মেঘবতী_কন্যা পর্ব ২১

0
706

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ২১
#সুমাইয়া আক্তার মিম

দীর্ঘ বিশ মিনিট যাবত একই জায়গায় পায়চারী করছে রূপ। বিশাল কাঁচের দরজা বেদ করে ভিতরে প্রবেশ করার বিন্দুমাত্র সাহস নেই।দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন পাহাড় সমান বিশাল দেহের অধিকারী গার্ড। দুজন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে, মনে হচ্ছে জাদুঘরে স্থাপিত কোনো অদ্ভুত জিনিস তাঁরা। কিছুক্ষণ তাদের পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় ভেতরে প্রবেশ করতে নিও মুখ কাচুমাচু করে ফিরে তাকালো। ভেতর থেকে এই নিয়ে দুই বার বারিশের পিএ রোহান এসে মাথা নিচু করে ভেতরে যেতে বলে গিয়েছে, কিন্তু রূপ নড়াচড়া না করে মনে মনে বাঁচার ফন্দি আটছে।তখন বারিশের এতো গুলো কল না ধরায় নিশ্চয়ই তাকে এখন আস্ত ছাড়বে না। পুনরায় রোহান ভয়ে ভীত হয়ে মিনমিনে গলায় বলতে লাগলো,

‘প্লীজ ম্যাম! ভেতরে স্যার অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। ভীষণ রেগে আছেন। বলেছেন,আর এক মিনিট লেইট হলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।স্যার রেগে গেলে সব লন্ডভন্ড করে দিবে সাথে আমাদেরও গর্দান যাবে।’

রোহানের এরূপ কথা শুনে রূপ সবার দিকে একবার তাকিয়ে বিরবির করতে করতে বারিশের কেবিনে ঢুকে পরলো।বারিশ যে কি তাঁর অজানা নয়। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলো চারিদিকে কেমন অন্ধকার হালকা আলোয় আলোকিত হয়ে আছে সবকিছু। বিশাল বড় থাইয়ের পর্দা গুলো টেনে দেওয়া যার কারণে রুমটি আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।এসি অন করে রাখার ফলে একদম হিমালয়ের মতো হয়ে আছে রুমটি, চারিদিক থেকে এক অদ্ভুত সুন্দর মিষ্টি সুগন্ধি ভেসে আসছে।দেওয়ালে নিজেদের একটি কাপল পিক দেখতে পেয়ে আনমনে হেসে দিলো রূপ।এখানেও নিজেদের কাপল পিক রেখে দেওয়ার কী খুব প্রয়োজন ছিলো! ইশ্ কেউ এসে যখন দেখে কী ভাববে? অবশ্যই দ্যা বারিশ খান বউ পাগলা এটা সবাই জানেন। রূপ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বারিশকে খুঁজে নিলো।না কোথাও বারিশ নেই।ছোট ছোট পা ফেলে টেবিলের কাছাকাছি যেতে পেছনে কারোর উপস্থিত অনুভব করলো। ঘাড়ে কারোর গাঢ় নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে। সাথে সাথে কিছুটা কেঁপে উঠলো রূপ।বারিশ পেছন থেকে আলতো হাতে খুব গভীর ভাবে রূপকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। আবেশে বারিশের বুকের সাথে মিশে চোখ জোড়া বুজে নিলো।কানের লতিতে ঠোঁটের স্পর্শ পেতে আগের থেকে দিগুন কেঁপে উঠে শক্ত করে বারিশের হাত চেপে ধরলো।বারিশ চুলে মুখ গুজে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

‘আবারো লেইট করেছো রূপজান। এইবার তো পানিশমেন্ট এর ওজন আরো ভারি হয়ে গিয়েছে তোমার জন্য।সো জান রেডি তো আমার রোমান্টিক টর্চার সহ্য করার জন্য।হয় তুমি আমাকে কিস করবে নাহলে ঘন্টাখানেক আমার চুমু খেতে হবে।’

