মেঘবতী_কন্যা পর্ব ২৫

0
702

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ২৫
#সুমাইয়া আক্তার মিম

এক ভয়াবহ রাতের ইতি টেনে নতুন দিনের সূচনা করতে চলেছে প্রকৃতি। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ভোরের আলো এখনো ঠিকঠাক ভাবে উদয় হয়নি। শীতের ভোর বরাবরই কুয়াশায় মুড়ানো যার ফলে ভোর সকাল জেনো মাঝরাত মনে হয়।আট তারকা বিশাল বহুল হোটেল যেখানে নামিদামি লোকদের যাতায়াত।হোটেলের সাথে যুক্ত রয়েছে অত্যধিক সুন্দর ছোট একটি ফামহাউস সেই নান্দনিক ফামহাউসে অবস্থান করছে বিশিষ্ট খেলোয়াড় ছায়ান সিত্তিস। মূলত সেলিব্রিটি এবং বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য আলাদা তৈরি করা এই হোটেলের সাথে যুক্ত ফামহাউসটি।ফামহাউসের অন্ধকার রুমটি জুড়ে ঠাসঠাস চাবুকের আঘাত এর প্রতিধ্বনি মুখরিত হচ্ছে চারিপাশ।সমান্য মিটমিট করে জ্বলা বাতিটা মাথার উপরে এদিক সেদিক বাতাসের সাথে দোল খাচ্ছে।চারজন লোককে একের পর এক চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত করে তুলেছে অন্য দুজন ব্যাক্তি। লোকগুলো ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে বারবার আর এইবারের মতো মাফ করে দিতে বলছে তাদের সামনে বসে থাকা মানুষরুপি পশু, তাদের বসের কাছে।ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে দুল খাচ্ছে ছায়ান,চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।গতকালের পোশাক আর এলোমেলো বেশভূষায় রয়েছে সে। মুখের ভাব রাগের আবাস। গতকাল সারা রাত একই ভঙ্গিতে বসে রয়েছে ইজি চেয়ারে, অতিরিক্ত ড্রাগস সেবনের ফলে সবসময় তাঁর চোখ দুটোতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে থাকে। সারা রাত না ঘুমানোর ফলস্বরূপ হিংস্র আনচান দৃষ্টি খুব খুব ভয়ংকর দেখতে লাগছে তাকে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুঁকড়ে কুঁকড়ে জীবন ভিক্ষা চাওয়া লোকগুলোর দিকে যাদের সারা রাত ধরে নির্ম অত্যাচার করে চলছে সে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।মারতে মারতে যে দুটো ব্যাক্তি মিলে চাবুক মারছিলো তারা পর্যন্ত হাঁপিয়ে উঠেছে, তবুও থামাথামির জু নেই ছায়ানের ভয়ে।ছায়ান আয়েশ করে হেলান দিয়ে কটমট করে বলে উঠলো,

‘এতো ধীরে কেনো!আরো জোরে জোরে আঘাত কর এদের।সামান্য এক মেয়েকে মারতে পারেনি।এক একটা ইডিয়েট।এদের মেরে সারা দিন-রাত অন্ধকার রুমে ফেলে রাখবে। একফোঁটা পানিও জেনো না দেওয়া হয়। একফোঁটা পানির তৃষ্ণা কাতর হয়ে ছটফট করবে,জাস্ট ইমেজিং বেরি ইন্টারেস্টিং।’

কথাগুলো বলে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো ছায়ান।ছায়ানের কথা শুনে দুজন ব্যাক্তি পুনরায় আঘাত করতে লাগলো। এইবার আগের তুলনায় খুব জোরে জোরে মারতে লাগলো। লোকগুলো এতো পরিমাণ মার সহ্য করতে না পেরে ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারালো সেখানে।ছায়ান বিরক্তি প্রকাশ করলো বেশ।এদের আর্তচিৎকার বেশ উপভোগ করছিলো সে।হাত দিয়ে ইশারা করে লোকগুলোকে নিয়ে যেতে বললো।সেন্টার টেবিলের উপর দু’পা উঠিয়ে দোলাতে লাগলো। রুমের উপস্থিত মি.রিপন আর কয়েকজন গার্ড ভয়ে মাথা নিচু করে রয়েছে।মি.রিপন বারবার রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।ছায়ান মি.রিপনের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,

‘কী মি.রিপন বিপি কী বেরে গিয়েছে আপনার এতো কনকনে ঠান্ডায় ঘামছেন যে।ব্যাপার কী?’

ছায়ানের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো মি.রিপন। এতোক্ষণ যা ভয় পেয়েছিল তাই হতে চলছে।এই পাগলের দৃষ্টি দেখে তিনি বাঁচতে পারেননি।ভয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে থতমত খেয়ে বলে উঠলেন,

‘নো বস,আই এম ফাইন।’

‘কিন্তু এখন তো আপনি ফাইন থাকবেন না মি.রিপন।’

ছায়ানের এমন কথা শুনে মি.রিপন আরো ভয়ে সিটিয়ে যান।ছায়ান সিগারেটে এক টান দিয়ে কোনো ভঙ্গিমায় না করে বলে উঠলো,

‘বারবার বলার পরও আপনি সেই ভুলটাই করেছেন। আমার এতোগুলো টাকা আমার স্বপ্ন সব ভেস্তে গেলো। কী করি বলুন তো আপনার মি.রিপন?’

