#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ৩৫

0
433

#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ৩৬

#নাফিসা নীলয়া!

তিশাকে ওর বাবা তিনদিন যাবত ঘরে আটকে রেখেছেন। কারন তিশার পাগলামি দিনদিন বেড়ে যাচ্ছিলো। প্রথম কয়দিন সে একটু শান্ত হয়ে ঘরে একা থাকলেও পরবর্তীতে খুব ডেস্পারেট হয়ে উঠলো। তিশার বাবা-মা তিশার অবস্থা দেখে খুব দুঃখ পেলেন। তাদের মেয়ের এরকম অবস্থা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তিশার বাবা ওকে বোঝাতে গেলেও তিশা তার বাবার সাথে প্রচুর খারাপ ব্যবহার করেছে। তাই তিনি বাধ্য হয়ে তিশাকে ঘরে আটকে রেখেছেন।

আসমা দরজা খুলে মেয়ের ঘরে আসলেন। তিশা ফ্লোরে শুয়ে ছিলো। আসমা ধীরে ধীরে তিশার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিশাকে ডাকলেন।

-তিশা, তিশা ওঠ মা। তিনদিন যাবত কিছুই খাচ্ছিস না। এভাবে তো চলতে পারে না। ওঠ।

তিশা আসমার ডাক শুনে ধীরে ধীরে চোখ খুললো। আসমা মেয়েকে ধরে বসালেন। তিশা প্রথমেই বললো।

-বাবা কোথায় মা?

-তোর বাবা অফিসে গেছেন। কেন?

তিশা ডুকরে কেঁদে বললো।

-আমাকে কেন আটকে রাখলো মা? কেন?

আসমা এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না। তিশা হঠাত ব্যকুল কন্ঠে বলে উঠলো।

-আমি আর পাগলামি করবো না। তবুও দয়া করে আমাকে আটকে রেখো না। প্লিজ মা!

আসমা মেয়ের ব্যকুল কন্ঠস্বর শুনে নিজেই কেঁদে দিলেন। বললেন।

-সত্যিই? আচ্ছা আর আটকে রাখবো না। তোর বাবাকেও আমিই বোঝাবো। তুই এখন একটু কিছু খেয়ে নে। প্লিজ এভাবে না খেয়ে থাকলে তুই মরে যাবি। মা হয়ে আমি তোর কষ্ট দেখতে পারছি না। আমারও কষ্ট হচ্ছে আমাকে কষ্ট দিবি তুই?

তিশা আসমার কান্নামাখা চেহারার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর হঠাত স্বাভাবিক কন্ঠে বললো।

-খাবার নিয়ে এসো যাও। আমি খাবো।

আসমা মেয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে গেলেন। মেয়েকে জড়িয়ে আদর করে উঠে গেলেন খাবার আনতে।

তিশা ফ্লোরে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তাকে যে আটকে রাখা যাবে না। কোনোমতেই না। বাবা-মাও আটকাতে পারবে না। এসবই মাথায় ঘুরছিলো তার। হঠাত তিশার বিছানার পাশের সেন্টার টেবিলে আসমার ফোন নজরে এলো। আসমা তিশাকে ডাকতে এসে নিজের ফোন টেবিলে রেখেছিলেন। রেখেই তিনি খাবার আনতে গেছেন। তিন দিন আগে সে একটু বেশিই ডেস্পারেট হয়েছিলো বলে তার বাবা তার ফোনও নিয়ে গেছেন। নিজের ফোনটাও তার কাছে ছিলো না। আসমার ফোনটা দেখে তিশা ভাবলো সে তার ফ্রেন্ডদের সাথে যোগাযোগ করবে। আলাদা জায়গায় শিফ্ট করবে। এখানে থাকলে তার বাবা আবার তাকে বন্দি করে রাখবে। সেজন্য তিশা আসমার ফোন হাতে নিলো। তারপর ফোন আনলক করে নিজের একাউন্টে লগইন করলো।

তারপরই সে প্রচন্ড ধাক্কা খেলো। মনে হচ্ছে তার চারদিক ঘুরছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো। তার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। বুকের ভেতর অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে। তিশা ওভাবেই বসে রইলো।

আসমা খাবার নিয়ে এসে দেখলেন তিশা চুপচাপ এক ধ্যানে বসে আছে। তিশার হাতে তার মোবাইল। আসমা ভয় পেয়ে গেলেন। পাশের টেবিলে খাবার রেখে দ্রুত তিশার কাছে গেলেন। ভয়ে ভয়ে তিশার মাথায় হাত দিলেন। তিশা স্থীর চোখে তার দিকে তাকালো। তিশার তাকানোটাও স্বাভাবিক ছিলো না। আসমা ধীর কন্ঠে বললেন।

-তুই ঠিক আছিস?

