#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ১৬

0
311

#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ১৬
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম

নদীর পাড়ে পৌঁছাতেই তিন্নি লোকজনের একটা জটলা দেখতে পেল। অজানা আশংকায় ওর হৃদয় কেঁপে উঠলো। জটলা ছাড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো আবিদ বসে আছে আর ওর পাশে রওনক। দুজনেই ভেজা। ওদের পাশে আফিফ দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর পর সে আবিদ কে এটা বলে বকছে যে, ” সাঁতার জানিস না যখন রাতের বেলায় নদীর পাড়ে আসতে গেলি কোন সাহসে।” এতক্ষণ আবিদ এ কথার কোন জবাব না দিলেও তিন্নি কে আসতে দেখে বলল,
— ফোনে কথা বলতে বলতে কখন এখানে চলে এসেছি টের পাইনি। তারপর অন্ধকারে পা পিছলে………
এ পর্যায়ে তিন্নি এসে আবিদের হাত ধরে টেনে ওকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
— এখানের জটলা ভেঙে যে যার কাজে যাও। যা ঘটে গেছে তা নিয়ে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই।
তিন্নি আবিদ কে ওপরে এনে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো। আবিদ ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে এলে ওরা মুখোমুখি বসলো। তিন্নির হাতে দু কাপ কফি। একটি কাপ আবিদের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে তিন্নি খুব ঠান্ডা গলায় আবিদ কে বলল,
— জীবনটাকে খেলা মনে করেন তাইনা।
— তুমি ভুল বুঝছো আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি ওভাবে পানিতে পড়ে যাবো। আসলে…….
— আপনাকে এ কদিন কাছ থেকে দেখে একটা কথাই আমার মাথায় এসেছে সেটা হচ্ছে আপনি একদমই সিরিয়াস নন। সবকিছু আপনার কাছে মজা।
— তোমাকে নিয়ে আমি সিরিয়াস তিন্নি। প্রচুর সিরিয়াস। এতটা সিরিয়াস অন্য কিছু নিয়ে কোনোদিন হইনি। বিশ্বাস করো।
তিন্নি কোনো কথা বললো না। ঠোঁটের কোণে একটুকরো তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। কাপের কফিটুকু শেষ করে তিন্নি কথা শুরু করলো,
— আমার জীবনে প্রেম ভালোবাসা এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর বিয়ে সাদি বিষয়টাকে ও দূরেই রাখতে চাই। আমার এই ধারণা কোনোদিন বদলাবে না। ইফতেখার ভাই আপনার থেকে সবদিক দিয়ে ভালো ছিলো। কিন্তু সে আমার মন জয় করতে পারেনি। এর মানে এই নয় যে আমি অহংকার করছি। কিন্তু আমার মন পরিবর্তন আসলেই সম্ভব নয়। বিশেষ করে আপনার দ্বারা। আর তাছাড়া আমার মনে হয় না আপনি আমাকে ভালোবাসেন। এটা নিছক আপনার ভালো লাগা। আমার বোনের দেবর না হলে আমি আপনার পাগলামি গুলোকে এভাবে সহ্য করতাম না। ইফতেখার ভাইয়ের সাথে আমার চার বছরের ও বেশি সময় ধরে পরিচয়। সে আমাকে ভালোবেসেছে। কিন্তু কখনো তার ভালোবাসা কে আমার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেয় নি। আমার থেকে কোনো দিন কিছু আশাও করে নি। আমার কাছে ভালোবাসার মানেটা অনেকটা এরকম। কিন্তু আপনি যেটাকে ভালোবাসা বলছেন সেটাকে আমার কাছে বোঝা মনে হয়। পায়ের বেড়িও বলতে পারেন। আপনি আশেপাশে থাকলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। অদ্ভুত একটা অস্বস্তি কাজ করে। আপনাকে আমি কিভাবে বললে বুঝবেন আমার আর আপনার ভেতর কিছু হওয়া অসম্ভব।
তিন্নির কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো আবিদ। এরপর ধীরে ধীরে বলল,
— তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো?
— নাহ।
— যদি কখনো তোমার মন পরিবর্তন হয় অর্থাৎ যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে ও কি তুমি আমার কথা ভাববে না?
— যদি কোনোদিনও আমার মন পরিবর্তন হয় আর কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হয় তাহলে সেটা আপনি নন এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
— তাহলে কে জানতে পারি?
— নাহ।
— সে কি এই মুহূর্তে এ বাড়িতেই আছে ?
— বলতে পারেন।
আবিদ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকলো। ওর গভীর চোখ মিথ্যা বলছে না। তাহলে সত্যিই ও ব্যর্থ হয়েছে। তিন্নি সত্যিই সাধারণ মেয়েদের মতো নয়। ওকে হয়তো ওর সময় দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সময় দিলেও কি লাভ হতো? তিন্নি তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। তিন্নি আর কথা বাড়াতে চাইলো না। চুপচাপ সেখান থেকে উঠে ছাদে চলে এলো। তিন্নি মিথ্যা বলেনি। ও এসব সম্পর্কে কখনোই জড়াতে চায় না। কিন্তু যদি একজন মানুষ ওকে বিয়ে করতে চায় ও কখনোই বারণ করবে না। মানুষটিকে সে ভালোবাসে তবে সে ভালোবাসা কখনো প্রেমিকার ভালোবাসা নয়।

