মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩৫

0
620

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩৫
#সুমাইয়া আক্তার মিম

_
ঝিরিঝিরি শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে আপনমনে।শীতের শেষের দিক। আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে থেকে থেকে।এই আঁধার এই আলো। চারিদিকে জেনো আলো আঁধারের খুনসুটি। বাহিরের শীতল হাওয়া বইলে কিবা আসে যায়।খান বাড়িতে থমথমে পরিবেশ।বাহিরে তিব্র শীতেও কোমল করতে পারেনি ভিতরকার পরিবেশ। হলরুমে সকল গার্ড,সার্ভেন্ট সহ সকলের উপস্থিতি।সকলের মাঝে থমথমে ভাব আর কিঞ্চিত ভয়।রিনি একবার মিথিলা খানকে পরখ করছে একবার নিলয় খানকে।সকলে অসহায় মুখ করে বসে আছে।আজ বাড়িতে সকলে উপস্থিত।আগামী কিছুদিন কাজ থেকে সকলের বিরতি। কাজ বিহীন অবসর সময় কাটাচ্ছেন সকলে।হঠাৎ ঠাস করে কিছু পড়ার আওয়াজ হতে সকলে একে অপরের দিকে চোখাচোখি হলো।একি শব্দ বারবার আসছে।আজ এই মেয়ে সম্পূর্ণ বাড়ির জিনিস তছনছ করে তবেই ক্ষান্ত হবে। মিথিলা খান মুচকি হেসে নিলয় খানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

‘একদম ঠিক হয়েছে। আপনার শেরের মতো ছেলের জন্য আমার বাঘিনী পুত্র বউ রূপ একাই যথেষ্ট।’

হাসলেন নিলয় খান। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলেন,

‘আমার ছেলে বাঘ।ঠিক নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসবে তাঁর বাঘিনীকে।যেমনটা আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি।’

শব্দ করে হেসে উঠলো রিনি।মিথিলা খান কটমট দৃষ্টিতে একবার নিলয় খানের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন। নিলয় খানও ছুটেন বিবির পেছন পেছন।রিনি হেসে একবার উপরের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে মিনমিন করে বলে উঠলো,

‘আজ ভাইজান আপনার খবরের হেডলাইন করবে পুতুল ভাবি। ইশ্ দ্যা বারিশ খানকে এমন বউয়ের কাছে নাকানিচুবানি খেতে দেখলে পৃথিবীতে অষ্টম আজবী তৈরি হয়ে যেতো।’

রিনি সকলকে ইশারা করে সেখান থেকে চলে যেতে বলে নিজেও গুনগুন করতে করতে সেখান থেকে প্রস্থান করে।

