#প্রেমে_পড়া_বারণ অন্তিম পর্ব
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম
আজ বহুবছর পর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে তিন্নি। ছোট মেয়ের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শায়লা। সেই অবস্থায় তিন্নি মাকে প্রশ্ন করলো,
— আচ্ছা আম্মা আমার ওপর সব ছেড়ে দিয়ে তুমি কি সুখী?
প্রশ্ন শুনে শায়লা হাত বুলানো বন্ধ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর আবারো হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
— নিশ্চিন্ত আছি তবে সুখী না।
— এটা কেমন কথা?
— অপরাধ বোধে ভুগি। আমার অপারগতা তোর জীবনের কাল। যে বয়সে তোর মতো মেয়েরা রঙিন স্বপ্নের দুনিয়ায় মগ্ন থাকে সে বয়সে তুই আমাদের জন্য তোর দুনিয়াকে সাদা কালো বানিয়েছিস। এটা ভেবে প্রতিনিয়তই আমি কষ্ট পাই। তোর আব্বাও এমনি কষ্ট পেয়েছেন। বলতেন,”মেয়েটার জন্য কোনোদিন কিছু করতে পারলাম না শায়লা। ও কি মুখ ফুটে আমার কাছে কিছুই চাইবে না। আমার কাছে না চাইলো কিন্তু নিজেও তো নিজের ইচ্ছার দাম দেয় না।” তোর বাবার কথা গুলো তখন নিছক খেয়ালিপনা মনে হতো। ছেলে মেয়েদের জন্য যে জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিবে সে তাতেও অভিযোগ করবে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু তোর আব্বার মৃত্যুর পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি সে একচুল ও বাড়িয়ে বলে নাই। তোকে একটা অনুরোধ করবো মা?
— কি?
— আমি খুবই অসহায় একজন নারী। তোর জন্য কিছু করার সাধ্য আমার নাই। তাই আমি তোকে দায়িত্ব দিচ্ছি নিজের জন্য কিছু একটা কর।
তিন্নি কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ মায়ের কোল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। শায়লা তেমনি বসে রইলেন। মেয়েকে কি তিনি রাগিয়ে দিয়েছেন?
একটু আগে শায়লা,সানভি আর জরিবু কে তিথির বৌভাতের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এলো তিন্নি। ফোন উঠিয়ে প্রথমে রওনক কে একটা ম্যাসেজ পাঠালো সে। তারপর ইমতিয়াজ কে এক ঘন্টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে আসতে বলে বাড়ি থেকে আনা বাক্সটি খুলল সে। বাবার দেওয়া লাল শাড়ি আর ইফতেখারের মায়ের দেওয়া গহনা থেকে বেছে বেছে হালকা গহনা গুলো বের করলো তিন্নি। তারপর সেগুলো পরে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বেশ সময় নিয়ে সাজলো সে। চুল টাকে সুন্দর করে বেঁধে খোঁপা করে তাতে ফুল ও লাগিয়ে নিল। চোখে কাজল এবং ঠোঁটে বেশ গাঢ় করে লিপস্টিক দিল। এমনিতেও তিন্নি সুন্দরী। সাজায় তাকে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আশা কোনো হুর পরী। তিথির বিয়ের এই এক সপ্তাহ প্রচুর মানসিক অস্বস্তিতে ভুগেছে তিন্নি। সিদ্ধান্তহীনতা, অপরাধ বোধ, স্বার্থপরতা সব মিলিয়ে বেশ চাপেও ছিল সে। রওনক এবং শায়লার কথার প্রভাব তো ছিলই সাথে তিথির ফোনে বকাবকি ওকে আরও বেশি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সবকিছু থেকে বড় গতরাতে শিরিনের ফোন। তাই তিন্নি এবার একটা সিদ্ধান্তে এসেছে। এভাবে সবকিছু চলতে দেয়া যায় না। এই এক আবিদ তার সাজানো গোছানো জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। সবার কাছে তাকে অপরাধী করে তুলেছে। তিথি যেখানে বড় হয়েও তিন্নির সাথে কখনো উচ্চ স্বরে কথা বলেনি, শায়লা তিন্নির কোনো সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তোলেনি আজ তারা এভাবে তিন্নির সাথে কথা বলছে। এবার আবিদকে শায়েস্তা করার সময় এসেছে। সবার মুখ এবার বন্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