রূপ বারিশের কথা শুনে বারবার কেঁপে উঠছে।এই ভয়টাই পাচ্ছিল সে। বারিশ বাঁকা হেসে রূপকে সামনে ঘুরিয়ে কোমড় চেপে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।বারিশ যখনি ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিবে ফটাফট রূপ বারিশের গালে চুমু বসিয়ে দিলো। আবেশে চোখ বুজে আসলো বারিশের , মৃদু হেসে রূপের দিকে তাকিয়ে কপালে একটি ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে হাত ধরে নিজের বসার চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পরলো। আলতো হাতে নিজের দুই হাতের বন্দনিতে রূপের হাত জোড়া বন্দি করে নিলো।রূপ মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বারিশের দিকে।সাদা শার্ট এর সাথে ফর্মাল লুকে বারিশকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।বারিশ এতোটা সুন্দর যার প্রশংসা সারাদিন করলেও রূপের মন ভরবে না তবুও মনে মনে প্রশংসা না করে পারে না।দিনে হাজার বার এই লোকটার প্রেমে পড়ে যায় রূপ। তাঁর প্রতিটা কাজ বাধ্য করে প্রেমে পরতে।বারিশের এক অদৃশ্য শক্তি জেনো ভর করেছে তার উপর।বারিশ কিছু বলার পূর্বে রূপ কাঁধ বাঁকা করে ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো অভিযোগ করে আনমনে বলে উঠলো,

‘আপনি এতো কিউট কেনো। উফ্ ইচ্ছে করে স্ট্রবেরির মতো টাপ করে মুখে পুরিয়ে টুপ করে খেয়ে ফেলি।’

রূপ কথাটা বলে নিজে জিভ কাটলো। ইশ্ কী বলে ফেললো সে।ছিছি কিসব বাজে কথা বারিশের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে হা করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।রূপ মাথা নিচু করে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে বারবার উরনার সাথে আঙ্গুল পেছাচ্ছে আর খুলছে, মাথা তুলতে পারছে না।বারিশ এখনো ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।কী বলছে এই মেয়ে। সারাদিন এইভাবে মাথা খারাপ করে দেয় এখন এমন কথা বলে একদম বেশামাল উন্মাদ করে দিয়েছে তাকে। বারিশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে কন্ট্রোল করে রূপের চোখে চোখ রেখে আলতো হাতে রূপের মুখটি একদম মুখ বরাবর আনিয়ে উদ্গেনি কন্ঠে বলে উঠলো,

‘এই পিচ্চি এই! আমাকে পাগল করে মেরে ফেলার মতলব করেছো তাইতো। আর কতো ভাবে আমাকে পাগল করবে তুমি রূপজান। কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললে কিন্তু তোমার জন্য ভালো হবে না। আমার কঠিন প্রণয় আসক্তিতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতবিক্ষত হবে তুমি।’

বারিশের মারাত্মক নেশালো কথা শুনে রূপ শুকনো ঢোক গিললো।কথা ঘুরানোর জন্য আমতা আমতা করে দেয়ালের ছবিটির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

‘আহ্ ওই ছবিটি এখানে রেখেছেন কেনো? আপনার স্ট্রাফরা দেখলে কী ভাববে!’

বারিশ রূপের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো সঙ্গে সঙ্গে রূপ মাথা নিচু করে নিলো।বারিশ কপালে চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বললো,

‘কোনো ভাবাভাবি নেই! সকলে জানেন বারিশ খান তাঁর রূপজানের জন্য কতোটা পাগল। কতোটা ভালোবাসে তাঁর পিচ্চি পরীজান কে।তাই এসব ফালতু লজিক ছাড়া বিষয় নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।আর কে কি ভাববে সেটা নিয়ে নিজের ছোট মাথায় প্রেশার দিতে যাবে না। এখন লাঞ্চ করবে চলো।’

রূপ মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। এক জন গার্ডকে কল করতে কিছুক্ষণের মাঝেই খাবার নিয়ে হাজির হলো। দুজনে মিলে একসাথে দুপুরে খাবার খেয়ে নিলো।