কিছুক্ষণ আগে,
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সকলে একসাথে ব্রেকফাস্টের পর্ব চুকিয়ে নেওয়ার পর আড্ডায় মেতে উঠেন।কাজ থেকে, পড়াশোনা থেকে, সকল কিছু থেকে ছুটি।সকলে ফ্রী টাইম আনন্দের সাথে পার করতে ইচ্ছুক।বারিশের অফিসের কাজ নেই,না আছে অন্য কোনো জরুরি মিটিং কিংবা কাজ।তাই সকলের মন রাখার জন্য আগামীকাল ফ্যামেলি ট্যুরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।বিশেষ করে ঐদিন রূপকে প্রমিস করেছে ফ্যামেলি ট্যুরে যাবে।তো সেই ব্যবস্থাই চলছে।সকলে বেজায় খুশি বিশেষ করে রূপ।বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো এমন সময় তাদের অফিসের কিছু কর্মচারী এসেছেন কিছু কাগজপত্র সাইন করানোর জন্য এবং কিছু প্রবলেম নিয়ে।বারিশ তাদের নিয়ে কিছুটা দূরে এসব বিষয়ে আলোচনা করছেন। বিরক্ত রূপ। খুব বেশি বিরক্তি প্রকাশ করলো সে। এমন ফ্যামেলি টাইমে কাজ কোথা থেকে আসে এই মি.এংরি ম্যানের।অদ্ভুত।আজ এর হেস্তনেস্ত হচ্ছে। মনে মনে ক্ষোভে ফুঁসছে রূপ।বারিশ কাজের মাঝে আড়চোখে রূপের রাগে ফুসফুস করা মুখ দেখে মৃদু হাসেন। বুঝতে অসুবিধা হয়নি বউ তাঁর রেগে গিয়েছে। খুব ইমপ্যটেন্ট ছিলো তাই তাকে কাজে আসতে হলো নাহলে ফ্যামেলি টাইম শুধু পরিবারের জন্য বরাদ্দ।আর রূপজানের জন্য তো…….সে সম্পূর্ন’টাই বরাদ্দ।হাসলো বারিশ। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।কাজ চুকিয়ে সকলকে চলে যেতে বলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো বারিশ।এমন সময় তাঁর একজন লেডি কর্মী চলার পথে নিজের উঁচু হিলের কারনে বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিলে সাপোর্ট হিসাবে ভুলবশত বারিশের হাত আঁকড়ে ধরে।বেচারি লেডি, বিষয়টি বুঝে উঠার আগেই বারিশ এক জাটকায় হাত ছাড়িয়ে, দিলো এক রামধমক। ভয়ে মেয়েটি মাথা নিচু করে স্যারি বলে উঠে।জান প্রায় যায় যায়।কী একটা পরিস্থিতি?দ্যা বারিশ খানের হাত ধরার মতো দুঃসাহস করেছে।এটা মেয়েটির সাথে সম্পূর্ণ এক দুর্ঘটনা। মেয়েটি তো মনে মনে ভয়ে আওড়াছে,পড়ে গেলেই বেশ ভালো হতো।বারিশ বিরক্তে মুখ বিষাদ করে এখান থেকে সকলকে প্রস্থান করতে বলে।সকলে চলে যায়। মেয়েটি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে সেখান থেকে কেটে পরে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে, এই যাত্রায় বেঁচে ফিরার জন্য। কিন্তু,হায়! আল্লাহ এই অত্যাধুনিক সাদা চামড়ার মেয়েটির উপর সহায় হোননি। কারণ বারিশের কবল থেকে তো সে বেঁচে ফিরেছে কিন্তু রূপ! রূপের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থেকে সে বাঁচতে পারেনি।বারিশ রূপের দিকে এগিয়ে আসতে নিবে তাঁর পূর্বেই রূপ রেগে দৌড়ে নিজেদের রুমে চলে যায়। বিষয়টি বুঝতে বারিশের একটু সময় নিলেও পরক্ষনেই বুঝতে পেরে দৌড়ে রূপের পেছন পেছন যায়।রূপ সম্পূর্ণ ঘটনা দেখেছে এবং বারিশ মেয়েটির সাথে রুঢ বিহেভ করেছে তাও। কিন্তু কথাই আছে না….. জিনিস যদি হয় আমার একান্ত তাহলে চারিপাশ হবে ধোঁয়াশা। এখনো তাই হয়েছে।বারিশ মেয়েটিকে কী বললো সেটা বড় বিষয় নয়! মেয়েটি বারিশের হাত ছুঁয়ে দিয়েছে সেটা বড় বিষয়। বাংলা মুভির মতো একই দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে শিশির মুক্তোর ন্যায়।বারিশ,রূপ কেউ কারোর থেকে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে নয়। দু’জনেই একই ধাঁচের মানুষ।তখন থেকে একের পর এক তান্ডব চলে যাচ্ছে।উপর থেকে একের পর এক কিছু না কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ মুখরিত হচ্ছে সম্পূর্ণ বাড়ি।বারিশ রুমে প্রবেশ করতে অক্ষম হচ্ছে।বারবার রূপ এটা সেটা মেরে যাচ্ছে বারিশের উপর।নানা কথা বুঝিয়েও কাজ হয়নি।রূপ আজ ভীষণ রেগে।রাগের কারনে শরীর রিতিমত কাঁপছে। সম্পূর্ণ মুখ রক্ত লাল রঙ ধারণ করেছে। সম্পূর্ণ রুম তখনই এলোমেলো করে দিয়েছে। জিনিসপত্র এলোমেলো, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে সব এলোমেলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।একপ্রকার নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে বারিশকে। পরনারীর স্পর্শ পাওয়া একদম ঘুচিয়ে দিবে রূপ আজ।বারিশ অসহায় গলায় বারবার এক্সপেলেইন করার চেষ্টা করেও কিছু লাভ হচ্ছে না।রূপ একপ্রকার বাঘিনী হয়ে উঠেছে।কমোড়ে হাত গুজে একের পর এক জিনিস ছুড়ে মারছে বারিশের উপর।বারিশ নিজেকে প্রটেক্ট করে নিচ্ছে।রূপ কমোড় বেঁধে ঝগড়া করছে।আজ এই তান্ডব থামাথামির নয়।

