#মেঘবতী_কন্যা পর্ব_৪০[শেষ পাতা]

1
1915

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব_৪০[শেষ পাতা]
#সুমাইয়া আক্তার মিম

_
মাটিতে পড়ে কৈ মাছের মতো ছটফট করছে ছায়ান। মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে উঠেছে সে। মৃত্যু কতোটা যন্ত্রণাদায়ক হাড়ে হাড়ে অনুভব করছে।শত মানুষ এইভাবে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছে,প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে কিন্তু সে! মুক্তি দেয়নি কাউকে। উল্টো অন্যের ছটফট করা মৃত্যুকে উপভোগ করেছে। নিজের তৃপ্তি মেটাতে কতো নির্মম নির্যাতন করে মেরেছে তাঁর হদিস কী আছে!আজ যখন নিজে উপভোগ করছে তখন এতো কেনো আকুতি?এতো কেনো কষ্ট?খুব বলতে ইচ্ছে করে, তোমার কষ্ট..কষ্ট আর অন্যের কষ্ট..তুচ্ছ। নিজেকে সকলে ভালোবাসে তাই বলে অন্যকে তুচ্ছ ভাবার অধিকার তোমাকে আল্লাহ দেয়নি।ছায়ানের সম্পূর্ণ দেহ ক্ষতবিক্ষত।হলদে রঙের শার্টটা ছুরির আঘাতে শুদ্ধ ভাষায় তেনা তেনা হয়ে গিয়েছে।হলদে রঙটি আর নেই। রক্তে লাল রং ধারণ করেছে।জায়গায় জায়গায় জখম।রূপকে ধরে রাখা হাত দুটো ভেঙে উল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে।ভাঙ্গা পায়ের পুরাতন জখম মেরে আবার তাজা করা হয়েছে।সারা শরীরে নিখুঁত ভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।মুখ থেকে গলগল করে রক্ত পরছে।এতোটা যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে ছায়ান।নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে।হাঁপানি রোগীদের মতো জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।হায় কষ্ট!কতোটা যন্ত্রণাদায়ক হয়।ছায়ানের এমন নির্মম যন্ত্রণা সকলের মনে ভীত করেছে।এমন শাস্তি রুহ কাঁপিয়ে দিয়েছে। তবুও সকলে তৃপ্ত এমন ধারা শাস্তি পেতে দেখে এমন পাপী কে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।

বারিশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে রূপ।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।গলাটা উসখুস করছে।বারিশ নিজের বাহুবন্ধনে খুব যত্ন সহিত জড়িয়ে রেখেছে।আদুরে হাতে সম্পূর্ণ মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ব্যথাতুর জায়গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে এদিক সেদিক করে নিখুঁত ভাবে দেখছে।চোখ মুখে ভয়ংকর রাগের ভাব এখনো কমেনি।না কমেছে তাঁর ভিতরকার তিব্র হিংস্রতা। ফুসফুস নিঃশ্বাস জানান দিচ্ছে সে কতোটা ক্ষিপ্ত।ছায়ানের এই সামান্য কষ্ট মেনে নিতে পারছে না। ইচ্ছে করছে আরেকটু কষ্ট দিতে আরেকটু ভালো ভাবে কেটে কেটে ফর্সা শরীরটাকে জখম করতে।খুব ইচ্ছে করছে শরীরটা কেটে পিচ পিচ করে বন্য শুকরদের ডিনার করাতে।রূপ ভয় পাচ্ছে বলে ছেড়ে দিলো।দেখা যাবে রূপের আর এই শয়তানের ভয়াবহ মৃত্যু দেখা হলো না তাঁর আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।বারিশ রূপের ব্যথাতুর স্থানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একজন গার্ডকে দিয়ে পানির বোতল এগিয়ে আনতে ছিপি খুলে আলতো হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।রূপ পানি খেয়ে জোরে নিঃশ্বাস টেনে তা ত্যাগ করলো। এতোক্ষণে ভালো লাগছে।বারিশ রূপের কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। থুতনিতে আলতো হাতে ছুঁইয়ে দিয়ে কপালের চুল গুছিয়ে সিঁথিতে চুমু খেলো।নরম কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ব্যটার ফিল করছো রূপজান!চলো তোমাকে বাড়িতে রেখে তারপর এই নিকৃষ্ট জীবকে পৃথিবী ছাড়া করার ব্যবস্থা করছি।’

