মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৮

0
880

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৮
#সুমাইয়া আক্তার মিম

~সোনালি রোদের আলো কাঁচ ভেদ করে রুমে প্রবেশ করতেই বিছানায় ঘুমন্ত রূপের ঘুম ছুটে যায়।এদিক সেদিক করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে চোখ কচলে সোজা হয়ে বসে হাই তোলে চারিদিকে তাকাতেই পলকের মাঝে চোখে দুটো বড় বড় হয়ে গিয়েছে।।এক লাফে বিছানা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রুমের চারিদিক পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।সে তো ফ্লাইটে ছিল রুমে কখন পৌঁছালো ।।।। পরক্ষনেই মনে পরলো তাঁর পাশে তো বারিশ ছিল সে কোথায়? কিছুক্ষণ ভেবে সকল চিন্তা বাদ দিয়ে রূপ রুমটি ঘুরে দেখতে লাগল। এটা তো আমেরিকায়, বারিশের রুম।বেশ কয়েকবার ভিডিও কলে রিনি তাকে দেখিয়েছিল।তখন ভালো করে না দেখলেও এখন খুব মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চারিপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে।।বেশ বড় এবং গুছানো রুমটি। ওদের বাড়ির তিনটি রুমের সমান হবে একটি রুম।বেশ বড় এবং খুবই সুন্দর।আগের রুমের মতো দেয়ালের রং এবং প্রত্যেকটি জিনিস রয়েল, ব্রেন্ডের এবং কাঁচের। রুমের একপাশে বিশাল বড় বুক স্লেফ যেখানে বইদের সমাহার।।বারিশ খুব ইন্টেলিজেন্ট একজন বয় যার ফলস্বরূপ সে সবসময় সব জায়গায় টপ করেছে।যার প্রমান এই এতো এতো বই গুলো। স্কুল , কলেজে সবসময় ফাস্ট হয়েছে আর অন্যদিকে টেনেটুনে কোনো রকমে পাশ কারা ছাত্রী রূপ। জীবনে বইয়ের ধারের কাছেও যায় না। পড়াশোনা দেখলেই তাঁর ভীষণ রকম ঘুম আসে।পড়াশোনায় ভীষণ অনিহা তাঁর। পড়তে বসলে দুনিয়ার সব আজগুবি গল্প মনে পড়ে সারাদিন কী ঘটেছে এসব ভাবতে ভাবতে রাত পার হয়ে যায়। নিজের এসব আজগুবি কথা ভাবতেই মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছে রূপের।এই একটি বিশেষ কারণে বারিশকে পছন্দ করে না রূপ। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত তাকে যতো কথা শুনতে হয়েছে সব বারিশের বিশেষ গুনের কারনে। বরাবরই বারিশ সকলের চোখের মনি আর রূপ জেনো ভেসে এসেছে নদীতে।হু। হঠাৎ ওয়াসরুমের দরজা লাগানো দেখে বুঝতে পারলো বারিশ ভেতরে আছে নিশ্চয়ই শাওয়ার নিচ্ছে।সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় রুম দেখায় মনোযোগ দিলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।

