#অন্যরকম_নেশা পর্ব ৫

0
733

#অন্যরকম_নেশা পর্ব ৫
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

রাস্তা পাশেই ছোট্ট একটা ঘর, তারাতাড়ি করে ওই ঘরের সামনে গেলাম, কিন্তু একি এই ঘরে তো দরজা জানালা কিছুই নেই শুধু উপরে টিনের ছাউনি গাড়িতে এভাবে থাকা যাবে না তাই স্যার আমি ঘরের ভেতরে গেলাম, এই ঘরটা দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো মানুষ থাকেনা। আপাতত রাতটুকু কাটানো যাবে। বাইরে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।

ঘরের ভেতর চট টাইপ কিছু ছিলো সেটা নিয়েই মাটিতে বিছিয়ে বসে পড়লাম, কিন্তু স্যার বসছে না, তিনি দাঁড়িয়ে আছে, আমি বললাম…..

আমি : একি স্যার আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
তানভীর : আমি এসব নোংরা চটের উপর বসতে পারবো না।

আমি : না বসলেন। আচ্ছা স্যার গুড নাইট।

তানভীর : মানে? তুমি এতোটা selfish হও কিভাবে? আমাকে এভাবে একা দাড় করিয়ে রেখে তুমি নাক টেনে ঘুমোবে?

আমি : আমি তো আপনাকে বললাম বসতে কিন্তু আপনি তো আবার হাই লেভেলের মানুষ।

এখন বাইরে প্রচণ্ড ঝড় হাওয়া বইছে, সঙ্গে অনেক বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, এতোক্ষণে স্যার বাজ পড়ার ভয়ে আমার পাশে বসে পড়লেন। হঠাৎ করে বিকট শব্দে একটা বাজ পড়লো, মনে হচ্ছে মাটি সহ সব কিছু কেঁপে উঠেছে, বাজ পড়ার শব্দে আমি ভয়ে রিতিমত চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমি চিৎকার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, কিছুক্ষণ পর স্যার ছেড়ে দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে একটু দুরে গিয়ে বসলো, আর বললো…..

তানভীর : সরি! আসলে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম আর তুমি ওই ভাবে চিৎকার করে উঠলে তাই এরকম

আমি : কোনো ব্যপার না! স্যার এবার আপনি শুয়ে পড়ুন আপনার শরীর খারাপ করবে।

তানভীর : তুমি ওদিকটায় শুয়ে পড়ো আমি এ এই পাশটায় শুয়ে পড়ছি।

আমি : আচ্ছা!

রাত প্রায় ১টা কিছু মানুষ জনের কথা শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি স্যার আর আমি খুব কাছাকাছি ঘুমিয়ে আছি। এরমধ্যে দুজন লোক ভিতরে ঢুকে চিৎকার দিয়ে বাইরের লোকদের বললো……

: আমনেরা কারা? এহানে কি করতাছেন?

ওপাশ থেকে একজন বললো……

: বাইরে নিয়া আয় ওগোরে।

তানভীর : কেন বাহিরে কি?

: ওইডা গেলেই দেখতে পারবেন।

তানভীর : ওকে চলুন ঊর্মি আসো তো!

বাইরে অনেক লোক জড়ো হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে পুরো এলাকার মানুষ এখানে। আমরা বাইরে যেতেই সবার মধ্যে থেকে একজন মধ্যবয়স্ক লোক বলে উঠলো…..

: আমনেরা কেডা? এইহানে কি চান?

তানভীর : আমরা শহর থেকে এসেছি, আমরা চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম কিন্তু ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়াতে বাধ্য হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি।

: তা বুজলাম, তয় এই মাইয়াডা কেডা? কি অয় আমনের?

তানভীর : ও আমার পিএ

: মানে? বুজায়া কন।

তানভীর : মানে ও আমার অফিসে কাজ করে।

: তয় আপিসের মাইয়া লইয়া এইহানে আইছেন ক্যান?

তানভীর : আমরা অফিসের কাজেই বের হয়েছিলাম।

: এইডা ফুর্তি করার যাগা?

আমি : কি বলছেন আপনারা এসব?

তানভীর : দেখুন আপনারা ভুল ভাবছেন।

: আমরা যদি এইয়ার বিচার না করি তাইলে আমনে গো লিগা আমগো গেরামের পোলাপান নষ্ট হইবো।

তানভীর : কি বলতে চাইছেন আপনারা?

আমি : (কাঁদছি)

: আমরা চাই আমনে গোর বিয়া দিতে। আমরা আমগোর এলাকার বদনাম হইতে দিতে পারমু না।

তানভীর : বিয়ে করতে হবে মানে? আপনারা কি জোর করে বিয়ে দিবেন নাকি?

: ওই তরা কাজি লইয়া আয় অহনের মধ্যে।

আমি : আপনারা আমাদের জোর করতে পারেন না।

: দেহো মাইয়া এতো কথা কইয়ো না। আমরা গেরামের মানুষ আমরা এতো কিছু বুজি না, এহন চেয়ারম্যান সাব যা কইবো তোমাগো তাই হুনতেই অইবো।

চেয়ারম্যান : ওই পোলা তারাতাড়ি কও বিয়া করবা কিনা?

