#অন্যরকম_নেশা পর্ব ৪

0
770

#অন্যরকম_নেশা পর্ব ৪
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

তানিশা তানভীর এর কেবিনে ঢুকে…..

তানভীর : আপু তুই হঠাৎ এখানে?

তানিশা : কি করবো ভাই এর তো সময় নেই।

তানভীর : আপু কি যে বলিস না। আর তুই এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলিস কেনো? পাগল মেয়েটা কিছু বলেছে নাকি?

তানিশা : আরে না খুব মিষ্টি মেয়ে সে।

তানভীর : মিষ্টি না ছাই। যখন থেকে এসেছে আমার মাথা খাচ্ছে। আব্বু যে কেনো ওকে আমার Assistance রাখলো বুঝলাম না?

তানিশা : তুই বেশি করছিস মেয়েটা ভারি মিষ্টি আর ওকে দিয়ে কি সারা অফিসের কাজ করাবি নাকি?(কান ধরে)

তানভীর : আপু কি করছিস? এটা অফিস।

তানিশা : কিন্তু তুই আমার ভাই।

তানভীর : আচ্ছা আচ্ছা এবার ছাড় লাগছে।

তানিশা : নে ছেড়ে দিলাম। আচ্ছা মেয়েটার নাম কি?

তানভীর : ঊর্মি! আচ্ছা বসো এখানে আমি কফি আনতে বলছি।

তানিশা : কিছু খাব না, আমি এখন চলে যাব সিয়াম এসেছে চট্টগ্রাম থেকে (সিয়াম তানিশার হবু হাসবেন্ড)

তানভীর : আচ্ছা! আমি ছেড়ে আসি।

তানিশা : না ড্রাইভার আছে যেতে পারবো।

তানভীর : আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাস।

—————————

তানিশা তানভীর এর কেবিন থেকে বের হয়ে ঊর্মির কাছে গেল। ঊর্মি এদিকে ভাবছে তানভীর যদি আবার কিছু বলে ফেলে তানিশাকে। হঠাৎ তানিশা বললো…..

তানিশা : ঊর্মি!

আমি : আপু আপনি (পিছন ফিরে)

তানিশা : আপুও বলছো আবার আপনিও বলছো? (মেয়েটাকে বড্ড আপন লাগে কি মায়া চেহারায়)

আমি : সরি (আপু টাকে খুব আপন আপন লাগে। আমার আপুটাও তো উনার বয়সের )

তানিশা : আচ্ছা এখন তাহলে আসি আবার দেখা হবে।

আমি : আল্লাহ হাফেজ আপু।

তানিশা : আল্লাহ হাফেজ।

ঊর্মি তানিশা কে বিদায় দিয়ে কাজ করাতে মনোযোগ দিল হঠাৎ তানভীর এর ফোন…..

তানভীর : ঊর্মি ভিতরে আসো।

আমি : রাগ করে ফোনটা রেখে দিলাম।

তানভীর : এটা কি হলো। এই মেয়ে এমন করে ফোন রাখলো কেন?

আমি : স্যার আসবো?

তানভীর : আসো।

ঊর্মি কেবিনের ভেতরে ঢুকলে….

তানভীর : আগে বলো ফোন এভাবে রাখলে কেন?

আমি : কিভাবে স্যার।

তানভীর : জানো না কিভাবে?

আমি : আমি ভালো করে রেখেছি।

তানভীর রাগে চেয়ার থেকে উঠে ঊর্মির কাছে গিয়ে ঊর্মির হাত পিছন করে ঊর্মিকে নিজের বুকের সাথে একবারে মিশিয়ে….

তানভীর : এবার বলো কি সমস্যা তোমার?

আমি : স্যার এ কি করছেন?

তানভীর ঊর্মিকে নিজের আরো কাছে আনে যাতে এক টুকরো বাতাসও যেতে না পারে সাথে ঊর্মির হাতটা আরো শক্ত করে ধরে….

তানভীর : ভুলে যেও না তুমি আমার Only assistance. তাই নিজের লিমিট কস করবে না।

বেশি শক্ত ধরার জন্য ঊর্মি আহ বলে উঠলো। সাথে চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। ঊর্মি চোখ বন্ধ করে আছে। ঊর্মির চোখের পানি দেখে তানভীরের কেমন যেন মায়া লাগলো। তখনও তানভীর ঊর্মিকে তার বুকের সাথে লাগিয়ে রেখেছে।

আমি : স্যার ছাড়েন প্লিজ লাগছে।

প্লিজ লাগছে কথাটা শুনে তানভীর এর বুক কেমন ধক করে উঠলো। তানভীর ঊর্মির হাত ছেড়ে দিল….

তানভীর : Next time যেন এমন না হয় আর শুনুন আগামীকাল অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যেতে হবে।

ঊর্মি কিছু না বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তানভীর শুধু ঊর্মির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে…..