কমিউনিটি হলের নির্জন একটা জায়গায় মনমরা হয়ে বসে আছে আবিদ। ওকে ঘিরে ওর বন্ধুরা বসেছে। তিন্নির আর যে কোনো আশা নেই সেটা বন্ধুদের জানিয়েছে সে। তারা এখন নানা ধরনের সান্তনা দিয়ে যাচ্ছে আবিদকে। কেউ বলছে, ” তিন্নির থেকে অনেক সুন্দরী মেয়ে এই শহরে আছে।” আবার কেউ বলছে, “যে করে হোক তিন্নিকে আবিদের সাথে মেলাবে প্রয়োজনে তাকে তুলে নিয়ে আসবে।” আবিদের এসবে মন নেই। তিন্নিকে সে কি পরিমান ভালোবাসে তা ভালোই টের পাচ্ছে সে। রাগে দুঃখে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার। এত নিষ্ঠুর হৃদয়হীনাকে কি করে ভালোবাসলো সে। ওর এত আগ্রহ চেষ্টা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত রওনক কে বিয়ে করতে চায় সে। এমন মেয়েকে ভুলে যাওয়া উচিত। কিন্তু সেটা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক এমন সময় কমিউনিটি হলে ঢুকলো তিন্নি চারিপাশে তাকিয়ে আবিদের কোনো দেখা না পেয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করলো সে। তখনই মৌমির সাথে তার দেখা হলো। মৌমি তিন্নির দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর উৎসাহিত গলায় বলল,
— তুমি ছোট ভাবি সরি তিন্নি আপু না?
তিন্নি মাথা দুলিয়ে আবিদ কে খোঁজায় মন দিলো। মৌমি আবারো বলল,
— ওমা কি সুন্দর লাগছে তোমাকে একেবারে নতুন বৌদের মতো। কাউকে খুঁজছো?
এবার তিন্নি প্রশ্ন করলো,
— আবিদ সাহেব কে দেখেছো?
— হুম। ঐ তো ঐদিকে বন্ধুদের সাথে বসে আছে।
বলে হাত বাড়িয়ে জায়গাটা দেখিয়ে দিল সে। তিন্নি আর এক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে সেদিকে হাঁটা ধরলো। মৌমি বোধহয় আরও কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু সেটা শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তিন্নির। মৌমির দেখানো রাস্তায় কিছুটা এগিয়েই আবিদের দেখা পেল সে। বন্ধুদের মাঝখানে দেবদাস টাইপ মুখ করে বসে আছে সে। তিন্নির হাসি পেল। তবে এই মুহূর্তে হাসা যাবেনা। মুখটাকে যথাসম্ভব কঠিন করে আবিদের দিকে এগিয়ে গেল সে। ওকে সেখানে দেখে অবাক হলো সবাই। আবিদ কোনোমতে বললো,
— তুমি এখানে?
— কেন আশা করেন নি আমাকে?
— না সেটা নয় আসলে…..
হঠাৎ কি বলবে বুঝতে পারছে না আবিদ। আবিদ কে আমতা আমতা করতে দেখে তিন্নিই বললো,
— আমি বিয়ে করছি আজকে। আপনাকে ইনভাইট করতে এসেছি।
তিন্নির মুখে বিয়ের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল আবিদের। সে রওনক কে আজকেই বিয়ে করছে। আবার আবিদ কে ইনভাইট ও করতে এসেছে। এবার আবিদ শক্ত গলায় বলল,
— তুমি বিয়ে করছো করো। আমি যাবোনা।
— সে কি আপনি না গেলে বিয়ে হবে কিভাবে?
— কেনো?
— সাক্ষী লাগবে না।
— আমি সাক্ষী হবো তোমার বিয়ের??