তিশা এই প্রশ্নের উওর না দিয়ে হাতের ফোনটা উচু করে আসমার সামনে তুলে ধরে বললো।

-কবে হলো?

তিশা আসমার ফোনে শিহাব আর নীরার বিয়ের ছবি দেখেছে। তিতলি আপলোড করেছে। সবার একটা গ্রুপ ছবি। তিশা নিজের একাউন্টে ঢুকে সেটাই দেখেছে। আসমা এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন। এতো বড় ভুল তিনি কি করে করলেন! তবে সত্যিটা তো একদিন না একদিন তিশা জানতোই। আসমা তিশার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নীরব রইলো। তিশা অত্যন্ত শান্ত কন্ঠে বললো।

-ওদের বিয়ে না আরো কিছুদিন পরে হবার কথা ছিলো। আমরা ওই বাড়িতে থাকাকালীনই তো কথা হয়েছিলো যে বিয়েটা আরো কিছুদিন পরে হবে।

আসমা এবারও চুপ রইলেন। তবে তিশা এবার আর শান্ত থাকতে পারলো না চেঁচিয়ে বললো।

-এজন্যই বাবা আমাকে তিনদিন ঘরে আটকে রেখেছে? এজন্যই? খারাপ ব্যবহারটা ওটা তো শুধু একটা বাহানা ছিলো তাই না?আন্সার মি মা! তোমরা সবাই জানতে তাই না? সবাই জানতে। এজন্যই এতোকিছু আমার সাথে এতোকিছু।

কথাগুলো বলতে বলতেই তিশা ঘরের সব জিনিসপএ ভাঙচুড় করা শুরু করলো। আসমা ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি মেয়েকে থামানোর চেষ্টা করলেন। তবে তিশা থামলো না। বদ্ধ উন্মাদের মতো সব জিনিস ভাঙলো। তারপর চিৎকার করে বললো।

-আমি হার এতো সহজে মেনে নিতে পারি না। আমার বাবা-মা আমাকে হেরে যেতে দিলো। আমি পারছি না সহ্য করতে পারছি না। কিভাবে সম্ভব! কিভাবে!

আসমা মেয়ের কাছে এসে বললেন।

-যেটা অন্যায় সেটা অন্যায়ই। শিহাবের দিক থেকে পজিটিভ কিছু থাকলে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করতাম। তুই নিজেও জানিস তোর বাবা কিরকম। শিহাব যদি সম্মতি দিতো তবে তিনি যথাসম্ভব চেষ্টা করতেন। কিন্তু শিহাব তোকে চায় না। এই সহজ কথাটা তুই কেন বুঝতে পারছিস না! তোর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে শিহাব তোর বাবার কাছে কমপ্লেইন করেছে। একবারও ভেবেছিস তুই তোর বাবা আজীবন সম্মানের সাথে বেঁচেছে। আর আজ তোর জন্য তাকে কথা শুনতে হয়েছে। নিজেকে কি মনে করিস তুই? তোর জন্য আমরা আর কতো কষ্ট পাবো?

-আর আমার কষ্টটা? সেটা তোমরা ভেবেছো? আমার কি হবে ভেবেছো? আমি কি করে থাকবো? কি করে বাঁচবো! কেউ ভাবেনি আমিও কারো কথা ভাববো না।

আসমা মেয়ের কথা শুনে এবার আর শান্ত থাকতে পারলেন না। সমস্ত শক্তি দিয়ে তিশার গালে একটা চড় দিলেন। তিশা ছিটকে বিছানায় পরে গেল। আসমা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

তিশা রাগে,কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে বললো।

-তোমাদের আমি সুখে সংসার করতে দিবো না। আমার ভালোবাসা দেখেছে সবাই। কিন্তু জেদ দেখেনি। এতো অপমান এতো কষ্ট পেয়েও কি করে তোমাদের সুখে সংসার করতে দেই বলো!