ছায়ান সিত্তিস এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল।রূপ বারিশের কথা শুনে নাক ফুলিয়ে ছিটকে সরে বললো,

‘কেনো যাবো?আমি কোথাও যাবো না। আপনার সাথে থাকবো।’

বারিশ চোখ ছোট করে তাকালো। রূপের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

‘একটু পরে চিৎকার চেঁচামেচি করে এই কুকুর ছানার জীবন বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য।’

‘উহুম।আমি কী ভয় পাই নাকি! দেখলেন না কেমন দিলাম!’

বারিশ রূপের কথা শুনে প্রথমে অসন্তুষ্ট হলেও পরে কিছু একটা ভেবে ছায়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। রূপের গাল টিপে কপালে টস্ টস্ কয়েকটা শব্দ করে চুমু খেলো।হাসলো রূপ।ব্যথার জায়গাগুলোতেও একই রকম চুমু খেলো।
রূপকে ছেড়ে দিয়ে ছায়ানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ছায়ানের অপাতমস্তিসক দেখে নিলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।ছায়ান চোখ বুজে ছটফট করছে। রক্তে চেহারার নকশা বদলে গিয়েছে।বারিশ ছায়ানের চুল মুঠো করে ধরে টেনে মুখ বরাবর নিয়ে আসলো।ব্যথায় চিৎকার করে উঠল ছায়ান।অনুরোধ করছে নিজের জীবন ভিক্ষা দেওয়ার জন্য। পাগলের মতো আহাজারি করছে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।বারিশ চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘আমার জানকে আঘাত করার শাস্তি ভয়ানক মৃত্যু।আর অন্য কিছু নয়।সো রেডি তো তোর মৃত্যু সঙ্গিকে আলিঙ্গন করার জন্য।টাস্ট মি খুব আরামদায়ক মৃত্যু দিবো যাতে তোর হাতে নিরীহ যাদের প্রাণ গিয়েছে তাদের আত্মা তৃপ্ত হয়। পরিশেষে তোর আত্মা পরিশুদ্ধ হয়।’

বারিশের এমন কথা শুনে ছায়ান দিগুন ছটফট করতে লাগলো।বারিশ গার্ডকে কিছু ইশারা করতে গার্ড দুজন এসে ছায়ানকে তুলে পিলারের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেলে।ছায়ান চিৎকার করে কান্না করে জীবন ভিক্ষা চাইছে কিন্তু তাঁর চিৎকার কারোর মন ছুঁয়ে দিতে পারেনি।ছায়ানকে বাঁধা হলো। একজন গার্ড ছায়ানের হেলে থাকা মাথাটা চুলের মুঠি চেপে গলা টেনে সোজা করলো।অন্যজন আগুন থেকে তাপ‌ দিয়ে আনা বড় ছুরিটা গলার সামনে ধরে রাখলো।ছায়ান হেলে দুলে আতংকের সাথে বললো,

‘আ…আমাকে মাআ…মাফ করে দিন।এই বারের মতো ছেড়ে দিন। আমি এই দেশ থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।আর কখনো আসবো না।দয়া করুন।’

বারিশ ছায়ানের আকুতি দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। হাঁসি থামিয়ে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাঁধ বাঁকা করে বললো,

‘নোপ মাই ডগ।এটাতো হচ্ছে না। আমি প্রমিস করেছি আমার জানকে।কী করে কথার খেলাপ করি।বারিশ খান যা বলে তাই হবে।’

হুহু করে কেঁদে উঠল ছায়ান। শরীরের তিব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।চোখ ঝাপসা হয়ে হেলে পড়তে চাইলে গার্ড বুক বরাবর জোরে আঘাত করতে চিৎকার করে উঠে। হাসলো বারিশ।কয়েক কদম এগিয়ে মুখ বরাবর ঝুঁকে চুল টেনে ধরে হিংস্র ভাবে চিৎকার করে বললো,

‘তুই আমার জানকে ছেড়ে দিতি।তাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দেওয়ার কথা কল্পনা করা কষ্টকর সেখানে এতোটা কষ্ট..! উঁহু। তোকে তো মরতেই হবে।এতো মানুষের মৃত্যুর কারণ তুই, তোকে ছেড়ে কী করে দেই?’

