#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ৭
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম
শুক্রবার সকালে কোচিং এ স্পেশাল ক্লাস থাকে তিন্নির। সেটা শেষ করে আজকের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার করে বাড়ি ফিরল তিন্নি। আজ আর অন্য কোনো কাজ রাখেনি ও। মায়ের হাতে বাজারের ব্যাগ তুলে দিয়ে রান্নার যোগার শুরু করে দিতে বলে নিজের রুমে গেল ও। আলমারি খুলে আফিফের জন্যে আনা আংটিটা বের করল ও। আজ যদি কোনো ভাবে আংটি বদল হয় তাহলে ওদের ও প্রস্তুতি রাখা উচিত। আংটির বক্স নিয়ে আবারো রান্না ঘরে ফিরে এল ও। মায়ের হাতে বক্স টা দিয়ে বলল,
— আফিফ ভাইয়ের জন্য এনেছি দেখাতো কেমন হয়েছে।
শায়লা বক্স খুলে অবাক হয়ে গেল। আংটিটা বেশ দামি। হাজার পঞ্চাশের নিচে তো হবেই না। মা কে অবাক হতে দেখে তিন্নি বলল,
— এত অবাক হচ্ছ কেন?
— আংটিটা তো বেশ দামি।
— এতে অবাক হওয়ার কি আছে। আফিফ ভাইয়ের জন্য এটা খুবই সামান্য। বড়লোক জামাই চাও আর তার যোগ্যতা অনুযায়ী কিছু দিতে চাও না এটা তো হতে পারে না।
— হ্যারে মা। এখন বিয়েটা দিতে চেয়ে কি ভুল করছি?
— এরকম কেন বলছ?
— একটা বিয়েতে তো কম খরচ না আর তার উপর ছেলে পক্ষ ও বেশ বড়লোক। তাদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে…..
— আম্মা খরচ নিয়ে তোমাকে তো চিন্তা করতে বলিনি। আর ওদের চাহিদা পূরণ আমি করবো। এসব চিন্তা আমার। তুমি শুধু তোমার বড় মেয়ের বিয়েতে ফোকাস করো। আমার ওপর ভরসা নেই তোমার?
— তোর ওপর ভরসা করেই তো এতো দূর পর্যন্ত এলাম।
— তাহলে এখন সব চিন্তা ছাড়ো। যাও আংটিটা রেখে এসো। তারপর রান্না বান্না শুরু করি। ওরা কিন্তু দুপুরে খাবে।
— আচ্ছা।
শায়লা বেরিয়ে গেলে তিন্নি রান্নার কাজে হাত লাগালো। জরি মাছ আর মুরগি কাটছিল। তিন্নি জরিকে জিগ্যেস করল,
— আপা উঠেছে?
— হ কুন সকালে। হেরে এত খুশি আগে দেখি নাই। পছন্দের মানুষের লগে বিয়া খুশি তো হইবোই।
— আপাকে তো এসেছি পর্যন্ত দেখলাম না।
— সে আর বাইজান মিল্লা ঘর দোর গোছায়। অহন মনে অয় বাইজানের ঘরে।
— ওহ সানভিও আজ ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।
— আফা আপনের ফুফুরা আইবো না।
— ছোট ফুফুরা গ্রামে গেছে। বড় ফুফু আসতে চেয়েছিল কিন্তু তার হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়েছে সৈকত ভাই আর ভাবি কে আসতে বলেছিলাম রাইসা কে নিয়ে। ভাইয়া আসতে পারবে না। তার অফিসে কোনো একটা মিটিং আছে বোধহয়। তবে ভাবি একটু পরেই চলে আসবে।
— রওনক বাই আইবো না। মেলা দিন তারে দেহি না।
— রওনক ভাই ঢাকায় নেই। তুমি এদিকটা একটু দেখ আমি এক্ষুনি আসছি।