আসমা তিশার ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের ঘরে গেলেন। একা একা কাঁদলেন কতোক্ষন তারপর তিনি জায়মাকে ফোন করলেন।

রিশাদ দেশে আসবে বলে জায়মার দিনগুলো ব্যস্ততায় কাটে। নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে তিনি শত কষ্ট ভোলার চেষ্টা করেন। শিহাবের বিয়ের খবর তিনিও পেয়েছেন। রেজা সাহেবকে ফোনও করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন সেদিনই যে তার ছেলে-মেয়েদের প্রতি তার আর কোনো অধিকার নেই। এই ব্যপারটা তিনি মানতে পারে না। তার ভেতরটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। সোহেল জায়মার এমন অবস্থা দেখেও কিছু বলেননি। কারন তার কিছুই বলার নেই। জায়মার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।

জায়মা এই মুহূর্তে কাজের মাধ্যমেই নিজেকে ঠিক রাখছেন। এখনো তাই ই করছিলেন। তখনই আসমার ফোন আসলো৷ তিনি ফোন রিসিভ করলেন। জায়মা কথা বলার আগেই আসমা কথা বলা শুরু করলেন।

-আমার মেয়েটার জীবন শেষ করে শান্তি পেয়েছিস খুব তাই না? হ্যা! বল শান্তি পেয়েছিস খুব? নিজে তো অতো ভালো স্বামীটাকে নিষ্পাপ বাচ্চাদের রেখে পুরনো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছিলি৷ নীতি নৈতিকতা সব ভুলে গেছিলি৷ তারপরেও আবার আগের ঘরের সন্তানের জন্য অধিকার বোধ জন্মালো কেন তোর? তুই জানতি না শিহাব কখনো তোর কথা শুনবে না? বল জানতি না!তবুও কেন আমার মেয়েকে স্বপ্ন দেখালি কেন?

আসমার গড়গড় করে করা অভিযোগের কথা শুনে জায়মা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। বহু কষ্টে বললেন।

-আপা তিশা নিজেই শিহাবকে আগে থেকে ভালোবাসতো।

এই কথাতে আসমা আরো ফুঁসে উঠলেন বললেন।

-ভালোবাসতো, আর শিহাব রিফিউজ করার পর ও বেড়িয়েও আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু তুই,শুধুমাএ তুই ওকে উষ্কেছিস ওকে স্বপ্ন দেখিয়েছিস। কেন তুই কি জানতি না শিহাব কেমন? শিহাব তোকে ঘৃণা করে। ও তোর কথা শুনবে না। জানতি সব জানতি তবুও তুই এরকম করেছিস। নিজের হাতে আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট করেছিস৷ এখন ও পাগলামি আচরণ করছে অপমান হার মেনে নিতে পারছে না। একটা কথা কি জানিস? তুই না কখনো ভালো মেয়ে হতে পেরেছিস,না ভালো বোন হতে পেরেছিস, না ভালো স্ত্রী হতে পেরেছিস, আর না ভালো মা হতে পেরেছিস। তুই যার জীবনেই গেছিস তার জীবনই ধ্বংস করে ছেড়েছিস। আমার বাবা-মাকে শান্তি দিসনি আমাদেরও না, ভাইজানের জীবন নষ্ট করেছিস৷ সন্তানদের জীবন নাশ করেছিস। এতোকিছু করেও তোর শান্তি হয়নি। শেষমেষ আমার মেয়ের জীবনটাও নষ্ট করলি৷ অলক্ষী অপয়া। যার জীবনে যাস তার জীবনই নষ্ট করে দিস। এজন্যই তোর পরের সংসারে নিজের কোনো সন্তান হয়নি। এজন্যই তোর নিজের সন্তানেরা তোকে ঘৃণা করে। ঠিকই করে। আমার লজ্জ্বা লাগে নিজেকে তোর বোন হিসেবে পরিচয় দিতে। লজ্জ্বা লাগে। আজ থেকে আমিও তোকে ঘৃণা করি। আমার আর আমার মেয়ের সাথে আর কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না তুই। কখনো না!

একদমে এতো কথা বলে আসমা ফোন রেখে দিলেন। জায়মা দাড়িয়ে ছিলেন। নিজের বোনের কাছ থেকে একসাথে এতোগুলো নিকৃষ্ট সত্য শুনে ধপ করে মাটিতে বসে পরলেন। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরলো জায়মার। সত্যিই কি সবার জীবন নষ্ট করেছেন তিনি! সবাই কি তাকে খুব বেশি ঘৃণা করে। নিজের সন্তানেরা ঘৃণা করে,বাবা মাকেও কি তিনি খুব কষ্ট দিয়েছেন? রেজার জীবনটাও তিনি নষ্ট করেছেন। আর তিশা ওকেও তো তিনি নিজের মেয়ের মতো দেখতেন। ওকেও কি কষ্ট দিয়েছেন? সবার জীবন নষ্ট করার দায় কি তারই?আসমা যা যা বললেন তার সব কথাই সত্যি। সবাই তার জন্য সাফার করেছে এখনো করছে। জীবনে সুখের সন্ধানে তিনি সব ছেড়ে এসেছিলেন। কিন্তু কে জানতো তার একটুখানি সুখের নেশা তার চারপাশের সবার জীবন সহ নিজের জীবনই ধ্বংস করে দিবে। আচ্ছা কোনোভাবে কি সেই বহুবছর আগে ফেরা যাবে। যেখানে গিয়ে নিজের ভুল শুধরে নেওয়া যায়! নাহ্ যাবে না। কোনোভাবেই না। জীবনে কি রইলো তার। শুধুমাএ আপনজনদের ঘৃণা। আজ নিজের বোনও ঘৃণা করে তাকে।