গার্ড থেকে একটা ইনজেকশন নিয়ে সযত্নে ছায়ানের গলায় বসিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে মাথা হেলিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো ছায়ান।বারিশ মৃদু হেসে গালে আলতো থাপ্পড় মেরে বললো,

‘তোর নেশা তোকে মৃত্যু যন্ত্রণা দিবে।’

ছায়ান আস্তে আস্তে বলছে,

‘আ..আমাকে প্লীজ ছেড়ে দেয়।প্লীজ… আমার কষ্ট হচ্ছে।ছাড় বলছি।’

চিৎকার করে। শুনলো না বারিশ। গার্ডকে ইশারা করতে একজন লাইভ ভিডিও করতে শুরু করলো।আজ সারা বিশ্ব দেখবে ছায়ান সিত্তিস এর ভয়াবহ মৃত্যু।তাঁর যন্ত্রণা।এর পর থেকে এমন ভয়াবহ কাজ করতে হাজার বার ভাববে।ছায়ানের সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।ছায়ান কষ্টে যন্ত্রণা ছটফট করছে।ড্রাগসের নেশায় হেলেদুলে পরছে।ড্রাগস এর সাথে কিছু একটা মিলিত ছিলো যা ছায়ানের শরীরকে ভেতর থেকে খুবলে খাচ্ছে।বারিশ রূপের কোমড় জড়িয়ে স্টাইল নিয়ে দাঁড়ালো। রূপের দিকে তাকাতে দেখতে পেলো বেচারি ভয়ে হাঁসফাঁস করছে।বারিশ মৃদু হেসে রূপকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে নিলো।ছায়ানের যন্ত্রণা বারিশকে বেশ তৃপ্তি দিচ্ছে।গার্ডকে ইশারা করতে গার্ড ছায়ানের ঘাড় চেপে তাঁর কুকর্মের জাহির করতে বললো।তাই হলো।ছায়ান নিজ মুখে হেলেদুলে কাতরাতে কাতরাতে নিজের সব কুকর্মের দোষ স্বীকার করে নিলো।বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘এইবার লাস্ট ডোজ।’

বুঝলো না রূপ।ভ্রু কুঁচকে নিলো। প্রশ্নবোধক দৃষ্টি দিতে বারিশ রোহানের দিকে তাকালো। রোহান এগিয়ে এসে একটা বাক্স খুলে দিতে রূপের ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে এলো।রূপ বারিশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

‘এটা তো…..।’

‘হুম ঠিক ধরেছ রূপজান।এটা আমার প্রিয় বন্দুক।প্রিয় দুশমনের জন্য।’

ছায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সোনালী ডিজাইনের অসাধারণ বন্দুকটি হাতে তুলে নিলো।যার নাল’টা সুচের মতো সরু। রূপের মনে পরলো সেদিনের কথা যেদিন বারিশ তাঁর স্পেশাল বন্দুকের কথা বলেছিলো। স্পেশাল বন্দুক প্রিয় দুশমনের জন্য।রূপ ঠোঁট উল্টিয়ে কিছু বলবে তাঁর পূর্বে বারিশ রূপকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রূপের হাতের মাঝে বন্দুক রেখে নিজে তাঁর নিশানা ঠিক করলো, ছায়ানের বুক বরাবর।চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় রূপের।বারিশ বন্দুকে দৃষ্টি রেখে বাঁকা হেসে বলে উঠলো,

