রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী #পর্বঃ২,৩

0
1234

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ২,৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat

রৌদ্র নিজের ঠোঁট গুলোতে ডান হাতের আঙুল দিয়ে আলতো ছুঁয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জা আর বিস্ময়ে যেন এক জ্যান্ত মূর্তির রূপ ধারণ করেছে। বাসে বসে থাকা কয়েকজন যাত্রীর চোখ এখনো রৌদ্রের দিকে নিবদ্ধ। রৌদ্র সেটা বুঝতে পেরে নিজের ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে ফেললো, কিন্তু এখনো লজ্জার আভা কাটে নি। উফফ.. ছেলে মানুষ কি এতো লজ্জা পায় না-কি!! হয়তো পায় না তবে রৌদ্র পাচ্ছে। কারন এই প্রথম কোনো রমনীর এতটা সংস্পর্শে এসেছে সে। কখনো কোনো মেয়েকে ছুয়ে দেখেনি রৌদ্র কিন্তু আজ কি হলো এটা??? অজানা অচেনা একটা মেয়ের কপালে কাকতালীয়ভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো!! মনে মনে অদ্ভুত এক অনুভূতির উপস্থিতি অনুভব করলো রৌদ্র। এমন অনুভূতি সাথে কখনো পরিচিত হয়নি সে।

বাস আবারও ব্রেক কষলো রৌদ্র এবার নিজের ঘোর কাটিয়ে বাস থেকে নেমে গেল। রৌদ্র এতটাই ভাবনায় বিভোর ছিল যে বাস তার গন্তব্যস্থল পেরিয়ে কিছুটা দূরে চলে এসেছে অথচ সে খেয়ালই করেনি। রৌদ্রর বাইক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আজ প্রথম লোকাল বাসে চড়ে এসেছে। এভাবে একটার পর একটা উদ্ভট ঘটনা ঘটেই যাবে এই ধরনা থাকলে ভুলেও আজ বাসা থেকে বের হতো না। রৌদ্র বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে এই উত্তপ্ত রোদের মধ্যেই উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলো। আজ আর বাসে উঠবে না যতটা পথ ফেলে এসেছে ততটুকু সে পায়ে হেঁটেই যাবে কষ্ট করে।

———————

কাসফিয়ার চিমটিতে ব্যথা পেয়ে আরশির ধ্যান ভাঙলো। চিমটি কাটা জায়গায় হাত ঘষতে ঘষতে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো-

“দয়া করে এখন আর কিছু বলিস না কাসফি। তুই যা দেখেছি তা সত্যি কিন্তু এখন আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমার মাথা এখন একদমই কাজ করছে না।”

আরশির কোনো কথাই কাসফিয়া আমলে নিলো না। আরশিকে পাত্তা না দিয়ে সে নিজের মতো করেই বিস্ময় নিয়ে বললো-

“দোস্ত এটা কি হয়ে গেল?? কার কাছ থেকে তুই চুমু নিয়ে এলি এভাবে??”

কাসফিয়ার মুখে চুমু শব্দটা শুনেই আরশি লজ্জা পেল। লজ্জায় মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। নিজের কপালে এভাবে একটা অপরিচিত লোকের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়েছে ভাবতেই ভিতর ভিতর লজ্জায় আঁকড়ে ধরছে আরশিকে।
কাসফিয়া আরশির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সন্দেহের গলায় বললো-

”আশু তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?? তোর গাল গুলো এমন লাল হয়ে যাচ্ছে কেন??”

আরশি অপ্রস্তুত হয়ে গাল গুলো দু হাতে আলতো ছুঁয়ে বললো-

“কতটা রোদের তাপ পরেছে দেখেছিস!! রোদের জন্যই এমন হয়েছে।”

কাসফিয়া সরু চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বরাবরের মতোই দুষ্টুমি ভাব এনে বললো-

“খুব তো বলেছিলি আমাদের জীবন কোনো রূপকথার গল্প না,,, এখন কি হলো!! এই রকম ঘটনা তো রূপকথার গল্পেও থাকে না। ইশশ.. কি রোমান্টিক মুহূর্ত ছিল!!”