জায়মার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। তবে তিনি চিৎকার করতে পারলেন না। নীরবে চোখের পানি পরতে থাকলো তার। সেই চোখের পানির সাথে রয়েছে আত্মগ্লানি,অনুতাপ আর অসহনীয় কষ্ট।

শিহাবদের বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাড়িতে পৌছানোর পর। জহুরা,তিতলি সহ সবাই মিলে নানান আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। রেজা সাহেবের বহুদিন পর আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। নীরাকে তিনি বাবা ডাকতে বললে নীরা মিষ্টি করে হেসে বললো।

-আজ থেকে আমার দুইজন বাবা,একজনকে আব্বা ডাকবো আর তোমাকে বাবা ডাকবো। তোমাকে তুমি করে বলবো সমস্যা নেই তো? আমি আবার আপনি আজ্ঞা করতে পারি না।

নীরার কথা শুনে রেজা সাহেব জোরেসোরে হাসতে হাসতে বললেন।

-অবশ্যই তবে আমিও তোকে তুমি বলতে পারবো না। তুই করেই বলবো। কিছু মনে করতে পারবি না তখন।

নীরাও রেজা সাহেবের কথায় হেসে সম্মতি দিলো।
শিহাব উশখুঁশ করছে কখন সে নীরার সাথে একান্তে সময় কাটাতে পারবে সে সেই চিন্তায় আছে। আর তার বউকে দেখো। সবার সাথে আড্ডা দেওয়া শুরু করেছে। শিহাব না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে।

তিতলি আর রেহান দুইজন নীরার দুইপাশে বসে আছে। তিতলি নীরাকে ধরে বললো।

-ভাবি শুধু আমার। এখন থেকে ভাবি আমাকে খাইয়ে দিবে আমার চুল বেঁধে দিবে। যেভাবে মিলা আপুকে দিতে ঠিক সেভাবে। কি ভাবি দিবে না?

নীরা তিতলির কথা শুনে মিষ্টি করে হেসে তিতলির গাল টেনে দিলো। বললো।

-অবশ্যই দিবো। তুমি আর রেহান তো আমারই ভাই-বোন। আমি আগে থেকেই তোমাদের সেভাবেই দেখে আসছি। আর তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে খাইয়ে দিতে কার না ভালো লাগবে বলো!

এই মুহূর্তে রেহান কথা বলে উঠলো।

-ভাবি তুমি কিন্তু আমারও ভাবি। সুতরাং শুধু তিতলিকে আদর করলে চলবে না। আমাকেও করতে হবে।

রেহানের কথা শুনে নীরা হাসতে হাসতে বললো।

-আচ্ছা আমি সবাইকেই সমানভাবে ভালোবাসি। এটা নিয়ে দুজনের ঝগড়া করলে একদম চলবে না। আমি জানি তোমরা দুজনে খুব ঝগড়া করো। এখন আমি এসে গেছি সুতরাং আর ঝগড়া করা যাবে না।

তিতলি কিছু বলতে চাইছিলো, তবে নীরার কথা শুনে আর কিছু বললো না। রেহান সেটা দেখে ফিঁক করে হেসে বললো।

-দেখলে ও এখনই ঝগড়া করতে চাইছিলো। আহ্হা এখন আর আমার পেছনে লাগতে পারবে না।

তিতলি এই কথা শুনে রেগে গেল।

-কি? আমি সবসময় তোর পেছনে লাগি? দেখেছো ভাবি?

নীরা এদের কান্ড দেখে হেসে ফেললো। বললো।

-আমার কথা শুনতে হবে। এমন ঝগড়া করা যাবে না!