তানভীর : আপনারা বললেই আমাকে বিয়ে করতে হবে নাকি?

চেয়ারম্যান : তুমি না কইলেও আজকে তোমাগো বিয়া করতে হইবো।

আমি : মানে কি বলছেন আপনারা এসব? (কাঁদতে কাঁদতে)

তানভীর : আপনারা এইসব বন্ধ করুন (চেচিয়ে)

: ওই মাইয়া হুনো তোমার এই কান্দোনে কোনো কাম অইবো না, চেয়ারম্যান সাবে যহন কইছে বিয়া অইবো তহন অইবোই অইবো।

তানভীর : আচ্ছা ঠিকাছে আমি ঊর্মি কে বিয়ে করবো।

আমি : স্যার আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন তো? প্লীজ স্যার আরেক বার ভেবে দেখুন (কাঁদতে কাঁদতে)

তানভীর : আমি সব কিছু ভেবে চিন্তেই বলছি।

কিছুক্ষণ পর বিয়ের কার্যক্রম শেষ করলো, আজ থেকে উনি আর আমি স্বামী স্ত্রী। আমি নিঃশব্দে কেঁদে চলেছি। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। এরপর আমি আর স্যার দুজনেই উঠে দাঁড়ালাম। স্যার বললেন…..

তানভীর : আচ্ছা এখন কি আমরা যেতে পারি?

চেয়ারম্যান : আইজকা তো জাইতে পারবনা। আইজ তোমরা আমার বাইত থাকবা।

রাতটুকু চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে কাটিয়ে সকাল হতেই গ্রামের সবাই কে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে পরলাম চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে জমি দেখে জমির মালিকের সঙ্গে একটা ডিল করে ঢাকায় ব্যাক করলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেছে, বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে মামকে কাজে সাহায্য করলাম তারপর নাস্তা করে রেডি হয়ে অফিসে চলে এলাম। অফিসে এসেই স্যারের কেবিনের গেলাম…..

আমি : May i coming sir?

তানভীর : হ্যাঁ এসো।

কেবিনে ঢুকে পুরোই শক, বলতে গেলে এক প্রকার ছোট খাটোহার্ট অ্যাটাক। তানভীর ফরমাল ড্রেস থেকে জিন্স পেন্ট আর টি শার্ট পড়েছে যে কেউ দেখলে আজ ক্রাশ খাবে। তানভীর ঊর্মির দিকে তাকিয়ে….

তানভীর : কি ব্যাপার? এমন হ্যাঁ করে আছো কেন?

আমি : (চুপ)

তানভীর : ঊর্মি!

আমি : জ্বী sorry আপনাকে তো চিনলাম না স্যার কোথায়?

তানভীর : তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি!

আমি : আরে না আপনি তো দেখতে কতো Handsome আর আমাদের বস তো দেখতে বুড়া (এই যাহ কি বলতে কি বলে ফেললাম)

তানভীর : কি আমি বুড়া?

আমি : না না..

তানভীর : বুড়ি একটা। এই ফাইল গুলো ক্যালকুলেশন কিরে নিয়ে আসো।

আমি : আচ্ছা (এক প্রকার ফাইল গুলো টান দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলাম)

ব্যাটা রাক্ষস একটা আমি নাকি বুড়ি? নিজে বুড়া হয়েছে তা না। আবার আমাকে বলে। আমি যদি পারতাম তাহলে এখুনি একটা ফুটবলের মতো লাথি মারতাম।

কিছুক্ষণ পর…..

আমি : স্যার আসবো?

তানভীর : আসো! আজ রাতে ফ্রি আছো কি?

আমি : মানে?

তানভীর : সেদিন যার ডিল টা ফাইনাল হয়েছিলো আজ রাতে তার বাসায় হোম পার্টি আছে। আমাদের যেতে হবে।

আমি : আমি যেতে পারবো না স্যার (বলে চলে যাচ্ছে)

তানভীর রেগে গিয়ে ঊর্মির কাছে এসে তার কোমর ধরে নিজের কাছে এনে বললো….

তানভীর : কি বললে তুমি আবার বলো।

আমি : আমি যেতে পারবো না।

তানভীর ঊর্মিকে এবার তার বুকের কাছে এনে….

তানভীর : এখন?

আমি : না (চোখ নিচু করে)

তানভীর ঊর্মি কে এবার তার ঠোঁট বরাবর নিয়ে ঊর্মির দিকে তাকিয়ে আছে। তানভীর নিজের ঠোঁটে উষ্ণ ছোঁয়া ঊর্মির কপালে দিলো।

আমি : স্যা….স্যা….

তার আগেই তানভীর ঊর্মির ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিল। তানভীর আস্তে আস্তে ঊর্মির চোখে গালে আর শেষে ঊর্মির ঠোঁটে তার পরম উষ্ণতা ছুঁয়ে দিতে যাবে তার আগেই ঊর্মি তানভীরকে ধাক্কা দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে?………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here