আলো_আধারের_খেলা পর্ব_০৭

0
410

আলো_আধারের_খেলা
পর্ব_০৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আমি এই ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।তোমরা বুঝতে কেনো পারছো না।কেনো বার বার ঘুরেফিরে এই ছেলেকেই আনছো?এই ছেলে নামায কালাম কিছুই পড়ে না।তাছাড়া মুখে কোনো দাঁড়িও নাই।তোমরা পড়ে আছো তার আচার আচরণ নিয়ে?সে যেমনই হোক এই ছেলেকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না?এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে তোমরা ভাবলে কি করে?আমার বাবা মা না হয় বোঝে না আমাকে,কিন্তু তুমি তো বোঝো দাদী?
কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে জান্নাত।সে ভাবতেই পারে নি আজকেই তার বিয়ে হবে।সেটাও আবার সেই ছেলের সাথে যে ছেলে তার থেকে ২০ বছরের বড়।

জান্নাতের দাদী নিজেও বুঝে উঠে পারছেন না কি করবেন তিনি?রুবেল আর ঊর্মি খবর না দিয়েই এসেছে,আর এসেই বলছে আজকেই বিয়ে হবে।জান্নাতের আব্বু তো বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াও শুরু করে দিয়েছে।আর জান্নাতের দাদীকে বলেছে যেভাবেই হোক জান্নাতকে রাজি করাতে।জান্নাতের দাদী সেজন্য জান্নাতকে বোঝাতে লাগলো।কিন্তু জান্নাত বুঝতেই চাচ্ছে না।সে শুধু কান্নাকাটি করছে।

হঠাৎ হিয়া আর হৃদয় প্রবেশ করলো জান্নাতের রুমে।তারা তাদের নতুন চাচীকে দেখতে এসেছে।এদিকে তো জান্নাত কেঁদেই চলেছে।দাদী তা দেখে জাহান কে বললো পিচ্চি দুইটিকে নিয়ে আপাতত বাহিরে যা।আমি জান্নাতকে রেডি করছি।জাহান দাদীর কথা শুনে পিচ্চি দুইটিকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো। এদিকে দাদী জান্নাতের জন্য নতুন একটা বোরকা বের করলো আর জান্নাতকে বললো,তাড়াতাড়ি পড়ে নে বোরকাটা।তোর যেভাবে মন চায় সেভাবেই সাঁজ আজকে।বোরকা নিকাব যা পড়তে মন চায় সেটাই পড়।তবুও আজ তোকে ওদের সামনে যেতেই হবে।কান্দাকাটি করে কোনো লাভ নাই।তোর বাবা বিয়ের আয়োজন শুরু করে দিয়েছে।ভাগ্যকে মেনে নে জান্নাত।রুয়েলের সাথেই হয়তো তোর লেখিত আছে সেজন্য ওরা এভাবে হঠাৎ এসেই আজকেই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।

জান্নাত তখন বললো,আমি মানি না এসব।তুমি গিয়ে বলে দাও মেয়ে রাজি নয় বিয়েতে।আমি ওই বুড়ো ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।
দাদী সেই কথা শুনে বললো, কে বললো বুড়ো?মাত্র ৩৫ বছর।আর ছেলেদের ওরকম একটু বয়স হয়।ছেলেরা তো আর ২০ বছরেই বিয়ে করতে পারে না।তাদের তো বউ বাচ্চা কে খাওয়ানোর জন্য আয় রোজকার করতে হয়।

জান্নাত তখন বললো, ৩৫ বছর তোমার কাছে মাত্র মনে হচ্ছে।দুই যুগ পার করে এসেছে।আর আমার বয়স মাত্র ১৫.তোমরা কি করে এটা মেনে নিচ্ছো?না আমি মানি না এই বিয়ে।

