#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ১১
#সুমাইয়া আক্তার মিম
~~আ,,,আপনার কাছে বন্দুক কেনো? আপনি বন্দুক দিয়ে কী করবেন? বিস্মিত হয়ে ভিতু গলায় বললো রূপ।অসম্ভব রকমে কাঁপছে সে তাকে এমন কাঁপতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে উপর থেকে নিচ অব্দি ভালো করে রূপকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো বারিশ। রূপের দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতে কয়েক কদম ছিটকে দূরে সরে গেলো রূপ।বারিশের হাতে বন্দুক দেখে ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর।মাথার মধ্যে হাজারো ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে যা ভয়ের কারণে স্পষ্ট ভাবে বলতেও পারছে না।রিতিমত থরথর করে কাঁপছে সে।লাইফে প্রথম এতো কাছ থেকে বন্দুক দেখছে আগে কখনো দেখিনি।ছোটবেলা থেকে পুলিশদের সে জমের মতো ভয় পায় শুধুমাত্র তাদের কাছে বন্দুক ছিলো বলে।এরা যেকোনো সময়ে কাউকে পগরপা করে দিতে পারে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে মনোভাব বদলালেও ভয়টি বদলায়নি।
বারিশ রূপকে এমন কাঁপতে দেখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ভ্রু স্পর্শ করে শান্ত গলায় বলে উঠলো,
-রিলেক্স রূপজান।বন্দুক দেখে এমন কাপছো কেনো। ইটস্ নরম্যাল ।সো চিল্ এখানে আসো। রূপের দিকে হাত বাড়িয়ে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
রূপ হাত সরিয়ে আরো কিছু পা দূরে সরে গিয়ে আবারো কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
-এ,,এইটা খেলনা বন্দুক তাইতো।আ,,আপনি নিশ্চয়ই আমাকে ভয় দেখানোর জন্য আনিয়েছেন।সরান বলছি এটা। আমার ভয় করছে ঠোঁট ফুলিয়ে।
-জাস্ট স্টপ রূপজান।এইটা খেলনার নয়।এইটা রিয়েল।আর বন্দুক দেখে বাচ্চাদের মতো ভয় কেনো পাচ্ছো আজিভ। এদিকে আসো নাহলে এই বন্দুকের সবগুলো বুলেট তোমার মাথা ভেদ করে বের হবে।বেশ রেগে দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো বারিশ।।
বারিশের কথা শুনে রূপের ভয়ের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।রূপ উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে নিবে বারিশ হাত শক্ত করে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।রাগে চোখ দুটো ভয়ঙ্কর লাল হয়ে গিয়েছে।দেখতে একদম ঘায়েল সিংহ লাগছে তাকে।একলাইন বেশি বোঝা এই মেয়ের কাজ।রূপ ভয়ে বারিশের দিকে তাকাতে পারছে না।নিচু হয়ে ছোটার জন্য লাফালাফি করতে লাগলো।বারিশ বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বললো,
-আরেকবার লাফালাফি করলে একদম গাল লাল করে ফেলবো ইডিয়েট। এমন করছো কেনো?
বারিশের ধমক খেয়ে কিছুক্ষণ চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে রইল পরক্ষনেই চিৎকার করে কান্না জুরে দিলো। হঠাৎ এমন করে কান্না করতে দেখে বারিশ বেশ ভরকে গেলো।বারিশ রূপকে হালকা করে নিজের সাথে মিশিয়ে কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো কিন্তু রূপ কান্নার পরিমাণ না থামিয়ে আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো। মনে হচ্ছে কেউ তাকে মেরে ফেলছে তাই সে এই ভাবে কান্না করছে।বারিশ রূপের গালে হাত রেখে অধীর হয়ে বলতে লাগলো,
-হুশশ মেরি জান।একদম কন্না করবে না।আমি তোমার চোখের পানি একদম সহ্য করতে পারিনা।তুমি জানোতো।প্লিজ এইবার চুপ যাও।এমন কান্না করছো কেনো আমি কী তোমাকে মেরেছি!