আরশি জ্বলন্ত চোখে কাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো-

“এটা একটা এক্সিডেন্ট কাসফি। বেশি বাড়াবাড়ি না করে এখন চল।”

কাসফিয়া আরশির রাগী দৃষ্টি উপেক্ষা করে আবারও বললো-

“তবে আর যা-ই বলিস না কেন ছেলেটা কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম। কিন্তু যতটুকু দেখলাম মনে হলো এমন আকস্মিক ঘটনায় বেশ অবাক হয়েছে। কেমন যেন মূর্তির মতো থমকে দাঁড়িয়ে ছিল।”

আরশির এবার টনক নড়ে উঠলো। আরশি তো লোকটার দিকে একবারে জন্যেও নজর দেয় নি। ‘কি না কি ভাবছে লোকটা এমন দুর্ঘটনা নিয়ে!! উফফফ এসব নিয়ে আর ভাবা যাবে না অসহ্যকর।’
আরশি মনে মনে কথা গুলো ভেবে নিজের প্রতিই বিরক্ত হচ্ছে বার বার। পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে কাসফিয়া কে স্বাভাবিক ভাবে বললো-

“কাসফি বেশি কথা না বলে চল এখন। প্রচন্ড গরম লাগছে। আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি এই রোদের মধ্যে??”

কথা গুলো বলে কাসফিয়ার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আরশি সামনের দিকে পা বাড়ালো। তাড়াহুড়ো করে বাস থেকে আগে আগেই নেমে গেছে। এই জন্য কিছুটা পথ হেঁটেই যেতে হবে। কাসফিয়া এবার আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ আরশির সাথে হেঁটে যাচ্ছে।

————————

আয়নায় নিজেকে নিখুঁতভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে রৌদ্র। বাসায় পৌঁছে গোসল করাতে গিয়ে ঝর্নার পানি লাগতেই বুকের দিকের কিছুটা জ্বালা করছিল। এর কারণ খুঁজে বের করতেই এভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে রৌদ্র।
বুকের ডান পাশের দিকটায় কিছুটা লাল হয়ে আছে। পুরোপুরি বোঝা না গেলেও তিনটা নখের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রৌদ্র সেখানে হাত বুলিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো- ‘মেয়েটা কি রাক্ষস না-কি!! ইশশ.. কত জোরে আমাকে খামচে ধরছিলো। কেউ যদি এই নখের দাগ দেখে ফেলে তাহলে মানুষ কি ভাব্বে?? অচেনা এক মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া স্পর্শের চিহ্ন এভাবে বহন করছি ব্যাপারটা কি কেউ বিশ্বাস করবে?? অবশ্য মেয়েটার-ই বা কি দোষ এটা তো পুরোটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। মেয়েটা নিশ্চয়ই বেশ লজ্জা পেয়েছে তাই তো এভাবে হন্তদন্ত হয়ে বাস থেকে নেমে গেল।’

রৌদ্র এসব ভাবতে ভাবতেই রেডি হয়ে গেল আবারও হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এক ইমার্জেন্সি রোগির জন্য হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে। তাই ছুটির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আবারও হসপিটালের জন্য রেডি হলো। রৌদ্র এই অগোছালো রুমের দিকে একবার নজর ঘুরিয়ে ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেল। আজ এক সপ্তাহ হলো রৌদ্র এই নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছে অথচ কাজের চাপে এখনো সব কিছু অগোছালোই পরে আছে। আজ ছুটি নিয়ে এসেছিল বাসাটা সুন্দর করে গোছাবে বলে কিন্তু সেটাও আর হলো না।

—————————

রুমে এসেই আরশি প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিল। আজ একটু বেশিই গরম পরেছে। এসির টেম্পারেচারটা আরও কমিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই বাসের সেই ঘটনার কথা মনে পারে গেল। ফটাফট চোখ মেলে তাকালো আরশি। ইশশ… কি লজ্জাজনক অবস্থা কখনো যদি লোকটার মুখোমুখি হয় তখন কতটাই না লজ্জায় পরতে হবে ভেবেই যেন আরশির মাথায় ঘুরিয়ে উঠছে। পরক্ষণেই আবার নিজেকে আস্বস্ত করার জন্য মনে মনে বলে উঠলো- ‘উফফ কি ভাবছি আমি এইসব, কোথাকার না কোথাকার সেই লোক বাসে ছিলো তার সাথে আবার দেখা হবে কীভাবে??’

“কিরে তুই এখনো ফ্রেশ না হয়ে শুয়ে আছিস!! তুই এতটা অগোছালো কেন বল তো!”

কাসফিয়া নিজের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেই আরশির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে কথা গুলো বললো। মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি আর অগোছালো একদমই নিজের যত্ন করে না। কাসফিয়া সাথে আছে বলেই আরশির সব খেয়াল রাখতে পারছে।

আরশি কাসফিয়ার দিকে না তাকিয়েই নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল-

“যেমন অন্ধকার আছে বলেই আলো আছে ঠিক তেমনি তুই গোছালো পরিপাটি বলেই আমি অগোছালো।”

কাসফিয়া স্থির নয়নে তাকিয়ে বলল-

“যদি আমি না থাকি!!”