”রুমের একপাশের সম্পূর্ণ দেওয়ালের বেশ অর্ধেক জুরে বিশাল এক কাঁচের থাই সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রূপ পর্দাটা সম্পূর্ণ খোলে দিলো। বাহিরের মনোরম পরিবেশে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে তাঁর। বরাবরই রূপ প্রকৃতি বিলাসী। ছোট বেলা থেকে প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠেছে সে ।। প্রকৃতির প্রতি আলাদা দূর্বলতা রয়েছে রূপের।। তাইতো তাকে এক কথায় প্রকৃতি কন্যা বলাও যায়। কিন্তু এই ফরেনি শহরে না আছে সবুজের সমাহার না আছে প্রকৃতির কোমল গন্ধ আছে শুধু বিশাল অট্টালিকা এবং রং বেরঙের গাছপালা।।বারিশদের বিশাল বড় বাড়ি আর বাড়ির চারিদিক জুরে ফুল ফলের বাগান।ফলের বাগানটা বেশি জায়গা জুড়ে রয়েছে।ফরেনি সকল বাড়িতে ফলের বাগনটা বেশি করতে পছন্দ করেন। দেখতে বেশ লাগে রূপের। টিভিতে সবসময় এদের চাষ করা ফলের বাগান গুলো দেখতো রূপ।এরা বেশ পরিশ্রমি সব কিছু ন্যাচারেল।রূপের খুব শখ বাগান করা তাই বাড়ির সামনে উঠোনের একপাশে বাগান করেছিল যার বেশ অবদান তাঁর বাবার।কারন তাঁর বাবা তাঁর সব ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে সাহায্য করে।।রূপ বাগনটা দেখার জন্য বেশ লোভ হলো। বিশাল বড় বাগানটা একটু ঘুরে দেখতে চায় সে। বিভিন্ন রঙের ফুল ফল দিয়ে ভরপুর বাগানটি। ইচ্ছে করছে ছোয়ে দিতে।মালিরা নিজেদের মতো কাজ করছে বাগানে।কেউ গাছ গুলোতে পাইপ দ্বারা পানি দিচ্ছে কেউ ঝুড়ি ভর্তি করে ফল পেড়ে সেগুলো নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে একজনের হাতে এক ঝুড়ি সতেজ ফুল ভিন্ন রকমের নিশ্চয়ই টপে রাখার জন্য নিয়ে আসছে।কেউ বা গাছের ফল গুলো মুছে মুছে রাখছে।বেশ লাগছে দেখতে।এই বাগান এবং বাড়ির প্রতিটি জায়গায় রূপের খুব ভালো করে চেনা। এখানে আজকে প্রথম হলেও সে প্রায় সময় বাড়িটি ভিডিও কলে ঘুরে ঘুরে দেখেয়েছে যার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ রিনির। সেই হিসেবে সব কিছুই মোটামুটি জানে শুধু কাছ থেকেই কখনো অনুভব করতে পারেনি।

বিশাল বড় বাড়িটা বড় বড় দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ। বিশাল গেইট পেরিয়ে রয়েছে সরু রাস্তা যেখান দিয়ে সকলের হাঁটা চলা সবসময় চলতেই থাকে। সকাল হলে এক দল লোক বের হবে জগিংয়ে এই রাস্তার পাশ দিয়ে।বেশ কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে একসাথে স্কুল ড্রেস পরে সাইকেল নিয়ে বের হয়েছে সবকটা ধবধবে সাদা। ছোট ছোট মিনি স্কার্ট পরা পিচ্চি মেয়েগুলো ছেলেদের সাথে রেইস করে সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এমনটা বেশি দেখা যায় না খুব কমই দেখা যায়। বাহিরের দেশের মতো এতো ফিড্যম ভাবে মেয়েদের চলতে দেখা যায় না তাই সেই দিক থেকে মেয়েদের স্বাধীনতার দিক থেকে এই অচেনা শহরটি তাঁর বেশ ভালো লাগে তাঁর সাথে এখানে ছেলেদের সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েরাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এখানে সকলে বেশ পরিশ্রম করে।এসব দিক থেকে এই বিলেত শহর তাঁর কাছে মোটামুটি ভালো লাগে।