বলেই সেখান থেকে উঠে এলো তিন্নি। নিজের রুমে এসে ফোন হাতে নিল ও। রওনক এর সাথে কথা হয় না অনেক দিন। ওকে একটা ফোন করবে কি? করা কি ঠিক হবে? অবশ্য এই কষ্ট নিয়ে কতদিন কাটাবে রওনক। এখন ওর সবকিছু ভুলে যাওয়া উচিত। আর তার শুরুটা তিথির বিয়ে থেকেই শুরু করবে তিন্নি। আপাতত রওনক কে একটা ফোন দেওয়া দরকার। প্রথমবার ফোনে রওনক কে পাওয়া গেল না। দ্বিতীয় বার ফোন দেওয়ার আগেই রওনক কল ব্যাক করল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রওনক বললো,
— কিরে ছোট বেলার প্রেমকে এতদিন পর মনে পড়লো।
— মনে তো সবসময়ই পড়ে। কিন্তু তোমাকে তো সবসময় পাওয়া যায় না। দেখো আজ তোমার সবার আগে আসার কথা আর তুমি কিনা কোন বন জঙ্গলে পশু পাখির ছবি তুলছো।
— হ্যা মা কাল ফোন দিয়ে বলল তিথির বিয়ের কথা হচ্ছে। চিন্তা করিস না বিয়ে পাকাপাকি হোক তখন সবার আগে আমি এসে হাজির হবো।
— সেটাই আগে থেকে ছুটি নিয়ে নেবে। তোমাকে ছাড়া একটা বিয়ের ঝামেলা একা আমার পক্ষে সামলানো অসম্ভব।
— একথা তুই বলছিস। এত দিন তো আমাকে ছাড়াই সব হলো।
হঠাৎ রওনকের কথার কোনো উত্তর দিলো না তিন্নি। কি বলবে ও রওনক কে। যে রওনকের কষ্ট বাড়াতে চায় না ও। তাই এতদিন ওকে এখানে আসতে জোড় করেনি। তিন্নির খুব ইচ্ছা করলো বলতে, ” আমাকে ক্ষমা করে দাও রওনক ভাই তোমার ভালোবাসার দাম আমি কোনোদিনই দিতে পারবো না।” কিন্তু কথাটা মুখের কাছেই আটকে গেল। শুধু সাহস করে তিন্নি বলল,
— তুমি কেমন আছো রওনক ভাই?
— এতদিন পর তোর মনে হলো ফোন করে জানতে চাই রওনক ভাই কেমন আছে?
— সরি রওনক ভাই। আমার ওপর অভিমান করেছ?
— তুই কে যে তোর ওপর অভিমান করবো। আমার কারো উপর কোনো অভিমান নেই।
— তোমাকে সবসময় আমার প্রয়োজন হয়েছে। যখনই কোনো ঝামেলায় পড়েছি বারবার চেয়েছি তোমাকে ডাকি। কিন্তু পরে মনে হলো এ ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। তাই প্রতিবার নিজেকে সংযত করতে হয়েছে।
— ঋণ। আমার সাথে কি তোর ঋণের সম্পর্ক। আমাকে তুই নিজের কেউ ভাবিস না।
— ভাবি বলেই আজ তোমাকে ফোন দিলাম। এই দায়িত্ব তোমাকে ছাড়া পালন করা অসম্ভব।
— ঠিক আছে। তিথির বিয়ের ডেট আমাকে জানিয়ে দিস। সেই অনুযায়ী ছুটি নিতে হবে তো।
— তাহলে রাখি এখন। অনেক কাজ বাকি।
— হুম।
ফোন রাখতেই তিন্নির এতক্ষণ আটকে রাখা চোখের পানি সমস্ত বাধা অতিক্রম করে গড়িয়ে পড়লো। তিন্নি জানে রওনক এর চোখ ও শুকনো নেই। আল্লাহ মানুষকে এত সীমিত ক্ষমতা দিয়ে কেন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন? কেন?
তিন্নিদের বাসার সামনে গাড়ি থামালো আবিদ। সবাই নেমে গেলেও ও নামছে না দেখে শিরিন এগিয়ে এসে বললেন,
— কিরে গাড়ি থেকে নামিস না কেন?