বর্তমান,
বারিশ এইবার বেশ রেগে গিয়েছে।রূপ জিনিস এলোমেলো করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু এখনো সে থামার নয়।বারিশ রেগে কয়েকবার তাকে থামতে বলেছে।রূপ শুনেনি।সেই আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে। কেনো অন্য মেয়ে স্পর্শ করবে তাঁর বর কে?হোক অসাবধানতা বশত, হয়েছে তো।বারিশ কাছে আসতে নিলে কাঁচ উঠিয়ে শাসিয়ে দেয়। নিজেকে আঘাত করার ভয় দেখায়।তাই রূপের পাগলামো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে বারিশ। রেগে শক্ত গলায় বললো,

‘এইবার বেশি বেশি হচ্ছে রূপজান।যদি আঘাত পেয়েছো তো…তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আই প্রমিস।’

রূপ মুখ ভেংচি কেটে বললো,

‘আই নো। আপনি পৃথিবীর সেরা খারাপ মানুষ।’

বারিশ দুই আঙ্গুল একত্রিত করে কপাল স্লাইট করে শান্ত গলায় বললো,

‘হাপিয়ে গিয়েছো। অনেক হয়েছে ঝগড়া। এইবার কাছে আসো।ফারদার কিছু করেছো তো কিংবা সামান্য ব্যথা পেয়েছো তাহলে তোমার কী অবস্থা হবে তুমি কল্পনা করতে পারবে না রূপজান।’

কিছুটা মিইয়ে গেলো রূপ।হাতের বিশাল কাঁচের ফ্লাওয়ার বেইস টা নিচে রাখার সময় হাতে ব্যথা পেলো।বারিশ ছুটে এসে রূপের হাত নিজের হাতের মুঠোয় এনে মালিশ করতে লাগলো।রাগী গলায় ধমকে বললো,

‘কী সমস্যা।বলেছিলাম ব্যথা পাবে।পেয়েছো তো।আমি সবকিছু মানতে রাজি নিজেকে আঘাত করে কষ্ট দেওয়ার ফল খুব খারাপ হবে।বলেছিলাম কিনা।আন্সার মি।’

রূপ বারিশের ধমক খেয়ে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে দিলো।বারিশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রূপকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

‘আই এ্যম স্যারি মেরি জান।পরবর্তীতে এমন পাগলামো একদম করবে না।’

বারিশের আদোরে ছোঁয়া পেতে রূপ মিইয়ে যায়।রাগ গুলো সব উধাও হয়ে যায়। মনে মনে একটা শয়তানি বুদ্ধি আওড়িয়ে।ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে অভিযোগ সুরে বলে,

‘ঔ মেয়েটার এতো সাহস আসে কোথা থেকে আপনাকে ছোঁয়ে দেওয়ার। অসভ্য ছেঁড়া মনের মেয়ে মানুষ।’

বারিশ হাসলো।মুখ কুঁচকে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,

‘ছেঁড়া মনের মানুষ হয়!’