‘এর কার্যক্ষমতা দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো তাই না মেরি জান!আজ নিজ হাতে নিজের খুঁতখুঁতে মনকে প্রশান্ত করবে। নিজের প্রিয় স্মাইলির ছোট ইচ্ছে নিজ হাতে পূর্ণ করবে।তাঁর কষ্টের বিনিময়ে প্রশান্তি দিবে।’

রূপ ঘাড় ঘুরিয়ে বারিশের দিকে তাকাতে হঠাৎ আর্তনাদ এর আওয়াজ হতে চট করে ছায়ান সিত্তিস এর দিকে তাকালো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম। ছটফট করছে ছায়ান। আগের থেকে দিগুন চিৎকার করছে যন্ত্রণায়। কাঁপছে মাত্রারিক্ত ভাবে।রূপ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।বারিশ বন্দুক নিয়ে রোহানের হাতে দিয়ে রূপকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,

‘এই বন্দুকের নাম সাইলেন্ট কিলার।তাই আওয়াজ হয়নি।’

রূপ চমকে উঠে বললো,

‘তার মানে আমি….’

বারিশ রূপের থুতনিতে হাত রেখে বলল,

‘আমি নয় জান। আমরা এই পৃথিবী থেকে একটা নিকৃষ্ট জীব নিঃশেষ করেছি।’

চোখ দিয়ে ছায়ানকে ইশারা করলো।রূপ সেদিকে তাকিয়ে দেখলো ছায়ান পাগলের মতো লাফাচ্ছে।দড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে।রূপ এমন দেখে ভয় পেলো। আরেকটু বারিশের সাথে মিশে গেলো।বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শান্ত গলায় বললো,

‘ডোন্ট ওয়ারি মাই লাভ।এটা জাস্ট টেইলর।এই বন্দুকের একটা ছোট বুলেট শরীরের কোনো অঙ্গে প্রবেশ করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত।এর বুলেটে পয়জনিং রয়েছে যা ধিরে ধিরে ব্যক্তির শরীরকে খুবলে খাবে।নিঃশেষ করে দিবে।জীবিত অবস্থায় ধীরে ধীরে শরীরে পচন ধরবে।’

রূপ হা করে তাকিয়ে আছে।ভ্রু কুঁচকে এলো। সন্দেহ গলায় বললো,

‘এতো খাতারনাক বন্দুক আপনার কাছে কি করছে?’

হাসলো বারিশ। বউ তাঁর জেরা করছে।বারিশ রূপকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

‘তোমার বর সম্পূর্ণ’টা খাতারনাক মাই লাভ ‌এটাতো সামান্য বন্দুক।’

রূপ চোখ ছোট করে বললো,

‘হুম।’

হাসলো বারিশ। দুজনে সামনে তাকাতে দেখতে পেলো ছায়ানের ছটফটানি আগের তুলনায় দিগুন। শরীরে নীল আবরন দেখা দিয়েছে।বারিশ ইশারা করে ছায়ানের দড়ি খুলে দিতে বললো।গার্ড দড়ি খুলে দিতে নিচে ধাপ করে পরে গেলো।একটু ছটফট করে মরুক।এতোটা নিষ্ঠুর বারিশ না। নিচে পরে কৈ মাছের মতো লাফাতে লাগলো ছায়ান।মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বুদবুদ করে বের হচ্ছে। শরীরে চামড়া খসে পড়ছে। রূপ ভয়ে বারিশকে জড়িয়ে ধরলো।গন্ধ নাকে আসতে রোমাল বের করে রূপের নাক চেপে ধরলো।নিজে অন্য হাত দিয়ে মাক্স পড়ে নিলো।সকল গার্ড মাক্স পরিধান করলো।আস্তে আস্তে সারা শরীর পচন ধরেছে। রূপের আর সহ্য হলো না।হেলে বারিশের উপর পরছে।বারিশ রূপের অবস্থা বুঝে তাকে কুলে তুলে নিলো।গার্ডদের ইশারা করে দপাদপ পা ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। এতোক্ষণে ছায়ান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। সম্পূর্ণ শরীর পচে গলে গিয়েছে।খুব বিদঘুটে লাগছে দেখতে। রোহান তো রিতিমত বমি করে দিয়েছে।সেও সেখান থেকে প্রস্থান করলো। কয়েকজন গার্ড ছায়ানের পঁচা দেহটার আংশিক তুলে সেখান থেকে বের হয়ে আসে। এতোক্ষণ ছায়ানের সম্পূর্ণ যন্ত্রণাদয়ক মৃত্যু লাইভ দেখেছে সকলে।সকলে আজ তৃপ্ত। আপনজন হারানো লোকগুলো পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করেছে। নিজেদের মাঝে আজ খুশির আমেজ বিরাজ করছে।সকলে খুশির কান্না কেঁদেছে।আজ তাদের ন্যায্য বিচার যে পেয়েছে।সকলে আল্লাহর নিকট দুই হাত প্রসারিত করে নিজেদের তৃপ্তির কথা জানিয়েছে আর আল্লাহর নিকট থেকে বারগশের দীর্ঘজীবনের জন্য,সুখসমিতির জন্য দোয়া চেয়েছে।