— তোমরা যাও আমি গাড়ি পার্ক করে আসি।
— আচ্ছা। জিনিস গুলো নামিয়ে দে আগে।
— ওহ হ্যা। দাঁড়াও।
গাড়ি থেকে নেমে জিনিস পত্র নামিয়ে ভাই এবং ফুফার হাতে দিল আবিদ। তারপর আবারো গাড়িতে উঠতে যাবে তখন পিছন থেকে ওর হাত টেনে আফিফ বলল,
— বিয়ের কথা হচ্ছে আমার আর নার্ভাস হচ্ছিস তুই ব্যাপারটা কেমন হয়ে যাচ্ছে না।
— আরে ভাইয়া তোমার শালি কে তো চেনই। আমাকে দেখলেই খ্যাকখ্যাক শুরু করে দিবে। কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে কে জানে?
— তুই ভয়ও পাশ?
— না সেরকম কিছু না। দুই দিন আগে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে এমন রেগে গেলো। জুতা খুলে হাতে নিয়ে বলল, পরেরবার সামনে আসলে সবার সামনে জুতা দিয়ে পেটাবে। একটু সিরিয়াসলি বলেছে।
— আচ্ছা শোন ভয় পাশ না। গিয়ে ওকে দেখেই এমন ভাব করবি যেন তুই জানতিস ই না যে এটা তিন্নির বাসা। বাকিটা আমি সামলে নেব।
— ঠিক তো ভাইয়া। কোনো রকম কেস খাওয়াবি না তো।
— আরে না। আমার ভালোবাসা আমি পাচ্ছি আর আমার ভাই তার ভালোবাসা পাবেনা এটা কি হয় নাকি।
— তোমরা কি নিয়ে এত কথা বলো দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
কথাটা বলতে বলতে ওদের দিকে এগিয়ে এলো ওদের ফুফাতো ভাই সাদিক। আফিফ বলল,
— আরে আবিদ খুবই নার্ভাস ওকে একটু রিল্যাক্স করাচ্ছি।
— আবিদ নার্ভাস হবে কেন? নার্ভাস তো তোমার হওয়ার কথা।
— আমার তো সব ঠিকঠাক আছে। কিন্তু আবিদের তো এখনো শুরুই হয়নি।
— মানে?
— চল যেতে যেতে বলি। মা আর ফুফা দাঁড়িয়ে আছে। আর আবিদ তুই গাড়ি পার্ক করে দ্রুত আয়।
বলেই সাদিক কে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল আফিফ। আবিদ গাড়ি পার্ক করেও কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর সাহস সঞ্চয় করে তিন্নিকে ফেস করতে ওদের বাসার সামনে এলো ও। কলিং বেল চেপে মনে মনে দোয়া করলো আর যেই খুলুক সেটা যেন তিন্নি না হয়। আজ ভাগ্য ও ওর বিপরীতে। দরজা তিন্নিই খুলল। খুলে আবিদ কে দেখেই রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন আবিদ ভাইয়ের কথামতো অবাক হওয়ার নাটক করে বলল,
— তুমি এখানে?
— আপনি ঢঙ করেন আমার বাসা জেনেই তো এসেছেন। এখন আবার ঢঙ করে বলছেন আমি এখানে কেন।
— তুমি ভুল ভাবছো?
— আমি ভুল ভাবছি। আপনার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি……
— কিরে আবিদ এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন। তিন্নি ওকে আসতে দাও।
কথাটা বলতে বলতে এগিয়ে এলো আফিফ। তিন্নি অবাক হয়ে আফিফ কে বলল,
— আপনি চিনেন ওনাকে?
— কি আশ্চর্য আমার ছোট ভাইকে আমি চিনবো না।
— আপনার ছোট ভাই।
— হরতাল। তুমি চেনো নাকি। আবিদ তোরা একে অপরকে আগে থেকেই চিনিস।
এবার মুখ খুলল আবিদ। বলল,
— হ্যা চিনি তো খুব ভালো করে।
— ওয়াট আ কোয়েন্সিডেন্ট। ভালোই হলো আমরা তো এখন একটা ফ্যামিলি। পূর্ব পরিচিত হলে সম্পর্ক আরো সহজ হবে। তিন্নি ওকে নিয়ে ভেতরে এসো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
বলেই সেখান থেকে চলে গেল আফিফ। তিন্নি মুখে একটা ফেক স্মাইল ঝুলিয়ে আবিদ কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। আবিদ তিন্নির অবস্থা দেখে মিটি মিটি হাসছে। তখনই তিথি কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকলেন শায়লা। তিন্নি তিথিকে শিরিনের মুখোমুখি বসিয়ে বলল,
— আন্টি এইযে তিথি আপা। আর ঐ যে আম্মা।
— তুমি তো তিন্নি তাইনা?