__আ,,আপনি আমাকে বকলেন। আপনি খুব খারাপ সবসময় খালি বকেন। ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বললো।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
বারিশ রূপের গালে হাত রেখে শান্ত গলায় বললো,
-স্যরি জান। পরবর্তী থেকে আর হবে না।প্লীজ তুমি কান্না করবে না।ইউ নো না তুমি কান্না করলে আমার এইখানে বুকের দিকে ইশারা করে, খুব কষ্ট হয়। পরবর্তীতে জেনো আর কান্না করতে না দেখি তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
-পরবর্তী থেকে আপনিও আমাকে এতো জোরে ধমক দিবেন না। নাক টেনে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো।
বারিশ মৃদু হেসে রূপের কোমড় জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। রূপের নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে ধীরে গলায় বলল,
-তুমি এমন উদ্ভট বাচ্চাদের মতো কাজ করো আমাকে বকতে হয়।
রূপ বারিশের কথা শুনে চুপ করে গেলো। সত্যি সে সবসময় উদ্ভট কাজ করে যার কারণে প্রতিবার তাকে বারিশের রাগের সম্মুখীন হতে হয়।বারিশ এতোটা রগচটা যে সবসময় নাকের ডগায় রাগ থাকবেই।।বারিশের নাকের ডগাটা লাল। রূপের মতে বারিশের রাগের কারনে অলয়েজ নাকের ডগা লাল হয়ে থাকে।রূপ বারিশের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফর্মাল লুকে তৈরি হয়ে আছে নিশ্চয়ই কোথাও বের হবে।রূপ মাথা নিচু করে ধীর গলায় বললো,
-আপনি কী কোথাও বের হচ্ছেন।
বারিশ কিছুটা নড়েচড়ে রূপকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
-হুম।
রূপ পুনরায় প্রশ্ন করলো,
-কোথায় যাচ্ছেন।আর আপনার কাছে বন্দুক কী করছে?শেষের কথাটি মিনমিন করে বললো।
বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলতে লাগলো,
-রূপজান আই এম বিজনেস আইকন। বিজনেস জগতের বাদশাহ।আর আমার কাছে বন্দুক একটি সাধারণ বিষয়।এইটা নিয়ে এতো মাথা ঘামাছো কেনো।রিলেক্স। বন্দুক সেফটির জন্য সকলের কাছে থাকে। আমার কাছে আছে আব্বির কাছে আছে। আমার সকল গার্ডের কাছে আছে।এটা নরমাল ব্যাপার ।সো রিলেক্স আর হাইপার হবে না।ঠিক আছে।
-এটা নরমাল।বন্দুক তো মাফিয়াদের কাছে থাকে। আপনি কোনো মাফিয়া কিং ননতো।ভিতু গলায় চোখ পিটপিট করে বললো।
বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো পুনরায় চোখ খোলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রূপের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হেসে বলল,
-তোমার হাসবেন্ড মাফিয়াদের থেকেও হাজার গুণ এগিয়ে।সো এসব রাবিশ ভাবনা গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।চলো তোমাকে কিছু দেখাই। রূপের হাত ধরে টেনে।লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
বারিশের কথা শুনে রূপ কিছুটা ভয় পেয়েছে। পরক্ষনেই মনে পরলো বারিশ অলয়েজ তাকে ভয় দেখানোর জন্য এমন কথা বলবে।বারিশ সত্যি কোনো মাফিয়া থেকে কম নয়।যা রাগী এরোগেন্ট ম্যান। রেগে গেলে আর কেউ বিশ্বাস ঘাতক করলে ঠুস করে গুলি মেরে দিবে সেটা রূপ ভালো করে জানে। বিশ্বাস ঘাতক আর বারিশের খুব প্রিয় জিনিসের উপ কোনো আঁচ আসার আগেই তাকে বারিশ গুম করে দিবে। কিন্তু রূপ বুঝতে পারে না সেফটির জন্য বন্দুক আর গার্ডের কী প্রয়োজন। রূপের মতে এতো ভয় করলে ঘরে বসে থাকলেই তো হয়।কিন্তু ঘরে বসে থাকলে ব্যবসা,অফিস সেগুলো কে করবে।এই বড় লোকদের ভীষণ পরিমাণ দুশমন থাকে এদের লাইফ স্টাইল ভিন্ন এদের লাইফের রিস্ক বেশি।এখন তো বারিশের সাথে সাথে তারও লাইফে রিস্ক আছে এখন কী তাকেও বন্দুক দিয়ে ঘুরতে হবে।ভেবেই শুকনো ঢোক গিললো রূপ। তাঁর সাথে সব আজীব আজীব বিষয় ঘটছে। এখন থেকে তো মাত্র শুরু,,,,,,,,,,,,।