আরশি উঠে বসে কাসফিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে চুপচাপ ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। হয়তো এড়িয়ে যেতে চাইছে কাসফিয়ার কথাটা। আরশি ভাবতেও চায় না এইসব নিয়ে। কাসফিয়া ওর একমাত্র কাছের বন্ধু। ছোট থেকেই একসাথে বড় হয়েছে। আর এখন পড়াশোনার জন্যেও এখানে ওরা দুজন একসাথেই থাকেছে বাবা-মাকে ছাড়া। দুজনের বাবা মিলেই এই ফ্ল্যাটটা ওদের জন্য কিনেছে যেন নিরাপদে এখানে থেকে পড়াশোনা করতে পারে। ওদের মধ্যে যেমন মিল ঠিক তেমনই ওদের দুই ফ্যামিলির মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক।

————————

রাতের ব্যস্ত শহর আরশির খুব প্রিয়। এই ক’দিন পড়ার চাপে বারান্দায় তেমন একটা আসতে পারেনি তাই আজ সময় পেয়েই আরশি বারান্দায় চলে এসেছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে ভেসে আসলো। এই সময় পাখির ডাক শুনে আরশি চমকে উঠে আশেপাশে তাকালো। কিন্তু কোনো পাখিই তো দেখা যাচ্ছে না। আর এতো রাতে তো পাখি থাকার কথাও না। আরশি ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলো পাখির কিচিরমিচির শব্দ পাশের বাসার বারান্দায় থেকে আসছে। তবে আরশির জানা মতে এই ফ্ল্যাটে কেউ থাকে না তাহলে পাখি আসবে কিভাবে?? আরশি ভালো করে কিছুক্ষণ অন্ধকার বারান্দাটা পর্যবেক্ষণ করলো কিন্তু পাখির শব্দ শোনা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। আরশির বারান্দা থেকে পাশের বাড়ির বারান্দার দূরত্ব তেমন বেশি না। হবে হয়তো দুই তিন ফুট। আরশি এটা মনের ভুল ভেবে আর তেমন কোনো পাত্তা দিলো না। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।

আজ খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল আরশির। তবে সেটা এমনি এমনি ভাঙেনি পাখির কিচিরমিচির শব্দে অতিষ্ঠ হয়েই ঘুম থেকে উঠেছে। আরশির কাছে মনে হচ্ছে সকাল সকালই হয়তো পাখিরা ঝগড়াঝাটি শুরু করে দিয়েছে তা না হলে এতো চেচামেচি কেন করবে!! খানিকটা কৌতূহল নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল আরশি। ব্যালকনিতে যেতেই চোখ পরল পাশের ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে রাখা পাখির খাচায় বন্দী থাকা দুটি পাখির দিকে। একটা নীল – সাদা রঙের আর অন্যটি কিছুটা লাল আবার কিছুটা হলুদ রঙের। লালচে-হলুদের প্রলেপ করা যাকে বলে। পাখি সম্পর্কে তেমন কোনো জ্ঞান নেই আরশির তবে যতটুকু জানা তাতে মনে হচ্ছে খুব সম্ভবত পাখি গুলোর নাম লাভ বার্ড হবে। আরশি আরেকটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই পায়ের মধ্যে কিছু একটা লাগলো। নিচে তাকিয়ে সাদা রঙের মোড়ানো একটা কাগজ দেখতে পেল। কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো ছোট্ট একটা চিঠি। এটাকে চিঠি নয় চিরকুট বলা চলে।

চলবে….

(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন আর সবাই রেসপন্স করবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা রইলো।❤️)

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“জানি না কাকে চিঠি লিখছি, তবে একটা অনুরোধ প্লিজ এই পাখি গুলোকে দেখে রাখবেন। বেশি কিছু করতে হবে না শুধু মাঝে মধ্যে সময় করে এসে দেখে যাবেন পাখিগুলো ঠিক আছে কি না। আমি খুবই দুঃখিত আপনাকে এভাবে বিরক্ত করার জন্য।”

আরশি চিরকুট টা পড়ে খানিকটা অবাক হলো। এভাবে অচেনা কাউকে পাখি দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেয় কেউ তা-ও আবার চিরকুট লিখে!! আরশির কাছে এটা নেহাতই একধরনের বাচ্চামি মনে হচ্ছে। আরশিও ভদ্রতা বজায় রাখতে রুমে এসে প্রতিত্তোরে একটা চিরকুট লিখলো-

“আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা বাসায় থাকলে অবশ্যই আপনার পাখিগুলো দেখে রাখবো।”

চিরকুটটা লিখে মুচড়ে গোলাকার করে পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। পাখি গুলো এখনো চেচামেচি করছে সেটা দেখে আরশি পাখিগুলোর উদ্দেশ্যে বলল-

“এতো ঝগড়া করিস কেন তোরা!! তোদের নাম লাভ বার্ড তোরা সব সময় ভালোবাসায় ডুবন্ত থাকবি তা না করে সব সময় শুধু ঝগড়াঝাটিই করিস।”

কথা গুলো বলে আরশি নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসলো কাসফিয়াকে বসে থাকতে দেখে কিছুটা উৎসুক কন্ঠে বললো-

“জানিস কাসফি আমার পাশের বারান্দায় দুটো পাখি আছে।”

কাসফিয়া ফোনে স্কিনে দৃষ্টি রেখেই ভাবলেশহীন ভাবে বললো-

“তো কি হয়েছে!!”

আরশি কাসফিয়ার হাত থেকে থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল-

“পাখিগুলোর মালিক আমার বারান্দায় একটা চিরকুট লিখে দিয়েছিল। আমি যেন পাখিগুলো মাঝে মাঝে দেখে রাখি।”

কাসফিয়া এবার কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো-

“তারপর তুই কি করলি?”

“আমিও একটা চিরকুট লিখে দিয়েছি পাখিগুলোকে নিয়ে যেন চিন্তা না করে।”

আরশির এমন নির্লিপ্ত উত্তর শুনে কাসফিয়া বিস্ময়ের সাথে বললো-

“পাখিগুলোর মালিক ছেলে নাকি মেয়ে??”

আরশি ছোট্ট করে উত্তর দিল-

“জানি না”

কাসফিয়া কিছুটা সময় চুপ থেকে সন্দেহের দৃষ্টি আরশির দিকে নিক্ষেপ করে বললো-

“তুই কি নব্বই দশকের মতো চিরকুটের প্রেম শুরু করলি না-কি আশু!!”

আরশি বিরক্তি নিয়ে বলল-

“কি সব যা-তা বলছিস!! বাদ দে এসব এখন নাস্তা কর।”

কাসফিয়া আর কথা বাড়ালো না। এই মেয়েটা কখন কি করে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না কাসফিয়া।

———————

সারারাত হসপিটালে নাইট ডিউটি করে দুপুরের দিকে রৌদ্র বাসায় ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে বিকেলের দিকে বারান্দায় আসলো তার শখের পাখিগুলোকে দেখতে। বারান্দার মেঝেতে পরে থাকা একটি মোচড়ানো গোলাকার কাগজ দেখে রৌদ্রর ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। বারান্দায় কাগজ আসলো কি করে সেটা ভাবতে ভাবতেই কাগজটা হাতে তুলে দেখতে লাগলো। আরশির দেওয়া চিরকুটটা পরে রৌদ্র বেশ অবাক হলো পরক্ষণেই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।

কাল ভুলে পাখিগুলোকে রুমের ভিতরে রেখেই চলে গিয়েছিল রৌদ্র। তাই আজ সকালেই তার কাজিনকে বলেছিল যেন বাসায় এসে পাখিগুলো বারান্দায় রেখে দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বান যে পাখি দেখাশোনার জন্য চিঠি লিখে মানুষদের বিরক্ত করবে বুঝতে পারেনি রৌদ্র। কিন্তু কে এই চিঠির মানুষটা?? এখন কি তাকে সব খুলে বলা দরকার?? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই রৌদ্র কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে একটা চিরকুট লিখে ফেলল। কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। জীবন প্রথম সে এভাবে কাউকে চিরকুট লিখে দিচ্ছে। নির্বানের এমন একটা বাচ্চামির জন্য এখন তাকেও এসব কর‍তে হচ্ছে ভাবতেই রাগ লাগছে রৌদ্রর। ফোন দিয়ে কিছুক্ষন নির্বানকে না ধমকালে তার এই রাগ যাবে না।

———————
রাতে বারান্দায় এসে আবারও একটি চিরকুট দেখতে পেল আরশি। কৌতুহল নিয়ে চিরকুটটা তুলে দেখলো-