তিথি আর আফিফের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। এই মুহূর্তে বিদায়ের প্রস্তুতি চলছে। তিথি আর শায়লা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে। পাশে আফিফ বোকার মতো বসে আছে। এই পরিস্থিতিতে বরদের কি করা উচিত সেটাই ও ভেবে পাচ্ছে না। বাইরে থেকে সবাই তাড়া দিচ্ছে। রওনক তিথির জিনিসপত্র সব গাড়িতে তুলে দিয়ে এসে তিথি আর শায়লার উদ্দেশ্যে বলল,
— মামি, তিথি তোমরা কি করছো বলোতো? ঢাকা পৌঁছাতে হবে। রাত করলে তো সমস্যা। তিথি তুই তো একেবারে চলে যাচ্ছিস না।
তিথি কান্নাজড়িত কণ্ঠেই বলল,
— তুমি আমাকে তাড়াতে পারলেই বাঁচো তাইনা। তুমি কি বুঝবে মেয়েদের এই সময়ের অনুভূতি।
এমন সময় কোথা থেকে তিন্নি এসে বলল,
— তুই যদি এতই বুঝিস তাহলে বিয়ের জন্য পাগল হয়েছিলি কেন? এসব ঢঙ এখন বাদ দে আপা। তোর শাশুড়ি বার বার তাড়া দিচ্ছে। তাদের মাঝ রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রাখতে চাস। ঢাকায় তো আমাদের আবার দেখা হচ্ছেই। আম্মা তুমি একটু বুঝো। ছাড়ো ওকে।
তিন্নির কথায় কাজ হলো। তিথি এবং শায়লা দুজনেই একটু শান্ত হলো। তিথি বললো,
— তুই এই যাবার সময়ও আমার সাথে এমন পাষাণের মতো আচরণ করবি।
— হুম। এখন তোর সাথে নাটক করার সময় আমার নেই। তোর বিয়ের হাজার টা কাজ। সব তো আমাকেই দেখতে হচ্ছে। রওনক ভাই তুমি একটু ওপরে যাও না। আমি একটু পরে আসছি। কাজ আছে।
রওনক কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওপরে চলে গেল। নিচে ওর আর কোনো কাজ নেই। এরকম আবেগি দৃশ্যে বেশিক্ষণ থাকলে নিজেকে সামলানো টা বোধহয় কঠিন হবে। রওনক চলে যেতেই তিন্নি আফিফ কে বলল,
— আফিফ ভাই আমার আপা কিন্তু বরাবরই সবার ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়েছে। শুধু পরিবারের ভেতরে না বাইরেও। আপাকে কত ছেলে এখনো ভালোবাসে সেটা বোধহয় ও নিজেও জানেনা। কিন্তু সে আপনাকে বেছে নিয়েছে। আপনিও আপাকে বেছে নিয়েছেন। আশা করি আপনাদের সিদ্ধান্ত সঠিক। আপাকে ভালো রাখবেন, কোনো কষ্ট দিবেন না এ জাতীয় কথা আমি বলবো না। কারণ আমি জানি আপনি তা এমনিতেই করবেন। আর আপার ব্যাপারে কোনো কমপ্লেন করার সুযোগ আপনি বা আপনার পরিবার পাবেন না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমাদের তরফ থেকে কোনো ভুল ত্রুটি হলে আমি ক্ষমা চাইছি। আমি আর এখানে থাকতে পারছি না। আপনারা আল্লাহর নাম নিয়ে সাবধানে যাবেন।
তিন্নি আর দাঁড়ালো না। ও এখন একজনকে এড়িয়ে চলতে চায়। এই শেষ মুহূর্তে তাকে কিছুতেই দেখা দেওয়া চলবে না। এরপর আর কখনোই যাতে তার সাথে দেখা না হয় সে ব্যবস্থাও করবে।

আফিফ আর তিন্নিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আবিদ সেখান থেকে সরে এলো। যাবার আগে একবার ও তিন্নির সাথে দেখা করতে চায়। তিন্নি কে আশে পাশে দেখতে না পেয়ে সে ইমতিয়াজ কে তিন্নির কথা জিজ্ঞেস করলো। ইমতিয়াজ জানালো তিন্নি ছাদে আছে। আবিদ এক মূহুর্ত দেরি না করে ছাদের দিকে হাঁটা শুরু করলো। ছাদের দরজায় পৌঁছে ও থমকে গেল। তিন্নি রওনকে জড়িয়ে ধরে আছে এবং বলছে,
— তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে রওনক ভাই?
আবিদ আর এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। ও রওনকের উত্তর জানতে চায় না। তিন্নি কি তবে সত্যিই ওকে ভালোবাসেনি। ওর ধারণা কি সত্যিই ভুল ছিলো।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here