— অবশ্যই এ কাজে আপনার থেকে উপযুক্ত কেউ নেই। আপনি বলেছেন ভালোবাসেন আমাকে। তাই মন থেকে আমার ভালো চাইবেন। এজন্যই আপনাকে সাক্ষী করতে চাই। প্রথম বার আপনার কাছে কিছু চাইছি না করবেন না।
— তুমি কি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে? আর কত কষ্ট দিতে চাও।
— এই শেষ কষ্টটা দিবো।
— আমার কি ইচ্ছা করছে জানো তোমার বরকে ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারতে। তাকে সামনে পেলে সত্যি সত্যি মেরেই দেবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। মারবেন। আপনি এখন আমার সাথে গেলে যতখুশি তাকে মারতে দিবো।
— তুমি কি সিরিয়াস নাকি মজা করছো।
— আপা আপনাকে কখনো বলেনি আমি মজা করতে জানিনা।
— তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে।
তিন্নি এবার অধৈর্য হয়ে গেল। আবিদের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে চলতে শুরু করলো আর বলল,
— উফ চলুন তো আগে এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আবিদ অবাক। মুখে কোন কথা আসছে না। ভ্যাবলার মত তিন্নির পিছে পিছে হাঁটছে। ওর বন্ধুরাও স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো। হুস হতেই তারাও আবিদের পিছনে ছুটল। তারা যখন গাড়িতে উঠেছে তিন্নির গাড়ি তখন গেট ছেড়ে বেশ কিছু দূর এগিয়ে গেছে। কাজী অফিসের সামনে এসে দুটি গাড়িই পরপর থামলো। প্রথম গাড়ি থেকে তিন্নি আবিদ আর ইমতিয়াজ নামলো। এবং দ্বিতীয় গাড়ি থেকে আবিদের বন্ধুরা। তিন্নি আবিদ কে নিয়ে আগে আগে কাজী অফিসের মধ্যে ঢুকলো। অন্যরা ওদের পিছু নিলো। ভিতরে রওনক হাসি মুখে বসে আছে। তিন্নি বলল,
— সবকিছু রেডি।
— হ্যা শুধু সাইন করে কবুল বলবি ব্যাস।
কথাটা বলে আবিদের দিকে তাকালো রওনক। ওর মুখে কোনো হাসি নেই। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। এটা দেখে রওনক বলল,
— কি ব্যাপার আবিদ সাহেব মুখে হাসি নেই কেন। আজ তো আপনারই সবথেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা।
এবার আবিদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে কড়া ভাষায় বলল,
— আপনারা মজা করছেন আমার সাথে। একজন কিছু না শুনেই নিজের বিয়েতে টানতে টানতে আমাকে নিয়ে এলো। অন্যজন বলছে আমি খুশি না কেন। কেনো ভাই আপনি তিন্নিকে বিয়ে করছেন এতে আমাকে কেন হাসতে হবে?
আবিদের কথা শুনে রওনক হো হো শব্দে হেসে উঠলো এবং তিন্নি কে বলল,
— সেকি তিন্নি ওকে তুই এগুলো কি বলেছিস।
— আমি কিছু বলিনি সে নিজেই ধারণা করে নিয়েছে। আমি শুধু বলেছি আজকে আমি বিয়ে করছি কাকে করছি সেটা বলিনি।
— ভুল টা ভাঙানো উচিত ছিল না।
— না। সে আমাকে এই কয়েক মাস অনেক বিরক্ত করেছে। এখন থেকে তাকে আমি বিরক্ত করবো এটা তার শুরু।
রওনক এবার আবিদ কে বলল,
— শোনো ভাই। তোমাকে তুমি করেই বলছি বয়স এবং সম্পর্কে আমিই বড়। আজকে আমি এখানে এসেছি তোমাদের বিয়ের সাক্ষী হিসেবে। তোমাদের মানে তোমার এবং তিন্নির।
আবিদ হকচকিয়ে গেল। কি হচ্ছে আজকে এরা কি তার সাথে নাটক করছে। নাকি আবিদই কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। সে নিজেই নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলো। না কোনো ঘোরের মধ্যে সে নেই। এবার সে তিন্নির দিকে তাকালো। তিন্নি বললো,
— আপনার কাছে দুটো রাস্তা আছে। এক এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করে সারাজীবন আমার সাথে থাকা। দুই এই মুহূর্তে কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আমার জীবন থেকেও সারাজীবনের জন্য বেরিয়ে যাওয়া।
আবিদ কিছুক্ষণ তিন্নির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
— আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে শুধু। দেবে?
— কি?
— তুমি আমাকে ভালোবাসো?
— আপনার মনে হয় এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমি এমনি এমনি নিয়েছি?
— তারমানে বাসো। কিন্তু সেদিন ছাদে তুমি রওনক ভাই কে ওগুলো বলেছিলে কেন?