নীরার কথা শুনে দুজনেই সুবোধের মতো মাথা নাড়লো।

তিতলি হঠাত নীরাকে বলে উঠলো।

-তোমাকে যদি ভাবিমা বলে ডাকি তাহলে কি কোনো আপওি আছে? আসলে কখনো মা ডাকতে পারিনি তো এজন্য।

তিতলি কথাটা বলে মুখ নিচু করে ফেললো। রেজা সাহেব মেয়ের কথা শুনে কষ্ট পেলেন। নীরার উওরের অপেক্ষায় নীরার দিকে তাকালেন। রেহানও এটাই চাইছিলো সেও উৎসুক হয়ে তাকিয়েছে নীরার দিকে।
শিহাব এতোখন উশখুশ করছিলো তবে তিতলির কথাটা শুনে সে স্তব্ধ হয়ে গেলো পলক না ফেলে বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মায়ের আদরের জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে তার ভাই-বোন। সে শুধু এটাই ভাবলো। নীরা তিতলির কথা শুনে তিতলিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললো।

-বাহ্ আমি খুবই খুশি হবো ভাবিমা ডাকলে। তোমার যেটা ইচ্ছে সেটা ডাকতে পারো। এতো মিষ্টি মেয়ের মুখে ভাবিমা ডাক শুনতে কার না ভালো লাগবে।

নীরার কথা শুনে সকলেই হেসে ফেললো। তিতলি খুশি হয়ে আরো শক্ত করে নীরাকে জড়িয়ে ধরলো। রেহানও বললো।

-আমিও ডাকবো ভাবিমা। বাহ্ বলতেও ভালো লাগছে।

নীরা আবারও মিষ্টি করে হাসলো৷

জহুরা এদের কান্ড দেখে বললেন।

-এবার তো ওকে ছাড় এতোটা পথ এসেছে। আবার এখানের আনুষ্ঠানিকতাতেও কতো সময় লেগেছে। নীরা নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। ওকে বিশ্রাম নিতে দে।

জহুরার কথা শুনে শিহাব খুশি হলো। সে এটাই চাইছিলো। এতোখন সে চুপচাপ বসে ছিলো। আর কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিলো না। তার যে কোনো অস্তিত্ব রয়েছে এখানে সেটা বোধ হয় এখানের কারো খেয়ালই নেই। এবার জহুরার কথা শুনে সে মনে মনে জহুরাকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ দিলো।

তিতলি আর রেহানের আরো গল্প করতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু এটাও ঠিক তাদের ভাবি নিশ্চয়ই অনেক টায়ার্ড হয়ে গেছে। রেজা সাহেবও তাড়া দিলেন।
তাই বাধ্য হয়ে ওদের নীরাকে ছাড়তে হলো। একসাথে রাতে খাওয়ার পর সবাই যে যার ঘরে গেল।

তিতলি আর জহুরা নীরাকে আগে ঘরে দিয়ে গেল। নীরা চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছিলো সবকিছুই খুব সুন্দর বিয়ে উপলক্ষে বিশেষভাবে সাজানো হয়নি। তবে নীরা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাত থমকে গেল। তার পছন্দের সব ফুল আছে ঘরে। একপাশে শিউলি,একপাশে বেলি,একপাশে পদ্ম। তিনটাই তার পছন্দের। শিউলি তার পছন্দ সেটা শিহাব জানতো তবে এই দুটো যে পছন্দ এটা জানতো না। তাহলে কিভাবে জানলো। তারপর নীরা ভাবলো হয়তো রুমার থেকে জেনেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই সে ঘরটাকে আরো পর্যবেক্ষন করলো। বড় একটা ঘর। মাঝ বরাবর বিশাল বিছানা,সীমিত রুচিশীল দামি আসবাব। নীরা দক্ষিন দিকে তাকালো। দেখতে পেলো বিশাল বারান্দা। নীরা মধ্যবিও পরিবারের মেয়ে এতো বড় বাড়ি,এতো বড় ঘরের আশা তার কখনো ছিলো না। শুধু সুখের আশা ছিলো। দেখা যাক সুখ তার জীবনে কতো সময় থাকে।
এসব ভাবতে ভাবতেই সে আরেকটা জিনিস ভাবলো যে এখন থেকে এই বড় ঘরটা তার ও। শিহাবের সাথে তার সব শেয়ার করতে হবে। এভরিথিং! সে শুধু দায়িত্বের কথাই ভেবে গেছে। এসব ভাবেইনি। নীরা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে এসবই ভাবছিলো। পুরো ঘর দেখতে দেখতে সময়ও লাগলো একটু। কিন্তু শিহাব এখনো আসছে না কেন! তার আম্মা বলেছে শিহাবের সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিতে। এখন নফল নামাজ পড়তে হবে।

