#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ১৩
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম
অনেক সকাল থেকেই ডেকোরেশনের কাজে ব্যস্ত তিন্নি। প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় নজরে রাখছে সে। বাকিদের ও যার যার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। এখন সকাল দশটা বাজে। শায়লা সবাই কে খেতে ডাকলেন। কাজ করতে করতে সবারই খুদা পেয়ে গেছে। তাই শায়লা ডাকতেই সবাই খেতে চলে এলো। তিন্নি তখনও কাজে ব্যস্ত। আবিদ ওকে ডাকলে ও বলল,
— আমি খেয়ে নিবো পরে আপনি যান।
— আচ্ছা পরে একসাথে খাবো।
— আমার দেরি হবে। অনেকক্ষণ কাজ করেছেন এবার কিছু খেয়ে আসুন।
— তুমিও অনেকক্ষণ ধরে কাজ করছ।
— আমার অভ্যেস আছে। আপনি কাইন্ডলি গিয়ে খেয়ে আসুন।
শায়লা আবিদ কে আবারো ডাকলেন। আর বললেন,
— ও হাতের কাজ শেষ না করে আসবে না। তুমি এসো তো।
আবিদ তিন্নিকে আর কিছু না বলে ভিতরে চলে গেল। শায়লা খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন,
— আমার এই মেয়েটা হয়েছে ওর বাবার মতো। কাজ পাগলা। কাজের চাপে নিজেকেই ভুলে যায়। দিন দিন বোধহয় রোবট হয়ে যাচ্ছে। কিছু বলতেও পারি না।
— আন্টি ওর খাবার টাও আমার প্লেটে দিয়ে দিন।
শায়লা মুচকি হেসে আরো দুটো পরোটা আর মাংসের ঝোল প্লেটে বেড়ে আবিদের হাতে দিলেন। তিন্নি লাইটিং এর জন্য একজন ইলেকট্রিশিয়ান কে কোথায় কোথায় ওয়ারিং করতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। আবিদ পরোটা ছিড়ে সেটা তিন্নির মুখে ঢুকিয়ে দিল। তিন্নি গোল গোল চোখ করে আবিদের দিকে তাকাতেই আবিদ বলল,
— তোমার কাজে আমি কোন বাধা দিচ্ছি না অতএব তুমিও আমার কাজে কোন বাধা দেবে না। সকাল থেকে আমাদের সবার থেকে বেশি কাজ তুমি করছো। শুধু নিজের কাজই না সাথে অন্যদের কাজেরও তদারকি করছ। কাজ করতে তো একটা শক্তির প্রয়োজন। না খেলে সেটা আসবে কোথা থেকে। তুমি যদি এখন অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে তো বিয়েটাই আটকে যাবে।
— আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন।
— আর তুমি একদমই কথা শোনো না। এবার নাও হা করো।
— আপনি রাখুন আমি খেয়ে নেব।
— আমি দিচ্ছি খেয়ে নাও। নাকি আমার হাতে খেলে তুমি আমাকে ভালো বেসে ফেলবে।
— আপনি শুধু কথাই বেশি বলেন না বেশি ভাবেন ও। নিন দিন।
বলেই হা করলো তিন্নি। আবিদ হাসি মুখে খাবার তুলে দিলো ওর মুখে। এভাবে সারাজীবন ওকে খাইয়ে দিতেও রাজি আবিদ যদি তিন্নি একবার ওর হয়ে যায়।