‘হয় তো।অন্যের বরের গাঁয়ের উপর পড়া মেয়েদের ছেঁড়া মনের মেয়ে মানুষ বলে। আপনি তাকে দুটো চড় কেনো মারেননি।’

বারিশ পুনরায় আগের ভঙ্গিতে মাথা হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো,

‘ভুল হয়ে গিয়েছে মেরি জান। পরবর্তী থেকে হবে না। এইবার তো কান্না অফ যাও।প্লীজ।ক্লান্ত দেখাচ্ছে খুব।চলো রেস্ট নিবে।’

শুনলো না রূপ।আজ এই মেয়ের একটা শাস্তি দিয়ে সে থামবে।রূপকে আলাভোলা পেয়ে তাঁর সামনে তাঁর কলিজাকে ছুঁয়ে চলে গেলো।সেটা তো মেনে নেওয়া একদমই সম্ভব নয়।রূপ দাঁত কিরমির করে পুনরায় উচ্চ স্বরে কেঁদে উঠলো। ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।বারিশ পড়েছে বিশাল মুসিবতে।এতো জিদ্দি মেয়েটা, সামলানো মুশকিল।বারিশ অস্থির হয়ে রূপের কান্না থামছে। অসহায় গলায় বলে উঠলো,

‘প্লীজ জান।এইবার কান্না অফ করবে। নাহলে খুব খারাপ হবে।’

রূপ মাথা নাড়িয়ে বলল না।বারিশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

‘কী করলে আমার জানপাখির কান্না থামাবে?’

‘ঔ মেয়েটাকে আপনার অফিস থেকে বের করে দিন।এসব বাজে মেয়েদের নিয়ে বিশ্বাস নেই। কখন কি কান্ড ঘটিয়ে দিবে! এতো রিক্স নেওয়া যাবে না। আপনি যখন অফিসে থাকবেন তখন আমি এক দন্ড নিশ্চিত থাকতে পারবো না।উফ্ মহা ঝামেলা।এর থেকে এই মেয়েকে অফিস থেকে বের করে দিন।’

ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো রূপ।বারিশ অবাক হয়ে রূপকে দেখছে। দুষ্টু হেসে রূপের কোমড় জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,

‘এতো জেলাসি মেরি জান!’

রূপ বারিশের বুকে ধাক্কা মেরে বললো,

‘আলবাত।এখন ন্যাকামো না করে যা বলছি তা করুন। নাহলে কথা নেই।’

ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমান সুরে।হাসলো বারিশ। পুনরায় বললো,

‘এটা জাস্ট একটি দুর্ঘটনা।আমি ঔ মেয়ের শাস্তির ব্যবস্থা করছি।’

‘না। চলবে না।এই মেয়েকে অফিস থেকে বের করা চাই মানে চাই।যে বসের সামনে সর্ট ড্রেস পরে সু অফ করে তাঁর অফিসে কোনো জায়গায় নেই।’

বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল লাগালো।

‘হুম।মিস লিনাকে বর্তমান অফিস থেকে নতুন শাখায় ট্রান্সফার করুন।’

বারিশের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে রূপ চিৎকার করে বলে উঠলো,

‘কোনো নতুন অফিসে নয়।সব অফিস থেকে বের করুন ঔ ছেঁড়া মনের মেয়ে মানুষ কে।’

হঠাৎ রূপের চিৎকার করা কথা শুনে মোবাইলের অপর পাশের ব্যাক্তি ভরকে গেলো নিশ্চয়ই।বারিশ শান্ত দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

‘মিস লিনাকে রেজিগনেশন লেটার হাতে ধরিয়ে দিন। ওনাকে অফিস থেকে বের হওয়া চাই। ওনার জন্য আমার অফিসে কোনো জায়গায় নেই।’

কথাগুলো বলে গট করে মোবাইলটি কেটে দিলো বারিশ। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম। রূপের দিকে তাকাতে দেখতে পেলো রূপের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।বারিশ কোমড় জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে মুখের সামনে মুখ নিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

‘বেশ প্রশান্তি মিলছে।এতো ভালোবাসা মুখে বলতেই এতো তাল বাহানা।’

বারিশের ভ্রু নাচিয়ে কথা শুনে রূপ লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।মুখ বাঁকিয়ে বললো,