দাদী তখন বললো, বিয়ের পর বউ যাতে আরাম আয়াশে থাকতে পারে,ভালোমন্দ খেতে পারে,রুয়েল সেজন্য সবকিছু করেই বিয়ে করছে।বাড়ি গাড়ি করা তো আর মুখের কথা নয়।এসব করতে তো সময় লাগে।এজন্য ওর বয়স একটু বেশি হয়েছে।তুই আর এরকম পাগলামি করিস না।অনেক সুখে থাকবি দেখিস।তাছাড়া বেশি বয়সের ছেলেরা বউদের অনেক বেশি ভালোবাসে।তোকে অনেক বেশি ভালোবাসবে সে।এই তুই একদিন আমাকে বলবি, দাদী তুমি যা যা বলেছো সব সত্যি বলেছো।আজ রুয়েলকে বিয়ে করে ধন্য আমি।

জান্নাত তখন চিৎকার করে বললো, জীবনেও বলবো না।তোমরা যদি জোর করে এভাবে আমাকে ওই ছেলের সাথেই বিয়ে দাও তাহলে কিন্তু আর জীবনেও আসবো না তোমাদের বাড়িতে।তোমাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবো।

দাদী সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, আচ্ছা আচ্ছা দিস।আর আসবিই বা কেনো?স্বামীকে রেখে তুই নিজেই আসতে চাইবি না।যখন বিয়ে হবে তখন বুঝবি স্বামীর গুরুত্ব।বিয়ে হলে তুই তো সারাক্ষণ স্বামীর সেবা করা নিয়েই ব্যস্ত থাকবি।তখন কি আর আমাদের বাড়ি আসতে মন চাইবে!

জান্নাত তার দাদীকে বোঝাতেই পারছে না।সে যতই না না করছে তার দাদী ততই এক গাদা কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে চলছে ব্যাপারটা।জান্নাত বলছে সে রুয়েলকে বিয়ে করবে না আর দাদী তাকে স্বামীর গুরুত্ব বোঝাচ্ছে।সে তো এসব জানেই,
একজন নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকভাবে আদায় করবে,রমজানের রোজা রাখবে,আপন লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে,পর্দার সহিত চলবে এবং স্বামীর আনুগত্য থাকবে,স্বামীর সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকবে তখন সেই নারী জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে(সহিহ ইবনে হিব্বান,হাদিস ৪১৬৩)
সেই জন্য জান্নাত এমন এক জীবন সঙ্গীকে চায় যে তার একদম মনের মতো হবে।রুয়েল তো কোনো দিক দিয়েই তার মনের মতো নয়।জান্নাত নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,রুয়েলের সাথেই যখন তার বিয়ে হবে তাহলে কেনো সে রোজ রোজ সুদর্শন চাপ দাঁড়িওয়ালা যুবক কে স্বপ্নে দেখে।যে তার মনের মধ্যে একদম গেঁথে আছে।সেই যুবকের রেশ জান্নাত কাটিয়ে উঠতেই পারছে না।সে ভেবেছিলো এমন সুদর্শন যুবকই হয়তো তার স্বামী হবে।আর জান্নাত তার জীবনের চেয়েও তাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে আর শ্রদ্ধা করবে।

এদিকে রুয়েল নিজেও ভীষণ অবাক হলো।তার ভাই আর ভাবি যে এভাবে তাকে সারপ্রাইজ দিবে সত্যি সে ভাবতে পারছে না।রুয়েল ভাবতেও পারছে আজ জান্নাতের সাথে তার বিয়ে।যে জান্নাতকে এক নজর দেখার জন্য সে ছটফট করছে দিনরাত।কিন্তু রুয়েলের এরকম লুকোচুরি বিয়ে মোটেও পছন্দ না।সে ধুমধামে বিয়ে করতে চায়।তাছাড়া তার বন্ধুদের কে না জানিয়ে সে আজকেই কিভাবে বিয়ে করবে।
হঠাৎ রুয়েলের মনে আরেকটা প্রশ্ন জাগলো।সে তো জান্নাতকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে।কিন্তু জান্নাত কি তাকে বিয়ে করতে চায়?জান্নাতের মনে কি চলছে তা জানা দরকার।এজন্য রুয়েল ঠিক করলো বিয়ের আগে জান্নাতের সাথে সে কথা বলতে চায়।জান্নাতের মুখেই সে শুনতে চায় সে এই বিয়ে তে রাজি আছে কিনা?