— আপনাকে দেখে। আপনি তো সেটুকু শুনেই চলে গেলেন। অবশ্য ভালোই হয়েছে। তারপর রওনক ভাই আপনার হয়ে কি পরিমান ওকালতি করালো তা আপনার দেখার দরকার ছিলোনা। এখন আপনার সিদ্ধান্ত বলুন।
— সিদ্ধান্তের কি আছে কোথায় সাইন করবো দাও। আমিও আর কোনো রিস্ক নেবো না।
বলেই কাজীর সামনের চেয়ার টেনে বসে পড়লো আবিদ। তিন্নি ও বসলো তারপাশে।
।।পরিশিষ্ট।।
বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। মেহমান রা সব চলে যাচ্ছে। শায়লারা তিথিদের কাছে দাঁড়ানো। শিরীন কে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ফিরবে। শিরীন শেষ কিছু আত্নীয় স্বজনদের বিদায় জানিয়ে তিথিদের কাছে গেলেন। এবং খেয়াল করলেন আবিদ এবং তার বন্ধুরা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ছেলের খোঁজ নিতেই তিনি ফোন বের করলেন। সেখানে আধঘন্টা আগে তিন্নির নাম্বার থেকে আসা একটি ম্যাসেজে তার চোখ আটকে গেল। এবং তিনি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মায়ের অবস্থা দেখে আফিফ এগিয়ে এসে তার কাছ থেকে ফোনটা নিলো। তিথিও পাশ থেকে ফোনের উপর ঝুঁকে পড়লো। তিন্নি লিখেছে,
” আন্টি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার অনুমতি না নিয়েই আপনার ছোট ছেলেকে আজকে বিয়ে করার জন্য। আম্মা, রওনক ভাই এবং আপার কথায় নয় আপনার ফোন পেয়েই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি বলেছিলেন আপনার ছেলেকে আমি যেন আমার জীবনে মেনে নেই। তার জন্য যা করতে হয় আপনি করতে রাজি। এটা ছাড়া তাকে মেনে নেওয়ার আর কোনো রাস্তা আমার কাছে ছিলোনা। প্রেম জিনিসটা আমার দ্বারা কখোনোই সম্ভব নয়। এ সিদ্ধান্ত থেকে একটুও নড়িনি আমি। তাই তার দ্বিতীয় প্রস্তাব মেনে নিয়ে তাকে বিয়ে করলাম। তবে হ্যা এই মুহূর্তে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আম্মা এবং সানভির আমাকে আরেকটু প্রয়োজন। তাদের প্রয়োজন মিটলে আপনি যখন অনুমতি দেবেন আপনার সংসারে আমি চলে আসবো। আম্মা আর আপাকে বলবেন আমাকে কথা শোনানোর অপরাধে তাদের না জানিয়েই বিয়েটা করলাম। আজ রাতে আমি বা আবিদ সাহেব কেউই বাসায় ফিরবো না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর মনে কোনো কষ্ট রাখবেন না।
লেখাটি পড়েই আবিফ পা বাড়িয়ে বলল,
— মা এখনই চলো দেখি ওরা কই আছে। না জানিয়ে এভাবে বিয়ে।
শায়লা তখনও কিছু বুঝতে পারছে না। তিথি সংক্ষেপে বিষয়টি তাকে বোঝালো। ওদিকে আফিফ তখন আবিদ কে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে শিরীন তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কেটে দিয়ে বলল,
— ওদের কে ওদের মতো থাকতে দে। বিরক্ত করিস না। সারাদিন অনেক ধকল গেছে সবাই ক্লান্ত। এখন ফিরে চল।
— কিন্তু মা…….
আফিফ কে মাঝে থামিয়ে দিয়ে তিনি শায়লার কাছে গেলেন। শায়লা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। তিনি গিয়ে তার দুহাত চেপে ধরে বললেন,
— চিন্তা করবেন না বেয়ান আমি ওদের ওপর রেগে নেই। বরং ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে বুঝবেন তিন্নির সিদ্ধান্তটাই ভালো হয়েছে। একেবারে শক্ত এক বাঁধনে আমাদের জড়িয়ে ফেলেছে। চাইলেই এখন আর এখান থেকে বের হতে পারবো না। তিন্নির হাতে আবিদ কে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত। এবার যদি ছেলেটা আমার একটু কাজের হয়। আসুন আমরা ওদের জন্য দোয়া করি।
শিরীনের কথায় শায়লা নিশ্চিন্ত হলেন। মনে মনে আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া করলেন। এত বছর পর তিন্নি নিজের জন্য কিছু করেছে। আজ তৌহিদ সাহেব থাকলে কত আনন্দিত হতেন কে জানে।
।। সমাপ্ত।।
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম
আজ বহুবছর পর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে তিন্নি। ছোট মেয়ের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শায়লা। সেই অবস্থায় তিন্নি মাকে প্রশ্ন করলো,
— আচ্ছা আম্মা আমার ওপর সব ছেড়ে দিয়ে তুমি কি সুখী?