হাজার হাজার মানুষের আকুতি হয়তো আল্লাহ এইবার শুনলেন।যাদের সে অসহায় করেছে, মেরেছে পরিবারকে করেছে নিঃস্ব,যাদের জীবন থেকে সুখ নামক পাখিটা সে ধ্বংস করেছে, যেসব মেয়েদের করেছে নির্যাতন, অসহায় আর তিল তিল করে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তাদের কষ্টের চোখের পানি বদদোয়া হয়ে লেগেছে তাঁর উপরে।সকলের দুমরে মুচড়ে শেষ করে দেওয়ার অভিশাপ স্বরুপ তাঁর কঠিন মৃত্যু কামনা করেছে। কামনা করেছে হাজার যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু। তাদের কথা আল্লাহ হয়তো শুনেছে।কথাই আছে পাপের খড়া পূর্ণ হলে মৃত্যু নিশ্চিত। ঠিক তাই হয়েছে তাঁর সঙ্গে।

_

খান বাড়ির মেইন ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য রিপোর্টার,ক্যামেরা ম্যান। সকলের মাঝে টান টান উত্তেজনা। সকলের মুখে মুখে প্রশংসার ঝুড়ি।ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে মনকাড়া হাসি নিয়ে বারিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কয়েকজন সাংবাদিক।কয়েকজন আবার বারিশকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে।এমন একটা ওয়ান্টেড ক্রিমিনালকে সে কীভাবে মারলো? সকলের ভালোবাসা পেয়ে তাঁর কেমন লাগছে। সরকার থেকে পাওয়া সম্মানিতে সে কতোটা হ্যাপি।আরো হেনতেন হাজারো কথা। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।গার্ড কয়েকজন আটকিয়ে রেখেছে লোকগুলোকে।সামনে আসা নিষেধ। তবুও আজ জেনেও কেউ বাধা মানতে নারাজ। নিজেদের মতো হাঁসি হাঁসি মুখ করে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। এমন একটি নিউজ সাথে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ পার্সন,কে না দিতে চায় নিজেদের চ্যালেনে। কে না নিজেদের জনপ্রিয়তা চায়?কেউ কেউ ছবি তোলার জন্য লাইন ধরেছে কেউবা মাথা নুইয়ে মুচকি হেসে লাজুক লতার ন্যায় মুখ করে অটোগ্ৰাফ চাইছে।সব কিছু হেন্ডেল করছে বারিশ। মুখে তাঁর সুন্দর হাঁসি।গার্ড কাউকে আটকে দিতে চাইলে হাতের ইশারায় নিষেধ করে। নিষেধ পেয়ে গার্ড সরে যেতে খুশি মনে এক এক করে শৃংখলতা বজায় রেখে এগিয়ে আসছে।বারিশ নিজের এটিটিউট বজায় রেখে সকলের সাথে কথা বলছে এবং তাদের সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে নিখুঁত ভাবে।দূর থেকে রূপ মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর প্রিয় থেকে প্রিয় তাঁর ভালোবাসা তাঁর প্রাপ্তি তাঁর প্রশান্তি তাঁর মি.এরোগেন্ট ম্যানকে। মুখে বিরাট হাঁসি। চোখ মুখে উপচে পড়া খুশি। কোলে তাকাতে দেখতে পেলো সানশাইন তারই দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মিলিয়ে বারিশ এবং বাহিরের লোকজন কে দেখছে। হাসলো রূপ। সানশাইন রূপের নতুন বিড়াল।কাল সকালে সুদূর থেকে বারিশ আনিয়েছে এই সাদা রঙের সাথে হলুদ মিশ্রন অসাধারণ বিড়াল ছানাটিকে। দেখতে অনেকটা স্মাইলি।আচারনটাও ঠিক তেমনি।ছায়ান সিত্তিস মারা গিয়েছে আজ তিন দিন।এই তিন দিন কতোবার যে এই মিডিয়ার লোক এসেছে তাঁর খবর নেই।রূপ নিজেকে নিজের কাছে গর্বিত বোধ করে।বারিশ খান শুধু মাত্র তাঁর। হাসলো রূপ পুনরায়।দূর থেকে বারিশ তাঁর দিকে তাকাতে হাঁসি মুখ করে দৃষ্টি মিলালো।বারিশ ভ্রু নাচিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলো?রূপ মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে না বললো।বারিশ তাকিয়ে রইল।রূপ মৃদু হেসে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারলো।থমকালো বারিশ।হা করে রূপকে দেখছে। বুকে হাত দিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। একজন বারবার কিছু জিজ্ঞাসা করছে। সেদিকে খেয়াল নেই বারিশের।সে এখনো আগের ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। লোকটি এই বার উচ্চ স্বরে বলাতে বারিশ অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।দূর থেকে বারিশের অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো রূপ।বারিশ রূপের দিকে পুনরায় রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।নাক ফুলিয়ে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে বুঝিয়ে দিলো,