তিন্নির মামী আর নানীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধেছে। রাগ হয়ে তিন্নির মামী এখনই বিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাবেন বলছেন। পুরো বাড়ির লোকজন যখন তাদের বোঝাতে ব্যর্থ। অগত্যা তিন্নিকে সমস্ত কাজ ফেলে বিষয় টা দেখতে আসতে হলো। তিন্নির পিছু পিছু আবিদ ও এলো। তিন্নি সবাই কে রুম থেকে বের করে দিয়ে ওর মামী আর নানী কে বলল,
— তোমরা কি শুরু করেছ বলোতো। বিয়ে বাড়িতে হাজারটা কাজ। এর মাঝে তোমাদের ঝামেলা না বাধালে চলছিলো না।
তিন্নির মামী বলল,
— আমি কি করবো আম্মা খালি কথায় কথায় আমারে গালি দেয়। আমি বললাম আম্মা বিয়ে বাড়ি, মেহমানে ভর্তি এইখানে অন্তত গালি দিয়েন না।
অমনি ওর নানী চেঁচিয়ে বলল,
— ঐ ******** তোরে খালি খালি গাইল পাড়ি আমি। অকাম করস তাই গালই। **** বেটি**** আমার নাতনির কাছে আমার নামে নালিশ।
তিন্নি বলল,
— নানী চুপ করো। মামী ভুল করলে বোঝাও তাকে, রাগ করো কিন্তু গালি কেন দাও।
মামী বলল,
— আম্মা গালি ছাড়া কথা কইতে পারে নাকি।
তিন্নি বলল,
— জানো যখন তখন রাগো কেন? গালি একটা ভাষা। বললেই তো তুমি তা হয়ে যাচ্ছো না তাইনা। আর নানী তোবমার বয়স হইছে। একলা একলা তো আর থাকতে পারবা না। মামী ছাড়া আর কে দেখবে তোমারে। তোমার ছেলেমেয়েরাও এত দেখাশোনা করেনা তোমার যতটা মামী করে। আর তারেই তুমি সারাদিন গালাগালি করো।
তিন্নির কথায় কাজ হলো। দুজনের একজন ও আর একটা কথা বলল না। তিন্নি ওদের একা রেখে আবিদ কে নিয়ে বেরিয়ে এলো। আবিদ বলল,
— ওনাদের একা রেখে আসা কি ঠিক হলো?
— চিন্তা করবেন না। এরকম প্রায়ই হয়। এই দুজনের মধ্যে ঝগড়া আবার এই মিলমিশ।
— তোমার নানী এভাবে গালি দেয়?
— সবসময় না রেগে গেলে। এখানে রেগে গেলে সবাই মোটামুটি গালি দেয়। এটা একপ্রকার রাগের বহিঃপ্রকাশ।
— তারমানে তুমি আমার ওপর কখনো রাগ করো নি।
— আমি আপনার ওপর সবসময়ই রেগে আছি।
— আমি মানবোই না। তুমি কখনোই আমাকে গালি দাও নি।
— আপনাকে গালি দিলেই আপনি মানবেন আমি রেগে আছি।
— হুম।
— এ কেমন লজিক?
— আমি জানি তুমি আমাকে কখনোই গালি দিতে পারবে না। কারণ তুমি আমার উপর রাগই করোনি কখনো।
— ঠিক আছে। গালি শোনার যখন এত শখ আপনাকে আমি গালি অবশ্যই দিবো। কিন্তু আপাতত আমি রেগে নেই। যখন রাগ উঠবে তখন দিবো।
— চ্যালেন্জ?
— মানে?
— মানে হচ্ছে তুমি আমাকে গালি দিতেই পারবে না।
— তো আপনি আমাকে চ্যালেন্জ করতে চাইছেন?
— হুম। সিম্পল চ্যালেন্জ। আজ রাত ঠিক দশটার মধ্যে তুমি বেশি না যদি আমাকে পাঁচ টা গালি দিতে পারো তাহলে আমি আর তোমাকে বিয়ের শেষ হওয়া পর্যন্ত বিরক্ত করবো না।আর যদি না দিতে পারো তাহলে……
— তাহলে??
— তাহলে আমার সারা মুখে আলাদা আলাদা ভাবে গুনে গুনে পাঁচটা চুমু খাবে তুমি।
— কিহ??
— কি হলো ভয় পেয়ে গেলে নিজের ওপর কোনো কনফিডেন্স নেই??