— হুম।
এরপর তিথির সাথে কিছু কথা বললেন শিরিন। প্রাথমিক আলাপ আলোচনা শেষে সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলেন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারো বিয়ের আলাপ করতে সবাই ড্রয়িংরুমে জড়ো হলো। ছোটদের মধ্যে তিন্নি বাদে অন্য কাউকে না দেখতে পেয়ে শিরিন তিন্নি কে বললেন,
— বাকিরা কোথায় ওদের তো দেখছি না?
— ওরা ছাদে গেছে।
— ভালোই হয়েছে বিয়ের আলোচনায় ওরা না থাকলেই ভালো। তোমার আম্মা কোথায়?
— রান্না ঘরে। জরি বু কে সব গোছাতে সাহায্য করছে। দাঁড়ান আমি ডেকে নিয়ে আসি।
— না না উনি ওনার মতো আসুক। ততক্ষণ তোমার সাথে একটু কথা বলি। আমার পাশে এসে বসো।
তিন্নি গিয়ে শিরিনের পাশে বসলো। শিরিন বললেন,
— তোমার চশমা টা একটু খুলবে। মনে হচ্ছে মেয়ের সাথে না মায়ের সাথে কথা বলছি।
কথাটা বলেই একটু হাসলেন শিরিন। তিন্নি চশমাটা খুলে সামনের টেবিলে রেখে দিল। শিরিন তিন্নিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। মাশাআল্লাহ দুই বোনই দেখতে অসম্ভব সুন্দর। কিন্তু তিন্নি সেটাকে সবসময় লুকিয়ে রাখতে চায়। শিরিন কে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি শিরিন কে ডাকলো,
— আন্টি।
শিরিন তিন্নির হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বললেন,
— আফিফের মুখে যখন তোমার ব্যাপারে শুনলাম তখন আমার অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আফিফের বাবা যখন মারা গেলেন তখন ওর বয়স দশ বছর। আর আবিদ আরো ছোট পাঁচ বছর হবে। দুই ছেলেকে নিয়ে আমি তখন ভাসছি বলা যেতে পারে। তারউপর বিজনেস সামলানোর মতোও কেউ নেই। সুযোগ পেয়ে সবাই নিজেদের আসল রুপ দেখানো শুরু করলো। ছেলেরা হওয়ার আগে ওর বাবা জোর করে আমাকে অফিসের বিভিন্ন কাজে ইনভলব করতো। কিন্তু সে যাওয়ার পর অফিসে বসার একবার ও আমার মাথায় আসেনি। আফিফ সেই বয়সেও ভীষণ বুদ্ধিমান ছিল। আমাকে এসে বলল, ” আচ্ছা মা তাড়াতাড়ি বড় হতে হলে কি করতে হয়। সবাই বলে আমি যদি বড় হতাম তাহলে আজ এত সমস্যা থাকতো না।” তখন আমার মনে হলো আমার কষ্ট হয় হোক আমার ছেলেদের অধিকার পাওয়ার জন্য ওদের শৈশব নষ্ট করা অসম্ভব। তখন নিজেকে শক্ত করলাম। বিশস্ত কিছু মানুষের সাহায্যে ঐ পরিস্থিতি তে ঘুরে দাঁড়ালাম। এই এত বছরে বুঝেছি মেয়েদের হাতে আসলে অনেক ক্ষমতা। তবে যতদিন তারা নিজেরা না বুঝতে পারবে ততদিন এ ক্ষমতা কোন কাজেই লাগবে না। এ পৃথিবী আমাদের জন্য সুরক্ষিত নয় সত্য। কিন্তু আমরা চাইলে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা রাখি। আজ এতদিন পর নিজের মতো কাউকে দেখে সত্যিই ভালো লাগলো তিন্নি। অবশ্য তোমার পরিস্থিতি আমার থেকেও বেশি কঠিন ছিল।
— কঠিন সময় কেটে গেছে আন্টি।
— হ্যা। তোমাকে অভিনন্দন।