‘আসার পর তোমার অবস্থা বেহাল দশা হবে রূপজান।’

রূপ বারিশের দৃষ্টিকে মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। তাঁর মনোভাব,

‘আমি অপেক্ষা করছি মি.খান।’

বারিশ বাঁকা হেসে গার্ডদের বলে সকলকে বিদায় করতে।তাই হলো।এক এক করে সকলে প্রস্থান করলো।বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। প্রথমে দেখলো না রূপ।সে সানশাইন এর সাথে খেলায় মগ্ন।যখন বারিশের উপস্থিত বুঝতে পারলো সানশাইন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বারিশের দিকে তাকাতে বারিশ বাঁকা হেসে রূপকে কোলে তুলে নিলো। ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বারিশকে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসলো বারিশ।রূপ লাফালাফি করে বলছে,

‘কী করছেন? ছাড়ুন।কেউ দেখলে কী ভাববে?নামান বলছি।’

বারিশ আরেকটু শক্ত করে ধরে মুখ বরাবর ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,

‘তখনের জন্য শাস্তি পেতে প্রস্তুত তো জান!’

রূপ ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে না করলো। হার্টটা দরাস দরাস আওয়াজ করছে।এই ফেটে গেলো বলে।বারিশ বাঁকা হেসে বলল,

‘তা তো হচ্ছে না রূপজান। আমার বাসরের বারোটা বাজানো এবং এখনকার শাস্তি সব মিলিয়ে খুব কঠিন শাস্তি পেতে হবে।’

লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে রূপ। মুখ লুকিয়ে নিলো বারিশের বুকে।এতো নির্লজ্জ কেন এই অত্যান্ত নান্দনিক পুরষটি। উফ্, লজ্জায় লজ্জায় মেরে ফেলার ধান্দা।বারিশ পুনরায় নরম কন্ঠে আবেগি সুরে বললো,

‘মে আই রূপজান।’

লজ্জা রূপ মাথা তুলতে পারছে না। বুকে মুখ গুজে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। হাসলো বারিশ। রূপের কানের কাছে মুখ নিয়ে দুষ্টু হেসে ফিসফিস করে বলল,

‘আমার কিন্তু এক ডজন বেবি চাই রূপজান!’