ছায়ানের মাঝে পাগলামো ভাব দেখা যাচ্ছে।কেমন পাগলের মতো কথা বলছে সে।মি.রিপন ছায়ানের পায়ে জড়িয়ে কেঁদে উঠলেন। অনুরোধ করে বলেন,

‘প্লীজ বস এইবারের মত মাফ করে দিন। আমি এমন কিছু হবে ধারণা করতে পারিনি। কয়েকবার করে জায়গায় দেখে ডিলের জন্য জায়গাটা পছন্দ করা হয়েছে এবং এখানে কারোর চলাচল চলে না তাইতো জায়গাটা ফাইনাল করা হয়েছে ডিলের জন্য।আর আপনি নিজেই তো পছন্দ করলেন জায়গাটি। আমি পূর্বে বলেছি, আমেরিকা ডিলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে আর নিউ ইয়র্ক তো সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ নিউ ইয়র্ক এ দ্যা বারিশ খান থাকে যা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ।সে কখনো এই বেআইনি কাজ করতে দিবে না, প্রতিটি কোনায় কোনায় তাঁর লোকজন থাকে।অতি সাবধানতার সাথে কাজ করেও ঠিক বুঝতে পেরে গিয়েছে ।প্রতিবার ডিলের জন্য আপনি নিজে জায়গায় পছন্দ করেন এইবারও, আমি কতো বলেছি আপনাকে।’

ছায়ান দাঁত কড়মড় করে মি.রিপনের গলা চেপে ধরলো।রাগ তাঁর সপ্তম আসমানে পৌঁছে গিয়েছে। খুব শক্ত করে গলা চেপে ধরায় মি.রিপনের প্রায় ধম বন্ধ হয়ে আসছে।ছায়ান রেগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

‘এখানে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে রাগে সেখানে ইউ ফুল,আমার সামনে অন্য কারোর জয় ধ্বনি গাওয়া হচ্ছে।সে আবার আমার শত্রুর।বেরি ফানি। শরীর থেকে মাথা আলাদা করতে না চাইলে আমাকে ঔ বারিশ খান সম্পর্কে সব তথ্য দিতে থাকো।এই দ্যা বারিশ খানকে জানে মেরে তবে আমি আমেরিকা ছাড়বো তাঁর পূর্বে না।ছায়ান সিত্তিস এর সাথে লাগা খুব জঘন্য ভাবে পস্তাতে হবে তাকে।’

কথা গুলো বলে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো মি.রিপন কে।ছাড়া পেতে জোরে জোরে কাশতে লাগলো মি.রিপন। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।নিচে বসে গলায় ধরে এক এক করে বারিশের সম্পর্কে যা জানে সব বলতে লাগলো।বারিশ কতোটা ভয়ংকর,তাঁর কাজকর্ম এবং তাঁর রাগ,সে কী কী করতে পারে, কতোটা হিংস্র হতে পারে এবং তাদের ধারনার বাহিরেও এমন অনেক কিছু আছে যা কখনো স্বপ্নেও ভাবা অসম্ভব। তাদের মতো সামান্য অপরাধকারীকে এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে বারিশ।সব বলতে লাগলো।বারিশের সম্পর্কে সব শুনে রাগে সারা মুখমণ্ডল লাল হয়ে গিয়েছে ছায়ানের।বারিশের এমন সব তথ্য শুনে এই প্রথম সে ভয় পাচ্ছে এবং তা আবার ভীষণ ভয়।কপালে হাত দিতে অনুভব করে বিন্দু বিন্দু ঘাম।ছায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে পুনরায় ইজি চেয়ারে বসে পরলো। চোখ বন্ধ করে পুনরায় অস্থির হয়ে মি.রিপনের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

‘দ্যা বারিশ খানের দুর্বলতা কী আমি জানতে চাই। আমি শেষ করে দিবো এই বারিশ খানকে। পৃথিবীতে এমন কিছু থাকতে পারবেনা যা আমার আগামী জীবনে আমার জন্য মৃত্যুর ফাঁস হতে পারে। কেউ আমাকে আঘাত করবে তাঁর পূর্বে তাকে আমি শেষ করে দিবো। ‘

পাগলের মতো চিৎকার করে বললো। তাঁর এমন চিৎকার শুনে মি.রিপন থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো,

‘কোনো দূর্বলতা নেই যা বারিশ খানকে কষ্ট দিবে। একটা আছে আর যেটা বারিশ খানের খুব ভয়ংকর ভাবে দূর্বলতা রয়েছে আর বারিশ খান নিজের দূর্বলতা প্রটেক্টেট সার্কেল সে নিজে।যার ধারের কাছে সয়ং বারিশ খান না চাইলে কেউ যেতে পারবে না ক্ষতি করা তো স্বপ্নেও ভাবা যায় না।’

ছায়ান বিদঘুটে হেসে উঠলো।কি বিশ্রী সেই হাঁসি।একটু পরপর শরীর কাঁপিয়ে হাসছে সে।এই জেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।সে ভয়ংকর হেসে বললো,

‘বাহ্ বাহ্!বেশ ইনফরমেশন রয়েছে দ্যা বারিশ খান সম্পর্কে তোমার,গুড জব।জানো তো পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের একটি করে উইকনেস থাকে আর দূর্বলতা আঘাত করা মৃত্যু সমপরিমাণ।তো দ্যা বারিশ খানের উইকনেস কী মি.রিপন।’

মি.রিপন মিনমিন করে বলে উঠলো,

‘ওনার ওয়াইফ। মিসেস রূপসা বারিশ খান।এই একটি উইকনেস রয়েছে তাও খুব গুরুতর ভাবে।এর থেকে বেশি আমি কিছু জানি না স্যার। ‘

#চলবে,,,❣️
[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
[আজকের পর্ব খুব ছোট হয়েছে তার জন্য দুঃখিত।আগামী পর্ব বড় করে দেওয়া হবে। গল্পটা কার কেমন লাগছে অবশ্যই গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।নাইস নেক্সট লিখবেন না।ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here