#অন্যরকম_নেশা অন্তিম পাতা
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা
খালামণির কথা শুনে রুহি মিটিমিটি হাসছে। এত্তো খারাপ লাগছে, আজ মনে হচ্ছে শশুড়বাড়ি আছি। খাবার নিয়েও যেখানে খোটা শুনতে হয়। মামুনি আর বাবাই তো নিজের মেয়ের মতই দেখে।
খালামণি : তনু? কি দেখে এই মেয়েকে বিয়ে করিয়ে এনেছিস শুনি? বিয়ের নাকি ৫ মাস হয়ে গেছে এখনো কোনো সুখবর শুনলাম না। কে জানে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা আছে কি না? আমার বউমা হলে তো পিটিয়ে ঠিক করে ফেলতাম আর তানভীর তোকেও বলি হারি যায় বউকে একটু শাসনে রাখ।
উনার কথাগুলো শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। আজ নিজের বাড়ি থাকলে হাজারো প্রতিবাদের স্বর উঠে আসতো। তানভীর তার খাওয়া রেখেই বলে উঠলেন…….
তানভীর : খালামনি? আমার বউ কিন্তু বোবা না কথা জানে। এই যে আমি বসে আছি,,আমার রেসপেক্ট রাখতেই সে চুপ আছে নয়তো এতোক্ষণে তোমায় ধুয়ে দিতো।
খালামণি : তুই আমাকে কথা শুনাচ্ছিস? (রাগী গলায়)
তানভীর : তুমি শুনাবে আর আমি শুধু শুনবো তা তো হয় না তাই না? এই যে তুমি বললা ঊর্মির বউ হওয়ার যোগ্যতা আছে কি না, আরে তোমার মধ্যে তো শাশুড়ী হওয়ার বিন্দু মাত্র যোগ্যতা নেই আর কি যেনো বলছিলে খাবার সার্ভ? এত্তোগুলো সার্ভেন্ট থাকতে আমার বউ কেনো খাবার সার্ভ করতে যাবে শুনি?
খালামণি : তানভীর? আমি তোর খালামণি…..
তানভীর : সেটাই তো, তুমি আমার খালামনি অথচ আমার বাচ্চা কেনো হচ্ছে না সেই নিয়ে পাব্লিক্যালি আলোচনা করছো পারলে নিশ্চয় বেডরুমে ঢুকে যেতে?
মুহূর্তের মধ্যেই খালামণি আর রুহি না খেয়েই নিজেদের রুমে চলে গেলেন। উনার কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম আর চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরাচ্ছিলাম। আমি উঠে দাঁড়াতেই উনি আমার হাত ধরে বলে উঠলেন “খাবার কমপ্লিট করে যাও” বলেই চেয়ারে বসিয়ে চেয়ারটা ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নিলেন। নিজের প্লেটটা সরিয়ে রেখে আমার প্লেটটা হাতে তুলে নিলেন। আমার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে বললেন, “হা করো” আমি চুপচাপ বসে আছি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো শান্ত গলায় বললেন… “হা করো ঊর্মি” মুখে খাবার নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি বাবাই আর মামুনি মুখ টিপে হাসছেন।
সেদিন বিকেলেই খালামণি আর রুহি চলে যায়।
—————–
এভাবেই প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে। খাবারের প্রতি কোনো রুচি নেই গা গুলোয়। তানভীর অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।
তানভীর : ঊর্মি আমার ওয়ালেট টা খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি : এইতো আপনার…..
বলেই দিতে যাবো তার আগেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম তানভীর আমায় ধরে ফেলে।
তানভীর : কি হয়েছে তোমার? একটু হলেই তো গুরুতর আঘাত পেতে মাথায়। তোমার কি শরীর খারাপ? খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করো না তাইনা?
আমি : খাওয়া দাওয়া ঠিক করেই করি কিন্তু কিছুদিন ধরেই শরীর খারাপ লাগে আর গা গুলোয়।
তানভীর : লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছিলো?
আমি : কি?
তানভীর : বলো?
আমি : ২/৩ মাস হবে হয়তো।
আমার কথায় কেশে উঠলেন তানভীর। শান্ত গলায় বললেন….
তানভীর : তুমি যে কতোটা কেয়ারলেস তার প্রমাণ স্পষ্ট। এতোদিন ধরে পিরিয়ড হচ্ছে না তোমার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই?
এটুকু বলে থামলেন উনি। মাথা চুলকে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন….
তানভীর : তুমি কি প্রেগনেন্ট?
উনার কথায় চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো আমার। তানভীর উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন….
তানভীর : উঠতে পারবে? পারলে উঠে রেডি হয়ে নাও। হসপিটালে যাবো।
হসপিটালে……
সব শুনে ডক্টরও প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য সাজেস্ট করলো। আলট্রাসনোগ্রাফি শেষ করে বাসায় ফিরেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। বিছানার এক কোণে ফাইল হাতে মাথা নিচু করে বসে আছে তানভীর। আমাকে উঠে বসতে দেখেই ফাইলটা এগিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন…..
তানভীর : বেবি আসছে।
ডান হাতটা অটোমেটিক পেটের উপর গিয়ে স্থির হলো। আমি ড্যাবড্যাব করে পেটের দিকে তাকিয়ে আছি। সত্যিই কি আমি প্রেগনেন্ট? কথাটা ভাবতেই শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগছে।
তানভীর : I love you Urmi. জীবনটাকে আজ হঠাৎ করেই অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। আমি বাবা হচ্ছি! এতো আনন্দ যে ধরে রাখতে পারছি না আমি।
——————
দেখতে দেখতে ৮ মাস চাই গেলেও। দুপুর বেলা সবাই লাঞ্চ করছি, তানভীর আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে হঠাৎ করে আমার অল্প অল্প পেইন শুরু হয়েছে, না খেয়েই উঠে রুমে চলে এলাম, সময়ের সাথে সাথে আমার পেইন বাড়ছে, সন্ধ্যায় এই ব্যাথাটা হাজার গুনে বেড়ে গেছে, তানভীর আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো,
অসম্ভব যন্ত্রনায় ছটফট করছি আমি, ডক্টর বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার অপারেশন করবে, মাম আমার পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছে, আর আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করছি, বাড়ির সব লোকজন এসেছে, আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাবো, এই যন্ত্রনা আমি সহ্য করতে পারছি না, ক্রমশ আমি চিৎকার করে যাচ্ছি আর মাম পাশে বসে আমাকে নানা রকম কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু মাম এর কথা গুলো আমার কান পর্যন্ত এসে পৌঁছাচ্ছে না, এরমধ্যে দুজন নার্স ও দুজন ওয়ার্ড বয় এসে আমাকে স্ট্রেচারে করে অটিতে নিয়ে এলো, একজন ডক্টর আমাকে একটা ইনজেকশন পুশ করলো তারপর আর কিছু মনে নেই আমার,
যখন জ্ঞান ফিরলো তাকিয়ে দেখি আমার পাশের বেডেই আমার মেয়েকে শুয়িয়ে দিয়েছে দেখতে তানভীর এর মতই হয়েছে। পাশে তানভীর বসে আছে।
তানভীর : ধন্যবাদ! আজ তুমি আমার জীবনটাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছো।
আমি : আমিও আজ পরিপূর্ণ।
সমাপ্ত………..