মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩১

0
715

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩১
#সুমাইয়া আক্তার মিম

_
ভালোবাসা,নীল আকাশের গোলাকার চাঁদ। চাঁদ যেমন নিজের ঝলমলে আলোয় আলোকিত করে তেমনি ভালোবাসা একে অপরকে নিজস্ব আলোয় পরিপূর্ণ করে। ভালোবাসা ছোট্ট একটি শব্দ যা কখন হয়ে যায় বলা দ্বায়। ভালোবাসা অদ্ভুত, খুব গভীরে গিয়ে এর সংজ্ঞা দেওয়া দুষ্কর। ভালোবাসা নিয়ে যতো লিখবো ততোই কম হবে। ভালোবাসা বেঁচে থাকার একটি লোভনীয় জিনিসের নাম।বাঁচার চাহিদা বাড়িয়ে দিবে দিনকে দিন।ভালোবাসা একটি শক্তি। তোমাকে সব পরিস্থিতে মানিয়ে নিতে, লড়াই করতে শিখিয়ে দিবে। ভালোবাসা ছাড়া দুনিয়া চলে না। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ বাঁচে না।সবাই ভালোবাসতে চায় সবার চাহিদা হয় ভালোবাসা। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
সিঁড়ি বেয়ে উপর থেকে দৌড়ে ছুটে আসে রূপ। ভয়ে কলিজায় পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে। কপালের কাছে গলার কাছে ঘামে লেপ্টে আছে একগুচ্ছ চুল।এখন তাঁর বারিশকে প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন। নিজের মনে শক্তি জোগাতে বারিশকে প্রয়োজন। তাঁর একটু প্রান খুলে নিঃশ্বাস নিতে বারিশকে প্রয়োজন। দৌড়ে নিচে নামতে দেখতে পেলো বারিশ তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছে। মুখে হাঁসি ফুটলো।কী সুন্দর প্রাণ উজ্জ্বল হাঁসি!দৌড়ে লুটিয়ে পড়লো বারিশের বুকে।দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে বারিশের খোলা জ্যাকেটের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলো।বারিশ নিশ্চুপ, শান্ত।স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা হাতে শক্ত করে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো তাঁর প্রেয়সীকে। খুব সফ্ট ভাবে কিন্তু বন্ধন শক্ত।রূপ কাঁদছে বারিশ মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

‘আমি আছি তো মেরি জান।’

রূপ নিশ্চুপ।বারিশ আর কোনো কথা না বলে রূপকে কোলে তুলে নিলো।রূপ এখনো বারিশের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। এখন আর কাঁদছে না।ভয় নেই কারণ তাঁর পাশে তাঁর সুরক্ষা কবজ রয়েছে। রূপের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।

চারিদিকে গমগমে পরিবেশ।শীতল ঠান্ডা বাতাস কাউকে একটু আরামদায়ক করতে সক্ষম হচ্ছে না। রোহান মৃগী রোগীর মতো থরথর করে কাঁপছে। কপালের ঘাম মুছে স্যারকে পরখ করে নিলো।বারিশকে দেখে ভয়ের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।বারিশের মাংস পেশী ফুলে গিয়েছে। ঘোলাটে চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে উঠেছে। সুন্দর ফর্সা মুখটি লাল হয়ে আছে রাগে, ছুঁয়ে দিলে হাত ঝলসে যাবে।ভয় পেলো রোহান। ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।এই রাগ সব তছনছ করে দিবে। হিংস্র লাগছে।ঘায়েল সিংহের ন্যায় ভ্রু জোড়া বারবার একসাথে করে নিভু চোখে দাঁতে দাঁত পিষে দিচ্ছে। নতুন কিছু ভাবতে পারছে না রোহান। জলদি করে গাড়ির ডোর খোলে দিতে সেখানে রূপকে নিয়ে উঠে বসতে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। পেছন পেছন সেও ছুট লাগালো অন্য গাড়িতে বসে। তাঁর স্যারের মাথায় খুব বড় কিছু চলছে। এতো রহস্য কেন এই মানুষটি?