রুয়েলের এমন প্রস্তাব শুনে জান্নাতের আব্বু বললো,আচ্ছা ঠিক আছে।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি জান্নাতকে।এই বলে জহির জান্নাতের রুমে চলে গেলো।জান্নাত এখনো কাঁদছে।আর তার দাদী তাকে শান্ত্বনা দিচ্ছে।জহির তখন তার মাকে বললো,মা আপনি কিছুক্ষনের জন্য একটু রুম থেকে চলে যান।আমি জান্নাতের সাথে একাকী ভাবে কিছু কথা বলতে চাই।জহিরের কথা শুনে জান্নাতের দাদী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
জান্নাতের আব্বু তখন জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,মা জান্নাত কাঁদছিস কেনো এতো?কাঁদার কি হয়েছে?আমরা তো সবসময় তোর ভালোই চাই।আমরা কি তোর খারাপ চাইবো কখনো?তোর সুখের জন্যই আমি রুয়েলের সাথে বিয়েটা ঠিক করেছি।

জান্নাত তার আব্বুর এমন শান্ত কন্ঠ শুনে তাজ্জব লেগে গেলো।যে মানুষ সবসময় কর্কশ ভাষায় কথা বলতো তার কন্ঠ হঠাৎ করে এতো শান্ত হয়ে গেলো কেমনে?
জান্নাত তার বাবার ছলছল চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে আছে।তার বাবা কাঁদছে!যতই হোক নিজের মেয়ে তো?মেয়ের বিয়ের কথা শুনে কোনো বাবাই ঠিক থাকতে পারে না।
হঠাৎ জহির সাহেব নিজের চোখের পানি মুছিয়ে বললো,রুয়েল যথেষ্ট ভালো ছেলে।সেই ছোটোকাল থেকে দেখে আসছি ছেলেটাকে।এরকম ভালো আর ভদ্র ছেলে একটাও নাই।এজন্যই তো ওর চাচা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাথে সাথে আমি রাজি হয়ে যাই।ওরা যে আমাদের ঘরে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে সেটা অনেক বড় এক সৌভাগ্য আমাদের।রুয়েলের দাদারা একসময় এই গ্রামে রাজত্ব করেছে।খুবই নামি-দামি বংশ ওদের।তুই আর না করিস না মা।বিয়েতে রাজি হয়ে যা।রুয়েল তোর সাথে কথা বলতে চায়,দয়া করে কোনো উল্টোপাল্টা কথা বলবি না।এই বলে জান্নাতের আব্বু চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাত অবাক নয়নে তার বাবার চলে যাওয়া দেখতে লাগলো।সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো এই বিয়ে নিয়ে আর কিছু বলবে না সে।তার বাবা এতো বেশি তাকে ইমোশনাল করে দিলো যে সে আর কিছুই বললো না বিয়ের ব্যাপারে।
জান্নাতের দাদী আবার আসলো জান্নাতের রুমে।আর বললো জান্নাত রুয়েল তোর সাথে কথা বলার জন্য আসছে।জান্নাত সেই কথা শুনে বোরকার উপরে হিজাব আর নিকাব টা পড়ে নিলো।জান্নাতের দাদী এ নিয়ে আর কোনো কথা বললো না।জান্নাত সেজন্য নিচ মুখ হয়ে বসে থাকলো।

কিছুক্ষন পরে রুয়েল প্রবেশ করলো জান্নাতের রুমে।জান্নাত রুয়েলকে আসা দেখে দাঁড়িয়ে গেলো আর নিচ মুখ হয়েই সালাম দিতে ধরলো কিন্তু তার আগেই রুয়েল বললো, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনি?
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিচ মুখ হয়েই বললো ওয়ালাইকুম আসসালাম,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
জান্নাত ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।একা একটা ঘরে অচেনা ছেলের সাথে সে।জান্নাত এদিক ওদিক না তাকিয়ে পাথরের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।রুয়েল তখন বললো,আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না আমি কেমন আছি?
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিচ মুখ হয়েই বললো, আপনি কেমন আছেন?
রুয়েল শান্তভাবে উত্তর দিলো,জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি।এই বলে রুয়েল জান্নাত কে বললো,আমরা কি এভাবে দাঁড়িয়েই কথা বলবো?