প্রশ্ন শুনে শায়লা হাত বুলানো বন্ধ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর আবারো হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
— নিশ্চিন্ত আছি তবে সুখী না।
— এটা কেমন কথা?
— অপরাধ বোধে ভুগি। আমার অপারগতা তোর জীবনের কাল। যে বয়সে তোর মতো মেয়েরা রঙিন স্বপ্নের দুনিয়ায় মগ্ন থাকে সে বয়সে তুই আমাদের জন্য তোর দুনিয়াকে সাদা কালো বানিয়েছিস। এটা ভেবে প্রতিনিয়তই আমি কষ্ট পাই। তোর আব্বাও এমনি কষ্ট পেয়েছেন। বলতেন,”মেয়েটার জন্য কোনোদিন কিছু করতে পারলাম না শায়লা। ও কি মুখ ফুটে আমার কাছে কিছুই চাইবে না। আমার কাছে না চাইলো কিন্তু নিজেও তো নিজের ইচ্ছার দাম দেয় না।” তোর বাবার কথা গুলো তখন নিছক খেয়ালিপনা মনে হতো। ছেলে মেয়েদের জন্য যে জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিবে সে তাতেও অভিযোগ করবে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু তোর আব্বার মৃত্যুর পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি সে একচুল ও বাড়িয়ে বলে নাই। তোকে একটা অনুরোধ করবো মা?
— কি?
— আমি খুবই অসহায় একজন নারী। তোর জন্য কিছু করার সাধ্য আমার নাই। তাই আমি তোকে দায়িত্ব দিচ্ছি নিজের জন্য কিছু একটা কর।
তিন্নি কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ মায়ের কোল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। শায়লা তেমনি বসে রইলেন। মেয়েকে কি তিনি রাগিয়ে দিয়েছেন?
একটু আগে শায়লা,সানভি আর জরিবু কে তিথির বৌভাতের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এলো তিন্নি। ফোন উঠিয়ে প্রথমে রওনক কে একটা ম্যাসেজ পাঠালো সে। তারপর ইমতিয়াজ কে এক ঘন্টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে আসতে বলে বাড়ি থেকে আনা বাক্সটি খুলল সে। বাবার দেওয়া লাল শাড়ি আর ইফতেখারের মায়ের দেওয়া গহনা থেকে বেছে বেছে হালকা গহনা গুলো বের করলো তিন্নি। তারপর সেগুলো পরে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বেশ সময় নিয়ে সাজলো সে। চুল টাকে সুন্দর করে বেঁধে খোঁপা করে তাতে ফুল ও লাগিয়ে নিল। চোখে কাজল এবং ঠোঁটে বেশ গাঢ় করে লিপস্টিক দিল। এমনিতেও তিন্নি সুন্দরী। সাজায় তাকে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আশা কোনো হুর পরী। তিথির বিয়ের এই এক সপ্তাহ প্রচুর মানসিক অস্বস্তিতে ভুগেছে তিন্নি। সিদ্ধান্তহীনতা, অপরাধ বোধ, স্বার্থপরতা সব মিলিয়ে বেশ চাপেও ছিল সে। রওনক এবং শায়লার কথার প্রভাব তো ছিলই সাথে তিথির ফোনে বকাবকি ওকে আরও বেশি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সবকিছু থেকে বড় গতরাতে শিরিনের ফোন। তাই তিন্নি এবার একটা সিদ্ধান্তে এসেছে। এভাবে সবকিছু চলতে দেয়া যায় না। এই এক আবিদ তার সাজানো গোছানো জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। সবার কাছে তাকে অপরাধী করে তুলেছে। তিথি যেখানে বড় হয়েও তিন্নির সাথে কখনো উচ্চ স্বরে কথা বলেনি, শায়লা তিন্নির কোনো সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তোলেনি আজ তারা এভাবে তিন্নির সাথে কথা বলছে। এবার আবিদকে শায়েস্তা করার সময় এসেছে। সবার মুখ এবার বন্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