_

বিছানায় গুটিসুটি মেরে বারিশের বুকে মাথা রেখে বসে আছে রূপ। বারবার শুধু তখন ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়ছে। বারবার ছায়ানের শেষে তাকে শাসিয়ে যাওয়া ঘটনা মনে পড়ছে।বারিশের মুখের দিকে তাকালো রূপ। তারই দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ নামিয়ে নিলো রূপ। খুব বিধ্বস্ত, ভয়ংকর লাগছে।বারিশের মাথায় যে খুন সাবারি হয়ে আছে রূপ বেশ বুঝতে পারছে। তাঁর সাথে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা এক এক করে খোলে বলেছে বারিশকে। তারপর থেকে অস্বাভাবিক কান্ড করে যাচ্ছে বারিশ। দীর্ঘ সময়ের চেপে রাখা রাগ তরতর করে বেরিয়ে আসছে।এক জাটকায় লন্ডভন্ড করে দেয় সম্পূর্ণ রুম। ভয়ে ভীতু রূপ শুধু তাকিয়ে দেখলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। পরিশেষে খুব কষ্টের পর বারিশকে শান্ত করে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যাতে একদম ছুটাছুটি করতে না পারে।বারিশের সাধ্য নেই রূপকে ছাড়িয়ে রূপের থেকে দূরে সরার।বারিশের খালি বুকে নিজের মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলো রূপ।বারিশ সযত্নে রূপের মাথাটা আগলিয়ে রেখেছে। দুজনে নিশ্চুপ।রূপ বারিশের মাত্রারিক্ত রাগের কারনে চুপটি করে বসে আছে।বারিশের উত্তপ্ত বুকে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো যাতে করে রাগে গরম হওয়া উত্তপ্ত বুক ঠান্ডা হয়ে সব রাগ উধাও হয়ে যায়। রূপের ঠোঁটের স্পর্শ পেতে নুইয়ে গেলো বারিশ।টান টান হওয়া বিশাল বুকটা একটু নরম হয়ে আসলো। সেখানে আরাম করে জায়গা করে নিলো রূপ।বারিশ আলতো চুমুতে ভরিয়ে দিলো সারা মুখ।হাতে চুমু খেতে আসলে থেমে যায়।রূপ তাকালো হাতের দিকে। কালচে দাগ হয়ে আছে। তখন ঔ পশুটা এতোটা জোরালো ভাবে ধরেছে তাইতো এমন দাগ হলো। পুনরায় ঘৃণায় রিরি করে উঠলো।বারিশের দিকে তাকাতে চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।বারিশ শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।চোখ দুটো অসম্ভব লাল। চিকচিক করছে পানি। রূপের কষ্ট হলো। খুব কষ্ট।বারিশ তাঁর জন্য কষ্ট পাচ্ছে ভাবতে বুক ফেটে হুহু করে কান্না পরীরা ভীর জামাচ্ছে চোখে।রূপ হিচকি তুলে কাঁদছে।বারিশ আগের ন্যায় বারবার হাতের কালো দাগে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিচ্ছে। এইবার আরো জোরে কেঁদে উঠলো রূপ।সে কাঁদছে বারিশের হেলদুল নেই। ভাবতে আরো বেশি করে কান্না পাচ্ছে।রূপ অন্য হাতে বারিশের ধরে রাখা হাত খামচে হিচকি উঠা গলায় করুন ভাবে বলতে লাগলো,

‘আ… আমি ছুঁতে দিতে চাইনি।ঔ…ঔ লোকটা……’

পুনরায় কেঁদে উঠলো রূপ। কান্নার জন্য সব কথা গলায় জরিয়ে আসছে।বারিশ নিশ্চুপ। রূপ ভয় পেলো।বারিশের গলার কাছের শার্ট খামচে জাঁকিয়ে বললো,

‘প্লীজ শুনো না।প্লীজ কথা বলুন। আপনার চুপ থাকা একদম ভালো লাগছে না আমার।’

বারিশ রূপকে কোলে তুলে নিলো।রূপ কেঁদে কেঁদে লাল হয়ে গিয়েছে।বারিশ রূপকে নিয়ে ওয়াশরুমের মিররের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।রূপ চুপচাপ মাথা নিচু করে রয়েছে।বারিশ পেছন থেকে রূপকে হালকা ভাবে জড়িয়ে রেখেছে।রূপ পিঠ ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে নিশ্চুপ চোখের পানি ফেলছে।বারিশ রূপের হাতটা আলতো হাতে তুলে পানির নল ছেড়ে দিয়ে সেখানে রূপের হাত দিয়ে দিলো। ফকফকে স্বচ্ছ পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে রূপের হাতের ময়লা।সাবান ঘসে ঘসে চারিদিক সাবানের ফেনা বুদবুদ করে উড়ে চলেছে। সম্পূর্ণ সাবান ঘসে রূপের হাতে থাকা ছায়ানের স্পর্শ মুছে দিলো বারিশ। তবুও মনে হচ্ছে ময়লা রয়েছে। পুনরায় ঘসে দিলো।রূপ শুধু বারিশকে দেখছে। কতোটা যত্ন নিয়ে ঔ নিকৃষ্ট জীবটার ময়লা দুর্গন্ধ পরিষ্কার করছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রূপ। এতোক্ষণ জানটা বেরিয়ে আসছিলো। হাতটা অতিরিক্ত পানি, সাবানের ফলে ঠান্ডা আর ফর্সা হয়ে গিয়েছে।তাওয়ালে দিয়ে আলতো হাতে খুব সাবধানে মুছে দিলো বারিশ। আলতো ঠোঁটে ঘন ঘন স্পর্শ দিয়ে বড়িয়ে দিলো সারা হাত।হাসলো রূপ।বারিশকে জড়িয়ে ধরে,