নীরা এসবই ভাবছিলো। তখনই খট করে দরজা খোলার শব্দ হলো। নীরা পেছন ফিরে দেখলো শিহাব এসেছে। নীরা চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।
শিহাব ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেখলো নীরা দাড়িয়ে আছে। শিহাব দরজার সামনে দাড়িয়েই নীরাকে দেখতে থাকলো। এই মেয়েটাকে দেখার স্বাধ বোধ হয় কখনোই ফুরাবে না।

শিহাবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীরার অস্বস্তি হলো। সে আওয়াজ করে শিহাবকে ডাকলো। শিহাবের ধ্যান ভাঙলো। সে এগিয়ে গেল নীরার কাছে।
শিহাব এসে দাড়ালে নীরা বললো।

-একসাথে দুইজনকে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে। পড়বে না?

শিহাব নীরার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে বললো।

-অবশ্যই পড়বো।

নীরা হেসে বললো।

-তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথে পড়বো।

শিহাবও হেসে বললো।

-আগে তুমি ফ্রেশ হও। তারপর আমি যাবো।

নীরা আর কিছু না বলে আস্তে আস্তে হেটে লাগেজ থেকে জামাকাপড় বের করলো। শিহাব সোফায় বসে পরলো।

নীরা জামাকাপড় বের করে খেয়াল করলো। তার গায়ে এখনো গয়নাগাটি রয়ে গেছে। আবার ওড়ণা আর চুল ও খোলা হয়নি। এগুলো খুলতেও সময় লাগবে। সেজন্য সে শিহাবকে বললো।

-এক কাজ করো তুমি আগে যাও। আমার গয়নাগাটি খুলতে একটু সময় লাগবে।

শিহাব হেসেই বললো।

-আচ্ছা যেরকমটা তুমি বলবে।

কথা শেষ করে শিহাব নিজেই ওয়াসরুমে চলে গেল। নীরা মাথার ওড়ণা খুলে গয়না খুলতে শুরু করলো।

শিহাব ওয়াসরুমে গিয়ে খেয়াল করলো সে নিজের জামাকাপড় না নিয়েই এসে পরেছে। সে নিজের মাথায় গাট্টা মেরে নিজেকেই বকলো। নীরাকে দেখতে দেখতে সে সব ভুলে গেছে। সে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে ঘরে আসলো। নীরা তখন মাথার শিউলিফুলের মালা খুলছিলো।

শিহাব বেড়িয়ে এসে দেখলো নীরা তার দেওয়া মালা খোপা থেকে খুলছে। তারমানে তার দেওয়া মালা নীরা খোপায় জড়িয়েছিলো৷ ভেবেই তার খুব আনন্দ হলো। সে এসব ভাবতে ভাবতেই আওয়াজ করে উঠলো। আওয়াজ শুনে নীরা পাশ ফিরে দেখলো শিহাব দাড়িয়ে আছে। নীরা চুল খুলতে খুলতে বললো।

-তুমি যাওনি এখনো? যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।

শিহাব কিছু না বলেই নীরার কাছে আসলো। নীরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল খুলছিলো।শিহাব এগিয়ে এসে বললো।

-থ্যাংক ইউ।

নীরা ভ্রু কুঁচকে বললো।

-কেন?

শিহাব মালাটার দিকে ইশারা করে বললো।

-এটার জন্য।

নীরা হেসে বললো।

-এবার যাও তো।

শিহাব যাওয়ার আগে বললো।

-তোমার চুল ও খুব সুন্দর। সবকিছুই সুন্দর।

বলেই শিহাব ওয়াসরুমে চলে গেল। নীরা একা একাই হেসে ফেললো। শিহাব বেড়িয়ে আসার পর নীরা ফ্রেস হতে গেল। শাড়ি গয়না খুলে জামরঙা সালোয়ার কামিজ পরলো। এতোখন পরে নীরার একটু শান্তি লাগলো। নীরা বেড়িয়ে এসে দেখলো শিহাব জায়নামাজ বিছিয়ে অপেক্ষা করছে। নীরা বেড়িয়ে আসতেই নীরাকে দেখে সুন্দর করে হাসি দিয়ে ইশারা করলো। এতো সুন্দর হাসি দেখে নীরার মন ভরে গেল। নীরা ওড়না দিয়ে সুন্দরভাবে হিজাব করে এসে শিহাবের পেছনে দাড়ালো৷ দুইজন একসাথে নামাজ আদায় করলো। দুজনেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো নতুন জীবনের জন্য।

নামাজ আদায়ের পর নীরা জায়নামাজ গোছাতে গেলে শিহাব নীরাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেই আবার জায়নামাজ গুছিয়ে রাখলো। নীরা বসেই রইলো। শিহাব জায়নামাজ রেখে এসে বললো।

-তোমার কপালে হাত রেখে কি যেনো পড়তে হবে?