কমিউনিটি হলের নির্জন একটা জায়গায় মনমরা হয়ে বসে আছে আবিদ। ওকে ঘিরে ওর বন্ধুরা বসেছে। তিন্নির আর যে কোনো আশা নেই সেটা বন্ধুদের জানিয়েছে সে। তারা এখন নানা ধরনের সান্তনা দিয়ে যাচ্ছে আবিদকে। কেউ বলছে, ” তিন্নির থেকে অনেক সুন্দরী মেয়ে এই শহরে আছে।” আবার কেউ বলছে, “যে করে হোক তিন্নিকে আবিদের সাথে মেলাবে প্রয়োজনে তাকে তুলে নিয়ে আসবে।” আবিদের এসবে মন নেই। তিন্নিকে সে কি পরিমান ভালোবাসে তা ভালোই টের পাচ্ছে সে। রাগে দুঃখে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার। এত নিষ্ঠুর হৃদয়হীনাকে কি করে ভালোবাসলো সে। ওর এত আগ্রহ চেষ্টা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত রওনক কে বিয়ে করতে চায় সে। এমন মেয়েকে ভুলে যাওয়া উচিত। কিন্তু সেটা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক এমন সময় কমিউনিটি হলে ঢুকলো তিন্নি চারিপাশে তাকিয়ে আবিদের কোনো দেখা না পেয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করলো সে। তখনই মৌমির সাথে তার দেখা হলো। মৌমি তিন্নির দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর উৎসাহিত গলায় বলল,
— তুমি ছোট ভাবি সরি তিন্নি আপু না?
তিন্নি মাথা দুলিয়ে আবিদ কে খোঁজায় মন দিলো। মৌমি আবারো বলল,
— ওমা কি সুন্দর লাগছে তোমাকে একেবারে নতুন বৌদের মতো। কাউকে খুঁজছো?
এবার তিন্নি প্রশ্ন করলো,
— আবিদ সাহেব কে দেখেছো?
— হুম। ঐ তো ঐদিকে বন্ধুদের সাথে বসে আছে।
বলে হাত বাড়িয়ে জায়গাটা দেখিয়ে দিল সে। তিন্নি আর এক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে সেদিকে হাঁটা ধরলো। মৌমি বোধহয় আরও কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু সেটা শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তিন্নির। মৌমির দেখানো রাস্তায় কিছুটা এগিয়েই আবিদের দেখা পেল সে। বন্ধুদের মাঝখানে দেবদাস টাইপ মুখ করে বসে আছে সে। তিন্নির হাসি পেল। তবে এই মুহূর্তে হাসা যাবেনা। মুখটাকে যথাসম্ভব কঠিন করে আবিদের দিকে এগিয়ে গেল সে। ওকে সেখানে দেখে অবাক হলো সবাই। আবিদ কোনোমতে বললো,
— তুমি এখানে?
— কেন আশা করেন নি আমাকে?
— না সেটা নয় আসলে…..
হঠাৎ কি বলবে বুঝতে পারছে না আবিদ। আবিদ কে আমতা আমতা করতে দেখে তিন্নিই বললো,
— আমি বিয়ে করছি আজকে। আপনাকে ইনভাইট করতে এসেছি।
তিন্নির মুখে বিয়ের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল আবিদের। সে রওনক কে আজকেই বিয়ে করছে। আবার আবিদ কে ইনভাইট ও করতে এসেছে। এবার আবিদ শক্ত গলায় বলল,
— তুমি বিয়ে করছো করো। আমি যাবোনা।
— সে কি আপনি না গেলে বিয়ে হবে কিভাবে?
— কেনো?
— সাক্ষী লাগবে না।
— আমি সাক্ষী হবো তোমার বিয়ের??
