আমানত তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।।তাই নিজের মনকে প্রস্তুত করে নাও কেমন। কপালে চুমু খেয়ে মাথায় উরনা টেনে দিয়ে হাত ধরে বাড়ির পথে রওনা হলো।।।
অন্যদিকে রূপসার মনে চলছে অন্য কথা।যার ভয়ে এতো সব আয়োজন এখন তাঁর সাথে সারাজীবন থাকতে হবে।সে তাঁর আমানত ভাবতে ভয়ে শরীরটা মৃদু কেঁপে উঠলো রূপসার। আনমনে ভাবলো,,

—তাহলে কী ওই রাগি এরোগেন্ট ম্যান ফিরে আসছে,,,,,,,,,

-চলবে,,,

১২০৬ শব্দের পর্ব।।।
(আসসালামুয়ালাইকুম, সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নতুন গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি সবার মাঝে।আশা করি প্রথম বারের মতো এবারও সবার অনেক সাপোর্ট আর ভালোবাসা পাবো।।আগের গল্পের সাথে এই গল্পের কোনো মিল নেই।এটা সম্পূর্ণ নতুন একটি গল্প। শুধুমাত্র আপনাদের ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিয়ে গল্পের নায়ক নায়িকার নাম দেওয়া না হলে সম্পূর্ণ নতুন একটি গল্প।।।মিলের মাঝে ভালোবাসার দিকটি মিল পাওয়া গেলেও গল্পের থিম সম্পূর্ণ আলাদা।তাই আশা করবো আগের গল্পের সাথে মিলানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না। ধন্যবাদ ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here