— আপনাকেও। আমার জানা ছিল না আপনি এতটা কষ্ট করেছেন একসময়। আমার মনের জোর এখন দিগুন হয়ে গেছে। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শিরিন একটু হাসলেন শুধু। শায়লা হাতের কাজ শেষ করে ড্রয়িং রুমে এলেন। মাকে নিজের পাশে বসিয়ে তিন্নি বলল,
— আম্মা এসে পরেছে আন্টি। তাহলে বিয়ের বিষয়ে কথা বলা যাক।
— আমি চাইছি আজকে এনগেজমেন্টটা করতে। আপনার কোনো সমস্যা নেই তো বেয়াইন।
— তিন্নির সমস্যা না থাকলে আমার কোনো সমস্যা নেই।
শিরিন মুচকি হেসে তিন্নির দিকে তাকালেন। তিন্নি বলল,
— আমাদের কোনো সমস্যা নেই আন্টি।
— আচ্ছা তাহলে বিয়ের ডেট এবং বাকি এ্যারেন্জমেন্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক।
— আপনারা কোন ডেট ঠিক করেছেন।
— তিথির বিষয়ে বিবেচনা করে সামনে মাসের একুশ তারিখ বোধহয় ঠিক হবে। একুশ থেকে ত্রিশ তারিখের মধ্যেই বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান হয়ে যাবে। কি বলো?
— আমাদের কোনো আপত্তি নেই আন্টি। আমিও মনে মনে ঐ ডেট গুলোই ভাবছিলাম। একটা বিয়ের প্রস্তুতি নিতে তো সময় প্রয়োজন। এই সময়ের মধ্যে সবকিছু হয়ে যাওয়ার কথা।
— এখন সমস্যা হচ্ছে ভেন্যু নিয়ে।
— আমার এখানে ছোট্ট একটি রিকুয়েস্ট আছে আন্টি।
— হুম বলো।
— আসলে আমাদের বেশির ভাগ আত্মীয় স্বজন গ্রামে থাকে। আর আপার বিয়ে নিয়ে আব্বার অন্যরকম চিন্তা ছিল। আসলে গ্রামের সবাই আমাদের ভীষণ ভালোবাসে। তাদের ছেড়ে আপার বিয়ে দিলে তারা খুব কষ্ট পাবে। আর সবাই কে ঢাকায় আনাও সম্ভব নয়। আমি চাইছি বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান গুলো যদি আমাদের গ্রামে হতো। আপনারা বৌভাত ঢাকায় তো করবেন ই। আর বরযাত্রী যতজনই হোক তাদের থাকার ব্যাবস্থা আমি করতে পারবো। কোনো অসুবিধা হবে না।
— তুমি যা বলছো ঠিক তবে আমার একটু বাকিদের সাথে আলোচনা করতে হবে। ওর ফুপু আজ আসতে পারে নি। আমার ভাই বোনেরা ও বাংলাদেশে থাকে না। ওদের সাথে কথা বলে আমি তোমাকে জানাই।
— অবশ্যই আন্টি।
— ওদের ডেকে নিয়ে আসো। আংটি বদল করে ফেলি।
— হুম।
তিন্নি সানভি কে ওদের ডেকে আনতে পাঠালো।
— তোর কি মনে হয় রাইসা রওনক ভাই আর তিন্নির মধ্যে কিছু চলছে?
ছাদে এসে তিথিকে আবিদ আর তিন্নির ব্যাপারে সবটা জানিয়েছে আফিফ। এতক্ষণ সেগুলো নিয়েই আলোচনা করছিল ওরা। হুট করেই তিথির কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। তিন্নি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। সেসময় রওনক বেশ ঘন ঘন ওদের বাড়িতে যেত। একদিন ছাদে তিন্নি রওনক কে প্রপোজ করেছিল। যদিও ব্যাপারটা অতটা সিরিয়াস ছিলো না। তিন্নি এসে বলল,
— রওনক ভাই আমার সাথে প্রেম করবে?
জবাবে রওনক হেসে বলল,
— এই প্রেম মানে বুঝিস তুই?