— অবশ্যই এ কাজে আপনার থেকে উপযুক্ত কেউ নেই। আপনি বলেছেন ভালোবাসেন আমাকে। তাই মন থেকে আমার ভালো চাইবেন। এজন্যই আপনাকে সাক্ষী করতে চাই। প্রথম বার আপনার কাছে কিছু চাইছি না করবেন না।
— তুমি কি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে? আর কত কষ্ট দিতে চাও।
— এই শেষ কষ্টটা দিবো।
— আমার কি ইচ্ছা করছে জানো তোমার বরকে ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারতে। তাকে সামনে পেলে সত্যি সত্যি মেরেই দেবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। মারবেন। আপনি এখন আমার সাথে গেলে যতখুশি তাকে মারতে দিবো।
— তুমি কি সিরিয়াস নাকি মজা করছো।
— আপা আপনাকে কখনো বলেনি আমি মজা করতে জানিনা।
— তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে।
তিন্নি এবার অধৈর্য হয়ে গেল। আবিদের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে চলতে শুরু করলো আর বলল,
— উফ চলুন তো আগে এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আবিদ অবাক। মুখে কোন কথা আসছে না। ভ্যাবলার মত তিন্নির পিছে পিছে হাঁটছে। ওর বন্ধুরাও স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো। হুস হতেই তারাও আবিদের পিছনে ছুটল। তারা যখন গাড়িতে উঠেছে তিন্নির গাড়ি তখন গেট ছেড়ে বেশ কিছু দূর এগিয়ে গেছে। কাজী অফিসের সামনে এসে দুটি গাড়িই পরপর থামলো। প্রথম গাড়ি থেকে তিন্নি আবিদ আর ইমতিয়াজ নামলো। এবং দ্বিতীয় গাড়ি থেকে আবিদের বন্ধুরা। তিন্নি আবিদ কে নিয়ে আগে আগে কাজী অফিসের মধ্যে ঢুকলো। অন্যরা ওদের পিছু নিলো। ভিতরে রওনক হাসি মুখে বসে আছে। তিন্নি বলল,
— সবকিছু রেডি।
— হ্যা শুধু সাইন করে কবুল বলবি ব্যাস।
কথাটা বলে আবিদের দিকে তাকালো রওনক। ওর মুখে কোনো হাসি নেই। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। এটা দেখে রওনক বলল,
— কি ব্যাপার আবিদ সাহেব মুখে হাসি নেই কেন। আজ তো আপনারই সবথেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা।
এবার আবিদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে কড়া ভাষায় বলল,
— আপনারা মজা করছেন আমার সাথে। একজন কিছু না শুনেই নিজের বিয়েতে টানতে টানতে আমাকে নিয়ে এলো। অন্যজন বলছে আমি খুশি না কেন। কেনো ভাই আপনি তিন্নিকে বিয়ে করছেন এতে আমাকে কেন হাসতে হবে?
আবিদের কথা শুনে রওনক হো হো শব্দে হেসে উঠলো এবং তিন্নি কে বলল,
— সেকি তিন্নি ওকে তুই এগুলো কি বলেছিস।
— আমি কিছু বলিনি সে নিজেই ধারণা করে নিয়েছে। আমি শুধু বলেছি আজকে আমি বিয়ে করছি কাকে করছি সেটা বলিনি।
— ভুল টা ভাঙানো উচিত ছিল না।
— না। সে আমাকে এই কয়েক মাস অনেক বিরক্ত করেছে। এখন থেকে তাকে আমি বিরক্ত করবো এটা তার শুরু।
রওনক এবার আবিদ কে বলল,
— শোনো ভাই। তোমাকে তুমি করেই বলছি বয়স এবং সম্পর্কে আমিই বড়। আজকে আমি এখানে এসেছি তোমাদের বিয়ের সাক্ষী হিসেবে। তোমাদের মানে তোমার এবং তিন্নির।
আবিদ হকচকিয়ে গেল। কি হচ্ছে আজকে এরা কি তার সাথে নাটক করছে। নাকি আবিদই কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। সে নিজেই নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলো। না কোনো ঘোরের মধ্যে সে নেই। এবার সে তিন্নির দিকে তাকালো। তিন্নি বললো,
— আপনার কাছে দুটো রাস্তা আছে। এক এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করে সারাজীবন আমার সাথে থাকা। দুই এই মুহূর্তে কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আমার জীবন থেকেও সারাজীবনের জন্য বেরিয়ে যাওয়া।
আবিদ কিছুক্ষণ তিন্নির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
— আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে শুধু। দেবে?
— কি?
— তুমি আমাকে ভালোবাসো?
— আপনার মনে হয় এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমি এমনি এমনি নিয়েছি?
— তারমানে বাসো। কিন্তু সেদিন ছাদে তুমি রওনক ভাই কে ওগুলো বলেছিলে কেন?