~~রুমের সাথে এ্যটার্চ রুফটপের রেলিংয় ধরে বাড়ির চারিদিক পর্যবেক্ষণ করছে রূপ। এখান থেকে সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে দেখা যাচ্ছে।রুফটপের মাঝবরাবর ছোট একটি কাঁচের টেবিল আর এর দুই পাশে দুটো চেয়ার আর এর থেকে বেশ দূরত্ব রেখে রেখে কয়েক ধরনের বাহারি ডিজাইনের সোফা এবং কাঠের দোলনা।।। দোলনা রূপের বেশ পছন্দ। নিজেদের রুমের সবকিছুই রূপের পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়েছে বারিশ।। দীর্ঘ দিন থেকে একটু একটু করে সাজিয়েছে নিজেদের হয়েও না হওয়া সংসার। ভেবে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে রূপের।খুব সুন্দর করে রুফটপটা সাজানো।বেশ কিছু লতানো গাছ রয়েছে সাথে রঙ বেরঙের ফেয়ারি লাইট,মরিচ বাতি।রুফটপে বেশ কিছু ফুল ফলের গাছ রয়েছে এদের মাঝে স্টবেরি গাছটা বেশ দারুন লাগছে।রূপের স্টবেরি খুব পছন্দের। কমলা লেবু আর আপেল গাছও আছে।বারিশের কমলা লেবু ভীষণ পছন্দের।রূপ বারিশের সব পছন্দ অপছন্দের কথা জানে। সারাদিন রিনি কল করলে এসব বিষয়ে আলোচনা করে।আর ছোট বেলা থেকে বারিশের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে বেশ ধারণ নিয়ে বড় হয়েছে রূপ কারণ বারিশ তাঁর থেকে এতো দূরে বিলেতে থাকলেও তাঁর আনাগোনা সবসময় তাঁর সামনেই চলতেই থাকতো।
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।সামনে রেলিং গেসে রয়েছে তাঁর প্রিয় কালো গোলাপের গাছটা।কালো গোলাপ খুব খুব প্রিয় রূপের।বেশ বড় গাছটায় সম্পূর্ণ জুরে কালো গোলাপ ফুল।রূপ খুশি হয়ে চট জলদি ফুলগুলোর কাছে গিয়ে সবগুলো ছোঁয়া দিতে লাগল। আলতো হেসে দুটো ফুল ছিঁড়ে চটজলদি কানের পেছনে গুজে নিলো।। গাছগুলো দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশ যত্ন করে বারিশ গাছগুলোর।রিনির কাছে শুনেছে বারিশ গাছগুলোতে কাউকে স্পর্শ করতে দেয় না নিজের হাতেই এঁদের যত্ন নেয়। হঠাৎ পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতে কেঁপে উঠে রূপ।হাত দুটো তাঁর পেটে কোমড়ের চারপাশে আঁকিবুঁকি করছে। শিহরণে খপ করে দুই হাতে চেপে ধরে হাত দুটো। খিচে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। পেছন থেকে বারিশ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলো।দুই হাতে আঁকড়ে ধরে রূপকে নিজের বাহুডোরে বন্দিনী করে ফেলেছে।। কানের লতিতে হাল্কা ঠোঁট ছুয়াতেই কেঁপে উঠলো রূপ।বেশ কিছুক্ষণ পর ফিসফিস কন্ঠে বলে উঠলো,,,

–পছন্দ হয়েছে রূপজান।সব কিছু আমি নিজের হাতে সাজিয়েছি সব তোমার পছন্দ অনুযায়ী।। দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর তোমাকে সম্পূর্ণ রূপে নিজের করে পেয়েছি।।।

বারিশের ফিসফিস করে বলা কথা গুলো অন্যরকম শিহরণ জাগায় রূপের মনে।বেশ কিছুক্ষণ থেমে বারিশ রূপকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। পুনরায় আগের ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,,,

–কতো কিছু আমি আমাদের জন্য প্ল্যান করে রেখেছি।।খুব বেশি অপেক্ষা করিয়েছো রূপজান।।আজ কতো গুলো বছরের অপেক্ষার পর তোমাকে পেয়েছি। আমার মেঘবতী কে নিজের করে পাওয়ার জন্য তো এতো এতো আয়োজন।।।

রূপ ভ্রু কুঁচকে ছোট ছোট চোখ করে বারিশের দিকে তাকালো তা দেখে বারিশ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কী হয়েছে,,