‘ বলবো না।ঔ মেয়েটা আপনাকে ছুঁয়ে দিয়েছে না,এটা আপনার পানিশমেন্ট।’

বারিশ বাঁকা হাঁসি আরো চওড়া করে নিজের সাথে টাইট করে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,

‘আমাকে অপেক্ষা করানোর জন্য, তোমার দহনে তিলতিল করে শেষ করার জন্য প্রতিনিয়ত বারিশ নামক শাস্তি তোমাকে জর্জরিত করে দিবে।মেরি জান।’

রূপ ঘাড়ে হাত চেপে ধরে মুখ কুঁচকে বললো,

‘রাক্ষস…….।’

রূপের অবস্থা দেখে হেসে উঠলো বারিশ।ঘর কাঁপিয়ে হুহা করে হাসছে।রূপ চোখ ছোট ছোট করে বারিশের দিকে তাকিয়ে রইলো।

_

কেটে গিয়েছে সাত সাতটি দিন।গতকাল রাতে ট্যুর থেকে ফিরে এসেছে বারিশ রূপসহ সম্পূর্ণ পরিবার।সাত দিনের লম্বা ট্যুরে সকলে ক্লান্ত। শুধু ক্লান্তি নেই রূপের মাঝে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বারিশের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসে রূপ।বারিশ এখন বেশিরভাগ বাড়িতে থাকে।রূপকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে আনা তাঁর একমাত্র বিশেষ কাজ। দুপুর সময়।সকলে নিজ নিজ রুমে রেস্ট নিচ্ছে।বারিশ বাহিরে গিয়েছে কিছু একটি কাজে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।আজ ভীষণ গরম পরেছে।তপ্ত রোদে চিকচিক করছে সবকিছু। বিছানায় আধশোয়া হয়ে টিভিতে নিজের পছন্দের সিন্ডেরেলা মুভি শেষ অংশ টানটান উত্তেজনা নিয়ে দেখছে রূপ। হঠাৎ হাতের শক্ত আঘাত রিমোটের মাঝে পরতে বদলে যায় রূপের পছন্দের সিন্ডেরেলা মুভি।রূপ বিরক্তি হয়ে চ্যানেল বদলাতে নিলে স্কিনে ভেসে উঠা ছায়ান সিত্তিস এর কুকর্মের বলাবলি দেখে চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।স্থির হয়ে টিভিতে মনোযোগ স্থাপিত করে।একের পর এক ছায়ান সিত্তিস এর কুকর্মের ভিডিও চলছে। মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে গিয়েছে পরিবেশ। মনে হচ্ছে টিভিতে নয় রূপের খুব কাছে জেনো এসব ঘটনা ঘটছে।হেডলাইনের দিকে ভালো করে পরখ করে দেখতে পায়,ছায়ান সিত্তিস বিখ্যাত খেলোয়াড় একজন মাফিয়া।একের পর এক নির্মম খুনের আসামি মি.ছায়ান সিত্তিস এখন পালাতক।এই ওয়ান্টেড ক্রিমিনালকে ক্রস ফায়ার করার জন্য সরকারের দরফ থেকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
রূপ স্তব্ধ হয়ে দেখে যাচ্ছে। মানুষের আর্তনাদ বুক ধকধক করছে। কারোর মেয়েকে রেপ, কারোর বউ, কারোর ঘর উজাড় করেছে।একের পর এক খুন,খারাপ কাজ।সব মিলিয়ে খারাপের সাম্রাজ্য তৈরি করেছে ছায়ান সিত্তিস। কেমন লাইভ ভিডিওর মাঝে কুপিয়ে হত্যা করেছে।আর সহ্য হলো না।ঠাস করে টিভি অফ করে রিমোট ছুড়ে মারে রূপ। হাঁপাতে শুরু করলো সে।রাগে,দুঃখে,ঘৃনায় গা রিরি করছে।দরজা খট করে আওয়াজ হতে সেদিকে তাকালো রূপ।বারিশ এসেছে।রূপ জোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে ঠিক করে নিলো। অহেতুক দুশ্চিন্তা করে বারিশকে কষ্ট দিতে চায়’না। রূপের উহু করা বারিশকে ক্ষতবিক্ষত করে দিবে।রূপ মৃদু হেসে বারিশের কাছে এগিয়ে যেতে বারিশ মুচকি হেসে রূপের কোমড় জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

‘মিস করছিলে রূপজান!’