— আপনাকে দেখে। আপনি তো সেটুকু শুনেই চলে গেলেন। অবশ্য ভালোই হয়েছে। তারপর রওনক ভাই আপনার হয়ে কি পরিমান ওকালতি করালো তা আপনার দেখার দরকার ছিলোনা। এখন আপনার সিদ্ধান্ত বলুন।
— সিদ্ধান্তের কি আছে কোথায় সাইন করবো দাও। আমিও আর কোনো রিস্ক নেবো না।
বলেই কাজীর সামনের চেয়ার টেনে বসে পড়লো আবিদ। তিন্নি ও বসলো তারপাশে।
।।পরিশিষ্ট।।
বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। মেহমান রা সব চলে যাচ্ছে। শায়লারা তিথিদের কাছে দাঁড়ানো। শিরীন কে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ফিরবে। শিরীন শেষ কিছু আত্নীয় স্বজনদের বিদায় জানিয়ে তিথিদের কাছে গেলেন। এবং খেয়াল করলেন আবিদ এবং তার বন্ধুরা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ছেলের খোঁজ নিতেই তিনি ফোন বের করলেন। সেখানে আধঘন্টা আগে তিন্নির নাম্বার থেকে আসা একটি ম্যাসেজে তার চোখ আটকে গেল। এবং তিনি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মায়ের অবস্থা দেখে আফিফ এগিয়ে এসে তার কাছ থেকে ফোনটা নিলো। তিথিও পাশ থেকে ফোনের উপর ঝুঁকে পড়লো। তিন্নি লিখেছে,
” আন্টি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার অনুমতি না নিয়েই আপনার ছোট ছেলেকে আজকে বিয়ে করার জন্য। আম্মা, রওনক ভাই এবং আপার কথায় নয় আপনার ফোন পেয়েই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি বলেছিলেন আপনার ছেলেকে আমি যেন আমার জীবনে মেনে নেই। তার জন্য যা করতে হয় আপনি করতে রাজি। এটা ছাড়া তাকে মেনে নেওয়ার আর কোনো রাস্তা আমার কাছে ছিলোনা। প্রেম জিনিসটা আমার দ্বারা কখোনোই সম্ভব নয়। এ সিদ্ধান্ত থেকে একটুও নড়িনি আমি। তাই তার দ্বিতীয় প্রস্তাব মেনে নিয়ে তাকে বিয়ে করলাম। তবে হ্যা এই মুহূর্তে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আম্মা এবং সানভির আমাকে আরেকটু প্রয়োজন। তাদের প্রয়োজন মিটলে আপনি যখন অনুমতি দেবেন আপনার সংসারে আমি চলে আসবো। আম্মা আর আপাকে বলবেন আমাকে কথা শোনানোর অপরাধে তাদের না জানিয়েই বিয়েটা করলাম। আজ রাতে আমি বা আবিদ সাহেব কেউই বাসায় ফিরবো না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর মনে কোনো কষ্ট রাখবেন না।
লেখাটি পড়েই আবিফ পা বাড়িয়ে বলল,
— মা এখনই চলো দেখি ওরা কই আছে। না জানিয়ে এভাবে বিয়ে।
শায়লা তখনও কিছু বুঝতে পারছে না। তিথি সংক্ষেপে বিষয়টি তাকে বোঝালো। ওদিকে আফিফ তখন আবিদ কে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে শিরীন তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কেটে দিয়ে বলল,
— ওদের কে ওদের মতো থাকতে দে। বিরক্ত করিস না। সারাদিন অনেক ধকল গেছে সবাই ক্লান্ত। এখন ফিরে চল।
— কিন্তু মা…….
আফিফ কে মাঝে থামিয়ে দিয়ে তিনি শায়লার কাছে গেলেন। শায়লা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। তিনি গিয়ে তার দুহাত চেপে ধরে বললেন,
— চিন্তা করবেন না বেয়ান আমি ওদের ওপর রেগে নেই। বরং ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে বুঝবেন তিন্নির সিদ্ধান্তটাই ভালো হয়েছে। একেবারে শক্ত এক বাঁধনে আমাদের জড়িয়ে ফেলেছে। চাইলেই এখন আর এখান থেকে বের হতে পারবো না। তিন্নির হাতে আবিদ কে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত। এবার যদি ছেলেটা আমার একটু কাজের হয়। আসুন আমরা ওদের জন্য দোয়া করি।
শিরীনের কথায় শায়লা নিশ্চিন্ত হলেন। মনে মনে আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া করলেন। এত বছর পর তিন্নি নিজের জন্য কিছু করেছে। আজ তৌহিদ সাহেব থাকলে কত আনন্দিত হতেন কে জানে।
।। সমাপ্ত।।