_
বারান্দার ডিভাইনের উপর বসে একের পর এক সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে ছায়ান। আজকে সে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। কালকে তাঁর ডিল সাইন হবে। রুমের ভেতরে একটি মেয়ে নিজের কাপড় ঠিক করে টেবিলের উপর থেকে টাকার ব্যান্ডেল নিয়ে বের হয়ে যেতে রুমে একটি লোক প্রবেশ করলো। মেয়েটিকে যেতে দেখে বুঝতে পারলো প্রতিবারের মতো আজো এতোক্ষণে এই সাদা চামড়ার রমনীর সাথে এক বাজে খেলায় মেতে ছিলো ছায়ান।কে বলবে এই একজন নামকরা খেলোয়াড়।কাজকর্ম এতো খারাপ আর নিকিষ্ট জীব সে যা বলা বাহুল্য। তাঁর সাথে এই স্বনামধন্য জাতীয় প্লেয়ার এর খ্যাতি যায় না। দেখতে যেমন ভয়ংকর সে তেমনি তাঁর কাজ, চলাফেরা। মানুষকে মানুষ মনে করে না, তাঁর কাছে সব জেনো পোষা কুকুর। নিজের কাজের লোকদের সাথে ঠিক এমনই জঘন্য ব্যবহার করে সে। অতিরিক্ত মাত্রা মাথা খারাপ হওয়ায় তাঁর সামনে কথা বলতেও হাজার বার ভেবে কথা বলতে হয়। তাঁর অপছন্দের একটি কথা,একটি কাজ খুবই জঘন্যতম মৃত্যু হতে পারে।সবাই সহজে বুঝবে না সে কেমন ধাঁচের মানুষ কিন্তু যে তাঁর সাথে কাজ করেছে সে খুব ভালোভাবে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ধারণা রাখবে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।লোকটি কপালের ঘাম মুছে বারান্দার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এমন সাইকো লোকের সাথে কাজ করতে হয় খুব সচেতন ভাবে প্রতিটি ধাপে ধাপে পা ফেলতে ভেবে চিন্তে ফেলতে হয়।লোকটির উপস্থিত বুঝতে পেরে ছায়ান চোখ দুটো বন্ধ করে আয়েশি ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে পুনরায় সিগারেট টান দিয়ে বলে উঠলো,

‘মি.রিপন! কালকের ডিলের সব কিছু তৈরি তো। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ডিল কাল।’

রিপন লোকটি চটপট বলতে লাগলো,

‘ইয়েস।সব ডান শুধুমাত্র লোকেশন অনুযায়ী উপস্থিত থাকতে হবে।ওনারা ওখানে প্রথমে পৌঁছে যাবেন।’

‘ওকে।যাতে কোনো রূপ পুলিশ কিংবা ফালতু ঝামেলা না হয়। আমার এই কাজটি আগামীকাল এর মাঝে হওয়া চাই। কোনো ঝামেলা হলে সবার আগে আপনার মাথাটা কাঁটা পড়বে মি.রিপন।’

মি.রিপন ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,

‘কোনো ঝামেলা হবে না স্যার আপনি নিশ্চিত থাকুন।’

ছায়ান উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।কী হিংস্র সেই হাঁসি। হাঁসি থামিয়ে থমথমে গলায় বললো,

‘এই জন্য আপনাকে এতো পছন্দ করি মি.রিপন।কাল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দিন এই ডিল আমার স্বপ্ন। আমার স্বপ্নের মাঝে কোনো ব্যঘাত আমি সহ্য করবো না।’

কথাটা বলে হেসে পুনরায় আরেকটি সিগারেট জ্বালিয়ে ফুক দিতে লাগল।মি.রিপন বিদায় জানিয়ে তারাতাড়ি এখান থেকে কেটে পরলো। কোনো রকমে আগামীকাল এর কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়ে গেলে বাঁচে নাহলে এই সাইকো তাকে কেটে বালি চাপা দিয়ে দিবে।ওনি দীর্ঘ কাল ধরে ছায়ানের অসৎ কাজের সঙ্গি হয়ে এসেছেন। খুব ভালো করে ধারণা রয়েছে এই ছায়ান সিত্তিস সম্পর্কে তাঁর।

#চলবে,,,❣️
[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম✵]
[বাসায় মেহমান তাই গল্প লিখার সময় হয়ে উঠে না। বিভিন্ন কাজে ব্যস্ততায় গল্প লিখতে পারছি না। আজকের পর্বটাও অনেক বেশি ছোট এবং অগোছালো হয়েছে তাই দুঃখিত। কী লিখেছি নিজেও জানি না।আগামী পর্ব থেকে বড় করে এবং প্রতি দিন দেওয়ার চেষ্টা করবো গল্পটা। ধন্যবাদ সবাইকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here