— আছে ওকে এটা আর এমন কি পাঁচটা গালিই তো।
— যে সে গালি না। তোমার নানী যেগুলো দেয় আরকি।
— এরকম কথা হয়নি কিন্তু।
— তাহলে হার মানছো তো।
তারপর নিজের মুখ বাড়িয়ে দিয়ে আবিদ বলল,
— নাও এবার পাঁচটা চুমু খাও তো।
— কে বলল আমি হার মেনেছি। এখনো যথেষ্ট সময় আছে। আর কাজ ও।
বলেই সেখান থেকে একপ্রকার দৌড়ে চলে এলো তিন্নি। কি করল এটা ও। এরকম চ্যালেন্জ কেন নিল? ধুর আবিদ ওকে আবারো ট্রাপে ফেলল। এখন কি করবে ও? ও তো সাধারণ কিছু গালি ও কোনোদিন মুখে আনেনি। আর নানী যেগুলো দেয় ওগুলো কিভাবে মুখে আনবে? এক দুই বার চেষ্টাও করল ও। কিন্তু শব্দ গুলো মাথায় আসতেই লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে ওর। আর মুখ দিয়ে উচ্চারণ তো দূরের কথা। তাই বাকিটা সময় ও যথেষ্ট চেষ্টা করলো আবিদ কে এড়িয়ে চলার। আবিদ সামনে আসলেই এই কাজ সেই কাজের বাহানায় সরে থাকলো সবটা সময়। রাত ঠিক সাড়ে দশটার সময় আবিদ জোর করে তিন্নির হাত ধরে টেনে নদীর পাড়ে নিয়ে এলো। তিন্নি হাত ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেই আবিদ বলল,
— এখন পালাতে চাইছ কেন?
— কে পালাচ্ছে আমার কাজ আছে। দেখি সরুন যেতে দিন।
— একদম চালাকি করবেনা। এখন কটা বাজে দেখেছ?
— কটা বাজে?
— তোমাকে দেয়া টাইম থেকে আধ ঘন্টা বেশি হয়ে গেছে। তাও তোমাকে সুযোগ দেওয়া হলো। এই যে আমি সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চুমু দাও অথবা গালি।
— আ..মি.. মানে…
তিন্নি তোতলাতে শুরু করলো। আবিদ বলল,
— ভয় পাচ্ছো?
তিন্নি নিজেকে সামলে বলল,
— ভয় পাবো কেন? আমি গালি ফালি দিতে পারবোনা সরুন তো। উফ্।
— তাহলে তো আরো ভালো। শর্ত অনুযায়ী চুমু দাও।
— সেটাও পারবোনা।
— কেন ভয় পাচ্ছো? চুমু দিতে গিয়ে আসল ফিলিংস টা না বেরিয়ে আসে।
— প্লিজ এসব বন্ধ করুন।
— দেখ তুমি কিন্তু রাজি হয়ে ছিলে। এখন যদি কথার খেলাপ করো। তাহলে আমি বড়দের কাছে বিচার দিবো। আমার কাছে রেকডিং ও আছে।
— আপনি রেকডিং ও রেখেছেন?
— হুম প্রমাণ রাখতে হবে না। দেখ পাঁচটা চুমুই তো। দিয়ে দাও চলে যাই। এখানেই মামলা ডিসমিস। তুমিও প্রমাণ করো আমার প্রতি তোমার কোনো দুর্বলতা নেই।
তিন্নি আর কথা বাড়ালো না। কেউ তো জানবে না। এখন এর কথা না শুনলে যদি সত্যিই সবাই কে জানাতে চলে যায়। এমনিতেই হাজার ঝামেলা। সময় নষ্ট করা যাবে না। ব্যাপারটা এখানেই শেষ করা যাক। এই ছেলে যা কথা জানে দেখা গেল ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আবার কোন ট্রাপে ফেলবে। আবিদ মুখ বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি একে একে কপালে, দুই গালে এবং থুতনিতে চারটা চুমু দিলো। আবিদ মনে মনে ভীষণ খুশি মুখের আর একটা জায়গাই বাদ আছে। ও ঠোঁট চোখা করে সামান্য একটু বাড়িয়ে ধরল। তিন্নি ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসল এবং আবিদের সমস্ত খুশিতে পানি ঢেলে ওর নাকে চুমু দিয়ে ওকে বলল,
— কাহিনী খতম এবার আসুন অনেক কাজ বাকি।
বলেই সেখান থেকে চলে গেল তিন্নি। আবিদ মাথায় হাত দিয়ে ওখানেই বসে পড়লো। মনে মনে বললো, ” ক্যালকুলেশনে এরকম একটা ভুল করলাম। ইস্ ছয়টা বলা উচিৎ ছিল।”
চলবে…………..