জান্নাত তখন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,বসুন প্লিজ।রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে বিছানায় বসলো।কিন্তু জান্নাত এখনো দাঁড়িয়েই আছে।সেজন্য রুয়েল চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বললো, আপনিও বসুন।জান্নাত রুয়েলের কথা শুনেও বসলো না।সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো।রুয়েল তা দেখে নিজেও দাঁড়িয়ে গেলো।আর বললো,ওকে ঠিক আছে।তাহলে দাঁড়িয়েই কথা বলি।জান্নাত তখন তাড়াতাড়ি করে চেয়ারটাতে বসলো।রুয়েল নিজেও আর সময় নষ্ট না করে চুপচাপ বসে পড়লো।
রুয়েল লক্ষ্য করলো জান্নাতের হাত ঠকঠক করে কাঁপছে।আর সে একটিবার তার দিকে তাকাচ্ছেও না।সেজন্য রুয়েল বললো,আপনি কি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন?ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।আপনার চেহারা আমি দেখতে চাইবো না।আমি জানি আপনি কোনো ছেলের সামনে নিজের চেহারা কখনোই উন্মুক্ত করেন না।আমি জাস্ট কয়েকটা প্রশ্ন করবো।আপনি নিশ্চয় জানেন আপনার সাথে আমার আজ বিয়ে।আপনি কি এই বিয়ে তে রাজি আছেন?

জান্নাত কোনো কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো যে সে রাজি আছে।রুয়েল তা দেখে বললো,না,না এভাবে বললে হবে না।আমার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখে বলতে হবে।

জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে বললো,জ্বি রাজি আছি।

রুয়েল তখন বললো,আলহামদুলিল্লাহ খুশি হলাম।তবে আরো বেশি ভালো লাগতো যদি আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেন।আপনার উত্তর দেওয়া দেখে মনে হচ্ছে আপনি কারো চাপে পড়ে বলছেন কথাটা।আপনি আমার সাথে ফ্রি মাইন্ডে কথা বলতে পারেন।আমি কিছু মনে করবো না।

জান্নাত এই কথা শোনামাত্র সাথে সাথে তার মাথাটা উপরে তুললো।আর রুয়েলের দিকে তাকালো।কিন্তু রুয়েলের দিকে তাকাতেই জান্নাত সাথে সাথে তার চোখ ফিরে নিলো।সে কিছুতেই রুয়েলের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছিলো না।সেজন্য সে আবার নিচ মুখ হয়ে থাকলো।
তবে জান্নাত একদম আশ্চর্য হয়ে গেলো রুয়েলকে দেখে।সে তো ভেবেছিলো ৩৫ বছরের রুয়েলের মাথায় মনে হয় একটাও চুল নাই,পেটটা মনে হয় ফুটবলের মতো গোল।আর দেখতে একদম গোলগাল আর মোটাসোটা হবে।কিন্তু এ ছেলে তো দেখি পুরাই উলটো।রুয়েলের মাথার চুল একদম কুঁচকুচে কালো আর ঘন।পেটে কোনো মেদ নাই।হাইট প্রায় ৫”৯ এর মতো হবে।তবে বয়স একটু বেশি হওয়াই চোখের নিচে একটু কুঁচকে গেছে।তবুও একদম হ্যান্ডসাম লাগছিলো রুয়েলকে।গায়ের কালার একদম ধবধবে সাদা।জান্নাত মনে মনে রুয়েলকে দাঁড়িসহ কল্পনা করলো।আর ভাবতে লাগলো এই রুয়েলই সেই যুবক টি নয় তো,যাকে সে স্বপ্নে দেখতো।
জান্নাত বুঝতে পারলো রুয়েল ইয়ং কালে অনেক বেশি সুন্দর ছিলো।কিন্তু আফসোস রুয়েল যখন তরুন ছিলো তখন জান্নাতের জন্মই হয় নি।
জান্নাত রুয়েলের এমন সৌন্দর্য দেখে একদম চুপ হয়ে থাকলো।কারন রুয়েল তো তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর।
হঠাৎ রুয়েল জিজ্ঞেস করলো,আপনি এভাবে চুপচাপ হয়ে আছেন কেনো?কিছু তো বলেন।