রূপ হেসে বলল,

‘উহুম।’

‘তাই।ওকে আজকের পর থেকে এক মিনিট মিস না করে যাতে না থাকতে পারো সেই ব্যবস্থা করে এসেছি।’

বুঝলো না রূপ।প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে বারিশের দিকে তাকাতে বারিশ বাঁকা হেসে ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে চলে যায়।অবাক হয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রূপ। একজন সার্ভেন্ট দরজা নক করতে রূপের ধ্যান ভঙ্গ হয়।রূপ ভেতরে আসতে বলে,সার্ভেন্ট স্মাইলিকে রূপের নিকট দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।রূপ হেসে স্মাইলিকে আদর করতে লাগলো। পশমে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করছে। কিন্তু আজ স্মাইলি ভীষণ শান্ত।রূপ দুশ্চিন্তিত হয়ে স্মাইলিকে নানান প্রশ্ন করছে কিন্তু স্মাইলি আজ দুষ্টুমি করছে না। মাঝে মাঝে লেজ দিয়ে রূপকে আদর করে দিলে কিটকিট করে হাসতে শুরু করে রূপ। হঠাৎ স্মাইলির শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে দেখতে পেলো ধবধবে পশমের ভেতরের মসৃণ শরীরে লাল লাল রেশ। আঁতকে উঠলো রূপ। চিন্তিত হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভালো করে পরখ করতে লাগলো স্মাইলিকে। ভীষণ প্রিয় স্মাইলি।এক দন্ড থাকতে পারে না স্মাইলি বিহীন। তাঁর এমন আদুরে বিলাই ছানাটি অসুস্থ, ভাবতে তাঁর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।বারিশ ফ্রেশ হয়ে রূপকে চিন্তিত দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো।রূপের কাছে এসে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো কী হয়েছে!রূপ স্মাইলিকে দেখিয়ে বললো,

‘দেখুন না স্মাইলির শরীরে লাল লাল রেশ দানা হয়েছে।খুব অসুস্থ দেখাচ্ছে। একদম চুপচাপ কোনো দুষ্টমী করছে না।’

বারিশ রূপের গালে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বললো,

‘রূপজান রিলেক্স।স্মাইলি ঠিক হয়ে যাবে।সামান্য রেশ হয়েছে। ছোট একটা টিকা আর চিকিৎসার মাধ্যমে একদম ঠিক হয়ে যাবে।’

রূপ শান্ত হলো। একজন গার্ড কে কল করতে স্মাইলিকে নিয়ে যায়।রূপ সেদিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

‘স্মাইলি কতো বড় হয়ে গিয়েছে।কী সুন্দর লোম গজিয়েছে শরীরে!সো কিউট।’

উচ্ছাসে হাসছে রূপ।বারিশ হেসে রূপে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘হুম।এখন ফটাফট রেডি হয়ে আসবে।আমরা বাহিরে লান্স করতে যাচ্ছি প্লাস তোমার জন্য সারপ্রাইজ রয়েছে।’

ডাবল উচ্ছাসে রূপ বারিশের দিকে তাকিয়ে চমৎকার হেঁসে বলল,

‘সারপ্রাইজ!’

বারিশ রূপের গাল টেনে বললো,

‘হুম সারপ্রাইজ।এখন রেডি হয়ে আসো।’

রূপ মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে রেডি হতে চলে গেলো।

#চলবে,,,❣️
[লেখিকা~সুমাইয়া আক্তার মীম]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌

[বিশাল বড় পর্ব দেওয়া হয়েছে। গল্প সম্পর্কে দুই লাইন গঠন মূলক মন্তব্য করার অনুরোধ রইল।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here