অফিস ছুটির পর বাসায় এসে না খেয়েই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আজ মনে মেঘের আভা ফুটে উঠেছে। আকাশপানে তাকিয়ে ভাবছি ১৭ বছর আগে……..

আমি : আপু আমার খুব ভয় করছে।

আপু : চিন্তা করিস না বোন আমি তো আছি।

(তখন আমার বয়স ৫ বছর আর আপুর ৮ বছর আপুর নাম শিম্মি। আমাদের জন্মদিনে বাবা মা আমাদের এক রকম চেইনের সাথে লকেট উপহার দিয়েছিলেন সেটা এখনো আমি গলায় পড়ে থাকি। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর চাচা চাচি আমাদের সব সম্পত্তি দখল করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আপু আর আমি রাস্তায় বসে আছি)

আমি : আপু আমার খুব খিদে পেয়েছে।

আপু : বোন তুই এখানেই বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আমি : আচ্ছা।

বেশ কিছুক্ষণ পর আপু আসছে না দেখে আমি উঠে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আমি পথ হারিয়ে ফেলি আর আপুকে চিরতরে হারিয়ে ফেলি। সেরাতে মাম আর বাবাই আমাকে নিয়ে আসে নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসে। কিছুদিন পরেই শাম্মি হয় ওর নামটা আমিই রেখেছিলাম নিজের আর আমার আপুর নামের সাথে মিলিয়ে ঊর্মি, শিম্মি, শাম্মি। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষায় দেই তখন বাবাই মারা যান আর মাম আমাদের দু বোনের পড়ালেখা সংসারের হাল ধরেন।

মাম এর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম…..

মাম : কি মা কি ভাবছিস?

আমি : আজ আপু কে খুব মনে পড়ছে। আমার দোষের জন্য আমি আমার আপুকে হারিয়ে ফেললাম (কাঁদতে কাঁদতে)

মাম : কান্না করিস না মা আল্লাহ যদি চান তাহলে তোর আপু সাথে তোর আবার দেখা করাবেন।

আমি : কখনো কি আপুকে ফিরে পাবো মাম?

মাম : আল্লাহ চাইলে সব হয়। এখন চল তো খাবি শাম্মি বসে আছে।

আমি : আচ্ছা মাম শোনো তোমাকে তো একটা কথা বলা হয়নি।

মাম : কি কথা?

আমি : আগামীকাল অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যেতে হবে ২ দিনের জন্য।

মাম : কি বলিস? সে তো অনেক দুর।

আমি : হুম তবুও যেতে হবে।

মাম : আচ্ছা এখন চল খাবি।

রাতের খাবার খেয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা করে মাম আর শাম্মির সাথে আড্ডা দিলাম। বিকেলে তৈরি হয়ে মাম এর থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে চলে গেলাম।

তারপর স্যার এর সাথে গাড়ির কাছে গেলাম। স্যার গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে আমাকে তার পাশে বসতে বললো তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আমি : স্যার যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?

তানভীর : বলো!

আমি : স্যার আপনি ড্রাইভ করছেন? মানে আপনার ড্রাইভার?

তানভীর : ড্রাইভার অসুস্থ তাই আসতে পারে নি।

আমি : স্যার ম্যানেজার? সে এলো না কেন?

তানভীর : ম্যানেজার অফিসের একটা কাজে আটকে গেছে, সন্ধ্যায় আসবেন।

আমি : ওকে স্যার।

স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না। হঠাৎ করে অনুভব করলাম কেউ আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে। চোখ খুলে দেখি স্যার ডাকছে, বাইরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

তানভীর : একটানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঘুমচ্ছো, এতো ঝর বৃষ্টি শুরু হলো কতো গুলো বাজ পড়লো, তোমাকে কত বার ডাকলাম তোমার কোনো সাড়া শব্দ নেই। তুমি জানো আমি বাজ পড়লে কতটা ভয় পাই?

এই মুহূর্তে প্রচুর হাঁসি পাচ্ছে একজন তরুণ পুরুষ যদি বলে সে বাজ পড়লে ভয় পায় কিন্তু ওনার সামনে হাসা যাবে না কি না কি মনে করে?

আমি : সরি স্যার আসলে আমি গাড়িতে থাকলে এভাবেই ঘুমাই, স্যার আপনি কি বেশি ভয় পেয়েছেন (হাসি চেপে রেখে)

তানভীর : হ্যাঁ অনেক দেখো আমার হাত পা কাঁপছে।

আমি : I am extremely sorry sir 😔😔

ধুর রাক্ষসটার ভয় পাওয়ার দৃশ্যটা দেখতে পারলাম না কপাল টাই খারাপ (মনে মনে বললাম)

রাত ৯ টা বাজে এখনো ঝড় বৃষ্টি থামার নাম নেই। বৃষ্টির জন্য গাড়ি নিয়ে সামনের দিকেও যাওয়া যাচ্ছে না। গাড়ি সন্ধ্যা থেকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে।

চলবে?……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here