জান্নাত তখন নিচ মুখ হয়েই জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি নামায পড়েন?
–নিয়মিত পড়ি না।
–কেনো পড়েন না?
রুয়েল তখন বললো,হ্যাঁ অবশ্যই পড়বো।নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করবো।তবে কেউ একজন নিয়মিত নামায পড়ার জন্য বললে হয়তো রেগুলারই পড়তাম।কিন্তু আফসোস! কেউ বলে না। কেউ বলে না রুয়েল নামাযের টাইম হয়ে গেছে। সেজন্য মাঝে মাঝে পড়ি আবার মাঝে মাঝে ভুলে যাই।
জান্নাত এই কথা শোনামাত্র রুয়েলের দিকে আরেকবার তাকালো।সে ভাবতেই পারে নি রুয়েল এতো সুন্দর করে কথাও বলে।রুয়েলও তাকিয়ে আছে জান্নাতের দিকে।জান্নাত সেজন্য সাথে সাথে তার চোখ ফিরিয়ে নিলো।
রুয়েল তখন জিজ্ঞেস করলো আর কিছু জানার আছে?
–হ্যাঁ আছে।আপনার মুখে কোনো দাঁড়ি নাই কেনো?

রুয়েল তখন নির্দিধায় বললো,খুব খুশি হলাম প্রশ্ন টা শুনে।আপনি তাহলে আমাকে ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছেন।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো।

রুয়েল তখন বললো,আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন কথা টা শুনে।মজা করে বলেছি কিন্তু।আপনি তো আমার দিকে ঠিক করে তাকানি নি।
তবে দাঁড়ির কথা যখন বললেন ই তখন আমি বলবো বিয়ের পর রাখবো ইনশাআল্লাহ।

রুয়েলের কথাবার্তা শুনে জান্নাত একদম তাজ্জব লেগে গেলো।সে কখনোই ভাবে নি রুয়েল তার সাথে এতো সুন্দর করে গুছিয়ে গুছিয়ে কথা বলবে।জান্নাত তো রুয়েলের কথাবার্তা শুনে আরো বেশি পাগল হয়ে গেলো।কোনো ছেলেমানুষ যে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে তার এটা জানা ছিলো না।

হঠাৎ দাদী প্রবেশ করলো রুমে আর জান্নাত কে এখনো নিকাব পড়া দেখে বললো, তুই এখনো নিকাব খুলিস নি?আজ তোদের বিয়ে। আর তুই এখনো মুখ চোখ ঢেকে আছিস?
জান্নাত তার দাদীর কথা শুনে মনে মনে ভাবলো এখন নিকাব টা তার খোলা উচিত। যেহেতু আজ তাদের বিয়ে সেহেতু রুয়েলের তো তার বউ এর মুখ দেখার অধিকার আছে।তারও তো পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যাপার আছে।রুয়েলের তো তাকে ভালো না ও লাগতে পারে।

কিন্তু হঠাৎ রুয়েল জান্নাতকে অবাক করে দিয়ে বললো, খুলতে হবে না নিকাব।বিয়ে তো এখনো হয় নি।আমি এখনো পরপুরুষ ই আছি।
তাছাড়া যখন বিয়ে হবে তখন তো রোজ রোজই দেখবো।বউ টা তো আমারই হবে!তাহলে না হয় বিয়ের পরই রাজকুমারীর মুখখানা দেখি।এই বলে রুয়েল মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।

রুয়েলের এমন কথা শুনে জান্নাত একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।ওদিকে দাদী শুধু হাসছে।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here