“আমি আসলে খুবই দুঃখিত আমার কাজিন কিছুটা ছেলেমানুষী করেই আপনাকে চিঠি লিখে বিরক্ত করেছে। আমি বুঝতে পারছি অচেনা মানুষের কাছ থেকে চিঠি পাওয়া খুব অস্বস্তির তবুও বলছি প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”

আরশি মুচকি হাসলো তবে কেন তার কারন জানা নেই আরশির। বেশ কিছুক্ষন বারান্দায় সময় কাটিয়ে রুমে এসে আবারও চিরকুটের উত্তর হিসেবে একটা চিরকুট লিখলো কিন্তু আজ লিখেছে লাল কাগজে। আগের মতো করেই চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। তারপর পাখিগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রুমে এসে শুয়ে পরলো।

সকালে ঘুম ভাঙেতেই তারাহুরো করে রেডি হয়ে কাসফিয়া সাথে বেড়িয়ে পরলো আরশি। আজ একটা অনুষ্ঠান আছে ভার্সিটিতে একদমই ভুলে গিয়েছিল। কথায় আছে তাড়াহুড়ো সয়তানের কাজ। তাড়াহুড়ো করলে ঝামেলা হবেই এখনো ঠিক সেটাই হলো। তাড়াতাড়ি করে বাস থেকে নামতে গিয়েই পা মচকে গেল। ব্যথায় মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠলো আরশি। কাসফিয়া সাথে সাথে আরশির কাছে গিয়ে আঁকড়ে ধরলো। কিছুটা দূরে নিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে আরশির পা টা দেখে চিন্তিত গলায় বললো-

“পা মচকে গেছে মনে হচ্ছে আশু। তুই এতটা বেখায়ালি কেন!! এখন লেংরা হয়ে বসে থাকবি খুব ভালো হয়েছে।”

আরশি অসহায়ের মতো মুখ করে মিনমিনিয়ে বলল-

“এমনিতেই ব্যথা পেয়েছি, এখন আবার তুইও বোকা দিচ্ছিস এটা কি ঠিক করছিস কাসফি!!”

আরশির কথায় কাসফিয়া খানিকটা রেগে গেল। আরশিকে দাঁড় করিয়ে শক্ত গলায় বললো-

“একদম চুপ থাক। চল এখন হসপিটালে যাবো। ভার্সিটিতে যেতে হবে না আজ।”

আরশি আর কিছু বলার সাহস পেল না। কারন আরশি জানে কাসফিয়া একবার রেগে গেলে তার অবস্থা খুবই খারাপ হবে। তাই চুপচাপ কাসফিয়া সাথে হসপিটালে চলে গেল।

————————

ডক্টরের অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষন ধরে বসে বসে অপেক্ষা করছে কাসফিয়া আর আরশি। হঠাৎ করেই কাসফিয়া কিছুটা চেচিয়ে বলে উঠলো-

“দোস্ত এটা তো ওই চুমু দেওয়া ছেলেটা।”

আরশি চমকে উঠে কাসফিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো একটা লোক সাদা এপ্রোন পরে এদিকেই এগিয়ে আসছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি এখানের ডক্টর। আরশি ওইদিনের ঘটনা মনে করেই এখান থেকে পালানোর জন্য অস্থির হয়ে পরলো যেন এই লোকের মুখোমুখি হতে না হয়। লজ্জা আর অস্বস্তিতে দ্রুত বসা থেকে উঠে পেছন ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবে এমন সময় রৌদ্র দৌড়ে এসে আরশিকে আঁকড়ে ধরলো। আরশির ডান হাত রৌদ্রর ডান হাতে আর আরশির বা বাহুতে রৌদ্রর আরেক হাত রেখে আরশিকে ধরে ফেললো।

আরশির হঠাৎ এমন করায় কাসফিয়ার হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কথা শুনে আরশি আচমকা এভাবে উঠে চলে যাবে সেটা কাসফিয়া বুঝতে পারেনি।

আরশি মনে মনে নিজেকেই গালি দিচ্ছে। কথায় আছে ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।’ আরশির সাথেও সেটাই হলো। যার কাছ থেকে লজ্জায় পালাতে চাচ্ছে আবারও সেই মানুষটার কাছে এসেই ধরা পরলো। আবারও সেই একই লজ্জাজনক পরিস্থিতি। ভাবতেই লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে আরশি।

চলবে….

(এই গল্পটা আগের গল্প গুলো থেকে একদমই আলাদা। জানি না গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে তবে আশা করি ভালো লাগলে রেসপন্স করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা রইলো।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here