— বুঝি তো। প্রথমে প্রেম করতে হয়। তারপর বিয়ে। আমার তোমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই।
— আমার তো আছে। আগে বড় হ। তারপর এই কথাগুলো আবার এসে আমাকে বলবি তারপর চিন্তা করে দেখবো। কিন্তু এখন তুই আমাকে বল এগুলো তোর মাথায় কে ঢোকালো?
— শান্তা।
— স্কুলে তোর শত্রু না ও।
— হুম। ও প্রেম করে। আমার সাথে যখন ওর ঝগড়া হলো তখন আমি ওকে এটা নিয়ে কথা শোনালে ও আমাকে উল্টো বলল আমার নাকি প্রেম করার কোনো যোগ্যতা নেই। আমার একটা ইগো আছে না। তুমি প্লিজ রাজি হয়ে যাও।
বিষয় টা সেখানেই শেষ হয়ে যেত কিন্তু রওনক রাজি না হওয়ায় তিন্নি ভীষণ কান্নাকাটি করলো। রওনক ভাই ও এরপর থেকে আসা যাওয়া কমিয়ে দিলেন। তবে এদিন থেকে তিন্নির মধ্যে একটা পরিবর্তন এলো এবং এরপর রওনক ভাইয়ের সাথে আগের মতো সহজ সম্পর্ক থাকলো। তবে তিন্নির বাবা তৌহিদ সাহেব মারা যাওয়ার পর থেকেই রওনকের সাথে ওদের দুরত্ব বাড়লো। যে তিন্নি সবকিছু তে রওনক কে ডাকে সেই তিন্নিও রওনক কে আর কিছুতে ডাকে না। এসব নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে তিথি রওনকের বোন রাইসা কে উপরের প্রশ্নটি করল। তিন্নি আর আবিদের বিষয়ে কিছু ভাবার আগে তিন্নি আর রওনক এর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তিথির প্রশ্নে রাইসা বলল,
— আম্মা একবার ভাইয়ার সাথে কথা বলছিল এই বিষয়ে।
— কি বলল রওনক ভাই?
— ঐদিন আম্মা ভাইয়াকে বলল, ” তুই এখনো তৌহিদ এর মেয়েরে ভালোবাসোস?
— হঠাৎ এই কথা কেন?
— সৈকত এর বিয়া হইছে এক বাচ্চার বাপ ও হইয়া গেছে। তোর বিয়া করতে হবে না?
— আম্মা আমাকে এটা নিয়ে জোর করো না।
— কতদিন আর এমনে থাকবি। ওরে পছন্দ হইলে ক আমি শায়লার সাথে কথা বলি।
— না মা এটা করো না।
— কেন?
— ও আমাকে ভালোবাসে না মা।
— তুই জানিস?
— হ্যা মা। জানি আর মেনেও নিয়েছি। আর আমি তো বলছি না যে বিয়ে করবো না শুধু একটু সময় চাইছি।”
ব্যাস এতটুকু কথা হয়েছিল। তিন্নি আপু আমার ভাইকে অনেক আগেই রিজেক্ট করে দিয়েছে।
— আমার কি মনে হয় জানিস। এই কারণে রওনক ভাই আর আমাদের বাসায় আসে না। শোন ভাই আবিদ তোমার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা। আমার মনে হয় তোমার জন্য তিন্নির মনে একটু হলেও একটা সফ্ট কর্ণার তৈরি হয়েছে। কারণ এমন পরিস্থিতিতি সামলাতে ওর একদিনের বেশি লাগে না। সেখানে তুমি এতদিন ওর পেছনে ঘোরার সু্যোগ পাত্রে।
তিথির কথায় আবিদ বলল,
— এতে কি প্রমাণ হয়?
— শোন আমি আমার বোন কে ভালো মতোই চিনি। ও যতক্ষন কাউকে নিজে থেকে সুযোগ না দেয় কারো ক্ষমতা নেই ওর সুযোগ নেবে।
— মানে তুমি বলছো আমার একটা চান্স আছে।
— মনে হয়। তবে সিওর বলতে পারছি না।
— আপা তোদের নিচে ডাকছে।
সানভির ডাকে সেখানেই আলোচনা থামাতে বাধ্য হলো ওরা। আপাতত নিচে যেতে হবে ওদের। এই আলোচনা পরেও করা যাবে।
চলবে…………..