রূপ চট করে মাথা তুলে তাকালো। লজ্জায় লাল গাল দুটো আরো লাল রং ধারণ করে কৃষ্ণচূড়া ফুলের ন্যায় উজ্জ্বল রং হলো। মুখ কুঁচকে হিসহিসিয়ে বললো,

‘নির্লজ্জ….কোলবালিশ।’

উচ্চস্বরে হেসে উঠলো বারিশ। লজ্জা পেলো রূপ।ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট উল্টিয়ে বারিশের বুকে কিল মেরে সেখানে মুখ গুজে দিলো।বারিশ হাঁসি থামিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো। তাদের নতুন জীবনের দিকে। যেখানে থাকবে অফুরন্ত ভালোবাসা।থাকবে খুনসুটি।ভালো থাকুক রূপ বারিশ। বেঁচে থাকুক তাদের ভালোবাসা। পূর্ণতা পাক সকল ভালোবাসার।নতুন কিরণ নিয়ে আসুক তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা।

“ভালোবাসা কয়েক অক্ষরে দেওয়া একটি নাম।যার গভীরতা বিশাল। ভালোবাসার উদাহরণ দেওয়া দুস্কর। ভালোবাসা কখনো হলদে জোড়া পাখি। কখনো নীল খামের বাজে লিখা সুন্দর কিছু রোমান্টিক গল্প।ভালোবাসা ছোট ছোট কবিতা যা বিশাল বড় পূর্ণতা। আমি ভালোবাসকে ভালোবাসি।যে ভালবাসতে জানে তাকে ভালোবাসি।ভালোবাসা অদ্ভুত তবুও তাঁর পূর্ণতার রং অসাধারণ সুন্দর।

#সমাপ্ত…..❣️
[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ❌

🚩 আজকে অন্ততপক্ষে সাইল্যান্ট রিডাররা মন্তব্য করে যাবেন।

🍁দীর্ঘ সময় পর শেষ হলো মেঘবতী কন্যা গল্পটা। সকলকে এতো অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। গল্পটা বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাঝখানে অনেকদিন বন্ধ ছিলো।কারনটা অনেকের জানা। আমার আব্বু মারা গিয়েছেন গল্পটির মাঝপথে তাই মাঝপথে গল্প লিখা বন্ধ করতে হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস কিংবা তাঁরও বেশি সময় পর পুনরায় সকলের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গল্পটা লিখা। একদম মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া গল্পটি লিখা। অনেক চেষ্টা করেও মন বসাতে পারেনি ঠিক আগের মতো।তাই যেই প্লটে টান টান উত্তেজনা নিয়ে ভালোবাসা দিয়ে গল্পটি লিখেছি কিন্তু মাঝপথে হাজার কষ্ট নিয়ে বন্ধ করে হাজার মানসিক ভাবনা নিয়ে পুনরায় শুরু।তাই মাঝপথে প্রায় অনেক গুলো পর্ব জগাখিচুড়ী হয়ে গিয়েছে।তাই আমি মন থেকে ভীষণ দুঃখিত। সকলের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি অনেককে হতাশা করেছি। মাঝপথে দেরি হওয়ায় কারনে অনেক পাঠক/পাঠিকা হারিয়েছি। তবুও কিছু মানুষের মাত্রারিক্ত ভালোবাসার কারনে সমাপ্তি করতে সক্ষম হয়েছি।যারা শেষ পর্যন্ত পাশে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালোবাসা রইলো সকলের প্রতি।

🍁 খুব শীঘ্রই #নতুন গল্প আসছে।নতুন থিমে ভিন্ন স্বাদের গল্প।একজন জমিদার আর একজন গরিব কিশোরী অসাধারণ রোমান্টিক গ্রাম্য গল্প। আশা করি সকলের ভালো লাগবে।

গ্ৰুপ লিংক 👇
https://www.facebook.com/groups/317078740134340/?ref=share

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here