‘আমি শুধু আপনার #মেঘবতী_কন্যা। একদম ভয় পেতে হবে না। পৃথিবীতে কারোর শক্তি নেই আপনার থেকে আমাকে আলাদা করার।না কেউ আঘাত করার দুঃসাহস করে বেঁচে ফিরবে। আমি ঠিক আছি।’

বারিশ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চোখ মুখের করুন অবস্থা।রূপকে পুনরায় বিছানায় বসিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স আনিয়ে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ধীরে ধীরে হাতের কালচে দাগে মলম লাগিয়ে দিলো।বারিশের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বারিশের স্লিকি চুল গুলো নাড়িয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো,

‘একটু কথা বলুন না মি.খান। এমন রোবটের মতো বসে আছেন কেনো?আমি ঠিক আছি তো। আপনাকে এমন দেখতে একদম বাংলা ফ্লিমের খল’নায়কদের মতো লাগছে।বাজে! ‘

বারিশ রূপের থুতনিতে চুমু খেয়ে উত্তেজিত গলায় বললো,

‘স্যরি রূপজান। তোমার এরোগেন্ট ম্যান খুব বাজে। তোমাকে একদম প্রটেক্ট করতে পারেনি। আমার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হয়েছে মেরি জান। পরবর্তী সময় আর হবে না।’

হাসলো রূপ। তুলতুলে হাত দিয়ে বারিশের মুখ ধরে ঝুঁকে নাক কুঁচকে বললো,

‘ঔ লোকটা খুব বাজে ছিলো তাইতো এমন করেছে। আপনি কী জানতে নাকি এমন কিছু হবে।একদম আমার এরোগেন্ট ম্যান কে বকবেন না তাহলে খবর আছে।’

মাথা নিচু করে মৃদু হাসে বারিশ।রূপ বারিশকে জড়িয়ে ধরতে বারিশ আলতো হাতে মিশিয়ে নিলো। পুনরায় ধীর গলায় বলে উঠলো,

‘আর কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না রূপজান।আই প্রমিস। তোমার দিকে বাড়ন্ত হাত আমি সারাজীবনের জন্য উপড়ে দিবো। তোমার চোখের জলের বিনিময়ে খুব কঠিন শাস্তি পেতে হবে। তোমার স্বল্প সুখের জন্য, তোমাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমি খুব নির্দয় হতে রাজি।’

হাসলো রূপ।বারিশের গলা জড়িয়ে আরেকটু গভীর ভাবে মিশে রইলো।স্বামী স্ত্রীর বন্ধন পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন। ছোট ছোট সুখগুলো প্রাপ্তির সুখ। ভালোবাসার সুখ। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।বারিশ রূপকে জড়িয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো। হঠাৎ ঠোঁট জোড়ায় রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল যা রূপের দৃষ্টির আড়ালে। রহস্যময় ঠোঁট দুটো মিলিয়ে আনচান চোখ দুটো ঘুরিয়ে রাগের আবাস ফুটে উঠলো। রূপের মাথাটা দুই হাতে চেপে চুমু খেয়ে বিরবির করে বলে উঠলো,

‘স্যরি রূপজান।’

শুনলো না রূপ। জানালো না বারিশের হাসির রহস্য।বুঝলো না বারিশের মনে বেড়ে ওঠা অসম্ভব রাগ কাউকে নিঃশেষ করার ফন্দি।বারিশ কখনো ভুল হয়নি আজও না। এইবার যা হবে সব মঙ্গলকর।সব সুন্দর। পরিশেষে পাওয়া যাবে সুন্দর একটি প্রাপ্তি।

#চলবে,,❣️
[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌

[গল্প ভীষণ অগোছালো হয়েছে। আজ গল্প লিখার ইচ্ছে ছিলো না তাই এমন খাপছাড়া হয়েছে। আগামীকাল আরেকটি পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here