নীরা হেসে ফেললো শিহাবের কথা শুনে বললো।

-আল্লাাহর প্রশংসা ও বিবাহিত জীবনের বরকত দানের দোয়া। পারো?

শিহাব মুখ গম্ভীর করে বললো।

-খালা বলেছিলো৷ কিন্তু আমি ভুলে গেছি।

শিহাবের এমন মুখভঙ্গি দেখে নীরা খিলখিল করে হাসলো। শিহাব হাসির দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো।

-কেউ যদি কিছু না পারে তাহলে তার ওপর হাসতে হয় না। বরং শিখিয়ে দিতে হয় তুমি না টিচার?

নীরা কিছুতেই হাসি থামাতে পারছে না। বহু কষ্টে সে হাসি থামিয়ে বললো।

-আমি মোবাইলে বের করে দিচ্ছি। তুমি দেখে দেখে পড়ো। পড়তে পারবে তো?

নীরা কতাটা মিটি মিটি হেসে বললো। শিহাব একটু রেগে বললো।

-কি মনে করো আমাকে?

নীরা হাসি থামিয়ে বললো।

-আচ্ছা আচ্ছা রেগে যেতে হবে না। তুমি পড়ো,।

নীরা নিজের ফোন থেকে দোয়াটা বের করে দিলো। শিহাব একনজরে ভালোভাবে দেখে নিয়ে। নীরার মাথায় হাত রেখে না দেখেই পড়লো। পড়া শেষ হলে বললো।

-আমার মেমোরি খুব শার্প। দেখেছো এক নজর দেখেই না দেখে পড়তে পেরেছি।

নীরা মাথা নাড়িয়ে বললো।

-দেখলাম এবার ঘুমানো যাক। আচ্ছা তুমি কোন সাইডে ঘুমাও? আর আমি কোন সাইডে ঘুমাবো?

নীরার এমন কথা শুনে শিহাবের মুখ কালো হয়ে গেল। আশ্চর্য! সে কি ভেবেছিলো। আর নীরা কি করতে বলছে। শিহাব কিছু বলছে না বলে নীরা শিহাবকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো।

-কি হলো তোমার?

শিহাব খানিকক্ষণ নীরার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হুট করে নীরার গাল ধরে কপালে স্পর্শ দিয়ে বললো।

-কিছুই হয়নি।

নীরা হতভম্ব হয়ে বললো।

-কি হলো এটা? তখন গাড়িতেও এমন কান্ড করেছিলে আমি কিন্তু কিছুই বলিনি।

এবার শিহাব হাসতে থাকলো। হাসতে হাসতেই আরো ভয়াবহ কান্ড করে বসলো। নীরাকে হুট করে জড়িয়ে ধরলো। এমনভাবে ধরলো যেন বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে। নীরা কিছু না বলে প্রথমে চুপ করে রইলো। কিছু বললো না। খানিকক্ষণ অনুভব করলো। তারপর দেখলো শিহাব অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। সে শিহাবের পিঠে চাপড় মেরে বললো।

-শিহাব তুমি যেভাবে জড়িয়ে ধরেছো। এতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হাড়গোড় মনে হয় ভেঙেই যাচ্ছে। ছাড়ো।

নীরার কোনো কথা শিহাবের কানে পৌছালো কিনা বোঝা গেল না। সে একইভাবে থাকলো। এই দিনের জন্য সে অনেকদিন অপেক্ষা করেছে। কবে সে তার হৃদয়ের রানীকে নিজের করে পাবে। কবে এভাবে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবে। নীরা আবার বললো।

-আল্লাহ তুমি কি চাও আমার হাড়গোড় সব ভেঙে যাক? ছাড়ো।

এবার শিহাবের ধ্যান ভাঙলো। সে নীরাকে ছেড়ে দিয়ে বললো।

-সত্যিই ব্যথা পেয়েছো?

নীরা সত্যিই ব্যথা পেয়েছিলো। তবুও বললো।

-না ঠিক আছি৷ তেমন ব্যথা পাইনি।

-তাহলে ছাড়ো ছাড়ো করছিলে কেন?