–মেঘবতী কে?মুখ কুঁচকে।

রূপের মুখ কুঁচকানো দেখে মৃদু হেসে নাক টেনে বললো,,,

–কেনো তুমি। আমার মেঘবতী। গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে।।

রূপ লজ্জা নতজানু হয়ে পরলো। আসতো নির্লজ্জ যখন তখন হামলে পরে।।রূপ মাথা নিচু করে হাতের আঙ্গুল দিয়ে গণনা করার ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে বলতে লাগলো,,,

–পরীজান, মেরি জান,মেঘবতী,রূপজান।এতো গুলো নাম। ঠোঁট উল্টে।

বারিশ নিজের চুলে হাত চালিয়ে বাঁকা হেসে বলল,,

–কেনো পছন্দ হয়নি। আমিতো সবসময় এই নামেই ডাকবো।আর তোমার সাথে এই নাম গুলো ভীষণ যায়। পিচ্চি পরীজান। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
পিচ্চি শুনে নাকটা পুনরায় কুঁচকে আসলো রূপের। কিছু বলতে পারছে না দেখা যাবে রেগে কামড় বসিয়ে দিয়েছে।

রূপকে নাক কুচকাতে দেখে বাঁকা হেসে নাকের সাথে নাক ঘষে আলতো কামড় বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো রূপ।বারিশ রূপের গালে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে স্লাইট করতে লাগলো।

–আমি তোমাকে ভালোবেসে এতো গুলো নাম দিয়েছি আমাকে দিবে না। আমার তো বিনিময়ে কিছু চাই।ধীর গলায় নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।।

বারিশের কথা শুনে রূপ কেঁপে উঠে চোখ দুটো আরো খিচে বন্ধ করে নিলো।বারিশের প্রতিটি কথায় জেনো নেশায় ভরপুর। সবসময় কেমন নেশালো তাঁর দৃষ্টি।।বারিশ রূপের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে গালে হাত রেখে পুনরায় বলে উঠলো,,

–কী হয়েছে রূপজান। এতো কাঁপছো কেনো?আমি কী তোমাকে খেয়ে ফেলবো। অবশ্যই তুমি এতো টেস্টি ইচ্ছে করে কামড়িয়ে টুপ করে খেয়ে ফেলি। দুষ্ট হেসে।

বারিশের কথা শুনে রূপের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গিয়েছে।। কোনো রকমে নিজেকে সামলিয়ে শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বলে,

–আ,,,আমি ফ্রেশ হবো ছা,,ছাড়ুন।আমাকে।

–উহু সেতো হচ্ছে না। আমার যা চাই তা দিয়ে দাও তখন ছাড়ছি তাঁর আগে নয়। বাঁকা হেসে।।

–কী,,,কী চাই আপনার।। কোনো রকম আমতা আমতা করে বললো।।

–অনলি 30 কিস।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে।।

–কিইইইই। চিৎকার করে।

–উফ্ আস্তে রূপজান। একদম জোরে চিৎকার করবে না।যা বলছি ফটাফট করো তবে ছাড়া পাবে নয়তো না।আর অবশ্যই লিপ কিস নাহলে চলবে না।নটি স্মাইল দিয়ে চোখ টিপে বললো।।

রূপসা হা করে তাকিয়ে আছে বারিশের দিকে।এই ছেলে দিনকে দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্লজ্জ।মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গিয়েছে রূপের।ঠুস করে এখনি কেঁদে দিবে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে আর তাঁর চোখের জলের সমুদ্র বানিয়ে এতে চুবিয়ে মারতে বারিশকে।

‘ বারিশ তাঁর জীবনে রোমান্টিক বারিশ নামিয়ে দিয়েছে।।

#চলবে,,,❣️

[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵]

(মাথা ব্যথার জন্য আজকে গল্প দেরি এবং অগোছালো হয়েছে। ধন্যবাদ সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here