_____
একটি গ্লোড রঙের সিন্দুকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে রূপ।এক সিন্দুক বিভিন্ন ধরনের বন্দুক। একবার সিন্দুকের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার বারিশের দিকে তাকাচ্ছে।রূপ বড় বড় চোখ করে বারিশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-আ,,আপনি কি,,কি ববব,,বন্দুকের বিজনেস করেন।তোতলিয়ে।
-স্টপ রূপজান।তোতলাছো কেনো।ক্লিয়ার করে কথা বলবে।
-আপনি কী বন্দুকের বিজনেস করেন। এতো বন্দুক কেনো। চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো।
রূপের কথা শুনে মৃদু হেসে রূপের একগালে হাত রেখে শান্ত গলায় বললো,
-নোপ জান। এগুলো এখানে থাকে আর বারিশ খানের বন্দুকের জন্য আলাদা লাইসেন্স করা প্রয়োজন পড়ে না। এমন অসংখ্য বন্দুক আছে। এগুলো আমার পছন্দের । নতুন যেটা ভালো লাগে নিয়ে আসি।
ডোন্ট কেয়ার ভাবে।
-বন্দুক কী সাজানোর জিনিস ভালো লাগলে নিয়ে আসতে হবে।নাক কুঁচকে।
-সেটা তোমার পিচ্চি মাথায় ঢুকবে না। এতো টুকু মাথায় ঢুকিয়ে নাও আলাদা বন্দুক আলাদা কাজের জন্য ।এর থেকে বেশী এই বিষয়ে তোমাকে রিসার্চ করতে হবে না।গট ইট।।
-হুম। মাথা নাড়িয়ে।
-গুড।
হঠাৎ রূপের চোখ গেলো একটা বন্দুকের উপর। ভীষণ সুন্দর একদম অন্যরকম দেখতে বন্দুকটি।সিলভারের একটি রয়েল ভেচ রয়েছে বন্দুকের টিগারের কাছাকাছি।বন্দুকটি একটি লাল রঙের বাক্সে রাখা।রূপের মনে এই বন্দুক নিয়ে প্রশ্ন জাগলো সে বারিশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-আচ্ছা এই বন্দুকটি কী খুব স্পেশাল। খুব যত্ন সহকারে রেখেছেন। ছোট ছোট চোখ করে।
বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে রূপের গালের সাথে লেগে থাকা চুল গুলো আলতো হাতে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
-এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের। খুব স্পেশাল।এটা শুধু প্রিয় দুশমনদের জন্য।
-প্রিয় দুশমন!অভাক হয়ে।
-হুম।প্রিয় দুশমন।যে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে আঘাত করার চেষ্টা করবে সেতো প্রিয় দুশমন হলো।রাইট।রূপকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
-হুম। আনমনে।
-এখন চুপচাপ রিনির সাথে থাকবে। আমার একটু কাজ আছে ফিরতে আধঘন্টা সময় লাগবে। একদম লাফালাফি করবে না। লাফালাফি করতে গিয়ে যদি চোট পেয়েছো তাহলে সারারাত বাগানে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো। মনে থাকে জেনো।
-হুম হিটলার বর।বিরবির করে।
-কী বিরবির করছো।ভ্রু কুঁচকে।
-কি,,কিছু না।ঢোক গিলে।
-ওকে। কপালে চুমু খেয়ে। একদম দুষ্টুমি করবে না। আমার কাছে তোমার প্রতি সেকেন্ডের আপডেট পৌঁছাতে থাকবে প্রতিনিয়ত। বলে বের হয়ে যায়।।
বারিশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচিয়ে গটগট পায়ে রিনির রুমে চলে যায়।।
#চলবে,,,❣️
[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম✵]
(বিঃদ্রঃ এইটি কোনো মাফিয়া গল্প হবে না তাই কেউ মাফিয় গ্যাংস্টার লাভ ভেবে ভুল করবেন না। গল্পের প্রেক্ষিতে কিছু রহস্য,মিস্ট্রি থ্রিলার টাইপ থাকবে অতি সামান্য। গভীর ভালোবাস, ভালোবাসা কেয়ারিং থাকবে।সব মিলিয়ে এটি একটি রোমান্টিক গল্প।গল্পের শুরুতে বলেছি নতুন গল্প পুরাতনটির সাথে কেউ গুলিয়ে ফেলবেন না। গল্পের শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে পাশে থাকার অনুরোধ রইল ধন্যবাদ।।।)