নীরা অবাক হয়ে শিহাবের দিকে তাকালো। হায় খোদা এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলো সে। নীরা এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বললো।

-এখন থেকে কতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। তুমি সবসময় পাশে থাকবে তো?

এই মুহূর্তে এসব কথা শুনে শিহাব বিরক্ত হলো তবুও বললো।

-আমার সবকিছু তোমার,তোমার সবকিছু আমার। সুতরাং আমার তোমার পরিবার বলতে এখন আর কিছু থাকবে না। এখন থেকে আমাদের পরিবার বলতে হবে। আমরা দুজন একসাথে আমাদের পরিবারের জন্য করবো। ঠিক আছে? আর আমি জানি আমি যা ভেবেছি তুমিও তাই ই ভেবেছো। মিলা, রেহান,তিতলি সাইফ,রুমা মা, বাবারা,খালা,দাদী সবাই আমাদের। এখানে আমার, তোমার বলতে কিছু থাকবে না!

শিহাবের কথা শুনে নীরা মুগ্ধ হলো। সুন্দর করে হেসে বললো।

-অবশ্যই। এটাই হবে।

শিহাবও হাসলো। তারপর আবার জড়িয়ে ধরতে গেল। কিন্তু নীরা দ্রুত পেছন দিকে হেলে বললো।

-ঘুম পাচ্ছে আমার।

শিহাবের এবার মেজাজ গরম হয়ে গেল। সে নীরার হাত শক্ত করে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। নীরার কপালের ওপর কিছু এলোমেলো চুল পরে ছিলো সেগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বললো।

-তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকলে আমার কষ্ট হয় এটা কি বোঝো?

নীরা কিছু না বলেই চুপ করে রইলো। শিহাব আবার বললো।

-বোঝো না কেন?

নীরা এবার আমতাআমতা করে বললো।

-আমার একটু সময় লাগবে মানে এডজাস্ট হতে। আমি এখনই প্রিপেয়ার নই। তুমি বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই মানে আমি বলতে চাইছি যে মানে!

শিহাব নীরার এমন আমতাআমতা করা দেখে হেসে ফেললো। তারপর নীরার গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো।

-সবসময় কনফিডেন্ট যেকোনো বিষয়ে হেজিটেট না করা,নির্ভয় নীরা এই সামান্য কথাটা বলতে এতো হেজিটেট করছে? হোয়াই?

নীরা কিছু না বলে চুপই রইলো। সে কি করে বলবে একটা বাজে অভিজ্ঞতার জন্য সে নিজের কাছে বসে থাকা শুদ্ধতম পুরুষটির ছোঁয়াও নিতে পারছে না। সে শিহাবকে সেই বাজে স্মৃতিটার কথা বলবে। কিন্তু এখন বলাটা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না৷তাই নীরা চুপ করেই রইলো।

শিহাব নীরার চুপ থাকা দেখে বললো।

-আমি এমনিতেও আজ তোমার কাছে আসতাম না। আমার কাছে সবার আগে মন তারপর বাকিসব। হ্যা শরীরও ম্যাটার করে। কিন্তু আত্মার সম্পর্কটাই মূখ্য। তবে হৃদয় না ছুঁয়েই শরীর ছোঁয়া আমি ঠিক মনে করি না। আর আমার মনে হয় আমি তোমার হৃদয় ছুঁয়েছি।

বলেই শিহাব মিটিমিটি হাসলো। নীরা শিহাবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। শিহাব আবার কাছে এসে নীরাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। এবার আর নীরা সরতে চাইলো না। শিহাবের বুকে মাথা রাখলো। শিহাব নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো।

– তুমি তো সারাজীবনের জন্য আমার। তাহলে এতো তাড়াহুড়োর কি আছে৷ আমি তোমাকে সবার আগে সম্মান করি তোমার অনুমতি ব্যতীত কখনো কাছে আসার কথা ভাবিনি। জড়িয়ে ধরেছি কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার বুকে মাথা রাখলে আমি শান্তি পাই। আর শোনো আবারও বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি নীরা। অনেক অনেক ভালোবাসি।

শিহাবের কথা শুনে নীরার চোখে পানি এসে গেল। সে নিজেই এবার শিহাবকে আঁকড়ে ধরলো। এতো ভালোবাসা,এতো শান্তি যে তার কপালেও ছিলো সেটা সে কখনোই ভাবেনি। সে শিহাবের বুকে মাথা রেখেই বললো।

-আমি খুব সৌভাগ্যবতী।

শিহাব হেসে নীরাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।

-উহু আমি খুব সৌভাগ্যবান।

-চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here